সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা হলেন “নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক”

যিহোবা হলেন “নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক”

যিহোবা হলেন “নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক”

“সত্যই তোমাদের ঈশ্বর দেবগণের ঈশ্বর, রাজাদের প্রভু ও নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক।”—দানি. ২:৪৭.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যিহোবা আমাদের কাছে কোন বিস্তারিত বিষয় প্রকাশ করেছেন?

পশুর প্রথম ছয়টা মস্তক কী চিত্রিত করে?

পশু এবং নবূখদ্‌নিৎসরের দেখা প্রতিমার মধ্যে আমরা কোন সম্পর্ক দেখতে পাই?

১, ২. যিহোবা আমাদের কাছে কী প্রকাশ করেছেন এবং কেন?

 ঈশ্বরের রাজ্য যখন মানবশাসনকে শেষ করবে, তখন কোন সরকারগুলো এই পৃথিবীর ওপর শাসনরত অবস্থায় থাকবে? আমরা এর উত্তরটা জানি—“নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক” যিহোবা ঈশ্বর আমাদের কাছে তা প্রকাশ করেছেন। ভাববাদী দানিয়েল এবং প্রেরিত যোহনের লেখাগুলোর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে সেই সরকারগুলোর পরিচয় সম্বন্ধে বুঝতে সমর্থ করেছেন।

যিহোবা সেই ব্যক্তিদের কাছে ধারাবাহিকভাবে এমন কয়েকটা দর্শন প্রকাশ করেছেন, যেগুলো একটার পর একটা পশুর আবির্ভাবের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া, তিনি দানিয়েলকে দর্শনমূলক একটা স্বপ্নের অর্থ জানিয়েছিলেন, যেখানে এক প্রকাণ্ড ধাতব প্রতিমা সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছিল। যিহোবা আমাদের উপকারের জন্যই সেই বিবরণগুলো বাইবেলে লিপিবদ্ধ এবং সংরক্ষণ করেছেন। (রোমীয় ১৫:৪) তিনি তা করেছেন, যেন তাঁর রাজ্য যে শীঘ্র সমস্ত মানবসরকারকে চূর্ণ করে দেবে, সেই বিষয়ে আমাদের আশা শক্তিশালী হয়।—দানি. ২:৪৪.

৩. ভবিষ্যদ্‌বাণী সঠিকভাবে বুঝতে হলে, প্রথমে আমাদের কী বুঝতে হবে এবং কেন?

একত্রে বিবেচনা করলে, দানিয়েল এবং যোহনের বিবরণ শুধুমাত্র আট জন রাজার বা আটটা মানবশাসনের পরিচয়ই তুলে ধরে না কিন্তু সেইসঙ্গে ওই শক্তিগুলো কীভাবে পর্যায়ক্রমে আবির্ভূত হবে, সেই সম্বন্ধেও জানায়। কিন্তু, আমরা কেবল তখনই সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারব, যদি আমরা বাইবেলে লিপিবদ্ধ একেবারে প্রথম ভবিষ্যদ্‌বাণীর অর্থ বুঝতে পারি। কেন? কারণ সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতাই হল বাইবেলের সম্মিলিত মূলভাব। এক অর্থে, এটাই হচ্ছে সেই সূত্র, যেটার মধ্যে অন্যান্য সমস্ত ভবিষ্যদ্‌বাণী ঝুলছে।

সর্পের বংশ এবং পশু

৪. কাদের নিয়ে নারীর বংশ গঠিত এবং সেই বংশ কী করবে?

