সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার ক্ষমা আপনার জন্য কী অর্থ রাখে?

যিহোবার ক্ষমা আপনার জন্য কী অর্থ রাখে?

যিহোবার ক্ষমা আপনার জন্য কী অর্থ রাখে?

“সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর . . . অপরাধের, অধর্ম্মের ও পাপের ক্ষমাকারী।”—যাত্রা. ৩৪:৬, ৭.

উত্তরগুলো খুঁজুন

দায়ূদ ও মনঃশির পাপের প্রতি যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন এবং কেন?

কেন যিহোবা ইস্রায়েল জাতিকে ক্ষমা করেননি?

কীভাবে আমরা যিহোবার ক্ষমা লাভ করতে পারি?

১, ২. (ক) ইস্রায়েল জাতির কাছে যিহোবা কোন ধরনের ঈশ্বর বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন? (খ) এই প্রবন্ধে কোন প্রশ্ন বিবেচনা করা হবে?

 নহিমিয়ের দিনে একদল লেবীয় জনসমক্ষে প্রার্থনা করার সময় স্বীকার করেছিল যে, তাদের পিতৃপুরুষরা বারংবার যিহোবার আজ্ঞা ‘শুনিতে অস্বীকার করিয়াছিল।’ কিন্তু, বার বারই যিহোবা “ক্ষমাবান্‌ ঈশ্বর, কৃপাময় ও স্নেহশীল, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্‌” বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন। নহিমিয়ের সময়ে ফিরে আসা নির্বাসিত ব্যক্তিদের প্রতি যিহোবা ক্রমাগত অযাচিত দয়া দেখিয়ে গিয়েছিলেন।—নহি. ৯:১৬, ১৭.

ব্যক্তিগতভাবে আমরা প্রত্যেকে হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘যিহোবার ক্ষমা আমার জন্য কী অর্থ রাখে?’ এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা এমন দুজন ব্যক্তির—দায়ূদ ও মনঃশি নামে দুজন রাজার—সঙ্গে যিহোবার আচরণ পরীক্ষা করে দেখি, যারা যিহোবার ক্ষমা থেকে উপকার লাভ করেছিল।

দায়ূদের গুরুতর পাপ

৩-৫. কীভাবে দায়ূদ গুরুতর পাপে জড়িয়ে পড়েছিলেন?

যদিও দায়ূদ একজন ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি গুরুতর পাপ করেছিলেন। এইরকম দুটো পাপের সঙ্গে ঊরিয় এবং বৎশেবা নামে এক বিবাহিত দম্পতি জড়িত ছিল। সেইসমস্ত পাপের পরিণতি, এগুলোর সঙ্গে জড়িত সকলের জন্য বেদনাদায়ক ছিল। যাই হোক, ঈশ্বর যে-উপায়ে দায়ূদকে সংশোধন করেছিলেন, তা যিহোবার ক্ষমা সম্বন্ধে অনেক কিছু প্রকাশ করে। কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করে দেখুন।

দায়ূদ ইস্রায়েলের সৈন্যবাহিনীকে অম্মোনীয়দের রাজধানী রব্বা অবরোধ করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। এটা যিরূশালেম থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) উত্তরে, যর্দন নদীর ওপারে অবস্থিত ছিল। সেই সময়ে দায়ূদ যিরূশালেমে অবস্থিত তার প্রাসাদের ছাদ থেকে বৎশেবাকে—একজন বিবাহিত নারীকে—স্নান করতে দেখেছিলেন। তার স্বামী তখন বাড়িতে ছিলেন না। বৎশেবাকে দেখে দায়ূদের কামনা এতটাই জেগে উঠেছিল যে, তিনি তাকে তার প্রাসাদে নিয়ে এসেছিলেন এবং তার সঙ্গে ব্যভিচার করেছিলেন।—২ শমূ. ১১:১-৪.

