সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র, সেই মহান্‌।”—লূক ৯:৪৮.

আপনি কি উত্তরগুলো খুঁজে পেতে পারেন?

কী আমাদেরকে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

কোন কোন উপায়ে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তি “মহান্‌”?

কীভাবে আমরা বিবাহের মধ্যে, মণ্ডলীর মধ্যে এবং অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নম্রতা প্রকাশ করতে পারি?

১, ২. যিশু তাঁর প্রেরিতদের কোন উপদেশ দিয়েছিলেন এবং কেন তা দিয়েছিলেন?

 বছরটা ছিল ৩২ খ্রিস্টাব্দ। যিশু সেই সময় গালীল প্রদেশে ছিলেন, যখন সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তাঁর প্রেরিতরা, তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, তা নিয়ে তর্কবিতর্ক করছিল। সুসমাচার লেখক লূক মন্তব্য করেন: “তাঁহাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, এই তর্ক তাঁহাদের মধ্যে উপস্থিত হইল। তখন যীশু তাঁহাদের হৃদয়ের তর্ক জানিয়া একটী শিশুকে লইয়া আপনার পার্শ্বে দাঁড় করাইলেন, এবং তাঁহাদিগকে কহিলেন, যে কেহ আমার নামে এই শিশুটীকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; এবং যে কেহ আমাকে গ্রহণ করে, সে তাঁহাকেই গ্রহণ করে, যিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন; কারণ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র, সেই মহান্‌।” (লূক ৯:৪৬-৪৮) ধৈর্য দেখিয়ে তবে দৃঢ়তার সঙ্গে যিশু প্রেরিতদেরকে নম্রতার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন।

সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করার ব্যাপারে যিশুর উপদেশ কি প্রথম শতাব্দীর যিহুদিদের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল? নাকি এটা তাদের সাধারণ মনোভাবের বিপরীত ছিল? সেই সময়ের সামাজিক অবস্থা সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে থিওলজিক্যাল ডিকশনারি অভ্‌ নিউ টেস্টামেন্ট ব্যাখ্যা করে: “প্রতিটা ক্ষেত্রে সবসময়ই এই প্রশ্ন উত্থাপিত হতো যে, কে শ্রেষ্ঠ আর প্রত্যেকের কাছে তাদের নিজেদের প্রাপ্য সম্মান ছিল এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা নিয়ে সবসময় চিন্তা করা হতো।” যিশু তাঁর প্রেরিতদেরকে সাধারণ লোকেদের থেকে আলাদা হওয়ার জন্য উপদেশ দিচ্ছিলেন।

৩. (ক) সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করার অর্থ কী এবং কেন এইরকম আচরণ করা আমাদের পক্ষে কঠিন হতে পারে? (খ) সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

যে-গ্রিক শব্দটিকে ‘সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তি’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি এমন কাউকে নির্দেশ করে, যিনি বিনয়ী, নম্র, মৃদু, নগণ্য অথবা যার সামান্য সম্মান এবং প্রভাব রয়েছে। যিশু তাঁর প্রেরিতদের কাছে এই বিষয়টা স্পষ্ট করার জন্য একটি শিশুকে ব্যবহার করেছিলেন যে, তাদের নম্র ও বিনয়ী হওয়া উচিত। এই উপদেশ প্রথম শতাব্দীর মতো বর্তমানেও সত্য খ্রিস্টানদের বেলায় প্রযোজ্য। সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করাকে—অন্ততপক্ষে কিছু পরিস্থিতিতে—আমরা হয়তো কঠিন বলে মনে করতে পারি। গর্বের প্রতি মানুষের প্রবণতা হয়তো আমাদেরকে প্রাধান্য লাভ করার জন্য প্ররোচিত করতে পারে। আমরা যে-প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে বাস করি, তা এবং জগতের আত্মা হয়তো আমাদেরকে অহংকারী, তর্কপ্রবণ অথবা স্বার্থান্বেষী হওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। কী আমাদেরকে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে? কীভাবে ‘আমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র, সেই মহান্‌’? জীবনের কোন ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের নম্রতার মনোভাব প্রকাশ করার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত?

“আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ!”

