সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার সেবাকে কেন প্রথমে রাখবেন?

যিহোবার সেবাকে কেন প্রথমে রাখবেন?

যিহোবার সেবাকে কেন প্রথমে রাখবেন?

“আমার মুখ তোমার ধর্ম্মশীলতা বর্ণনা করিবে, তোমার পরিত্রাণ সমস্ত দিন বর্ণনা করিবে।”—গীত. ৭১:১৫.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কেন নোহ, মোশি, যিরমিয় ও পৌল যিহোবাকে তাদের জীবনে প্রথমে রেখেছিল?

কোন বিষয়টা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে যে, আপনার জীবন নিয়ে আপনি কী করবেন?

কেন আপনি যিহোবার সেবাকে প্রথমে রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

১, ২. (ক) একজন ব্যক্তি যখন যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেন, তখন সেটার মাধ্যমে কী ইঙ্গিত দেওয়া হয়? (খ) নোহ, মোশি, যিরমিয় এবং পৌলের বাছাইগুলো বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি?

 আপনি যখন যিশুর একজন উৎসর্গীকৃত ও বাপ্তাইজিত অনুসারী হন, তখন আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ নেন। ঈশ্বরের প্রতি আপনার উৎসর্গীকরণ হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা আপনি একজন ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে নিতে পারেন। এটা এমন যেন আপনি বলছেন: ‘যিহোবা, আমি চাই, আমার জীবনের প্রতিটা দিকে তুমিই আমার প্রভু হবে। আমি তোমার দাস। আমি চাই তুমিই আমাকে নির্ধারণ করে দেবে যে, কীভাবে আমার সময়কে ব্যয় করা উচিত, আমার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো কী হওয়া উচিত এবং কীভাবে আমার সম্পদ ও মেধাকে ব্যবহার করা উচিত।’

আপনি যদি একজন উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান হয়ে থাকেন, তাহলে যিহোবার কাছে আপনি মূলত এই প্রতিজ্ঞাই করেছেন। আপনার সিদ্ধান্তের জন্য আপনি প্রশংসা লাভের যোগ্য; এটা ছিল সঠিক এবং বিজ্ঞতাপূর্ণ কাজ। কিন্তু এখন যেহেতু আপনি যিহোবাকে আপনার প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন, তাই কীভাবে আপনি আপনার সময়কে ব্যবহার করেন? নোহ, মোশি, যিরমিয় এবং প্রেরিত পৌলের উদাহরণ আমাদেরকে এই প্রশ্নটা পরীক্ষা করার জন্য সাহায্য করতে পারে। তারা প্রত্যেকে যিহোবার দাস হিসেবে সর্বান্তঃকরণে তাঁর সেবা করেছিল। আমাদের পরিস্থিতিও তাদের মতোই। তাদের জীবনের প্রধান অনুধাবনগুলোর ব্যাপারে তারা যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেগুলো আমাদেরকে আমরা কীভাবে নিজেদের সময়কে ব্যবহার করছি, তা পরীক্ষা করার জন্য উৎসাহিত করতে পারে।—মথি ২৮:১৯, ২০; ২ তীম. ৩:১.

জলপ্লাবনের পূর্বে

৩. কীভাবে আমাদের দিন নোহের দিনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ?

যিশু নোহের সময় ও আমাদের সময়ের মধ্যে এক সাদৃশ্য তুলে ধরেছিলেন। “নোহের সময়ে যেরূপ হইয়াছিল, মনুষ্যপুত্রের আগমনও তদ্রূপ হইবে,” তিনি বলেছিলেন। তারা “ভোজন ও পান করিত, বিবাহ করিত ও বিবাহিতা হইত, এবং বুঝিতে পারিল না [“মনোযোগ দিল না,” NW], যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।” (মথি ২৪:৩৭-৩৯) বর্তমানে মানবজাতির অধিকাংশই আমাদের সময়ের গুরুত্বের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে জীবনযাপন করে থাকে। তারা সেই সাবধানবাণীতে মনোযোগ দেয় না, যা ঈশ্বরের দাসেরা ঘোষণা করে। অনেকে এমনকী ঈশ্বর যে মানুষের বিভিন্ন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন এই ধারণাকে বিদ্রূপ করে উড়িয়ে দেয়—যেমনটা নোহের দিনের লোকেরাও দিয়েছিল। (২ পিতর ৩:৩-৭) তা সত্ত্বেও, সেই প্রতিকূল পরিবেশে নোহ কীভাবে তার সময়কে ব্যবহার করেছিলেন?

