সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশু নম্রতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন

যিশু নম্রতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন

যিশু নম্রতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন

“আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম, যেন তোমাদের প্রতি আমি যেমন করিয়াছি, তোমরাও তদ্রূপ কর।”—যোহন ১৩:১৫.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কীভাবে ঈশ্বরের পুত্র তাঁর মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের সময় নম্রতা প্রকাশ করেছিলেন?

একজন মানুষ হিসেবে কীভাবে যিশু নম্রতা প্রদর্শন করেছিলেন?

যিশুর নম্র জীবনধারা থেকে কোন উপকারগুলো লাভ করা গিয়েছে?

১, ২. যিশু তাঁর পার্থিব জীবনের শেষরাতে তাঁর প্রেরিতদেরকে উদাহরণের সাহায্যে কোন শিক্ষা প্রদান করেছিলেন?

 এটা হল যিশুর পার্থিব জীবনের শেষরাত আর তিনি যিরূশালেমের একটা বাড়ির ওপরের কুঠুরিতে তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। সান্ধ্যভোজের সময় যিশু উঠে দাঁড়ান এবং তাঁর ওপরের বস্ত্র খুলে রাখেন। তিনি একটা গামছা নিয়ে কটিবন্ধন করেন। এরপর তিনি একটা পাত্রে জল ঢালেন এবং শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিতে শুরু করেন আর গামছা দিয়ে মুছিয়ে দেন। তার পর তিনি তাঁর ওপরের বস্ত্র পরিধান করেন। কেন যিশু এই নম্র কাজ করেছিলেন?—যোহন ১৩:৩-৫.

স্বয়ং যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি তোমাদের প্রতি কি করিলাম, জান? . . . আমি প্রভু ও গুরু হইয়া যখন তোমাদের পা ধুইয়া দিলাম, তখন তোমাদেরও পরস্পরের পা ধোয়ান উচিত? কেননা আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম, যেন তোমাদের প্রতি আমি যেমন করিয়াছি, তোমরাও তদ্রূপ কর।” (যোহন ১৩:১২-১৫) এইরকম এক নীচু কাজ করার জন্য ইচ্ছুক মনোভাব দেখানোর মাধ্যমে যিশু তাঁর প্রেরিতদেরকে বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে এমন একটা শিক্ষা প্রদান করেছিলেন, যা তাদের মনে গভীরভাবে গেঁথে যাবে এবং ভবিষ্যতে নম্র হওয়ার জন্য তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করবে।

৩. (ক) কীভাবে যিশু দু-বার নম্রতার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন? (খ) এই প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

যিশু তাঁর প্রেরিতদের পা ধুইয়ে দেওয়ার সময়ই যে প্রথম বার নম্রতার মূল্য সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন, এমন নয়। এর আগে একবার যখন তাঁর কয়েক জন প্রেরিত প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব দেখিয়েছিল, তখন তিনি একটি শিশুকে পাশে বসিয়ে তাদেরকে বলেছিলেন: “যে কেহ আমার নামে এই শিশুটীকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; এবং যে কেহ আমাকে গ্রহণ করে, সে তাঁহাকেই গ্রহণ করে, যিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন; কারণ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র, সেই মহান্‌।” (লূক ৯:৪৬-৪৮) ফরীশীরা যে প্রাধান্য লাভ করতে চাইত, তা জেনে যিশু পরে তাঁর পরিচর্যার সময় বলেছিলেন: “যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে, আর যে কেহ আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।” (লূক ১৪:১১) স্পষ্টতই, যিশু চেয়েছিলেন যেন তাঁর অনুসারীরা নম্র হয় এবং গর্ব ও উদ্ধত মনোভাব না দেখায়। তাঁকে অনুকরণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসুন আমরা মনোযোগের সঙ্গে তাঁর নম্রতার উদাহরণ পরীক্ষা করে দেখি। এ ছাড়া, আমরা এও দেখব যে, কীভাবে এই গুণ কেবল যে-ব্যক্তি তা প্রদর্শন করেন, তাকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অন্যদেরও উপকৃত করতে পারে।

‘আমি পরাঙ্মুখ হই নাই’

৪. কীভাবে ঈশ্বরের একজাত পুত্র মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের সময় নম্রতা প্রদর্শন করেছিলেন?

