সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে,” তা যিহোবা প্রকাশ করেন

“যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে,” তা যিহোবা প্রকাশ করেন

“যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে,” তা যিহোবা প্রকাশ করেন

“যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশিত বাক্য, ঈশ্বর যাহা তাঁহাকে দান করিলেন, যেন তিনি, যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে, সেই সকল আপন দাসগণকে দেখাইয়া দেন।”—প্রকা. ১:১.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

প্রকাণ্ড প্রতিমার কোন অংশগুলো অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে?

যোহন কীভাবে অ্যাংলো-আমেরিকা এবং রাষ্ট্রসংঘের মধ্যেকার সম্পর্ককে তুলে ধরে?

দানিয়েল এবং যোহন কীভাবে মানব শাসনের শেষকে চিত্রিত করে?

১, ২. (ক) দানিয়েল ও যোহনের ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদেরকে কী করার সুযোগ করে দেয়? (খ) পশুর প্রথম ছয়টা মস্তক কোন বিষয়গুলোকে চিত্রিত করে?

 দানিয়েল এবং যোহনের ভবিষ্যদ্‌বাণী এমন এমন উপায়ে সংগতিপূর্ণ, যেগুলো আমাদেরকে জগতের ভবিষ্যৎ এবং বর্তমানের অনেক ঘটনা বুঝতে সাহায্য করে। পশু সম্বন্ধে যোহনের দর্শন, দশ শৃঙ্গবিশিষ্ট ভয়ংকর পশু সম্বন্ধে দানিয়েলের বিবরণ এবং প্রকাণ্ড প্রতিমা সম্বন্ধে দানিয়েলের ব্যাখ্যা তুলনা করার মাধ্যমে আমরা কী শিখতে পারি? আর এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো সম্বন্ধে স্পষ্ট বোধগম্যতা লাভ করা আমাদেরকে কী করার জন্য পরিচালিত করবে?

আসুন আমরা পশু সম্বন্ধে যোহন যে-দর্শন দেখেছিলেন, সেটাতে মনোযোগ দিই। (প্রকা. ১৩ অধ্যায়) আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন দেখেছি যে, পশুর প্রথম ছয়টা মস্তক মিশর, অশূর, বাবিল, মাদীয়-পারস্য, গ্রিস এবং রোমকে চিত্রিত করে। এরা সকলেই নারীর বংশের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছে। (আদি. ৩:১৫) ষষ্ঠ মস্তক অর্থাৎ রোম, যোহন তার দর্শন সম্বন্ধে লেখার পরও কয়েক শতাব্দী ধরে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ছিল। পরিশেষে, সপ্তম মস্তক রোমের স্থান নিয়ে নেয়। কোন রাজনৈতিক বিশ্বশক্তি সপ্তম মস্তক হিসেবে প্রমাণিত হয় এবং নারীর বংশের প্রতি এটা কেমন আচরণ করে?

ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে

৩. দশ শৃঙ্গবিশিষ্ট ভয়ংকর পশু কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে আর দশ শৃঙ্গ কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে?

আমরা প্রকাশিত বাক্য ১৩ অধ্যায়ে বর্ণিত পশুর সপ্তম মস্তকের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য যোহনের দর্শনকে দানিয়েলের দশ শৃঙ্গবিশিষ্ট ভয়ংকর পশুর দর্শনকে তুলনা করতে পারি। * (পড়ুন, দানিয়েল ৭:৭, ৮, ২৩, ২৪.) দানিয়েল যে-পশুকে দেখেছিলেন, তা রোমীয় বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে। (১২-১৩ পৃষ্ঠার চিত্রতালিকা দেখুন।) পঞ্চম শতাব্দীতে, রোমীয় সাম্রাজ্য বিভক্ত হতে শুরু করে। ওই ভয়ংকর পশুর মস্তক থেকে উৎপন্ন দশ শৃঙ্গ সেইসমস্ত রাজ্যকে চিত্রিত করে, যেগুলো রোমীয় সাম্রাজ্য থেকে আসে।

৪, ৫. (ক) ক্ষুদ্র শৃঙ্গ কী করেছিল? (খ) পশুর সপ্তম মস্তকের পরিচয় কী?

