সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী হোন

ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী হোন

ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী হোন

“ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।”—যাকোব ৪:৮.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য সম্বন্ধে কীভাবে আমরা এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারি?

টাকাপয়সা এবং গর্ব সম্বন্ধে কীভাবে আমরা এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারি?

কীভাবে আমরা যিহোবার নিকটে থাকতে পারি?

১, ২. (ক) শয়তানের “কল্পনা সকল” কী? (খ) কী আমাদেরকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে সাহায্য করবে?

 যিহোবা ঈশ্বর মানুষকে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার চাহিদা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু, শয়তান আমাদেরকে তার মতো করে চিন্তা করাতে চায় আর তা হল, আমাদের যিহোবার প্রয়োজন নেই। এটা একটা মিথ্যা, যা শয়তান এদন উদ্যানে হবাকে প্রতারিত করার সময় থেকে তুলে ধরেছে। (আদি. ৩:৪-৬) ইতিহাসজুড়ে, মানবজাতির অধিকাংশই বার বার সেই একই ভুল করেছে।

আনন্দের বিষয় হল, আমাদের যে শয়তানের ফাঁদে পড়তেই হবে এমন নয়। “তাহার কল্পনা সকল আমরা অজ্ঞাত নই।” (২ করি. ২:১১) শয়তান আমাদেরকে ভুল বাছাইগুলো করতে প্ররোচিত করার মাধ্যমে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, আগের প্রবন্ধে যেমন দেখানো হয়েছে যে, আমরা কেরিয়ার, আমোদপ্রমোদ এবং পারিবারিক বিষয়ের ক্ষেত্রে সঠিক বাছাই করতে পারি। এই প্রবন্ধ দেখাবে যে, কীভাবে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, টাকাপয়সা এবং গর্বকে সঠিক স্থানে রাখা আমাদেরকে ‘ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হইতে’ সাহায্য করতে পারে।—যাকোব ৪:৮.

প্রযুক্তি

৩. ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে প্রযুক্তি ভালো অথবা খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সারা পৃথিবীতে, অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক সামগ্রী এখন খুবই সাধারণ। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এই ধরনের আবিষ্কারগুলো কার্যকারী হাতিয়ার হতে পারে। কিন্তু, ভুলভাবে ব্যবহার করলে এগুলো আমাদের এবং স্বর্গীয় পিতার মাঝে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। কম্পিউটারের কথা বিবেচনা করুন। আপনি যে-পত্রিকাটি পড়ছেন, তা কম্পিউটারের সাহায্যে লেখা হয়েছে এবং প্রকাশিত হয়েছে। কম্পিউটার, গবেষণা এবং যোগাযোগ করার এক কার্যকারী হাতিয়ার এবং মাঝে মাঝে সতেজতাদায়ক আমোদপ্রমোদের এক উৎস হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু, আমরা কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রতি নেশাগ্রস্তও হয়ে পড়তে পারি। বিক্রেতারা চতুরতার সঙ্গে লোকেদেরকে এইরকমটা মনে করতে প্ররোচিত করে যে, তাদের সবচেয়ে আধুনিক সামগ্রী থাকতেই হবে। একজন যুবক নির্দিষ্ট একটা ট্যাবলেট কম্পিউটারের জন্য এতটাই পাগল হয়ে উঠেছিল যে, সে গোপনে তার একটা কিডনি বিক্রি করে সেটা ক্রয় করেছিল। কতই না অদূরদর্শী ত্যাগস্বীকার!

৪. কীভাবে একজন খ্রিস্টান অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার করার বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন?

প্রযুক্তির অপব্যবহার অথবা অতিরিক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে যিহোবার সঙ্গে আপনার অন্তরঙ্গতাকে নষ্ট হতে দেওয়া এমনকী আরও বেশি দুঃখজনক। “আমি জানি, বাইবেল বলে যে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য আমাদের ‘সুযোগ কিনিয়া লওয়া’ উচিত,” ইয়ন নামে একজন খ্রিস্টান বলেন, যার বয়স ২০-এর কোঠার শেষের দিকে। * “কিন্তু, যখন কম্পিউটারের বিষয়টা আসে, তখন আমি নিজেই নিজের বড়ো শত্রু হয়ে উঠি।” ইয়ন প্রায়ই অনেক রাত পর্যন্ত অনলাইনে থাকতেন। “আমি যতই ক্লান্ত হতাম, ততই চ্যাটিং করা অথবা সংক্ষিপ্ত ভিডিওগুলো—এমনকী সবসময় গঠনমূলক নয় এমন ভিডিওগুলো—দেখা বন্ধ করা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠত,” তিনি বলেন। এই খারাপ অভ্যাস থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য ইয়ন কম্পিউটারে এমন ব্যবস্থা করে রাখেন, যেন তা ঘুমাতে যাওয়ার সময় হলে নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যায়।—পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬.