এদনে বিদ্রোহের পর পরই, যিহোবা এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, ‘নারী’ এক ‘বংশ’ উৎপন্ন করবে। * (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩:১৫.) সেই বংশ পরিশেষে সর্পের অর্থাৎ শয়তানের মস্তক চূর্ণ করবেন। পরবর্তী সময়ে, যিহোবা প্রকাশ করেছিলেন যে, সেই বংশ অব্রাহামের মাধ্যমে এবং ইস্রায়েল জাতির মধ্য থেকে আসবেন ও সেইসঙ্গে একজন যিহুদি এবং রাজা দায়ূদের একজন বংশধর হবেন। (আদি. ২২:১৫-১৮; ৪৯:১০; গীত. ৮৯:৩, ৪; লূক ১:৩০-৩৩) খ্রিস্ট যিশু সেই বংশের মুখ্য অংশ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন। (গালা. ৩:১৬) আর সেই বংশের গৌণ অংশ খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর আত্মায় অভিষিক্ত সদস্যদের নিয়ে গঠিত। (গালা. ৩:২৬-২৯) যিশু এবং সেই অভিষিক্ত ব্যক্তিরা একসঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্য গঠন করে, যেটার মাধ্যমে ঈশ্বর শয়তানকে দলিত করবেন।—লূক ১২:৩২; রোমীয় ১৬:২০.

৫, ৬. (ক) দানিয়েল এবং যোহন কয়টা বিশ্বশক্তিকে শনাক্ত করে? (খ) প্রকাশিত বাক্য বইয়ে উল্লেখিত পশুর মস্তক কোন বিষয়কে চিত্রিত করে?

এদনে দেওয়া প্রথম ভবিষ্যদ্‌বাণীতে এও বলা হয়েছিল যে, শয়তান এক ‘বংশ’ উৎপন্ন করবে। তার বংশ নারীর বংশের প্রতি শত্রুতা বা ঘৃণা প্রকাশ করবে। কাদের নিয়ে সর্পের বংশ গঠিত? সেইসমস্ত লোকেদের নিয়ে, যারা শয়তানের মতোই ঈশ্বরের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে এবং ঈশ্বরের লোকেদের বিরোধিতা করে। ইতিহাসজুড়ে শয়তান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অথবা রাজ্যের মাধ্যমে তার বংশকে সংগঠিত করেছে। (লূক ৪:৫, ৬) কিন্তু, তুলনামূলকভাবে খুব কম সংখ্যক মানবরাজ্যই ঈশ্বরের লোকেদের ওপর জোরালো প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে, তা তারা ইস্রায়েল জাতি অথবা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে গঠিত মণ্ডলী, যা-ই হোক না কেন। কেন এই বিষয়টা তাৎপর্যপূর্ণ? কারণ এটা ব্যাখ্যা করে যে, দানিয়েল ও যোহনের দর্শনগুলো কেন সর্বমোট মাত্র আটটা বিশ্বশক্তি সম্বন্ধে বর্ণনা করে।

প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে, পুনরুত্থিত যিশু প্রেরিত যোহনকে আশ্চর্যজনক কয়েকটা ধারাবাহিক দর্শন দেখিয়েছিলেন। (প্রকা. ১:১) সেগুলোর মধ্যে একটা দর্শনে যোহন দিয়াবলকে, যাকে নাগ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, এক বিশাল সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১২:১৮–১৩:১, ২.) এ ছাড়া, যোহন সমুদ্র থেকে এক অদ্ভুত পশুকে উঠতে এবং দিয়াবলের কাছ থেকে মহৎ কর্তৃত্ব লাভ করতে দেখেন। পরবর্তী সময়ে, একজন স্বর্গদূত যোহনকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, একটা সিন্দূরবর্ণ পশু, যেটা প্রকাশিত বাক্য ১৩:১ পদে বর্ণিত পশুর এক প্রতিমা, সেটার সপ্ত মস্তক “সপ্ত রাজা” বা সরকারকে চিত্রিত করে। (প্রকা. ১৩:১৪, ১৫; ১৭:৩, ৯, ১০) যোহন যে-সময়ে এগুলো লিখছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে এদের পাঁচ জন পতিত হয়ে গিয়েছিল আর এক জন ক্ষমতায় ছিল এবং আরেকজন সেই সময় “পর্যন্ত আইসে নাই।” সেই রাজ্যগুলোর বা বিশ্বশক্তিগুলোর পরিচয় কী? আসুন আমরা প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বর্ণিত পশুর প্রত্যেকটা মস্তক সম্বন্ধে বিবেচনা করে দেখি। এ ছাড়া, আমরা দেখব যে, দানিয়েলের লেখাগুলো কীভাবে আমাদেরকে সেই রাজ্যগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটা সম্বন্ধে, এমনকী সেগুলো অস্তিত্বে আসার কয়েক শতাব্দী আগেই, গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছিল।

