সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি “সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী”?

আপনি কি “সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী”?

আপনি কি “সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী”?

‘যীশু খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন, যেন আপনার নিমিত্ত নিজস্ব প্রজাবর্গকে, সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী প্রজাবর্গকে, শুচি করেন।’ —তীত ২:১৩, ১৪.

আপনি কী বলবেন?

উত্তম কাজগুলোর জন্য উদ্যোগী হওয়াকে কেন আপনি এক সম্মান হিসেবে বিবেচনা করেন?

দানিয়েল ২:৪১-৪৫ পদ কীভাবে পরিচর্যায় উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়?

ঈশ্বরীয় আচরণ লোকেদেরকে কীভাবে সত্য উপাসনার প্রতি এবং যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আকৃষ্ট করে, তা ব্যাখ্যা করুন।

১, ২. যিহোবার সাক্ষিদের কোন অদ্বিতীয় সম্মান রয়েছে আর এই বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?

 অনেকে বিশেষ কোনো সাফল্যের জন্য পুরস্কার পাওয়াকে বিরাট সম্মানের এক বিষয় বলে মনে করে। উদাহরণস্বরূপ, পরস্পর শত্রুতা রয়েছে এমন এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দলগুলোর মধ্যে শান্তি স্থাপন করার জন্য উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করেছে বলে কেউ কেউ নোবেল পুরস্কার লাভ করেছে। কিন্তু, লোকেদেরকে তাদের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য একজন রাজদূত বা দূত হিসেবে ঈশ্বরের দ্বারা প্রেরিত হওয়া আরও কত বেশি সম্মানের বিষয়!

যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা সেই অদ্বিতীয় সম্মান গ্রহণ করেছি। ঈশ্বর ও খ্রিস্টের আজ্ঞা অনুসারে আমরা লোকদেরকে ‘ঈশ্বরের সহিত সম্মিলিত হইবার’ জন্য অনুরোধ করি। (২ করি. ৫:২০) লোকদেরকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যিহোবা আমাদের ব্যবহার করছেন। দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৫-টারও বেশি জায়গার লক্ষ লক্ষ লোককে ঈশ্বরের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক উপভোগ করার আর এভাবে অনন্তজীবনের আশা লাভ করার জন্য সাহায্য করা হয়েছে। (তীত ২:১১) আন্তরিক উদ্যোগ সহকারে আমরা ‘বিনামূল্যেই জীবন-জল গ্রহণ করিবার ইচ্ছা করে’ এমন যেকোনো ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাই। (প্রকা. ২২:১৭) যেহেতু আমরা এই বিশেষ কার্যভারকে মূল্যবান বলে গণ্য করি এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে এই কাজ করি, তাই উপযুক্তভাবেই আমাদেরকে “সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী” লোক হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। (তীত ২:১৪) আসুন, এখন আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, কীভাবে সৎক্রিয়ার বা ভালো কাজের প্রতি আমাদের উদ্যোগ লোকদেরকে যিহোবার প্রতি আকৃষ্ট করার ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করে। একটা উপায় হল, আমাদের প্রচার কাজের মাধ্যমে।

যিহোবা এবং যিশুর উদ্যোগ অনুকরণ করুন

৩. “সদাপ্রভুর উদ্যোগ” আমাদেরকে কোন বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করে?

ঈশ্বরের পুত্রের শাসন কী সম্পাদন করবে, সেই বিষয়ে উল্লেখ করে যিশাইয় ৯:৭ পদ বলে: “বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্যোগ ইহা সম্পন্ন করিবে।” এই কথাগুলো, মানবজাতির পরিত্রাণের বিষয়ে আমাদের স্বর্গীয় পিতার আগ্রহের ওপর জোর দেয়। যিহোবার উদ্যোগের উদাহরণ এই স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, রাজ্যের ঘোষণাকারী হিসেবে ঈশ্বর আমাদেরকে যে-কাজ দিয়েছেন, সেটা আমাদের সর্বান্তঃকরণের সমর্থন, আমাদের উদ্যম এবং আমাদের উদ্যোগ পাওয়ার যোগ্য। ঈশ্বরকে জানার ব্যাপারে লোকেদেরকে সাহায্য করার জন্য আমাদের আকুল আকাঙ্ক্ষা, যিহোবার উদ্যোগকেই প্রতিফলিত করে। তাই, ঈশ্বরের সহকার্যকারী হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে আমরা কি আমাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী পূর্ণরূপে সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?—১ করি. ৩:৯.