৫, ৬. (ক) সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের কোন দায়িত্ব রয়েছে? (খ) কীভাবে বাবা-মায়েরা এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে পারে যে, তাদের সন্তানদের উত্তম সাহচর্য রয়েছে?

বাবা-মায়েরা, সন্তানদের প্রতিটা পদক্ষেপই আপনাদের নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন নেই, কিন্তু কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। তাদেরকে কেবল ব্যস্ত রাখার অথবা আপনাদেরকে বিরক্ত না করার জন্য অনলাইনে অনৈতিক বিষয়গুলো দেখতে, দৌরাত্ম্যপূর্ণ ভিডিও গেমস্‌ খেলতে, প্রেতচর্চায় রত হতে অথবা কুসংসর্গের সংস্পর্শে আসতে দেবেন না। আপনারা যদি সেগুলো করতে দেন, তাহলে তারা হয়তো এই উপসংহারে আসতে পারে যে, ‘যেহেতু বাবা-মা কিছুই বলছে না, তাই এগুলো নিশ্চয়ই খারাপ নয়।’ বাবা-মা হিসেবে আপনাদের কাজ হচ্ছে সন্তানদের—যাদের মধ্যে কিশোর-কিশোরীরাও রয়েছে—এমন যেকোনো কিছু থেকে রক্ষা করা, যা তাদেরকে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। এমনকী পশুপাখিরাও তাদের শাবকদের বিপদ থেকে রক্ষা করে। কল্পনা করুন যে, একটা ভল্লুকী সাধারণত কী করে, যখন তার শাবকদের জন্য কেউ হুমকি স্বরূপ হয়ে ওঠে!—তুলনা করুন, হোশেয় ১৩:৮.

আপনাদের সন্তানদেরকে, যুবক-বৃদ্ধ সমস্ত উদাহরণযোগ্য খ্রিস্টানের সঙ্গে গঠনমূলক মেলামেশার ব্যবস্থা করে দেওয়ার মাধ্যমে সাহায্য করুন। আর মনে রাখবেন যে, আপনারাই হচ্ছেন আপনাদের সন্তানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তম সাহচর্য। তাদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তাদের আপনাদের প্রয়োজন! তাই, একসঙ্গে হাসিঠাট্টা, খেলাধুলা ও কাজ করার এবং ‘ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হইবার’ জন্য সময় করে নিন। *

স্বাস্থ্য

৭. কেন আমরা সকলে সুস্থ থাকতে চাই?

“আপনার কেমন লাগছে?” এই সাধারণ অভিব্যক্তিটি এক কঠিন বাস্তবতা সম্বন্ধে প্রকাশ করে। যেহেতু আমাদের প্রথম পিতামাতা নিজেদেরকে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে শয়তানকে সুযোগ দিয়েছিল, তাই আমরা সকলেই অসুস্থ হই। অসুস্থতা শয়তানের উদ্দেশ্যকে সফল করে কারণ আমরা যখন অসুস্থ হই, তখন আমাদের পক্ষে যিহোবার সেবা করা কঠিন হয়ে পড়ে। আর আমরা যদি মারা যাই, তাহলে আমরা কোনোভাবেই তাঁর সেবা করতে পারি না। (গীত. ১১৫:১৭) তাই, স্বাভাবিকভাবেই আমরা সুস্থ থাকার জন্য যথাসাধ্য করতে চাই। * আর ভাইবোনদের স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল সম্বন্ধে আমাদের চিন্তা করা উচিত।

৮, ৯. (ক) স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে কীভাবে আমরা চরমে যাওয়া এড়িয়ে চলতে পারি? (খ) আনন্দ গড়ে তোলার উপকারগুলো কী?

কিন্তু, চরমে যাওয়ার বিষয়টা এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ। কেউ কেউ উদ্যোগের সঙ্গে—এমনকী ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচারের চেয়ে আরও বেশি উদ্যোগের সঙ্গে—নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা, চিকিৎসাপদ্ধতি অথবা পণ্যসামগ্রী সম্বন্ধে কথা বলে থাকে। তারা হয়তো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, তারা অন্যদেরকে সাহায্য করছে। তা সত্ত্বেও, কিংডম হলে অথবা সম্মেলন হলে অনুষ্ঠিত সভাগুলোর আগে অথবা পরে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অথবা সৌন্দর্যবর্ধক দ্রব্যসামগ্রী সম্বন্ধে কথা বলা উপযুক্ত নয়। কেন?

