সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কোন ধরনের মনোভাব দেখান?

আপনি কোন ধরনের মনোভাব দেখান?

আপনি কোন ধরনের মনোভাব দেখান?

“প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের আত্মার সহবর্ত্তী হউক।”—ফিলী. ২৫.

আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?

আমরা যে-মনোভাব দেখাই, সেটার প্রতি কেন আমরা মনোযোগ দিতে চাই?

আমরা কোন ধরনের মনোভাব এড়িয়ে চলতে চাই এবং কীভাবে আমরা তা এড়িয়ে চলতে পারি?

মণ্ডলীতে এক গঠনমূলক মনোভাব প্রদর্শন করার জন্য আমরা কী করতে পারি?

১. সহবিশ্বাসীদের কাছে লেখার সময় পৌল কোন আশা ব্যক্ত করেছিলেন?

 সহবিশ্বাসীদের কাছে লেখার সময়, প্রেরিত পৌল বার বার তার এই আশা ব্যক্ত করেছিলেন যে, মণ্ডলীগুলো যে-মনোভাব প্রদর্শন করেছিল, ঈশ্বর এবং খ্রিস্ট যেন সেটাকে অনুমোদন করে। উদাহরণস্বরূপ, গালাতীয়দের উদ্দেশে তিনি লিখেছিলেন: “হে ভ্রাতৃগণ, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের আত্মার সহবর্ত্তী হউক। আমেন।” (গালা. ৬:১৮) ‘তোমাদের আত্মা’ বা মনোভাব বলতে তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?

২, ৩. (ক) ‘আত্মা’ শব্দটি ব্যবহার করার সময় পৌল মাঝে মাঝে কোন বিষয়টাকে নির্দেশ করছিলেন? (খ) আমরা যে-মনোভাব দেখাই, সেই সম্বন্ধে নিজেদেরকে আমরা কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?

এই প্রসঙ্গে পৌলের দ্বারা ব্যবহৃত “আত্মা” শব্দটি সেই অনুপ্রেরণাদায়ক শক্তিকে নির্দেশ করে, যা আমাদেরকে নির্দিষ্ট কোনো উপায়ে কিছু বলতে বা করতে পরিচালিত করে। একজন ব্যক্তি হয়তো কোমল, বিবেচক, মৃদুশীল, উদার অথবা ক্ষমাবান হতে পারেন। বাইবেল ‘মৃদু ও প্রশান্ত আত্মা’ এবং ‘শীতলাত্মার’ প্রশংসা করে। (১ পিতর ৩:৪; হিতো. ১৭:২৭) অন্যদিকে, আরেকজন ব্যক্তি হয়তো বিদ্রূপকারী ও বস্তুবাদী, সহজেই অসন্তুষ্ট হয়ে যান এমন অথবা স্বাধীনচেতা মনোভাবাপন্ন হতে পারেন। এর চেয়ে খারাপ বিষয় হল, এমন ব্যক্তিরাও রয়েছে, যারা অশুচি, অবাধ্য অথবা এমনকী বিদ্রোহী মনোভাব দেখিয়ে থাকে।

তাই, পৌল যখন এই ধরনের অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন যে, “প্রভু তোমার আত্মার সহবর্ত্তী হউন,” তখন তিনি তার ভাইদেরকে এমন এক মনোভাব দেখানোর জন্য উৎসাহিত করছিলেন, যা ঈশ্বরের ইচ্ছার এবং খ্রিস্টতুল্য মনুষ্য বা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (২ তীম. ৪:২২; পড়ুন, কলসীয় ৩:৯-১২.) বর্তমানে, নিজেদেরকে আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি কোন ধরনের মনোভাব দেখাই? কীভাবে আমি আরও পূর্ণরূপে ঈশ্বরকে খুশি করে এমন মনোভাব প্রকাশ করতে পারি? মণ্ডলীর সার্বিক ইতিবাচক মনোভাব দেখানোর ক্ষেত্রে আমি কি আরও উন্নতি করতে পারি?’ উদাহরণস্বরূপ, সূর্যমুখী ফুলের বাগানে প্রতিটা ফুলই এর দীপ্তিময় সৌন্দর্যের মাধ্যমে বাগানের সার্বিক সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। আমরা কি এইরকম একটা ‘ফুলের’ মতো, যা মণ্ডলীর সার্বিক সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে? নিশ্চিতভাবেই, আমাদের এইরকম হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। আসুন এখন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, ঈশ্বরকে খুশি করে এমন মনোভাব প্রকাশ করার জন্য আমরা কী করতে পারি।

জগতের মনোভাব এড়িয়ে চলুন

৪. ‘জগতের আত্মা’ বা মনোভাব কী?

