সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার মহানামের প্রতি সম্মান দেখান

যিহোবার মহানামের প্রতি সম্মান দেখান

যিহোবার মহানামের প্রতি সম্মান দেখান

“আমি চিরকাল তোমার নামের গৌরব করিব।”—গীত. ৮৬:১২.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

ঈশ্বরের নাম জানা বলতে কী বোঝায়?

কীভাবে যিহোবা ধীরে ধীরে তাঁর নাম প্রকাশ করেছিলেন?

যিহোবার নামে চলার অর্থ কী?

১, ২. খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলোর বিপরীতে, যিহোবার সাক্ষিরা ঈশ্বরের নামকে কোন দৃষ্টিতে দেখে থাকে?

 বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলো নিজেদেরকে ঈশ্বরের নাম থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রিভাইজড্‌ স্ট্যান্ডার্ড ভারসন-এর ভূমিকাতে এই কথাগুলো রয়েছে: “একজন এবং একমাত্র ঈশ্বরের যেকোনো উপযুক্ত নাম ব্যবহার করা . . . খ্রিস্টীয় গির্জার সর্বজনীন বিশ্বাসের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত।”

অন্যদিকে, যিহোবার সাক্ষিরা ঈশ্বরের নাম বহন ও তা গৌরবান্বিত করতে পেরে গর্বিত। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৮৬:১২; যিশাইয় ৪৩:১০.) * এ ছাড়া, আমরা সেই নামের অর্থ এবং এর পবিত্রীকরণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সর্বজনীন বিচার্য বিষয় বুঝতে পারাকে এক বিশেষ সুযোগ বলে গণ্য করি। (মথি ৬:৯) কিন্তু, এটা এমন এক বিশেষ সুযোগ, যেটাকে আমরা কখনোই হালকাভাবে নেব না। তাই, আসুন আমরা তিনটে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বিবেচনা করি: ঈশ্বরের নাম জানা বলতে কী বোঝায়? কীভাবে যিহোবা তাঁর মহানাম অনুযায়ী কাজ করেছেন আর এভাবে তাঁর গৌরব বৃদ্ধি করেছেন? আর আমরা কীভাবে যিহোবার নামে চলতে পারি?

ঈশ্বরের নাম জানা বলতে যা বোঝায়

৩. ঈশ্বরের নাম জানা বলতে কী বোঝায়?

ঈশ্বরের নাম জানা বলতে কেবল “যিহোবা” শব্দটির সঙ্গে পরিচিত থাকার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। এর অর্থ হচ্ছে, যিহোবা কেমন ঈশ্বর, তা জানা। এর অন্তর্ভুক্ত তাঁর গুণাবলি, উদ্দেশ্য এবং বাইবেলে প্রকাশিত তাঁর কাজ সম্বন্ধে, যেমন তাঁর দাসদের সঙ্গে তাঁর আচরণ সম্বন্ধে জানা। অবশ্য, যিহোবা ধীরে ধীরে, তাঁর উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতার সঙ্গে মিল রেখে এই অন্তর্দৃষ্টি সম্বন্ধে জানান। (হিতো. ৪:১৮) যিহোবা প্রথম মানব দম্পতির কাছে তাঁর নাম প্রকাশ করেছিলেন; তাই কয়িন জন্মগ্রহণ করার পর হবা এটি ব্যবহার করেছিল। (আদি. ৪:১) বিশ্বস্ত কুলপতি নোহ, অব্রাহাম, ইস্‌হাক এবং যাকোব ঈশ্বরের নাম জানত। অধিকন্তু, এটির প্রতি তাদের উপলব্ধি বৃদ্ধি পেয়েছিল, যখন যিহোবা তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন, তাদের যত্ন নিয়েছিলেন এবং তাদের কাছে তাঁর উদ্দেশ্যের বিভিন্ন দিক প্রকাশ করেছিলেন। ঈশ্বরের নাম সম্বন্ধে মোশিকে বিশেষ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করা হয়েছিল।

৪. কেন মোশি ঈশ্বরকে তাঁর নাম সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছিলেন এবং কেন মোশির উদ্‌বিগ্নতা উপযুক্ত ছিল?

পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ৩:১০-১৫. মোশির বয়স যখন ৮০ বছর, তখন ঈশ্বর তাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ আজ্ঞা দিয়েছিলেন: “তুমি মিসর হইতে আমার প্রজা ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে বাহির করিও।” ফল স্বরূপ, মোশি সম্মান সহকারে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন, যেটার এক গভীর তাৎপর্য ছিল। আসলে, মোশি জিজ্ঞেস করেছিলেন: ‘তোমার নাম কি?’ যেহেতু ঈশ্বরের নাম দীর্ঘসময় ধরে পরিচিত ছিল, তাই মোশির এই প্রশ্নের তাৎপর্য কী ছিল? স্পষ্টতই, তিনি এই নাম যে-ব্যক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে, তাঁর সম্বন্ধে আরও জানতে চেয়েছিলেন—এমন বিষয়গুলো, যেগুলো ঈশ্বরের লোকেদের দৃঢ়প্রত্যয়ী করবে যে, তিনি আসলেই তাদের উদ্ধার করবেন। মোশির উদ্‌বিগ্নতা যথার্থ ছিল কারণ ইস্রায়েলীয়রা অনেক সময় ধরে দাসত্বের অধীনে ছিল। তাদের হয়তো এই বিষয়ে সন্দেহ ছিল যে, তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর তাদের উদ্ধার করতে পারবেন কি না। সত্যি বলতে কী, কিছু ইস্রায়েলীয় এমনকী মিশরীয় দেবদেবীদের উপাসনা করা বেছে নিয়েছিল!—যিহি. ২০:৭, ৮.

৫. মোশির প্রশ্নের উত্তরে যিহোবা তাঁর নামের অর্থের প্রতি কীভাবে আরও আলো বর্ষণ করেছিলেন?

যিহোবা কীভাবে মোশির প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন? একটা অংশে তিনি বলেছিলেন: “ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে এইরূপ বলিও, ‘আছি [“আমি যে হইব, সেই হইব,” পাদটীকা]’ তোমাদের নিকটে আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন।” * এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “যিহোবা [সদাপ্রভু], তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর . . . তোমাদের নিকটে আমাকে পাঠাইয়াছেন।” ঈশ্বর প্রকাশ করেছিলেন যে, তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য তিনি যা হতে চান, তা-ই হবেন অর্থাৎ তিনি সবসময় তাঁর কথা রাখবেন। তাই, ১৫ পদে আমরা পড়ি যে, স্বয়ং যিহোবা বলেছিলেন: “আমার এই নাম অনন্তকালস্থায়ী, এবং এতদ্দ্বারা আমি পুরুষে পুরুষে স্মরণীয়।” এই কথাগুলো শুনে মোশির বিশ্বাস কতই না শক্তিশালী হয়েছিল এবং তিনি কতই না সশ্রদ্ধ ভয়ে পরিপূর্ণ হয়েছিলেন!

যিহোবা তাঁর নাম অনুযায়ী কাজ করেন

৬, ৭. কীভাবে যিহোবা পুরোপুরি তাঁর মহানাম অনুযায়ী কাজ করেছিলেন?