মিশর এবং অশূর—প্রথম দুই মস্তক

৭. প্রথম মস্তক কোন শক্তিকে চিত্রিত করে এবং কেন?

পশুর প্রথম মস্তক মিশরকে চিত্রিত করে। কেন? কারণ মিশরই ছিল প্রথম মহাশক্তি, যা ঈশ্বরের লোকেদের প্রতি শত্রুতা প্রদর্শন করেছিল। অব্রাহাম, যার কাছ থেকে নারীর প্রতিজ্ঞাত বংশ আসার কথা, তার বংশধরেরা মিশরে বৃদ্ধি পেয়ে অসংখ্য হয়ে উঠেছিল। এরপর, মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের নিপীড়ন করেছিল। বংশ আবির্ভূত হওয়ার আগেই শয়তান ঈশ্বরের লোকদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। কীভাবে? সমস্ত ইস্রায়েলীয় পুত্রসন্তানকে হত্যা করার জন্য ফরৌণকে প্ররোচিত করার মাধ্যমে। যিহোবা সেই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর লোকেদেরকে মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন। (যাত্রা. ১:১৫-২০; ১৪:১৩) পরবর্তী সময়ে, তিনি ইস্রায়েলীয়দেরকে প্রতিজ্ঞাত দেশ দিয়েছিলেন।

৮. দ্বিতীয় মস্তকের পরিচয় কী এবং এটা কী করার প্রচেষ্টা করেছিল?

পশুর দ্বিতীয় মস্তক অশূরকে চিত্রিত করে। এই শক্তিশালী রাজ্যও ঈশ্বরের লোকেদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এটা ঠিক যে, প্রতিমাপূজা এবং বিদ্রোহের কারণে দশ বংশের রাজ্যকে শাস্তি দেওয়ার জন্য যিহোবা অশূরকে তাঁর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু, পরে অশূর যিরূশালেমকেও আক্রমণ করেছিল। সম্ভবত, শয়তানের লক্ষ্য ছিল সেই রাজবংশের ধারাকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া, যেখান থেকে অবশেষে যিশু আসার কথা। কিন্তু, সেই আক্রমণ যিহোবার উদ্দেশ্যের অংশ ছিল না আর তাই তিনি আক্রমণকারীদের ধ্বংস করে দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর বিশ্বস্ত লোকেদের অলৌকিকভাবে রক্ষা করেছিলেন।—২ রাজা. ১৯:৩২-৩৫; যিশা. ১০:৫, ৬, ১২-১৫.

বাবিল—তৃতীয় মস্তক

৯, ১০. (ক) যিহোবা বাবিলীয়দের কী করার জন্য অনুমোদন করেছিলেন? (খ) ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য কোন বিষয়গুলো ঘটার প্রয়োজন ছিল?

 যোহন যে-তৃতীয় মস্তক দেখেছিলেন, তা সেই রাজ্যকে চিত্রিত করে, যেটার রাজধানী ছিল বাবিল। যিহোবা যিরূশালেমকে পরাজিত করার এবং তাঁর লোকেদের বন্দিত্বে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাবিলীয়দের অনুমোদন করেছিলেন। কিন্তু, এইরকম অবমাননা ঘটতে দেওয়ার আগেই যিহোবা বিদ্রোহী ইস্রায়েলীয়দের সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, তাদের ওপর এইরকম মর্মান্তিক পরিণতি আসতে যাচ্ছে। (২ রাজা. ২০:১৬-১৮) তিনি ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, মানব রাজাদের বংশধররা, যাদের বিষয়ে বলা হয়েছিল যে, তারা যিরূশালেমে “সদাপ্রভুর সিংহাসনে” বসবে, তাদেরকে অপসারণ করা হবে। (১ বংশা. ২৯:২৩) তবে, যিহোবা এও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, রাজা দায়ূদের বংশের একজন, যাঁর “অধিকার” রয়েছে, তিনি আসবেন এবং পুনরায় সেই কর্তৃত্ব নেবেন।—যিহি. ২১:২৫-২৭.