৪. যিহোবার কাছ থেকে কার্যভার লাভ করার পর নোহ কীভাবে তার সময়কে ব্যবহার করেছিলেন এবং কেন?

নোহকে যখন ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানানো হয়েছিল ও কার্যভার দেওয়া হয়েছিল, তখন নোহ মানুষ এবং পশুপাখিকে রক্ষা করার জন্য জাহাজ নির্মাণ করেছিলেন। (আদি. ৬:১৩, ১৪, ২২) এ ছাড়া, নোহ যিহোবার আসন্ন বিচার সম্বন্ধেও ঘোষণা করেছিলেন। প্রেরিত পিতর তাকে “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” বলে উল্লেখ করেছিলেন, যেটা ইঙ্গিত দেয় যে, নোহ তার প্রতিবেশীদেরকে তাদের পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সাহায্য করার জন্য প্রচেষ্টা করেছিলেন। (পড়ুন, ২ পিতর ২:৫.) আপনি কি মনে করেন যে, নোহ ও তার পরিবারের জন্য কোনো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠা করার, সমসাময়িক লোকেদের চেয়ে সফল হওয়ার অথবা আরামদায়ক জীবনযাপন শুরু করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা যুক্তিসংগত হতো? অবশ্যই না! সামনে যা রয়েছে সেই সম্বন্ধে অবগত থাকায়, তারা এই ধরনের বিক্ষেপ এড়িয়ে চলেছিল।

একজন মিশরীয় রাজপুত্রের বিভিন্ন বাছাই

৫, ৬. (ক) মোশি যে-শিক্ষা লাভ করেছিলেন, সেগুলো সম্ভবত তাকে কীসের জন্য প্রস্তুত করতে পারত? (খ) কেন মোশি মিশরে তার সামনে যে-সম্ভাব্য সুযোগগুলো ছিল, সেগুলোকে পরিহার করেছিলেন?

এরপর, আসুন আমরা মোশির উদাহরণ লক্ষ করি। তিনি মিশরীয় এক রাজপ্রাসাদে ফরৌণের মেয়ের পালক পুত্র হিসেবে বড়ো হয়েছিলেন। একজন যুবক রাজপুত্র হিসেবে, তিনি “মিস্রীয়দের সমস্ত বিদ্যায়” শিক্ষিত ছিলেন। (প্রেরিত ৭:২২; যাত্রা. ২:৯, ১০) সম্ভবত তাকে ফরৌণের রাজসভায় কর্মজীবন শুরু করার জন্য প্রস্তুত করতে এইরকম শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। তিনি তার সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী সরকারের মধ্যে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হতে পারতেন এবং এইরকম একটা পদ তাকে বিলাসসামগ্রী, বিশেষ সুযোগ ও সুখস্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারত। কিন্তু, এগুলো উপভোগ করা কি মোশির উদ্দেশ্য ছিল?

যেহেতু মোশি তার জীবনের শুরুর দিকে তার আসল বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন, তাই সম্ভবত তিনি জানতেন যে, যিহোবা তার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। মোশি সেই প্রতিজ্ঞাগুলোতে বিশ্বাস রেখেছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই নিজের ভবিষ্যৎ এবং যিহোবার প্রতি আনুগত্য সম্বন্ধে মনোযোগপূর্বক চিন্তা করেছিলেন। তাই, যে-সময়ে তাকে বাছাই করতে হয়েছিল যে, তিনি একজন মিশরীয় রাজপুত্র হবেন নাকি একজন ইস্রায়েলীয় দাস হবেন, তখন তিনি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? মোশি “পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ” করা বেছে নিয়েছিলেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:২৪-২৬.) পরবর্তী সময়ে, নিজের জীবনকে কীভাবে ব্যবহার করা উচিত, সেই ব্যাপারে তিনি যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করেছিলেন। (যাত্রা. ৩:২, ৬-১০) কেন মোশি তা করেছিলেন? কারণ তিনি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো বিশ্বাস করেছিলেন। তিনি এই উপসংহারে এসেছিলেন যে, মিশরে তার জন্য কোনো ভবিষ্যৎই নেই। আসলে, এর খুব অল্পসময় পরেই সেই জাতি ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা দশটা আঘাতের দ্বারা জর্জরিত হয়েছিল। বর্তমানে যারা যিহোবার উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত, তাদের জন্য আপনি কি এই ঘটনার মধ্যে কোনো শিক্ষা দেখতে পান? এই বিধিব্যবস্থার কোনো কেরিয়ার অথবা যেকোনো সুখস্বাচ্ছন্দ্যের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে, যিহোবা ও তাঁর সেবার প্রতি আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে।