৪. কীভাবে যিশু উদ্যোগের সঙ্গে পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

এ ছাড়া, যিশুর উদ্যোগ বিবেচনা করুন। উদ্যোগের সঙ্গে পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও, তিনি তাঁর পার্থিব জীবনের যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু পর্যন্ত প্রচার কাজের প্রতি উদ্যোগ বজায় রেখেছিলেন। (যোহন ১৮:৩৬, ৩৭) যতই তাঁর বলিদানমূলক মৃত্যু ঘনিয়ে আসছিল, ততই যিহোবাকে জানার ব্যাপারে অন্যদের সাহায্য করার বিষয়ে তাঁর দৃঢ়সংকল্প আরও শক্তিশালী হয়েছিল।

৫. কীভাবে যিশু ডুমুর গাছ সম্বন্ধে তাঁর দৃষ্টান্তের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছিলেন?

উদাহরণস্বরূপ, ৩২ খ্রিস্টাব্দের শরৎকালে, যিশু একজন ব্যক্তির দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন, যার দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মধ্যে এমন একটা ডুমুর গাছ ছিল, যেখানে তিন বছর ধরে কোনো ফল ধরছিল না। দ্রাক্ষাপালককে যখন সেই গাছ কেটে ফেলতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি সেটাতে সার দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছিলেন। (পড়ুন, লূক ১৩:৬-৯.) যিশুর প্রচার কাজের ফল হিসেবে সেই সময়টাতে মাত্র কিছু সংখ্যক শিষ্যকে গণ্য করা যেত। কিন্তু, সেই দৃষ্টান্তে যেমন তুলে ধরা হয়েছে, যিশু যিহূদিয়া এবং পিরিয়াতে তাঁর প্রচার কাজকে আরও জোরদার করার জন্য তাঁর সংক্ষিপ্ত সময়কে—প্রায় ছয় মাসের সময়কে—ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর কয়েক দিন আগে, যিশু তাঁর স্বজাতীয় লোকেদের জন্য ক্রন্দন করেছিলেন, যাদের ‘কর্ণ শুনিতে ভারী হইয়াছিল।’—মথি ১৩:১৫; লূক ১৯:৪১.

৬. কেন পরিচর্যায় আমাদের কাজকে আরও জোরদার করা উচিত?

যেহেতু আমরা শেষকালের একেবারে নিকটে বাস করছি, তাই প্রচার কাজের প্রতি আমাদের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা কি অতীব গুরুত্বপূর্ণ নয়? (পড়ুন, দানিয়েল ২:৪১-৪৫.) যিহোবার সাক্ষি হওয়া কতই না অপূর্ব এক সুযোগ! পৃথিবীতে একমাত্র আমরাই মানবজাতির সমস্যাগুলোর প্রকৃত সমাধানের বিষয়ে আশা প্রদান করি। সংবাদপত্রের একজন লেখিকা সম্প্রতি এই প্রশ্নটার উত্তর দেওয়া অসম্ভব বলে বর্ণনা করেছেন যে, “কেন ভালো লোকেদের প্রতি মন্দ বিষয়গুলো ঘটে?” শুনতে ইচ্ছুক এমন সমস্ত ব্যক্তিকে এই ধরনের প্রশ্নের বাইবেলভিত্তিক উত্তর দেওয়া আমাদের খ্রিস্টীয় দায়িত্ব ও সেইসঙ্গে বিশেষ সুযোগ। আমরা যখন ঐশিক কার্যভার পালন করি, তখন আমাদের ‘আত্মায় উত্তপ্ত হইবার’ যথেষ্ট কারণ রয়েছে। (রোমীয় ১২:১১) ঈশ্বরের আশীর্বাদে, উদ্যোগের সঙ্গে করা আমাদের সুসমাচার প্রচার কাজ অন্যদের যিহোবাকে জানতে এবং ভালোবাসতে সাহায্য করতে পারে।

আত্মত্যাগমূলক এক মনোভাব যিহোবাকে সম্মানিত করে

৭, ৮. কীভাবে এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব যিহোবাকে সম্মানিত করে?