১০ আরেকটা ভবিষ্যদ্‌বাণী ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, যিহুদিরা সেই সময়ও যিরূশালেমের মন্দিরে উপাসনা করতে থাকবে, যখন প্রতিজ্ঞাত মশীহ অথবা অভিষিক্ত ব্যক্তি আবির্ভূত হবেন। (দানি. ৯:২৪-২৭) এরও আগের একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী, যেটা ইস্রায়েলকে বাবিলে বন্দিত্বে নিয়ে যাওয়ারও আগে লেখা হয়েছিল, সেটাতে বলা হয়েছিল যে, এই ব্যক্তি বৈৎলেহমে জন্মগ্রহণ করবেন। (মীখা ৫:২) এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো যদি পরিপূর্ণ হতে হয়, তাহলে যিহুদিদেরকে বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হতে, নিজেদের দেশে ফিরে আসতে এবং মন্দির পুনর্নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু, বন্দিদের মুক্তি দেওয়া বাবিলের রীতি ছিল না। কীভাবে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোকাবিলা করা যেত? যিহোবা তাঁর ভাববাদীদের কাছে এর উত্তর প্রকাশ করেছিলেন।—আমোষ ৩:৭.

১১. বাবিল সাম্রাজ্যকে চিত্রিত করার জন্য কোন ভিন্ন ভিন্ন উপায় ব্যবহার করা হয়েছে? (পাদটীকা দেখুন।)

১১ যে-বন্দিদের বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে ভাববাদী দানিয়েলও ছিলেন। (দানি. ১:১-৬) যিহোবা তাকে সেই বিশ্বশক্তির পরে একটার পর একটা যে-রাজ্য আসবে, সেই সম্বন্ধে প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। যিহোবা ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটা প্রতীকের মাধ্যমে এই নিগূঢ়তত্ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি বাবিলীয় রাজা নবূখদ্‌নিৎসরকে স্বপ্নে এক প্রকাণ্ড প্রতিমা দেখিয়েছিলেন, যেটা বিভিন্ন ধাতু দ্বারা নির্মিত ছিল। (পড়ুন, দানিয়েল ২:১, ১৯, ৩১-৩৮.) দানিয়েলের মাধ্যমে যিহোবা প্রকাশ করেছিলেন যে, সেই প্রতিমার সুবর্ণময় মস্তক বাবিলীয় সাম্রাজ্যকে চিত্রিত করে। * বাবিলের পরে যে-বিশ্বশক্তি আসবে, সেটাকে রৌপ্যময় বক্ষ ও বাহু দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে। সেই বিশ্বশক্তি কোনটা ছিল এবং সেটা ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল?

মাদীয়-পারস্য—চতুর্থ মস্তক

১২, ১৩. (ক) বাবিলের পরাজয় সম্বন্ধে যিহোবা কী প্রকাশ করেছিলেন? (খ) কেন মাদীয়-পারস্যকে উপযুক্তভাবেই পশুর চতুর্থ মস্তক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে?