দায়ূদ যখন জানতে পেরেছিলেন যে, বৎশেবা গর্ভবতী হয়েছেন, তখন তিনি তার স্বামী ঊরিয়কে এই আশায় যিরূশালেমে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, যেন ঊরিয় তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করেন। কিন্তু, ঊরিয় এমনকী তার বাড়িতেও প্রবেশ করেননি—যদিও তা করার জন্য দায়ূদ ক্রমাগত ঊরিয়কে চাপ দিয়েছিলেন। তাই, রাজা গোপনে তার সেনাপতিকে চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি ঊরিয়কে “তুমুল যুদ্ধের সম্মুখে” নিযুক্ত করেন এবং তার সহসৈন্যরা যেন তার পিছন থেকে সরে যায়। এতে ঊরিয় দায়ূদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খুব সহজেই যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন। (২ শমূ. ১১:১২-১৭) এভাবে রাজা ব্যভিচারের মতো পাপ করার পাশাপাশি একজন নির্দোষ ব্যক্তিকেও হত্যা করিয়েছিলেন।

দায়ূদের মনোভাবের পরিবর্তন

৬. দায়ূদের পাপের প্রতি ঈশ্বর কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন আর এটা যিহোবা সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?

অবশ্যই, যিহোবা এই সমস্তকিছু দেখেছিলেন। কোনো কিছুই তার নজর এড়ায়নি। (হিতো. ১৫:৩) যদিও রাজা পরে বৎশেবাকে বিয়ে করেছিলেন কিন্তু ‘দায়ূদের কৃত এই কর্ম্ম সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে মন্দ হইয়াছিল।’ (২ শমূ. ১১:২৭) দায়ূদের গুরুতর পাপের প্রতি ঈশ্বর কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি তাঁর ভাববাদী নাথনকে দায়ূদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। একজন ক্ষমাবান ঈশ্বর হওয়ায় স্পষ্টতই যিহোবা করুণা দেখানোর এক ভিত্তি খোঁজার জন্য আগ্রহী ছিলেন। যিহোবার এই উপায়টাকে কি আপনার কাছে হৃদয়গ্রাহী বলে মনে হয় না? তিনি দায়ূদকে পাপ স্বীকার করার জন্য জোর করেননি বরং তিনি নাথনকে পাঠিয়েছিলেন, যেন তিনি রাজার সামনে এমন একটা গল্প বলেন, যা তার পাপের খারাপ দিক সম্বন্ধে তুলে ধরে। (পড়ুন, ২ শমূয়েল ১২:১-৪.) সেই নাজুক পরিস্থিতি সঠিকভাবে পরিচালনা করার উপায়টা কতই না কার্যকারী বলে প্রমাণিত হয়েছিল!

৭. নাথনের দৃষ্টান্তটা শোনার পর দায়ূদ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

নাথনের দৃষ্টান্ত রাজার ন্যায়বিচারবোধকে জাগিয়ে তুলেছিল। দায়ূদ গল্পের ধনী ব্যক্তির প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন এবং নাথনকে বলেছিলেন: “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যে ব্যক্তি সেই কর্ম্ম করিয়াছে, সে মৃত্যুর সন্তান।” অধিকন্তু, দায়ূদ বলেছিলেন যে, এইরকম অবিচারের শিকারগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। কিন্তু, এরপরই প্রচণ্ড এক আঘাত এসেছিল। “আপনিই সেই ব্যক্তি,” নাথন বলেছিলেন। এরপর দায়ূদকে বলা হয়েছিল যে, তার এইরকম কাজের পরিণতি হিসেবে “খড়্গ” কখনো তার কুলকে ছাড়বে না এবং তার পরিবারের ওপর অমঙ্গল নেমে আসবে। এ ছাড়াও, তিনি তার অন্যায়ের জন্য জনসমক্ষে অপমানিত হবেন। দায়ূদ তার কাজের গুরুতর অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন এবং অনুতপ্ত হয়ে স্বীকার করেছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি।”—২ শমূ. ১২:৫-১৪.