মোশিকে কার্যভার দেওয়ার কিছু সময় পরই, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধারকর্তা ‘হইবার’ দ্বারা পূর্ণরূপে তাঁর নাম অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। তিনি দশটা মারাত্মক আঘাত দ্বারা মিশরকে অবমানিত করেছিলেন এবং একইসঙ্গে মিশরীয় দেবদেবীদের অক্ষমতা প্রকাশ করে দিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ফরৌণও ছিলেন। (যাত্রা. ১২:১২) এরপর, যিহোবা সূফ সাগরকে বিভক্ত করেছিলেন, সেখান দিয়ে ইস্রায়েলকে পার করেছিলেন এবং ফরৌণ ও তার সেনাবাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। (গীত. ১৩৬:১৩-১৫) ‘বৃহৎ ও ভয়ঙ্কর প্রান্তরে’ যিহোবা জীবনের রক্ষাকর্তা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন, যখন তিনি তাঁর লোকেদের জন্য, সম্ভবত কুড়ি কী ত্রিশ লক্ষ বা এরও অধিক লোকের জন্য খাদ্য এবং জল জুগিয়েছিলেন! তিনি এমনকী তাদের বস্ত্র ও তাদের পাদুকা জীর্ণ হতে দেননি। (দ্বিতীয়. ১:১৯; ২৯:৫) হ্যাঁ, কোনো কিছুই যিহোবাকে তাঁর অতুলনীয় নাম অনুযায়ী কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে না। পরবর্তী সময়ে, তিনি যিশাইয়কে বলেছিলেন: ‘আমি, আমিই যিহোবা, আমি ভিন্ন আর ত্রাণকর্ত্তা নাই।’—যিশা. ৪৩:১১.

মোশির উত্তরসূরি যিহোশূয়ও মিশরে এবং প্রান্তরে যিহোবার ভয় উদ্রেককারী কাজ দেখেছিলেন। তাই, তার জীবনের শেষের দিকে যিহোশূয় হৃদয় থেকে দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে তার সহইস্রায়েলীয়দের বলতে পেরেছিলেন: ‘তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণে ও সমস্ত প্রাণে ইহা জ্ঞাত হও যে, তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে, তাহার একটীও বিফল হয় নাই।’ (যিহো. ২৩:১৪) হ্যাঁ, একেবারে স্পষ্টভাবে যিহোবা তাঁর বাক্য পরিপূর্ণ করেছিলেন—তিনি ‘যে হইবার, সেই হইয়াছিলেন।’

৮. কীভাবে যিহোবা আমাদের সময়ে তাঁর নাম অনুযায়ী কাজ করেন?

বর্তমানেও, যিহোবা ‘যে হইবার, সেই হন।’ তাঁর পুত্রের মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, শেষকালে রাজ্যের বার্তা “সমুদয় জগতে” প্রচারিত হবে। (মথি ২৪:১৪) একমাত্র যিহোবাই এই কাজ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করতে পারেন এবং একমাত্র তাঁরই এই কাজ সম্পাদনের বিষয়টা নিশ্চিত করার ক্ষমতা রয়েছে। আর তা করার জন্য তিনি সাধারণ লোকেদের ব্যবহার করেন! (প্রেরিত ৪:১৩) তাই, আমরা যখন এই কাজে অংশ নিই, তখন আমরা আসলে বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতায় অংশ নিই। আমরা আমাদের পিতাকে সম্মান করি এবং এটা যে সত্যি তা আমরা এই প্রার্থনা করার মাধ্যমে দেখিয়ে থাকি: “তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক, তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।”—মথি ৬:৯, ১০.

তাঁর নাম মহৎ

৯, ১০. ইস্রায়েলের সঙ্গে আচরণের মাধ্যমে কীভাবে যিহোবা ক্রমাগত তাঁর নামকে অর্থবহ করে তুলেছিলেন আর এর ফল কী হয়েছিল?