১২ দানিয়েলের সময়ের চেয়ে এক-শো বছরেরও বেশি সময় আগে, যিহোবা ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে সেই বিশ্বশক্তি সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করেছিলেন, যা বাবিলকে পরাজয় করবে। যিহোবা কেবল বাবিল নগর কীভাবে পরাজিত হবে, তা-ই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে বিজেতার নামও প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। সেই নেতা ছিলেন পারস্যের কোরস। (যিশা. ৪৪:২৮–৪৫:২) দানিয়েল মাদীয়-পারসিক বিশ্বশক্তি সম্বন্ধে আরও দুটো দর্শন পেয়েছিলেন। একটা দর্শনে এই রাজ্যকে একটা ভল্লুকের দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছিল, যেটা এক পার্শ্বে চরণে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এটাকে “যথেষ্ট মাংস” ভোজন করতে বলা হয়েছিল। (দানি. ৭:৫) অন্য আরেকটা দর্শনে, দানিয়েল দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট মেষ দ্বারা চিত্রিত এই দ্বৈত বিশ্বশক্তিকে দেখতে পেয়েছিলেন।—দানি. ৮:৩, ২০.

১৩ যিহোবা মাদীয়-পারসিক সাম্রাজ্যকে ব্যবহার করেছিলেন, যেন তা বাবিলকে পুরোপুরিভাবে পরাজিত করার এবং ইস্রায়েলীয়দেরকে নিজেদের দেশে পুনরায় বসবাস করতে দেওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ করে। (২ বংশা. ৩৬:২২, ২৩) কিন্তু এই একই বিশ্বশক্তি পরবর্তী সময়ে ঈশ্বরের লোকেদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে যাচ্ছিল। বাইবেলে ইষ্টেরের বই হামন নামে একজন মাদীয়-পারসিক প্রধানমন্ত্রীর ষড়যন্ত্র সম্বন্ধে উল্লেখ করে। তিনি পারস্য সাম্রাজ্যে বসবাসরত সমস্ত যিহুদিকে পুরোপুরিভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিলেন আর সেই লক্ষ্যে একটা নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন, যে-দিনে ওই জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার কথা ছিল। একমাত্র যিহোবার হস্তক্ষেপের কারণে তাঁর লোকেরা আবারও শয়তানের বংশের বিদ্বেষ থেকে রক্ষা পেয়েছিল। (ইষ্টের ১:১-৩; ৩:৮, ৯; ৮:৩, ৯-১৪) তাই, মাদীয়-পারস্যকে উপযুক্তভাবেই প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বর্ণিত পশুর চতুর্থ মস্তক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

গ্রিস—পঞ্চম মস্তক

১৪, ১৫. প্রাচীন গ্রিক সাম্রাজ্য সম্বন্ধে যিহোবা কোন বিস্তারিত বর্ণনা প্রকাশ করেছিলেন?

১৪ প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বর্ণিত পশুর পঞ্চম মস্তক গ্রিসকে চিত্রিত করে। নবূখদ্‌নিৎসরের স্বপ্ন ব্যাখ্যা করার সময় দানিয়েল যেমন আগে প্রকাশ করেছিলেন যে, এই একই বিশ্বশক্তি প্রতিমার পিত্তলময় উদর ও জঙ্ঘা দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে। এ ছাড়া, দানিয়েল আরও দুটো দর্শন দেখেছিলেন, যেখানে এই সাম্রাজ্যের বৈশিষ্ট্য ও সেইসঙ্গে এর অন্যতম শাসক সম্বন্ধে উল্লেখযোগ্যভাবে বর্ণনা করা হয়।