আমরা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার এবং ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার ফলের একটা দিক আনন্দকে বৃদ্ধি করার জন্য একত্রে মিলিত হই। (গালা. ৫:২৩) জানতে চাওয়া হোক বা না হোক, এই ধরনের উপলক্ষ্যগুলোতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপদেশ দেওয়া অথবা দ্রব্যসামগ্রী সম্বন্ধে কথা বলা আমাদের আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যকে গৌণ করে ফেলতে পারে এবং অন্যদেরকে তাদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে পারে। (রোমীয় ১৪:১৭) একজন ব্যক্তি তার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কী করবেন, তা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া, কারো কাছেই সমস্ত অসুস্থতার সমাধান নেই। এমনকী সবচেয়ে ভালো ডাক্তাররাও বৃদ্ধ ও অসুস্থ হয় এবং অবশেষে মারা যায়। আর আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত উদ্‌বিগ্ন হওয়া আমাদের আয়ুকে বৃদ্ধি করতে পারবে না। (লূক ১২:২৫) অন্যদিকে, “সানন্দ হৃদয় স্বাস্থ্যজনক।”—হিতো. ১৭:২২.

১০. (ক) কোন গুণাবলি যিহোবার কাছে আকর্ষণীয়? (খ) কীভাবে আমরা সম্ভাব্য সর্বোত্তম স্বাস্থ্য উপভোগ করতে পারি?

১০ একইভাবে, আমাদের বাহ্যিক চেহারা নিয়েও চিন্তা করা উপযুক্ত। কিন্তু, আমাদের বয়সের সমস্ত ছাপ মুছে ফেলার জন্য উঠে-পড়ে লাগার প্রয়োজন নেই। এই ছাপগুলো পরিপক্বতা, মর্যাদা এবং অন্তরস্থ সৌন্দর্যের প্রমাণ হিসেবে কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল বলে: “পক্ব কেশ শোভার মুকুট; তাহা ধার্ম্মিকতার পথে পাওয়া যায়।” (হিতো. ১৬:৩১) যিহোবা আমাদেরকে এভাবেই দেখেন এবং আমাদেরও নিজেদেরকে তাঁর মতো করে দেখার চেষ্টা করা উচিত। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:৩, ৪.) তাহলে, কেবল দৈহিকভাবে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য অযথা এবং সম্ভাব্য বিপদজনক অপারেশন অথবা চিকিৎসাপদ্ধতির ঝুঁকি নেওয়া কি বিজ্ঞতার কাজ? “সদাপ্রভুতে যে আনন্দ, তাহাই” প্রকৃত সৌন্দর্যের উৎস, যা আমাদের বয়স অথবা স্বাস্থ্য যেমনই হোক না কেন, আমাদের ভিতর থেকে বিচ্ছুরিত হয়। (নহি. ৮:১০) একমাত্র নতুন জগতেই আমরা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য এবং পুনরায় যৌবনকালের সৌন্দর্য লাভ করতে পারব। (ইয়োব ৩৩:২৫; যিশা. ৩৩:২৪) সেই সময়ের আগে পর্যন্ত, ব্যবহারিক প্রজ্ঞা ও বিশ্বাস দেখানো আমাদেরকে যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে আর এর পাশাপাশি আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিগুলোকে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।—১ তীম. ৪:৮.

টাকাপয়সা

১১. কীভাবে টাকাপয়সা এক ফাঁদ হয়ে উঠতে পারে?

১১ টাকাপয়সা খারাপ নয় অথবা সৎভাবে ব্যাবসা করাও ভুল নয়। (উপ. ৭:১২; লূক ১৯:১২, ১৩) কিন্তু, “ধনাসক্তি” বা টাকাপয়সার প্রতি ভালোবাসা নিশ্চিতভাবেই আমাদেরকে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে। (১ তীম. ৬:৯, ১০) “সংসারের চিন্তা” অর্থাৎ জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো লাভ করার ব্যাপারে অত্যধিক চিন্তা আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে চেপে রাখতে পারে। ‘ধনের মায়ার’ ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য, যা হল এই ভুল বিশ্বাস যে, ধনসম্পদ স্থায়ী সুখ ও নিরাপত্তা নিয়ে আসে। (মথি ১৩:২২) যিশু এই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন যে, “কেহই” সফলভাবে ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করতে পারে না।—মথি ৬:২৪.