ইস্রায়েলের যাত্রার কিছু সময় পরই, যিহোবা তাঁর লোকেদের কাছে নিজেকে নতুনভাবে প্রকাশ করেছিলেন। ব্যবস্থা চুক্তির মাধ্যমে তিনি তাদের “স্বামী” হয়ে উঠেছিলেন, এর সঙ্গে জড়িত সমস্ত দায়িত্ব স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছিলেন। (যির. ৩:১৪) এর ফলে, ইস্রায়েলীয়রা তাঁর রূপক স্ত্রী, তাঁর নামের লোক হয়ে উঠেছিল। (যিশা. ৫৪:৫, ৬) তারা যখন স্বেচ্ছায় তাঁর বশীভূত হয়েছিল এবং তাঁর আজ্ঞা অনুযায়ী কাজ করেছিল, তখন তিনি তাদের নিখুঁত “স্বামী” হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে আশীর্বাদ করেছিলেন, রক্ষা করেছিলেন এবং শান্তি দান করেছিলেন। (গণনা. ৬:২২-২৭) এভাবে বিভিন্ন জাতির মধ্যে যিহোবার মহানাম গৌরবান্বিত হয়েছিল। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৫-৮; গীতসংহিতা ৮৬:৭-১০.) বস্তুতপক্ষে, ইস্রায়েলের ইতিহাসে, অনেক বিদেশি সত্য উপাসনার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, তারা নয়মীর প্রতি বলা মোয়াবীয় রূতের মতো কথা বলেছিল: “তোমার লোকই আমার লোক, তোমার ঈশ্বরই আমার ঈশ্বর।”—রূৎ. ১:১৬.

১০ প্রায় ১,৫০০ বছর ধরে ইস্রায়েলের সঙ্গে যিহোবার আচরণ তাঁর ব্যক্তিত্বের অনেক নতুন দিক প্রকাশ করেছিল। সেই জাতি বিপথগামী হওয়া সত্ত্বেও, যিহোবা বার বার “কৃপাময়” এবং ‘ক্রোধে ধীর ঈশ্বর’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন। তিনি অসাধারণ ধৈর্যশীল ও দীর্ঘসহিষ্ণু ঈশ্বর ছিলেন। (যাত্রা. ৩৪:৫-৭) কিন্তু, যিহোবার ধৈর্যের একটা সীমা ছিল আর সেই সীমা পার হয়ে গিয়েছিল, যখন যিহুদি জাতি তাঁর পুত্রকে প্রত্যাখ্যান এবং হত্যা করেছিল। (মথি ২৩:৩৭, ৩৮) মাংসিক ইস্রায়েলের বংশধরেরা আর ঈশ্বরের নামের লোক ছিল না। তারা মূলত আধ্যাত্মিকভাবে মৃত হয়ে গিয়েছিল, ঠিক একটা শুষ্ক গাছের মতো। (লূক ২৩:৩১) এটা ঐশিক নামের প্রতি তাদের মনোভাবকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

১১. কীভাবে ঈশ্বরের নাম যিহুদি জাতি থেকে বাদ হয়ে গিয়েছিল?

১১ ইতিহাস দেখায় যে, পরবর্তী সময়ে যিহুদিরা ঈশ্বরের নাম সম্বন্ধে এক কুসংস্কারপূর্ণ মনোভাব গড়ে তুলেছিল, এই নামকে এমনভাবে দেখতে শুরু করেছিল, যেটি উচ্চারণ করা উচিত নয়। (যাত্রা. ২০:৭) ঈশ্বরের নাম ধীরে ধীরে যিহুদি ধর্ম থেকে বাদ হয়ে গিয়েছিল। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তাঁর নামের প্রতি এত অসম্মান দেখে যিহোবা কষ্ট পেয়েছিলেন। (গীত. ৭৮:৪০, ৪১) কিন্তু ঈশ্বর, যিনি “স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী নাম ধারণ করেন,” তিনি স্পষ্টতই এমন লোকেদের সঙ্গে তাঁর নামকে চিরকাল সংযুক্ত রাখেননি, যারা তাঁকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদেরকে তিনি অস্বীকার করেছিলেন। (যাত্রা. ৩৪:১৪) এই বিষয়টা যেন আমাদের সৃষ্টিকর্তার নাম অতি সম্মান সহকারে দেখার গুরুত্ব উপলব্ধি করার ব্যাপারে আমাদের প্রভাবিত করে।

ঈশ্বরের নামের জন্য একদল নতুন প্রজা

১২. কীভাবে যিহোবা ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী তাঁর নামের লোকেদের উৎপন্ন করেছিলেন?

