সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

হাজার বছর এবং এর পরও শান্তি!

হাজার বছর এবং এর পরও শান্তি!

হাজার বছর এবং এর পরও শান্তি!

“যেন ঈশ্বরই সর্ব্বেসর্ব্বা হন।”—১ করি. ১৫:২৮.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

আপনার জন্য এই শাস্ত্রপদগুলো পরিপূর্ণ হওয়ার অর্থ কী?

মীখা ৪:৪

যিশাইয় ১১:৬-৯

যোহন ৫:২৮, ২৯

১. ‘বিস্তর লোকের’ জন্য কোন রোমাঞ্চকর প্রত্যাশা অপেক্ষা করে আছে?

 আপনি কি সেই উত্তম বিষয়গুলো কল্পনা করতে পারেন, যেগুলো একজন ন্যায়পরায়ণ ও করুণাময় শাসকের অধীনে এক শক্তিশালী সরকার, হাজার বছর রাজত্বের সময়ে এর প্রজাদের জন্য করতে পারে? অপূর্ব ঘটনাগুলো অগণিত ‘বিস্তর লোকের’ অর্থাৎ সেই “মহাক্লেশের” মধ্যে থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য অপেক্ষা করে আছে, যা বর্তমান বিধিব্যবস্থার সম্পূর্ণ শেষ নিয়ে আসবে।—প্রকা. ৭:৯, ১৪.

২. বিগত ৬,০০০ বছরে মানুষ কোন অভিজ্ঞতা লাভ করেছে?

মানব ইতিহাসের ৬,০০০ বছরে, আত্মপরিচালনা ও আত্মশাসন মানবজাতির জন্য অনেক যন্ত্রণা ও দুঃখকষ্ট নিয়ে এসেছে। অনেক আগে বাইবেল বলেছিল: “এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে।” (উপ. ৮:৯) এখন আমরা কী দেখতে পাই? যুদ্ধবিগ্রহ এবং বিভিন্ন বিদ্রোহের পাশাপাশি রয়েছে দরিদ্রতা, রোগব্যাধি, পরিবেশের ধ্বংস, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং আরও অন্যান্য মারাত্মক সমস্যা। সরকারি কর্মকর্তারা সাবধান করে দিয়েছে যে, আমরা যদি আমাদের গতানুগতিক কর্মকাণ্ড পরিবর্তন না করি, তাহলে এর ফল হবে মারাত্মক।

৩. হাজার বছরের রাজত্ব কী নিয়ে আসবে?

মশীহ রাজা যিশু খ্রিস্ট এবং তার ১,৪৪,০০০ জন সহ-শাসকের অধীনে, ঈশ্বরের রাজ্য মানুষের ও তাদের গৃহ পৃথিবী গ্রহের যে-ক্ষতি করা হয়েছে, সেগুলোর সবই দূর করে দেওয়ার জন্য ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নেবে। হাজার বছরের রাজত্ব, যিহোবা ঈশ্বরের এই হৃদয়গ্রাহী প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা নিয়ে আসবে: “আমি নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর সৃষ্টি করি; এবং পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না।” (যিশা. ৬৫:১৭) যদিও এখনও অদৃশ্য, তার পরও আমাদের জন্য কোন চমৎকার ঘটনাগুলো অপেক্ষা করে আছে? ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক বাক্যের সাহায্যে, আসুন আমরা এখনও “অদৃশ্য” এমন অপূর্ব বস্তুগুলোর এক আভাস লক্ষ করি।—২ করি. ৪:১৮.

‘লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিবে’

৪. বর্তমানে অনেকে বাসস্থান নিয়ে কোন ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়?