শাস্ত্র আমাদের বলে: “আমরা জগতের আত্মাকে পাই নাই, বরং ঈশ্বর হইতে নির্গত আত্মাকে পাইয়াছি।” (১ করি. ২:১২) ‘জগতের আত্মা’ বা মনোভাব কী? এটা ইফিষীয় ২:২ পদে উল্লেখিত সেই একই আত্মা, যেখানে বলা আছে: “সেই সকলেতে তোমরা পূর্ব্বে চলিতে, এই জগতের যুগ অনুসারে, আকাশের [“বাতাসের,” NW] কর্ত্তৃত্বাধিপতির অনুসারে, যে আত্মা এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে, সেই আত্মার অধিপতির অনুসারে চলিতে।” এই ‘বাতাস’ হল জগতের আত্মা অথবা মনোভাব আর এটা আক্ষরিক বাতাসের মতো আমাদের চারপাশে রয়েছে। এটা সমস্ত জায়গায় রয়েছে। এটা প্রায়ই বর্তমানের অনেক লোকের এইরকম মনোভাবের মধ্যে প্রকাশ পায় যে, আমার যা খুশি আমি তা-ই করব অথবা যেভাবেই হোক নিজের অধিকার নিজে আদায় করে নিন। তারাই হচ্ছে শয়তানের জগতের ‘অবাধ্যতার সন্তানগণ।’

৫. ইস্রায়েলের কেউ কেউ কোন মন্দ মনোভাব দেখিয়েছিল?

এই ধরনের মনোভাব নতুন নয়। মোশির সময়ে কোরহ সেই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, যারা ইস্রায়েলের মণ্ডলীতে কর্তৃত্বে ছিল। তিনি বিশেষত হারোণ ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, যাদের যাজক হিসেবে সেবা করার বিশেষ সুযোগ ছিল। হতে পারে যে, তিনি তাদের বিভিন্ন অসিদ্ধতা লক্ষ করেছিলেন। কিংবা তিনি হয়তো এই বিষয়টা নিয়ে তর্ক করেছিলেন যে, মোশি স্বজনপ্রীতি দেখাচ্ছেন—তার আত্মীয়দের বিশেষ সুযোগ দিচ্ছেন। যা-ই হোক না কেন, এটা স্পষ্ট যে, কোরহ বিষয়গুলোকে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শুরু করেছিলেন এবং যিহোবার দ্বারা নিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, তাদেরকে অসম্মানজনকভাবে এই কথা বলেছিলেন: “তোমরা বড়ই অভিমানী; . . . তবে তোমরা কেন সদাপ্রভুর সমাজের উপরে আপনাদিগকে উন্নত করিতেছ?” (গণনা. ১৬:৩) একইভাবে, দাথন এবং অবীরাম মোশির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল, তাকে বলেছিল যে, তিনি ‘তাহাদের উপরে সর্ব্বতোভাবে কর্ত্তৃত্বও করিবার’ চেষ্টা করছেন। তাদেরকে যখন মোশির সামনে আসতে বলা হয়েছিল, তখন তারা উদ্ধতভাবে বলেছিল: “আমরা যাইব না।” (গণনা. ১৬:১২-১৪) স্পষ্টতই, যিহোবা তাদের মনোভাব দেখে খুশি ছিলেন না। তিনি সমস্ত বিদ্রোহীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।—গণনা. ১৬:২৮-৩৫.

৬. প্রথম শতাব্দীর কিছু ব্যক্তি কীভাবে দেখিয়েছিল যে, তাদের এক মন্দ মনোভাব রয়েছে আর এর কারণ হয়তো কী ছিল?

