সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখুন

আপনার তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখুন

আপনার তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখুন

“তুমি বাক্য প্রচার কর, . . . কার্য্যে অনুরক্ত হও।” —২ তীম. ৪:২.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

কেন প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা তৎপরতার সঙ্গে প্রচার করেছিল?

কীভাবে আমরা তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখতে পারি?

কেন রাজ্যের প্রচার কাজ যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আরও বেশি জরুরি?

১, ২. ‘অনুরক্তভাবে’ বা তৎপরতার সঙ্গে ‘প্রচার করিবার’ আদেশ সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

 যেসমস্ত লোকের কাজই হচ্ছে জীবন রক্ষা করা, তারা সাধারণত তৎপরতার মনোভাব নিয়ে কাজ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, দমকলকর্মীরা কোনো জরুরি ডাক পেয়েই দ্রুত এগিয়ে যায়; তারা জানে যে, জীবন হয়তো ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা লোকেদের সাহায্য করতে চাই, যেন তারা রক্ষা পায়। এই কারণে, আমাদেরকে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার যে-দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটাকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকি। তাই বলে আমরা কোনো কিছু চিন্তা না করেই তাড়াহুড়ো করে সেই কাজ করি না। তাহলে, প্রেরিত পৌল সেই সময় কী বুঝিয়েছিলেন, যখন তিনি এই উপদেশ দিয়েছিলেন যে: “তুমি বাক্য প্রচার কর, . . . কার্য্যে অনুরক্ত হও,” বা তৎপরতার সঙ্গে কাজ করো? (২ তীম. ৪:২) কীভাবে আমরা তৎপরতার সঙ্গে প্রচার করতে পারি? আর কেন আমাদের কাজ খুবই জরুরি?

কেন আমাদের প্রচার কাজ জরুরি?

৩. লোকেদের রাজ্যের বার্তা গ্রহণ অথবা প্রত্যাখ্যান করার ফল কী হতে পারে?

আপনি যখন আমাদের প্রচার কাজের ফল স্বরূপ কী লাভ করা যাবে অথবা কী হারিয়ে যাবে, সেই বিষয়টা নিয়ে বিবেচনা করেন, তখন আপনি সম্ভবত অন্যদেরকে সুসমাচার জানানোর জরুরি প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। (রোমীয় ১০:১৩, ১৪) ঈশ্বরের বাক্য বলে: “যখন আমি দুষ্টকে বলি, তুমি মরিবেই মরিবে, তখন যদি সে আপন পাপ হইতে ফিরিয়া ন্যায় ও ধর্ম্মাচরণ করে . . . তবে অবশ্য বাঁচিবে, সে মরিবে না। তাহার কৃত সমস্ত পাপ আর তাহার বলিয়া স্মরণ হইবে না।” (যিহি. ৩৩:১৪-১৬) বস্তুতপক্ষে, যারা রাজ্যের বার্তা সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়, তাদেরকে বাইবেল বলে: “তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।”—১ তীম. ৪:১৬; যিহি. ৩:১৭-২১.

৪. কেন ধর্মভ্রষ্টতার কারণে প্রথম শতাব্দীতে প্রচার করা জরুরি হয়ে পড়েছিল?

পৌল যে-কারণে তীমথিয়কে তৎপরতার সঙ্গে প্রচার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা উপলব্ধি করার জন্য আমাদের মূল শাস্ত্রপদের কিছু প্রসঙ্গ বিবেচনা করুন। আমরা পড়ি: “তুমি বাক্য প্রচার কর, সময়ে অসময়ে কার্য্যে অনুরক্ত হও, সম্পূর্ণ সহিষ্ণুতা ও শিক্ষাদান-পূর্ব্বক অনুযোগ কর, ভর্ৎসনা কর, চেতনা দেও। কেননা এমন সময় আসিবে, যে সময় লোকেরা নিরাময় শিক্ষা সহ্য করিবে না, কিন্তু কাণচুল্‌কানি-বিশিষ্ট হইয়া আপন আপন অভিলাষ অনুসারে আপনাদের জন্য রাশি রাশি গুরু ধরিবে, এবং সত্য হইতে কাণ ফিরাইয়া . . . বিপথে যাইবে।” (২ তীম. ৪:২-৪) যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, ধর্মভ্রষ্টতা দেখা যাবে। (মথি ১৩:২৪, ২৫, ৩৮) যেহেতু সেই ধর্মভ্রষ্টতা দেখা গিয়েছিল, তাই তীমথিয়ের জন্য এমনকী মণ্ডলীর ভিতরেও ‘বাক্য প্রচার করা’ জরুরি ছিল, যাতে খ্রিস্টানরা মিথ্যা শিক্ষার প্রতারণাপূর্ণ আকর্ষণ দ্বারা বিভ্রান্ত না হয়। জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল। বর্তমান দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়?