১২ যিরমিয়ের মাধ্যমে যিহোবা এক নতুন জাতির, আধ্যাত্মিক ইস্রায়েলের সঙ্গে “এক নূতন নিয়ম” বা চুক্তি স্থাপন করার বিষয়ে তাঁর উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছিলেন। এর সমস্ত সদস্য, “ক্ষুদ্র ও মহান সকলেই,” যিরমিয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, ‘যিহোবাকে জ্ঞাত’ হবে। (যির. ৩১:৩১, ৩৩, ৩৪) সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল, যখন ঈশ্বর এক নতুন চুক্তি স্থাপন করেছিলেন। নতুন জাতি, ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল,’ যেটার অন্তর্ভুক্ত যিহুদি ও ন-যিহুদি ব্যক্তিরা, তারা ‘ঈশ্বরের নামের জন্য এক দল প্রজা’ অথবা যিহোবা যেমন বলেছিলেন, এমন লোক হয়ে উঠেছিল, যাদের ‘উপরে তাঁহার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে।’—গালা. ৬:১৬; পড়ুন, প্রেরিত ১৫:১৪-১৭; মথি ২১:৪৩.

১৩. (ক) প্রাথমিক খ্রিস্টানরা কি ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করত? ব্যাখ্যা করুন। (খ) আপনার পরিচর্যায় যিহোবার নাম ব্যবহার করার বিশেষ সুযোগকে আপনি কীভাবে দেখেন?

১৩ ‘ঈশ্বরের নামের জন্য এক দল প্রজা’ হিসেবে সেই আধ্যাত্মিক জাতির সদস্যরা ঐশিক নাম ব্যবহার করেছিল আর নিশ্চিতভাবেই ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃত করার সময় তা করেছিল। * তাই, ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রেরিত পিতর যখন যিহুদি ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের এক আন্তর্জাতিক শ্রোতাদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তখন তিনি বেশ কয়েক বার ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করেছিলেন। (প্রেরিত ২:১৪, ২০, ২১, ২৫, ৩৪NW) প্রাথমিক খ্রিস্টানরা যিহোবাকে সম্মানিত করেছিল, তাই তিনিও প্রচার কাজের ব্যাপারে তাদের প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেছিলেন। বর্তমানেও, যিহোবা আমাদের পরিচর্যায় আশীর্বাদ করেন, যখন আমরা গর্বের সঙ্গে তাঁর নাম ঘোষণা করি এবং আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে, সম্ভব হলে তাদের নিজেদের বাইবেল থেকে তাঁর নাম দেখাই। এভাবে আমরা তাদেরকে সত্য ঈশ্বরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। কী এক বিশেষ সুযোগ—তাদের জন্য এবং আমাদের জন্য! এভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে যিহোবার সঙ্গে এমন এক চমৎকার সম্পর্ক শুরু করতে পারে, যা দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং চিরকাল থাকবে।

১৪, ১৫. ধর্মভ্রষ্টতা ছড়িয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, যিহোবা তাঁর স্মরণীয় নামের ব্যাপারে কী করেছেন?

