সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“বলবান হও ও অতিশয় সাহস কর”

“বলবান হও ও অতিশয় সাহস কর”

“বলবান হও ও অতিশয় সাহস কর”

“বলবান হও ও অতিশয় সাহস কর . . . ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী।” —যিহো. ১:৭-৯.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কোন কোন উপায়ে হনোক এবং নোহ সাহস প্রদর্শন করেছিল?

কীভাবে প্রাচীনকালের কিছু নারী বিশ্বাস এবং সাহসের ক্ষেত্রে উদাহরণযোগ্য ছিল?

অল্পবয়সিদের সাহসের কোন উদাহরণগুলো আপনাকে প্রভাবিত করে?

১, ২. (ক) জীবনে এক ন্যায়নিষ্ঠ কাজ করার জন্য কখনো কখনো কীসের প্রয়োজন? (খ) আমরা কী পরীক্ষা করতে যাচ্ছি?

 সাহস হল ভয়, লজ্জা এবং কাপুরুষোচিত মনোভাবের বিপরীত। আমরা হয়তো একজন সাহসী ব্যক্তিকে বলবান, বীর, এমনকী নির্ভীক বলে মনে করতে পারি। কিন্তু, কখনো কখনো রোজকার জীবনে ন্যায়নিষ্ঠ কাজ করার জন্য যথেষ্ট সাহসের প্রয়োজন।

বাইবেলের বিবরণে কিছু লোক অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও নির্ভীক ছিল। অন্যেরা এমন পরিস্থিতিতে সাহস দেখিয়েছিল, যেগুলো যিহোবার সকল দাসের জন্য সাধারণ। সাহস সম্বন্ধে বাইবেলের উদাহরণগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি? কীভাবে আমরা সাহসী হতে পারি?

এক ভক্তিহীন জগতে সাহসী সাক্ষিরা

৩. ভক্তিহীন লোকেদের জন্য হনোক কোন ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন?

নোহের দিনের জলপ্লাবনের আগে, পৃথিবীতে দুষ্ট লোকেদের মাঝে যিহোবার একজন সাক্ষি হওয়ার জন্য সাহসের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, হনোক, “আদম অবধি সপ্তম পুরুষ” নির্ভীকভাবে এই ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক বার্তা ঘোষণা করেছিলেন: “দেখ, প্রভু আপন অযুত অযুত পবিত্র লোকের সহিত আসিলেন, যেন সকলের বিচার করেন; আর ভক্তিহীন সকলে আপনাদের যে সকল ভক্তিবিরুদ্ধ কার্য্য দ্বারা ভক্তিহীনতা দেখাইয়াছে, এবং ভক্তিহীন পাপিগণ তাঁহার বিরুদ্ধে যে সকল কঠোর বাক্য কহিয়াছে, তৎপ্রযুক্ত তাহাদিগকে যেন ভর্ৎসনা করেন।” (যিহূদা ১৪, ১৫) হনোক, অতীত কাল ব্যবহার করে কথা বলেছিলেন, কারণ সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী যে পরিপূর্ণ হবেই, তা নিশ্চিত ছিল। আর ভক্তিহীন লোকেরা বিশ্বব্যাপী এক জলপ্লাবনে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল!

৪. কোন ধরনের পরিস্থিতি সত্ত্বেও, নোহ “ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন” করেছিলেন?