প্রেরিত পৌলের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যেমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, আমাদের পরিচর্যার কারণে আমাদের হয়তো “অনিদ্রায়” এবং “অনাহারে” থাকতে হতে পারে। (২ করি. ৬:৫) এই অভিব্যক্তিগুলো আত্মত্যাগের এক স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে এবং আমাদেরকে হয়তো সেই অগ্রগামীদের কথা মনে করিয়ে দেয়, যারা পরিচর্যাকে জীবনে প্রথমে রাখে এবং নিজেদের ভরণপোষণ নিজেরাই জুগিয়ে থাকে। আমাদের সেই নিয়োজিত মিশনারিদের কথাও বিবেচনা করুন, যারা বিদেশে গিয়ে লোকেদের সেবা করার জন্য ‘আপনাদিগকে পেয় নৈবেদ্যরূপে সেচিত করিয়া থাকে।’ (ফিলি. ২:১৭) আমাদের সেই পরিশ্রমী প্রাচীনদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা যিহোবার মেষদের যত্ন নেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে খাওয়ার অথবা ঘুমানোর সুযোগ পায় না? আমাদের মধ্যে সেই বয়স্ক এবং অসুস্থ ভাইবোনেরাও রয়েছে, যারা খ্রিস্টীয় সভায় উপস্থিত হওয়ার এবং পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার জন্য তাদের সর্বোত্তমটা করে থাকে। আমরা যখন ঈশ্বরের এই আত্মত্যাগী দাসদের কথা চিন্তা করি, তখন আমাদের হৃদয় কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে। এইরকম প্রচেষ্টা অন্যেরা আমাদের পরিচর্যাকে কীভাবে দেখে, সেটার ওপর প্রভাব ফেলে।

যুক্তরাজ্যের লিংকনশাইরের বোস্টন টার্গেট নামে একটা পত্রিকায় পাঠানো চিঠির মধ্যে একজন ন-সাক্ষি পাঠক বলেছিলেন: “লোকেরা ধর্মের প্রতি তাদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে . . . গির্জার পরিচারকরা সারাদিন কী করে? তারা তো খ্রিস্টের মতো লোকেদের কাছে যায় না . . . একমাত্র যে-ধর্মের লোকেরা এই বিষয়টা করে থাকে বলে মনে হয়, তারা হল যিহোবার সাক্ষিরা, যারা লোকেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং যারা প্রকৃতই সত্য সম্বন্ধে প্রচার করার কাজে যুক্ত রয়েছে।” আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবে পরিপূর্ণ এই জগতে আমাদের আত্মত্যাগমূলক মনোভাব যিহোবা ঈশ্বরের জন্য প্রচুর সম্মান নিয়ে আসে।—রোমীয় ১২:১.

৯. কী আমাদেরকে আমাদের পরিচর্যায় ভালো কাজের জন্য উদ্যোগ বজায় রাখতে অনুপ্রাণিত করতে পারে?

কিন্তু, আমরা যদি মনে করি যে, পরিচর্যার প্রতি আমাদের উদ্যোগ হারিয়ে যাচ্ছে, তাহলে কী করতে পারি? এক্ষেত্রে, প্রচার কাজের মাধ্যমে যিহোবা যা সম্পাদন করছেন, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উপকারজনক হবে। (পড়ুন, রোমীয় ১০:১৩-১৫.) বিশ্বাস সহকারে “প্রভুর [“যিহোবার,” NW]” নামে ডাকার ওপর পরিত্রাণ নির্ভর করে কিন্তু আমরা যদি তাদের কাছে প্রচার না করি, তাহলে লোকেরা তা করতে পারবে না। এই বিষয়টা উপলব্ধি করা যেন আমাদেরকে ভালো কাজের জন্য উদ্যোগ বজায় রাখতে এবং রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করার বিষয়ে অধ্যবসায়ী হতে পরিচালিত করে।

উত্তম আচরণ লোকেদেরকে ঈশ্বরের প্রতি আকৃষ্ট করে

১০. কেন বলা যেতে পারে যে, আমাদের উত্তম আচরণ লোকেদেরকে যিহোবার প্রতি আকৃষ্ট করে?