কেই-বা না চায় যে, তার নিজের একটা বাড়ি থাকুক, যেখানে তিনি এবং তার পরিবার সুরক্ষা ও নিরাপদ বোধ করতে পারেন? কিন্তু, বর্তমান জগতে পর্যাপ্ত বাসস্থান এক গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকেরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গাদাগাদি করে বাস করে। অনেককে কোনোরকমে অস্থায়ী কুঁড়ে ঘরে এবং শহরের বস্তি এলাকায় বাস করতে হয়। নিজেদের একটা বাড়ি থাকার স্বপ্ন কেবল এক স্বপ্নই থেকে যায়।

৫, ৬. (ক) যিশাইয় ৬৫:২১ এবং মীখা ৪:৪ পদের কোন পরিপূর্ণতা ঘটবে? (খ) কীভাবে আমরা সেই আশীর্বাদ লাভ করতে পারি?

রাজ্য শাসনের অধীনে, নিজের বাড়ি থাকার বিষয়ে প্রত্যেক অধিবাসীর আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণ হবে কারণ যিশাইয়ের মাধ্যমে এই ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল: “লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে।” (যিশা. ৬৫:২১) তবে, নিজের একটা বাড়ি থাকাই একমাত্র প্রত্যাশা নয়। কারণ, বর্তমানে কেউ কেউ নিজেদের বাড়িতে আর এমনকী বিশাল অট্টালিকাতে অথবা বিশাল জায়গা নিয়ে সেখানে বাস করে। কিন্তু, সবসময়ই এইরকম ভয় থাকে যে, এই বুঝি টাকাপয়সার অভাবের কারণে বাড়িঘর হাতছাড়া হয়ে যাবে অথবা সেখানে চোর—অথবা আরও খারাপ কেউ—ঢুকে পড়বে। রাজ্য শাসনের অধীনে সমস্তকিছু কতই না ভিন্ন হবে! ভাববাদী মীখা লিখেছিলেন: “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।”—মীখা ৪:৪.

এই চমৎকার প্রত্যাশার কথা মনে রেখে আমাদের কী করা উচিত? এটা ঠিক যে, আমাদের সকলেরই পর্যাপ্ত বাসস্থানের প্রয়োজন রয়েছে। তবে, এখনই সেই স্বপ্নের গৃহ লাভের চেষ্টা করার—হতে পারে তা করতে গিয়ে বড়ো অঙ্কের ঋণে জড়িয়ে পড়ার—পরিবর্তে যিহোবার প্রতিজ্ঞার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা কি আমাদের জন্য বিজ্ঞতার কাজ হবে না? যিশু নিজের সম্বন্ধে কী বলেছিলেন, তা মনে করে দেখুন: “শৃগালদের গর্ত্ত আছে, এবং আকাশের পক্ষিগণের বাসা আছে, কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মস্তক রাখিবার স্থান নাই।” (লূক ৯:৫৮) অন্য যে-কারো চেয়ে সবচেয়ে উত্তম বাড়ি নির্মাণ করার বা তা লাভ করার ক্ষমতা ও শক্তি যিশুর ছিল। কেন তিনি তা করেননি? স্পষ্টতই, যিশু এমন যেকোনো বিক্ষেপ এবং বাধা এড়াতে চেয়েছিলেন, যা তাঁকে রাজ্যকে প্রথমে রাখার ক্ষেত্রে বিরত করবে। আমরা কি তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করতে এবং আমাদের চোখকে সরল—বস্তুবাদিতার বাধা এবং উদ্‌বিগ্নতা থেকে মুক্ত—রাখতে পারি?—মথি ৬:৩৩, ৩৪.

“কেন্দুয়াব্যাঘ্র ও মেষশাবক একত্র চরিবে”

৭. মানুষ এবং পশুর মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে আদিতে যিহোবা কোন আদেশ দিয়েছিলেন?

সৃষ্টির অর্থাৎ তাঁর পার্থিব কাজের শেষে যিহোবা মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর দক্ষকর্মী, তাঁর প্রথমজাত পুত্রকে যিহোবা তাঁর সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মাণ করি; আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের উপরে, সমস্ত পৃথিবীর উপরে, ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্ত্তৃত্ব করুক।” (আদি. ১:২৬) এভাবে, আদম ও হবা এবং অবশেষে সমস্ত মানুষকে পশুপাখির ওপর কর্তৃত্ব করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

৮. পশুদের কোন আচরণ বর্তমানে খুবই সাধারণ?

