সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সাহসের সঙ্গে বর্তমান দুর্দশাগুলোর মোকাবিলা করা

সাহসের সঙ্গে বর্তমান দুর্দশাগুলোর মোকাবিলা করা

সাহসের সঙ্গে বর্তমান দুর্দশাগুলোর মোকাবিলা করা

“ঈশ্বর আমাদের পক্ষে আশ্রয় ও বল। তিনি সঙ্কটকালে অতি সুপ্রাপ্য সহায়।” —গীত. ৪৬:১.

আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?

কীভাবে আমরা সংকটময় পরিস্থিতিগুলোর দ্বারা ভারগ্রস্ত হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি?

সাহস দেখানোর কোন কোন কারণ আমাদের রয়েছে?

দুর্দশাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য যিহোবা কোন ব্যবস্থাগুলো জুগিয়েছেন?

১, ২. অনেকে হয়তো কোন দুর্দশাগুলোর মুখোমুখি হয়েছে কিন্তু ঈশ্বরের দাসেরা কী করতে চায়?

 আমরা এক দুর্দশার সময়ে বাস করছি। পৃথিবী একটার পর একটা দুর্দশার শিকার হয়েছে। ভূমিকম্প, সুনামি, দাবানল, বন্যা, অগ্ন্যুৎপাত, ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন এবং হারিকেন মানবজাতির ওপর ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। এ ছাড়া, পারিবারিক সমস্যা এবং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, ভয় ও দুঃখের উদ্রেক করেছে। এটা একেবারে সত্যি যে, আমাদের সবার প্রতি “কাল ও দৈব” ঘটে।—উপ. ৯:১১.

যিহোবার সাক্ষিরা একটা দল হিসেবে এই ধরনের সংকটময় পরিস্থিতির সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। তা সত্ত্বেও, আমরা এমন যেকোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে চাই, যেগুলো হয়তো ভবিষ্যতে এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ে আমাদের সামনে আসতে পারে। কীভাবে আমরা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে এবং এগুলোর দ্বারা ভারগ্রস্ত হওয়া এড়াতে পারি? কী আমাদেরকে বর্তমান দুর্দশাগুলো সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে?

সাহস দেখিয়েছে এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিখুন

৩. রোমীয় ১৫:৪ পদ অনুযায়ী সেই সময়ে আমরা কীভাবে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি, যখন হতাশাজনক পরিস্থিতিগুলোর সম্মুখীন হই?

যদিও কঠিন পরিস্থিতিগুলো আগের তুলনায় এখন আরও বেশি লোককে প্রভাবিত করে, তাই সংকটময় সমস্যাগুলো এখন মানবজাতির কাছে নতুন কিছু নয়। অতএব, আসুন আমরা দেখি যে, ঈশ্বরের কিছু দাসের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি, যারা অতীতে কঠিন পরিস্থিতিগুলোতে সাহস দেখিয়েছে।—রোমীয় ১৫:৪.

৪. দায়ূদকে কোন দুর্দশাগুলো সহ্য করতে হয়েছিল এবং কী তাকে সাহায্য করেছিল?

দায়ূদের কথা বিবেচনা করুন। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি তাকে রাজার ক্রোধ, শত্রুর আক্রমণ, তার স্ত্রীদের অপহরণ, কাছের লোকেদের কাছ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা এবং আবেগগত চাপ সহ্য করতে হয়েছিল। (১ শমূ. ১৮:৮, ৯; ৩০:১-৫; ২ শমূ. ১৭:১-৩; ২৪:১৫, ১৭; গীত. ৩৮:৪-৮) দায়ূদের জীবন সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ, এই দুর্দশাগুলোর কারণে দায়ূদ যে-কষ্ট পেয়েছিলেন, তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। কিন্তু, এগুলো তাকে আধ্যাত্মিকভাবে শেষ করে দিতে পারেনি। পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে তিনি বলেছিলেন: “সদাপ্রভু আমার জীবন-দুর্গ, আমি কাহা হইতে ত্রাসযুক্ত হইব?”—গীত. ২৭:১; পড়ুন, গীতসংহিতা ২৭:৫, ১০.

৫. কী অব্রাহাম ও সারাকে এক কষ্টকর জীবনের সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিল?

