সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তারা সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য ঘোষণা করেছিল!

তারা সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য ঘোষণা করেছিল!

তারা সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য ঘোষণা করেছিল!

বিরোধিতার মুখে সাহস, এমনকী নির্ভীকতা। সত্য খ্রিস্টানরা এই গুণাবলি প্রদর্শন করেছিল যেমনটা, “পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া” (ইংরেজি) এবং যিহোবার সাক্ষিরা—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) প্রকাশনা দুটোর মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের প্রথম শতাব্দীর সহবিশ্বাসীদের মতো, আমরাও যিহোবার কাছে প্রার্থনায় তাঁর পবিত্র আত্মা যাচ্ঞা করে এবং তাঁর বাক্য নির্ভীকভাবে বলার জন্য সাহায্য চেয়ে শরণাপন্ন হই।—প্রেরিত ৪:২৩-৩১.

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমাদের প্রচার কাজ সম্বন্ধে একজন ভাই লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের দাসেরা সমাপ্ত রহস্য (ইংরেজি) শিরোনামে শাস্ত্রের ওপর অধ্যয়ন (ইংরেজি) সপ্তম খণ্ডটি উদ্যোগের সঙ্গে বিতরণ করেছিল। এটা এক নজিরবিহীন মাত্রায় বিতরণ করা হয়েছিল। ১৯১৮ সালে রাজ্য সংবাদ নং. ১ প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর রাজ্য সংবাদ নং. ২ প্রকাশ করা হয়েছিল, যেটা ব্যাখ্যা করেছিল যে, কেন সরকারি কর্তৃপক্ষ সমাপ্ত রহস্য (ইংরেজি) বইটি বন্ধ করে দিয়েছিল। এই বিষয়টা রাজ্য সংবাদ নং. ৩-এর মধ্যেও তুলে ধরা হয়েছিল। এই প্রকাশনাগুলো বিশ্বস্ত অভিষিক্ত শ্রেণী ব্যাপকভাবে বিতরণ করেছিল। রাজ্য সংবাদ ঘোষণা করার জন্য বিশ্বাস এবং সাহসের প্রয়োজন হয়েছিল।”

বর্তমানে, নতুন রাজ্য প্রকাশকরা সাধারণত পরিচর্যায় প্রশিক্ষণ লাভ করে থাকে কিন্তু সবসময় এমনটা ছিল না। ১৯২২ সালে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় তার প্রথম অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন পোলিশ ভাই লিখেছিলেন: “সাহিত্যাদি কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়, সেই সম্বন্ধে কোনো জ্ঞান না থাকা এবং ভালোভাবে ইংরেজি বলতে না পারা সত্ত্বেও, আমি একা একজন ডাক্তারের অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়াই ও দরজায় কড়া নাড়ি। একজন নার্স দরজা খুলে দিয়েছিলেন। আমি কখনোই এই অভিজ্ঞতার কথা ভুলে যাব না, কারণ আমি রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম এবং ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি যখন আমার ব্যাগটা খুলছিলাম, তখন সমস্ত বই সেই নার্সের পায়ের ওপর পড়ে গিয়েছিল। আমি জানি না আমি কী বলেছিলাম, তবে আমি তার কাছে একটা প্রকাশনা অর্পণ করেছিলাম। সেখান থেকে চলে আসার সময়, আমি সাহস অর্জন করতে পেরেছিলাম এবং যিহোবার আশীর্বাদ অনুভব করেছিলাম। আমি সেই দিন ঐ ব্যস্ত রাস্তার মধ্যে অনেক পুস্তিকা অর্পণ করতে পেরেছিলাম।”

“১৯৩৩ সালের দিকে, রাজ্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনেক ভাইবোন লাউডস্পীকার লাগানো গাড়ি ব্যবহার করেছিল,” একজন বোন বলেন। একবার তিনি এবং এক সাক্ষি দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এক পাহাড়ি এলাকাতে প্রচার করছিলেন। “সেই ভাই গাড়িটা পাহাড়ের ওপরে নিয়ে গিয়েছিলেন আর আমরা নীচে শহরের মধ্যে ছিলাম,” তিনি স্মরণ করে বলেন। “তিনি যখন রের্কড করা বার্তাটা বাজাতে শুরু করেছিলেন, তখন সেটা এমন শোনাচ্ছিল যেন তা স্বর্গ থেকে আসছে। শহরের লোকেরা ভাইকে খুঁজে বের করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা শেষপর্যন্ত খুঁজে পায়নি। সেই রেকর্ড শেষ হয়ে যাওয়ার পর, আমরা লোকেদের কাছে গিয়েছিলাম এবং তাদের কাছে সাক্ষ্য দান করেছিলাম। আমি লাউডস্পিকার লাগানো আরও দুটো গাড়ির সঙ্গে কাজ করেছি আর আমি আপনাকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, অধিকাংশ লোকেরাই সেই বার্তা শুনতে চায়নি। কিন্তু, তাদের সেই বক্তৃতা না শুনে কোনো উপায় ছিল না যেহেতু সেই বার্তা লাউডস্পিকার লাগানো গাড়ি থেকে তাদের ঘরে আসছিল। আমরা সবসময় দেখেছি যে, যিহোবা সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিটা ব্যবহার করিয়েছেন। এই পদ্ধতির জন্য আমাদের সাধ্যমতো সাহস অর্জন করা দরকার ছিল, তবে তা সবসময়ই এর উদ্দেশ্য সাধন করেছে এবং যিহোবার নাম গৌরবান্বিত হয়েছে।”