সমস্ত পশুকে বশীভূত রাখা এবং তাদের সঙ্গে শান্তিতে থাকা কি মানুষের পক্ষে আসলেই সম্ভব? পোষা প্রাণী যেমন, কুকুর ও বিড়ালের সঙ্গে অনেকের উত্তম সম্পর্ক থাকে। কিন্তু, বন্যপ্রাণীদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? একটা রিপোর্ট বলে: “যে-বিজ্ঞানীরা পশুদের খুব কাছাকাছি থেকে তাদের সম্বন্ধে অধ্যয়ন করেছে, তারা দেখেছে সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীরই আবেগ রয়েছে।” এটা ঠিক যে, ভয় দেখানো হলে পশুরা আতঙ্কিত ও হিংস্র হয়ে ওঠে কিন্তু তারা কি আসলেই সেই বিষয়টা দেখাতে সমর্থ, যেটাকে কেউ কেউ হয়তো কোমল অনুভূতি বলে বর্ণনা করে? সেই রিপোর্ট আরও বলে: “নিজেদের শিশুদেরকে লালনপালন করার সময়ই স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তাদের সবচেয়ে মহৎ বৈশিষ্ট্য—তাদের উষ্ণ স্নেহ দেখানোর অসাধারণ ক্ষমতা—দেখিয়ে থাকে।”

৯. পশুদের সম্বন্ধে আমরা কোন পরিবর্তন আশা করতে পারি?

তাই, আমরা যখন বাইবেলে পড়ি যে, মানুষ ও পশুর মধ্যে শান্তি বিরাজ করবে, তখন আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। (পড়ুন, যিশাইয় ১১:৬-৯; ৬৫:২৫.) কেন? মনে করে দেখুন যে, জলপ্লাবনের পরে নোহ ও তার পরিবার যখন জাহাজ থেকে বের হয়ে এসেছিল, তখন যিহোবা তাদেরকে বলেছিলেন: “পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণী . . . তোমাদের হইতে ভীত ও ত্রাসযুক্ত হইবে।” এই আদেশ পশুর আত্মরক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছিল। (আদি. ৯:২, ৩) যিহোবা কি সেই ভয় ও আতঙ্ক দূর করে দিতে পারবেন না, যাতে তাঁর আদি আদেশ পরিপূর্ণ হয়? (হোশেয় ২:১৮) সেই সময় পৃথিবীতে বাস করার জন্য যারা রক্ষা পাবে, তাদের জন্য কত উপভোগ্য সময়ই না অপেক্ষা করে আছে!

‘তিনি সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন’

১০. মানুষের জন্য চোখের জল ফেলার অভিজ্ঞতা কেন সাধারণ?

১০ শলোমন যখন “সূর্য্যের নীচে যে সকল উপদ্রব হয়, তাহা” লক্ষ করেছিলেন, তখন তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন: “দেখ, উপদ্রুত লোকদের অশ্রুপাত হইতেছে, কিন্তু তাহাদের সান্ত্বনাকারী কেহ নাই।” (উপ. ৪:১) বর্তমানে পরিস্থিতি একইরকম, এমনকী আরও খারাপ। আমাদের মধ্যে এমন কে আছেন, যিনি কোনো না কোনো কারণে চোখের জল ফেলেননি? এটা ঠিক যে, মাঝে মাঝে তা হয়তো আনন্দাশ্রু হতে পারে। কিন্তু, সাধারণত চোখের জল এক দুঃখার্ত হৃদয়ের বহিঃপ্রকাশ।

১১. বাইবেলের কোন বিবরণ বিশেষভাবে আপনার হৃদয় স্পর্শ করে?

