সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘মনুষ্যেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়াছিল’

‘মনুষ্যেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়াছিল’

‘মনুষ্যেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়াছিল’

“ভাববাণী কখনও মনুষ্যের ইচ্ছাক্রমে উপনীত হয় নাই, কিন্তু মনুষ্যেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়া ঈশ্বর হইতে যাহা পাইয়াছেন, তাহাই বলিয়াছেন।”—২ পিতর ১:২১.

ভেবে দেখার মতো বিষয়গুলো

কীভাবে ঈশ্বরের বার্তা পবিত্র আত্মা দ্বারা বাইবেল লেখকদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল?

কোন প্রমাণগুলো দেখায় যে, বাইবেল ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত?

ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আপনার উপলব্ধি বজায় রাখার জন্য আপনি প্রতিদিন কী করতে পারেন?

১. কেন আমাদের ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য প্রয়োজন?

 আমরা কোথা থেকে এসেছি? কেন আমরা এখানে আছি? আমরা কোথায় যাচ্ছি? কেন পৃথিবীর অবস্থা এইরকম? আমরা মারা গেলে কী হয়? বিশ্বব্যাপী লোকেরা এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করে থাকে। আমাদের কাছে যদি ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য না থাকত, তাহলে কীভাবে আমরা এই প্রশ্নগুলোর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানতে পারতাম? পবিত্র শাস্ত্র না থাকলে আমাদের প্রথম শিক্ষক হতো আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা। আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা যদি আমাদের শিক্ষক হতো, তাহলে আমরা কি কখনো ‘সদাপ্রভুর ব্যবস্থার’ প্রতি সেই একইরকম অনুভূতি অনুভব করতে পারতাম, যেমনটা গীতরচক অনুভব করেছিলেন?—পড়ুন, গীতসংহিতা ১৯:৭.

২. কোন বিষয়টা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত এক মূল্যবান উপহার হিসেবে বাইবেলের প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে?

কিন্তু, দুঃখজনক বাস্তবতাটা হল, কেউ কেউ বাইবেলের সত্যের প্রতি তাদের প্রথম প্রেমকে শীতল হয়ে যেতে দিয়েছে। (তুলনা করুন, প্রকাশিত বাক্য ২:৪.) তারা আর সেই পথে গমনাগমন করে না, যা যিহোবাকে খুশি করে। (যিশা. ৩০:২১) আমাদের ক্ষেত্রে যেন এমনটা না হয়। আমরা বাইবেল এবং এর শিক্ষার প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা করতে পারি এবং আমাদের তা করা উচিত। বাইবেল হচ্ছে আমাদের প্রেমময় সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে এক মূল্যবান দান বা উপহার। (যাকোব ১:১৭) কোন বিষয়টা আমাদেরকে ‘ঈশ্বরের বাক্যের’ প্রতি উপলব্ধি গভীর করতে সাহায্য করবে? একটা প্রধান উপায় হল, বাইবেল লেখকরা যেভাবে শাস্ত্র লেখার জন্য পরিচালিত হয়েছিল, সেই বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা। এর অন্তর্ভুক্ত সেই প্রচুর প্রমাণের মধ্যে কয়েকটা সম্বন্ধে স্মরণ করা, যেগুলো দেখায় যে, বাইবেল অনুপ্রাণিত। তা করা যেন আমাদেরকে প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য থেকে পড়ার এবং এর পরামর্শ কাজে লাগানোর জন্য উদ্দীপিত করে।—ইব্রীয় ৪:১২.

‘পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়াছিল’—কীভাবে?

৩. কীভাবে বাইবেলের ভাববাদীরা ও লেখকরা ‘পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়াছিল’?