অব্রাহাম এবং সারা তাদের জীবনের অধিকাংশ সময়ই বিদেশে প্রবাসী হিসেবে তাঁবুতে বাস করেছিল। সেখানে তাদের জীবন সবসময় সহজ ছিল না। তা সত্ত্বেও, তারা দুর্ভিক্ষ এবং আশেপাশের জাতিগুলোর কাছ থেকে আসা আক্রমণের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করেছিল। (আদি. ১২:১০; ১৪:১৪-১৬) কীভাবে তারা তা করতে সমর্থ হয়েছিল? ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বলে যে, অব্রাহাম “ভিত্তিমূলবিশিষ্ট সেই নগরের অপেক্ষা করিতেছিলেন, যাহার স্থাপনকর্ত্তা ও নির্ম্মাতা ঈশ্বর।” (ইব্রীয় ১১:৮-১০) অব্রাহাম ও সারা সম্মুখস্থ বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল, নিজেদেরকে চারপাশের জগতের দ্বারা ভারগ্রস্ত হয়ে পড়তে দেয়নি।

৬. কীভাবে আমরা ইয়োবকে অনুকরণ করতে পারি?

ইয়োব চরম চাপের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কল্পনা করে দেখুন যে, সেই সময় তার কেমন লেগেছিল, যখন তার জীবনের পরিস্থিতিগুলো খারাপই হচ্ছিল বলে মনে হয়েছিল। (ইয়োব ৩:৩, ১১) এ ছাড়া, তিনি পুরোপুরি বুঝতে পারেননি যে, কেন এই বিষয়গুলো তার প্রতি ঘটেছে। তা সত্ত্বেও, তিনি কখনো হাল ছেড়ে দেননি। তিনি তার “সিদ্ধতা, [“নীতিনিষ্ঠা,” NW]” এবং ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস বজায় রেখেছিলেন। (পড়ুন, ইয়োব ২৭:৫.) কতই না চমৎকার এক উদাহরণ, যা আমরা অনুকরণ করতে পারি!

৭. ঈশ্বরের সেবা করতে গিয়ে পৌল কোন পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন কিন্তু কোন উপলব্ধি তাকে সেগুলো সহ্য করে যাওয়ার জন্য সাহস প্রদান করেছিল?

এ ছাড়া, প্রেরিত পৌলের উদাহরণও বিবেচনা করুন। তিনি ‘নগরসঙ্কট, মরুসঙ্কট এবং সমুদ্রসঙ্কটের’ মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি ‘ক্ষুধা ও তৃষ্ণা, শীত ও উলঙ্গতার’ কথাও বলেন। অধিকন্তু, পৌল “অগাধ জলে এক দিবারাত্র” যাপন করার বিষয়েও উল্লেখ করেন, যা সম্ভবত তিনি যে-নৌকায় করে যাচ্ছিলেন, সেটা ডুবে যাওয়ার কারণে হয়েছিল। (২ করি. ১১:২৩-২৭) এত কিছু সত্ত্বেও, ঈশ্বরের সেবা করার কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার পর তিনি যে-মনোভাব দেখিয়েছিলেন, তা লক্ষ করুন: “যেন আপনাদের উপরে নির্ভর না দিয়া মৃতগণের উত্থাপনকারী ঈশ্বরের উপরে নির্ভর দিই। তিনিই এত বড় মৃত্যু হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছেন ও উদ্ধার করিবেন।” (২ করি. ১:৮-১০) এটা ঠিক যে, খুব বেশি লোককে পৌলের মতো এত খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে, আমাদের মধ্যে অনেকে তার অনুভূতি বুঝতে পারি এবং তার সাহসী উদাহরণ থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি।

নেতিবাচক ঘটনাগুলোর দ্বারা ভারগ্রস্ত হওয়া এড়িয়ে চলুন

৮. বর্তমান সমস্যাগুলো আমাদেরকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

বর্তমান জগৎ এতটাই দুর্যোগ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং চাপে পরিপূর্ণ যে, অনেকে ভারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এমনকী, কিছু খ্রিস্টানও একইরকম অনুভব করে। ল্যানি * নামে একজন বোন, যিনি অস্ট্রেলিয়াতে তার স্বামীর সঙ্গে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা উপভোগ করছিলেন, তিনি বলেন যে, যখন তার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন তিনি একেবারে ভেঙে পড়েন এবং তার মনে হয় যেন মাথার ওপর বাজ পড়েছে। তিনি বলেন, “চিকিৎসার কারণে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং আত্মসম্মানবোধ হারিয়ে ফেলি।” এ ছাড়া, তার স্বামীর মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচারের কারণে তাকে তার স্বামীরও যত্ন নিতে হতো। আমরা যদি এইরকম কোনো পরিস্থিতিতে পড়ি, তাহলে আমরা কী করতে পারি?