প্রথম শতাব্দীর কিছু ব্যক্তিও ‘প্রভুত্ব অগ্রাহ্য করিয়া’ সেই ব্যক্তিদের সমালোচনা করেছিল, যাদেরকে মণ্ডলীতে আস্থা সহকারে কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছিল। (যিহূদা ৮) এই ব্যক্তিরা হয়তো নিজেদের বিশেষ সুযোগ নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল এবং সেইসমস্ত নিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্যদের প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিল, যারা মনোযোগের সঙ্গে ঈশ্বরদত্ত দায়িত্ব পালন করছিল।—পড়ুন, ৩ যোহন ৯, ১০.

৭. কোন দিক দিয়ে বর্তমানে মণ্ডলীতে সতর্ক থাকার প্রয়োজন হতে পারে?

স্পষ্টতই, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে এইরকম মনোভাবের কোনো স্থান নেই। এজন্য এই বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গ সিদ্ধ নয়, যেমনটা তারা মোশির দিনে এবং প্রেরিত যোহনের সময়েও ছিল না। প্রাচীনরা হয়তো এমন ভুল করতে পারে, যেগুলো ব্যক্তিগতভাবে আমাদের প্রভাবিত করে। যদি এইরকমটা হয়ে থাকে, তাহলে মণ্ডলীর যেকোনো সদস্যেরই জগতের আত্মা অনুসারে প্রতিক্রিয়া দেখানো, জোরালোভাবে “ন্যায়বিচার” দাবি করা অথবা “এই ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হোক” বলে মনে করা কতই না অনুপযুক্ত হবে! যিহোবা হয়তো ছোটোখাটো ভুলগুলোকে উপেক্ষা করতে চাইবেন। আমরাও কি একইরকম করতে পারি না? মণ্ডলীতে গুরুতর অন্যায় কাজে রত আছে এমন কিছু ব্যক্তি প্রাচীনদের মধ্যে ত্রুটি আছে বলে মনে করে সেই প্রাচীনদের নিয়ে গঠিত কমিটির কাছে আসতে প্রত্যাখ্যান করেছে, যাদেরকে তাকে সাহায্য করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। এই ব্যক্তিকে সেই রোগীর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যিনি ডাক্তারের কিছু বিষয় ভালো লাগে না বলে কোনো একটা চিকিৎসা থেকে উপকার লাভ করতে ব্যর্থ হন।

৮. কোন শাস্ত্রপদগুলো আমাদেরকে সেই ব্যক্তিদের প্রতি এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে, যারা মণ্ডলীতে নেতৃত্ব দিচ্ছে?

এই ধরনের মনোভাব এড়িয়ে চলার জন্য আমরা মনে রাখতে পারি যে, বাইবেলে যিশুকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যেন “তাঁহার দক্ষিণ হস্তে সপ্ত তারা” রয়েছে। “তারা” অভিষিক্ত অধ্যক্ষদের এবং ব্যাপক অর্থে মণ্ডলীর সমস্ত অধ্যক্ষকে চিত্রিত করে। যিশু উপযুক্ত বলে মনে করেন এমন যেকোনো উপায়ে তাঁর হস্তের ‘তারাদের’ পরিচালিত করতে পারেন। (প্রকা. ১:১৬, ২০) তাই, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে প্রাচীনবর্গের ওপর যিশুর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাদের মধ্যে কারো যদি সত্যি সত্যিই সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তাহলে যাঁর “চক্ষু অগ্নিশিখার তুল্য,” তিনি লক্ষ রাখবেন যেন তা তাঁর নিজ সময়ে এবং উপায়ে করা হয়। (প্রকা. ১:১৪, ১৫) সেই সময়ের আগে পর্যন্ত, আমরা পবিত্র আত্মা দ্বারা নিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি সঠিক সম্মান বজায় রাখি, কারণ পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও, কারণ নিকাশ দিতে হইবে বলিয়া তাঁহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য্য করিতেছেন,—যেন তাঁহারা আনন্দপূর্ব্বক সেই কার্য্য করেন, আর্ত্তস্বরপূর্ব্বক না করেন; কেননা ইহা তোমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়।”—ইব্রীয় ১৩:১৭.

৯. (ক) একজন খ্রিস্টানকে যদি সংশোধন বা শাসন করা হয়, তাহলে তিনি হয়তো কোন পরীক্ষায় পড়তে পারেন? (খ) অনুযোগের প্রতি সাড়া দেওয়ার সবচেয়ে উত্তম উপায় কী?