এক হাজার ছয়-শো দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে—খ্রি.পূ. ১৫১৩ সাল থেকে ৯৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত—প্রায় ৪০ জন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি বাইবেল লিখেছিলেন। তারা ‘পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়াছিল’ আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভাববাদী ছিল। (পড়ুন, ২ পিতর ১:২০, ২১.) “চালিত হইয়া” হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক অভিব্যক্তিটির অর্থ “এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহন করা বা নিয়ে যাওয়া” আর এটিকে “বিভিন্নভাবে অনুবাদ করা যাতে পারে: সরিয়ে নেওয়া, তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া, কাউকে সরিয়ে নেওয়া।” * এই শব্দটি প্রেরিত ২৭:১৫ পদে এমন একটা জাহাজের বর্ণনা করার সময় ব্যবহার করা হয়েছে, যেটা ঝড়ের মধ্যে পড়ে বায়ু প্রতিরোধ করতে পারেনি আর সেটা বাতাসের দ্বারা একটা নির্দিষ্ট দিকে সরে গিয়েছিল অথবা তাড়িত হয়েছিল। বাইবেলের ভাববাদীরা ও লেখকরা এই অর্থে ‘পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়াছিল’ যে, ঈশ্বর তাঁর সক্রিয় শক্তির মাধ্যমে তাদের সঙ্গে ভাববিনিময় করেছিলেন, তাদের প্রেরণা এবং নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাই, তারা নিজেদের ধারণা নয় বরং ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে লিখেছিল। মাঝে মাঝে, অনুপ্রাণিত ভাববাদীরা ও লেখকরা যা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল অথবা লিখছিল, সেগুলোর অর্থ এমনকী নিজেরাও বুঝতে পারেনি। (দানি. ১২:৮, ৯) হ্যাঁ, “প্রত্যেক শাস্ত্র-লিপি ঈশ্বর-নিশ্বসিত” এবং মানুষের ধারণা থেকে মুক্ত।—২ তীম. ৩:১৬, পাদটীকা।

৪-৬. কীভাবে যিহোবা বাইবেল লেখকদের কাছে তাঁর বার্তা জানিয়েছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।

কিন্তু, কীভাবে ঈশ্বরের বার্তা পবিত্র আত্মা দ্বারা বাইবেল লেখকদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল? তারা কি নির্দিষ্ট শব্দাবলি লাভ করেছিল নাকি শুধু ধারণা লাভ করেছিল, যা তারা নিজেদের ভাষায় প্রকাশ করতে পারত? বিবেচনা করে দেখুন যে, একজন ব্যবসায়ী কীভাবে একটা চিঠি লিখতে পারেন। যখন নির্দিষ্ট শব্দাবলি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখন তিনি হয় নিজে সেই চিঠি লেখেন নতুবা তার সেক্রেটারিকে প্রতিটি শব্দ ধরে ধরে বলেন। সেক্রেটারি সেটা টাইপ করেন এবং সেই চিঠিতে ব্যবসায়ীর স্বাক্ষর থাকে। আবার অন্যান্য সময়ে, তিনি শুধু মূল ধারণাগুলো দেন আর সেক্রেটারি নিজস্ব রচনাশৈলী অথবা শব্দাবলি ব্যবহার করে চিঠিটা প্রস্তুত করেন। এরপর সেই ব্যবসায়ী হয়তো চিঠিটা প্রুফরিড করেন এবং সেক্রেটারিকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করতে বলেন। সবশেষে, সেই চিঠিতে ব্যবসায়ীর স্বাক্ষর থাকে আর সেটাকে তার কাছ থেকেই এসেছে বলে মনে করা হয়।

একইভাবে, বাইবেলের কিছু অংশ “ঈশ্বরের অঙ্গুলি দ্বারা” প্রদান করা হয়েছিল। (যাত্রা. ৩১:১৮) এ ছাড়া, যিহোবা সেই সময়ে প্রতিটি শব্দ ধরে ধরে বলেছিলেন, যখন নির্দিষ্ট শব্দাবলি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, যাত্রাপুস্তক ৩৪:২৭ পদে আমরা পড়ি: “সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি এই সকল বাক্য লিপিবদ্ধ কর, কেননা আমি এই সকল বাক্যানুসারে তোমার ও ইস্রায়েলের সহিত নিয়ম স্থির করিলাম।” একইভাবে, যিহোবা ভাববাদী যিরমিয়কে বলেছিলেন: “আমি তোমার কাছে যে সকল কথা বলিয়াছি, সে সমস্ত একখানি পুস্তকে লিখিয়া রাখ।”—যির. ৩০:২.

তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট শব্দাবলির পরিবর্তে বিভিন্ন ধারণা অলৌকিকভাবে বাইবেল লেখকদের হৃদয়ে ও মনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা তাদেরকে নিজস্ব শব্দাবলি বাছাই করে সেগুলো প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছিল। “উপদেশক মনোহর বাক্য, এবং যাহা সরলভাবে লিখিত হইয়াছে, অর্থাৎ সত্যের বাক্য, প্রাপ্ত হইবার জন্য অনুসন্ধান করিতেন,” উপদেশক ১২:১০ পদ বলে। সুসমাচার লেখক লূক ‘প্রথম হইতে সকল বিষয় সবিশেষ অনুসন্ধান করিয়া, আনুপূর্ব্বিক বিবরণ লিখিয়াছিলেন।’ (লূক ১:৩) ঈশ্বরের আত্মা এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছিল যে, মানুষের অসিদ্ধতা যেন তাঁর বার্তাকে বিকৃত না করে।

৭. বাইবেল লেখার জন্য মানুষকে ব্যবহার করার মাধ্যমে কীভাবে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে?

বাইবেল লেখার জন্য মানুষকে ব্যবহার করার মাধ্যমে ঈশ্বরের মহান প্রজ্ঞা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। শব্দাবলি কেবল তথ্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আবেগ ও অনুভূতিকে প্রকাশ করে। যিহোবা যদি লেখক হিসেবে স্বর্গদূতদের ব্যবহার করতেন, তাহলে কী হতো? তারা কি মানুষের মতো করে সেইসমস্ত অনুভূতি যেমন, ভয়, দুঃখ ও হতাশাকে ফুটিয়ে তুলতে পারত, যা মানবজাতির কাছে খুবই সাধারণ? পবিত্র আত্মার মাধ্যমে অসিদ্ধ মানুষেরা যে-ধারণাগুলো লাভ করেছিল, সেগুলো প্রকাশ করার জন্য ঈশ্বর তাদেরকে নিজস্ব শব্দাবলি বাছাই করার সুযোগ দিয়েছিলেন আর এভাবে তিনি তাঁর বার্তাকে এমনভাবে জানিয়েছিলেন, যা আন্তরিক, বৈচিত্র্যময় এবং মানুষের আবেগ ও অনুভূতিতে নাড়া দেয়!

প্রমাণের প্রতি দৃষ্টি রাখুন

. কেন এটা বলা যেতে পারে যে, বাইবেল অন্য কোনো ধর্মপুস্তকের মতো নয়?

এই বিষয়ে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে যে, বাইবেল হল ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য। বাইবেল আমাদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে এমনভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়, যেভাবে অন্য আর কোনো ধর্মপুস্তক করিয়ে দিতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধীয় রচনার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বৈদিক স্তোত্রের বিভিন্ন পুস্তক, এই স্তোত্রগুলোর রীতিগত ব্যাখ্যার সংকলন, উপনিষদ বলে অভিহিত বিভিন্ন দার্শনিক গ্রন্থ এবং রামায়ণমহাভারত নামে পরিচিত মহাকাব্য। ভগবদ্‌গীতা, যেটি নৈতিক নির্দেশনা সংক্রান্ত এক পুস্তক, সেটি মহাভারতের এক অংশ। বৌদ্ধ ধর্মের ত্রিপিটক (“তিনটি সংকলন”)-এর একটি খণ্ডে প্রধানত ভিক্ষু ও সন্ন্যাসিনী সম্প্রদায়ের জীবনযাপনের নিয়মকানুন রয়েছে। আরেকটি খণ্ডে মূলত বৌদ্ধ মতবাদগুলো আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয় খণ্ডে বুদ্ধের বিভিন্ন বচন লিপিবদ্ধ রয়েছে। বুদ্ধ নিজেকে কখনো একজন দেবতা বলে দাবি করেননি এবং তিনি ঈশ্বর সম্বন্ধে খুব কমই বলেছেন। কনফুসীয় মতবাদ হল বিভিন্ন ঘটনার নথি, নৈতিক নিয়মকানুন, জাদুমন্ত্র এবং গীতের এক সংমিশ্রণ। আর এটা ঠিক যে, ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ এক ঈশ্বরে বিশ্বাস সম্বন্ধে শিক্ষা দেয় এবং তাঁকে এমন একজন ঈশ্বর হিসেবে তুলে ধরে, যিনি সর্বজ্ঞ এবং যাঁর পূর্বজ্ঞান রয়েছে কিন্তু এটি ঈশ্বরের যিহোবা নামকে প্রকাশ করে না, যে-নামটি বাইবেলে হাজার হাজার বার দেখা যায়।

৯, ১০. বাইবেল থেকে আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধে কী শিখতে পারি?

অধিকাংশ প্রধান ধর্মীয় পুস্তক যেখানে ঈশ্বর সম্বন্ধে সামান্য কিছুই বলে থাকে কিংবা একেবারেই বলে না, সেখানে বাইবেল আমাদেরকে যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর কার্যকলাপের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এটি আমাদেরকে তাঁর ব্যক্তিত্বের অনেক দিক সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করে। বাইবেল প্রকাশ করে যে, ঈশ্বর শুধুমাত্র সর্বশক্তিমান, প্রজ্ঞাবান এবং ন্যায়পরায়ণ একজন ঈশ্বরই নন কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি হলেন এমন একজন ঈশ্বর, যিনি আমাদের ভালোবাসেন। (পড়ুন, যোহন ৩:১৬; ১ যোহন ৪:১৯.) অধিকন্তু, বাইবেল আমাদের বলে: “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) এক অর্থে, বাইবেলের প্রাপ্তিসাধ্যতা এই সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। ভাষাবিদরা বলে যে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬,৭০০টা ভাষায় কথা বলা হয় এবং এগুলোর মধ্যে প্রায় ১০০টা ভাষায় বিশ্বের ৯০ শতাংশ লোক কথা বলে। তা সত্ত্বেও, পুরো বাইবেল অথবা বাইবেলের কিছু অংশ ২,৪০০-রও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এটির অন্ততপক্ষে কিছু অংশ রয়েছে।

১০ যিশু বলেছিলেন: “আমার পিতা এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন, আমিও করিতেছি।” (যোহন ৫:১৭) “অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল [সদাপ্রভুই] ঈশ্বর।” তাই, ঈশ্বরের সম্পাদিত কাজগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করে দেখুন! (গীত. ৯০:২) একমাত্র বাইবেলই আমাদেরকে ঈশ্বরের অতীত ও বর্তমান কার্যকলাপের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং প্রকাশ করে যে, ভবিষ্যতে তিনি কী করবেন। এ ছাড়া, শাস্ত্র আমাদের এও শিক্ষা দেয় যে, কোনটা তাঁকে খুশি করে এবং কোনটা তাঁকে অখুশি করে আর এই বিষয়গুলো প্রকাশ করে যে, কীভাবে আমরা তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি। (যাকোব ৪:৮) আমরা যেন এমন কোনো ব্যক্তিগত অনুধাবন অথবা চিন্তাভাবনাকে সুযোগ না দিই, যা আমাদেরকে তাঁর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে।

১১. বাইবেলের পাতায় পাতায় কোন অসীম ও নির্ভরযোগ্য প্রজ্ঞা পাওয়া যায়?

১১ এ ছাড়া, বাইবেলে যে-অসীম ও নির্ভরযোগ্য প্রজ্ঞা পাওয়া যায়, সেটা ইঙ্গিত দেয় যে, বাইবেল মানুষের চেয়ে উচ্চতর এক উৎসের কাছ থেকে এসেছে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “কে প্রভুর [ঈশ্বরের] মন জানিয়াছে যে, তাঁহাকে উপদেশ দিতে পারে?” (১ করি. ২:১৬) এই পদ ভাববাদী যিশাইয়ের সেই প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে, যা তিনি তার সময়ের লোকেদের জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কে সদাপ্রভুর আত্মার পরিমাণ করিয়াছে? কিম্বা তাঁহার মন্ত্রী হইয়া তাঁহাকে শিক্ষা দিয়াছে?” (যিশা. ৪০:১৩) নিশ্চিতভাবেই উত্তরটা হল, কেউ না। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, বিয়ে, সন্তান, আমোদপ্রমোদ, মেলামেশা, কঠোর পরিশ্রম, সততা এবং নৈতিক বিষয়ে শাস্ত্রীয় পরামর্শ কাজে লাগানো সর্বোৎকৃষ্ট ফলাফল নিয়ে আসে! আমরা বাইবেল থেকে কখনোই মন্দ উপদেশ পাই না। অন্যদিকে, মানুষেরা সাধারণভাবেই কোন বিষয়টা সবসময় কার্যকর হবে, তা সুপারিশ করার মতো যথেষ্ট বিজ্ঞ নয়। (যির. ১০:২৩) তাদের উপদেশ অনবরত পুনর্সংশোধন ও পরিবর্তন করা হচ্ছে, যেহেতু তারা বুঝতে পারে যে, আগের উপদেশ ত্রুটিযুক্ত ছিল। “মনুষ্যের কল্পনা,” বাইবেল বলে, “সে সকল ত শ্বাসমাত্র।”—গীত. ৯৪:১১.

১২. শত শত বছর ধরে কোন প্রচেষ্টাগুলো সত্ত্বেও বাইবেল টিকে রয়েছে?

১২ সত্য ঈশ্বর যে বাইবেলের গ্রন্থকার সেটার আরেকটা প্রমাণ সেই ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়, যে-ইতিহাস বাইবেলের বার্তাকে বিলুপ্ত করার বিভিন্ন প্রচেষ্টা সম্বন্ধে প্রকাশ করে। খ্রি.পূ. ১৬৮ সালে সিরিয়ার রাজা আন্টিওকাস ৪র্থ, ব্যবস্থার অনুপ্রাণিত পুস্তকগুলো পুড়িয়ে ফেলার জন্য সেগুলো অন্বেষণ করার চেষ্টা করেছিলেন। ৩০৩ খ্রিস্টাব্দে, রোমীয় সম্রাট ডায়োক্লেশিয়ান খ্রিস্টানদের সভাস্থল ধ্বংস করার এবং শাস্ত্র পুড়িয়ে ফেলার জন্য আইন জারি করেছিলেন। সেই ধ্বংসযজ্ঞ এক দশক ধরে চলেছিল। একাদশ শতাব্দীর পর থেকে থেকে বিভিন্ন পোপ, বাইবেলের জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টা বন্ধ করার চেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছিল, সাধারণ লোকেরা বুঝতে পারে এমন ভাষাগুলোতে শাস্ত্র অনুবাদের কাজে বিরোধিতা করেছিল। শয়তান ও তার প্রতিনিধিদের এইরকম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, বাইবেল আমাদের দিন পর্যন্ত টিকে রয়েছে। যিহোবা কাউকেই মানবজাতিকে দেওয়া তাঁর এই উপহারকে ধ্বংস করার জন্য অনুমতি দেননি।

যে-প্রমাণ অনেক ব্যক্তিকে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছে

১৩. বাইবেল যে অনুপ্রাণিত পুস্তক, সেই বিষয়ে আমরা কোন প্রমাণগুলো দেখাতে পারি?

১৩ বাইবেল যে অনুপ্রাণিত পুস্তক, সেই বিষয়ে অন্যান্য প্রমাণ রয়েছে আর সেগুলো হল: আভ্যন্তরীণ সংগতি, বৈজ্ঞানিক যথার্থতা, পরিপূর্ণ ভবিষ্যদ্‌বাণী, অসাধারণ অকপটতা, জীবনকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা, ঐতিহাসিক সঠিকতা এবং প্রথম অনুচ্ছেদে উল্লেখিত প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক উত্তর। কোন বিষয়গুলো কিছু ব্যক্তিকে বাইবেল যে ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে তা বুঝতে সাহায্য করেছে, সেটা বিবেচনা করুন।

১৪-১৬. (ক) কোন বিষয়টা একজন মুসলিম, একজন হিন্দু ও একজন অজ্ঞেয়বাদীকে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছে যে, বাইবেলের উৎস হলেন ঈশ্বর? (খ) বাইবেল যে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত, সেটার কোন প্রমাণ আপনি পরিচর্যায় ব্যবহার করতে চান?

১৪ আনোয়ার * মধ্যপ্রাচ্যের একটা দেশে একজন মুসলিম ব্যক্তি হিসেবে বড়ো হয়েছেন। তিনি যখন অল্পসময়ের জন্য উত্তর আমেরিকায় ছিলেন, তখন যিহোবার সাক্ষিরা তার দরজায় এসেছিল। “সেই সময়ে,” আনোয়ার বলেন, “ধর্মযুদ্ধ (ক্রুসেড) ও ধর্মীয় বিচারসভার (ইনকুইজিশনের) কারণে খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি আমার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল।” কিন্তু, আমার কৌতূহলী স্বভাবের কারণে আমি বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছিলাম। কিছু দিনের মধ্যে, আনোয়ার তার দেশে ফিরে গিয়েছিলেন এবং সাক্ষিদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। কয়েক বছর পর, তিনি ইউরোপে চলে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি পুনরায় বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন এবং এই উপসংহারে এসেছিলেন: “বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতা, পবিত্র শাস্ত্রের আভ্যন্তরীণ সংগতি, বাইবেলে পরস্পরবিরোধী বিষয়ের অনুপস্থিতি এবং যিহোবার উপাসকদের মধ্যে বিদ্যমান প্রেম আমাকে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছিল যে, বাইবেল ঈশ্বরের বাক্য।” আনোয়ার ১৯৯৮ সালে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন।

১৫ ষোলো বছর বয়সি আশা এক ধর্মপ্রাণ হিন্দু পরিবার থেকে এসেছে। “আমি শুধু সেই সময়ে প্রার্থনা করতাম, যখন আমি মন্দিরে যেতাম অথবা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতাম,” সে বলে, “তবে, আমি সেই সময়ে কখনোই ঈশ্বর সম্বন্ধে চিন্তা করতাম না, যখন আমার জীবন ভালোভাবেই চলত।” সে আরও বলে: “কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিরা যখন আমার দরজার কড়া নেড়েছিল, তখন আমার জীবন একেবারে পালটে গিয়েছিল।” আশা বাইবেল অধ্যয়ন করেছিল এবং বুঝতে পেরেছিল যে, ঈশ্বর তার বন্ধু। কী তাকে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছিল যে, বাইবেল ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত? সে ব্যাখ্যা করে: “বাইবেল আমার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। এটি আমাকে ঈশ্বরকে এমনকী না দেখেই—অর্থাৎ মন্দিরে গিয়ে একটা প্রতিমার সামনে প্রণাম না করেই—বিশ্বাস করার জন্য সাহায্য করেছে।”