৯, ১০. (ক) শয়তানকে আমরা কী করার সুযোগ দেব না? (খ) কীভাবে আমরা প্রেরিত ১৪:২২ পদে উল্লেখিত বাস্তবতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি?

আমাদের মনে রাখা উচিত যে, আমরা যে-ক্লেশগুলো ভোগ করি, সেগুলোকে শয়তান আমাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু, এভাবে আমরা তাকে আমাদের আনন্দ কেড়ে নেওয়ার সুযোগ দেব না। হিতোপদেশ ২৪:১০ পদ বলে: “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত।” ওপরে আলোচনা করা হয়েছে এমন বাইবেলের উদাহরণগুলো নিয়ে ধ্যান করা আমাদেরকে বিভিন্ন দুর্দশার সময়ে সাহস অর্জন করতে সাহায্য করবে।

১০ এ ছাড়া, এই বিষয়টাও মনে রাখা উত্তম যে, আমরা সমস্ত সমস্যা দূর করে দিতে পারব না। আসলে, আমরা মনে রাখতে পারি যে, সেগুলো আসবেই। (২ তীম. ৩:১২) প্রেরিত ১৪:২২ পদ আমাদের বলে: “অনেক ক্লেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে হইবে।” নিরুৎসাহিত হওয়ার পরিবর্তে, আপনাকে সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরের যে সামর্থ্য রয়েছে, সেই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এগুলোকে আপনার সাহস প্রকাশ করার সুযোগ হিসেবে দেখুন না কেন?

১১. কীভাবে আমরা জীবনের দুর্দশাগুলোর দ্বারা ভারগ্রস্ত হওয়া এড়াতে পারি?

১১ আমাদের ইতিবাচক বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বলে: “আনন্দিত মন মুখকে প্রফুল্ল করে, কিন্তু মনের ব্যথায় আত্মা ভগ্ন হয়।” (হিতো. ১৫:১৩) চিকিৎসকরা বহু আগে থেকেই ইতিবাচক চিন্তার আরোগ্যকারী মূল্য সম্বন্ধে স্বীকার করে আসছে। শুগার পিল (রোগীর মন রক্ষার জন্য প্রদত্ত ওষুধ) দেওয়া হয়েছে এমন অনেক রোগী শুধু এই কারণেই সেই উপসর্গগুলো থেকে স্বস্তি বোধ করে, যেগুলোর জন্য তাদেরকে সাহায্য করা হচ্ছে বলে তারা নিজেরা মনে করে থাকে। এর বিপরীতটাও দেখা গিয়েছে, যেটাকে নোসীবো প্রভাব বলে অভিহিত করা হয়। রোগীদেরকে যদি বলা হয় যে কোনো একটা ওষুধের নেতিবাচক দিক রয়েছে, তাহলে শুধু এই চিন্তার কারণেই তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে যায়। আমরা যে-পরিস্থিতিগুলোর পরিবর্তন করতে পারি না, সেগুলো নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করা হয়তো আমাদের কেবল শেষই করে দিতে পারে। ইতিবাচক দিকটা হল, যিহোবা আমাদেরকে “শুগার পিল” দেন না। এর পরিবর্তে, এমনকী দুর্যোগের সময়ও তিনি তাঁর বাক্যে প্রাপ্ত উৎসাহ, আমাদের সহযোগীপরায়ণ ভ্রাতৃবর্গ এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা জোগানো শক্তির মাধ্যমে প্রকৃত সাহায্য প্রদান করেন। এই ধরনের বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা আমাদেরকে আনন্দিত করবে। নেতিবাচক ঘটনাগুলো নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করার পরিবর্তে, প্রতিটা সমস্যার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য ব্যবহারিক বিষয়গুলো করুন এবং আপনার জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন।—হিতো. ১৭:২২.