দায়ূদের প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের ক্ষমা

৮, ৯. গীতসংহিতার ৫১ গীত কীভাবে দায়ূদের গভীরতম চিন্তা প্রকাশ করে এবং এটি যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

এরপর রাজা দায়ূদ যে-গীত রচনা করেছিলেন, সেগুলোর কথা দেখায় যে, তিনি আন্তরিকভাবে অনুশোচনা করেছিলেন। ৫১ গীতে যিহোবার প্রতি দায়ূদের মর্মস্পর্শী মিনতি লক্ষ করা যায় এবং তা দেখায় যে, তিনি কেবল তার অন্যায় স্বীকার করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছিলেন। তিনি তার পাপের জন্য অনুতপ্তও হয়েছিলেন। দায়ূদ মূলত ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্কের ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন। “তোমার বিরুদ্ধে, কেবল তোমারই বিরুদ্ধে আমি পাপ করিয়াছি,” দায়ূদ দোষ স্বীকার করে বলেছিলেন। তিনি যিহোবার কাছে মিনতি করেছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমাতে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ সৃষ্টি কর, আমার অন্তরে সুস্থির আত্মাকে নূতন করিয়া দেও। . . . তোমার পরিত্রাণের আনন্দ আমাকে পুনরায় দেও, ইচ্ছুক আত্মা দ্বারা আমাকে ধরিয়া রাখ।” (গীত. ৫১:১-৪, ৭-১২) আপনি যখন আপনার ভুলত্রুটি নিয়ে যিহোবার সঙ্গে কথা বলেন, তখন আপনিও কি আন্তরিকতা সহকারে এবং খোলাখুলিভাবে তাঁর কাছে সেগুলো প্রকাশ করেন?

যিহোবা দায়ূদের পাপের বেদনাদায়ক পরিণতিগুলো দূর করে দেননি। তার বাকি জীবনে তিনি এর পরিণতিগুলো ভোগ করেছিলেন। কিন্তু, দায়ূদের অনুতপ্ত মনোভাব অর্থাৎ তার যে এক “ভগ্ন ও চূর্ণ অন্তঃকরণ” রয়েছে, তা বুঝতে পেরে যিহোবা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৩২:৫; গীত. ৫১:১৭) সর্বশক্তিমান ঈশ্বর পাপের পিছনে যে-প্রকৃত মনোভাব এবং উদ্দেশ্য থাকে, তা বুঝতে পারেন। মোশির আইন অনুযায়ী মানব বিচারকদের দ্বারা ব্যভিচারের দোষে দোষী ব্যক্তিদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরিবর্তে, যিহোবা করুণার সঙ্গে বিষয়টাতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন এবং নিজেই দায়ূদ ও বৎশেবার বিষয়টা দেখেছিলেন। (লেবীয়. ২০:১০) ঈশ্বর এমনকী তাদের ছেলে শলোমনকে ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।—১ বংশা. ২২:৯, ১০.

১০. (ক) দায়ূদকে ক্ষমা করার কোন ভিত্তি হয়তো যিহোবা খুঁজে পেয়েছিলেন? (খ) কোন বিষয়গুলো যিহোবাকে ক্ষমা করতে অনুপ্রাণিত করে?

১০ সম্ভবত আরেকটা বিষয়ের জন্য যিহোবা দায়ূদকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন আর সেটা হল, দায়ূদ নিজে শৌলের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন। (১ শমূ. ২৪:৪-৭) যিশু যেমন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, অন্যদের সঙ্গে আমরা যেভাবে আচরণ করি, যিহোবা আমাদের সঙ্গে সেভাবেই আচরণ করেন। “তোমরা বিচার করিও না, যেন বিচারিত না হও,” যিশু বলেছিলেন, “কেননা যেরূপ বিচারে তোমরা বিচার কর, সেইরূপ বিচারে তোমরাও বিচারিত হইবে; এবং যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদের নিমিত্ত পরিমাণ করা যাইবে।” (মথি ৭:১, ২) এটা জানা কতই না স্বস্তিদায়ক যে, যিহোবা আমাদের পাপ—এমনকী ব্যভিচারের ও হত্যার মতো গুরুতর পাপগুলোও—ক্ষমা করবেন! তিনি তা করবেন যদি আমাদের ক্ষমাশীল মনোভাব থাকে, যদি আমরা তাঁর কাছে আমাদের পাপগুলো স্বীকার করি এবং যদি আমরা আমাদের মন্দ কাজগুলোর প্রতি এক পরিবর্তিত মনোভাব প্রকাশ করি। পাপীরা যখন আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়, তখন যিহোবার কাছ থেকে “তাপশান্তির সময়” উপস্থিত হয়।পড়ুন, প্রেরিত ৩:২০.

মনঃশি গুরুতর পাপ করেন তবে অনুতপ্ত হন

১১. কোন কোন উপায়ে রাজা মনঃশি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা-ই করেছিলেন?

১১ আরেকটা শাস্ত্রীয় বিবরণ বিবেচনা করুন, যা দেখায় যে, যিহোবা কত দূর পর্যন্ত ক্ষমা করতে ইচ্ছুক। দায়ূদ শাসন শুরু করার প্রায় ৩৬০ বছর পর, মনঃশি যিহূদার রাজা হয়েছিলেন। তার ৫৫ বছরের রাজত্ব দুষ্টতার জন্য কুখ্যাত ছিল এবং তার জঘন্য অভ্যাসগুলো যিহোবার কাছ থেকে নিন্দা নিয়ে এসেছিল। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি মনঃশি বালের উদ্দেশে যজ্ঞবেদি নির্মাণ করেছিলেন, “আকাশের সমস্ত বাহিনীর” উপাসনা করেছিলেন, তার সন্তানদেরকে অগ্নির মধ্যে দিয়ে গমন করিয়েছিলেন এবং প্রেতচর্চা শুরু করেছিলেন। হ্যাঁ, ‘তিনি সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বহুল কদাচরণ করিয়াছিলেন।’—২ বংশা. ৩৩:১-৬.

১২. কীভাবে মনঃশি যিহোবার প্রতি ফিরেছিলেন?

১২ পরিশেষে, মনঃশিকে তার নিজ দেশ থেকে ধরে নিয়ে বাবিলের কারাগারে রাখা হয়েছিল। সেখানে তিনি হয়তো ইস্রায়েলের প্রতি বলা মোশির এই কথাগুলো স্মরণ করেছিলেন: “যখন তোমার সঙ্কট উপস্থিত হয়, এবং এই সমস্ত তোমার প্রতি ঘটে, তখন সেই ভাবী কালে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিবে, ও তাঁহার রবে অবধান করিবে।” (দ্বিতীয়. ৪:৩০) মনঃশি যিহোবার প্রতি ফিরেছিলেন। কীভাবে? তিনি ‘আপনাকে অতিশয় অবনত করিয়াছিলেন’ এবং ঈশ্বরের কাছে ‘প্রার্থনা করিয়াছিলেন’ (যেমনটা ২১ পৃষ্ঠায় তুলে ধরা হয়েছে)। (২ বংশা. ৩৩:১২, ১৩) সেই প্রার্থনায় মনঃশি কী বলেছিলেন, সেগুলোর একেবারে সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই কিন্তু আমরা কল্পনা করতে পারি যে, কোনো কোনো দিক দিয়ে সেগুলো হয়তো রাজা দায়ূদের কথাগুলোর মতোই ছিল, যেগুলো গীতসংহিতার ৫১ গীতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। যাই হোক, মনঃশি সম্পূর্ণরূপে তার হৃদয় পরিবর্তন করেছিলেন।

১৩. কেন যিহোবা মনঃশিকে ক্ষমা করেছিলেন?

১৩ মনঃশির প্রার্থনার প্রতি যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? ‘তিনি [মনঃশির] প্রার্থনা গ্রাহ্য করিলেন, তাঁহার বিনতি শুনিলেন।’ দায়ূদের মতো মনঃশিও তার পাপের গুরুতর অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন এবং সত্যিই অনুতপ্ত হয়েছিলেন। এই কারণে ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করেছিলেন এবং পুনরায় তাকে যিরূশালেমে তার রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। এর ফলে, “মনঃশি জানিতে পারিলেন যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর।” (২ বংশা. ৩৩:১৩) যারা অকৃত্রিমভাবে অনুতপ্ত হয়, তাদেরকে যে আমাদের করুণাময় ঈশ্বর ক্ষমা করেন, সেই ব্যাপারে আরও প্রমাণ দেখা কতই না উৎসাহজনক!

যিহোবার ক্ষমা কি সীমাহীন?

১৪. যিহোবা পাপীদের ক্ষমা করবেন কী করবেন না, তা কোন বিষয়টা নির্ধারণ করে?

১৪ বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে খুব কম লোককেই হয়তো দায়ূদের ও মনঃশির মতো গুরুতর পাপ করে ক্ষমা চাইতে হয়। কিন্তু, যিহোবা যে এই দুজন রাজাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, সেই বিষয়টা আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে যে, আমাদের ঈশ্বর এমনকী গুরুতর পাপ ক্ষমা করতে ইচ্ছুক, যদি পাপী ব্যক্তি সত্যিই অনুতপ্ত হন।

১৫. কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবা এমনি এমনিই ক্ষমা করেন না?

১৫ অবশ্য, আমরা উপযুক্তভাবেই এই উপসংহারে আসতে পারি না যে, যিহোবা সমস্ত মানুষকে তাদের পাপের জন্য এমনি এমনিই ক্ষমা করে দেন। এই ক্ষেত্রে আসুন আমরা দায়ূদ ও মনঃশির মনোভাবের সঙ্গে ইস্রায়েল ও যিহূদার বিপথগামী লোকেদের মনোভাব তুলনা করে দেখি। ঈশ্বর নাথনকে দায়ূদের কাছে পাঠিয়েছিলেন এবং তার মনোভাব পরিবর্তন করার এক সুযোগ দিয়েছিলেন। দায়ূদ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সেই সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন। মনঃশি যখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন, তখন তিনি আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। কিন্তু, ইস্রায়েল এবং যিহূদার লোকেরা প্রায় সময়ই অনুতপ্ত মনোভাব দেখায়নি। তাই, যিহোবা তাদেরকে ক্ষমা করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি বার বার তাঁর ভাববাদীদের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন যে, তাদের অবাধ্য আচরণকে তিনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন। (পড়ুন, নহিমিয় ৯:৩০.) এমনকী নির্বাসিত ব্যক্তিরা বাবিল থেকে নিজ দেশে ফিরে আসার পরও, যিহোবা ক্রমাগত যাজক ইষ্রা এবং ভাববাদী মালাখির মতো বিশ্বস্ত বার্তাবাহকদের উৎপন্ন করেছিলেন। লোকেরা যখন যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করেছিল, তখন তারা প্রচুর আনন্দ লাভ করেছিল।—নহি. ১২:৪৩-৪৭.

১৬. (ক) অনুতপ্ত না হওয়ার জন্য সমগ্র ইস্রায়েল জাতির পরিণতি কী হয়েছিল? (খ) প্রাচীন ইস্রায়েলীয় বংশধরদের আলাদা আলাদা ব্যক্তির জন্য কোন সুযোগ থাকতে পারে?

১৬ যিশুকে পৃথিবীতে পাঠানোর এবং এক সিদ্ধ বলি জোগানোর পর, যিহোবা আর ইস্রায়েলের পশুবলি গ্রহণ করেননি। (১ যোহন ৪:৯, ১০) একজন মানুষ হিসেবে, যিশু তাঁর পিতার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করেছিলেন, যখন তিনি এই প্রেরণাদায়ক কথাগুলো বলেছিলেন: “হা যিরূশালেম, যিরূশালেম, তুমি ভাববাদিগণকে বধ করিয়া থাক, ও তোমার নিকটে যাহারা প্রেরিত হয়, তাহাদিগকে পাথর মারিয়া থাক! কুক্কুটী যেমন আপন শাবকদিগকে পক্ষের নীচে একত্র করে, তদ্রূপ আমিও কত বার তোমার সন্তানদিগকে একত্র করিতে ইচ্ছা করিয়াছি, কিন্তু তোমরা সম্মত হইলে না।” তাই, যিশু ঘোষণা করেছিলেন: “দেখ, তোমাদের গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল।” (মথি ২৩:৩৭, ৩৮) তাই, পাপী ও অননুতপ্ত জাতির পরিবর্তে আত্মিক ইস্রায়েলকে স্থাপন করা হয়েছিল। (মথি ২১:৪৩; গালা. ৬:১৬) কিন্তু, জন্মগত ইস্রায়েলের আলাদা আলাদা ব্যক্তি সম্বন্ধে কী বলা যায়? ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্টের বলিদানের ওপর বিশ্বাস অনুশীলন করার মাধ্যমে তারাও যিহোবার ক্ষমা এবং করুণা থেকে উপকার লাভ করার জন্য সাদরে আমন্ত্রিত। এই সুযোগ পাপের জন্য অনুতপ্ত হতে না পেরে মারা গিয়েছে কিন্তু এক পরিচ্ছন্ন পৃথিবীতে পুনরুত্থিত হবে এমন ব্যক্তিদের জন্যও খোলা থাকবে।—যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রেরিত ২৪:১৫.

যিহোবার ক্ষমা থেকে উপকার লাভ করা

১৭, ১৮. কীভাবে আমরা যিহোবার ক্ষমা লাভ করতে পারি?

১৭ যিহোবা যে ক্ষমা করতে ইচ্ছুক, সেটার প্রতি আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? নিশ্চিতভাবেই, আমাদের দায়ূদ এবং মনঃশির মতো কাজ করতে হবে। আমাদেরকে আমাদের পাপপূর্ণ অবস্থা সম্বন্ধে বোঝা, আমাদের অন্যায়গুলোর জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং আন্তরিকভাবে যিহোবার ক্ষমা চাওয়া উচিত ও সেইসঙ্গে তাঁকে বলা উচিত যেন তিনি আমাদের মধ্যে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেন। (গীত. ৫১:১০) আমরা যদি গুরুতর পাপ করে থাকি, তাহলে আমাদের প্রাচীনদের আধ্যাত্মিক সাহায্যও চাওয়া উচিত। (যাকোব ৫:১৪, ১৫) আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, এই বিষয়টা মনে রাখা সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা ঠিক তেমনই আছেন, যেমনটা তিনি মোশির কাছে বর্ণনা করেছিলেন আর তা হল, “সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্‌; সহস্র সহস্র [পুরুষ] পর্য্যন্ত দয়ারক্ষক, অপরাধের, অধর্ম্মের ও পাপের ক্ষমাকারী।” যিহোবা পরিবর্তিত হয়ে যাননি।—যাত্রা. ৩৪:৬, ৭.

১৮ এক জোরালো তুলনা ব্যবহার করে, যিহোবা অনুতপ্ত ইস্রায়েলীয়দের কাছে তাদের পাপের কলঙ্ক সম্পূর্ণরূপে দূর করার, যা “সিন্দূরবর্ণ,” তা “হিমের” ন্যায় শুক্লবর্ণ করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (পড়ুন, যিশাইয় ১:১৮.) তাহলে, যিহোবার ক্ষমা আমাদের জন্য কী অর্থ রাখে? আমাদের পাপ ও অন্যায়গুলোর জন্য সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা পেতে চাইলে আমাদের এক কৃতজ্ঞ ও অনুতপ্ত মনোভাব প্রকাশ করতে হবে।

১৯. পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

১৯ যিহোবার ক্ষমাপ্রার্থী হিসেবে কীভাবে আমরা পরস্পরের সঙ্গে আচরণ করার সময় তাঁকে অনুকরণ করতে পারি? কীভাবে আমরা সেই ব্যক্তিদের প্রতি এক ক্ষমাহীন মনোভাব গড়ে তোলার বিষয়টা এড়িয়ে চলতে পারি, যারা গুরুতর পাপ করার পর অকৃত্রিম অনুতাপ প্রকাশ করেছে? পরের প্রবন্ধ আমাদেরকে নিজেদের হৃদয় পরীক্ষা করে দেখতে সাহায্য করবে, যাতে আমরা আরও বেশি করে আমাদের পিতা যিহোবার মতো হতে পারি, যিনি “মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান্‌।”—গীত. ৮৬:৫.

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার ক্ষমার কারণে মনঃশি পুনরায় যিরূশালেমে তার রাজ্যে ফিরে এসেছিলেন