১১ এমন অনেক মর্মস্পর্শী এবং আবেগপূর্ণ দৃশ্যের কথা মনে করে দেখুন, যেগুলো আমরা বাইবেলে পড়েছি। সারা যখন ১২৭ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন, তখন “অব্রাহাম সারার নিমিত্তে শোক ও রোদন করিতে আসিলেন।” (আদি. ২৩:১, ২) নয়মী যখন তার দুই বিধবা পুত্রবধূকে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন, তখন “তাহারা উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিল” এবং এরপর নয়মী যখন আবার তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন “তাহারা পুনর্ব্বার উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিল।” (রূৎ. ১:৯, ১৪) রাজা হিষ্কিয় যখন অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে ‘অতিশয় রোদন করিয়াছিলেন,’ যা স্পষ্টতই যিহোবার হৃদয় স্পর্শ করেছিল। (২ রাজা. ২০:১-৫) আর প্রেরিত পিতরের দ্বারা যিশুকে অস্বীকার করার বিবরণটা পড়া আমাদের সকলের হৃদয়কেই কি স্পর্শ করে না? মোরগের ডাক শোনার পর, পিতর ‘বাহিরে গিয়া অত্যন্ত রোদন করিয়াছিলেন।’—মথি ২৬:৭৫.

১২. কীভাবে রাজ্যের শাসন মানবজাতির জন্য প্রকৃত স্বস্তি নিয়ে আসবে?

১২ আমাদের প্রতি ছোটো এবং বড়ো যে-দুঃখজনক ঘটনাগুলো ঘটে, সেগুলোর কারণে মানবজাতির সান্ত্বনা ও স্বস্তির অনেক প্রয়োজন। হাজার বছরের রাজত্ব এর প্রজাদের জন্য ঠিক এই বিষয়টাই নিয়ে আসবে: “[ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।” (প্রকা. ২১:৪) শোক, আর্তনাদ এবং ব্যথা দূর হয়ে যাওয়ার বিষয়টার মতো, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার মধ্যে যে মানবজাতির শেষ শত্রুকে—মৃত্যুকে—দূর করে দেওয়ার বিষয়টা রয়েছে, সেটাও অপূর্ব। কীভাবে তা সম্ভব হবে?

“কবরস্থ সকলে . . . বাহির হইয়া আসিবে”

১৩. আদম পাপে পতিত হওয়ার পর থেকে কীভাবে মৃত্যু মানুষকে প্রভাবিত করেছে?

১৩ আদম পাপ করার পর থেকে মৃত্যু মানুষের ওপর এক রাজার মতো শাসন করছে। এটা এক অজেয় শত্রু, পাপী মানুষের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি, প্রচণ্ড দুঃখ এবং কষ্টের উৎস হয়ে এসেছে। (রোমীয় ৫:১২, ১৪) বস্তুতপক্ষে, “মৃত্যুর ভয়ে” লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি ‘যাবজ্জীবন দাসত্বের অধীনে’ রয়েছে।—ইব্রীয় ২:১৫.

১৪. যখন মৃত্যুকে বিলুপ্ত করে দেওয়া হবে, তখন কী হবে?

১৪ বাইবেল এমন সময়ের কথা বলে, যখন “শেষ শত্রু যে মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে।” (১ করি. ১৫:২৬) দুটো দল সম্বন্ধে উল্লেখ করা যেতে পারে, যারা এখান থেকে উপকার লাভ করবে। ‘যে-বিস্তর লোক’ এখন জীবিত আছে, তাদের জন্য অনন্তজীবন-সহ প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। আর যে-কোটি কোটি লোক ইতিমধ্যেই মৃত্যুর দ্বারা কবলিত হয়েছে, তাদের জন্য পুনরুত্থান সম্ভব হবে। আপনি কি সেই আনন্দ ও উত্তেজনা সম্বন্ধে কল্পনা করতে পারেন, যখন বিস্তর লোক পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের স্বাগতম জানাবে? সেই অনুভূতি হয়তো কেমন হবে, তা বাইবেলের কিছু পুনরুত্থানের ঘটনা ভালোভাবে বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা পূর্বাভাস পেতে পারি।—পড়ুন, মার্ক ৫:৩৮-৪২; লূক ৭:১১-১৭.