৫, ৬. আমাদের পরিচর্যায় আমরা হয়তো কোন জনপ্রিয় ধারণাগুলোর মুখোমুখি হতে পারি?

সত্য উপাসনার মধ্য থেকে ধর্মভ্রষ্টতা এখন আরও বেড়ে গিয়েছে এবং ছড়িয়ে পড়েছে। (২ থিষল. ২:৩, ৮) বর্তমানে, কোন শিক্ষাগুলো লোকেদের কানে চুলকানি বা সুড়সুড়ি দেয়? অনেক জায়গায়, বিবর্তনবাদের শিক্ষাকে ধর্মীয় অনুভূতির মতো করে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও বিবর্তনবাদকে সাধারণত বৈজ্ঞানিক ভাষায় উপস্থাপন করা হয়, তবে বলতে গেলে এটা ঈশ্বরবিহীন এক ধর্মে পরিণত হয়ে গিয়েছে আর লোকেরা ঈশ্বর এবং অন্যদেরকে যেভাবে দেখে থাকে, সেই বিষয়টাকে প্রভাবিত করছে। আরেকটা জনপ্রিয় শিক্ষা হল, ঈশ্বর আমাদের ব্যাপারে আগ্রহী নন; তাই আমাদেরও তাঁর ব্যাপারে আগ্রহী হওয়ার প্রয়োজন নেই। কেন এই শিক্ষাগুলো এতটাই আকর্ষণীয় যে, সেগুলো লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিকভাবে নিদ্রাচ্ছন্ন করে ফেলছে? দুটো শিক্ষার মধ্যেই এই অন্তর্নিহিত বার্তা রয়েছে, ‘আপনি যা চান, তা-ই করতে পারেন, কারণ আপনাকে নিকাশ দিতে হবে না।’ এটা সত্যিই এমন এক বার্তা, যা অনেকের কানে সুড়সুড়ি দিয়েছে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১০:৪.

কিন্তু আরও উপায় রয়েছে, যেগুলোর দ্বারা লোকেরা নিজেদের কানে সুড়সুড়ি দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এখনও গির্জায় যায় এমন কিছু ব্যক্তি এইরকম শিক্ষকদের পছন্দ করে, যারা তাদের বলে, ‘আপনি যা-ই করুন না কেন, ঈশ্বর আপনাকে ভালোবাসেন।’ যাজকরা এবং পাদরিরা এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করার মাধ্যমে অন্যদের কানে সুড়সুড়ি দেয় যে, বিভিন্ন পর্বে, প্রভুর ভোজে, ধর্মীয় উৎসবে এবং প্রতিমাগুলোর ওপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ রয়েছে। এই গির্জাগামী লোকেরা তাদের পরিস্থিতির বিপদ সম্বন্ধে সামান্যই বুঝতে পারে। (গীত. ১১৫:৪-৮) তবে, আমরা যদি তাদেরকে বাইবেলের সত্য বার্তা বোঝার জন্য আধ্যাত্মিকভাবে জাগিয়ে তুলতে পারি, তাহলে তারা ঈশ্বরের রাজ্য থেকে উপকার লাভ করতে পারে।

তৎপরতার সঙ্গে প্রচার করা বলতে কী বোঝায়?

৭. কীভাবে আমরা তৎপরতার মনোভাব দেখাতে পারি?