১২, ১৩. (ক) কী ঈশ্বরের দাসদেরকে দুর্যোগগুলোর কারণে ঘটা ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করতে সাহায্য করেছে? উদাহরণ দিন। (খ) কোন বিষয়টা একজন ব্যক্তির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা দুর্যোগের সময়গুলোতে কীভাবে স্পষ্ট হয়?

১২ সম্প্রতি, কিছু দেশে বিভিন্ন মারাত্মক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই দেশগুলোতে অনেক ভাই অসাধারণ দৃঢ়তা দেখিয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, তা দেখানো সহজ ছিল। ২০১০ সালের শুরুর দিকে, চিলিতে ঘটে যাওয়া মারাত্মক ভূমিকম্প ও সুনামি আমাদের অনেক ভাইবোনের বাড়িঘর এবং সহায়সম্পদ ধ্বংস করে দিয়েছিল ও সেইসঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের জীবিকার্জনের উপায়ও কেড়ে নিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, ভাইয়েরা ক্রমাগত তাদের আধ্যাত্মিক কাজগুলো করে গিয়েছিল। স্যামুয়েল নামে একজন ভাই, যার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তিনি বলেছিলেন: “এমনকী এই চরম পরিস্থিতিগুলোর মধ্যেও আমার স্ত্রী এবং আমি কখনো সভা ও প্রচার বাদ দিইনি। আমি মনে করি যে, এই অভ্যাস আমাদেরকে নিরাশ না হতে সাহায্য করেছিল।” অন্যদের মতো তারাও বিপর্যয়কে পিছনে ফেলে যিহোবার সেবার দিকে এগিয়ে গিয়েছিল।

১৩ দু-হাজার নয় সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিপিনসের ম্যানিলার ৮০ শতাংশেরও বেশির ভাগ এলাকা প্রবল বর্ষণের কারণে প্লাবিত হয়েছিল। একজন ধনী ব্যক্তি, যিনি প্রচুর সহায়সম্পদ হারিয়েছেন, তিনি বলেছিলেন, সেই বন্যা প্রত্যেকের ক্ষতি করেছিল এবং “ধনী-দরিদ্র সকলের জন্যই সমস্যা ও কষ্ট” নিয়ে এসেছিল। এটা আমাদেরকে যিশুর এই বিচক্ষণ উপদেশের কথা মনে করিয়ে দেয়: “স্বর্গে আপনাদের জন্য ধন সঞ্চয় কর; সেখানে কীটে ও মর্চ্চায় ক্ষয় করে না, সেখানে চোরেও সিঁধ কাটিয়া চুরি করে না।” (মথি ৬:২০) বস্তুগত বিষয়গুলো, যেগুলো কিনা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়, সেগুলোকে ঘিরে জীবন গড়ে তোলা বেশির ভাগ সময়ই হতাশা নিয়ে আসে। যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে আমাদের জীবনকে কেন্দ্রীভূত করা কতই না বিজ্ঞতার কাজ, যে-সম্পর্ক আমাদের চারপাশে যা-ই ঘটুক না কেন, সেটার মধ্যেও অটুট থাকতে পারে!—পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৫, ৬.

সাহস দেখানোর বিভিন্ন কারণ

১৪. সাহস দেখানোর কোন কারণগুলো আমাদের রয়েছে?

১৪ যদিও যিশু স্বীকার করেছিলেন যে, তাঁর উপস্থিতির সময়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে কিন্তু তিনি বলেছিলেন: “ত্রাসযুক্ত হইও না।” (লূক ২১:৯) তাঁকে আমাদের রাজা হিসেবে পাওয়ায় এবং নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার সমর্থন থাকায় আমাদের আস্থা রাখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পৌল তীমথিয়কে এই কথা বলার দ্বারা উৎসাহিত করেছিলেন: “ঈশ্বর আমাদিগকে ভীরুতার আত্মা দেন নাই, কিন্তু শক্তির, প্রেমের ও সুবুদ্ধির আত্মা দিয়াছেন।”—২ তীম. ১:৭.