একজন খ্রিস্টানের মনোভাব সেই সময়ও পরীক্ষিত হতে পারে, যখন তাকে সংশোধন করা হয় অথবা তার কাছ থেকে মণ্ডলীর বিশেষ সুযোগগুলো নিয়ে নেওয়া হয়। দৌরাত্ম্যপূর্ণ ভিডিও গেমস্‌ খেলার বিষয়ে একজন যুবক ভাইকে প্রাচীনরা কৌশলতার সঙ্গে পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হল, সে পরামর্শ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি এবং তাকে একজন পরিচারক দাসের পদ থেকে সরিয়ে দিতে হয়েছিল কারণ তার তখন আর শাস্ত্রীয় যোগ্যতাগুলো ছিল না। (গীত. ১১:৫; ১ তীম. ৩:৮-১০) এরপর, সেই ভাই সবাইকে বলে বেড়ায় যে, সে এর সঙ্গে একমত নয় আর তাই সে বার বার প্রাচীনদের সমালোচনা করে শাখা অফিসে চিঠি লিখতে থাকে ও এমনকী অন্যদেরকেও একই বিষয় করার জন্য প্ররোচিত করতে থাকে। কিন্তু, আমাদের কাজগুলোকে ন্যায্য বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় পুরো মণ্ডলীর শান্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলা কারো জন্যই উপকারজনক ফল নিয়ে আসে না। ভালো হয়, যদি আমরা অনুযোগকে এমন ভুলগুলো দেখিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের চোখকে খুলে দেওয়ার একটা উপায় হিসেবে দেখি, যেগুলো সম্বন্ধে আমরা অবগত নই এবং এরপর শান্তভাবে সংশোধন মেনে নিই।—পড়ুন, বিলাপ ৩:২৮, ২৯.

১০. (ক) যাকোব ৩:১৬-১৮ পদ থেকে উত্তম মনোভাব এবং মন্দ মনোভাব সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি, তা ব্যাখ্যা করুন। (খ) ‘উপর হইতে আসা জ্ঞান’ প্রদর্শন করার মাধ্যমে কোন ফল আসে?

১০ যাকোব ৩:১৬-১৮ পদ হল এক উত্তম নির্দেশিকা, যেটি দেখায় যে, মণ্ডলীতে কোন ধরনের মনোভাব প্রদর্শন করা অনুপযুক্ত এবং কোনটা উপযুক্ত। এখানে বলা আছে: “যেখানে ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা, সেইখানে অস্থিরতা ও সমুদয় দুষ্কর্ম্ম থাকে। কিন্তু যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত, সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ, ভেদাভেদবিহীন ও নিষ্কপট। আর যাহারা শান্তি-আচরণ করে, তাহাদের জন্য শান্তিতে ধার্ম্মিকতা-ফলের বীজ বপন করা যায়।” আমরা যখন ‘উপর হইতে আসা জ্ঞানের’ সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি, তখন আমাদের ঈশ্বরীয় গুণাবলি ভাইবোনদের মধ্যে এক উত্তম মনোভাব বজায় রাখতে সমর্থ করবে।

মণ্ডলীতে এক সম্মানজনক মনোভাব প্রকাশ করুন

১১. (ক) এক সঠিক মনোভাব বজায় রাখা আমাদের কী এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে? (খ) দায়ূদের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১১ আমাদের এই বিষয়টা মনে রাখা উচিত যে, ‘ঈশ্বরের মণ্ডলীকে পালন করিবার’ জন্য যিহোবা প্রাচীনদেরকে নিযুক্ত করেছেন। (প্রেরিত ২০:২৮; ১ পিতর ৫:২) তাই, আমরা উপলব্ধি করি যে, আমাদের প্রাচীন হিসেবে সেবা করার বিশেষ সুযোগ থাকুক বা না-ই থাকুক, ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখানো বিজ্ঞতার কাজ। এক উপযুক্ত মনোভাব বজায় রাখা, আমাদেরকে পদমর্যাদা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার বিষয়টা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করতে পারে। ইস্রায়েলের রাজা শৌল যখন থেকে মনে করেছিলেন যে, দায়ূদ তার রাজপদের জন্য হুমকি স্বরূপ, তখন থেকে শৌল “দায়ূদের ওপর দৃষ্টি রাখিলেন।” (১ শমূ. ১৮:৯) রাজা এক মন্দ মনোভাব গড়ে তুলেছিলেন এবং এমনকী দায়ূদকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। রাজা শৌলের মতো পদমর্যাদা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার পরিবর্তে, দায়ূদের মতো হওয়া আরও উত্তম। সমস্ত অবিচার সত্ত্বেও, সেই যুবক ঈশ্বরের অভিষিক্ত বা নিযুক্ত কর্তৃত্বের প্রতি সম্মান বজায় রেখেছিল।—পড়ুন, ১ শমূয়েল ২৬:২৩.

