সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের পবিত্র সেবা থেকে আমরা যে-“গুঢ়তত্ত্ব” শিখেছি

আমাদের পবিত্র সেবা থেকে আমরা যে-“গুঢ়তত্ত্ব” শিখেছি

জীবনকাহিনি

আমাদের পবিত্র সেবা থেকে আমরা যে-“গুঢ়তত্ত্ব” শিখেছি

বলেছেন ওলিভিয়ে রান্দ্রিয়েমুরে

“আমি অবনত হইতে জানি, উপচয় ভোগ করিতেও জানি; প্রত্যেক বিষয়ে ও সর্ব্ববিষয়ে আমি তৃপ্ত কি ক্ষুধিত হইতে, . . . দীক্ষিত হইয়াছি [‘গুঢ়তত্ত্ব শিখেছি,’ ইজি-টু-রিড ভারসন]। যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।”—ফিলি. ৪:১২, ১৩.

প্রেরিত পৌলের বলা এই কথাগুলো দীর্ঘসময় ধরে আমার এবং আমার স্ত্রী ইউলির জন্য অনেক উৎসাহজনক হয়ে এসেছে। পৌলের মতো, আমরাও এই মাদাগাস্কারে যিহোবার সেবা করার সময় তাঁর ওপর পূর্ণরূপে নির্ভর করার মাধ্যমে সেই “গুঢ়তত্ত্ব” শিখেছি।

১৯৮২ সালে যিহোবার সাক্ষিরা যখন ইউলির মায়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিল, তখন আমার আর ইউলির ইতিমধ্যেই বাগ্‌দান হয়ে গিয়েছে। আমিও বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলাম এবং পরে ইউলিও আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। আমরা ১৯৮৩ সালে বিয়ে করি, ১৯৮৫ সালে বাপ্তিস্ম নিই আর ঠিক তার পর পরই সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করতে শুরু করি। ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে আমরা নিয়মিত অগ্রগামী হয়েছিলাম।

১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, আমরা বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করি। আমাদের প্রথম কার্যভার ছিল উত্তর-পশ্চিম মাদাগাস্কারের একটা ছোট্ট শহরে, যেখানে কোনো মণ্ডলী ছিল না। সেখানে প্রায় ১৮টা প্রধান সাম্প্রদায়িক দল ও সেইসঙ্গে অসংখ্য গোষ্ঠী রয়েছে এবং সেখানকার বিভিন্ন সামাজিক প্রথা ও ঐতিহ্য বেশ আলাদা। মালাগাসি হচ্ছে সরকারি ভাষা, তবে সেইসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাও প্রচলিত রয়েছে। তাই, আমরা আমাদের নতুন কার্যভারে প্রচলিত আঞ্চলিক ভাষা শিখতে শুরু করেছিলাম আর এর ফলে সেই সমাজ আমাদের সানন্দে গ্রহণ করে নিয়েছিল।

প্রথম প্রথম, আমি প্রতি রবিবার জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা দিতাম, যেটির পরে ইউলি নিয়মমাফিক হাততালি দিত। সেখানে শুধুমাত্র আমরাই উপস্থিত থাকতাম। এ ছাড়া, আমরা ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়-এর পুরো কার্যক্রম উপভোগ করতাম, যেখানে ইউলি একজন কাল্পনিক গৃহকর্ত্রীকে ব্যবহার করে বক্তৃতা দিত। সেই সময়ে আমরা কতই না স্বস্তিবোধ করেছিলাম, যখন পরিদর্শনকারী সীমা অধ্যক্ষ আমাদের সভাগুলোতে কিছুটা রদবদল করার জন্য সদয়ভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন!