৪, ৫. কোন বিষয়টা আমাদেরকে নম্রতা গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রচেষ্টা করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার একটা উপায় হল, আমাদের তুলনায় যিহোবার মহত্ত্ব নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা। আসলে, “তাঁহার বুদ্ধির অনুসন্ধান করা যায় না।” (যিশা. ৪০:২৮) যিহোবার মহিমার নির্দিষ্ট কিছু দিক সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ! তাঁহার বিচার সকল কেমন বোধাতীত! তাঁহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয়!” (রোমীয় ১১:৩৩) যদিও প্রায় ২,০০০ বছর আগে পৌল এই কথাগুলো লেখার পর, অনেক বিষয়ে মানবজাতির জ্ঞান প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু এই বিবৃতি এখনও সত্য। আমাদের যত জ্ঞানই থাকুক না কেন, এই বিষয়টা স্বীকার করে আমাদের নম্র হওয়া উচিত যে, যিহোবা, তাঁর কাজ ও তাঁর পথ সম্বন্ধে জানার কোনো সীমা নেই।

ঈশ্বরের পথ অনুসন্ধান করা যে আমাদের ক্ষমতার বাইরে, তা উপলব্ধি করা লেওকে * নিজেকে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তি হিসেবে দেখতে সাহায্য করেছিল। একজন যুবক হিসেবে লেও বিজ্ঞানের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলেন। ভৌত নিখিলবিশ্ব সম্বন্ধে যতটা সম্ভব জানার আকাঙ্ক্ষায় তিনি নভোপদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন এবং এক গুরুত্বপূর্ণ উপসংহারে পৌঁছেছিলেন। তিনি বলেন: “অধ্যয়নের মাধ্যমে আমি এই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে, কেবল সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মাধ্যমে মানুষের পক্ষে নিখিলবিশ্ব সম্বন্ধে পুরোপুরি বোঝা অসম্ভব। তাই, আমি আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করেছিলাম।” একসময় লেও জেলার সরকারি উকিল এবং পরে আদালতের একজন বিচারক হিসেবে কাজ করেন। পরিশেষে, তিনি এবং তার স্ত্রী যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন, সত্যকে নিজের করে নেন এবং ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত দাস হয়ে ওঠেন। এইরকম পটভূমি সত্ত্বেও, কোন বিষয়টা লেওকে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করতে সাহায্য করেছিল? তিনি নির্দ্বিধায় উত্তর দেন, “এই বিষয়টা উপলব্ধি করা যে, যিহোবা এবং নিখিলবিশ্ব সম্বন্ধে আমরা যত জ্ঞানই অর্জন করি না কেন, অনুসন্ধান করার মতো এখনও অনেক কিছু বাকি আছে।”

৬, ৭. (ক) যিহোবা নম্রতার কোন বিস্ময়কর উদাহরণ স্থাপন করেন? (খ) কীভাবে ঈশ্বরের নম্রতা একজন ব্যক্তিকে “মহান্‌” করে তোলে?

আরেকটা যে-বিষয় আমাদেরকে নম্র হতে সাহায্য করে, তা হল যিহোবা নিজেই নম্রতা প্রদর্শন করেন। এই বিষয়টা বিবেচনা করে দেখুন: “আমরা ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী।” (১ করি. ৩:৯) বিষয়টা কল্পনা করে দেখুন! অতুলনীয় মহান ঈশ্বর যিহোবা, আমাদেরকে তাঁর বাক্য বাইবেল ব্যবহার করে আমাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করার এক সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে মর্যাদা প্রদান করেন। যদিও আমরা যে-বীজ বপন করি এবং তাতে জল সেচন করি, সেটার বৃদ্ধিদাতা হলেন ঈশ্বর কিন্তু তার পরও তিনি আমাদেরকে তাঁর সঙ্গে কাজ করার এক সম্মানজনক পদমর্যাদা প্রদান করেন। (১ করি. ৩:৬, ৭) এটা কি ঈশ্বরের নম্রতার এক বিস্ময়কর উদাহরণ নয়? নিশ্চিতভাবেই, যিহোবার নম্রতার উদাহরণ যেন আমাদের প্রত্যেককে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করার ক্ষেত্রে এক বিরাট উৎসাহ হিসেবে কাজ করে।

ঈশ্বরের নম্রতার উদাহরণ গীতরচক দায়ূদের ওপর এক অসাধারণ প্রভাব ফেলেছিল। তিনি যিহোবার উদ্দেশ্যে গেয়েছিলেন: “তুমি আমাকে নিজ পরিত্রাণ-ঢাল দিয়াছ, তব কোমলতা আমাকে মহান করিয়াছে।” (২ শমূ. ২২:৩৬) ইস্রায়েলে দায়ূদের যেসমস্ত মহিমা ছিল, সেগুলোর কৃতিত্ব তিনি যিহোবার কোমলতা বা নম্রতার—ঈশ্বরের অবনত হওয়ার অথবা নিজেকে নম্র করার, তার প্রতি মনোযোগ প্রদান করার—ওপর আরোপ করেছিলেন। (গীত. ১১৩:৫-৭) আমাদের ক্ষেত্রেও কি একই বিষয় সত্য নয়? আমাদের প্রত্যেকের এমন কোন গুণ, সামর্থ্য এবং বিশেষ সুযোগ রয়েছে, যেগুলো আমরা যিহোবার কাছ থেকে ‘পাই নাই’? (১ করি. ৪:৭) সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করেন এমন একজন ব্যক্তি এই অর্থে “মহান্‌” যে, তিনি যিহোবার একজন দাস হিসেবে আরও মূল্যবান হয়ে ওঠেন। (লূক ৯:৪৮) আসুন আমরা গভীরভাবে বিবেচনা করে দেখি যে, কীভাবে।