১২. কোন বিষয়টা মণ্ডলীর একতায় অবদান রাখবে?

১২ দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য মণ্ডলীর মধ্যে—এমনকী অধ্যক্ষদের মধ্যে—বিরক্তির এক উৎস হতে পারে। এক্ষেত্রে বাইবেলের এই পরামর্শ সাহায্য করতে পারে: “সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর” এবং “আপনাদের জ্ঞানে বুদ্ধিমান্‌ হইও না।” (রোমীয় ১২:১০, ১৬) আমরাই ঠিক, একগুঁয়েভাবে এই কথা বলার পরিবর্তে, আমাদের এই বিষয়টা স্বীকার করা উচিত যে, একটা পরিস্থিতিকে একের অধিক গ্রহণযোগ্য উপায়ে দেখা যায়। আমরা যদি অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা মণ্ডলীর একতায় অবদান রাখতে পারব।—ফিলি. ৪:৫.

১৩. নিজ নিজ মতামতকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত এবং বাইবেলের কোন উদাহরণ এই বিষয়টা তুলে ধরে?

১৩ এর অর্থ কি এই যে, মণ্ডলীতে যদি আমরা এমন কিছু দেখতে পাই, যেটা রদবদল করার প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি, তাহলে সেই সম্বন্ধে মন্তব্য করা ভুল? না। প্রথম শতাব্দীতে, এমন একটা বিষয় উত্থাপিত হয়, যেটা নিয়ে অনেক বাদানুবাদ হয়েছিল। ভাইয়েরা “স্থির করিলেন, সেই তর্কের মীমাংসার জন্য পৌল ও বার্ণবা, এবং তাঁহাদের আরও কয়েক জন, যিরূশালেমে প্রেরিতগণের ও প্রাচীনবর্গের নিকটে যাইবেন।” (প্রেরিত ১৫:২) কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রত্যেক ভাইয়ের বিষয়টা সম্বন্ধে আলাদা আলাদা মতামত ছিল এবং কীভাবে তা মীমাংসা করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে আলাদা আলাদা ধারণা ছিল। কিন্তু, প্রত্যেকে তাদের চিন্তা প্রকাশ করার এবং আত্মার দ্বারা নির্দেশিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর, ভাইয়েরা আর নিজ নিজ মতামত নিয়ে কথা বলেনি। এই সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে মণ্ডলীতে চিঠি পৌঁছানোর পর, ‘তাহারা সেই আশ্বাসের কথায় আনন্দিত হইয়াছিল’ এবং ‘বিশ্বাসে দৃঢ়ীকৃত হইয়াছিল।’ (প্রেরিত ১৫:৩১; ১৬:৪, ৫) একইভাবে, বর্তমানে কোনো একটা বিষয় দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইদের মনোযোগে নিয়ে আসার পর, সেটা তাদের প্রার্থনাপূর্ণ বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত।

ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক উত্তম মনোভাব দেখান

১৪. ব্যক্তিগতভাবে আমরা কীভাবে এক উত্তম মনোভাব দেখাতে পারি?

