সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নাথন বিশুদ্ধ উপাসনার অনুগত সমর্থক

নাথন বিশুদ্ধ উপাসনার অনুগত সমর্থক

নাথন বিশুদ্ধ উপাসনার অনুগত সমর্থক

একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তিকে এই বিষয়টা বিশ্বাস করানো খুব সহজ কাজ নয় যে, তার পথ কলুষিত এবং তার সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। আপনি কি এইরকম একজন ব্যক্তির মুখোমুখি হবেন, যদি আপনি জানেন যে, তিনি নিজের মানসম্মান বাঁচানোর জন্য একজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন?

প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ বৎশেবার সঙ্গে ব্যভিচার করেছিলেন আর এর ফলে বৎশেবা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তাদের পাপ লুকানোর জন্য দায়ূদ বৎশেবার স্বামীকে হত্যা করেছিলেন আর এরপর বৎশেবাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। বেশ কয়েক মাস ধরে দায়ূদ এক দ্বৈত জীবনযাপন করেছিলেন এবং কোনো সন্দেহ নেই যে, তার রাজকার্যও সম্পাদন করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, যিহোবা রাজার এই পাপগুলো প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর ভাববাদী নাথনকে দায়ূদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন।

এটা এক কঠিন কার্যভার ছিল। নিজেকে নাথনের জায়গায় কল্পনা করুন। যিহোবার প্রতি আনুগত্য এবং ঐশিক মানগুলো দৃঢ়ভাবে মেনে চলা নিঃসন্দেহে নাথনকে দায়ূদের পাপগুলো মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। কীভাবে ভাববাদী তা করেছিলেন এবং রাজা দায়ূদকে এই বিষয়ে প্রত্যয়ী করেছিলেন যে, তাকে অনুতপ্ত হতে হবে?

কৌশলী শিক্ষক

দ্বিতীয় শমূয়েল ১২:১-২৫ পদ পড়ার জন্য একটু সময় করে নিন না কেন? কল্পনা করুন যে, আপনি নাথনের জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন, যখন তিনি দায়ূদকে এই গল্পটা বলছিলেন: “এক নগরে দুইটী লোক ছিল; তাহাদের মধ্যে এক জন ধনবান, আর এক জন দরিদ্র। ধনবানের অতি বিস্তর মেষাদি পাল ও গোপাল ছিল। কিন্তু সেই দরিদ্রের আর কিছুই ছিল না, কেবল একটী ক্ষুদ্র মেষবৎসা ছিল, সে তাহাকে কিনিয়া পুষিতেছিল; আর সেটী তাহার সঙ্গে ও তাহার সন্তানদের সঙ্গে থাকিয়া বাড়িয়া উঠিতেছিল; সে তাহারই খাদ্য খাইত, ও তাহারই পাত্রে পান করিত, আর তাহার বক্ষঃস্থলে শয়ন করিত, ও তাহার কন্যার মত ছিল। পরে ঐ ধনবানের গৃহে এক জন পথিক আসিল, তাহাতে বাটীতে আগত অতিথির জন্য পাক করণার্থে সে আপন মেষাদি পাল ও গোপাল হইতে কিছু লইতে কাতর হইল, কিন্তু সেই দরিদ্রের মেষবৎসাটী লইয়া, যে অতিথি আসিয়াছিল, তাহার জন্য তাহাই পাক করিল।”—২ শমূ. ১২:১-৪.