১৫. ঈশ্বরের দাসদের দৃঢ়প্রত্যয়ের উদাহরণ দিন এবং আমরা কীভাবে একইরকম সাহস বজায় রাখতে পারি, তা ব্যাখ্যা করুন।

১৫ ঈশ্বরের দাসদের দৃঢ়প্রত্যয়ের কিছু অভিব্যক্তি লক্ষ করুন। দায়ূদ বলেছিলেন: “সদাপ্রভু আমার বল ও আমার ঢাল; আমার অন্তঃকরণ তাঁহার উপরে নির্ভর করিয়াছে, তাই আমি সাহায্য পাইয়াছি; এজন্য আমার অন্তঃকরণ উল্লাসিত হইয়াছে।” (গীত. ২৮:৭) পৌল এই কথা বলার দ্বারা তার অবিচল আস্থা প্রকাশ করেছিলেন: “যিনি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন, তাঁহারই দ্বারা আমরা এই সকল বিষয়ে বিজয়ী অপেক্ষাও অধিক বিজয়ী হই।” (রোমীয় ৮:৩৭) একইভাবে, যখন বিপদ ঘনিয়ে এসেছিল, তখন যিশু এই কথা বলার দ্বারা তাঁর শ্রোতাদের মনে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ রাখেননি যে, ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর এক দৃঢ়সম্পর্ক রয়েছে: “আমি একাকী নহি, কারণ পিতা আমার সঙ্গে আছেন।” (যোহন ১৬:৩২) এই অভিব্যক্তিগুলোর মধ্যে কোন বিষয়টা স্পষ্ট দেখা যায়? প্রতিটা অভিব্যক্তিই যিহোবার ওপর অবিচল নির্ভরতা প্রকাশ করে। ঈশ্বরের ওপর একই আস্থা গড়ে তোলা আমাদেরকেও বর্তমানের যেকোনো দুর্দশা মোকাবিলা করার জন্য সাহস প্রদান করতে পারে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৪৬:১-৩.

সাহস বজায় রাখার বিভিন্ন ব্যবস্থা থেকে উপকার লাভ করুন

১৬. কেন ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

১৬ খ্রিস্টীয় সাহসের অর্থ স্বনির্ভরতা নয়। এর পরিবর্তে, এটা ঈশ্বর সম্বন্ধে জানার এবং তাঁর ওপর নির্ভরতার মাধ্যমে আসে। তাঁর লিখিত বাক্য বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা তা করতে পারি। বিষণ্ণতায় ভুগছেন এমন একজন বোন ব্যাখ্যা করেন যে, কোন বিষয়টা তাকে সাহায্য করে, “আমি বিশেষভাবে সান্ত্বনাদায়ক পদগুলো বার বার পড়ে থাকি।” পারিবারিক উপাসনার জন্য নিয়মিত সময় রাখার ব্যাপারে আমরা যে-নির্দেশনা লাভ করেছি, তা কি কাজে লাগিয়েছি? এই বিষয়গুলো করা আমাদেরকে গীতরচকের মতো মনোভাব রাখতে সাহায্য করবে, যিনি বলেছিলেন: “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়।”—গীত. ১১৯:৯৭.

১৭. (ক) কোন ব্যবস্থা হয়তো আমাদেরকে এক সাহসী দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে? (খ) কীভাবে প্রকাশিত জীবনকাহিনি আপনাকে সাহায্য করেছে, সেটার একটা উদাহরণ দিন।

১৭ দ্বিতীয়ত, আমাদের কাছে বাইবেলভিত্তিক এমন সাহিত্যাদি রয়েছে, যেগুলোর তথ্য যিহোবার ওপর আমাদের আস্থাকে শক্তিশালী করে। অনেক ভাইবোন আমাদের পত্রিকায় প্রকাশিত জীবনকাহিনিকে বিশেষভাবে উপকারী বলে মনে করে। এশিয়ার একজন বোন, যার বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার (এক ধরনের মানসিক রোগ) রয়েছে, তিনি একজন প্রাক্তন মিশনারি ভাইয়ের জীবনকাহিনি পড়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন, যে-ভাই একই রোগের সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “এটা আমাকে নিজের সমস্যা বুঝতে সাহায্য করেছিল এবং আমাকে আশা প্রদান করেছিল।”

১৮. কেন আমাদের প্রার্থনার ব্যবস্থা কাজে লাগানো উচিত?