ঈশ্বরের একজাত পুত্র এমনকী পৃথিবীতে আসার আগেও নম্রতা দেখিয়েছিলেন। মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের সময় যিশু তাঁর স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে অগণিত বছর কাটিয়েছিলেন। বাইবেলের যিশাইয় বইটি এই কথাগুলো বলার দ্বারা পিতার সঙ্গে পুত্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সম্বন্ধে মন্তব্য করে: “প্রভু সদাপ্রভু আমাকে শিক্ষাগ্রাহীদের জিহ্বা দিয়াছেন, যেন আমি বুঝিতে পারি, কিরূপে ক্লান্ত লোককে বাক্য দ্বারা সুস্থির করিতে হয়; তিনি প্রভাতে প্রভাতে জাগরিত করেন, আমার কর্ণ জাগরিত করেন, যেন আমি শিক্ষাগ্রাহীদের ন্যায় শুনিতে পাই। প্রভু সদাপ্রভু আমার কর্ণ খুলিয়াছেন, এবং আমি বিরুদ্ধাচারী হই নাই, পরাঙ্মুখ হই নাই।” (যিশা. ৫০:৪, ৫) ঈশ্বরের পুত্র এক নম্র মনোভাব প্রদর্শন করেছিলেন এবং যিহোবা তাঁকে যে-শিক্ষা প্রদান করেছিলেন, তাতে গভীর মনোযোগ দিয়েছিলেন। তিনি সত্য ঈশ্বরের কাছ থেকে শিখতে উৎসুক এবং ইচ্ছুক ছিলেন। পাপী মানবজাতির প্রতি করুণা দেখানোর দ্বারা যিহোবা যে-নম্রতার উদাহরণ দেখিয়েছেন, তা যিশু নিশ্চয়ই কত গভীরভাবেই না পর্যবেক্ষণ করেছিলেন!

৫. প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েলের ভূমিকায় কীভাবে যিশু দিয়াবলের সঙ্গে আচরণ করার সময় নম্রতা এবং বিনয়ী মনোভাবের এক উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

স্বর্গের প্রত্যেক প্রাণীরই ঈশ্বরের একজাত পুত্রের মতো একই মনোভাব ছিল না। একজন স্বর্গদূত, যে শয়তান দিয়াবলে পরিণত হয়েছিল, সে যিহোবার কাছ থেকে শিখতে চাওয়ার পরিবর্তে নম্রতার বিপরীত বৈশিষ্ট্যগুলোর—আত্মগরিমা ও গর্বের—দ্বারা নিজেকে প্রভাবিত হতে দিয়েছিল এবং যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। অন্যদিকে, যিশু নিজ পদমর্যাদা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন না অথবা তিনি তাঁর কর্তৃত্বের অপব্যবহারও করতে চাননি। প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল হিসেবে যিশু সেই সময় তাঁর কর্তৃত্বের সীমা ছাড়িয়ে যাননি, যখন “মোশির দেহের বিষয়ে দিয়াবলের সহিত” তাঁর “বাদানুবাদ” হয়েছিল। এর পরিবর্তে, ঈশ্বরের পুত্র নম্রতা এবং বিনয়ী মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যেন নিখিলবিশ্বের সর্বোচ্চ বিচারক যিহোবা নিজ উপায়ে এবং নিরূপিত সময়ে বিষয়গুলো মীমাংসা করেন।—পড়ুন, যিহূদা ৯.

৬. মশীহ হিসেবে সেবা করার কার্যভার গ্রহণ করার মাধ্যমে কীভাবে যিশু নম্রতা প্রকাশ করেছিলেন?

মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বের সময় যিশু যে-বিষয়গুলো শিখেছিলেন, নিঃসন্দেহে সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো, যেগুলো মশীহ হিসেবে পৃথিবীতে তাঁর জীবন সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে জানায়। তাই, তিনি হয়তো আগে থেকেই জানতেন যে, তাঁর জন্য সামনে বিভিন্ন দুঃখজনক ঘটনা অপেক্ষা করছে। তা সত্ত্বেও, যিশু পৃথিবীতে থাকার কার্যভার গ্রহণ করেছিলেন এবং প্রতিজ্ঞাত মশীহ হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। কেন? ঈশ্বরের একজাত পুত্রের নম্রতা সম্বন্ধে তুলে ধরে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন।”—ফিলি. ২:৬, ৭.

একজন মানুষ হিসেবে তিনি “আপনাকে অবনত করিলেন”

৭, ৮. ছোটোবেলায় এবং তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে যিশু কোন কোন উপায়ে নম্রতা দেখিয়েছিলেন?

“[যিশু] আকার প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া,” পৌল লিখেছিলেন, “আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় [“যাতনাদণ্ডে,” NW] মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন।” (ফিলি. ২:৮) ছোটোবেলা থেকেই যিশু আমাদের জন্য নম্রতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যদিও, তিনি অসিদ্ধ বাবা-মায়ের—যোষেফ এবং মরিয়মের—কাছে মানুষ হয়েছিলেন, তবুও যিশু নম্রভাবে ‘তাঁহাদের বশীভূত থাকিয়াছিলেন।’ (লূক ২:৫১) সেইসমস্ত অল্পবয়সিদের জন্য এটা কতই না চমৎকার এক উদাহরণ, যারা তাদের বাবা-মায়ের প্রতি স্বেচ্ছায় বশীভূত থাকার কারণে ঈশ্বরের কাছ থেকে আশীর্বাদ লাভ করবে!

একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে যিশু নিজের ইচ্ছাকে নয় বরং যিহোবার ইচ্ছা পালন করাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নম্রতা দেখিয়েছিলেন। (যোহন ৪:৩৪) পরিচর্যার সময়ে যিশু খ্রিস্ট ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম ব্যবহার করেছিলেন এবং যিহোবার গুণ ও মানবজাতির জন্য তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান অর্জন করার ব্যাপারে আন্তরিক ব্যক্তিদেরকে সাহায্য করেছিলেন। এ ছাড়া, যিশু যিহোবা সম্বন্ধে যা শিক্ষা দিতেন, সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতেন। উদাহরণস্বরূপ, আদর্শ প্রার্থনায় যিশু প্রথমে যে-বিষয়টা উল্লেখ করেছিলেন, সেটা হল: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” (মথি ৬:৯) এভাবে, যিশু যিহোবার নাম পবিত্রীকৃত করাকে প্রধান চিন্তার বিষয় করে তোলার জন্য তাঁর অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি নিজেও তা করেছিলেন। তাই, তাঁর পার্থিব জীবনের শেষের দিকে, যিশু যিহোবার কাছে প্রার্থনায় বলতে পেরেছিলেন: “আমি ইহাদিগকে [প্রেরিতদিগকে] তোমার নাম জানাইয়াছি, ও জানাইব।” (যোহন ১৭:২৬) সর্বোপরি, পরিচর্যার সময় যিশু পৃথিবীতে যা-কিছু সম্পাদন করেছিলেন, সেগুলোর জন্য তিনি যিহোবাকে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন।—যোহন ৫:১৯.

৯. মশীহ সম্বন্ধে সখরিয় কোন ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন এবং কীভাবে তা যিশুর মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয়েছিল?