১৫ একটা দর্শনে, দানিয়েল চার পক্ষবিশিষ্ট এক চিতাবাঘের দ্বারা চিত্রিত গ্রিসকে দেখতে পেয়েছিলেন আর এই চার পক্ষবিশিষ্ট চিতাবাঘ ইঙ্গিত দেয় যে, এই সাম্রাজ্য খুব দ্রুত জয় লাভ করবে। (দানি. ৭:৬) আরেকটা দর্শনে, দানিয়েল ব্যাখ্যা করেন যে, কীভাবে বৃহৎ শৃঙ্গবিশিষ্ট এক ছাগ দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট এক মেষ অর্থাৎ মাদীয়-পারস্যকে দ্রুত হত্যা করে। যিহোবা দানিয়েলকে বলেছিলেন যে, এই ছাগ গ্রিসকে চিত্রিত করে আর এটার বৃহৎ শৃঙ্গ এর রাজাদের মধ্যে একজনকে চিত্রিত করে। দানিয়েল আরও লিপিবদ্ধ করেন যে, সেই বৃহৎ শৃঙ্গকে ভেঙে ফেলা হবে আর এর স্থানে আরও ছোটো চারটে শৃঙ্গ উৎপন্ন হবে। যদিও এই ভবিষ্যদ্‌বাণী গ্রিস শাসন শুরু করার শত শত বছর আগে লেখা হয়েছিল, তবুও এর প্রতিটি কথা সত্য হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিসের সবচেয়ে অন্যতম রাজা মহান আলেকজান্ডার মাদীয়-পারস্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ করায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে, এই শৃঙ্গ শীঘ্র ভেঙে গিয়েছিল, যখন সেই মহান রাজা ক্ষমতার একেবারে শীর্ষে থাকার সময় এবং মাত্র ৩২ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। পরে, তার রাজ্য অবশেষে তার চার সেনাপতি ভাগ করে নিয়েছিল।—পড়ুন, দানিয়েল ৮:২০-২২.

১৬. অ্যান্টিওকাস ৪র্থ কী করেছিলেন?

১৬ পারস্যকে জয় করার পর, গ্রিস ঈশ্বরের লোকেদের দেশের ওপর শাসন করতে শুরু করে। সেই সময়ের মধ্যে যিহুদিরা প্রতিজ্ঞাত দেশে পুনরায় বাস করতে শুরু করেছিল এবং যিরূশালেমের মন্দির পুনর্নির্মাণ করেছিল। তখনও তারা ঈশ্বরের মনোনীত লোক ছিল এবং পুনর্নির্মিত মন্দির তখনও সত্য উপাসনার কেন্দ্র ছিল। কিন্তু, খ্রি.পূ. দ্বিতীয় শতাব্দীতে, পশুর পঞ্চম মস্তক ঈশ্বরের লোকেদের আক্রমণ করে। আলেকজান্ডারের বিভক্ত সাম্রাজ্যের একজন উত্তরাধিকারী অ্যান্টিওকাস ৪র্থ, যিরূশালেমের মন্দিরে পৌত্তলিক বেদি স্থাপন করেন এবং যিহুদি ধর্ম পালন করাকে এমন একটা অপরাধ হিসেবে তুলে ধরেন, যেটার শাস্তি ছিল মৃত্যু। শয়তানের বংশের দ্বারা কতই না ঘৃণ্য এক কাজ! কিন্তু, শীঘ্র গ্রিস বিশ্বশক্তি হিসেবে অপসারিত হয়। পশুর ষষ্ঠ মস্তক কে হবে?

রোম—ষষ্ঠ মস্তক, “ভয়ঙ্কর, ক্ষমতাপন্ন”

১৭. আদিপুস্তক ৩:১৫ পদ পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে ষষ্ঠ মস্তক কোন প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল?

১৭ যোহন যখন এই পশুর বিষয়ে দর্শন পেয়েছিলেন, তখন রোম ছিল শাসনরত শক্তি। (প্রকা. ১৭:১০) এই ষষ্ঠ মস্তক, আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। শয়তান আঘাত করার জন্য রোমীয় কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেছিল, যে-আঘাত বংশের ‘পাদমূলকে’ চূর্ণ করে বংশকে সাময়িকভাবে অক্ষম করে দিয়েছিল। কীভাবে? তারা যিশুকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করেছিল এবং মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। (মথি ২৭:২৬) কিন্তু, শীঘ্র সেই ক্ষত আরোগ্য লাভ করেছিল কারণ যিহোবা যিশুকে পুনরুত্থিত করেছিলেন।

১৮. (ক) যিহোবা কোন নতুন জাতিকে মনোনীত করেছিলেন এবং কেন? (খ) কীভাবে সর্পের বংশ নারীর বংশের প্রতি ক্রমাগত বিদ্বেষ প্রকাশ করে গিয়েছিল?