১৮ তৃতীয় ব্যবস্থা হল প্রার্থনা। এটা সমস্ত ধরনের পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারে। প্রেরিত পৌল এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে এই ব্যবস্থার মূল্যের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলি. ৪:৬, ৭) দুর্দশার মধ্যে শক্তি লাভ করার জন্য আমরা কি সাহায্যের এই উপায়টার সদ্‌ব্যবহার করি? অ্যালেক্স নামে ব্রিটেনের একজন ভাই, যিনি দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্ণতায় ভুগেছেন, তিনি বলেছিলেন: “প্রার্থনায় যিহোবার সঙ্গে কথা বলা এবং তাঁর বাক্য পাঠ করার মাধ্যমে তাঁর কথা শোনা আমার জন্য এক জীবনরক্ষাকারী বিষয় হয়ে উঠেছে।”

১৯. খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার বিষয়টার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত?

১৯ আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য চতুর্থ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হচ্ছে সভাগুলোতে মেলামেশা করা। একজন গীতরচক লিখেছিলেন: “আমার প্রাণ সদাপ্রভুর প্রাঙ্গণের জন্য আকাঙ্ক্ষা করে, এমন কি, মূর্চ্ছিত হয়।” (গীত. ৮৪:২) আমরাও কি একইরকম অনুভব করি? ল্যানি, যার কথা আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি খ্রিস্টীয় মেলামেশা সম্বন্ধে তার দৃষ্টিভঙ্গিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন: “সভাগুলোতে উপস্থিত থাকা বেছে নেওয়ার মতো কোনো বিষয় ছিল না। আমি জানতাম যে, মোকাবিলা করার জন্য যিহোবার সাহায্য পেতে হলে আমাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে।”

২০. কীভাবে প্রচার কাজে অংশ নেওয়া আমাদেরকে সাহায্য করবে?

২০ পঞ্চম সাহায্যটা হল, রাজ্যের প্রচার কাজে সক্রিয় থাকা। (১ তীম. ৪:১৬) অস্ট্রেলিয়ার একজন বোন, যিনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ভোগ করেছিলেন, তিনি বলেন: “প্রচার কাজটা আমি সবেচেয়ে শেষে করতে চাইতাম কিন্তু একজন প্রাচীন আমাকে তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি তার সঙ্গে গিয়েছিলাম। যিহোবা নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করছিলেন; যত বারই আমি পরিচর্যায় অংশ নিতাম, তত বারই আমি অনেক আনন্দ বোধ করতাম।” (হিতো. ১৬:২০) অনেকে দেখেছে যে, অন্যদেরকে যিহোবার ওপর বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করার মাধ্যমে তারা নিজেদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পেরেছে। তা করার মাধ্যমে তারা নিজেদের সমস্যাগুলো ভুলে গিয়ে “ভিন্ন প্রকার [“বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” NW]” বিষয়গুলো করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পেরেছে।—ফিলি. ১:১০, ১১.

২১. আমরা যে-সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়ে থাকি, সেগুলো সম্বন্ধে আমাদের কোন আশ্বাস রয়েছে?

২১ সাহসের সঙ্গে বর্তমান দুর্দশাগুলোর মোকাবিলা করার জন্য যিহোবা প্রচুর সাহায্য জুগিয়েছেন। এইসমস্ত ব্যবস্থার সদ্‌ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং ঈশ্বরের সাহসী দাসদের চমৎকার উদাহরণ নিয়ে ধ্যান করার ও সেগুলো অনুকরণ করার মাধ্যমে আমরা এই আশ্বাস রাখতে পারি যে, আমরা সাহসের সঙ্গে সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে পারব। যেহেতু এই বিধিব্যবস্থার শেষ সন্নিকট, তাই যদিও অনেক নেতিবাচক বিষয় ঘটতে পারে কিন্তু আমরা পৌলের মতো একইরকম অনুভব করি, যিনি বলেছিলেন: “অধঃক্ষিপ্ত হইতেছি, কিন্তু বিনষ্ট হই না। . . . আমরা নিরুৎসাহ হই না।” (২ করি. ৪:৯, ১৬) যিহোবার সাহায্যে আমরা সাহসের সঙ্গে বর্তমান দুর্দশাগুলোর মোকাবিলা করতে পারি।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৪:১৭, ১৮.

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০, ১১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি যখন দুর্দশার মুখোমুখি হন, তখন যিহোবার দ্বারা জোগানো সাহায্যের সদ্‌ব্যবহার করুন