হিংস্র পশুর মস্তক থেকে উৎপন্ন চারটে শৃঙ্গ অথবা রাজ্য সম্বন্ধে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটে শৃঙ্গ, “ক্ষুদ্র” এক শৃঙ্গের দ্বারা উৎপাটিত হয়। এটা সেই সময়ে পরিপূর্ণ হয়, যখন রোমীয় সাম্রাজ্যের প্রাক্তন উপনিবেশ, ব্রিটেন প্রাধান্য লাভ করতে শুরু করে। সপ্তদশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত, ব্রিটেন তুলনামূলকভাবে ততটা উল্লেখযোগ্য শক্তি ছিল না। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের অন্য তিনটে অঞ্চল—স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ফ্রান্স—আরও বেশি প্রভাবশালী ছিল। ব্রিটেন একে একে সেই শক্তিগুলোকে উৎপাটন করে, সেগুলোকে তাদের মর্যাদাপূর্ণ পদ থেকে অপসারিত করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ব্রিটেন জগতের মধ্যে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠার পথে ছিল। কিন্তু, এটা তখনও পশুর সপ্তম মস্তক হয়ে ওঠেনি।

যদিও ব্রিটেন কর্তৃত্ব লাভ করেছিল, কিন্তু উত্তর আমেরিকায় এর যে-উপনিবেশগুলো ছিল, সেগুলো ভেঙে গিয়েছিল। তার পরও, যুক্তরাষ্ট্রকে ধীরে ধীরে শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, এমনকী ব্রিটিশ নৌশক্তির দ্বারা সুরক্ষাও প্রদান করা হয়েছিল। ১৯১৪ সালে যখন প্রভুর দিন শুরু হয়, তখন ইতিমধ্যেই ব্রিটেন ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তোলে এবং যুক্তরাষ্ট্র সর্ববৃহৎ শিল্প শক্তি হয়ে ওঠে। * প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের সঙ্গে এক বিশেষ অংশীদারিত্ব গড়ে তোলে। তখনই পশুর সপ্তম মস্তক, অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই মস্তক নারীর বংশের প্রতি কেমন আচরণ করেছিল?

৬. সপ্তম মস্তক ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছে?

প্রভুর দিন শুরু হওয়ার অল্পসময় পরই, সপ্তম মস্তক ঈশ্বরের লোকেদের—পৃথিবীতে বসবাসকারী খ্রিস্টের অবশিষ্ট ভ্রাতৃগণের—ওপর আক্রমণ নিয়ে আসে। (মথি ২৫:৪০) যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর উপস্থিতির সময়ে, বংশের এক অবশিষ্টাংশ পৃথিবীতে সক্রিয় থাকবে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; গালা. ৩:২৬-২৯) অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি সেই পবিত্রগণের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে। (প্রকা. ১৩:৩, ৭) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, এটা ঈশ্বরের লোকেদের অত্যাচার করে, তাদের কিছু প্রকাশনা নিষিদ্ধ করে দেয় এবং বিশ্বস্ত দাসশ্রেণীর প্রতিনিধিদের জেলে পাঠায়। পশুর সপ্তম মস্তক বলতে গেলে প্রচার কাজ একেবারে বন্ধই করে দিয়েছিল। যিহোবা এই নাটকীয় ঘটনা সম্বন্ধে আগেই জানতে পেরেছিলেন এবং যোহনের কাছে তা প্রকাশ করেছিলেন। ঈশ্বর যোহনকে এও বলেছিলেন যে, বংশের গৌণ অংশ বৃদ্ধিরত আধ্যাত্মিক কাজের জন্য পুনরুজ্জীবিত হবে। (প্রকা. ১১:৩, ৭-১১) এই ঘটনাগুলো যে সত্যিই ঘটেছিল, সেটার প্রমাণ হচ্ছে যিহোবার আধুনিক দিনের দাসদের ইতিহাস।

অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি এবং লৌহ ও মৃত্তিকার চরণ

৭. পশুর সপ্তম মস্তক এবং প্রকাণ্ড মূর্তির মধ্যে সম্পর্ক কী?