১০ পরিচর্যার জন্য যদিও উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ, তবে কেবল উদ্যোগই লোকেদেরকে যিহোবার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট নয়। উদ্যোগী কাজের দ্বিতীয় যে-বিষয়টা লোকেদেরকে ঈশ্বরের প্রতি আকৃষ্ট করে, তা হল উত্তম খ্রিস্টীয় আচরণ। পৌল আমাদের আচরণের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে এই কথাগুলো লিখেছিলেন: “আমরা কোন বিষয়ে কোন ব্যাঘাত জন্মাই না, যেন সেই পরিচর্য্যা-পদ কলঙ্কিত না হয়।” (২ করি. ৬:৩) আমাদের গঠনমূলক কথাবার্তা এবং ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ ঈশ্বরের শিক্ষাকে ভূষিত করে, যিহোবার উপাসনাকে অন্যদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। (তীত ২:১০) বস্তুতপক্ষে, আন্তরিক লোকেরা যখন আমাদের খ্রিস্টতুল্য আচরণ দেখে, তখন প্রায়ই আমরা তাদের ইতিবাচক কথা শুনে থাকি।

১১. কেন আমাদের নিজেদের আচরণের প্রভাব নিয়ে প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করা উচিত?

১১ যদিও আমরা স্বীকার করি যে, আমাদের কাজ লোকেদের ওপর উত্তম প্রভাব ফেলতে পারে কিন্তু এর বিপরীতটাও হতে পারে। তাই, আমরা কর্মক্ষেত্রে, বাড়িতে অথবা স্কুলে, যেখানেই থাকি না কেন, আমরা চেষ্টা করি যেন কেউ আমাদের পরিচর্যায় এবং আচরণে দোষ ধরার কোনো ভিত্তি খুঁজে না পায়। আমরা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করেই চলি, তাহলে নিজেদের পরিণতি হবে মারাত্মক। (ইব্রীয় ১০:২৬, ২৭) এই বিষয়টা যেন আমাদেরকে আমরা যা করি ও সেইসঙ্গে আমাদের জীবনধারা অন্যদের কাছে কী প্রকাশ করে, তা নিয়ে প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করতে অনুপ্রাণিত করে। এই জগতের নৈতিক মান যতই নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে, ততই আন্তরিক ব্যক্তিরা দিন দিন “যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ দেখিতে” পারবে। (মালাখি ৩:১৮) হ্যাঁ, আমাদের উত্তম খ্রিস্টীয় আচরণ লোকেদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হওয়ার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১২-১৪. আমরা যেভাবে বিশ্বাসের পরীক্ষা সহ্য করি, তা কীভাবে আমাদের পরিচর্যার ওপর অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে? একটা উদাহরণ দিন।

১২ করিন্থীয়দের কাছে লেখার সময় পৌল উল্লেখ করেছিলেন যে, তাকে ক্লেশ, সংকট, প্রহার এবং কারাবাস ভোগ করতে হয়েছিল। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৬:৪, ৫.) আমরা যখন বিশ্বাসের পরীক্ষা ভোগ করি, তখন আমাদের ধৈর্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সত্য গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: কয়েক বছর আগে, অ্যাংগোলার একটা এলাকায় যিহোবার সাক্ষিদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। দুজন বাপ্তাইজিত সাক্ষি এবং ৩০ জন আগ্রহী ব্যক্তি, যারা আমাদের সভাগুলোতে যোগ দিচ্ছিল, তাদেরকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল। এরপর, বিরোধীরা যখন এই নির্দোষ ব্যক্তিদেরকে চাবুক মেরে রক্তাক্ত করছিল, তখন স্থানীয় লোকেরা তা দেখার জন্য সেখানে জড়ো হয়েছিল। এমনকী মহিলা এবং শিশুরাও এই নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রেহাই পায়নি। এর উদ্দেশ্য ছিল লোকেদের ভয় দেখানো, যাতে কেউ যিহোবার সাক্ষিদের কথা না শোনে। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় হল, জনসাধারণের সামনে মারধর করার পর, সেই এলাকার অনেক সদস্য সাক্ষিদের কাছে গিয়ে গৃহ বাইবেল অধ্যয়নের জন্য অনুরোধ করেছিল! তাই, রাজ্যের প্রচার কাজ এগিয়ে গিয়েছিল এবং এর ফলে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছিল এবং অনেক আশীর্বাদ লাভ করা গিয়েছিল।

১৩ এই উদাহরণ সেই সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্বন্ধে তুলে ধরে, যা বাইবেলের নীতিগুলোর প্রতি আমাদের অবস্থানের কারণে অন্যদের ওপর পড়তে পারে। পিতর এবং অন্যান্য প্রেরিতদের সাহসী অবস্থানের কারণে অনেক লোককে ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হতে দেখে আমরা হয়তো অবাক হয়ে যাই। (প্রেরিত ৫:১৭-২৯) আমাদের ক্ষেত্রে, সহছাত্রছাত্রী, সহকর্মী অথবা আমাদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো অনুকূল সাড়া দিতে পারে, যখন তারা আমাদেরকে যা সঠিক, সেটার প্রতি সাহসী অবস্থান নিতে দেখে।