কী ঘটতে যাচ্ছে তা যিরমিয় জানতেন

৭. কীভাবে যিরমিয়ের পরিস্থিতি আমাদের পরিস্থিতির মতোই ছিল?

আরেকজন ব্যক্তি, যিনি যিহোবার সেবাকে প্রথমে রেখেছিলেন, তিনি হলেন ভাববাদী যিরমিয়। যিহোবা, যিরূশালেম ও যিহূদার ধর্মভ্রষ্ট লোকেদের ওপর এক বিচারের বার্তা প্রচার করার জন্য যিরমিয়কে তাঁর ভাববাদী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। তাই এক অর্থে, যিরমিয় “শেষকালে” বাস করছিলেন। (যির. ২৩:১৯, ২০) তিনি খুব ভালোভাবেই জানতেন যে, তিনি যে-বিধিব্যবস্থায় বাস করছেন, সেটা যেভাবে চলছিল, সেভাবে থাকবে না।

৮, ৯. (ক) কেন বারূকের চিন্তাভাবনাকে সংশোধন করার প্রয়োজন ছিল? (খ) পরিকল্পনা করার সময় আমাদের কোন বিষয়টা মনে রাখা উচিত?

যিরমিয় তার দৃঢ়প্রত্যয়ের কারণে যুক্তিযুক্তভাবেই কী করেননি? তিনি এমন এক বিধিব্যবস্থার মধ্যে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার চেষ্টা করেননি, যেটার ধ্বংস অনিবার্য। সেটা করে কী-ই-বা লাভ হতো? কিন্তু, যিরমিয়ের সচিব বারূক একটা সময়ে বিষয়গুলোকে স্পষ্টভাবে দেখেননি। তাই, ঈশ্বর যিরমিয়কে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যাতে তিনি তার সচিবকে এই কথা বলেন: “দেখ, আমি যাহা গাঁথিয়াছি, তাহা আমি ভাঙ্গিয়া ফেলিব; যাহা রোপণ করিয়াছি, তাহা আমি উৎপাটন করিব; আর এই সমগ্র দেশে উহা করিব। তবে তুমি কি আপনার জন্য মহৎ মহৎ বিষয় চেষ্টা করিবে? সে চেষ্টা করিও না; কেননা দেখ, আমি সমস্ত মর্ত্ত্যের প্রতি অমঙ্গল ঘটাইব, . . . কিন্তু তুমি যে সকল স্থানে যাইবে, সে সকল স্থানে লুট দ্রব্যের ন্যায় তোমার প্রাণ তোমাকে দিব।”—যির. ৪৫:৪, ৫.

আমরা ঠিক নিশ্চিত নই যে, বারূক নিজের জন্য কোন ‘মহৎ মহৎ বিষয়ের’ চেষ্টা করেছিলেন। * কিন্তু, আমরা জানি যে, সেগুলো ছিল এমন বিষয়, যেগুলোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই এবং যেগুলো সেই সময়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, যখন বাবিলীয়রা খ্রি.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেম জয় করেছিল। আপনি কি এই ঘটনার মধ্যে আমাদের জন্য কোনো শিক্ষা দেখতে পান? আমরা যদি জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো লাভ করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য কিছুটা পরিকল্পনা করতে হবে। (হিতো. ৬:৬-১১) কিন্তু, এমন অনুধাবনগুলোর পিছনে অনেক সময় ও শক্তি বিনিয়োগ করা কতটা বিজ্ঞতার কাজ হবে, যেগুলোর কোনো স্থায়ী মূল্য নেই? এটা ঠিক যে, যিহোবার সংগঠন নতুন নতুন কিংডম হল, শাখা অফিস ও ঈশতান্ত্রিক প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা করে থাকে। কিন্তু, এই প্রচেষ্টার একটা ভবিষ্যৎ রয়েছে কারণ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজ্যের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নেওয়া। যিহোবার সমস্ত উৎসর্গীকৃত লোক যখন বিভিন্ন পরিকল্পনা করে, তখন একইরকম অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো স্থাপন করা তাদের জন্য উপযুক্ত। আপনি কি মনেপ্রাণে এই ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, আপনি “প্রথমে [ঈশ্বরের] রাজ্য ও [ঈশ্বরের] ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা” করছেন?—মথি ৬:৩৩.