পশুর সপ্তম মস্তক এবং প্রকাণ্ড প্রতিমার মধ্যে সম্পর্ক কী? ব্রিটেন—এবং সংযোজিত অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র—রোমীয় সাম্রাজ্য থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। কিন্তু, প্রতিমার চরণ সম্বন্ধে কী বলা যায়? সেগুলোকে লৌহ ও মৃত্তিকার মিশ্রণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (পড়ুন, দানিয়েল ২:৪১-৪৩.) এই বর্ণনা সেই সময়ের সঙ্গে মিলে যায়, যখন সপ্তম মস্তক—অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি—প্রাধান্য লাভ করতে শুরু করে। ঠিক যেমন লৌহের সঙ্গে মিশ্রিত মৃত্তিকা কঠিন পদার্থ লৌহের চেয়ে দুর্বল, তেমনই অ্যাংলো-আমেরিকা সেই শক্তি থেকে দুর্বল, যেটা থেকে এই শক্তি এসেছে। কীভাবে?

৮, ৯. (ক) সপ্তম বিশ্বশক্তি কীভাবে লৌহতুল্য শক্তি দেখিয়েছিল? (খ) প্রতিমার চরণের মৃত্তিকা কোন বিষয়কে চিত্রিত করে?

কখনো কখনো পশুর সপ্তম মস্তক লৌহতুল্য বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয় লাভ করার পর এর শক্তির প্রমাণ দিতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও, সপ্তম মস্তকের লৌহতুল্য শক্তি স্পষ্ট দেখা যায়। * সেই যুদ্ধের পর, সপ্তম মস্তক তখনও মাঝে মাঝে লৌহতুল্য বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। কিন্তু, শুরু থেকেই লৌহ মৃত্তিকার সঙ্গে মিশ্রিত হয়।

যিহোবার দাসেরা প্রতিমার চরণের রূপক অর্থ বোঝার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা করেছে। দানিয়েল ২:৪১ পদ লৌহ ও মৃত্তিকার মিশ্রণকে অনেকগুলো নয় বরং একটা “রাজ্য” হিসেবে বর্ণনা করে। তাই, মৃত্তিকা সেই উপাদানগুলোকে চিত্রিত করে, যেগুলো অ্যাংলো-আমেরিকার প্রভাবাধীনে রয়েছে এবং যেগুলো এটাকে রোমীয় সাম্রাজ্যের কঠিন পদার্থ লৌহের চেয়ে দুর্বল করে দিয়েছে। মৃত্তিকাকে ‘মনুষ্যের বীর্য্য’ বা সাধারণ লোক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (দানি. ২:৪৩) অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির সময়ে লোকেরা নাগরিক অধিকার আন্দোলন, শ্রমিক সংঘ এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের জন্য বিদ্রোহ করেছিল। সাধারণ লোকেরা অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে লৌহতুল্য ক্ষমতা সহকারে কাজ করার ক্ষেত্রে এর ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়েছিল। এ ছাড়া, বিরোধী মতাদর্শ এবং নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করা জনপ্রিয় নেতাদের ক্ষমতাকেও দুর্বল করে দিয়েছিল আর এই কারণে সেই নেতারাও তাদের নীতিমালাকে বাস্তবায়ন করার জন্য একতরফা ক্ষমতার অধিকারী ছিল না। দানিয়েল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “রাজ্যের একাংশ দৃঢ় ও একাংশ ভঙ্গুর হইবে।”—দানি. ২:৪২; ২ তীম. ৩:১-৩.

১০, ১১. (ক) “চরণের” ভবিষ্যৎ কী? (খ) চরণের অঙ্গুলির সংখ্যা সম্বন্ধে আমরা কোন উপসংহারে আসতে পারি?

১০ একবিংশ শতাব্দীতে, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র এদের বিশেষ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল, জগতের বিভিন্ন বিষয়গুলোতে একত্রে কাজ করেছিল। প্রকাণ্ড প্রতিমা এবং পশু সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নিশ্চিত করে যে, অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির পরিবর্তে অন্য আর কোনো বিশ্বশক্তি আসবে না। এই শেষ শক্তি লৌহময় চরণের দ্বারা চিত্রিত শক্তির চেয়ে দুর্বল কিন্তু এটা নিজে নিজেই চূর্ণবিচূর্ণ হবে না।