যেহেতু ডাক ব্যবস্থা নির্ভরযোগ্য ছিল না, তাই আমরা নিয়মিতভাবে আমাদের মাসিক হাতখরচ পেতাম না। এভাবে আমরা শিখেছিলাম যে, কীভাবে অবনত হতে হয় বা অভাবের সময় জীবনযাপন করতে হয়। একবার, প্রায় ১৩০ কিলোমিটার (৮০ মাইল) দূরে অনুষ্ঠিত একটা সীমা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে বাস ভাড়া দেওয়ার মতো যথেষ্ট টাকা ছিল না। আমরা একজন সহসাক্ষির কাছ থেকে প্রাপ্ত উত্তম পরামর্শ সম্বন্ধে স্মরণ করেছিলাম: “আপনার সমস্যাগুলো যিহোবাকে জানান। কারণ, আপনি যা করছেন, সেটা তাঁরই কাজ।” তাই, আমরা প্রার্থনা করি এবং পায়ে হেঁটেই রওনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু, রওনা দেওয়ার ঠিক আগে, অপ্রত্যাশিতভাবে একজন ভাই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন এবং আমাদের কিছু টাকা উপহার দিয়েছিলেন, যা বাস ভাড়ার জন্য যথেষ্ট ছিল!

সীমার কাজ

১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমাকে একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তখন ইতিমধ্যেই আমাদের ছোটো দলটা বৃদ্ধি পেয়ে প্রকাশকের সংখ্যা ৯ জন হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৩ জন বাপ্তাইজিত ব্যক্তি ছিল আর আমাদের সভায় গড় উপস্থিতি ছিল ৫০ জন। প্রশিক্ষণ লাভ করার পর, আমরা রাজধানী আন্টানানারিভোর একটা সীমায় সেবা করেছিলাম। ১৯৯৩ সালে আমাদের আবারও সেই দেশের পূর্বাঞ্চলের একটা সীমায় কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। সেখানকার জীবনযাত্রা শহরের জীবনযাত্রার চেয়ে অনেক আলাদা ছিল।

বিভিন্ন মণ্ডলী এবং বিচ্ছিন্ন দলের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমাদেরকে পাহাড়ি এলাকার নিবিড় অরণ্যের মধ্য দিয়ে মাঝে মাঝে ১৪৫ কিলোমিটার (৯০ মাইল) পর্যন্ত পথও পায়ে হেঁটে যেতে হতো। আমরা আমাদের সুটকেসে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যেতাম। অবশ্য, যখন সীমা অধ্যক্ষের বক্তৃতার সঙ্গে কোনো স্লাইড শো থাকত, যা সেই সময়ে মাঝে মাঝে বক্তৃতার সঙ্গে দেখানো হতো, তখন আমাদের বোঝা আরও ভারী হয়ে যেত। ইউলি স্লাইড প্রোজেক্টর বহন করত আর আমি ১২ ভোল্টের একটা গাড়ির ব্যাটারি টেনে নিয়ে যেতাম।

মাঝে মাঝে, পরবর্তী মণ্ডলীতে পৌঁছানোর জন্য আমাদের এক দিনে প্রায় ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) পথ হাঁটতে হতো। যাওয়ার পথে, আমরা উঁচু-নীচু পাহাড়ি পথ বেয়ে চলতাম, নদী পার হতাম এবং কর্দমাক্ত রাস্তায় হাঁটতাম। কখনো কখনো, আমরা রাস্তার পাশেই ঘুমিয়ে পড়তাম, তবে রাতের বেলা থাকার জন্য যাতে জায়গা পাওয়া যায়, সেইজন্য আমরা সাধারণত একটা গ্রাম খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম। মাঝে মাঝে, আমরা একেবারে অপরিচিত লোকদের কাছে অনুরোধ করতাম, যেন তারা আমাদেরকে তাদের ঘরে রাতটা কাটাতে দেয়। থাকার জায়গা খুঁজে পাওয়ার পর, আমরা খাবার রান্না করার জন্য প্রস্তুতি নিতাম। ইউলি রান্না করার জন্য একটা হাঁড়ি ধার করত আর এরপর কাছাকাছি কোনো নদী অথবা হ্রদ থেকে জল আনতে যেত। এই সময়ের মধ্যে, আমি রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠ কাটতে একটা কুড়াল ধার নিতাম। এই সমস্তকিছুর জন্য যথেষ্ট সময় লাগত। মাঝে মাঝে, আমরা একটা জীবন্ত মুরগি কিনে আনতাম আর এরপর সেটাকে কেটে পরিষ্কার করতাম।