মশীহ সম্বন্ধে ভাববাদী সখরিয় ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলকভাবে লিখেছিলেন: “হে সিয়োন-কন্যা অতিশয় উল্লাস কর; হে যিরূশালেম-কন্যা, জয়ধ্বনি কর। দেখ, তোমার রাজা তোমার কাছে আসিতেছেন; তিনি ধর্ম্মময় ও পরিত্রাণযুক্ত, তিনি নম্র ও গর্দ্দভে উপবিষ্ট, গর্দ্দভীর শাবকে উপবিষ্ট।” (সখ. ৯:৯) এটা সেই সময়ে পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন যিশু ৩৩ খ্রিস্টাব্দে নিস্তারপর্বের সময় যিরূশালেমে প্রবেশ করেছিলেন। লোকেরা পথের ওপর তাদের বস্ত্র পেতে দিয়েছিল ও সেইসঙ্গে গাছের ডালপালা বিছিয়ে দিয়েছিল। বস্তুতপক্ষে, তাঁর প্রবেশের সময় নগরময় হুলস্থুল পড়ে গিয়েছিল। এমনকী লোকেরা যখন যিশুকে রাজা হিসেবে জয়ধ্বনি করেছিল, তখনও তিনি নম্র ছিলেন।—মথি ২১:৪-১১.

১০. যিশু যে মৃত্যু পর্যন্ত স্বেচ্ছায় বাধ্য ছিলেন, সেটার দ্বারা কী প্রমাণিত হয়েছিল?

১০ পৃথিবীতে যিশু খ্রিস্টের নম্রতা এবং বাধ্যতার জীবন যাতনাদণ্ডে তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। এভাবে তিনি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ দিয়েছিলেন যে, মানুষেরা এমনকী চরম পরীক্ষার মধ্যেও যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পারে। এ ছাড়া, যিশু দেখিয়েছিলেন যে, মানুষেরা স্বার্থপর কারণগুলোর জন্য যিহোবাকে সেবা করে বলে শয়তান যে-দাবি করেছিল, সেটা ভুল। (ইয়োব ১:৯-১১; ২:৪) অধিকন্তু, খ্রিস্টের নিখুঁত নীতিনিষ্ঠার নথি, যিহোবার সর্বজনীন সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা ও ধার্মিকতাকে উচ্চীকৃত করেছিল। যিহোবা যখন তাঁর নম্র পুত্রের দৃঢ় আনুগত্য লক্ষ করছিলেন, তখন নিশ্চিতভাবেই তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন।—পড়ুন, হিতোপদেশ ২৭:১১.

১১. যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্য বিশ্বাসী মানবজাতির জন্য কোন কোন আশা খুলে দিয়েছিল?

১১ যাতনাদণ্ডে মৃত্যুবরণ করার মাধ্যমে যিশু মানবজাতির জন্য মুক্তির মূল্যও প্রদান করেছিলেন। (মথি ২০:২৮) এটা পাপী মানবজাতিকে চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিল ও সেইসঙ্গে ধার্মিকতার চাহিদাগুলো পূরণ করেছিল। “ধার্ম্মিকতার একটী কার্য্য দ্বারা সকল মনুষ্যের কাছে জীবনদায়ক ধার্ম্মিকগণনা পর্য্যন্ত ফল উপস্থিত হইল,” পৌল লিখেছিলেন। (রোমীয় ৫:১৮) যিশুর মৃত্যু আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের জন্য স্বর্গে অমর জীবনের এবং ‘আরও মেষের’ জন্য পৃথিবীতে অনন্তজীবনের প্রত্যাশা খুলে দিয়েছিল।—যোহন ১০:১৬; রোমীয় ৮:১৬, ১৭.

আমি “নম্রচিত্ত”

১২. অসিদ্ধ মানুষের সঙ্গে আচরণ করার সময় যিশু কীভাবে মৃদুতা এবং নম্রতা দেখিয়েছিলেন?