হনোক ভবিষ্যদ্‌বাণী করার ৬৫০ বছরেরও বেশি সময় পর, খ্রিস্টপূর্ব ২৩৭০ সালে জলপ্লাবন হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে, নোহের জন্ম হয়, তিনি পরিবার গড়ে তোলেন এবং তার ছেলেদের সঙ্গে জাহাজ নির্মাণ করেন। মন্দদূতেরা মাংসিক দেহ ধারণ করে, সুন্দরী নারীদেরকে বিয়ে করে এবং নেফিলিমদের জন্ম দেয়। অধিকন্তু, মানুষের দুষ্টতা প্রচণ্ড বেড়ে যায় এবং পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। (আদি. ৬:১-৫, ৯, ১১) এইরকম অবস্থা সত্ত্বেও, “নোহ ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন” এবং “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” হিসেবে নির্ভীকভাবে সাক্ষ্য প্রদান করতেন। (পড়ুন, ২ পিতর ২:৫.) এই শেষকালে আমাদেরও একই ধরনের সাহসের প্রয়োজন।

তারা বিশ্বাস এবং সাহস প্রদর্শন করেছিল

৫. কীভাবে মোশি বিশ্বাস এবং সাহস প্রদর্শন করেছিলেন?

মোশির উদাহরণযোগ্য বিশ্বাস এবং সাহস ছিল। (ইব্রীয় ১১:২৪-২৭) খ্রিস্টপূর্ব ১৫১৩-১৪৭৩ সাল পর্যন্ত, ঈশ্বর তাকে ইস্রায়েলীয়দেরকে মিশর থেকে বের করে নিয়ে আসার বিষয়ে নেতৃত্ব দিতে এবং তাদেরকে প্রান্তরে পরিচালনা দিতে ব্যবহার করেছিলেন। মোশি এই কার্যভারের জন্য নিজেকে নিতান্তই অযোগ্য বলে মনে করেছিলেন, তবে তিনি তা গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। (যাত্রা. ৬:১২) তিনি এবং তার ভাই হারোণ বার বার মিশরের নিষ্ঠুর ফরৌণের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং সাহসের সঙ্গে দশটা আঘাত সম্বন্ধে ঘোষণা করেছিলেন, যে-আঘাতগুলোর মাধ্যমে যিহোবা মিশরীয় দেবতাদের অবমানিত করেছিলেন এবং তাঁর লোকেদের উদ্ধার করেছিলেন। (যাত্রা., ৭-১২ অধ্যায়) মোশি বিশ্বাস এবং সাহস প্রদর্শন করেছিলেন কারণ ঈশ্বর তাকে ক্রমাগত সমর্থন করে গিয়েছিলেন, যেমনটা আমাদেরও করেন।—দ্বিতীয়. ৩৩:২৭.

৬. জাগতিক কর্তৃপক্ষরা যদি আমাদেরকে জেরা করে, তাহলে কীভাবে আমরা সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য দিতে সমর্থ হব?

আমাদেরও মোশির মতো সাহস দরকার, কারণ যিশু বলেছিলেন: “আমার জন্য তোমরা দেশাধ্যক্ষ ও রাজাদের সম্মুখে, তাহাদের ও পরজাতিগণের কাছে সাক্ষ্য দিবার জন্য, নীত হইবে। কিন্তু যখন লোকে তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, তখন তোমরা কিরূপে কি বলিবে, সে বিষয়ে ভাবিত হইও না; কারণ তোমাদের যাহা বলিবার, তাহা সেই দণ্ডেই তোমাদিগকে দান করা যাইবে। কেননা তোমরা কথা বলিবে, এমন নয়, কিন্তু তোমাদের পিতার যে আত্মা তোমাদের অন্তরে কথা কহেন, তিনিই বলিবেন।” (মথি ১০:১৮-২০) জাগতিক কর্তৃপক্ষরা যদি আমাদেরকে জেরা করে, তাহলে যিহোবার আত্মা আমাদেরকে বিশ্বাস ও সাহস দেখিয়ে সম্মান সহকারে সাক্ষ্য দিতে সমর্থ করবে।—পড়ুন, লূক ১২:১১, ১২.

৭. কেন যিহোশূয় সাহসী এবং সফল হয়েছিলেন?

