সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

উত্তম ভাববিনিময়ের মাধ্যমে আপনার বিয়েকে শক্তিশালী করুন

উত্তম ভাববিনিময়ের মাধ্যমে আপনার বিয়েকে শক্তিশালী করুন

উত্তম ভাববিনিময়ের মাধ্যমে আপনার বিয়েকে শক্তিশালী করুন

“উপযুক্ত সময়ে কথিত বাক্য রৌপ্যের ডালিতে সুবর্ণ নাগরঙ্গ ফলের তুল্য।” —হিতো. ২৫:১১.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কীভাবে অন্তর্দৃষ্টি প্রদর্শন করা বিয়ের মধ্যে ভাববিনিময়কে উন্নত করে?

কেন বিবাহিত সঙ্গীদের পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে?

নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা একটা বিয়েতে কোন প্রভাব ফেলতে পারে?

১. কীভাবে উত্তম ভাববিনিময় বিয়ের ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হয়েছে?

 “অন্য যে-কারো চেয়ে আমি বরং আমার স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটাতে চাই,” কানাডার একজন ভাই বলেন। “আমি যখন তার সঙ্গে জীবনের কোনো সুখ ভাগ করে নিই, তখন তা আরও বৃদ্ধি পায় এবং যখন দুঃখ ভাগ করে নিই, তখন তা হ্রাস পায়।” অস্ট্রেলিয়ার একজন স্বামী লেখেন: “আমাদের ১১ বছরের বিবাহিত জীবনে এমন একটা দিনও অতিবাহিত হয়নি, যে-দিন আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিনি। আমি এবং আমার স্ত্রী আমাদের বিয়ের দৃঢ়তা নিয়ে অরক্ষিত বোধ করি না অথবা উদ্‌বিগ্ন হই না। এর একটা প্রধান কারণ হল, সবসময় ও সেইসঙ্গে অর্থপূর্ণ ভাববিনিময় করা।” কস্টা রিকার একজন বোন বলেন: “উত্তম ভাববিনিময় আমাদের বিয়েকে কেবল সমৃদ্ধই করেনি; এটা আমাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী করেছে, প্রলোভনগুলো থেকে আমাদের সুরক্ষা করেছে, দম্পতি হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং আমাদের প্রেম বৃদ্ধি করেছে।”

২. কোন বিষয়গুলো উত্তম ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে?

আপনি এবং আপনার বিবাহ সঙ্গী কি মধুর ভাববিনিময় উপভোগ করেন, নাকি অর্থপূর্ণ আলোচনা করাকে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলে মনে করেন? এটা ঠিক যে, বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে কারণ বিয়ে এমন দুজন অসিদ্ধ ব্যক্তিকে এক করে, যাদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব রয়েছে আর এর অন্তর্ভুক্ত সেই বৈশিষ্ট্যগুলো, যেগুলো তাদের সংস্কৃতি এবং পটভূমিকে প্রতিফলিত করে। (রোমীয় ৩:২৩) এ ছাড়া, কোনো দম্পতি হয়তো ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে ভাববিনিময় করে থাকে। উপযুক্ত কারণেই বিবাহ সম্বন্ধীয় গবেষক, জন এম. গটম্যান এবং নেন সিলভার বলেছে: “এক দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সাহস, দৃঢ়সংকল্প এবং খাপ খাইয়ে নেওয়ার মনোভাব প্রয়োজন।”

৩. কী দম্পতিদেরকে তাদের বিয়েকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছে?

বস্তুতপক্ষে, এক সফল বিয়ে হল কঠোর পরিশ্রমের ফল। কিন্তু, এর ফলাফলের অন্তর্ভুক্ত হল অপরিমেয় সুখ। পরস্পরকে ভালোবাসে এমন অনেক বিবাহিত সঙ্গী একত্রে প্রকৃতরূপে জীবন উপভোগ করতে পারে। (উপ. ৯:৯) ইস্‌হাক ও রিবিকার প্রেমপূর্ণ বিবাহবন্ধন সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। (আদি. ২৪:৬৭) তারা এমনকী স্বামী এবং স্ত্রী হিসেবে একত্রে কিছু সময় কাটানোর পরও, এইরকম কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, পরস্পরের প্রতি তাদের অনুরাগ কমে গিয়েছিল। বর্তমানের অনেক দম্পতি সম্বন্ধেও একই কথা বলা যেতে পারে। তাদের রহস্যটা কী? অন্তর্দৃষ্টি, প্রেম, গভীর সম্মান এবং নম্রতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার ও সেগুলো প্রদর্শন করার মাধ্যমে তারা তাদের চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি অকপটভাবে, তবে দয়ার সঙ্গে প্রকাশ করতে শিখেছে। এখন আমরা যেমন দেখব যে, একটা বিয়েতে যখন এই মৌলিক গুণগুলো দেখা যায়, তখন ভাববিনিময়ের পথ সবসময় খোলা থাকে।