১২. বর্তমানে, কোন ধরনের অর্থ সংক্রান্ত ফাঁদগুলো সাধারণ এবং কীভাবে আমরা সেগুলো এড়িয়ে চলতে পারি?

১২ টাকাপয়সার প্রতি ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ভুল কাজগুলোর দিকে পরিচালিত করতে পারে। (হিতো. ২৮:২০) দ্রুত এবং সহজেই টাকাপয়সা আয়ের প্রতিশ্রুতি কাউকে কাউকে লটারির টিকেট কিনতে অথবা বহুপদবিশিষ্ট বিপণন প্রকল্পগুলোর পিছনে ছুটতে আর এমনকী মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যদেরও এর সঙ্গে যুক্ত হতে প্ররোচিত করেছে। অন্যেরা বিনিয়োগের ওপর অবাস্তব উচ্চ মুনাফা লাভের প্রস্তাবের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে। লোভ যেন আপনাকে প্রতারিত না করে। উত্তম বিচারবুদ্ধি কাজে লাগান। কোনো প্রস্তাব যদি অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়, তাহলে সম্ভবত সেটা তা-ই।

১৩. টাকাপয়সা সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে জগতের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলাদা?

১৩ আমরা যখন ‘তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতাকে’ প্রথমে রাখি, তখন যিহোবা আমাদের জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগানোর ক্ষেত্রে আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ প্রচেষ্টার ওপর আশীর্বাদ করেন। (মথি ৬:৩৩; ইফি. ৪:২৮) তিনি চান না যে, অতিরিক্ত কাজ করার ফলে আমরা সভাগুলোতে ঘুমিয়ে পড়ি অথবা কিংডম হলে বসে টাকাপয়সা সম্বন্ধে উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়ি। আমাদের চারপাশের জগতে অনেকে মনে করে যে, শুধুমাত্র টাকাপয়সার পিছনে ছোটার মাধ্যমেই তারা এক নিরাপদ ভবিষ্যৎ লাভ করতে পারবে এবং শেষ বয়সে এসে তাদের কিছু করতে হবে না। মাঝে মাঝে তারা তাদের সন্তানদেরকেও একইরকম বস্তুবাদিতাপূর্ণ লক্ষ্যের পিছনে ছোটার জন্য চাপ দিয়ে থাকে। যিশু দেখিয়েছিলেন, এই ধরনের চিন্তাভাবনা অযৌক্তিক। (পড়ুন, লূক ১২:১৫-২১.) এটা হয়তো আমাদেরকে গেহসির কথা মনে করিয়ে দেয়, যিনি মনে করেছিলেন যে, লোভকে প্রশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি তিনি যিহোবার সঙ্গেও তার উত্তম অবস্থান বজায় রাখতে পারবেন।—২ রাজা. ৫:২০-২৭.

১৪, ১৫. নিরাপত্তার জন্য কেন আমরা আর্থিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করব না? একটা উদাহরণ দিন।

১৪ তথ্য অনুযায়ী, কিছু ঈগল পাখি অনেক ভারি একটা মাছ বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় সেটাকে তাদের নখ থেকে মুক্ত করেনি বলে ডুবে গিয়েছিল। একজন খ্রিস্টানের বেলায়ও কি এমনটা ঘটতে পারে? “আমি সাধারণত অনেক মিতব্যয়ী ব্যক্তি,” আলেক্স নামে একজন প্রাচীন বলেন। “আমি যদি প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি শ্যাম্পু ঢেলে ফেলি, তাহলে তা আবার বোতলের ভিতরে ঢুকিয়ে রাখি।” কিন্তু, এই মনে করে আলেক্স শেয়ার বাজারের ব্যাবসায় জড়িয়ে পড়েন যে, শীঘ্র তিনি তার চাকরি ছেড়ে দিয়ে অগ্রগামীর সেবা শুরু করতে পারবেন। তিনি এমনকী দিনরাত বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব ও শেয়ার বাজারের তথ্য নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে শুরু করেন। তার সঞ্চিত অর্থ এবং দালালদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া টাকাপয়সা ব্যবহার করে তিনি এমন শেয়ার কেনেন, যেগুলোর মূল্য খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল। কিন্তু, তা না হয়ে হঠাৎ করেই সেগুলোর মূল্য কমে যায়। “আমি আমার অর্থ ফিরে পাওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলাম,” আলেক্স বলেন। “আমার এইরকমটা মনে হয়েছিল যে, যদি আমি হাল ছেড়ে না দিয়ে অপেক্ষা করি, তাহলে শেয়ারের মূল্য আবারও বৃদ্ধি পাবে।”