ঈশ্বরের ব্যবস্থা নিয়ে নিয়মিত অধ্যয়ন করা মোশির উত্তরসূরি যিহোশূয়ের মধ্যে বিশ্বাস এবং সাহস গড়ে তুলেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৪৭৩ সালে, ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। “বলবান হও ও অতিশয় সাহস কর,” ঈশ্বর আজ্ঞা দিয়েছিলেন। ব্যবস্থা অনুযায়ী চলার মাধ্যমে যিহোশূয় বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করতে এবং সফল হতে পেরেছিলেন। “মহাভয়ে ভীত কি নিরাশ হইও না,” তাকে বলা হয়েছিল “কেননা তুমি যে কোন স্থানে যাও, সেই স্থানে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী।” (যিহো. ১:৭-৯) এই কথাগুলো যিহোশূয়কে কত শক্তিশালীই না করেছিল! আর নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বর তার সঙ্গে ছিলেন কারণ প্রতিজ্ঞাত দেশে যাওয়ার সবচেয়ে বড়ো জয় মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই—খ্রিস্টপূর্ব ১৪৬৭ সালের মধ্যে—সম্পন্ন হয়েছিল।

যে-সাহসী নারীরা তাদের অবস্থান গ্রহণ করেছিল

৮. রাহবের মধ্যে আমরা বিশ্বাস ও সাহসের কোন উদাহরণ দেখতে পাই?

শত শত বছর ধরে, অনেক সাহসী নারী যিহোবার বীরোচিত উপাসক হিসেবে তাদের অবস্থান গ্রহণ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, যিরীহোর রাহব বেশ্যা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন, যিহোশূয়ের দ্বারা পাঠানো দুজন গুপ্তচরকে সাহসের সঙ্গে লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং সেই নগরের রাজার সমর্থকদেরকে ভুল পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ইস্রায়েলীয়রা যখন যিরীহো দখল করে, তখন তিনি এবং তার পরিবার রক্ষা পেয়েছিলেন। রাহব তার পাপপূর্ণ পেশা পরিত্যাগ করেছিলেন, যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করেছিলেন এবং মশীহের একজন পূর্বপুরুষী হয়ে উঠেছিলেন। (যিহো. ২:১-৬; ৬:২২, ২৩; মথি ১:১, ৫) তার বিশ্বাস এবং সাহসের জন্য তিনি কত আশীর্বাদই না লাভ করেছিলেন!

৯. কীভাবে দবোরা, বারক এবং যায়েল সাহস দেখিয়েছিল?

খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ১৪৫০ সালে যিহোশূয়ের মৃত্যুর পর, বিচারকর্তৃগণ ইস্রায়েলে বিচার করত। সেই সময় কনানের রাজা যাবীন ২০ বছর ধরে ইস্রায়েলীয়দের অত্যাচার করে আসছিল, যখন ঈশ্বর ভাববাদিনী দবোরাকে দিয়ে বিচারক বারককে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। বারক ১০,০০০ লোককে তাবোর পর্বতে একত্রিত করেছিলেন এবং যাবীনের প্রধান সেনাপতি সীষরার সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন আর সীষরা তার সেনাবাহিনী এবং ৯০০ যুদ্ধরথ নিয়ে কীশোন নদীর উপত্যকায় প্রবেশ করেছিলেন। ইস্রায়েলীয়রা যখন তলভূমিতে এসে পৌঁছেছিল, তখন ঈশ্বর আকস্মিক বন্যা ঘটিয়েছিলেন, যা যুদ্ধক্ষেত্রকে কর্দমাক্ত এলাকায় পরিণত করেছিল এবং কনানীয় রথগুলোকে অকেজো করে দিয়েছিল। বারকের লোকেরা বিজয় লাভ করেছিল এবং “সীষরার সমস্ত সৈন্য খড়গধারে পতিত হইল।” সীষরা নিজে যায়েলের তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিলেন কিন্তু যায়েল তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করেন। বারকের প্রতি বলা দবোরার ভাববাণীমূলক কথা অনুযায়ী, এই জয়ের “যশ” যায়েল নামে একজন নারী পান। যেহেতু, দবোরা, বারক এবং যায়েল সাহসের সঙ্গে কাজ করেছিল, তাই ইস্রায়েল “চল্লিশ বৎসর . . . নিষ্কন্টকে থাকিল।” (বিচার. ৪:১-৯, ১৪-২২; ৫:২০, ২১, ৩১) ঈশ্বরভয়শীল অনেক নারী ও পুরুষ একইরকম বিশ্বাস এবং সাহস প্রদর্শন করেছিল।