অন্তর্দৃষ্টি প্রদর্শন করুন

৪, ৫. কীভাবে অন্তর্দৃষ্টি এক বিবাহিত দম্পতিকে পরস্পরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে? উদাহরণ দিন।

“যে বাক্যে মন” বা অন্তর্দৃষ্টি “দেয়, সে মঙ্গল পায়,” হিতোপদেশ ১৬:২০ পদ বলে। নিশ্চিতভাবেই, এটা বিয়ে ও পারিবারিক জীবনের ব্যাপারে সত্য। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২৪:৩.) অন্তর্দৃষ্টি এবং প্রজ্ঞার সর্বোত্তম উৎস হল ঈশ্বরের বাক্য। আদিপুস্তক ২:১৮ পদ আমাদের বলে, ঈশ্বর নারীকে পুরুষের “অনুরূপ [“পরিপূরক,” NW]” হিসেবে তৈরি করেছেন, তার প্রতিরূপ হিসেবে নয়। নারী যেভাবে ভাববিনিময় করে থাকে, সেটার মাধ্যমে তার ভূমিকা প্রতিফলিত হয়। অবশ্য, বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে ভাববিনিময় করে থাকে, তবে নারীরা সাধারণত তাদের অনুভূতি সম্বন্ধে, অন্য লোকেদের বিষয়ে এবং সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে। তারা উষ্ণ ও অন্তরঙ্গ ভাববিনিময়কে মূল্য দিয়ে থাকে কারণ এটা তাদের এই আশ্বাস প্রদান করে যে, তারা ভালোবাসার পাত্র। অন্যদিকে, অনেক পুরুষ তাদের অনুভূতি নিয়ে বেশি আলোচনা করতে চায় না বরং বিভিন্ন কাজ, সমস্যা ও সমাধান নিয়ে কথা বলতে আরও বেশি পছন্দ করে। আর পুরুষরা সম্মান পেতে চায়।

“আমার স্বামী মন দিয়ে আমার কথা শোনার চেয়ে বরং দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে চায়,” ব্রিটেনের একজন বোন বলেন। “এটা সত্যিই অনেক হতাশাজনক, বিশেষভাবে সেই সময়, যখন আমি শুধু তার সঙ্গে বসে একটু ‘চা খেতে এবং তার সমবেদনা পেতে চাই।’” একজন স্বামী লিখেছিলেন: “আমাদের বিয়ের পর প্রথম প্রথম আমার প্রবণতা ছিল আমার স্ত্রীর যেকোনো সমস্যা দ্রুত সমাধান করে দেওয়া। কিন্তু, শীঘ্র আমি জানতে পারি যে, সে আসলে যা চায়, তা হল আমি যেন মন দিয়ে তার কথা শুনি।” (হিতো. ১৮:১৩; যাকোব ১:১৯) অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন একজন স্বামী তার স্ত্রীর অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দেন এবং সেই অনুযায়ী কথা বলার চেষ্টা করেন। এর পাশাপাশি তিনি তাকে এই আশ্বাস প্রদান করেন যে, তার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। (১ পিতর ৩:৭) এর ফলে, স্ত্রী তার স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করেন। একজন স্বামী ও স্ত্রী যখন তাদের শাস্ত্রীয় ভূমিকা বুঝতে পারে, তা উপলব্ধি করে এবং পালন করে, তখন তাদের বন্ধন এক অপূর্ব বিষয় হয়ে ওঠে। অধিকন্তু, বিজ্ঞ ও ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার এবং সেগুলো বাস্তবায়িত করার সময় তারা একত্রে কাজ করতে সমর্থ হয়।

৬, ৭. (ক) কীভাবে উপদেশক ৩:৭ পদে প্রাপ্ত নীতি বিবাহিত দম্পতিদের অন্তর্দৃষ্টি দেখানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? (খ) কীভাবে একজন স্ত্রী বিচক্ষণতা দেখাতে পারেন এবং একজন স্বামীর কোন প্রচেষ্টা করা উচিত?

অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন এক দম্পতি এও জানে যে, “নীরব থাকিবার কাল ও কথা কহিবার কাল” আছে। (উপ. ৩:১, ৭) “এখন আমি বুঝতে পারি যে, সবসময় সব বিষয় নিয়ে কথা বলা উপযুক্ত নয়,” দশ বছর ধরে বিবাহিত এমন একজন বোন মন্তব্য করেন। “আমার স্বামী যদি কোনো কাজ অথবা দায়িত্ব নিয়ে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকে, তখন আমি কোনো বিষয় নিয়ে সেই সময় কথা না বলে বরং পরে বলার চেষ্টা করি। ফল স্বরূপ, আমাদের আলোচনা আরও সহজ হয়ে ওঠে।” এ ছাড়া, বিচক্ষণ স্ত্রীরা সদয়ভাবে কথা বলে, তারা জানে যে, “উপযুক্ত সময়ে” সঠিকভাবে বাছাই করা “কথিত” বাক্য আবেদনময় এবং প্রশংসনীয়।—পড়ুন, হিতোপদেশ ২৫:১১.

কেবল স্ত্রীর কথা মন দিয়ে শোনার মাধ্যমেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে নিজের অনুভূতি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার মাধ্যমেও একজন খ্রিস্টান স্বামীর নিজ ভূমিকা পালন করা উচিত। ২৭ বছর ধরে বিবাহিত এমন একজন প্রাচীন বলেছিলেন: “আমার হৃদয়ের গভীরে থাকা কথাগুলো আমার স্ত্রীকে বলার জন্য আমাকে প্রচেষ্টা করতে হয়।” ২৪ বছর ধরে বিবাহিত এমন একজন ভাই মন্তব্য করেছিলেন: “আমি এই চিন্তা করে অনুভূতি চেপে রাখতে পারি যে, ‘আমি যদি বিষয়টা নিয়ে কথা না বলি, তাহলে একসময় তা দূর হয়ে যাবে।’ কিন্তু, পরে আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমার অনুভূতি প্রকাশ করা দুর্বলতার কোনো চিহ্ন নয়। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা যখন আমার জন্য কঠিন হয়, তখন আমি সঠিক শব্দ বলার ও সেগুলো সঠিকভাবে বলার জন্য প্রার্থনা করি। এরপর, আমি বড়ো করে একটা নিঃশ্বাস নিই এবং কথা বলতে শুরু করি।” এ ছাড়া, সঠিক পরিবেশে, সম্ভবত কোনো দম্পতি যখন দৈনিক শাস্ত্রপদ বিবেচনা করে অথবা একসঙ্গে বাইবেল পাঠ করে, তখন কথা বলা উপকারজনক।

৮. বিয়েকে সফল করার জন্য খ্রিস্টান দম্পতিরা কোন অতিরিক্ত অনুপ্রেরণা লাভ করে?

স্বামী ও স্ত্রী উভয়েরই প্রার্থনা করা এবং তাদের ভাববিনিময়ের দক্ষতার ক্ষেত্রে উন্নতি করার জোরালো আকাঙ্ক্ষা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঠিক যে, আগের অভ্যাস পরিবর্তন করা কঠিন হতে পারে। কিন্তু, একটা দম্পতি যখন যিহোবাকে ভালোবাসে, তাঁর আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করে এবং তাদের বন্ধনকে পবিত্র হিসেবে দেখে, তখন তারা সেই অনুপ্রেরণা লাভ করে, যেটার অভাব অনেকের মধ্যেই রয়েছে। ২৬ বছর ধরে বিবাহিত এমন একজন স্ত্রী লিখেছিলেন: “যেহেতু আমার স্বামী এবং আমি বিয়ের ব্যাপারে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকি, তাই আমরা পৃথক থাকার কথা এমনকী চিন্তাও করি না। এটা আমাদেরকে সমস্যাগুলো নিয়ে একত্রে আলোচনা করার মাধ্যমে সেগুলো সমাধান করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত করে।” এই ধরনের আনুগত্য এবং ঈশ্বরীয় ভক্তি তাঁকে খুশি করে ও সেইসঙ্গে তাঁর প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করা যায়।—গীত. ১২৭:১.