১৫. একজন প্রিয় ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত হতে দেখে আপনি হয়তো কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন?

১৫ “তাহারা বড়ই বিস্ময়ে একেবারে চমৎকৃত হইল” এবং ‘তাহারা ঈশ্বরের গৌরব করিতে লাগিল,’ এই অভিব্যক্তিগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করে দেখুন। আপনি যদি সেই সময়গুলোতে সেখানে উপস্থিত থাকতেন, তাহলে আপনিও হয়তো একইরকম অনুভব করতেন। বাস্তবিকপক্ষে, পুনরুত্থানের মাধ্যমে আমাদের মৃত প্রিয়জনকে জীবন ফিরে পেতে দেখা আমাদের মধ্যে আনন্দ এবং উত্তেজনার চমৎকার অনুভূতি জাগিয়ে তুলবে। যিশু বলেছিলেন: ‘এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে এবং বাহির হইয়া আসিবে।’ (যোহন ৫:২৮, ২৯) আমাদের মধ্যে কেউই কখনো এই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেনি কিন্তু নিশ্চিতভাবেই এটা হবে সবচেয়ে চমৎকার ‘অদৃশ্য বস্তুর’ মধ্যে একটা।

ঈশ্বরই “সর্ব্বেসর্ব্বা” হবেন

১৬. (ক) কেন আমাদের এখনও অদৃশ্য এমন আশীর্বাদগুলো নিয়ে উদ্যমের সঙ্গে কথা বলা উচিত? (খ) করিন্থীয়ের খ্রিস্টানদেরকে উৎসাহিত করার জন্য পৌল কী বলেছিলেন?

১৬ হ্যাঁ, সেই ব্যক্তিদের জন্য চমৎকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে আছে, যারা এই বিষম সময়ে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত হয়! যদিও প্রচুর আশীর্বাদ এখনও অদৃশ্য, তবুও সেগুলো স্পষ্টভাবে মনে রাখা আমাদেরকে, প্রকৃতপক্ষেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে এবং বর্তমান জগতের ক্ষণস্থায়ী আকর্ষণগুলোর দ্বারা বিক্ষিপ্ত হওয়া এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। (লূক ২১:৩৪; ১ তীম. ৬:১৭-১৯) পারিবারিক উপাসনার সময়, সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় এবং বাইবেল ছাত্র ও আগ্রহী ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করার সময়, আসুন আমরা আমাদের অপূর্ব আশা এবং প্রত্যাশা নিয়ে উদ্যমের সঙ্গে কথা বলি। এটা আমাদের মনে ও হৃদয়ে এই বিষয়গুলোকে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করবে। প্রেরিত পৌল তার সহখ্রিস্টানদের উৎসাহিত করার সময় ঠিক এই বিষয়টাই করেছিলেন। রূপকভাবে বললে, তিনি তাদেরকে খ্রিস্টের হাজার বছর রাজত্বের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন। ১ করিন্থীয় ১৫:২৪, ২৫, ২৮ পদে প্রাপ্ত পৌলের কথাগুলোর তাৎপর্য কল্পনা করার চেষ্টা করুন।—পড়ুন।

১৭, ১৮. (ক) মানব ইতিহাসের শুরুতে কীভাবে যিহোবাই “সর্ব্বেসর্ব্বা” ছিলেন? (খ) একতা এবং সংগতি পুনর্স্থাপন করার জন্য যিশু কী করবেন?