১৪ ব্যক্তিগতভাবে আমাদের এক উত্তম মনোভাব দেখানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। অন্যেরা যখন আমাদের অসন্তুষ্ট করে, তখন আমরা যদি ক্ষমার মনোভাব প্রদর্শন করি, তাহলে আমরা প্রত্যেকে অনেক উত্তম কিছু সম্পাদন করতে পারি। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বলে: “পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু [ঈশ্বর] যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর।” (কল. ৩:১৩) “যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে” অভিব্যক্তিটি দেখায় যে, অন্যদের প্রতি বিরক্ত হওয়ার উপযুক্ত কারণ থাকতে পারে। কিন্তু, তাদের ভুলগুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার এবং মণ্ডলীর শান্তিকে বিঘ্নিত করার পরিবর্তে, আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করার ও সেইসঙ্গে স্বচ্ছন্দে ক্ষমা করে দেওয়ার চেষ্টা করতে এবং একত্রে পরিচর্যা চালিয়ে যেতে পারি।

১৫. (ক) ক্ষমার বিষয়ে ইয়োবের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (খ) কীভাবে প্রার্থনা আমাদেরকে এক সন্তোষজনক মনোভাব দেখাতে সাহায্য করতে পারে?

১৫ ক্ষমার বিষয়ে আমরা ইয়োবের উদাহরণ থেকে শিখতে পারি। তার তিন জন তথাকথিত সান্ত্বনাকারী অনেক নির্দয় কথাবার্তার মাধ্যমে তাকে আঘাত দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও, ইয়োব তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কীভাবে? ‘ইয়োব আপন বন্ধুগণের নিমিত্ত প্রার্থনা করিয়াছিলেন।’ (ইয়োব ১৬:২; ৪২:১০) অন্যদের জন্য প্রার্থনা করা সেই ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের মনোভাবকে পালটে দিতে পারে। সমস্ত খ্রিস্টান ভাইবোনের জন্য প্রার্থনা করা আমাদেরকে খ্রিস্টতুল্য মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করে। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) আমাদের ভাইবোনদের জন্য প্রার্থনা করা ছাড়াও, আমাদের পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করা উচিত। (লূক ১১:১৩) ঈশ্বরের আত্মা আমাদেরকে অন্যদের সঙ্গে আচরণ করার সময় সত্যিকারের খ্রিস্টতুল্য গুণাবলি প্রদর্শন করতে সাহায্য করবে।—পড়ুন, গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

ঈশ্বরের সংগঠনে এক গঠনমূলক মনোভাব দেখানোর ক্ষেত্রে অবদান রাখুন

১৬, ১৭. ‘আমাদের আত্মা’ বা মনোভাব সম্বন্ধে ব্যক্তিগতভাবে আপনি কি করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

১৬ মণ্ডলীর প্রত্যেক সদস্য যদি মণ্ডলীর গঠনমূলক মনোভাবে অবদান রাখাকে নিজের লক্ষ্য করে তোলে, তাহলে তা কতই না চমৎকার ফল নিয়ে আসতে পারে! এই বিষয়গুলো বিবেচনা করার পর, আমরা হয়তো ব্যক্তিগতভাবে এক ইতিবাচক মনোভাব দেখানোর ক্ষেত্রে উন্নতি করার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারি। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে নিজেদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে পরীক্ষা করে দেখার ব্যাপারে আমাদের ইতস্তত করা উচিত নয়। (ইব্রীয় ৪:১২) পৌল, যিনি মণ্ডলীতে তার কাজ নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত ছিলেন, তিনি বলেছিলেন: “আমি আমার নিজের বিরুদ্ধে কিছু জানি না, তথাপি ইহাতে আমি নির্দ্দোষ বলিয়া প্রতিপন্ন হইতেছি না; কিন্তু যিনি আমার বিচার করেন, তিনি প্রভু [ঈশ্বর]।”—১ করি. ৪:৪.

১৭ আমরা যদি ওপর থেকে আসা জ্ঞানের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার চেষ্টা করি এবং নিজেদের অথবা নিজেদের পদমর্যাদাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব না দিই, তাহলে আমরা মণ্ডলীতে এক গঠনমূলক মনোভাবে অবদান রাখতে পারব। ক্ষমার মনোভাব রাখার এবং অন্যদের সম্বন্ধে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে আমরা সহউপাসকদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক উপভোগ করতে পারব। (ফিলি. ৪:৮) আমরা যদি এই বিষয়গুলো করি, তাহলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা এবং যিশু ‘আমাদের আত্মা’ বা মনোভাব দেখে সন্তুষ্ট হবেন।—ফিলী. ২৫.

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে যিশুর ভূমিকা নিয়ে ধ্যান করা পরামর্শের প্রতি আপনি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, সেটার ওপর প্রভাব ফেলে?