সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের প্রত্যাশায় আনন্দ করা

আমাদের প্রত্যাশায় আনন্দ করা

আমাদের প্রত্যাশায় আনন্দ করা

‘সেই অনন্ত জীবনের আশা রহিয়াছে, যাহা মিথ্যাকথনে অসমর্থ ঈশ্বর অতি পূর্ব্ব কালে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন।’ —তীত ১:২.

পুনরালোচনা

কীভাবে আমরা জানি যে, একজন অভিষিক্ত ব্যক্তি যখন নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখে জীবনযাপন করেন, তখন স্বর্গে আনন্দ হয়?

আরও মেষের প্রত্যাশার বাস্তবায়ন কীভাবে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যাশার বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

আমাদের প্রত্যাশাকে পরিপূর্ণ হতে দেখার জন্য আমাদের কোন কোন “পবিত্র আচার ব্যবহার” এবং “ঈশ্বরের সেবার্থে কাজ” দেখাতে হবে?

১. যিহোবা আমাদের যে-প্রত্যাশা প্রদান করেছেন, তা কীভাবে আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে?

 যিহোবা হলেন “প্রত্যাশার ঈশ্বর।” প্রেরিত পৌল এই কথা বলেছিলেন আর সেইসঙ্গে আরও যুক্ত করেছিলেন যে, যিহোবা ‘আমাদিগকে বিশ্বাস দ্বারা সমস্ত আনন্দে ও শান্তিতে পরিপূর্ণ করিতে পারেন, যেন আমরা পবিত্র আত্মার পরাক্রমে প্রত্যাশায় উপচিয়া পড়ি।’ (রোমীয় ১৫:১৩) আমরা যদি প্রত্যাশায় উপচে পড়ি, তাহলে আমরা নিজেদের হৃদয়কে আনন্দ ও শান্তিতে পরিপূর্ণ করে এমন যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে পারব, যা হয়তো উত্থাপিত হতে পারে। অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মতো, অন্যান্য খ্রিস্টানের জন্যও এই ধরনের আশা “প্রাণের লঙ্গরস্বরূপ, অটল ও দৃঢ়” প্রমাণিত হবে। (ইব্রীয় ৬:১৮, ১৯) আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে এমন কিছু, যেটাকে আমরা জীবনঝড়ে টিকে থাকার সময়ে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারি এবং যা আমাদেরকে সন্দেহ করার অথবা বিশ্বাসের অভাব দেখানোর দিকে ভেসে না যাওয়ার বিরুদ্ধে সাহায্য করবে।—পড়ুন, ইব্রীয় ২:১; ৬:১১.

২. বর্তমানে খ্রিস্টানদের মধ্যে কোন দুটো প্রত্যাশা রয়েছে আর অভিষিক্ত ব্যক্তিদের যে-প্রত্যাশা রয়েছে, সেটার প্রতি আরও মেষ কেন আগ্রহী?

এই শেষকালে বসবাসরত খ্রিস্টানরা, দুটো প্রত্যাশার মধ্যে একটার প্রতি তাদের মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত রাখে। অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে গঠিত ‘ক্ষুদ্র মেষপালের’ অবশিষ্ট সদস্যদের, খ্রিস্টের সঙ্গে তাঁর রাজ্যের রাজা ও যাজক হিসেবে স্বর্গে অমর জীবনের প্রত্যাশা রয়েছে। (লূক ১২:৩২; প্রকা. ৫:৯, ১০) এ ছাড়া, বহু সংখ্যক “বিস্তর লোক,” যারা ‘আরও মেষের’ সদস্য, তাদের মশীহ রাজ্যের প্রজা হিসেবে এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা রয়েছে। (প্রকা. ৭:৯, ১০; যোহন ১০:১৬) আরও মেষের কখনো এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, তাদের পরিত্রাণ খ্রিস্টের সেই অভিষিক্ত ‘ভ্রাতৃগণকে’ সক্রিয়ভাবে সমর্থন করার ওপর নির্ভর করে, যারা এখনও পৃথিবীতে রয়েছে। (মথি ২৫:৩৪-৪০) অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তাদের পুরস্কার লাভ করবে তবে আরও মেষের প্রত্যাশাও নিশ্চিতভাবে পরিপূর্ণ হবে। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৩৯, ৪০.) প্রথমে, আসুন আমরা অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সামনে যে-প্রত্যাশা রয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখি।

অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের ‘জীবন্ত প্রত্যাশা’

৩, ৪. কীভাবে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের “জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত . . . নতুন জন্ম” হয় আর সেই প্রত্যাশা কী?