১১ প্রতিমার চরণের অঙ্গুলির সংখ্যার কি কোনো বিশেষ অর্থ রয়েছে? এই বিষয়টা বিবেচনা করুন: অন্যান্য দর্শনে, দানিয়েল নির্দিষ্ট সংখ্যার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন—উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন পশুর মস্তকের শৃঙ্গের সংখ্যা। সেই সংখ্যাগুলোর অর্থ রয়েছে। কিন্তু, প্রতিমা সম্বন্ধে বর্ণনা করার সময় দানিয়েল অঙ্গুলির সংখ্যা সম্বন্ধে উল্লেখ করেননি। তাই, প্রতিমার বাহু, হাত, আঙুল, জঙ্ঘা এবং চরণের সংখ্যার মতোই এই সংখ্যার কোনো বিশেষ অর্থ নেই বলে মনে হয়। দানিয়েল বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, চরণের অঙ্গুলি লৌহ এবং মৃত্তিকার দ্বারা গঠিত। তার বর্ণনা থেকে আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, “প্রস্তর” দ্বারা চিত্রিত ঈশ্বরের রাজ্য যখন প্রতিমার চরণে আঘাত করবে, তখন অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিই শাসনরত থাকবে।—দানি. ২:৪৫.

অ্যাংলো-আমেরিকা এবং দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট পশু

১২, ১৩. দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট পশু কোন বিষয়কে চিত্রিত করে এবং এটা কী করে?

১২ যদিও অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি লৌহ এবং মৃত্তিকার মিশ্রণ কিন্তু যিশু যোহনকে যে-দর্শনগুলো দেখিয়েছিলেন, সেগুলো দেখায় যে, এই শক্তি শেষকালে মুখ্য ভূমিকায় কাজ করে যাবে। কীভাবে? যোহন দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট পশু সম্বন্ধে একটা দর্শন দেখেছিলেন, যা নাগের ন্যায় কথা বলেছিল। সেই অদ্ভূত পশু কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে? এর দুটো শৃঙ্গ রয়েছে, তাই এটা হল দ্বৈত শক্তি। যোহন আবারও অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে দেখতে পেয়েছিলেন, তবে এক বিশেষ ভূমিকায়।পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৩:১১-১৫.

১৩ এই পশু সপ্ত মস্তক ও দশ শৃঙ্গবিশিষ্ট পশুর এক প্রতিমা তৈরি করতে প্ররোচিত করে। যোহন লিখেছিলেন যে, পশুর প্রতিমা আবির্ভূত হবে, অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং এরপর আবারও উদ্ভূত হবে। ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা গঠিত একটা সংগঠনের ক্ষেত্রে ঠিক তা-ই ঘটেছিল, যে-সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল জগতের রাজ্যগুলোকে একতাবদ্ধ করা এবং সেগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করা। * এই সংগঠন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আবির্ভূত হয়েছিল এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। সেই যুদ্ধের সময়, ঈশ্বরের লোকেরা ঘোষণা করেছিল যে, প্রকাশিত বাক্য বইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুসারে, পশুর প্রতিমা পুনরায় উঠবে। আর সত্যিই এর উদয় হয়েছিল—রাষ্ট্রসংঘ হিসেবে।—প্রকা. ১৭:৮.

১৪. কোন অর্থে পশুর প্রতিমা “অষ্টম [রাজা]”?

১৪ যোহন সেই পশুর প্রতিমাকে “অষ্টম [রাজা]” হিসেবে বর্ণনা করে। কোন অর্থে? এটাকে প্রথম পশুর অষ্টম মস্তক হিসেবে বর্ণনা করা হয়নি। এটা কেবল সেই পশুর এক প্রতিমা। এই প্রতিমার যে-শক্তিই থাকুক না কেন, তা এর সদস্য জাতিগুলো, বিশেষভাবে এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক, অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির কাছ থেকে এসেছে। (প্রকা. ১৭:১০, ১১) কিন্তু, এটা একজন রাজা হিসেবে এক বিশেষ কাজ সম্পাদন করার জন্য ক্ষমতা লাভ করে, যে-কাজ এমন ধারাবাহিক ঘটনাগুলোর সূত্রপাত ঘটায়, যেগুলো ইতিহাসকে পরিবর্তন করে দেবে।

পশুর প্রতিমা বেশ্যাকে গ্রাস করে

১৫, ১৬. বেশ্যা কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করে আর তার সমর্থনকারীদের কী হয়েছে?