প্রেমে বৃদ্ধি লাভ করুন

৯, ১০. কোন ব্যবহারিক উপায়গুলোর মাধ্যমে একটা দম্পতি তাদের প্রেমের বন্ধনকে শক্তিশালী করতে পারে?

একটা বিয়েতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হল প্রেম—“সিদ্ধির যোগবন্ধন।” (কল. ৩:১৪) কোনো অনুগত দম্পতি যখন একত্রে জীবন উপভোগ করে, যার সঙ্গে আনন্দ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাও যুক্ত, তখন অকপট প্রেম বৃদ্ধি পায়। তারা আরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠে এবং পরস্পরের সাহচর্যকে মূল্যবান বলে গণ্য করে। এই ধরনের বিয়ে টিকে থাকে, তবে তা কেবল কয়েকটা মহৎ কাজের দ্বারা নয়, যা প্রচারমাধ্যমে তুলে ধরা হয়, বরং অসংখ্য ছোটো ছোটো কাজের দ্বারা যেমন, একটা আলিঙ্গন, একটা সদয় মন্তব্য, একটা বিবেচনাপূর্ণ ইশারা, একটা আন্তরিক হাসি অথবা এইরকম একটা আন্তরিক মন্তব্য, “তোমার দিন কেমন কেটেছে?” এইরকম ছোটো ছোটো বিষয় বিয়েতে অনেক বড়ো কিছু সম্পাদন করতে পারে। ১৯ বছর ধরে সুখী বিবাহিত জীবন উপভোগ করছে এমন এক দম্পতির মধ্যে স্বামী বলেন, দুজনে “কী করছে, কেবল তা জানার জন্য,” তারা দিনের মধ্যে কয়েক বার পরস্পরকে ফোন করে অথবা ম্যাসেজ পাঠায়।

১০ এ ছাড়া, প্রেম একটা দম্পতিকে ক্রমাগত পরস্পর সম্বন্ধে জানতে অনুপ্রাণিত করে। (ফিলি. ২:৪) ফলে, এই ধরনের জ্ঞান, তাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও তাদের প্রেমকে আরও শক্তিশালী করে। এক সফল বিয়ে এক জায়গায় স্থির থাকে না বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী হয়। তাই, আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার বিবাহিত সঙ্গীকে আমি কতটা ভালোভাবে জানি? বিভিন্ন বিষয়ে আমি কি তার অনুভূতি ও চিন্তা বুঝতে পারি? আমি আমার সঙ্গী সম্বন্ধে কত বার চিন্তা করি, হতে পারে তার সেই গুণগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, যেগুলো প্রথম তার প্রতি আমাকে আকৃষ্ট করেছিল?’

সম্মান গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন

১১. কেন এক সফল বিয়ের জন্য সম্মান অতীব গুরুত্বপূর্ণ? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১১ এমনকী সবচেয়ে সুখী বিয়েগুলোও একেবারে নিখুঁত বন্ধন নয় আর এক প্রেমময় দম্পতি সবসময় সব ব্যাপারে একমত নাও হতে পারে। অব্রাহাম এবং সারা সবসময় পরস্পরের সঙ্গে একমত ছিল না। (আদি. ২১:৯-১১) তাই বলে, তাদের মতানৈক্য তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেনি। কেন? তারা পরস্পরের সঙ্গে মর্যাদা ও সম্মান সহকারে আচরণ করত। উদাহরণস্বরূপ, অব্রাহাম সারাকে বলেছিলেন, “বিনয় করি।” (আদি. ১২:১১, ১৩) অন্যদিকে, সারা অব্রাহামের বাধ্য ছিলেন এবং তাকে তার ‘প্রভু’ বলে মানতেন। (আদি. ১৮:১২) কোনো দম্পতির যখন পরস্পরের প্রতি সম্মানের অভাব থাকে, তখন তা সাধারণত তাদের কথা বলার ধরন অথবা কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। (হিতো. ১২:১৮) তারা যদি তাদের মূল সমস্যা নির্ণয় না করে, তাহলে তাদের বিয়ে হয়তো দুঃখজনক পরিণতির দিকে মোড় নিতে পারে।—পড়ুন, যাকোব ৩:৭-১০, ১৭, ১৮.