১৪ আমাদের কোনো না কোনো ভাইবোন সবসময়ই তাড়না ভোগ করছে। উদাহরণস্বরূপ, আর্মেনিয়াতে প্রায় ৪০ জন ভাই নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার জন্য জেলে রয়েছে এবং আরও অনেককে হয়তো পরবর্তী মাসগুলোতে জেলে নিয়ে যাওয়া হবে। এরিট্রিয়াতে যিহোবার ৫৫ জন দাস জেলে রয়েছে, যাদের মধ্যে কারো কারো বয়স ৬০-এরও ওপরে। দক্ষিণ কোরিয়ায়, প্রায় ৭০০ জন সাক্ষি তাদের বিশ্বাসের কারণে জেলে রয়েছে। এই পরিস্থিতি ৬০ বছর ধরে চলছে। আসুন আমরা এই প্রার্থনা করি যে, বিভিন্ন দেশে আমাদের তাড়িত ভাইবোনদের বিশ্বস্ততা যেন ঈশ্বরের গৌরব নিয়ে আসে এবং ধার্মিকতাকে ভালোবাসে এমন ব্যক্তিদেরকে সত্য উপাসনার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার জন্য সাহায্য করে।—গীত. ৭৬:৮-১০.

১৫. কীভাবে এক সৎ জীবনযাপন অন্যদেরকে সত্যের প্রতি আকৃষ্ট করে, তা উদাহরণের সাহায্যে তুলে ধরুন।

১৫ আমাদের সৎ জীবনযাপনও লোকেদেরকে সত্যের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৬:৪, .) উদাহরণস্বরূপ, এই অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন: একজন বোন যখন বাসে উঠে টিকেটের জন্য টাকা দিতে যাচ্ছিলেন, তখন তার পরিচিত একজন ব্যক্তি তাকে বলেছিলেন যে, এত স্বল্প দূরত্বের জন্য তার টিকেটের টাকা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সেই বোন তাকে বলেছিলেন, এমনকী একটা স্টপেজের জন্যও টিকেটের টাকা দেওয়া উপযুক্ত। এরপর, সেই পরিচিত ব্যক্তি বাস থেকে নেমে যান। তখন বাসচালক সেই বোনের দিকে ঘুরে তাকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কি একজন যিহোবার সাক্ষি?” “হ্যাঁ,” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন। “কেন এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন?” “বাস টিকেটের টাকা দেওয়ার বিষয়ে আমি আপনাদের আলোচনা শুনেছি আর আমি জানি, যে-অল্পসংখ্যক লোক এমনটা করে থাকে, তাদের মধ্যে যিহোবার সাক্ষিরাও রয়েছে আর তারা সমস্ত বিষয়ে সৎ।” কয়েক মাস পর, একটা সভাতে একজন ব্যক্তি সেই বোনের কাছে আসেন এবং বলেন, “আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন? আমি হচ্ছি সেই বাসচালক, টিকেটের টাকা দেওয়ার বিষয়ে যার সঙ্গে আপনার কথা হয়েছিল। আপনার আচরণ লক্ষ করার পর আমি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে অধ্যয়ন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই।” সততার বিষয়ে আমাদের সুনাম আমাদেরকে নির্ভরযোগ্য পরিচারক হিসেবে তুলে ধরে।

সবসময় এমন গুণাবলি প্রদর্শন করুন, যেগুলো ঈশ্বরকে সম্মানিত করে

১৬. আমরা যখন দীর্ঘসহিষ্ণুতা, প্রেম এবং দয়া প্রদর্শন করি, তখন কী হয়? মিথ্যা ধর্মীয় নেতারা কী করে থাকে, সেটার একটা উদাহরণ দিন।