প্রেরিত পিতর অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে দুটো চিঠি লিখেছিলেন, যাদেরকে তিনি “মনোনীত” বলে অভিহিত করেছিলেন। (১ পিতর ১:১) তিনি সেই চমৎকার প্রত্যাশার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন, যা ক্ষুদ্র মেষপালকে প্রদান করা হয়েছে। তার প্রথম চিঠিতে পিতর লিখেছিলেন: “ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা; তিনি নিজ বিপুল দয়ানুসারে মৃতগণের মধ্য হইতে যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা, জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত আমাদিগকে পুনর্জন্ম [“নতুন জন্ম,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] দিয়াছেন, অক্ষয় ও বিমল ও অজর দায়াধিকারের নিমিত্ত দিয়াছেন; সেই দায়াধিকার স্বর্গে তোমাদের নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে; এবং ঈশ্বরের শক্তিতে তোমরাও পরিত্রাণের নিমিত্ত বিশ্বাস দ্বারা রক্ষিত হইতেছ, যে পরিত্রাণ শেষকালে প্রকাশিত হইবার জন্য প্রস্তুত আছে। ইহাতে তোমরা উল্লাস করিতেছ।”—১ পিতর ১:৩-৬.

যিহোবার দ্বারা মনোনীত সীমিত সংখ্যক খ্রিস্টানের, স্বর্গীয় রাজ্য সরকারে খ্রিস্টের সহযোগী হওয়ার জন্য ঈশ্বরের আত্মায়জাত পুত্র হিসেবে “নতুন জন্ম” হয়। তারা খ্রিস্টের সঙ্গে রাজা ও যাজক হওয়ার জন্য পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছে। (প্রকা. ২০:৬) পিতর বলেন যে, এই “নতুন জন্ম” তাদের জন্য “জীবন্ত প্রত্যাশার” সুযোগ খুলে দিয়েছে, যে-প্রত্যাশাকে তিনি ‘অক্ষয় ও বিমল ও অজর দায়াধিকার’ বলে অভিহিত করেছেন, যা তাদের জন্য “স্বর্গে” সঞ্চিত রয়েছে। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তাদের জীবন্ত প্রত্যাশায় ‘উল্লাস করে’! কিন্তু, সেই প্রত্যাশার বাস্তবায়ন তাদের বিশ্বস্ততার ওপর নির্ভর করে।

৫, ৬. কেন অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের তাদের স্বর্গীয় আহ্বানকে নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য করতে হবে?

 পিতর তার দ্বিতীয় চিঠিতে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের ‘তাহারা যে আহূত ও মনোনীত, তাহা নিশ্চয় করিতে অধিক যত্ন করিবার’ পরামর্শ দিয়েছিলেন। (২ পিতর ১:১০) তাদেরকে বিশ্বাস, ভক্তি বা ঈশ্বরীয় ভক্তি, ভ্রাতৃস্নেহ ও প্রেমের মতো খ্রিস্টীয় গুণাবলি গড়ে তোলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। পিতর বলেছিলেন: “এই সমস্ত যদি তোমাদিগেতে থাকে ও উপচিয়া পড়ে, তবে . . . তোমাদিগকে অলস কি ফলহীন থাকিতে দিবে না।”—পড়ুন, ২ পিতর ১:৫-৮.