খাবার খাওয়ার পর, আমরা স্নান করার জন্য জল নিয়ে আসতাম। মাঝে মাঝে, আমরা রান্নাঘরে ঘুমাতাম। যখন বৃষ্টি পড়ত, তখন ছাদের ফুটো দিয়ে পড়া জল থেকে নিজেদের শুকনো রাখার চেষ্টায় আমরা হয়তো দেওয়ালে হেলান দিয়েও ঘুমাতাম।

সেই সুযোগকে আমরা সবসময় আমাদের আশ্রয়দাতার কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার এক উপায় হিসেবে ব্যবহার করতাম। আমাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর পর, আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনেরা প্রচুর দয়া ও আতিথেয়তা দেখাত। আমাদের পরিদর্শনের প্রতি তাদের আন্তরিক উপলব্ধি, সারাটা পথজুড়ে আমরা যে-অসুবিধাগুলো ভোগ করতাম, সেগুলোর ক্ষতিকে পুষিয়ে দিত।

সহসাক্ষিদের ঘরে থাকার সময় আমরা তাদের ঘরে টুকিটাকি কাজে সাহায্য করার বিষয়টা উপভোগ করতাম। এর ফলে তারা আমাদের সঙ্গে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যোগ দেওয়ার জন্য সময় পেত। আমরা এমন বিলাসসামগ্রী অথবা বিশেষ খাবার আশা করতাম না, যা আমাদের আমন্ত্রণকর্তারা দিতে সমর্থ ছিল না।

বিচ্ছিন্ন দলগুলো পরিদর্শন করা

আমরা সেই বিচ্ছিন্ন দলগুলো পরিদর্শন করা উপভোগ করতাম, যেখানে ভাইয়েরা এমন এক তালিকা নিয়ে আমাদের স্বাগতম জানাত, যা কাজে পূর্ণ থাকত। “কিছু কাল বিশ্রাম” করার জন্য আমাদের হাতে খুব কমই সময় থাকত। (মার্ক ৬:৩১) একটা জায়গায় এক সাক্ষি দম্পতি তাদের ঘরে তাদের সমস্ত বাইবেল ছাত্র-ছাত্রীকে—৪০ জন ব্যক্তিকে—আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যাতে আমরা তাদের সঙ্গে অধ্যয়নে অংশ নিতে পারি। ইউলি বোনের সঙ্গে প্রায় ২০টা অধ্যয়ন পরিচালনায় যোগ দিয়েছিল আর আমি ভাইয়ের সঙ্গে অন্য ২০টা অধ্যয়নে যোগ দিয়েছিলাম। একজন ছাত্র যাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে পরবর্তী অধ্যয়ন শুরু হয়েছিল। দিনের পরবর্তী সময়ে, আমরা মণ্ডলীর সভা করার জন্য বিরতি নিয়েছিলাম এবং সভার পরে আবার বাইবেল অধ্যয়ন পর্ব শুরু করেছিলাম। সেই দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর দিনটা সম্ভবত রাত আটটার পর শেষ হয়েছিল!

আরেকটা দল পরিদর্শন করার সময়, আমরা সবাই সকাল প্রায় আটটার দিকে পাশের একটা গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলাম। আমরা সবাই পুরোনো জামাকাপড় পরে নিয়েছিলাম। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ যাওয়ার পর, আমরা প্রায় দুপুরের দিকে সেই এলাকায় পৌঁছাই। এরপর, আমরা পরিষ্কার জামাকাপড় পরি এবং অবিলম্বে ঘরে ঘরে প্রচার কাজ শুরু করি। সেখানে ঘর অনেক কম ছিল কিন্তু প্রকাশক ছিল অনেক বেশি। তাই, আমরা প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যে পুরো এলাকা শেষ করে ফেলেছিলাম। এরপর, আমরা পরের গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলাম। সেখানে প্রচার করার পর আমাদের আবার পায়ে হেঁটে দীর্ঘ যাত্রা করে ঘরে ফিরতে হয়েছিল। প্রথমে, এই ব্যবস্থা আমাদের কিছুটা নিরুৎসাহিত করেছিল। যদিও আমরা অনেক সময় দিয়েছিলাম ও প্রচেষ্টা করেছিলাম, তবে আমরা মাত্র এক ঘন্টা ঘরে ঘরে প্রচার কাজ করতে পেরেছি। কিন্তু, স্থানীয় সাক্ষিরা কোনো অভিযোগ করেনি। তারা তাদের উদ্যম বজায় রেখেছিল।