“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র, সেই মহান্‌”

৮. কীভাবে নম্রতা যিহোবার সংগঠনের প্রতি আমাদের মনোভাবকে প্রভাবিত করে?

ঈশ্বরের ঈশতান্ত্রিক সংগঠনে সন্তুষ্ট থাকার এবং মণ্ডলীগত ব্যবস্থাকে সমর্থন করার জন্য নম্রতা অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, পেট্রা নামে এক যুবতীর কথা বিবেচনা করুন, যে সাক্ষি পরিবারে মানুষ হয়েছে। নিজের ইচ্ছাখুশিমতো জীবনযাপন করার জন্য পেট্রা মণ্ডলী থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিল। কয়েক বছর পর, সে আবারও মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করেছিল। সে এখন যিহোবার সংগঠনের মধ্যে থাকতে পেরে খুবই আনন্দিত ও সেইসঙ্গে মণ্ডলীগত ব্যবস্থাকে সমর্থন করার ব্যাপারে অত্যন্ত উৎসুক। এক্ষেত্রে, কোন বিষয়টা তাকে পরিবর্তিত হতে সাহায্য করেছে? “ঈশ্বরের সংগঠনকে নিজের বাড়ির মতো মনে করার ক্ষেত্রে” সে লেখে, “আমাকে যে-দুটো গুরুত্বপূর্ণ গুণ উপলব্ধি করতে এবং গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে হয়েছিল, সেগুলো হল নম্রতা এবং বিনয়ী মনোভাব।”

৯. আমরা যে-আধ্যাত্মিক খাদ্য লাভ করি, সেগুলোর প্রতি একজন নম্র ব্যক্তির কোন মনোভাব রয়েছে আর কেন এটা তাকে আরও মূল্যবান করে তোলে?

একজন নম্র ব্যক্তির যিহোবার ব্যবস্থাগুলো ও সেইসঙ্গে আধ্যাত্মিক খাদ্যের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রয়েছে। তাই, এইরকম একজন ব্যক্তি বাইবেলের এক অধ্যবসায়ী ছাত্র এবং প্রহরীদুর্গসচেতন থাক! পত্রিকার অত্যন্ত আগ্রহী একজন পাঠক। যিহোবার অন্যান্য অনেক বিশ্বস্ত দাসের মতো তিনি হয়তো প্রতিটা নতুন প্রকাশনা তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে রেখে দেওয়ার আগেই সেগুলো পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন। আমরা যখন বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলো পড়ার এবং অধ্যয়ন করার মাধ্যমে নম্রভাবে উপলব্ধি প্রকাশ করি, তখন আমরা আধ্যাত্মিক উন্নতি করি ও সেইসঙ্গে যিহোবাও তাঁর সেবায় আমাদেরকে আরও পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে সমর্থ হন।—ইব্রীয় ৫:১৩, ১৪.

১০. কীভাবে আমরা মণ্ডলীতে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব প্রকাশ করতে পারি?

১০ যিনি সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করেন, তিনি আরেকটা উপায়েও “মহান্‌।” প্রতিটা মণ্ডলীতেই এমন যোগ্য পুরুষরা রয়েছে, যাদেরকে প্রাচীন হিসেবে সেবা করার জন্য যিহোবার পবিত্র আত্মার নির্দেশনায় নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা মণ্ডলীর সভা, ক্ষেত্রের পরিচর্যা এবং পালকীয় কাজের মতো বিভিন্ন আধ্যাত্মিক বিষয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। আমরা যখন স্বেচ্ছায় এই ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করার মাধ্যমে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব প্রকাশ করি, তখন আমরা মণ্ডলীর আনন্দ, শান্তি এবং একতায় অবদান রাখি। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭.) আপনি যদি একজন প্রাচীন অথবা একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করে থাকেন, তাহলে যিহোবা আপনাকে আস্থা সহকারে সেবা করার এইরকম এক বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন বলে আপনি কি তাঁর প্রতি নম্রভাবে কৃতজ্ঞ নন?