পুনরুত্থিত খ্রিস্ট প্রথম শতাব্দীতে এশিয়া মাইনরের ফিলাদিল্‌ফিয়া মণ্ডলীর আত্মায়জাত প্রাচীনদের প্রতি তাঁর বার্তায় এই কথা বলেছিলেন: “তুমি আমার ধৈর্য্যের কথা রক্ষা করিয়াছ, এই কারণ আমিও তোমাকে সেই পরীক্ষাকাল হইতে রক্ষা করিব, যাহা পৃথিবীনিবাসীদের পরীক্ষা করিবার জন্য সমস্ত জগতে উপস্থিত হইবে। আমি শীঘ্র আসিতেছি; তোমার যাহা আছে, তাহা দৃঢ়রূপে ধারণ কর, যেন কেহ তোমার মুকুট অপহরণ না করে।” (প্রকা. ৩:১০, ১১) একজন অভিষিক্ত খ্রিস্টান যদি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে তিনি সেই “অম্লান প্রতাপমুকুট” পাবেন না, যা সেইসমস্ত মনোনীত ব্যক্তির জন্য প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে, যারা মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকবে।—১ পিতর ৫:৪; প্রকা. ২:১০.

রাজ্যে প্রবেশ করা

৭. যিহূদা তার চিঠিতে কোন চমৎকার প্রত্যাশা সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন?

প্রায় ৬৫ খ্রিস্টাব্দে যিশুর সৎভাই যিহূদা তার সহঅভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে একটা চিঠি লিখেছিলেন, যাদেরকে তিনি ‘আহূতগণ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। (যিহূদা ১; তুলনা করুন, ইব্রীয় ৩:১) তিনি তাদের উদ্দেশে পরিত্রাণের গৌরবান্বিত প্রত্যাশার ওপর কেন্দ্র করে একটা চিঠি লিখতে চেয়েছিলেন, যে-প্রত্যাশা ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের জন্য আহূত খ্রিস্টানদের জন্য “সাধারণ” বা তারা সবাই লাভ করবে। (যিহূদা ৩) যদিও তার উল্লেখ করার মতো আরও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় ছিল, কিন্তু তার ছোটো চিঠির উপসংহারে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের চমৎকার প্রত্যাশা সম্বন্ধে উল্লেখ করে তিনি এভাবে লিখেছিলেন: “আর যিনি তোমাদিগকে উছোট খাওয়া হইতে রক্ষা করিতে, এবং আপন প্রতাপের সাক্ষাতে নির্দ্দোষ অবস্থায় সানন্দে উপস্থিত করিতে পারেন, যিনি একমাত্র ঈশ্বর আমাদের ত্রাণকর্ত্তা, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা তাঁহারই প্রতাপ, মহিমা, পরাক্রম ও কর্ত্তৃত্ব হউক, সকল যুগের পূর্ব্বাবধি, আর এখন, এবং সমস্ত যুগপর্য্যায়ে হউক।”—যিহূদা ২৪, ২৫.

৮. যিহূদা ২৪ পদ অনুযায়ী, কোন বিষয়টা ইঙ্গিত করে যে, একজন অভিষিক্ত ব্যক্তি তার নীতিনিষ্ঠা প্রমাণ করলে স্বর্গে আনন্দ হয়?

নিশ্চিতভাবেই, বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা ব্যক্তিগতভাবে উছোট খেয়ে বিনাশে পতিত হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে চায়। তাদের বাইবেলভিত্তিক আশা হল, যিশু খ্রিস্ট তাদেরকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করবেন, তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে শুদ্ধ অবস্থায় সানন্দে ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হতে দেবেন। একজন অভিষিক্ত ব্যক্তি যখন বিশ্বস্ত অবস্থায় মারা যান, তখন তার ‘আত্মিক দেহে উত্থাপিত’ হওয়ার, “অক্ষয়তায় . . . গৌরবে” পুনরুত্থিত হওয়ার নিশ্চিত প্রত্যাশা থাকে। (১ করি. ১৫:৪২-৪৪) যদি “এক জন পাপী মন ফিরাইলে স্বর্গে” অনেক “আনন্দ” হয়, তাহলে খ্রিস্টের আত্মায়জাত ভাইদের মধ্যে একজন যখন নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখে জীবন শেষ করেন, তখন স্বর্গীয় প্রাঙ্গণে কেমন আনন্দ হয়, সেই বিষয়টা একটু কল্পনা করে দেখুন। (লূক ১৫:৭) যিহোবা এবং বিশ্বস্ত আত্মিক প্রাণীরা সেই অভিষিক্ত ব্যক্তি যখন “সানন্দে” তার পুরস্কার প্রাপ্ত হবেন, তখন তার সঙ্গে আনন্দ করবে।—পড়ুন, ১ যোহন ৩:২.