১৫ কয়েক মাস ধরে আলেক্স তার শেয়ারগুলো ছাড়া অন্য আর কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে পারেননি। আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে এবং তিনি ভালোমতো ঘুমাতে পারতেন না। কিন্তু, সেই শেয়ারগুলোর মূল্য আর কখনো বৃদ্ধি পায়নি। আলেক্স তার সঞ্চিত অর্থ হারান এবং তাকে তার বাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়। “আমি আমার পরিবারের জন্য অনেক কষ্ট ডেকে আনি,” তিনি স্বীকার করেন। কিন্তু, তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করেছিলেন। “এখন আমি বুঝতে পারছি, যারা শয়তানের বিধিব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে, তারা প্রচণ্ড হতাশা ভোগ করবে।” (হিতো. ১১:২৮) সত্যিই, আমাদের সঞ্চিত অর্থ, বিনিয়োগ অথবা টাকাপয়সা আয়ের ক্ষমতার ওপর প্রত্যাশা রাখা, “এই যুগের দেব” শয়তানের ওপর প্রত্যাশা রাখার সমরূপ। (২ করি. ৪:৪; ১ তীম. ৬:১৭) এরপর থেকে আলেক্স “সুসমাচারের নিমিত্ত” তার জীবন সাদাসিধে করেন। তিনি এখন আপনাকে বলতে পারবেন যে, তা করা তাকে ও তার পরিবারকে আরও সুখী করে তুলেছে এবং তাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী করেছে।—পড়ুন, মার্ক ১০:২৯, ৩০.

গর্ব

১৬. (ক)  কোন অর্থে গর্ব করা ভালো হতে পারে? (খ) আমরা যদি নিজেদের বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করি, তাহলে কী হতে পারে?

১৬ সঠিক বিষয়গুলো নিয়ে গর্ব করা ভালো হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার সাক্ষি হওয়ায় আমাদের সর্বদা গর্ববোধ করা উচিত। (যির. ৯:২৪) গঠনমূলক আত্মসম্মানবোধ আমাদেরকে উত্তম সিদ্ধান্তগুলো নিতে এবং আমাদের নৈতিক মানগুলোকে খর্ব করা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে। কিন্তু, নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি অথবা পদমর্যাদার ওপর অতিরিক্ত মূল্য দেওয়া আমাদেরকে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।—গীত. ১৩৮:৬; রোমীয় ১২:৩.

১৭, ১৮. (ক) বাইবেলে উল্লেখিত নম্র ব্যক্তি ও সেইসঙ্গে গর্বিতমনা ব্যক্তিদের উদাহরণ দিন। (খ) কীভাবে একজন ভাই যিহোবার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গর্বকে সুযোগ দেননি?

১৭ বাইবেলে গর্বিত ব্যক্তি ও সেইসঙ্গে নম্র ব্যক্তিদের উদাহরণ রয়েছে। রাজা দায়ূদ নির্দেশনার জন্য নম্রভাবে যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন এবং যিহোবা তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। (গীত. ১৩১:১-৩) কিন্তু, যিহোবা গর্বিতমনা রাজা নবুখদ্‌নিৎসর এবং বেল্‌শৎসরকে অবনমিত করেছিলেন। (দানি. ৪:৩০-৩৭; ৫:২২-৩০) বর্তমানেও, এমন পরিস্থিতিগুলোর উদয় হয়, যেগুলো আমাদের নম্রতাকে পরীক্ষায় ফেলে। রাইয়েন নামে ৩২ বছর বয়সি একজন পরিচারক দাস একটা নতুন মণ্ডলীতে যোগ দেন। “আমি আশা করেছিলাম, খুব শীঘ্র আমাকে একজন প্রাচীন হিসেবে সুপারিশ করা হবে,” রাইয়েন বলেন, “কিন্তু এক বছর গড়িয়ে যাওয়ার পরও এমনটা ঘটেনি।” রাইয়েন কি এইরকমটা মনে করে ক্রুদ্ধ ও তিক্ত হয়ে উঠবেন যে, প্রাচীনরা তার প্রতি উপযুক্ত সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে? তিনি কি সভাগুলোতে যাওয়া বন্ধ করে দেবেন, নিজেকে যিহোবা এবং তাঁর লোকেদের কাছে থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গর্বকে সুযোগ দেবেন? আপনি হলে কী করতেন?