১১, ১২. কোন মনোভাব আমাদেরকে যিহোবার সংগঠনে আরও মূল্যবান করে তুলবে এবং কেন?

১১ যিনি সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করেন, তিনি “মহান্‌” অথবা যিহোবার সংগঠনে আরও মূল্যবান হয়ে ওঠেন কারণ তার নম্রতা তাকে ঈশ্বরের এক উত্তম ও কার্যকারী দাস করে তোলে। যিশুকে তাঁর শিষ্যদের প্রতি সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করার উপদেশ দিতে হয়েছিল কারণ তাদের মধ্যে কেউ কেউ তখনকার দিনে বিদ্যমান মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। “তাঁহাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, এই তর্ক তাঁহাদের মধ্যে উপস্থিত হইল,” লূক ৯:৪৬ পদ বলে। আমরাও কি হয়তো এইরকম যুক্তি দেখাতে শুরু করি যে, আমরা আমাদের সহবিশ্বাসীদের চেয়ে উত্তম অথবা সাধারণ লোকেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ? আমাদের চারপাশের জগতের অনেকে গর্ব ও স্বার্থপরতার দ্বারা প্ররোচিত হয়। আসুন আমরা নম্রভাবে আচরণ করার মাধ্যমে গর্বিত মনোভাব থেকে দূরে থাকি। আমরা যখন তা করি এবং যিহোবার ইচ্ছাকে প্রথমে রাখি, তখন আমরা আমাদের ভাইবোনদের আরও চমৎকার সহযোগী হয়ে উঠি।

১২ সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করার বিষয়ে যিশুর উপদেশ সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই কি আমাদের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব প্রকাশ করার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত নয়? আসুন আমরা নির্দিষ্টভাবে তিনটে ক্ষেত্রের প্রতি মনোযোগ দিই।

সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তি হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করুন

১৩, ১৪. কীভাবে একজন স্বামী অথবা স্ত্রী-র সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করা উচিত আর এটা বিয়ের ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে?

১৩ বিবাহের মধ্যে। বর্তমানে অনেক লোক নিজেদের ব্যক্তিগত অধিকার নিয়ে এতটাই উদ্‌বিগ্ন যে, তারা সেগুলো এমনকী অন্যদের অধিকার খর্ব করার বিনিময়ে হলেও আদায় করতে চায়। কিন্তু, সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তি সেই মনোভাবের দ্বারা পরিচালিত হন, যে-মনোভাব রাখার বিষয়ে পৌল আমাদের উৎসাহিত করেছেন। রোমীয়দের প্রতি লেখা তার চিঠিতে তিনি বলেন: “যে যে বিষয় শান্তিজনক, ও যে যে বিষয়ের দ্বারা পরস্পরকে গাঁথিয়া তুলিতে পারি, আমরা সেই সকলের অনুধাবন করি।” (রোমীয় ১৪:১৯) সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তি সকলের সঙ্গে এবং বিশেষভাবে নিজের প্রিয় বিবাহসাথির সঙ্গে শান্তি অনুধাবন করেন।

১৪ বিনোদনের বিষয়টা বিবেচনা করুন। আমোদপ্রমোদের ক্ষেত্রে একটা দম্পতির হয়তো ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ থাকতে পারে। হতে পারে যে, স্বামী অবসর সময়ে চুপচাপ ঘরে বসে বই পড়তে ভালোবাসেন। অন্যদিকে, স্ত্রী হয়তো বাইরে গিয়ে খেতে অথবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা করতে ভালোবাসেন। স্ত্রীর পক্ষে কি সেই সময় তার স্বামীর প্রতি সম্মান দেখানো আরও সহজ হয়ে উঠবে না, যখন তিনি দেখেন যে, তার স্বামী নম্রতা প্রকাশ করেন এবং নিজের পছন্দ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার পরিবর্তে বরং স্ত্রীর পছন্দ ও অপছন্দের প্রতি আন্তরিক বিবেচনা দেখান? আর একজন স্বামী সেই সময় তার স্ত্রীকে কতই না ভালোবাসবেন এবং মূল্যবান বলে গণ্য করবেন, যখন তিনি দেখেন যে, তার স্ত্রী কেবল নিজের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার প্রতি আগ্রহ দেখান না বরং স্বামীর ইচ্ছাগুলোর প্রতিও বিবেচনা দেখান! বিবাহবন্ধন সেই সময় আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যখন উভয় সাথিই সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব দেখায়।—পড়ুন, ফিলিপীয় ২:১-৪.