দায়ূদ—যিনি নিজেও একজন মেষপালক ছিলেন—স্পষ্টতই এটাকে এক সত্যিকারের ঘটনা বলে মনে করেছিলেন। একজন বর্ণনাকারী বলেন, “সম্ভবত নাথন এমন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষে অনুরোধ করার জন্য প্রায়ই তার কাছে আসতেন, যারা অন্য আর কোনোভাবে প্রতিকার লাভ করতে পারত না আর দায়ূদ এখন সেটাকে তার কর্তব্য বলেই ধরে নিয়েছিলেন।” এমনকী যদি তা-ই ঘটে থাকে, তবুও নাথন যেভাবে রাজার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তা বলার জন্য তার ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য ও সাহসের প্রয়োজন ছিল। নাথনের গল্প শুনে দায়ূদ ক্রোধান্বিত হয়ে উঠেছিলেন। “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যে ব্যক্তি সেই কর্ম্ম করিয়াছে, সে মৃত্যুর সন্তান,” তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন। তখন নাথন জোরালোভাবে এই ঘোষণা করেছিলেন: “আপনিই সেই ব্যক্তি।”—২ শমূ. ১২:৫-৭.

নাথন কেন সেই সমস্যাটাকে এভাবে তুলে ধরেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। কারো সঙ্গে আবেগগতভাবে জড়িয়ে পড়েছেন এমন কোনো ব্যক্তির পক্ষে তার পরিস্থিতিকে নিরপেক্ষভাবে দেখা সহজ বিষয় নয়। আমাদের কাজগুলো যদি আপত্তিকর হয়, তাহলে আমাদের সকলেরই নিজেদের কাজকে ন্যায্য বলে প্রমাণ করার চেষ্টায় অজুহাত দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু, নাথনের দৃষ্টান্ত দায়ূদকে অজান্তে নিজের কাজগুলোকে নিন্দা করার জন্য পরিচালিত করেছিল। রাজা স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলেন, নাথন যে-আচরণ সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, তা অত্যন্ত মন্দ। কিন্তু, কেবলমাত্র দায়ূদ নিজে সেটাকে নিন্দা করার পরই নাথন প্রকাশ করেছিলেন যে, সেই দৃষ্টান্ত রাজার প্রতি প্রযোজ্য। তখন দায়ূদ বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার পাপ কতটা গুরুতর। এটা তাকে অনুযোগ মেনে নেওয়ার সঠিক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, বৎশেবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আচরণের দ্বারা তিনি বাস্তবিকই যিহোবাকে “তুচ্ছ” করেছেন আর তিনি প্রাপ্য অনুযোগ মেনে নিয়েছিলেন।—২ শমূ. ১২:৯-১৪; গীত. ৫১, শীর্ষলিখন।

এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? একজন বাইবেল শিক্ষকের উদ্দেশ্য হল তার শ্রোতাদেরকে সঠিক উপসংহারে পৌঁছাতে সাহায্য করা। নাথন দায়ূদকে সম্মান করতেন আর তাই তিনি কৌশলতার সঙ্গে তার মুখোমুখি হয়েছিলেন। নাথন জানতেন যে, দায়ূদ মনেপ্রাণে ধার্মিকতা ও ন্যায়বিচার ভালোবাসতেন। তার দৃষ্টান্তের দ্বারা ভাববাদী এই ঈশ্বরীয় গুণাবলিকে নাড়া দিতে চেয়েছিলেন। আমরাও আন্তরিক ব্যক্তিদেরকে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারি। কীভাবে? নৈতিক বা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমরা শ্রেষ্ঠ এইরকম কোনো ভাব জাহির না করে বরং যা সঠিক তা করার জন্য তাদের অনুভূতিকে নাড়া দেওয়ার মাধ্যমে। কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল সেই বিষয়ে আমাদের ব্যক্তিগত মতামত নয় বরং বাইবেলই হচ্ছে আমাদের নির্দেশক।

অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে, ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যই নাথনকে একজন ক্ষমতাবান রাজাকে তিরস্কার করতে সমর্থ করেছিল। (২ শমূ. ১২:১) একইভাবে আনুগত্য আমাদেরকে যিহোবার ধার্মিক নীতিগুলোর পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্য সাহস প্রদান করবে।