একজন সতর্ক সার্জনকে তার কাজের প্রতি একাগ্র মনোযোগ দিতে হয় কারণ জীবন ঝুঁকির মুখে থাকে। আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যায়, আমাদের কাজের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে আমরা তৎপরতার মনোভাব দেখাতে পারি যেমন, আমরা চিন্তা করতে পারি যে, কোন কোন বিষয়, প্রশ্ন অথবা তথ্য সেই ব্যক্তিদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পারে, যাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়। এ ছাড়া, তৎপরতার মনোভাব আমাদের তালিকাকে রদবদল করতেও পরিচালিত করতে পারে, যাতে আমরা সেই সময়ে লোকেদের সঙ্গে দেখা করতে পারি, যখন তারা আমাদের কথা শুনতে ইচ্ছুক থাকে।—রোমীয় ১:১৫, ১৬; ১ তীম. ৪:১৬.

৮. তৎপরতা সহকারে কাজ করার সঙ্গে সাধারণত কী জড়িত?

তৎপরতার মনোভাব থাকার সঙ্গে অগ্রাধিকার স্থাপন করাও জড়িত। (পড়ুন, আদিপুস্তক ১৯:১৫.) উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনার চিকিৎসক আপনার টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার পর, আপনাকে তার অফিসে ডাকেন এবং আন্তরিকতার সঙ্গে আপনাকে বলেন: “দেখুন! আপনার পরিস্থিতি খুবই গুরুতর। আপনার অসুস্থতার বিষয়ে কিছু করার জন্য আপনার হাতে খুব বেশি হলে আর এক মাস সময় আছে।” আপনি সম্ভবত তার অফিস থেকে এমনভাবে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যাবেন না, যেমনটা একজন দমকলকর্মী জরুরি ডাক পেয়েই বেরিয়ে যান। বরং আপনি হয়তো তার পরামর্শ নেবেন, ঘরে ফিরে যাবেন এবং আপনার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করবেন।

৯. কেন আমরা বলতে পারি যে, ইফিষে থাকার সময়ে পৌল তৎপরতার সঙ্গে প্রচার করেছিলেন?

এশিয়া দেশে পৌল তার সুসমাচার প্রচার সম্বন্ধে ইফিষ থেকে আসা প্রাচীনদের উদ্দেশে যা বলেছিলেন, সেটা লক্ষ করার মাধ্যমে আমরা তার তৎপরতা সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে পারি। (পড়ুন, প্রেরিত ২০:১৮-২১.) স্পষ্টতই, সেখানে পৌঁছানোর প্রথম দিন থেকেই তিনি সুসমাচার নিয়ে লোকেদের ঘরে ঘরে যাওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এ ছাড়া, দু-বছর ধরে তিনি নিয়মিতভাবে ‘প্রতিদিন তূরাণ্ণের বিদ্যালয়ে কথা প্রসঙ্গ করিয়াছিলেন।’ (প্রেরিত ১৯:১, ৮-১০) নিশ্চিতভাবেই, পৌলের তৎপরতার মনোভাব তার তালিকার ওপর প্রভাব ফেলেছিল। ‘আমাদিগকে অনুরক্তভাবে’ বা তৎপরতার সঙ্গে ‘পরিচর্যা করিবার’ ব্যাপারে যে-আহ্বান জানানো হয়েছে, তা আমাদেরকে দায়িত্বের দ্বারা ভারগ্রস্ত করে ফেলার উদ্দেশ্যে জানানো হয়নি। বরং, প্রচার কাজকে আমাদের জীবনে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

১০. খ্রিস্টানরা প্রায় ১০০ বছর আগে তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছিল বলে কেন আমরা আনন্দিত হতে পারি?

১০ বাইবেল ছাত্রদের একটা ছোটো দল, যারা ১৯১৪ সালের আগে সুসমাচার প্রচার করার কাজ শুরু করেছিল, তাদের উদাহরণ তুলে ধরে যে, তৎপরতার মনোভাব থাকা বলতে কী বোঝায়। যদিও তাদের সংখ্যা মাত্র কয়েক হাজার ছিল, কিন্তু তারা সময়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিল এবং উদ্যমের সঙ্গে রাজ্যের প্রচার কাজ করেছিল। তারা ২,০০০-রেরও বেশি সংবাদপত্রে ধর্মীয় উপদেশ ছাপিয়েছিল এবং রঙিন স্লাইড প্রোগ্রাম ও সেইসঙ্গে “ফটো-ড্রামা অভ্‌ ক্রিয়েশন” নামে চলচ্চিত্র উপস্থাপন করেছিল। এভাবে, তারা লক্ষ লক্ষ লোকের কাছে সুসমাচার নিয়ে গিয়েছিল। তাদের যদি তৎপরতার মনোভাব না থাকত, তাহলে আমাদের মধ্যে কত জনই-বা রাজ্যের বার্তা শুনতে পেতাম?পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৬০.

আপনার তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলার বিরুদ্ধে সাবধান থাকুন

১১. কোন বিষয়টা কিছু ব্যক্তিকে তাদের তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলতে পরিচালিত করেছে?

১১ বিভিন্ন বিক্ষেপ একজন ব্যক্তিকে প্রচার কাজ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত রাখতে পারে। শয়তানের বিধিব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যেন তা আমাদেরকে ব্যক্তিগত বিষয়গুলো অনুধাবন করায় ও অন্যান্য বিষয়ে মগ্ন করে ফেলতে পারে। (১ পিতর ৫:৮; ১ যোহন ২:১৫-১৭) একসময় যিহোবার সেবাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল এমন কিছু ব্যক্তি তাদের তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলেছে। উদাহরণ হিসেবে, দীমা নামে প্রথম শতাব্দীর একজন খ্রিস্টান পৌলের ‘সহকারি’ ছিলেন কিন্তু দীমা অধার্মিক বিধিব্যবস্থার দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন। এক কঠিন সময়ে তার ভাইকে শক্তিশালী করার বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিয়ে চলার পরিবর্তে, দীমা পৌলকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।—ফিলী. ২৩, ২৪; ২ তীম. ৪:১০.

১২. আমাদের জন্য এখন কোন সুযোগ খোলা রয়েছে আর চিরকাল ধরে কোন সুযোগগুলো খোলা থাকবে?

১২ আমরা যদি আমাদের তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখতে চাই, তাহলে জীবনে যে-সুযোগগুলো আসে, সেগুলো উপভোগ করার জোরালো আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে। আমাদেরকে ‘প্রকৃতরূপে জীবন ধরিয়া রাখিবার’ জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে। (১ তীম. ৬:১৮, ১৯) সম্ভবত আপনার এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে পৃথিবীতে অনন্তজীবন, আপনাকে আগ্রহজনক অনেক কাজ উপভোগ করার অফুরন্ত সুযোগ দেবে। কিন্তু এখন, অন্যদেরকে আরমাগিদোন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাহায্য করা আমাদের সময়ে এক অদ্বিতীয় সুযোগ।

১৩. এখন যেহেতু আমরা খ্রিস্টান হয়েছি, তাই কীভাবে আমরা তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখতে পারি?

১৩ আমাদের চারপাশের জগতের অধিকাংশ লোক যে আধ্যাত্মিক অর্থে অজ্ঞানের মতো নিদ্রিত রয়েছে সেই বিষয়টা বিবেচনা করলে, কী আমাদেরকে তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলা এড়ানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? আমরা এই বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারি যে, আমরাও বলতে গেলে এক সময় অন্ধকারে নিদ্রিত ছিলাম। কিন্তু, আমাদেরকে জাগিয়ে তোলা হয়েছে এবং খ্রিস্ট আমাদের ওপর আলো উদয় করেছেন, যেমনটা পৌল উল্লেখ করেছেন। এখন আমাদের সেই আলো বহন করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১৪.) সেই বিষয়টা উল্লেখ করার পর পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা ভাল করিয়া দেখ, কিরূপে চলিতেছ; অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের ন্যায় চল। সুযোগ কিনিয়া লও, কেননা এই কাল মন্দ।” (ইফি. ৫:১৫, ১৬) এই ধরনের মন্দতার মধ্যে থেকেও আসুন আমরা সেই কাজগুলোর জন্য “সুযোগ” বা সময় ‘কিনিয়া লই,’ যা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে জাগ্রত রাখতে পারে।

আমরা অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাস করছি

১৪-১৬. কোন বিষয়টা রাজ্যের প্রচার কাজকে যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আরও জরুরি করে তুলেছে?

১৪ খ্রিস্টীয় পরিচর্যা সবসময়ই জরুরি ছিল কিন্তু এখন এটা যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। ১৯১৪ সাল থেকে, ঈশ্বরের বাক্যে বর্ণিত যৌগিক চিহ্ন সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। (মথি ২৪:৩-৫১) মানবজাতির রক্ষা পাওয়া আগের চেয়ে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন চুক্তি সত্ত্বেও মহাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর হাতে এখনও নিক্ষেপ করার জন্য প্রস্তুত এমন প্রায় ২,০০০টা পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ, পারমাণবিক দ্রব্য “হারিয়ে” যাওয়ার শত শত ঘটনার বিষয়ে রিপোর্ট করেছে। হারিয়ে যাওয়া পারমাণবিক দ্রব্যের মধ্যে কিছু কি সন্ত্রাসীদের কাছে রয়েছে? পর্যবেক্ষকরা বলে যে, একজন সন্ত্রাসীর দ্বারা শুরু হওয়া একটা যুদ্ধের মাধ্যমেই সমস্ত মানবজাতিকে খুব সহজেই ধ্বংস করা যেতে পারে। কিন্তু, যুদ্ধই একমাত্র বিষয় নয়, যা মানুষের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে হুমকি স্বরূপ।

১৫ “জলবায়ুর পরিবর্তন একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড়ো হুমকি,” ২০০৯ সালের দ্যা লেনসেট এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-এর একটা রিপোর্ট বলে। সেখানে বলা হয়েছিল: “স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আগামী কয়েক দশক ধরে অধিকাংশ জনগণকে প্রভাবিত করবে এবং কোটি কোটি লোকের জীবন ও সুখস্বাচ্ছন্দ্যকে ব্যাপক মাত্রায় ঝুঁকির মুখে ফেলবে।” এর প্রভাব হতে পারে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা, বন্যা, মহামারি, ঘূর্ণিঝড়, হ্রাসপ্রাপ্ত সম্পদ নিয়ে যুদ্ধের কারণে ব্যাপক মাত্রার ধ্বংস। হ্যাঁ, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো সভ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

১৬ কিছু লোক হয়তো চিন্তা করতে পারে যে, পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি এমন ঘটনাগুলোর দিকে পরিচালিত করতে পারে, যা ‘চিহ্নকে’ পরিপূর্ণ করে। কিন্তু, অধিকাংশ লোকই চিহ্নের প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে পারে না। তবে, দশকের পর দশক ধরে এমন ঘটনাগুলো দেখা যাচ্ছে, যেগুলো ইঙ্গিত করে যে, খ্রিস্টের উপস্থিতি এক বাস্তব বিষয় এবং এই বিধিব্যবস্থার শেষ খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে। (মথি ২৪:৩) এর আগে আর কখনো চিহ্নের এত বেশি বৈশিষ্ট্য এতটা স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি। লোকেদের আধ্যাত্মিক নিদ্রা থেকে জেগে ওঠার সময় এখনই। আমাদের পরিচর্যা তাদেরকে জেগে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারে।

১৭, ১৮. (ক) কীভাবে “এই কাল” আমাদের প্রভাবিত করে? (খ) কী লোকেদেরকে রাজ্যের বার্তার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে?

১৭ যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম প্রমাণ করার এবং শেষকালের জন্য নির্ধারিত প্রচার কাজ সম্পন্ন করার জন্য কেবলমাত্র অল্পসময় বাকি রয়েছে। পৌল প্রথম শতাব্দীর রোমের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে যা বলেছিলেন, তা বর্তমানে এমনকী আরও বেশি অর্থপূর্ণ: “তোমরা এই কাল জ্ঞাত আছ; ফলতঃ এখন তোমাদের নিদ্রা হইতে জাগিবার সময় হইল; কেননা যখন আমরা বিশ্বাস করিয়াছিলাম, তখন অপেক্ষা এখন পরিত্রাণ আমাদের আরও সন্নিকট।”—রোমীয় ১৩:১১.

১৮ শেষকাল সম্বন্ধে যে-ঘটনাগুলো ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল, সেগুলো ব্যক্তি-বিশেষদেরকে তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন করতে পারে। অন্যেরা, মানুষের যে সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে সেই সম্বন্ধে সচেতন হয়ে ওঠে, যখন তারা অর্থনৈতিক মন্দা, পারমাণবিক হুমকি, দৌরাত্ম্যমূলক অপরাধ অথবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার ব্যাপারে মানবসরকারের ব্যর্থতা নিয়ে চিন্তা করে। আবার অন্যেরা তাদের নিজ নিজ পরিবারের বিভিন্ন ঘটনার কারণে যেমন, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, বিবাহবিচ্ছেদ অথবা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণে তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন হয়েছে। আমরা যখন পরিচর্যায় অংশ নিই, তখন আমরা এইরকম লোকেদের সাহায্য করার জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিই।

তৎপরতার মনোভাবের দ্বারা অনুপ্রাণিত

১৯, ২০. কীভাবে তৎপরতার মনোভাব অনেক খ্রিস্টানকে তাদের জীবনধারা পরিবর্তন করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে?