১২. কেন নববিবাহিত দম্পতিদের বিশেষভাবে সম্মান দেখিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে উন্নতি করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত?

১২ নববিবাহিত দম্পতিদের বিশেষভাবে পরস্পরের সঙ্গে সদয়ভাবে এবং সম্মান দেখিয়ে কথা বলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা আর এভাবে স্বচ্ছন্দপূর্ণ ও অকপট ভাববিনিময়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত। “আমাদের বিয়ের প্রথম বছরগুলো যদিও আনন্দময় ছিল কিন্তু তা মাঝে মাঝে হতাশাজনকও ছিল,” একজন স্বামী স্মরণ করে বলেন। “আপনি যখন আপনার স্ত্রীর অনুভূতি, অভ্যাস এবং প্রয়োজন সম্বন্ধে জানতে পারেন—এবং স্ত্রী আপনারগুলো জানতে পারেন—তখন বিভিন্ন বিষয় কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে! কিন্তু, আপনারা যদি পরস্পরের সঙ্গে যুক্তিসংগতভাবে কথা বলেন, আপনাদের মধ্যে রসিকতাবোধ থাকে এবং নম্রতা, ধৈর্য ও যিহোবার ওপর নির্ভরতার মতো সুস্থিত গুণ থাকে, তাহলে সেগুলো ভবিষ্যতে আপনাদের উভয়ের জন্য উপকারী হবে।” এই কথাগুলো কতই না সত্য!

অকৃত্রিম নম্রতা প্রদর্শন করুন

১৩. কেন এক সফল এবং সুখী বিবাহে নম্রতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়?

১৩ বিয়েতে উত্তম ভাববিনিময় হল একটা জলস্রোতের মতো, যা একটা বাগানের মধ্যে দিয়ে মৃদুভাবে এবং শান্তভাবে বয়ে চলে। “নম্রমনা” হওয়া সেই জলস্রোতের ধারা বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক প্রধান ভূমিকা পালন করে। (১ পিতর ৩:৮) “মতপার্থক্য সমাধান করার জন্য নম্রতা হল এক দ্রুত উপায় কারণ এটা আপনাকে এই কথা বলতে পরিচালিত করে যে, ‘আমি দুঃখিত,’” ১১ বছর ধরে বিবাহিত এমন একজন ভাই মন্তব্য করেন। ২০ বছর ধরে সুখী বিবাহিত জীবন উপভোগ করছেন এমন একজন প্রাচীন বলেন: “মাঝে মাঝে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি,’ এই কথাগুলোর চেয়ে বরং ‘আমি দুঃখিত,’ এই কথাগুলো বলা আরও গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও বলেন: “দ্রুত নম্রতা দেখানোর একটা উপায় হল প্রার্থনা। আমার স্ত্রী ও আমি যখন একত্রে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তখন আমরা নিজেদের অসিদ্ধতা এবং ঈশ্বরের অযাচিত দয়ার কথা স্মরণ করতে পারি। এই সূক্ষ্ম অনুস্মারক আমাকে বিভিন্ন বিষয়কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সাহায্য করে।”

১৪. কীভাবে গর্ব একটা বিয়ের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে?

১৪ কিন্তু, গর্ব কখনো শান্তিজনক নয়। এটা ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে কারণ এটা ক্ষমা চাওয়ার ইচ্ছা ও সাহস দুটোই কেড়ে নেয়। “আমি দুঃখিত; দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দাও,” নম্রভাবে এই কথা বলার পরিবর্তে একজন গর্বিত ব্যক্তি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে থাকেন। সাহসের সঙ্গে কোনো দুর্বলতা স্বীকার করার চেয়ে বরং তিনি আঙুল দিয়ে অন্যের ভুলত্রুটি দেখিয়ে থাকেন। তিনি যখন আঘাত পান, তখন শান্তি অনুধাবন করার পরিবর্তে তিনি বিরক্ত হন, হয়তো রূঢ় কথাবার্তা বলে অথবা একেবারে চুপ থেকে প্রতিশোধ নেন। (উপ. ৭:৯) হ্যাঁ, গর্ব একটা বিয়ের জন্য মারাত্মক হতে পারে। এটা মনে রাখা উত্তম যে, “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।”—যাকোব ৪:৬.