১৬ এ ছাড়া, আমরা সেই সময়ও লোকেদেরকে যিহোবার প্রতি আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করি, যখন আমরা দীর্ঘসহিষ্ণুতা, প্রেম এবং দয়ার মতো গুণাবলি প্রদর্শন করি। আমাদেরকে লক্ষ করে এমন কিছু ব্যক্তি হয়তো যিহোবা, তাঁর উদ্দেশ্য এবং তাঁর লোকেদের সম্বন্ধে জানতে চায়। সত্য খ্রিস্টানদের মনোভাব এবং আচরণ সেই ব্যক্তিদের লোকদেখানো ঈশ্বরীয় ভক্তির সম্পূর্ণ বিপরীত, যাদের উপাসনা বেশিরভাগ সময়ই কপটতাপূর্ণ কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। কিছু ধর্মীয় নেতা তাদের পালকে প্রতারিত করার মাধ্যমে ধনী হয়েছে আর এভাবে অর্জিত বেশিরভাগ অর্থই ব্যয়বহুল বাড়ি এবং গাড়ি—এমনকী কুকুরের জন্য শীতাতপ নিয়িন্ত্রত ঘর—কেনার জন্য ব্যবহার করছে। বাস্তবিকপক্ষে, খ্রিস্টের অনুসারী বলে দাবি করে এমন অনেকের ‘বিনামূল্যেই দান করিবার’ কোনো প্রবণতাই নেই। (মথি ১০:৮) এর পরিবর্তে, প্রাচীন ইস্রায়েলের স্বেচ্ছাচারী যাজকদের মতো তারা “বেতন লইয়া শিক্ষা দেয়”—এবং তারা যা শিক্ষা দেয়, সেগুলোর অধিকাংশই অশাস্ত্রীয়। (মীখা ৩:১১) এই ধরনের কপট আচরণ কাউকেই ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত করে না।

১৭, ১৮. (ক) আমরা যখন আমাদের জীবনে যিহোবার গুণাবলি প্রতিফলিত করি, তখন কীভাবে আমরা যিহোবার সম্মান নিয়ে আসি? (খ) কী আপনাকে উত্তম কাজ করে চলতে অনুপ্রাণিত করে?

১৭ অন্যদিকে, প্রকৃত খ্রিস্টানদের শিক্ষা এবং প্রতিবেশীদের প্রতি তাদের উত্তম কাজ অনেকের হৃদয় স্পর্শ করে। উদাহরণস্বরূপ, একবার ঘরে ঘরে প্রচার করার সময়, একজন অগ্রগামী ভাইকে দেখে একজন বয়স্ক বিধবা সঙ্গেসঙ্গে তাকে চলে যেতে বলেছিলেন। সেই বিধবা বলেন যে, যখন ওই ভাই কলিংবেল বাজিয়েছিলেন, তখন তিনি রান্নাঘরে ল্যাডারের ওপরে উঠে একটা বাল্‌ব বদলানোর চেষ্টা করছিলেন। “আপনার পক্ষে একা তা করা নিরাপদ নয়,” ভাই বলেছিলেন। এরপর অগ্রগামী ভাই বাল্‌ব বদলে দিয়েছিলেন এবং তার কাজে চলে গিয়েছিলেন। সেই বিধবার ছেলে যখন ঘটনাটা জানতে পারেন, তখন তিনি এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, উপলব্ধি প্রকাশ করার জন্য তিনি সেই ভাইকে খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। পরিশেষে, সেই ছেলে বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছিলেন।

১৮ কেন আপনি উত্তম কাজ করে চলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ? এর কারণ হতে পারে, আপনি জানেন যে, আমরা যখন আমাদের পরিচর্যার প্রতি উদ্যোগ প্রকাশ করি এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি, তখন আমরা যিহোবাকে সম্মানিত করি এবং অন্যদেরকে হয়তো পরিত্রাণ লাভ করার জন্য সাহায্য করি। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:৩১-৩৩.) সুসমাচার প্রচার করার সময় উত্তম কাজের প্রতি আমাদের উদ্যোগ এবং ঈশ্বরীয় উপায়ে আচরণ করা, ঈশ্বরের জন্য এবং সহমানবদের জন্য প্রেম প্রকাশ করার এক গভীর আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত হয়। (মথি ২২:৩৭-৩৯) আমরা যদি উত্তম কাজ করার জন্য উদ্যোগী হই, তাহলে এখন আমরা প্রচুররূপে আনন্দ এবং পরিতৃপ্তি লাভ করব। অধিকন্তু, আমরা সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে পারি, যখন সমস্ত মানবজাতি আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবার সম্মানের জন্য সত্য উপাসনার প্রতি উদ্যোগ প্রকাশ করবে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

পরিচর্যায় আপনার উপস্থিতিই প্রত্যক্ষদর্শীদের এক জোরালো সাক্ষ্য প্রদান করে

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার সততা এবং কঠোর পরিশ্রম অলক্ষিত থাকে না