১৫ যোহনের কথা অনুযায়ী, সিন্দূরবর্ণের পশুর—পশুর প্রতিমার—ওপর একজন রূপক বেশ্যা রয়েছে, যে সেই পশুর ওপর প্রভুত্ব করে। সে “মহতী বাবিল” নাম ধারণ করে। (প্রকা. ১৭:১-৬) এই বেশ্যা উপযুক্তভাবেই সমস্ত মিথ্যা ধর্মকে চিত্রিত করে, যে-সংগঠনগুলোর মধ্যে খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলো অন্যতম। ধর্মীয় সংগঠনগুলো সেই পশুর প্রতিমাকে তাদের পূর্ণ সমর্থন প্রদান করেছে এবং এর ওপর তাদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছে।

১৬ কিন্তু, প্রভুর দিনে মহতী বাবিল জলকে অর্থাৎ তাকে সমর্থনকারী লোকেদেরকে নাটকীয়ভাবে শুষ্ক হয়ে যেতে দেখে। (প্রকা. ১৬:১২; ১৭:১৫) উদাহরণস্বরূপ, পশুর প্রতিমা যখন প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল, তখন খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলো—মহতী বাবিলের প্রভাবশালী অংশ—পাশ্চাত্য জগতের ওপর প্রভুত্ব করছিল। বর্তমানে, গির্জাগুলো এবং এর পরিচারকরা এদের সদস্যদের সম্মান ও সমর্থন হারিয়েছে। বস্তুতপক্ষে, অনেক লোক মনে করে যে, ধর্মই বিভিন্ন দ্বন্দ্বে মদত জোগায় এবং দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার জন্য দায়ী। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের এক দল ক্রমাগত মৌখিকভাবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজের ওপর থেকে ধর্মের প্রভাব পুরোপুরিভাবে দূর করে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে।

১৭. শীঘ্র মিথ্যা ধর্মের প্রতি কী ঘটবে এবং কেন?

১৭ কিন্তু, মিথ্যা ধর্ম এমনি এমনিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে না। বেশ্যা প্রবল শক্তির অধিকারী থাকবে এবং যে-রাজারা ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের হৃদয়ে ঈশ্বর প্রবৃত্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাদেরকে তার ইচ্ছার প্রতি বশীভূত রাখার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬, ১৭.) যিহোবা খুব শীঘ্র রাষ্ট্রসংঘের দ্বারা চিত্রিত শয়তানের ব্যবস্থার রাজনৈতিক সংগঠনকে পরিচালিত করবেন, যেন তা মিথ্যা ধর্মকে আক্রমণ করে। তারা এর প্রভাব দূর করে দেবে এবং এর ধনসম্পদ লুটে নেবে। কয়েক দশক আগে এইরকম এক ঘটনাকে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। আজকে, এই বেশ্যা সিন্দূরবর্ণ পশুর ওপর টলায়মান অবস্থায় আছে। তা সত্ত্বেও, সে তার আসন থেকে ধীরে ধীরে পিছলে পড়ে যাবে না। তার পতন হবে আকস্মিক এবং ভয়ানক।—প্রকা. ১৮:৭, ৮, ১৫-১৯.

পশুগুলোর বিনাশ

১৮. (ক) পশু কী করবে এবং এর ফলাফল কী হবে? (খ) দানিয়েল ২:৪৪ পদে ঈশ্বরের রাজ্য কোন রাজ্যগুলোকে ধ্বংস করবে বলে উল্লেখ করে? (১৭ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।)

১৮ মিথ্যা ধর্মের বিনাশের পর, পশু অর্থাৎ শয়তানের পার্থিব রাজনৈতিক সংগঠন ঈশ্বরের রাজ্যের ওপর আক্রমণ করার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠবে। স্বর্গে না যেতে পেরে, পৃথিবীর রাজারা পৃথিবীস্থ সেই লোকেদের ওপর ক্রোধ প্রকাশ করবে, যারা ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করে। ফলাফল অবধারিত। (প্রকা. ১৬:১৩-১৬; ১৭:১২-১৪) দানিয়েল সেই চূড়ান্ত যুদ্ধের একটা দিক সম্বন্ধে বর্ণনা করেন। (পড়ুন, দানিয়েল ২:৪৪.) প্রকাশিত বাক্য ১৩:১ পদে উল্লেখিত পশু, এর প্রতিমা এবং দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট পশু ধ্বংস হয়ে যাবে।

১৯. আমরা কোন আস্থা রাখতে পারি আর এখন কী করার সময়?