১৪ পরবর্তী সময়ে, প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে ধর্মভ্রষ্টতা খারাপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল আর তা বিশেষভাবে প্রেরিতদের মৃত্যুর পর। (২ থিষল. ২:৩-৭) মিথ্যা শিক্ষকরা এমনকী ঈশ্বরের নাম ব্যবহার না করার ব্যাপারে যে-যিহুদি প্রথা ছিল, তা গ্রহণ করে নিয়েছিল। কিন্তু, যিহোবা কি তাঁর স্মরণীয় নাম মুছে যেতে দিয়েছিলেন? কখনোই না! এটা ঠিক যে, বর্তমানে এটির একেবারে সঠিক উচ্চারণ নির্ণয় করা যায় না, তবে এই নাম এখনও টিকে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে, এই নাম বিভিন্ন বাইবেল অনুবাদে এবং সেইসঙ্গে বাইবেল পণ্ডিতদের লেখাগুলোতেও ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৭৫৭ সালে চার্লস পিটারস্‌ লিখেছিলেন যে, ঈশ্বরের অনেক উপাধির বৈসাদৃশ্যে “যিহোবা” নামটি “তাঁর বৈশিষ্ট্যকে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে বলে মনে হয়।” ১৭৯৭ সালে ঈশ্বরের উপাসনার ওপর ভিত্তি করে লেখা একটি বইয়ে হপ্‌টন হেনিস ৭ অধ্যায়ের শুরুতে লিখেছিলেন: “যিহুদিদের মধ্যে ঈশ্বরের সঠিক নাম যিহোবা; যারা কেবল তাঁকেই উপাসনা করত; যেমনটা খ্রিস্ট এবং তাঁর প্রেরিতরাও করেছিল।” হেনরি গ্রু (১৭৮১-১৮৬২) কেবল ঈশ্বরের নামই ব্যবহার করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে স্বীকার করেছিলেন যে, এটিকে নিন্দা করা হয়েছে আর এটিকে অবশ্যই পবিত্রীকৃত করতে হবে। একইভাবে, চার্লস টি. রাসেলের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী জর্জ স্টর্জও (১৭৯৬-১৮৭৯) ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করেছিলেন, যেমনটা রাসেল নিজে করেছিলেন।

১৫ উনিশ-শো একত্রিশ সাল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল, কারণ সেই বছরেই আন্তর্জাতিক বাইবেল ছাত্ররা, ঈশ্বরের লোকেদের তখন যে-নামে ডাকা হতো, তারা যিহোবার সাক্ষি এই শাস্ত্রীয় নাম গ্রহণ করেছিল। (যিশা. ৪৩:১০-১২) এভাবে, জগতের কাছে তারা এই বিষয়টা ঘোষণা করেছিল যে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরের দাস হতে পেরে, ‘তাঁহার নামের জন্য এক দল প্রজা’ হতে পেরে এবং সেই নামের প্রশংসা করতে পেরে তারা গর্বিত। (প্রেরিত ১৫:১৪) এই ঘটনাগুলো মালাখি ১:১১ পদে প্রাপ্ত যিহোবার এই বাক্য স্মরণ করিয়ে দেয়: “সূর্য্যের উদয়স্থান অবধি তাহার অস্তগমনস্থান পর্য্যন্ত জাতিগণের মধ্যে আমার নাম মহৎ।”

যিহোবার নামে চলুন

১৬. যিহোবার নামে চলার বিষয়টাকে কেন আমাদের এক সম্মান হিসেবে দেখা উচিত?

১৬ ভাববাদী মীখা লিখেছিলেন: ‘জাতিমাত্র প্রত্যেকে আপন আপন দেবের নামে চলে; আর আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর যিহোবার নামে চলিব।’ (মীখা ৪:৫) যিহোবা যে বাইবেল ছাত্রদের তাঁর নাম বহন করার সুযোগ দিয়েছেন, তা কেবল বিরাট সম্মানের চেয়ে আরও বেশি কিছু ছিল। এটা এমন এক আশ্বাসও ছিল, যা তাঁর অনুমোদনের ইঙ্গিত দেয়। (পড়ুন, মালাখি ৩:১৬-১৮.) কিন্তু, ব্যক্তিগতভাবে আপনার সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনি কি ‘যিহোবার নামে চলিবার’ জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করছেন? এর সঙ্গে যে-বিষয়গুলো জড়িত, সেগুলো কি আপনি উপলব্ধি করেন?