১৭ “যেন ঈশ্বরই সর্ব্বেসর্ব্বা হন,” এগুলো ছাড়া আর কোনো শব্দই চূড়ান্ত পর্যায় সম্বন্ধে এত উত্তমভাবে বর্ণনা করতে পারে না। কিন্তু, এর অর্থ কী? অতীতে এদন উদ্যানের সময়ের কথা চিন্তা করুন, যখন সিদ্ধ মানুষ আদম ও হবা যিহোবার শান্তিপূর্ণ এবং সংগতিপূর্ণ সর্বজনীন পরিবারের একটা অংশ ছিল। নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম যিহোবা তাঁর সমস্ত সৃষ্টি অর্থাৎ দূত এবং মানুষের ওপর সরাসরি শাসন করতেন। তারা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে, তাঁর উপাসনা করতে এবং তাঁর আশীর্বাদ লাভ করতে পারত। তিনিই “সর্ব্বেসর্ব্বা” ছিলেন।

১৮ সেই সংগতিপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যখন মানুষ শয়তানের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে যিহোবার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। ১৯১৪ সাল থেকে, মশীহ রাজ্য সেই একতা ও সংগতি পুনর্স্থাপন করার জন্য ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নিচ্ছে। (ইফি. ১:৯, ১০) হাজার বছর রাজত্বের সময় বর্তমানে “অদৃশ্য” এমন অপূর্ব বস্তু বাস্তবে পরিণত হবে। এরপর “পরিণাম” বা শেষ আসবে অর্থাৎ খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের শেষ আসবে। সেই সময় কী ঘটবে? যদিও যিশুকে “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্ত্তৃত্ব” দেওয়া হয়েছে, তবুও তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী নন। যিহোবার স্থান দখল করে নেওয়ার কোনো ইচ্ছাই তাঁর নেই। তিনি নম্রভাবে “পিতা ঈশ্বরের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিবেন।” তিনি তাঁর অদ্বিতীয় পদ এবং কর্তৃত্বকে এমনভাবে ব্যবহার করবেন, যেন ‘পিতা ঈশ্বর মহিমান্বিত হন।’—মথি ২৮:১৮; ফিলি. ২:৯-১১.

১৯, ২০. (ক) রাজ্যের সমস্ত প্রজা কীভাবে দেখাবে যে, তারা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে গ্রহণ করবে কি না? (খ) আমাদের জন্য কোন চমৎকার প্রত্যাশা অপেক্ষা করছে?

১৯ সেই সময়ের মধ্যে, রাজ্যের পার্থিব প্রজাদের সিদ্ধতায় নিয়ে যাওয়া হবে। তারা যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করবে এবং নম্রভাবে ও স্বেচ্ছায় যিহোবার সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করবে। এই বিষয়টা করার ব্যাপারে তাদের আকাঙ্ক্ষা, সফলভাবে চূড়ান্ত পরীক্ষা পার করার মাধ্যমে দেখানোর সুযোগ থাকবে। (প্রকা. ২০:৭-১০) এরপর, সমস্ত বিদ্রোহী মানুষ ও আত্মিক প্রাণীকে চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে। তা কতই না আনন্দ এবং উল্লাসের এক সময় হবে! সম্পূর্ণ সর্বজনীন পরিবার আনন্দের সঙ্গে যিহোবার প্রশংসা করবে, যিনি “সর্ব্বেসর্ব্বা” হবেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৯৯:১-৩.

২০ সামনেই রাজ্যের যে-অপূর্ব বাস্তবতাগুলো রয়েছে, সেগুলো কি আপনাকে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে এবং তা পালন করার জন্য প্রচেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত করে না? আপনি কি শয়তানের জগতের দ্বারা প্রস্তাবিত মিথ্যা আশা ও সান্ত্বনার দ্বারা বিক্ষিপ্ত হওয়ার বিষয়টা এড়াতে পারেন? আপনি কি যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন ও উচ্চীকৃত করার জন্য আপনার সংকল্পকে শক্তিশালী করবেন? আপনার কাজ যেন এই প্রমাণ দেয় যে, আপনার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে চিরকাল তা করে চলা। তখন আপনার হাজার বছর এবং এর পরও শান্তি ও সমৃদ্ধি উপভোগ করার বিশেষ সুযোগ থাকবে!

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

রাজা হিসেবে তাঁর কার্যভার সম্পন্ন করার পর, যিশু নম্রভাবে তাঁর পিতার হস্তে রাজ্য সমর্পণ করবেন