আমাদের বাক্য সাহস জাগিয়ে তুলতে পারে

১০. কেন বলা যেতে পারে যে, আমাদের বাক্য সাহস জাগিয়ে তুলতে পারে?

১০ আমরা যা বলি, তা যিহোবার সহউপাসকদের মধ্যে সাহস জাগিয়ে তুলতে পারে। খ্রিস্টপূর্ব ১১ শতাব্দীতে, রাজা দায়ূদ তার ছেলে শলোমনকে বলেছিলেন: “তুমি বলবান হও, সাহস কর, কার্য্য কর; ভয় করিও না, নিরাশ হইও না; কেননা সদাপ্রভু ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর, তোমার সহবর্ত্তী; সদাপ্রভুর গৃহবিষয়ক কার্য্যের সমস্ত রচনা যাবৎ সমাপ্ত না হয়, তাবৎ তিনি তোমাকে ছাড়িবেন না, তোমাকে ত্যাগ করিবেন না।” (১ বংশা. ২৮:২০) শলোমন সাহসের সঙ্গে কাজ করেছিলেন এবং যিরূশালেমে যিহোবার চমৎকার মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

১১. একজন অল্পবয়সি ইস্রায়েলীয় মেয়ের সাহসী কথা একজন ব্যক্তির জীবনের ওপর কোন প্রভাব ফেলেছিল?

১১ খ্রিস্টপূর্ব দশম শতাব্দীতে, একজন অল্পবয়সি ইস্রায়েলীয় মেয়ের সাহসী কথা একজন কুষ্ঠীর জন্য আশীর্বাদ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। তাকে লুঠকারী দল বন্দি করে নিয়ে যায় আর সে অরামীয় সেনাপতি কুষ্ঠী নামানের দাসী হয়ে ওঠে। ইলীশায়ের মাধ্যমে যিহোবা যে-অলৌকিক কাজগুলো করছিলেন, সেগুলো সম্বন্ধে জানতে পেরে, সে নামানের স্ত্রীকে বলে যে, তার স্বামী যদি ইস্রায়েলে যান, তাহলে ঈশ্বরের ভাববাদী তাকে আরোগ্য করতে পারবেন। নামান ইস্রায়েলে গিয়েছিলেন, অলৌকিকভাবে সুস্থ হয়েছিলেন এবং যিহোবার একজন উপাসক হয়ে উঠেছিলেন। (২ রাজা. ৫:১-৩, ১০-১৭) তুমি যদি একজন অল্পবয়সি হয়ে থাকো, যে সেই অল্পবয়সি মেয়ের মতো যিহোবাকে ভালোবাসে, তাহলে তিনি তোমাকে শিক্ষকদের, সহছাত্র-ছাত্রীদের এবং অন্যদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সাহস প্রদান করতে পারেন।

১২. কীভাবে রাজা হিষ্কিয়ের কথাগুলো তার প্রজাদের প্রভাবিত করেছিল?

১২ ভেবেচিন্তে বাছাই করা কথাবার্তা গুরুতর বিপদের সময় সাহস জাগিয়ে তুলতে পারে। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে অশূরীয়রা যখন যিরূশালেমের বিরুদ্ধে এসেছিল, তখন রাজা হিষ্কিয় তার প্রজাদের বলেছিলেন: “সাহস কর, অশূররাজের সম্মুখে ও তাঁহার সঙ্গী সমস্ত লোক-সমারোহের সম্মুখে ভীত কি নিরাশ হইও না; কারণ তাঁহার সহায় অপেক্ষা আমাদের সহায় মহান্‌। মাংসময় বাহু তাঁহার সহায়, কিন্তু আমাদের সাহায্য করিতে ও আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করিতে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের সহায়।” এই কথাগুলোকে কীভাবে নেওয়া হয়েছিল? আসলে “লোকেরা যিহূদা-রাজ হিষ্কিয়ের বাক্যে নির্ভর করিল”! (২ বংশা. ৩২:৭, ৮) একই ধরনের বাক্য সেই সময় আমাদের নিজেদের এবং অন্যান্য খ্রিস্টানের সাহস বাড়িয়ে দিতে পারে, যখন আমরা তাড়নাকারীদের দ্বারা হয়রানির শিকার হই।

১৩. আমাদের কাছে রাজা আহাবের গৃহাধ্যক্ষ ওবদিয়ের সাহসের কোন উদাহরণ রয়েছে?

১৩ মাঝে মাঝে আমরা যা বলি না, সেটার দ্বারাও সাহস প্রদর্শিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব দশম শতাব্দীতে, রাজা আহাবের গৃহাধ্যক্ষ ওবদিয় যিহোবার এক-শো ভাববাদীকে নিয়ে “পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করিয়া গহ্বরের মধ্যে” লুকিয়ে রেখেছিলেন, যাতে তারা দুষ্ট রানি ঈষেবলের আজ্ঞা অনুযায়ী হত না হয়। (১ রাজা. ১৮:৪) ঈশ্বরভয়শীল ওবদিয়ের মতো, আধুনিক দিনে যিহোবার অনেক অনুগত দাস, তাড়নাকারীদের কাছে তাদের সহবিশ্বাসীদের সম্বন্ধে তথ্য না দেওয়ার মাধ্যমে, সাহসের সঙ্গে তাদেরকে সুরক্ষা করে।

ইষ্টের—এক সাহসী রানি

১৪, ১৫. কীভাবে ইষ্টের রানি বিশ্বাস ও সাহস প্রদর্শন করেছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?

১৪ রানি ইষ্টের সেই সময় প্রচুর বিশ্বাস ও সাহস প্রদর্শন করেছিলেন, যখন দুষ্ট হামনের সাম্প্রদায়িক বিলোপসাধনের ষড়যন্ত্র, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে সারা পারস্যজুড়ে যিহুদিদের বিপদের মুখে ফেলেছিল। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, তারা মহাশোক ও উপবাস করেছিল এবং নিঃসন্দেহে তাদের সমস্ত হৃদয় উজাড় করে প্রার্থনা করেছিল! (ইষ্টের ৪:১-৩) রানি ইষ্টের অত্যন্ত দুঃখার্ত হয়ে পড়েছিলেন। তার কাকাত ভাই মর্দখয় তার কাছে গণহত্যার আজ্ঞাপত্রের একটা অনুলিপি পাঠিয়েছিলেন এবং তাকে আজ্ঞা দিয়েছিলেন, যেন তিনি তার সহযিহুদিদের হয়ে মিনতি করার জন্য রাজার সামনে উপস্থিত হন। কিন্তু, ডেকে পাঠানো না হলে রাজার কাছে যেত এমন যেকাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো।—ইষ্টের ৪:৪-১১.