১৭. ঈশ্বরের নামে চলার সঙ্গে কী জড়িত?

১৭ ঈশ্বরের নামে চলার সঙ্গে অন্ততপক্ষে তিনটে বিষয় জড়িত। প্রথমত, অন্যদের কাছে আমাদের এই নাম সম্বন্ধে ঘোষণা করতে হবে, এই বিষয়টা স্বীকার করতে হবে যে, কেবল যারা ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকে, তাহারাই পরিত্রাণ পাইবে।’ (রোমীয় ১০:১৩) দ্বিতীয়ত, আমাদেরকে যিহোবার গুণগুলো, বিশেষভাবে তাঁর প্রেম প্রতিফলিত করতে হবে। (১ যোহন ৪:৮) আর তৃতীয়ত, আমরা সেই সময় ঈশ্বরের নামে চলি, যখন আমরা আনন্দের সঙ্গে তাঁর ধার্মিক মানগুলোর প্রতি বশ্যতা স্বীকার করি, আমাদের পিতার পবিত্র নামের ওপর নিন্দা না নিয়ে আসি। (১ যোহন ৫:৩) আপনি কি ‘যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর যিহোবার নামে চলিবার’ জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

১৮. যিহোবার মহানামকে সম্মান করে এমন সকলে কেন আস্থা সহকারে ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করতে পারে?

১৮ শীঘ্র, যিহোবাকে অবজ্ঞা অথবা তাঁর বিরোধিতা করে এমন সকলে তাঁকে স্বীকার করতে বাধ্য হবে। (যিহি. ৩৮:২৩) এর অন্তর্ভুক্ত এমন ব্যক্তি-বিশেষরা, যারা ফরৌণের মতো মনোভাব দেখায়, যিনি বলেছিলেন: ‘যিহোবা কে, যে আমি তাহার কথা শুনিব?’ এর উত্তর তিনি কত দ্রুতই না পেয়েছিলেন! (যাত্রা. ৫:১, ২; ৯:১৬; ১২:২৯) কিন্তু, আমরা স্বেচ্ছায় যিহোবাকে জানতে পেরেছি। আমরা তাঁর নাম বহন করতে পেরে এবং তাঁর নামের বাধ্য লোক হতে পেরে গর্বিত। তাই, গীতসংহিতা ৯:১০ পদে লিপিবদ্ধ এই প্রতিজ্ঞার ওপর আস্থা রেখে আমরা ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করতে পারি: ‘যাহারা তোমার নাম জানে, তাহারা তোমাতে বিশ্বাস রাখিবে; কেননা, হে যিহোবা, তুমি তোমার অন্বেষণকারীদিগকে পরিত্যাগ কর নাই।’

[পাদটীকাগুলো]

^ এই প্রবন্ধে যে-শাস্ত্রপদগুলোতে “সদাপ্রভু” শব্দটি এসেছে, সেখানে মূল ভাষার বাইবেল অনুযায়ী “যিহোবা” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

^ ঈশ্বরের নামের জন্য যে-ইব্রীয় ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটির অর্থ ‘অস্তিত্বে আনা।’ তাই, যিহোবা নামের অর্থ হল, “তিনি অস্তিত্বে আনেন।”

^ প্রাথমিক খ্রিস্টানদের দ্বারা ব্যবহৃত ইব্রীয় পাঠ্যাংশে টেট্রাগ্র্যামাটোন ছিল, যেটি সাধারণত YHWH হিসেবে প্রতিবর্ণীকরণ করা হতো। সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুযায়ী এই উপসংহারে আসা যায় যে, ইব্রীয় শাস্ত্রের গ্রিক অনুবাদ প্রাথমিক সেপ্টুয়াজিন্ট-এর বেলায়ও একই বিষয় সত্য ছিল।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

মোশি ঈশ্বরের নাম জানতেন আর এটা তার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফরৌণ যিহোবাকে ঈশ্বর হিসেবে স্বীকার করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন