সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

রাজ্যের প্রজাদের মতো আচরণ করুন!

রাজ্যের প্রজাদের মতো আচরণ করুন!

রাজ্যের প্রজাদের মতো আচরণ করুন!

“প্রজাদের মতো আচরণ কর।”—ফিলি. ১:২৭.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কারা রাজ্যের প্রজা হতে পারে?

রাজ্যের ভাষা, ইতিহাস ও আইন সম্বন্ধে শেখার অর্থ কী?

কীভাবে রাজ্যের প্রজারা দেখায় যে তারা ঈশ্বরের মানগুলোকে ভালোবাসে?

১, ২. কেন ফিলিপীর মণ্ডলীর উদ্দেশে দেওয়া পৌলের পরামর্শের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে?

 প্রেরিত পৌল ফিলিপীর মণ্ডলীকে উৎসাহিত করেছিলেন, যেন তারা ‘সুসমাচারের যোগ্যরূপে আচরণ’ করে। (পড়ুন, ফিলিপীয় ১:২৭.) এ ছাড়া, তিনি “প্রজাদের মতো” শব্দগুলোও ব্যবহার করেছেন। এই বাক্যাংশটি ফিলিপীর মণ্ডলীর জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। কেন? কারণ খুব সম্ভবত ফিলিপী ছিল সেইসমস্ত বাছাইকৃত শহরের মধ্যে একটা, যেখানকার অধিবাসীদেরকে রোমীয় প্রজাদের মতো কিছুটা সুযোগসুবিধা দেওয়া হয়েছিল। ফিলিপী এবং রোমীয় সাম্রাজ্যের রোমীয় প্রজারা তাদের পদমর্যাদা নিয়ে অনেক গর্বিত ছিল ও সেইসঙ্গে তারা রোমীয় আইনের অধীনে বিশেষ সুরক্ষা লাভ করত।

ফিলিপীর মণ্ডলীর সদস্যদের গর্বিত হওয়ার আরও বড়ো কারণ ছিল। পৌল তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, অভিষিক্ত খ্রিস্টান হিসেবে তারা “স্বর্গপুরীর” প্রজা। (ফিলি. ৩:২০) তারা সাধারণ এক মানব সাম্রাজ্যের নয় বরং ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা ছিল। তাই, তারা অদ্বিতীয় সুরক্ষা এবং উপকারগুলো লাভ করেছিল।—ইফি. ২:১৯-২২.

৩. (ক) কাদের রাজ্যের প্রজা হওয়ার সুযোগ রয়েছে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

‘প্রজাদের মতো আচরণ করিবার’ বিষয়ে পৌল যে-উপদেশ দিয়েছেন, সেটা মূলত সেই ব্যক্তিদের বেলায় প্রযোজ্য, যারা স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করবে। (ফিলি. ৩:২০) কিন্তু, ব্যাপক অর্থে এটা সেই ব্যক্তিদের বেলায়ও প্রযোজ্য হতে পারে, যারা ঈশ্বরের রাজ্যের পার্থিব প্রজা হবে। কেন? কারণ সমস্ত উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান একই রাজা যিহোবার সেবা করে ও সেইসঙ্গে তাদেরকে অবশ্যই একই মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। (ইফি. ৪:৪-৬) বর্তমানে, লোকেরা একটা সমৃদ্ধশালী দেশের নাগরিক হওয়ার ব্যাপারে যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে থাকে। রাজ্যের প্রজা হওয়ার সুযোগকে আমাদের আরও কত বেশিই না মূল্যবান বলে গণ্য করা উচিত! সেই বিশেষ সুযোগের প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে গভীর করার জন্য আসুন আমরা মানব সরকারের একজন প্রজা হওয়ার এবং ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা হওয়ার জন্য যে-চাহিদাগুলোর প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু সাদৃশ্য বিবেচনা করে দেখি। এরপর আমরা এমন তিনটে বিষয় বিবেচনা করব, যেগুলো রাজ্যের প্রজা হিসেবে সম্মান বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই করতে হবে।

প্রজা হওয়ার চাহিদা

৪. বিশুদ্ধ ভাষা কী এবং কীভাবে আমরা এই ভাষায় “কথা বলি”?

ভাষা শিখুন। কিছু মানব সরকারের চাহিদা হল, নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছে এমন ব্যক্তিরা যেন সেই দেশের প্রধান ভাষায় কথা বলে। এমনকী নাগরিকত্ব লাভ করার পরও, লোকেরা হয়তো নতুন ভাষায় দক্ষ হয়ে ওঠার জন্য কয়েক বছর ধরে প্রচেষ্টা করে। তারা হয়তো দ্রুত ব্যাকরণের নিয়মাবলি শিখে ফেলে কিন্তু বিভিন্ন শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারণ করার জন্য তাদের হয়তো কিছুটা সময় লাগে। একইভাবে, ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা হওয়ার একটা চাহিদা হল, যেন এর প্রজারা সেই ভাষা শেখে, যেটাকে বাইবেলে “বিশুদ্ধ ওষ্ঠ” বা ভাষা বলে অভিহিত করা হয়েছে। (পড়ুন, সফনিয় ৩:৯.) সেই ভাষা কী? এটি হল, ঈশ্বর এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধীয় সত্য, যেগুলো বাইবেলে পাওয়া যায়। আমরা যখন ঈশ্বরের আইন ও নীতির সঙ্গে মিল রেখে আচরণ করি, তখন আমরা বিশুদ্ধ ভাষায় “কথা বলি।” ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজারা হয়তো বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলো দ্রুত শিখে ফেলে এবং বাপ্তাইজিত হয়। কিন্তু, এমনকী বাপ্তিস্ম নেওয়ার পরও দিন দিন আরও ভালোভাবে বিশুদ্ধ ভাষায় ‘কথা বলতে’ শেখার জন্য তাদের প্রচেষ্টা করতে হবে। কীভাবে? আমাদের প্রত্যেককে বাইবেলের নীতিগুলো সম্বন্ধে আমরা যা জানি এবং আমরা কাজে যা প্রকাশ করি, সেটার মধ্যে যে-ব্যবধান রয়েছে, তা দূর করতে হবে।

৫. যিহোবার সংগঠনের ইতিহাস সম্বন্ধে কেন আমাদের যতটুকু সম্ভব শেখা উচিত?

ইতিহাস সম্বন্ধে জানুন। কোনো মানব সরকারের প্রজা হতে চান এমন একজন ব্যক্তিকে হয়তো সেই সরকারের ইতিহাস সম্বন্ধে কিছু শিখতে হয়। একইভাবে, ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা হতে চায় এমন ব্যক্তিদের ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে যতটুকু সম্ভব শেখা উচিত। কোরহের ছেলেদের দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ বিবেচনা করুন, যারা প্রাচীন ইস্রায়েলে সেবা করত। তারা যিরূশালেম এবং এর উপাসনাস্থলের ব্যাপারে ও সেইসঙ্গে এই শহরের ইতিহাস সম্বন্ধে বর্ণনা করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত ছিল। পাথর এবং চুনবালির মিশ্রণ নয় বরং সেই শহর ও উপাসনাস্থল যে-বিষয়টাকে চিত্রিত করত, সেটাই তাদেরকে সবচেয়ে বেশি অভিভূত করেছিল। যিরূশালেম ছিল ‘মহান্‌ রাজা’ যিহোবার “পুরী” কারণ এটা ছিল বিশুদ্ধ উপাসনার কেন্দ্রস্থল। এখানেই যিহোবার ব্যবস্থা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া হতো। এখানকার লোকেদের প্রতিই যিহোবা তাঁর দয়া বা প্রেমপূর্ণ দয়া প্রকাশ করতেন, যাদের ওপর যিরূশালেমের রাজারা শাসন করত। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৪৮:১, ২, ৯, ১২, ১৩.) তাদের মতো আপনারও কি যিহোবার সংগঠনের পার্থিব অংশের ইতিহাস সম্বন্ধে জানার ও বর্ণনা করার এক আকাঙ্ক্ষা রয়েছে? ঈশ্বরের সংগঠন সম্বন্ধে এবং কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে সমর্থন করেন, সেই সম্বন্ধে আপনি যত বেশি শিখবেন, ঈশ্বরের রাজ্য আপনার কাছে তত বেশি বাস্তব হয়ে উঠবে। রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার ব্যাপারে আপনার আকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে।—যির. ৯:২৪; লূক ৪:৪৩.

৬. কেন এটা যুক্তিযুক্ত যে, যিহোবা চান যেন আমরা রাজ্যের আইন এবং নীতিগুলো সম্বন্ধে শিখি এবং সেগুলো পালন করি?

আইনকানুন সম্বন্ধে জানুন। মানব সরকারের চাহিদা হল, যেন এর প্রজারা সেই দেশের আইনকানুন সম্বন্ধে শেখে এবং সেগুলো পালন করে। তাই, এটাও যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় যে, যিহোবা আশা করেন, যেন আমরা সেইসমস্ত আইন ও নীতিগুলো সম্বন্ধে শিখি ও সেগুলো পালন করি, যেগুলো রাজ্যের প্রজাদের পরিচালনা দেয়। (যিশা. ২:৩; যোহন ১৫:১০; ১ যোহন ৫:৩) বেশিরভাগ সময়ই মানব আইনকানুন ক্রটিপূর্ণ এবং হয়তো অন্যায্যও হয়ে থাকে। এর বৈসাদৃশ্যে, “সদাপ্রভুর ব্যবস্থা সিদ্ধ।” (গীত. ১৯:৭) আমরা কি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করি এবং প্রতিদিন তাঁর বাক্য পাঠ করি? (গীত. ১:১, ২) একমাত্র যে-উপায়ে আমরা ঈশ্বরের ব্যবস্থা শিখতে পারি, সেটা হল ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে সেই ব্যবস্থা অধ্যয়ন করা। কেউই আমাদের হয়ে এটা করতে পারে না।

রাজ্যের প্রজারা ঈশ্বরের মানগুলোকে ভালোবাসে

৭. রাজ্যের প্রজারা কোন উচ্চমান অনুযায়ী জীবনযাপন করে?

নাগরিকত্ব বজায় রাখার জন্য আমাদের কেবল ঈশ্বরের মানগুলো জানলেই হবে না কিন্তু সেইসঙ্গে সেগুলোকে ভালোবাসতেও হবে। মানব সরকারের অনেক প্রজা এইরকমটা বলে থাকে যে, তারা যেসমস্ত দেশে বাস করে, সেখানকার আইনকানুন এবং মানগুলোর সঙ্গে তারা একমত। কিন্তু, তারা যখন দেখে যে, কোনো একটা চাহিদা পালন করা তাদের জন্য কঠিন ও সেইসঙ্গে মনে করে যে, কেউই তাদেরকে দেখছে না, তখন তারা সেই আইন ভঙ্গ করে। বেশিরভাগ সময়ই এই লোকেরা ‘মনুষ্যের তুষ্টি’ অনুযায়ী কাজ করে। (কল. ৩:২২) রাজ্যের প্রজারা এক উচ্চমান অনুযায়ী জীবনযাপন করে। আমরা আনন্দের সঙ্গে ঈশ্বরের আইনকানুন পালন করি আর তা এমনকী সেই সময়েও, যখন কোনো মানুষ সেটা দেখতে পায় না। কেন? কারণ আমরা আইনপ্রণেতাকে ভালোবাসি।—যিশা. ৩৩:২২; পড়ুন, লূক ১০:২৭.

৮, ৯. আপনি ঈশ্বরের আইনগুলোকে সত্যিই ভালোবাসেন কি না, তা আপনি কীভাবে জানতে পারেন?

আপনি ঈশ্বরের আইনগুলোকে সত্যিই ভালোবাসেন কি না, তা আপনি কীভাবে জানতে পারেন? আপনি যেটাকে ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় বলে মনে করেন যেমন, হতে পারে পোশাক-আশাক ও সাজগোজের বিষয়ে যখন কোনো পরামর্শ লাভ করেন, তখন আপনি কীরকম প্রতিক্রিয়া দেখান, তা পরীক্ষা করার মাধ্যমে। রাজ্যের একজন প্রজা হওয়ার আগে আপনি হয়তো ঢিলেঢালা অথবা যৌনউদ্দীপনামূলক পোশাক-আশাক পরতে পছন্দ করতেন। কিন্তু, ঈশ্বরের প্রতি আপনার প্রেম বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি এমনভাবে পোশাক-আশাক পরতে শিখেছেন, যা তাঁর সম্মান নিয়ে আসে। (১ তীম. ২:৯, ১০; ১ পিতর ৩:৩, ৪) আপনি হয়তো এইরকমটা মনে করতে পারেন যে, আপনি এখন মার্জিতভাবে পোশাক-আশাক পরেন। কিন্তু, একজন প্রাচীন যদি বলেন যে, মণ্ডলীর বেশ কয়েক জন প্রকাশক আপনার পোশাক-আশাক দেখে অনেক অসন্তুষ্ট হয়েছে, তাহলে? আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? আপনি কি প্রতিবাদ করবেন, বিরক্ত হয়ে যাবেন অথবা একগুঁয়ে মনোভাব দেখাবেন? ঈশ্বরের রাজ্যের একটা প্রধান আইন হল, খ্রিস্টকে অনুকরণ করা। (১ পিতর ২:২১) যিশুর উদাহরণ সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আমাদের প্রত্যেক জন যাহা উত্তম, তাহার জন্য, গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত, প্রতিবাসীকে তুষ্ট করুক। কারণ খ্রীষ্টও আপনাকে তুষ্ট করিলেন না।” (রোমীয় ১৫:২, ৩) মণ্ডলীর শান্তির জন্য একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান অন্যদের প্রতি অসন্তুষ্ট না হয়ে বরং মেনে নিতে ইচ্ছুক থাকেন।—রোমীয় ১৪:১৯-২১.

আরও দুটো বিষয় বিবেচনা করুন, যেগুলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ: যৌনতা সম্বন্ধে আমাদের মনোভাব এবং বিয়ে সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। যারা এখনও ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা নয়, তারা হয়তো সমকামিতাকে প্রশ্রয় দেয়, পর্নোগ্রাফিকে নিছক মজা বলে মনে করে এবং পারদারিকতা ও বিবাহবিচ্ছেদকে একান্তই ব্যক্তিগত এক বিষয় হিসেবে দেখে থাকে। রাজ্যের প্রজারা এই ধরনের অদূরদর্শী ও আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব পরিত্যাগ করে। যদিও অনেক খ্রিস্টান পূর্বে এক অনৈতিক জীবনযাপন করত কিন্তু এখন তারা যৌনসম্পর্ক ও বিয়েকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দান হিসেবে দেখে থাকে। তারা যিহোবার উচ্চমানগুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করে এবং এই বিষয়ে পুরোপুরি একমত হয় যে, যারা অশোভন যৌন আচরণ করেই চলে, তারা রাজ্যের প্রজা হওয়ার যোগ্য নয়। (১ করি. ৬:৯-১১) কিন্তু, তারা এও স্বীকার করে যে, হৃদয় প্রবঞ্চক। (যির. ১৭:৯) তাই, তারা সেই নির্দিষ্ট সাবধাণবাণীগুলো লাভ করার প্রতি উপলব্ধি দেখায়, যেগুলো তাদেরকে উচ্চ নৈতিক মান বজায় রাখতে সাহায্য করে।

রাজ্যের প্রজারা সাবধানবাণীগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখায়

১০, ১১. ঈশ্বরের রাজ্য কোন সময়োপযোগী সাবধানবাণীগুলো প্রদান করে আর এই ধরনের সাবধানবাণী সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন?

১০ মানব সরকারগুলো হয়তো নির্দিষ্ট খাদ্য ও ওষুধের বিষয়ে সতর্ক করে থাকে। অবশ্য, সমস্ত খাদ্য ও ওষুধই খারাপ নয়। কিন্তু, কোনো একটা পণ্য যদি ক্ষতিকর হয়ে থাকে, তাহলে সরকার হয়তো এর প্রজাদের সুরক্ষা করার জন্য যথাযথ সাবধানবাণী প্রদান করে। সরকার যদি তা না করে, তাহলে অবহেলা করার অপরাধে দোষী হবে। একইভাবে, ঈশ্বরের রাজ্য নির্দিষ্ট নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক বিপদ সম্বন্ধে সময়োপযোগী সাবধানবাণীগুলো প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্টারনেট ভাববিনিময়ের, শিক্ষার এবং আমোদপ্রমোদের এক কার্যকারী উপায় হয়ে উঠেছে। ঈশ্বরের সংগঠন ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং এর মাধ্যমে অনেক ভালো বিষয় সম্পাদন করে। কিন্তু, ইন্টারনেটের অনেক সাইট নৈতিকভাবে এবং আধ্যাত্মিকভাবে বিপদজনক। যে-ওয়েবসাইটগুলোতে পর্নোগ্রাফি দেখা যায়, সেগুলো স্পষ্টতই রাজ্যের প্রজাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। দশকের পর দশক ধরে, বিশ্বস্ত দাস শ্রেণী এই ধরনের সাইট সম্বন্ধে সাবধান করে আসছে। আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য সম্বন্ধে এই ধরনের সতর্কতার জন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ!

১১ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আরেক ধরনের সাইট অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যা অত্যন্ত সতর্কতা সহকারে ব্যবহার করলে কার্যকারী হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট নামে পরিচিত এই সাইটগুলো ধ্বংসাত্মক হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো একজন ব্যক্তিকে কুসংসর্গের দিকে পরিচালিত করতে পারে। (১ করি. ১৫:৩৩) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ঈশ্বরের সংগঠন এই ধরনের সাইটগুলো ব্যবহার করা সম্বন্ধে ভারসাম্যমূলক সাবধানবাণী প্রদান করেছে। সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোর ব্যবহার সম্বন্ধে বিশ্বস্ত দাস যেসমস্ত তথ্য প্রকাশ করেছে, তা কি আপনি পড়েছেন? সেইসমস্ত তথ্য না পড়েই এই ধরনের সাইটগুলো ব্যবহার করা কত বোকামির কাজই না হবে! * এটা, বোতলের গায়ে দেওয়া সাবধানবাণীমূলক লেবেল না পড়েই উচ্চমাত্রার কোনো ওষুধ সেবন করার মতোই হবে।

১২. সাবধানবাণীগুলোকে উপেক্ষা করা কেন বোকামির কাজ?

১২ যারা বিশ্বস্ত দাসের দ্বারা প্রদত্ত সাবধানবাণীগুলোকে উপেক্ষা করে, তারা নিশ্চিতভাবেই নিজেদের ও সেইসঙ্গে তাদের প্রিয়জনদের জন্য ক্ষতি নিয়ে আসে। কেউ কেউ পর্নোগ্রাফি দেখার ব্যাপারে আসক্ত হয়ে পড়েছে অথবা যৌন অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েছে এবং এরপর নিজেদের এই বলে প্রতারিত করেছে যে, তারা যা করছে, তা যিহোবা দেখতে পান না। যিহোবার কাছে আমরা আমাদের আচরণ লুকাতে পারি, এইরকমটা মনে করা কতই না বোকামির কাজ! (হিতো. ১৫:৩; পড়ুন, ইব্রীয় ৪:১৩.) ঈশ্বর এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে সাহায্য করতে চান এবং তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য তাঁর পার্থিব প্রতিনিধিদেরকে প্রণোদিত করেন। (গালা. ৬:১) কিন্তু, ঠিক যেমন মানব সরকাররা একজন দুষ্কর্মকারী ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল করে দিতে পারে, তেমনই যিহোবা সেই ব্যক্তিদের নাগিরকত্ব বাতিল করে দেবেন, যারা অনুতাপহীনভাবে তাঁর মানগুলোকে লঙ্ঘন করেই চলে। * (১ করি. ৫:১১-১৩) তবে, তিনি করুণাময়। যারা অনুতপ্ত হয় এবং নিজেদের আচরণ পরিবর্তন করে, তারা আবারও যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে এবং রাজ্যের প্রজা হিসেবে তাদের অবস্থান বজায় রাখতে পারে। (২ করি. ২:৫-৮) এইরকম একজন প্রেমময় রাজার সেবা করার কী এক সম্মানই না আমাদের রয়েছে!

রাজ্যের প্রজারা শিক্ষাকে মূল্যবান বলে গণ্য করে

১৩. রাজ্যের প্রজারা কীভাবে দেখায় যে, শিক্ষাকে তারা মূল্যবান বলে গণ্য করে?

১৩ অনেক মানব সরকার তাদের নাগরিকদের শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে। তারা এমন স্কুলগুলোর ব্যবস্থা করে, যেগুলোতে লোকেরা মৌলিক শিক্ষা লাভ করতে পারে ও সেইসঙ্গে যেগুলো তাদেরকে ব্যবহারিক কাজে দক্ষ হতে শিক্ষা প্রদান করে। রাজ্যের প্রজারা এই ধরনের জাগতিক স্কুলগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখায় এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে পাঠ করতে ও লিখতে শেখে এবং নিজেদের ভরণপোষণের খরচ নিজেরাই বহন করে। তবে, তারা ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা হিসেবে যে-শিক্ষা লাভ করে, সেটাকে আরও উচ্চমূল্য দিয়ে থাকে। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে যিহোবা মৌলিক শিক্ষা প্রদান করেন। বাবা-মায়েদের উৎসাহিত করা হয়, যেন তারা তাদের অল্পবয়সি সন্তানদের সামনে পাঠ করে। প্রতি মাসে, বিশ্বস্ত দাস বাইবেলভিত্তিক বিষয়বস্তু প্রকাশ করে। আপনি যদি প্রতিদিন একটা বা দুটো করে পৃষ্ঠা পড়েন, তাহলে যিহোবার কাছ থেকে আমরা যে-শিক্ষা লাভ করি, সেটা থেকে আপনি ক্রমাগত উপকার লাভ করতে পারবেন।

১৪. (ক) আমরা কোন প্রশিক্ষণ লাভ করি? (খ) পারিবারিক উপাসনা সন্ধ্যা সম্বন্ধীয় কোন পরামর্শগুলো আপনি কাজে লাগিয়েছেন?

১৪ প্রতি সপ্তাহে, রাজ্যের প্রজারা তাদের মণ্ডলীর সভাগুলোতে প্রশিক্ষণ লাভ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় ছাত্রদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের কার্যকারী শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করছে। আপনি কি এই স্কুলে নাম দিয়েছেন? সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশ্বস্ত দাস সাপ্তাহিক পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যার ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে। এই ব্যবস্থা পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে। আপনি কি কখনো আমাদের সাহিত্যাদিতে প্রকাশিত পরামর্শগুলো কাজে লাগিয়েছেন? *

১৫. আমাদের সবচেয়ে বড়ো কোন সুযোগ রয়েছে?

১৫ মানব সরকারের প্রজারা কোনো একটা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার জন্য মিছিল করে থাকে আর এমনকী ঘরে ঘরেও যায়। রাজ্যের প্রজারা আরও ব্যাপক মাত্রায় রাস্তায় এবং ঘরে ঘরে ঈশ্বরের রাজ্যকে উদ্যমের সঙ্গে সমর্থন করে থাকে। বস্তুতপক্ষে, আগের অধ্যয়ন প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রহরীদুর্গ পত্রিকা হল পৃথিবীতে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে বিতরিত পত্রিকা, যা যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে! আমাদের সবচেয়ে বড়ো যে-সুযোগ রয়েছে, তা হল ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে অন্যদেরকে বলা। আপনি কি উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার কাজে অংশ নিচ্ছেন?—মথি ২৮:১৯, ২০.

১৬. কীভাবে আপনি প্রমাণ দিতে পারেন যে, আপনি ঈশ্বরের রাজ্যের একজন উত্তম প্রজা?

১৬ খুব শীঘ্র ঈশ্বরের রাজ্যই হবে পৃথিবীতে শাসনরত একমাত্র সরকার। এটা দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত বিষয় তত্ত্বাবধান করবে আর এর সঙ্গে কেবল আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে নাগরিক জীবনের বিষয়গুলোও জড়িত। আপনি কি সেই সময়ে ঈশ্বরের রাজ্যের একজন উত্তম প্রজা হবেন? এর প্রমাণ দেওয়ার সময় এখনই। প্রতিদিন আপনি যেসমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করার সময় সমস্তকিছুই যিহোবার গৌরবার্থে করুন আর এভাবে প্রমাণ দিন যে, আপনি ঈশ্বরের রাজ্যের একজন উত্তম প্রজার মতো আচরণ করছেন।—১ করি. ১০:৩১.

[পাদটীকাগুলো]

^ উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালের জুলাই মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ২৪-২৭ পৃষ্ঠা; ২০১১ সালের আগস্ট মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ১০-১৩ পৃষ্ঠা; এবং ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ৩-৯ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ ২০১২ সালের ১৫ মার্চ প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩০-৩১ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৬-৭ পৃষ্ঠা এবং ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-র ৩-৬ পৃষ্ঠা দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

ইন্টারনেট সম্বন্ধে বাইবেলভিত্তিক যে-সাবধানবাণীগুলো দেওয়া হয়, সেগুলোর প্রতি আপনি কি মনোযোগ দেন?

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

কোরহের ছেলেদের মত আপনি কি বিশুদ্ধ উপাসনায় এবং এর ইতিহাস সম্বন্ধে বলে আনন্দ লাভ করেন?

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা আপনাকে এবং আপনার প্রিয়জনদেরকে রাজ্যের উত্তম নাগরিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখতে পারে