১২ যিশু “পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত” সমস্ত লোককে তাঁর কাছে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে।” (মথি ১১:২৮, ২৯) নম্রতা এবং মৃদুতার মতো গুণ যিশুকে অসিদ্ধ মানুষের সঙ্গে আচরণ করার সময় সদয় ও পক্ষপাতহীন মনোভাব দেখাতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি তাঁর শিষ্যদের কাছ থেকে কোনো কিছু আশা করার ব্যাপারে যুক্তিবাদী ছিলেন। যিশু তাদের প্রশংসা করেছিলেন এবং উৎসাহ দিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে মূল্যহীন বা অযোগ্য বলে মনে করতে পরিচালিত করেননি। নিশ্চিতভাবেই, যিশু রূঢ় অথবা উৎপীড়ক ছিলেন না। এর পরিবর্তে, তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার এবং তাঁর শিক্ষাগুলো পালন করার মাধ্যমে তারা সতেজ হবে কারণ তার জোয়াল সহজ ও ভার লঘু। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই এবং সমস্ত বয়সের লোকই তাঁর উপস্থিতিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করত।—মথি ১১:৩০.

১৩. কীভাবে যিশু দুর্দশাগ্রস্ত লোকেদের প্রতি সমবেদনা দেখিয়েছিলেন?

১৩ ইস্রায়েলের সাধারণ লোকেদের সঙ্গে মেলামেশার সময় যিশু তাদের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা দেখে সমবেদনা বোধ করেছিলেন এবং তাদের চাহিদাগুলোর প্রতি তিনি প্রেমের সঙ্গে মনোযোগ দিয়েছিলেন। যিরীহোর নিকটে বর্‌তীময় নামে একজন অন্ধ ভিক্ষুক এবং তার একজন অজ্ঞাতনামা অন্ধ সঙ্গীর সঙ্গে যিশুর দেখা হয়। তারা বার বার যিশুর কাছে সাহায্য চাইছিল কিন্তু জনতা তাদেরকে চুপ থাকার জন্য ধমক দিয়েছিল। কত সহজেই না সেই অন্ধ ব্যক্তিদের মিনতি উপেক্ষা করা যেত! এর পরিবর্তে, যিশু তাদেরকে তাঁর কাছে নিয়ে আসার জন্য বলেছিলেন এবং করুণাবিষ্ট হয়ে তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। হ্যাঁ, নম্রতা প্রদর্শন করার এবং নগণ্য পাপীদের প্রতি করুণা দেখানোর মাধ্যমে যিশু তাঁর পিতা যিহোবাকে অনুকরণ করেছিলেন।—মথি ২০:২৯-৩৪; মার্ক ১০:৪৬-৫২.

“যে কেহ আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে”

১৪. যিশুর নম্র জীবনধারা থেকে কোন উপকারগুলো লাভ করা গিয়েছে?

১৪ যিশু খ্রিস্টের নম্র জীবনধারা আনন্দের একটা কারণ ও সেইসঙ্গে খুবই উপকারী। যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রকে ঐশিক ইচ্ছার প্রতি নম্রভাবে বশীভূত হতে দেখে আনন্দিত হয়েছিলেন। প্রেরিতরা এবং শিষ্যরা যিশুর মৃদুতা এবং নম্রতার দ্বারা সতেজ হয়েছিল। তাঁর উদাহরণ, তাঁর শিক্ষা এবং তাঁর আন্তরিক প্রশংসা তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করার জন্য উদ্দীপিত করেছিল। সাধারণ লোকেরা যিশুর নম্রতা থেকে উপকৃত হয়েছিল কারণ তারা তাঁর কাছ থেকে সাহায্য, শিক্ষা এবং উৎসাহ লাভ করত। আসলে উদ্ধারযোগ্য মানবজাতি যিশুর মুক্তির মূল্য থেকে দীর্ঘস্থায়ী উপকারগুলো লাভ করবে।

১৫. কীভাবে যিশু নম্র হওয়ার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছিলেন?