টাভিরানামবো শহরের একটা বিচ্ছিন্ন দল একটা পর্বতচূড়ার কাছাকাছি এলাকায় থাকত। সেখানে আমরা একটা সাক্ষি পরিবার খুঁজে পেয়েছিলাম, যারা এক কামরার একটা ঘরে থাকত। কাছেই আরেকটা ছোট্ট ঘর ছিল, যেটাকে সভাস্থল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। হঠাৎ, আমাদের আমন্ত্রণকর্তা চিৎকার করে ডাকতে শুরু করেছিলেন, “ভাই!” পাশের পর্বতচূড়া থেকে একজন ভাই উত্তর দিয়েছিলেন, “বলুন!” আমাদের আমন্ত্রণকর্তা আবারও চিৎকার করে বলেছিলেন, “সীমা অধ্যক্ষ এসে পৌঁছেছেন!” উত্তর এসেছিল, “আচ্ছা, ঠিক আছে!” সেই বার্তা স্পষ্টতই যারা আরও দূরে ছিল, তাদের কাছেও একইভাবে পাঠানো হয়েছিল। খুব শীঘ্র লোকেরা জড়ো হতে শুরু করেছিল আর যখন সভা শুরু হয়, তখন সেখানে ১০০ জনেরও বেশি লোক উপস্থিত ছিল।

পরিবহন সংক্রান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা

১৯৯৬ সালে আমাদের আবার আন্টানানারিভোর কাছাকাছি কেন্দ্রীয় পার্বত্যাঞ্চলে একটা সীমায় কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। সেই সীমাতেও ভিন্ন কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে যাওয়ার জন্য কোনো নিয়মিত সাধারণ পরিবহন ছিল না। আমাদের জন্য আন্টানানারিভো থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার (১৫০ মাইল) দূরে বেনকানা (বেসাকে) শহরের একটা দলের সঙ্গে পরিদর্শন করার তালিকা করা হয়েছিল। আমরা একজন চালকের সঙ্গে কিছুটা দরদাম করার পর একটা ছোটো ট্রাকে চড়ে সেই দিকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেই ট্রাকে আরও প্রায় ৩০ জন যাত্রী ছিল, কেউ কেউ ছাদে শুয়ে ছিল, আবার অন্যেরা ট্রাকের পিছনে ঝুলে ছিল।

খুব শীঘ্র সেই ট্রাকটা নষ্ট হয়ে যায়, যেমনটা সেখানে প্রায়ই হয়ে থাকে আর আমরা তখন পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করি। কয়েক ঘন্টা ধরে কষ্ট করে হাঁটার পর, একটা বড়ো ট্রাক আসে। সেটা ইতিমধ্যেই মানুষ ও মালপত্রে বোঝাই ছিল, তবে যাইহোক চালক ট্রাকটা থামায়। আমরা দাঁড়িয়ে থাকার মতো একটু জায়গা পেয়েই সেটাতে উঠে গিয়েছিলাম। পরে আমরা একটা নদীর কাছে পৌঁছাই, কিন্তু তখন সেখানকার সেতুটা মেরামত করা হচ্ছিল। আমরা আবারও পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করি আর অবশেষে একটা ছোটো গ্রামে পৌঁছাই, যেখানে কয়েক জন বিশেষ অগ্রগামী বাস করত। যদিও সেখানে পরিদর্শন করার জন্য কোনো তালিকা ছিল না, কিন্তু তার পরও সেতুটার মেরামত কাজ শেষ হওয়ার এবং আরেকটা পরিবহনে চড়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করার সময় আমরা তাদের সঙ্গে প্রচার করেছিলাম।

এক সপ্তাহ পর সেখানে একটা যানবাহন এসেছিল আর আমরা আবারও আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম। পুরো রাস্তাজুড়ে বড়ো বড়ো খানাখন্দ ছিল। আমাদের বার বার হাঁটু পর্যন্ত জলের মধ্যে দিয়ে সেই যানবাহনটা ঠেলে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে হয়েছিল আর তা করার সময় আমরা মাঝে মাঝেই উছোট খেয়েছি ও পড়ে গিয়েছি। ভোর বেলা আমরা একটা ছোটো গ্রামে পৌঁছাই আর আমরা সেখানেই নেমে যাই। মূল সড়ক থেকে নেমে আমরা পায়ে হেঁটে ধান খেত ও কোমর পর্যন্ত কাদাজলের মধ্যে দিয়ে আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলাম।