“আমি . . . তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি”

১০১১. (ক) একজন খ্রিস্টান হওয়ার আগে পৌল কোন প্রচেষ্টার ওপর তার মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন? (খ) কেন পৌলের উদ্দেশ্য পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল?

১০ সবশেষে, আসুন আমরা পৌলের উদাহরণ বিবেচনা করি। খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তার এমন এক ভবিষ্যৎ ছিল, যেটাকে বেশ উজ্জ্বল বলে মনে হয়েছিল। তিনি তার দিনের সবচেয়ে বিখ্যাত শিক্ষকদের মধ্যে একজনের কাছে যিহুদি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি যিহুদি মহাযাজকের কাছ থেকে কর্তৃত্ব লাভ করেছিলেন। আর তিনি পরম্পরাগত পৈতৃক রীতিনীতি পালনে সমসাময়িক অনেক ব্যক্তির চেয়ে অতিশয় উদ্যোগী ছিলেন। (প্রেরিত ৯:১, ২; ২২:৩; ২৬:১০; গালা. ১:১৩, ১৪) তা সত্ত্বেও, এগুলোর সবই সেই সময়ে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল, যখন পৌল বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা যিহুদিদেরকে একটা জাতি হিসেবে আর আশীর্বাদ করছেন না।

১১ পৌল এটা উপলব্ধি করেছিলেন যে, যিহোবার দৃষ্টিকোণ থেকে যিহুদি বিধিব্যবস্থায় এক কেরিয়ার গড়ে তোলার কোনো মূল্য নেই; এটার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। (মথি ২৪:২) এই প্রাক্তন ফরীশী এমনকী এইরকমটা বলতেও পরিচালিত হয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য এবং খ্রিস্টীয় পরিচর্যার বিশেষ সুযোগ সম্বন্ধে তার নতুন ও জ্ঞানালোকিত বোধগম্যতার সঙ্গে তুলনা করলে, আগে তিনি যেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন, সেগুলো এখন তার কাছে “মলবৎ।” পৌল পরম্পরাগত পৈতৃক রীতিনীতির অনুধাবন করার বিষয়টা পরিত্যাগ করেছিলেন এবং পৃথিবীতে তার বাকি জীবনটা সুসমাচার প্রচার করার জন্য নিয়োজিত করেছিলেন।—পড়ুন, ফিলিপীয় ৩:৪-৮, ১৫; প্রেরিত ৯:১৫.

আপনার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো পরীক্ষা করুন

১২. বাপ্তিস্মের পর যিশু কীসের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন?

১২ নোহ, মোশি, যিরমিয়, পৌল এবং তাদের মতো অন্য অনেকে তাদের অধিকাংশ সময় ও শক্তিকে ঈশতান্ত্রিক অনুধাবনগুলোর জন্য ব্যয় করেছে। তারা আমাদের জন্য উত্তম উদাহরণ। অবশ্য, যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাসদের মধ্যে যিশু হলেন সর্বমহান। (১ পিতর ২:২১) বাপ্তাইজিত হওয়ার পর যিশু পৃথিবীতে তাঁর জীবনের বাকি সময়টা সুসমাচার প্রচার করার এবং যিহোবাকে গৌরবান্বিত করার জন্য নিয়োজিত করেছিলেন। যিহোবাকে তার প্রভু হিসেবে স্বীকার করে এমন একজন খ্রিস্টানের জন্য সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তটা হল, যিহোবাকে সেবা করাই তার জীবনের অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত। আপনি কি সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছেন? আর ঈশতান্ত্রিক লক্ষ্যগুলোর অনুধাবন করাকে কীভাবে অত্যাবশ্যকীয় জাগতিক কাজকর্মের সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে?—পড়ুন, গীতসংহিতা ৭১:১৫; ১৪৫:২.

১৩, ১৪. (ক) সমস্ত উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টানকে কী বিবেচনা করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে? (খ) ঈশ্বরের লোকেরা কোন পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারে?