১৬ পলা এক ক্যাথলিক পরিবারে বড়ো হয়েছিলেন আর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তিনি নিজেকে একজন অজ্ঞেয়বাদী বলে মনে করতেন। এরপর কিছু ঘটেছিল। “আমার এমন এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, যার সঙ্গে এর আগের কয়েক মাস আমার দেখা হয়নি,” তিনি বলেন। “সেটা ছিল হিপ্পি আন্দোলনের যুগ। আমি যখন দেখেছিলাম যে, সে কতটা পরিবর্তিত—পরিপাটি ও আনন্দিত—হয়েছে, তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তোমার কী হয়েছে আর তুমি এত দিন কোথায় ছিলে?’ সে বলেছিল যে, সে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করছে আর এরপর সে আমার কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিল।” শাস্ত্রীয় সত্য যে এতটা কার্যকারী তা দেখা, এই প্রাক্তন অজ্ঞেয়বাদীকে বাইবেলের বার্তার প্রতি আকৃষ্ট করেছিল আর তিনি এটিকে ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

“তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ”

১৭. প্রতিদিন বাইবেল পড়া ও ধ্যান করা আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারে?

১৭ বাইবেল হচ্ছে এক অপূর্ব উপহার, যা যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে প্রদান করেছেন। প্রতিদিন এটি পড়ে আনন্দ লাভ করুন আর এর ফলে বাইবেলের প্রতি ও এটির গ্রন্থকারের প্রতি আপনার ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। (গীত. ১:১, ২) প্রার্থনা করে প্রতিটা অধ্যয়ন পর্ব শুরু করুন, আপনার চিন্তাভাবনাকে পরিচালনা করার জন্য ঈশ্বরের আত্মা চান। (লূক ১১:১৩) বাইবেলে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা রয়েছে, তাই আপনি যখন এটি যা বলে তা নিয়ে ধ্যান করেন, তখন আপনি ঈশ্বরের চিন্তাভাবনাকে আপনার চিন্তাভাবনা করে তুলতে পারেন।

১৮. কেন আপনি বাইবেল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে চলতে চান?

১৮ আপনি সত্যের যথার্থ জ্ঞানে বর্ধিষ্ণু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যা শেখেন, সেগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করুন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:১০৫.) শাস্ত্রের প্রতি দৃষ্টি দিন, যেমনটা আপনি একটা দর্পণ বা আয়নার প্রতি দেন। এভাবে আপনি যদি দেখতে পান যে, আপনার কিছু পরিবর্তন করা উচিত, তাহলে সেগুলো করুন। (যাকোব ১:২৩-২৫) আপনার বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করার ও নম্র ব্যক্তিদের হৃদয় থেকে মিথ্যা শিক্ষাগুলোকে সরিয়ে ফেলার জন্য ঈশ্বরের বাক্যকে এক খড়্গ হিসেবে ব্যবহার করুন। (ইফি. ৬:১৭) আপনি যখন তা করেন, তখন এই বিষয়ে কৃতজ্ঞ থাকুন যে, বাইবেলের বার্তা লেখার জন্য যে-ভাববাদীদের ও ব্যক্তিদের ব্যবহার করা হয়েছিল, তারা সত্যিই ‘পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়াছিল।’

[পাদটীকাগুলো]

^ এ গ্রিক-ইংলিশ লেক্সিকন অভ্‌ দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট অ্যান্ড আদার আর্লি খ্রিশ্চান লিটারেচার।

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

প্রতিদিন বাইবেল পড়ুন আর এর ফলে এটির গ্রন্থকারের প্রতি আপনার ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

একটা চিঠিতে যে-ব্যক্তির স্বাক্ষর থাকে, সেটাকে সেই ব্যক্তির কাছ থেকেই এসেছে বলে মনে করা হয়