বিশুদ্ধ উপাসনার সহায়ক

স্পষ্টতই, নাথন এবং দায়ূদ ভালো বন্ধু ছিল, কারণ দায়ূদ তার একজন ছেলের নাম নাথন রেখেছিলেন। (১ বংশা. ৩:১, ৫) বাইবেলের বিবরণে যখন প্রথম বার নাথনকে দেখা যায়, তখন তিনি দায়ূদের সঙ্গে ছিলেন। তারা দুজনেই যিহোবাকে ভালোবাসতেন। রাজা স্পষ্টতই নাথনের বিচারবুদ্ধির ওপর নির্ভর করতেন কারণ তিনি ভাববাদীর কাছে যিহোবার উদ্দেশে একটা মন্দির নির্মাণ করার জন্য তার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। “দেখুন,” দায়ূদ বলেছিলেন, “আমি এরস কাষ্ঠের গৃহে বাস করিতেছি, কিন্তু ঈশ্বরের সিন্দুক যবনিকার মধ্যে বাস করিতেছে।” সেটা শুনে নাথন রাজাকে বলেছিলেন: “ভাল, যাহা কিছু আপনার মনে আছে, তাহাই করুন; কেননা সদাপ্রভু আপনার সহবর্ত্তী।”—২ শমূ. ৭:২, ৩.

যিহোবার একজন বিশ্বস্ত উপাসক হিসেবে, নাথন উদ্যমের সঙ্গে পৃথিবীতে বিশুদ্ধ উপাসনার প্রথম স্থায়ী কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য দায়ূদের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু, সেই সময় নাথন স্পষ্টতই যিহোবার নামে কথা বলার পরিবর্তে বরং নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। সেই রাতে, ঈশ্বর তাঁর ভাববাদীকে রাজার কাছে এক ভিন্ন বার্তা নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন: দায়ূদ যিহোবার মন্দির নির্মাণ করবেন না। দায়ূদের একজন ছেলে তা নির্মাণ করবেন। তবে নাথন ঘোষণা করেছিলেন, ঈশ্বর দায়ূদের সঙ্গে এই বিষয়ে একটা চুক্তি করছিলেন যে, তার সিংহাসন “চিরস্থায়ী” হবে।—২ শমূ. ৭:৪-১৬.

মন্দির নির্মাণের ব্যাপারে, ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে নাথনের বিচারবুদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। কিন্তু, কোনোরকম অভিযোগ না করে এই নম্র ভাববাদী যিহোবার উদ্দেশ্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছিলেন এবং সেটার সঙ্গে সহযোগিতা করেছিলেন। ঈশ্বর যদি আমাদের কোনোভাবে সংশোধন করেন, সেই সময়ে অনুকরণ করার মতো কতই না চমৎকার এক উদাহরণ! একজন ভাববাদী হিসেবে নাথনের পরবর্তী কাজগুলো দেখায় যে, তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারাননি। আসলে, এইরকম মনে হয় যে, যিহোবা নাথনকে দর্শক গাদের সঙ্গে মিলে মন্দিরের সেবায় নিযুক্ত ৪,০০০ জন বাদককে সংগঠিত করার জন্য দায়ূদকে নির্দেশনা দিতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।—১ বংশা. ২৩:১-৫; ২ বংশা. ২৯:২৫.

রাজার পক্ষসমর্থনকারী

নাথন জানতেন যে, বৃদ্ধ দায়ূদের উত্তরসূরি হিসেবে শলোমনের রাজা হওয়ার কথা ছিল। তাই, নাথন দৃঢ়তার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যখন আদোনিয় দায়ূদের বার্ধক্যের বছরগুলোতে সিংহাসন দখল করার চেষ্টা করেছিলেন। নাথনের কাজে আবারও কৌশলতা ও আনুগত্য দেখা গিয়েছিল। প্রথমে তিনি বৎশেবাকে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন বৎশেবা তাদের ছেলে শলোমনকে রাজা করার বিষয়ে দায়ূদ যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা দায়ূদকে মনে করিয়ে দেন। তার পর, নাথন নিজে রাজার সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন, এটা জিজ্ঞেস করার জন্য যে, দায়ূদ আদোনিয়কে তার পরবর্তী উত্তরসূরি হিসেবে কর্তৃত্ব দিয়েছেন কি না। বৃদ্ধ রাজা পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে, শলোমনকে অভিষিক্ত করার এবং রাজা হিসেবে ঘোষণা করার জন্য নাথনকে ও অন্যান্য অনুগত দাসকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আদোনিয়ের বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল।—১ রাজা. ১:৫-৫৩.