১৯ আমরা সপ্তম মস্তকের সময়ে বাস করছি। এই পশু ধ্বংস হওয়ার আগে, আর কোনো মস্তক আবির্ভূত হবে না। অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি সেই সময় শাসনরত বিশ্বশক্তি হিসেবে থাকবে, যখন মিথ্যা ধর্মকে নির্মূল করে দেওয়া হবে। দানিয়েল এবং যোহনের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, শীঘ্র মিথ্যা ধর্মের বিনাশ হবে এবং আরমাগিদোনের যুদ্ধ সংগঠিত হবে। ঈশ্বর এই বিষয়গুলো আগেই প্রকাশ করেছেন। আমরা কি ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক সতর্কবাণীতে মনোযোগ দেব? (২ পিতর ১:১৯) যিহোবার পক্ষ নেওয়া এবং তাঁর রাজ্যকে সমর্থন করার সময় এখনই।—প্রকা. ১৪:৬, ৭.

[পাদটীকাগুলো]

^ বাইবেলে, দশ সংখ্যাটি প্রায়ই এক সম্পূর্ণ দলকে—এই ক্ষেত্রে রোমীয় সাম্রাজ্য থেকে আসা সমস্ত রাজ্যকে—চিত্রিত করে।

^ যদিও অষ্টাদশ শতাব্দীতে দ্বৈত বিশ্বশক্তির অংশগুলো অস্তিত্বে ছিল কিন্তু যোহন এটাকে এমনভাবে বর্ণনা করেছিলেন, যা প্রভুর দিনের শুরুর দিকে আবির্ভূত হবে। বস্তুতপক্ষে, প্রকাশিত বাক্য বইয়ে লিপিবদ্ধ দর্শনগুলোর পরিপূর্ণতা “প্রভুর দিনে” ঘটবে। (প্রকা. ১:১০) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরই, সপ্তম মস্তক মিত্র বিশ্বশক্তি হিসেবে কাজ করা শুরু করেছে।

^ সেই যুদ্ধের সময় এই রাজা যে-ভয়ানক ধ্বংসের কারণ হবে, তা দানিয়েল আগেই ভবিষ্যদ্‌বাণী করে লিখেছিলেন: “সে আশ্চর্য্যরূপে [বিস্ময়করভাবে] বিনাশ করিবে।” (দানি. ৮:২৪) উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র যখন দ্বৈত বিশ্বশক্তির শত্রুদের ওপর দুটো পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল, তখন নজিরহীন মাত্রায় ভয়ানক ক্ষতিসাধন করেছিল।

^ প্রকাশিত বাক্য—তার মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! (ইংরেজি) বইয়ের ২৪০, ২৪১, ২৫৩ পৃষ্ঠা দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার বাক্স]

“ঐ সকল রাজ্য” কাদের নিয়ে গঠিত?

দানিয়েল ২:৪৪ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণী বলে যে, ঈশ্বরের রাজ্য ‘ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিবে।’ এই ভবিষ্যদ্‌বাণী কেবল প্রতিমার বিভিন্ন অংশ দ্বারা চিত্রিত রাজ্যগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করে।

অন্যান্য মানবসরকারের বিষয়ে কি বলা যায়? প্রকাশিত বাক্য বইয়ের সাদৃশ্যমূলক ভবিষ্যদ্‌বাণী এই বিষয়টা আরও ব্যাপকভাবে প্রকাশ করে। এটা দেখায় যে, ‘জগত্‌ সমুদয়ের রাজারা,’ ‘সর্ব্বশক্তিমান্‌ঈশ্বরের সেই মহাদিনে’ যিহোবার বিরুদ্ধে একত্রিত হবে। (প্রকা. ১৬:১৪; ১৯:১৯-২১) তাই, কেবল প্রতিমার দ্বারা চিত্রিত রাজ্যগুলোই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অন্যান্য সমস্ত মানবসরকারও আরমাগিদোনে ধ্বংস হয়ে যাবে।