৯. কীভাবে বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিদেরকে রাজ্য লাভ করার বিষয়টা “প্রচুররূপে দেওয়া যাইবে” আর এই প্রত্যাশা সেই অভিষিক্ত ব্যক্তিদের কীভাবে প্রভাবিত করে, যারা এখনও পৃথিবীতে রয়েছে?

একইভাবে, পিতর অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের লিখেছিলেন, তারা যদি তাদের বিশ্বস্ততার মাধ্যমে তাদের আহ্বানকে নিশ্চিত করে, তাহলে “আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের অনন্ত রাজ্যে প্রবেশ করিবার অধিকার প্রচুররূপে [তাহাদিগকে] দেওয়া যাইবে।” (২ পিতর ১:১০, ১১) তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করার বিষয়টা “প্রচুররূপে দেওয়া যাইবে” অর্থাৎ তাদের খ্রিস্টীয় গুণাবলি উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত হবে। “প্রচুররূপে দেওয়া যাইবে” বলতে আশীর্বাদের সেই সর্বোচ্চ মাত্রাকেও বোঝাতে পারে, যা সেই ব্যক্তিরা উপভোগ করবে, যারা জীবনের ধাবনক্ষেত্রে কঠোর প্রচেষ্টা করেছে। তারা বিজয়োল্লাস ও কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ এক হৃদয় নিয়ে তাদের বিশ্বস্ত জীবনধারার দিকে ফিরে তাকাতে পারে। এই প্রত্যাশা নিঃসন্দেহে সেই অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরকে ‘সেবার উপযোগী করে তাদের মনকে প্রস্তুত রাখার’ জন্য শক্তি জোগায় যারা এখনও পৃথিবীতে রয়েছে।—১ পিতর ১:১৩, ইজি-টু-রিড ভারসন।

আরও মেষের জন্য ‘প্রত্যাশার ভিত্তি’

১০, ১১. (ক) আরও মেষের সামনে কোন প্রত্যাশা রাখা হয়েছে? (খ) কীভাবে সেই পার্থিব প্রত্যাশার বাস্তবায়ন খ্রিস্ট এবং “ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের প্রকাশপ্রাপ্তির” সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

১০ প্রেরিত পৌল, খ্রিস্টের “সহদায়াদ” হিসেবে আত্মায়জাত “ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের” গৌরবান্বিত প্রত্যাশা সম্বন্ধে লিখেছিলেন। তার পর, তিনি সেই চমৎকার প্রত্যাশা সম্বন্ধে উল্লেখ করছিলেন, যা যিহোবা আরও মেষের অসংখ্য ব্যক্তিদের জন্য রেখেছেন: “সৃষ্টির [মানুষের] ঐকান্তিকী প্রতীক্ষা ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের [অভিষিক্ত ব্যক্তিদের] প্রকাশপ্রাপ্তির অপেক্ষা করিতেছে। কারণ সৃষ্টি অসারতার বশীকৃত হইল, স্ব-ইচ্ছায় যে হইল, তাহা নয়, কিন্তু বশীকর্ত্তার নিমিত্ত; এই প্রত্যাশায় হইল যে, সৃষ্টি নিজেও ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।”—রোমীয় ৮:১৪-২১.

১১ যিহোবা তখন মানবজাতির জন্য ‘সেই প্রত্যাশাই’ প্রদান করেছিলেন, যখন তিনি প্রতিজ্ঞাত ‘বংশের’ মাধ্যমে “পুরাতন সর্প” অর্থাৎ শয়তান দিয়াবলের কাছ থেকে উদ্ধারের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (প্রকা. ১২:৯; আদি. ৩:১৫) সেই ‘বংশ’ হল মূলত যিশু খ্রিস্ট। (গালা. ৩:১৬) যিশু তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাধ্যমে, মানবজাতির পাপ এবং মৃত্যুর দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার যে-প্রত্যাশা রয়েছে, সেটার এক দৃঢ় ভিত্তি জুগিয়েছেন। এই প্রত্যাশার বাস্তবায়ন “ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের প্রকাশপ্রাপ্তির” সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। গৌরবান্বিত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা হল “বংশের” গৌণ অংশ। তাদের সেই সময়ে ‘প্রকাশপ্রাপ্তি’ হবে, যখন তারা শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থাকে ধ্বংস করার কাজে খ্রিস্টের সঙ্গে অংশ নেবে। (প্রকা. ২:২৬, ২৭) এটা সেই আরও মেষের জন্য পরিত্রাণ নিয়ে আসবে, যারা মহাক্লেশ পার হয়ে যাবে।—প্রকা. ৭:৯, ১০, ১৪.

১২. অভিষিক্ত ব্যক্তিদের প্রকাশপ্রাপ্তি, মানবজাতির জন্য কোন গৌরবময় উপকারগুলো নিয়ে আসবে?

১২ খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে মানব ‘সৃষ্টি’ কতই না স্বস্তি লাভ করবে! সেই সময়ে, “ঈশ্বরের” গৌরবান্বিত “পুত্ত্রগণের” আরেকটা উপায়ে ‘প্রকাশপ্রাপ্তি’ হবে, যখন তারা খ্রিস্টের সঙ্গে যাজক হিসেবে কাজ করবে, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের উপকারগুলো প্রয়োগ করবে। স্বর্গীয় রাজ্যের প্রজা হিসেবে মানব ‘সৃষ্টি’ পাপ ও মৃত্যুর প্রভাব থেকে উদ্ধার লাভ করতে শুরু করবে। বাধ্য মানুষেরা ধীরে ধীরে ‘ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইবে।’ তারা যদি হাজার বছর চলাকালীন এবং সেই সময়ের শেষে যে-চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে, তখন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তাহলে তাদের নাম স্থায়ীভাবে ‘জীবন-পুস্তকে’ লেখা হবে। তারা ‘ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতায়’ প্রবেশ করবে। (প্রকা. ২০:৭, ৮, ১১, ১২) সত্যিই এক গৌরবময় প্রত্যাশা!

আমাদের প্রত্যাশাকে জীবন্ত রাখা

১৩. আমাদের প্রত্যাশা কীসের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত এবং খ্রিস্ট কখন প্রকাশিত হবেন?

১৩ পিতরের লেখা অনুপ্রাণিত চিঠি দুটো, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরকে এবং আরও মেষকে তাদের নিজ নিজ প্রত্যাশাকে জীবন্ত রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, তাদের প্রত্যাশা তাদের কাজের ওপর নয় বরং যিহোবার অযাচিত দয়ার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। তিনি লিখেছিলেন: “মিতাচারী হও, এবং যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশকালে যে অনুগ্রহ” বা অযাচিত দয়া “তোমাদের নিকটে আনীত হইবে, তাহার অপেক্ষাতে সম্পূর্ণ প্রত্যাশা রাখ।” (১ পিতর ১:১৩) খ্রিস্ট সেই সময়ে প্রকাশিত হবেন, যখন তিনি তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারীদের পুরস্কার প্রদান করার জন্য এবং ঈশ্বরভক্তিহীন লোকেদের ওপর যিহোবার বিচার কার্যকর করার জন্য আসবেন।—পড়ুন, ২ থিষলনীকীয় ১:৬-১০.

১৪, ১৫. (ক) আমাদের প্রত্যাশাকে জীবন্ত রাখার জন্য আমাদের মনোযোগকে কীসের ওপর কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে? (খ) পিতর কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?

১৪ আমাদের প্রত্যাশাকে জীবন্ত রাখার জন্য, আমাদের মনোযোগ ও জীবনযাপনকে “ঈশ্বরের” আসন্ন “সেই দিনের” ওপর কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে। সেই দিন “আকাশমণ্ডল” বা মানব শাসনব্যবস্থা এবং “পৃথিবী” অর্থাৎ দুষ্ট মানবসমাজ ও সেইসঙ্গে এর ‘মূলবস্তু সকলের’ জন্য ধ্বংস নিয়ে আসবে। পিতর লিখেছিলেন: “কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই, যে দিনের হেতু আকাশমণ্ডল জ্বলিয়া বিলীন হইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া গলিয়া যাইবে।”—২ পিতর ৩:১০-১২.

১৫ বর্তমান “আকাশমণ্ডল” ও ‘পৃথিবীর’ জায়গায় ‘নূতন আকাশমণ্ডল [খ্রিস্টের রাজ্য সরকার]’ এবং এক ‘নূতন পৃথিবী [এক নতুন পার্থিব সমাজ]’ আসবে। (২ পিতর ৩:১৩) এই প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতের জন্য “অপেক্ষা” করার বা আমাদের প্রত্যাশাকে জীবন্ত রাখার বিষয়টার ওপর ভিত্তি করে পিতর এরপর সরাসরি এই পরামর্শ দেন: “অতএব, প্রিয়তমেরা, তোমরা যখন এই সকলের অপেক্ষা করিতেছ, তখন যত্ন কর, যেন তাঁহার কাছে তোমাদিগকে নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়!”—২ পিতর ৩:১৪.

আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী চলা

১৬, ১৭. (ক) আমাদের কোন কোন “পবিত্র আচার ব্যবহার” এবং “ঈশ্বরের সেবার্থে কাজ” দেখানো উচিত? (খ) কীভাবে আমাদের প্রত্যাশা পরিপূর্ণ হবে?

১৬ আমাদের শুধু প্রত্যাশাকে জীবন্ত রাখলেই চলবে না কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদেরকে আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। আমাদের এই বিষয়ের ওপর মনোযোগ দিতে হবে যে, আমরা আধ্যাত্মিকভাবে কেমন ব্যক্তি। ‘পবিত্র আচার ব্যবহারের’ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে আমাদের নৈতিক ন্যায়পরায়ণতার মাধ্যমে ‘পরজাতীয়দের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখা।’ (২ পিতর ৩:১১; ১ পিতর ২:১২) আমাদেরকে “আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম” রাখতে হবে। এর অন্তর্ভুক্ত আমাদের বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজের, এমনকী আমাদের স্থানীয় মণ্ডলীর ব্যক্তিদের মধ্যে একতা বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য করা। (যোহন ১৩:৩৫) ‘ভক্তির [‘ঈশ্বরের সেবার্থে কাজ করার,’ ইজি-টু-রিড ভারসন]’ সঙ্গে এমন সব কাজ জড়িত, যেগুলো যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করে। এর অন্তর্ভুক্ত আমাদের প্রার্থনার গুণগত মান আর সেইসঙ্গে আমাদের রোজকার বাইবেল পাঠ, গভীর ব্যক্তিগত অধ্যয়ন, পারিবারিক উপাসনা এবং ‘রাজ্যের সুসমাচার’ প্রচারে নিয়মিত অংশগ্রহণ করা।—মথি ২৪:১৪.

১৭ আমাদের মধ্যে প্রত্যেকে সেই ধরনের ব্যক্তি হতে চাই, যার প্রতি যিহোবার অনুমোদন রয়েছে এবং যাকে তিনি সেই সময়ে রক্ষা করবেন, যখন বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থা “বিলীন হইবে।” এভাবে আমরা আমাদের প্রত্যাশা অর্থাৎ ‘সেই অনন্ত জীবনের আশা, যাহা মিথ্যাকথনে অসমর্থ ঈশ্বর অতি পূর্ব্ব কালে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন,’ সেটার বাস্তবায়ন হতে দেখব।—তীত ১:২.

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]

অভিষিক্ত ব্যক্তিদের “জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত . . . নতুন জন্ম” হয়

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার পরিবারের মধ্যে প্রত্যাশাকে জীবন্ত রাখুন