১৫, ১৬. গীতসংহিতার ১৩১ গীতে দায়ূদ কোন মনোভাব সম্বন্ধে সুপারিশ করেছিলেন আর মণ্ডলীতে আমাদের আচরণের ওপর এটার কোন প্রভাব ফেলা উচিত?

১৫ মণ্ডলীর মধ্যে। জগতের অনেক লোক নিজেদের আকাঙ্ক্ষা থেকে তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তি লাভের ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাদের ধৈর্যের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে এবং অপেক্ষা করা একটা পরীক্ষার মতো। সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা আমাদেরকে যিহোবাতে প্রত্যাশা বা অপেক্ষা করতে সাহায্য করে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৩১:১-৩.) নম্র হওয়ার এবং যিহোবাতে অপেক্ষা করার উপকারগুলো হচ্ছে, নিরাপত্তা ও আশীর্বাদ এবং সান্ত্বনা ও পরিতৃপ্তি। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, দায়ূদ তার সহইস্রায়েলীয়দেরকে তাদের ঈশ্বরের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে উৎসাহিত করেছিলেন!

১৬ আপনিও একই সান্ত্বনা লাভ করতে পারেন, যখন আপনি নম্রভাবে যিহোবাতে প্রত্যাশা রাখেন বা যিহোবাতে অপেক্ষা করেন। (গীত. ৪২:৫) হতে পারে, আপনি “উত্তম কার্য্য বাঞ্ছা করেন” আর তাই “অধ্যক্ষপদের আকাঙ্ক্ষী।” (১ তীম. ৩:১-৭) অবশ্যই, পবিত্র আত্মা যেন আপনার মধ্যে অধ্যক্ষ হওয়ার প্রয়োজনীয় গুণাবলি গড়ে তোলে, সেটার জন্য আপনার যথাসাধ্য করা উচিত। কিন্তু, এই বিষয়ে অন্যদের চেয়ে আপনার ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লাগছে বলে যদি মনে হয়, তাহলে? সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তি, যিনি সেবার এক বিশেষ সুযোগের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেন, তিনি ক্রমাগত আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করবেন এবং যেকোনো কার্যভার লাভ করেই আনন্দিত হবেন।

১৭, ১৮. (ক) আমরা যখন ক্ষমা চাই এবং অন্যদের ক্ষমা করে দিই, তখন কোন উপকারগুলো লাভ করা যায়? (খ) হিতোপদেশ ৬:১-৫ পদে কোন বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে?

১৭ অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে। ক্ষমা চাওয়া অধিকাংশ লোকের জন্যই কঠিন হয়ে থাকে। কিন্তু, ঈশ্বরের দাসেরা তাদের ভুলগুলোকে স্বীকার করার এবং ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করে। এ ছাড়া, তারা অন্যদের অপরাধগুলো ক্ষমা করার জন্যও তৈরি। যেখানে গর্ব বিভেদ ও প্রতিযোগিতা জাগিয়ে তোলে, সেখানে ক্ষমা করা মণ্ডলীর মধ্যে শান্তি নিয়ে আসে।

১৮ পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে আমরা যদি কোনো চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হই, তাহলে অন্য পক্ষের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে আমাদের হয়তো ‘বিনত হইতে’ হবে। যদিও তিনি হয়তো অন্য পক্ষকে কিছুটা হলেও দোষারোপ করতে পারেন, কিন্তু একজন নম্র খ্রিস্টান নিজের ভুলত্রুটির প্রতি মনোযোগ দেন এবং সেগুলো স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত থাকেন।—পড়ুন, হিতোপদেশ ৬:১-৫.

১৯. কোন কারণগুলোর জন্য সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করার বিষয়ে বাইবেলের পরামর্শের প্রতি আমাদের প্রত্যেকের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত?

১৯ সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার ব্যাপারে শাস্ত্রীয় উৎসাহের জন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ! যদিও এইরকম মনোভাব দেখানো মাঝে মাঝে আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে, তবুও সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের পদমর্যাদা সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা এবং তাঁর নম্রতা সম্বন্ধে উপলব্ধি করা আমাদেরকে সেই উত্তম গুণ গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। তা করার মাধ্যমে, সত্যিই আমরা যিহোবার আরও মূল্যবান দাস হয়ে উঠব। তাই, আমরা সকলে যেন সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করি।

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

সুসমাচার প্রচার করার বিশেষ সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে যিহোবা আমাদেরকে মর্যাদা প্রদান করেন

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ব্যক্তির মতো আচরণ করার কোন সুযোগগুলো আপনার রয়েছে?