১৯ তৎপরতার মনোভাব অনেক খ্রিস্টানকে পরিচর্যায় তাদের অংশকে বাড়ানোর জন্য অনুপ্রাণিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইকুয়েডরের অল্পবয়সি এক দম্পতি ২০০৬ সালে “আপনার চোখকে সরল রাখুন” নামক বিশেষ সম্মেলন দিনের কার্যক্রম শোনার পর, তাদের জীবনকে সাদাসিধে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা তাদের সেই জিনিসগুলোর একটা তালিকা করেছিল, যেগুলো তাদের প্রয়োজন নেই এবং তিন মাসের মধ্যে তিন বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে দিয়ে এক বেডরুমের একটা অ্যাপার্টমেন্টে চলে গিয়েছিল, কিছু জিনিস বিক্রি করে দিয়েছিল ও ঋণমুক্ত হয়েছিল। খুব শীঘ্র তারা সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করতে শুরু করেছিল এবং যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করার বিষয়ে সীমা অধ্যক্ষের পরামর্শের প্রতি সাড়া দিয়েছিল।

২০ উত্তর আমেরিকার একজন ভাই লেখেন: “আমি ও আমার স্ত্রী যখন ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত একটা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম, তখন ৩০ বছর হয়ে গেছে আমরা বাপ্তিস্ম নিয়েছি। কার্যক্রমের পর গাড়ি চালিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় আমরা আলোচনা করেছিলাম যে, আমাদের জীবনকে সাদাসিধে করার বিষয়ে প্রদত্ত পরামর্শ আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি। (মথি ৬:১৯-২২) আমাদের তিনটে বাড়ি, জায়গাজমি, কয়েকটা বিলাসবহুল গাড়ি, একটা মোটরবোট এবং ভ্রাম্যমান ঘরসহ একটা গাড়িও ছিল। আমাদেরকে নিশ্চয়ই নির্বোধ খ্রিস্টানদের মতো মনে হয়েছে এইরকমটা অনুভব করে, আমরা পূর্ণসময়ের পরিচর্যাকে আমাদের লক্ষ্য করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা ২০০৮ সালে, আমাদের মেয়ের সঙ্গে নিয়মিত অগ্রগামীর কাজে যোগ দিয়েছিলাম। ভাইবোনদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়টা কতই না আনন্দদায়ক হয়েছে! আমরা যেখানে বেশি প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে কাজ করতে সমর্থ হয়েছি। এ ছাড়া, যিহোবার জন্য আরও বেশি কাজ করা আমাদেরকে তাঁর আরও নিকটবর্তী করেছে। বিশেষ করে, লোকেরা যখন ঈশ্বরের বাক্যের সত্য শোনে ও বুঝতে পারে, তখন তাদের চোখে যে-আনন্দ দেখা যায়, তা দেখতে পারার বিশেষ সুযোগটা পরিতৃপ্তিদায়ক।”

২১. কোন জ্ঞান আমাদের কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করে?

২১ আমরা জানি যে, খুব শীঘ্র এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ওপর কী ঘটতে যাচ্ছে আর সেটা হল “ভক্তিহীন মনুষ্যদের বিচার ও বিনাশের দিন।” (২ পিতর ৩:৭) ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান আমাদেরকে উদ্যোগের সঙ্গে আসন্ন মহাক্লেশ ও এর পরে যে-নতুন জগৎ আসবে, সেই বিষয়ে ঘোষণা করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। লোকেদের কাছে প্রকৃত আশা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা ক্রমাগত আরও বেশি তৎপরতার মনোভাব অনুভব করে থাকি। এই জরুরি কাজে পূর্ণরূপে রত থাকার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বর ও সহমানবদের প্রতি প্রকৃত প্রেম প্রদর্শন করি।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]