১৮ “আশাসিদ্ধির বিলম্বতা সম্বন্ধে আমাদের প্রকাশনাতে প্রাপ্ত সমস্তকিছুই আমি পড়ে ফেলি,” রাইয়েন স্মরণ করে বলেন। (হিতো. ১৩:১২) “আমি উপলব্ধি করতে শুরু করি যে, আমাকে ধৈর্য ও নম্রতা শিখতে হবে। যিহোবার দ্বারা প্রশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ আমাকে দিতে হবে।” রাইয়েন নিজের ওপর থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়ে অন্যদের—মণ্ডলীর এবং ক্ষেত্রের লোকেদের—সেবা করার ওপর মনোযোগ দেন। শীঘ্র, তিনি উন্নতিশীল কয়েকটা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে শুরু করেন। “দেড় বছর পর আমাকে যখন একজন প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, তখন তা আমার কাছে এক অপ্রত্যাশিত বিষয়ের মতো ছিল,” তিনি বলেন, “আমি এটা নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিয়েছিলাম কারণ আমি আমার পরিচর্যা খুবই উপভোগ করছিলাম।”—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:৩, ৪.

যিহোবার নিকটে থাকুন!

১৯, ২০. (ক) কীভাবে আমরা এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে পারি যে, রোজকার কোন বিষয়ই যেন আমাদেরকে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে না দেয়? (খ) সেই ব্যক্তিদের কোন উদাহরণগুলো আমরা অনুকরণ করতে পারি, যারা যিহোবার নিকটে থেকে ছিল?

১৯ এই প্রবন্ধে এবং আগের প্রবন্ধে যে-সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, আমাদের জীবনে সেগুলোর এক সঠিক স্থান রয়েছে। যিহোবার দাস হওয়ায় আমরা গর্ববোধ করি। যিহোবার সর্বোত্তম দানের মধ্যে রয়েছে এক সুখী পরিবার ও উত্তম স্বাস্থ্য। আমরা উপলব্ধি করি যে, জাগতিক কাজ ও টাকাপয়সা আমাদের প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করতে পারে। আমরা জানি যে, বিনোদন আমাদের সতেজ করতে পারে এবং প্রযুক্তি উপকার নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু, এগুলোর যেকোনো একটার অনুধাবন ভুল সময়ে করা, অতিরিক্ত মাত্রায় করা অথবা আমাদের উপাসনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এমন উপায়ে করা আমাদেরকে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

২০ অবশ্য, শয়তান চায় যেন এইরকমটাই হয়। তা সত্ত্বেও, আপনি নিজেকে ও আপনার পরিবারকে এইরকম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারেন! (হিতো. ২২:৩) যিহোবার নিকটবর্তী হোন এবং তাঁর নিকটে থাকুন। এই ক্ষেত্রে নির্দেশনা প্রদান করার জন্য আমাদের কাছে বাইবেলের অনেক উদাহরণ রয়েছে। হনোক ও নোহ “ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন।” (আদি. ৫:২২; ৬:৯) মোশি “যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে যেন দেখিয়াই স্থির থাকিলেন।” (ইব্রীয় ১১:২৭) যিশুর প্রতি যিহোবার ক্রমাগত সমর্থন ছিল কারণ তিনি সবসময়ই তাঁর স্বর্গীয় পিতার সন্তোষজনক কাজ করতেন। (যোহন ৮:২৯) এই উদাহরণগুলো অনুকরণ করুন। “সতত আনন্দ কর; অবিরত প্রার্থনা কর; সর্ব্ববিষয়ে ধন্যবাদ কর।” (১ থিষল. ৫:১৬-১৮) কোনো কিছুই যেন আপনাকে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে না নেয়!

পাদটীকাগুলো

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ “যেভাবে দায়িত্ববান সন্তান গড়ে তোলা যায়” নামক ব্রোশারটি দেখুন।

^ ২০১১ সালের মার্চ মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “উত্তম স্বাস্থ্য বজায় রাখার পাঁচটা চাবিকাঠি” নামক প্রবন্ধটি দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদেরকে বিজ্ঞতার সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সাহায্য করুন

[২১ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

কোনো কিছুই যেন আপনাকে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে না নেয়!

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

মণ্ডলীতে পদমর্যাদা লাভ করার আকাঙ্ক্ষা করার পরিবর্তে, পরিচর্যায় আপনার কাজ উপভোগ করুন!