১৩ বছরের পর বছর ধরে যিহোবার সংগঠন বার বার খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছে, যেন তারা প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করে যে, তারা অগ্রগামীর কাজ করতে পারে কি না। বিভিন্ন কারণে, যিহোবার কিছু বিশ্বস্ত দাসের পরিস্থিতি তাদেরকে প্রচারে প্রতি মাসে গড়ে ৭০ ঘন্টা নিয়োজিত করার সুযোগ দেয় না। এই কারণে তাদের মন খারাপ করা উচিত নয়। (১ তীম. ৫:৮) কিন্তু, আপনার বিষয়ে কী বলা যায়? অগ্রগামীর কাজ কি সত্যিই আপনার সাধ্যের বাইরে?

১৪ সেই আনন্দ সম্বন্ধে আবারও ভেবে দেখুন, যা ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে অনেকে এই বছর স্মরণার্থ মরশুমে লাভ করেছিল। মার্চ মাসে, একটা বিশেষ ব্যবস্থা সহায়ক অগ্রগামীদের এটা বাছাই করার সুযোগ দিয়েছিল যে, ক্ষেত্রের পরিচর্যায় তারা ৩০ ঘন্টা, নাকি ৫০ ঘন্টা নিয়োজিত করবে। (গীত. ১১০:৩) লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি সহায়ক অগ্রগামী কাজে অংশ নিয়েছিল এবং মণ্ডলীগুলো অসাধারণ উচ্ছ্বাস ও আনন্দের দীপ্তি ছড়িয়ে দিয়েছিল বলে মনে হয়েছিল। আপনি কি প্রায়ই সেইরকম আনন্দ উপভোগ করার জন্য আপনার কাজকর্মে সমন্বয়সাধন করতে পারেন? এটা প্রতিটা দিনের শেষে একজন উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টানকে এইরকম কথা বলতে পারার পরম পরিতৃপ্তি এনে দেয় যে, “যিহোবা, তোমার সেবায় আমি আমার যথাসাধ্য করতে পেরেছি।”

১৫. জাগতিক শিক্ষার ব্যাপারে একজন অল্পবয়সি খ্রিস্টানের কোন উদ্দেশ্য থাকা উচিত?

১৫ তুমি যদি সেই শিক্ষা সমাপ্ত করার শেষ পর্যায়ে থাকো, যতটুকু শিক্ষা তোমার গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহলে তুমি হয়তো তখন লক্ষ করবে যে, তোমার সুস্বাস্থ্য ও সেইসঙ্গে অল্প দায়দায়িত্ব রয়েছে। তুমি কি নিয়মিত অগ্রগামীর কাজ শুরু করার ব্যাপারে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করে দেখেছ? কোনো সন্দেহ নেই যে, স্কুলের উপদেষ্টারা আন্তরিকভাবেই মনে করে যে, উচ্চশিক্ষার অনুধাবন করা এবং জাগতিক এক কেরিয়ারের জন্য পরিকল্পনা করা তোমার সর্বোত্তম মঙ্গল নিয়ে আসবে। তবে, তারা এমন এক সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখে, যেটার কোনো স্থায়ী ভবিষ্যৎ নেই। অন্যদিকে, ঈশতান্ত্রিক এক কেরিয়ার অনুধাবন করার মাধ্যমে তুমি এমন লক্ষ্যগুলোর অনুধাবন করবে, যা সত্যিই মূল্যবান ও স্থায়ী। আর তুমি যিশুর নিখুঁত উদাহরণ অনুসরণ করবে। এইরকম এক বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত তোমাকে সুখী করবে। এটা তোমাকে সুরক্ষা করবে। আর এটা দেখাবে যে, তুমি যিহোবার কাছে তোমার উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।—মথি ৬:১৯-২১; ১ তীম. ৬:৯-১২.