১৮ ইস্রায়েলের ধর্মীয় নেতারা রোমের সঙ্গে মিলে যিশুর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল আর সেইসঙ্গে সেই জাতির অধিকাংশ লোকই তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। যিহোবা জন্মগত ইস্রায়েলকে তাঁর লোক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (মথি ২৩:৩৮; প্রেরিত ২:২২, ২৩) তিনি এরপর এক নতুন জাতিকে অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলকে’ মনোনীত করেছিলেন। (গালা. ৩:২৬-২৯; ৬:১৬) সেই জাতি ছিল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মণ্ডলী, যা যিহুদি ও পরজাতীয়দের নিয়ে গঠিত ছিল। (ইফি. ২:১১-১৮) যিশুর মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের পর, সর্পের বংশ নারীর বংশের প্রতি ক্রমাগত বিদ্বেষ প্রকাশ করে গিয়েছিল। একাধিক বার, রোম খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে অর্থাৎ বংশের গৌণ অংশকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছিল। *

১৯. (ক) ষষ্ঠ বিশ্বশক্তিকে দানিয়েল কীভাবে বর্ণনা করেন? (খ) আরেকটি প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?

১৯ দানিয়েল নবূখদ্‌নিৎসরের কাছে যে-স্বপ্ন ব্যাখ্যা করেছিলেন, সেখানে রোমকে লৌহময় জঙ্ঘার দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছিল। (দানি. ২:৩৩) এ ছাড়া, দানিয়েল আরও একটা দর্শন দেখেছিলেন, যা কেবল রোমীয় সাম্রাজ্য সম্বন্ধেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে রোম থেকে আসা পরবর্তী বিশ্বশক্তি সম্বন্ধেও বর্ণনা করে। (পড়ুন, দানিয়েল ৭:৭, ৮.) শত শত বছর ধরে রোম এর শত্রুদের সামনে “ভয়ঙ্কর, ক্ষমতাপন্ন ও অতিশয় শক্তিমান্‌” হিসেবে ছিল। কিন্তু, ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা হয়েছিল যে, এই সাম্রাজ্য থেকে “দশটী শৃঙ্গ” উৎপন্ন হবে আর এরপর তাদের মধ্যে আরেকটা ক্ষুদ্র শৃঙ্গ উৎপন্ন হয়ে লক্ষণীয় হয়ে উঠবে। এই দশ শৃঙ্গ কারা এবং ক্ষুদ্র শৃঙ্গের পরিচয় কী? কোন দিক দিয়ে ক্ষুদ্র শৃঙ্গ, নবূখদ্‌নিৎসর যে-প্রকাণ্ড প্রতিমা দেখেছিলেন, সেটার বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়? ১৪ পৃষ্ঠার প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিবেচনা করা হবে?

[পাদটীকাগুলো]

^ এই নারী যিহোবার স্ত্রীতুল্য সংগঠনকে চিত্রিত করে, যা স্বর্গের আত্মিক প্রাণীদের নিয়ে গঠিত।—যিশা. ৫৪:১; গালা. ৪:২৬; প্রকা. ১২:১, ২.

^ বাবিলকে দানিয়েল বইয়ের প্রকাণ্ড প্রতিমার মস্তক ও সেইসঙ্গে প্রকাশিত বাক্য বইয়ে বর্ণিত পশুর তৃতীয় মস্তক দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে। ১২-১৩ পৃষ্ঠার চিত্রতালিকা দেখুন।

^ যদিও রোম ৭০ খ্রিস্টাব্দে যিরূশালেমকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, কিন্তু সেই আক্রমণাত্মক কাজ আদিপুস্তক ৩:১৫ পদের পরিপূর্ণতার অংশ ছিল না। সেই সময়ে, মাংসিক ইস্রায়েল আর ঈশ্বরের মনোনীত জাতি ছিল না।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]