১৫ যিশুর সম্বন্ধে কী বলা যায়? তাঁর নম্রতা কি তাঁকে উপকৃত করেছিল? হ্যাঁ, কারণ যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “যে কেহ আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।” (মথি ২৩:১২) এই কথাগুলো তাঁর নিজের ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। পৌল ব্যাখ্যা করেন: “ঈশ্বর [যিশুকে] অতিশয় উচ্চপদান্বিতও করিলেন, এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; যেন যীশুর নামে স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালনিবাসীদের ‘সমুদয় জানু পাতিত হয়, এবং সমুদয় জিহ্বা যেন স্বীকার করে’ যে, যীশু খ্রীষ্টই প্রভু, এইরূপে পিতা ঈশ্বর যেন মহিমান্বিত হন।” পৃথিবীতে যিশুর নম্র ও বিশ্বস্ত জীবনধারার জন্য যিহোবা ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে উচ্চপদান্বিত করেছিলেন, স্বর্গ এবং পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টির ওপর কর্তৃত্ব করতে দিয়েছিলেন।—ফিলি. ২:৯-১১.

যিশু ‘সত্যের ও নম্রতার পক্ষে বাহনে’ চড়বেন

১৬. কী দেখায় যে, ঈশ্বরের পুত্র সমস্ত কাজে ক্রমাগত নম্রতা দেখাবেন?

১৬ ঈশ্বরের পুত্র সমস্ত কাজে ক্রমাগত নম্রতা দেখাবেন। উচ্চপদান্বিত স্বর্গীয় অবস্থান থেকে যিশু কীভাবে তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন, সেই সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করে গীতরচক গেয়েছিলেন: “স্বীয় প্রতাপে কৃতকার্য্য হও, বাহনে চড়িয়া যাও, সত্যের ও ধার্ম্মিকতাযুক্ত নম্রতার পক্ষে।” (গীত. ৪৫:৪) আরমাগিদোনের সময় যিশু খ্রিস্ট সত্য ও ধার্মিকতা সহকারে নম্রতার পক্ষে বাহনে চড়বেন। আর তাঁর হাজার বছর রাজত্বের শেষে কী ঘটবে, যখন মশীহ রাজা ‘সমস্ত আধিপত্য এবং সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও পরাক্রম লোপ করিবেন’? তিনি কি নম্রতা প্রদর্শন করবেন? হ্যাঁ, কারণ তিনি “পিতা ঈশ্বরের হস্তে রাজ্য সমর্পণ” করবেন।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:২৪-২৮.

১৭, ১৮. (ক) যিহোবার দাসদের জন্য কেন যিশুর নম্রতার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ? (খ) পরের প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

১৭ আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা কি আমাদের আদর্শ যিশুর দ্বারা স্থাপিত দৃষ্টান্ত অনুসরণ করব এবং নম্রতা প্রকাশ করব? আরমাগিদোনের সময় রাজা যিশু খ্রিস্ট যখন বিচার নিয়ে আসবেন, তখন আমরা কী রক্ষা পাব? তিনি যে-বাহনে চড়েন, তা ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি কেবল সেই ব্যক্তিদেরই রক্ষা করবেন, যারা নম্র ও ধার্মিক। তাই, রক্ষা পাওয়ার জন্য নম্রতা গড়ে তোলা আমাদের জন্য অপরিহার্য। এ ছাড়া, যিশু খ্রিস্টের নম্র জীবনধারা যেমন তাঁর নিজের ও অন্যদের জন্য উপকার নিয়ে এসেছে, তেমনই আমরা যদি নম্রতা প্রদর্শন করি, তাহলে তা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের জন্য উপকার নিয়ে আসবে।

১৮ কী আমাদেরকে যিশুর নম্রতার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার জন্য সাহায্য করতে পারে? বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, কীভাবে আমরা হয়তো নম্র হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করতে পারি? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে বিবেচনা করা হবে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিশুর নম্রতার উদাহরণ কীভাবে আমাদের উপকৃত করতে পারে?

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর সমবেদনা উদাহরণযোগ্য ছিল