সেই এলাকায় এটাই ছিল আমাদের প্রথম পরিদর্শন, তাই আমরা ধান খেতে কাজ করছে এমন কয়েক জন কৃষকের কাছে প্রচার করার এবং স্থানীয় সাক্ষিরা কোথায় বাস করে, সেই নির্দেশনা পাওয়ার জন্য তাদেরকে জিজ্ঞেস করার সিদ্ধান্ত নিই। যখন আমরা আবিষ্কার করেছিলাম যে, সেই কৃষকরা আসলে আমাদের আধ্যাত্মিক ভাই, তখন আমরা কতই না আনন্দিত হয়েছিলাম!

অন্যদেরকে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করার জন্য উৎসাহিত করা

বছরের পর বছর ধরে, অন্যদেরকে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করার জন্য উৎসাহিত করে আমরা যে-ফলাফল দেখতে পেয়েছিলাম, তা আমাদের অনেক আনন্দিত করেছে। নয় জন নিয়মিত অগ্রগামী রয়েছে এমন একটা মণ্ডলী পরিদর্শন করার সময়, আমরা প্রত্যেক অগ্রগামীকে একটা লক্ষ্য স্থাপন করতে উৎসাহিত করেছিলাম আর তা হল তিনি যেন অন্য একজন প্রকাশককে অগ্রগামী সেবা শুরু করার জন্য সাহায্য করেন। ছয় মাস পর আমরা যখন আবার সেখানে পরিদর্শন করতে যাই, তখন সেখানকার নিয়মিত অগ্রগামীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ২২ জন হয়ে গিয়েছিল। দুজন অগ্রগামী বোন নিজ নিজ বাবাকে নিয়মিত অগ্রগামী হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছিল, যারা প্রাচীন হিসেবে সেবা করছিল। এই ভাইয়েরা আবার তৃতীয় একজন প্রাচীনকে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। এর অল্পসময় পর, সেই তৃতীয় প্রাচীনকে একজন বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে, সেই ভাই ও তার স্ত্রী সীমার কাজ শুরু করেছিল। অন্য দুই প্রাচীন সম্বন্ধে কী বলা যায়? একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করেন এবং অন্য জন কিংডম হল নির্মাণের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।

আমরা প্রতিদিন যিহোবাকে তাঁর সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই, যখন আমরা বুঝতে পারি যে, আমরা নিজেদের শক্তিতে কোনো কিছুই সম্পাদন করতে পারি না। এটা ঠিক যে, মাঝে মাঝে আমাদের ক্লান্ত লাগে আর আমরা অসুস্থ হই, কিন্তু আমরা যখন আমাদের পরিচর্যার ফলাফল নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমরা আনন্দিত হই। যিহোবা তাঁর কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার মাধ্যমে সেই কাজে এক সামান্য অবদান রাখতে পেরে আমরা আনন্দিত। হ্যাঁ, যিহোবা ‘যিনি আমাদের শক্তি দেন,’ তাঁর ওপর নির্ভর করার মাধ্যমে আমরা সেই “গুঢ়তত্ত্ব” শিখেছি।

[৬ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

যিহোবার ওপর নির্ভর করার মাধ্যমে আমরা সেই “গুঢ়তত্ত্ব” শিখেছি

[৪ পৃষ্ঠার মানচিত্র/চিত্রগুলো]

বিশাল লাল দ্বীপ নামে পরিচিত মাদাগাস্কার হল পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ। এর মাটি লাল রঙের আর সেখানে অসংখ্য স্বতন্ত্র প্রজাতির প্রাণী বাস করে

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমরা যে-বড়ো বড়ো প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলাম, সেগুলোর মধ্যে একটা ছিল ভ্রমণ করা

[৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বাইবেল অধ্যয়নগুলোতে যোগ দিয়ে আমরা আনন্দ উপভোগ করি