বিনয়ী ইতিহাসবিদ

নাথন ও গাদকে সাধারণত ১ শমূয়েল ২৫ থেকে ৩১ অধ্যায় এবং সেইসঙ্গে ২ শমূয়েল বইয়ের লেখক বলে মনে করা হয়ে থাকে। ওই বইগুলোতে লিপিবদ্ধ অনুপ্রাণিত ইতিহাসের বিষয়ে এই কথা বলা হয়েছে: “আর দেখ, শমূয়েল দর্শকের পুস্তকে, নাথন ভাববাদীর পুস্তকে ও গাদ দর্শকের পুস্তকে দায়ূদ রাজার আদ্যোপান্ত কর্ম্মের বৃত্তান্ত . . . লিখিত আছে।” (১ বংশা. ২৯:২৯, ৩০) এ ছাড়া, নাথন ‘শলোমনের বৃত্তান্তের’ বিবরণ লেখার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। (২ বংশা. ৯:২৯) খুব সম্ভবত, এর মানে হচ্ছে নাথন এমনকী দায়ূদের মৃত্যুর পরও রাজসভার বিভিন্ন কাজে সক্রিয় ছিলেন।

নাথন সম্বন্ধে আমরা যা জানি, সেগুলোর অধিকাংশই হয়তো ভাববাদী নিজেই লিখেছিলেন। তবে, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে তার নীরবতাও আমাদেরকে তার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানায়। নাথন স্পষ্টতই একজন বিনয়ী ইতিহাসবিদ ছিলেন। নিজের সুনাম অর্জন করার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার ছিল না। একটি বাইবেল অভিধান অনুসারে অনুপ্রাণিত বিবরণে তাকে “কোনো ভূমিকা এবং কোনো বংশপরিচয়” ছাড়াই আবির্ভূত হতে দেখা যায়। আমরা নাথনের পূর্বপুরুষ অথবা ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে কিছুই জানি না।

যিহোবার প্রতি আনুগত্যের দ্বারা অনুপ্রাণিত

শাস্ত্র আমাদেরকে নাথন সম্বন্ধে যে-কয়েকটা বিষয় জানায়, সেগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, তিনি ঐশিক ব্যবস্থাগুলোর একজন নম্র কিন্তু একইসঙ্গে একজন কর্মোদ্যমী পক্ষসমর্থনকারী ছিলেন। যিহোবা ঈশ্বর তাকে বিভিন্ন গুরুদায়িত্ব দিয়েছিলেন। নাথনের বিভিন্ন গুণ যেমন, ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য এবং ঐশিক চাহিদাগুলোর প্রতি গভীর উপলব্ধিবোধ নিয়ে ধ্যান করুন। এই ধরনের গুণাবলি অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করুন।

আপনাকে সম্ভবত ব্যভিচারী রাজাদের তিরস্কার করার জন্য কিংবা বিদ্রোহগুলোকে ব্যর্থ করার জন্য পাঠানো হয় না। কিন্তু ঈশ্বরের সাহায্যে, আপনি ঈশ্বরের প্রতি অনুগত হতে পারেন এবং তাঁর ধার্মিক মানগুলোকে সমর্থন করতে পারেন। এ ছাড়া, আপনি সত্যের একজন সাহসী ও সেইসঙ্গে কৌশলী শিক্ষক এবং বিশুদ্ধ উপাসনার সহায়ক হতে পারেন।

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

রাজার পক্ষসমর্থনকারী হিসেবে নাথন বৎশেবার সঙ্গে কৌশলতার সঙ্গে কথা বলেছিলেন