১৯৩০-এর দশকে এবং ১৯৪০-এর দশকের শুরুর দিকে আমাদের পরিচর্যায় ফোনোগ্রাফ এবং রেকর্ডকৃত বাইবেলের বক্তৃতাগুলো ব্যবহার করা হতো। একজন খ্রিস্টান মহিলা স্মরণ করে বলেন: “একজন যুবতী বোন ফোনোগ্রাফ সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঘরে কাজ করছিল। সেই বোন যখন দরজায় সেই রেকর্ড বাজাতে শুরু করেছিল, তখন সেই ঘরের গৃহকর্তা এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, তিনি লাথি মেরে ফোনোগ্রাফটা বারান্দাতে ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু, একটা রেকর্ডও ভাঙ্গেনি। তিন জন পুরুষ একটা পার্ক করা ট্রাকে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল এবং দেখেছিল যে, কী ঘটেছে। তারা বোনকে তাদের জন্য রেকর্ডটা বাজাতে আমন্ত্রণ জানায় এবং তার কাছ থেকে সাহিত্যাদি নেয়। এটা সেই দুর্ব্যবহারের ক্ষতিপূরণ ছিল।” হ্যাঁ, এই ধরনের তাড়না সহ্য করার জন্য সাহসের প্রয়োজন হয়েছিল।

সেই বোন আরও বলেন: “১৯৪০ সালে রাস্তায় ম্যাগাজিন বিতরণ শুরু করার কাজটা আমার মনে আছে। শুরুর দিকে তথ্য নিয়ে পদযাত্রা করার ব্যবস্থা ছিল। ভাইবোনেরা একটা লাইন করে রাস্তার পাশ দিয়ে প্রতীক নিয়ে হেঁটে যেত, যেটার ওপর লেখা ছিল ‘ধর্ম হচ্ছে এক ফাঁদ ও ব্যাবসা’ এবং ‘ঈশ্বর ও খ্রিস্ট রাজার সেবা করুন।’ একই সময়ে লোকেদের কাছে বিনামূল্যে ট্র্যাক্ট বিতরণ করা হতো। এই ধরনের কাজ করার জন্য সাহসের প্রয়োজন ছিল কিন্তু তারা যিহোবার নামকে এবং তাঁর লোকেদেরকে রক্ষা করার জন্য জনসাধারণ্যে কাজ করেছিল।”

“ছোট্ট শহরের মধ্যে পত্রিকা বিতরণের কাজ করা খুব কঠিন ছিল,” আরেকজন বোন বলেছিলেন। “বিশেষভাবে যখন সাক্ষিদের বিরুদ্ধে চরম বিরোধিতা করা হতো, তখন এই কাজ করা আরও কঠিন ছিল। . . . পত্রিকা হাতে নিয়ে রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য এবং যে-কথাগুলো আমাদেরকে বলতে বলা হতো, তা বলার জন্য প্রকৃত সাহসের প্রয়োজন ছিল। তা সত্ত্বেও, আমরা কদাচিৎ শনিবারে প্রচার করা বাদ দিতাম। মাঝে মাঝে, লোকেরা বন্ধুত্বপরায়ণ ছিল। আবার অনেকসময়, রাগান্বিত লোকেরা ঘিরে ধরত আর কখনো কখনো উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণ এড়ানোর জন্য আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে হতো।”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, প্রচণ্ড তাড়না সত্ত্বেও যিহোবার সাক্ষিরা সাহসের সঙ্গে তাদের পরিচর্যা চালিয়ে গিয়েছিল। ১৯৪০ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৪১ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৩ দিনের এক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫০,০০০ জন প্রকাশক প্রায় ৮০ লক্ষ পুস্তিকা বিতরণ করেছিল, যেটাকে “সাহসী” সাক্ষ্যদানের এক সময় হিসেবে অভিহিত করা হয়।

ঈশ্বরের সংগঠনের অনেক বয়স্ক ব্যক্তি স্পষ্টভাবে অতীতের এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো স্মরণ করে, যেগুলোর জন্য তাদেরকে সাহসী হতে হয়েছিল। কেউ কেউ স্মরণ করে বলে, অনেক বছর ধরে তাদের সাহসী মনোভাব তাদের বার বার বলা একটা কথার মাধ্যমে প্রকাশ পেত আর তা ছিল, চলো, আমরা শেষপর্যন্ত উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করে চলি! এই বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার আগে কোন ধরনের ঈশ্বর প্রদত্ত বার্তা আমাদেরকে দেওয়া হবে, তা এখনও দেখার বাকি রয়েছে। কিন্তু, ঐশিক সাহায্যের মাধ্যমে আমরা বিশ্বাস ও সাহস সহকারে ক্রমাগতভাবে যিহোবার বাক্য প্রচার করে চলব।

[৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

রাজ্যের প্রচার কাজে রত হওয়ার জন্য সবসময়ই সাহসের প্রয়োজন ছিল