১৫ কিন্তু, মর্দখয় ইস্টেরকে বলেছিলেন: ‘যদি তুমি নীরব হইয়া থাক, তবে অন্য কোন স্থান হইতে যিহূদীদের নিস্তার ঘটিবে, আর কে জানে যে, তুমি এই প্রকার সময়ের জন্যই রাজ্ঞীপদ পাও নাই?’ ইষ্টের মর্দখয়কে শূশনের যিহুদিদেরকে একত্রিত করার এবং তার জন্য উপবাস করার জোরালো পরামর্শ দেন। “আর আমিও . . . তদ্রূপ উপবাস করিব,” তিনি বলেন, “এইরূপে আমি রাজার নিকটে যাইব, তাহা ব্যবস্থাবিরুদ্ধ হইলেও যাইব, আর যদি বিনষ্ট হইতে হয়, হইব।” (ইষ্টের ৪:১২-১৭) ইষ্টের সাহসের সঙ্গে কাজ করেছিলেন এবং তার নামের যে-বইটি রয়েছে, তা দেখায় যে, ঈশ্বর তাঁর লোকেদের নিস্তার করেছিলেন। আমাদের দিনে অভিষিক্ত খ্রিস্টান এবং তাদের উৎসর্গীকৃত সহযোগীরা পরীক্ষার মধ্যে একই সাহস প্রদর্শন করে—আর “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” সবসময়ই তাদের পক্ষে আছেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৬৫:২; ১১৮:৬.

“সাহস কর”

১৬. আমাদের অল্পবয়সিদের জন্য যিশুর কোন উদাহরণ রয়েছে?

১৬ প্রথম শতাব্দীর কোনো একটা সময়ে, বারো বছর বয়সি যিশুকে মন্দিরে পাওয়া গিয়েছিল, যিনি “গুরুদিগের মধ্যে বসিয়া তাঁহাদের কথা শুনিতেছিলেন ও তাঁহাদিগকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন।” অধিকন্তু, “যাহারা তাঁহার কথা শুনিতেছিল, তাহারা সকলে তাঁহার বুদ্ধি ও উত্তরে অতিশয় আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল।” (লূক ২:৪১-৫০) যদিও তিনি অল্পবয়সি ছিলেন, তবুও যিশুর সেই বিশ্বাস ও সাহস ছিল, যা মন্দিরের বয়স্ক গুরুদের প্রশ্ন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। যিশুর উদাহরণ মনে রাখা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অল্পবয়সিদেরকে ‘যে কেহ তাহাদের অন্তরস্থ প্রত্যাশার হেতু জিজ্ঞাসা করে, তাহাকে উত্তর দিতে সর্ব্বদা প্রস্তুত থাকিবার’ সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।—১ পিতর ৩:১৫.

১৭. কেন যিশু তাঁর শিষ্যদের ‘সাহস করিবার’ জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন আর কেন আমাদের সাহসের সঙ্গে কাজ করতে হবে?

১৭ যিশু অন্যদেরকে ‘সাহস করিবার’ জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (মথি ৯:২, ২২) তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “দেখ, এমন সময় আসিতেছে, বরং আসিয়াছে, যখন তোমরা ছিন্নভিন্ন হইয়া প্রত্যেকে আপন আপন স্থানে যাইবে, এবং আমাকে একাকী পরিত্যাগ করিবে; তথাপি আমি একাকী নহি, কারণ পিতা আমার সঙ্গে আছেন। এই সমস্ত তোমাদিগকে বলিলাম, যেন তোমরা আমাতে শান্তি প্রাপ্ত হও। জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ; কিন্তু সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি।” (যোহন ১৬:৩২, ৩৩) যিশুর প্রাথমিক অনুসারীদের মতো, আমরাও জগতের কাছ থেকে ঘৃণার মুখোমুখি হই কিন্তু আসুন আমরা যেন জগতের মতো না হই। ঈশ্বরের পুত্রের সাহসী জীবনধারা নিয়ে গভীরভাবে বিবেচনা করা, আমাদেরকে এই জগতে নিষ্কলঙ্ক থাকার মতো সাহস প্রদান করতে পারে। তিনি জগৎকে জয় করেছিলেন আর আমরাও তা করতে পারি।—যোহন ১৭:১৬; যাকোব ১:২৭.

১৮, ১৯. প্রেরিত পৌল বিশ্বাস ও সাহসের কোন প্রমাণ দিয়েছিলেন?