১৬, ১৭. চাকরি ও অন্যান্য অনুধাবন সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

১৬ বর্তমানে ঈশ্বরের দাসদের মধ্যে অনেকে তাদের পরিবারের মৌলিক প্রয়োজনগুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য দীর্ঘসময় কাজ করে থাকে। তবে, কেউ কেউ হয়তো প্রয়োজনের চেয়েও বেশি ঘন্টা ধরে কাজ করে। (১ তীম. ৬:৮) বাণিজ্যজগৎ আমাদের এইরকমটা বিশ্বাস করানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যে, বাজারে আসা অনেক পণ্য এবং প্রতিটা নতুন মডেল ছাড়া আমরা জীবনযাপন করতে পারব না। কিন্তু, সত্য খ্রিস্টানরা চায় না যে, শয়তানের জগৎ তাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো সম্বন্ধে নির্দেশনা প্রদান করুক। (১ যোহন ২:১৫-১৭) আর যারা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে, তাদের জন্য অগ্রগামী পরিচর্যায় সময় ব্যবহার করার, যিহোবার সেবাকে প্রথমে রাখার চেয়ে উত্তম আর কী-ই-বা হতে পারে?

১৭ যিহোবার সমস্ত উৎসর্গীকৃত দাস নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারে: আমার জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য কী? আমি কি রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখছি? আমি কি যিশুর আত্মত্যাগমূলক মনোভাবকে অনুকরণ করছি? আমি কি যিশুকে ক্রমাগতভাবে অনুসরণ করার ব্যাপারে তাঁর উপদেশের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছি? আমি কি রাজ্যের প্রচার কাজে অথবা অন্যান্য ঈশতান্ত্রিক অনুধাবনগুলোতে আরও বেশি সময় নিয়োজিত করার জন্য আমার তালিকায় রদবদল করতে পারি? এমনকী আমার পরিস্থিতি যদি এই মুহূর্তে আমাকে পরিচর্যা বাড়ানোর সুযোগ না-ও দেয়, তবুও আমি কি এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি?

“ইচ্ছা ও কার্য্য”

১৮, ১৯. আপনি কোন বিষয়ে প্রার্থনা করতে পারেন আর কেন এই ধরনের অনুরোধ যিহোবাকে খুশি করে?

১৮ ঈশ্বরের লোকেদের উদ্যোগ দেখাটা এক আনন্দের বিষয়। কিন্তু, কেউ কেউ হয়তো অগ্রগামীর কাজ করার অথবা তা করতে যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য বিশেষ আগ্রহ অনুভব করে না, এমনকী যদিও তাদের পরিস্থিতি তা করার সুযোগ দেয়। (যাত্রা. ৪:১০; যির. ১:৬) তাহলে কী করা যেতে পারে? এটা কি প্রার্থনা করার মতো এক উপযুক্ত বিষয় নয়? অবশ্যই। পৌল সহবিশ্বাসীদের বলেছিলেন যে, যিহোবা “আপন হিতসঙ্কল্পের নিমিত্ত তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা ও কার্য্য উভয়ের সাধনকারী।” (ফিলি. ২:১৩) আপনি যদি আপনার পরিচর্যাকে বাড়ানোর জন্য অনুপ্রাণিত না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে সেই আকাঙ্ক্ষা ও যোগ্যতা দান করার জন্য যিহোবার কাছে যাচ্ঞা করুন।—২ পিতর ৩:৯, ১১.

১৯ নোহ, মোশি, যিরমিয়, পৌল এবং যিশু সকলেই একনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিল। তারা তাদের সময় ও শক্তিকে যিহোবার সাবধানবাণী ঘোষণা করার জন্য ব্যবহার করেছিল। তারা নিজেদের বিক্ষিপ্ত হতে দেয়নি। বর্তমান বিধিব্যবস্থার শেষ খুবই নিকটে; তাই, আমরা যারা ঈশ্বরের উদ্দেশে আমাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছি, আমাদের সকলের এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে, আমরা এইসমস্ত চমৎকার শাস্ত্রীয় উদাহরণকে অনুসরণ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে চলছি। (মথি ২৪:৪২; ২ তীম. ২:১৫) তা করার মাধ্যমে, আমরা যিহোবাকে খুশি করতে এবং তাঁর কাছ থেকে প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করতে পারি।—পড়ুন, মালাখি ৩:১০.

[পাদটীকা]

^ যিরমিয়ের মাধ্যমে আমাদের জন্য ঈশ্বরের বাক্য (ইংরেজি) বইয়ের ১০৪-১০৬ পৃষ্ঠা দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

লোকেরা নোহের সাবধানবাণীর প্রতি মনোযোগ দেয়নি

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি নিয়মিত অগ্রগামীর কাজ শুরু করার ব্যাপারে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করে দেখেছেন?