১৮ প্রেরিত পৌল অনেক পরীক্ষা সহ্য করেছিলেন। একবার, যিরূশালেমের যিহুদিরা তাকে হয়তো টুকরো টুকরো করে ফেলত, যদি না রোমীয় সৈন্যরা তাকে উদ্ধার করত। পরের দিন রাতের বেলা “প্রভু পৌলের নিকটে দাঁড়াইয়া কহিলেন, সাহস কর, কেননা আমার বিষয়ে যেমন যিরূশালেমে সাক্ষ্য দিয়াছ, তদ্রূপ রোমেও দিতে হইবে।” (প্রেরিত ২৩:১১) পৌল ঠিক তা-ই করেছিলেন।

১৯ পৌল নির্ভীকভাবে “প্রেরিত-চূড়ামণিদের” তিরস্কার করেছিলেন, যারা করিন্থের মণ্ডলীকে কলুষিত করার চেষ্টা করেছিল। (২ করি. ১১:৫; ১২:১১) তাদের বিপরীতে তিনি তার প্রেরিত পদের পক্ষে প্রমাণ দিতে পারতেন আর এগুলো হল কারাবন্দি, মারধর, বিপদজনক যাত্রা, অন্যান্য বিপদ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং নিদ্রার অভাব ও সেইসঙ্গে সহবিশ্বাসীদের জন্য গভীর চিন্তা। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১১:২৩-২৮.) বিশ্বাস ও সাহসের কী এক নথি—এই সমস্তকিছু ঈশ্বরদত্ত শক্তির প্রমাণ!

২০, ২১. (ক) এমন একটা উদাহরণ দিন, যা দেখায় যে, আমাদের অবশ্যই সাহসী হতে হবে। (খ) কোন কোন পরিস্থিতিতে আমাদের সাহস দেখানোর প্রয়োজন হতে পারে এবং আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

২০ সমস্ত খ্রিস্টানই চরম তাড়না ভোগ করবে না। কিন্তু, জীবনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সকলের সাহসী হয়ে উঠতে হবে। উদাহরণস্বরূপ: ব্রাজিলের একজন যুবক এক দুর্বৃত্ত দলের সদস্য ছিল। বাইবেল অধ্যয়ন করার পর, সে পরিবর্তন করার প্রয়োজন দেখতে পায় কিন্তু সাধারণত কেউ যদি সেই দুর্বৃত্ত দল থেকে বের হয়ে যেত, তাহলে তাকে হত্যা করা হতো। সে প্রার্থনা করেছিল এবং কেন সে আর সেই দলে থাকতে পারবে না, তা তাদের নেতাকে দেখানোর জন্য শাস্ত্রপদ ব্যবহার করেছিল। কোনো প্রতিহিংসা ছাড়াই সেই যুবক মুক্তি পেয়েছিল এবং রাজ্যের একজন ঘোষণাকারী হয়ে উঠেছিল।

২১ সুসমাচার প্রচার করার জন্য সাহস প্রয়োজন। খ্রিস্টান অল্পবয়সিরা যদি স্কুলে নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে চায়, তাহলে তাদের এই গুণ প্রয়োজন। সম্মেলনের সমস্ত অধিবেশনে যোগদান করার জন্য চাকরি থেকে ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহসের প্রয়োজন হতে পারে। এই তালিকা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু, আমরা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখিই হই না কেন, যিহোবা আমাদের “বিশ্বাসের প্রার্থনা” শুনবেন। (যাকোব ৫:১৫) আর নিশ্চিতভাবেই তিনি আমাদেরকে পবিত্র আত্মা দিতে পারেন যেন আমরা ‘বলবান হইতে ও অতিশয় সাহস করিতে’ পারি!

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

হনোক এক ভক্তিহীন জগতে সাহসের সঙ্গে প্রচার করেছিলেন

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

যায়েল সাহসী ও বলবতী ছিলেন