১৫. ইফিষীয় ৪:২৬, ২৭ পদে প্রাপ্ত নীতি প্রয়োগ করা কীভাবে একটা বিবাহিত দম্পতিকে মতপার্থক্যের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করতে পারে, তা ব্যাখ্যা করুন।

১৫ অবশ্য, এটা চিন্তা করা বোকামি যে, গর্ব কখনো প্রকাশ পাবে না। যখন তা প্রকাশ পায়, তখন আমাদের এটা শনাক্ত করতে এবং অবিলম্বে দূর করতে হবে। পৌল সহখ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “সূর্য্য অস্ত না যাইতে যাইতে তোমাদের কোপাবেশ শান্ত হউক; আর দিয়াবলকে স্থান দিও না।” (ইফি. ৪:২৬, ২৭) ঈশ্বরের বাক্যে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হলে তা অযথা দুর্দশা নিয়ে আসবে। “মাঝেমধ্যে আমার স্বামী এবং আমি ইফিষীয় ৪:২৬, ২৭ পদের কথাগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছি,” একজন বোন দুঃখ করে বলেন। “এর ফলে আমি কয়েক রাত ঘুমাতেই পারিনি!” পুনরায় সম্মিলিত হওয়ার লক্ষ্য সহকারে বিষয়গুলো নিয়ে সঙ্গেসঙ্গে আলোচনা করা কতই না উত্তম! অবশ্য, বিবাহিত সঙ্গীদের শান্ত হওয়ার জন্য পরস্পরকে কিছুটা সময় দিতে হবে। এ ছাড়া, সঠিক মনোভাব লাভ করার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করাও উপযুক্ত। এর অন্তর্ভুক্ত নম্র মনোভাব, যা আপনাকে নিজের ওপর নয় বরং সমস্যার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করবে আর এর ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে না।—পড়ুন, ইফিষীয় ৪:৩২.

১৬. কীভাবে নম্রতা একটা দম্পতিকে তাদের নিজ নিজ ক্ষমতাকে সঠিক আলোকে দেখার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৬ নম্রতা এবং বিনয়ী মনোভাব একজন বিবাহিত ব্যক্তিকে তার সাথির বিভিন্ন ক্ষমতার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ: একজন স্ত্রীর হয়তো এমন প্রতিভা থাকতে পারে, যা তিনি পরিবারের উপকারের জন্য ব্যবহার করেন। তার স্বামী যদি নম্র এবং বিনয়ী হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি তার স্ত্রীকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করবেন না বরং তাকে তার দান ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করবেন আর এভাবে দেখাবেন যে, তিনি তাকে মূল্য দেন এবং তার যত্ন নেন। (হিতো. ৩১:১০, ২৮; ইফি. ৫:২৮, ২৯) একইসঙ্গে, একজন নম্র ও বিনয়ী স্ত্রী তার ক্ষমতাকে জাহির করবেন না অথবা তার স্বামীকে ছোটো করবেন না। সর্বোপরি, তারা দুজন “একাঙ্গ” আর তাই যে-বিষয়টা একজনকে আঘাত দেয়, তা অন্য জনকেও আঘাত দেয়।—মথি ১৯:৪, ৫.

১৭. কী বর্তমান দিনের বিয়েগুলোকে সুখী হওয়ার এবং ঈশ্বরের প্রশংসার কারণ হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৭ কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি চাইবেন আপনার বিয়ে যেন অব্রাহাম ও সারা অথবা ইস্‌হাক ও রিবিকার বিয়ের মতো হয়—প্রকৃতই সুখী, দীর্ঘস্থায়ী এবং যিহোবাকে প্রশংসা করার একটা কারণ হয়। যদি তা-ই হয়, তাহলে বিয়ে সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন। অন্তর্দৃষ্টি এবং প্রজ্ঞার জন্য তাঁর বাক্যের ওপর নির্ভর করুন। আপনার বিবাহিত সঙ্গী সম্বন্ধে উপলব্ধি সহকারে চিন্তা করার মাধ্যমে প্রকৃত ভালোবাসা—“সদাপ্রভুরই অগ্নি”—গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন। (পরম. ৮:৬) নম্রতা বৃদ্ধি করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করুন। আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সম্মানপূর্বক আচরণ করুন। আপনি যদি এই বিষয়গুলো করেন, তাহলে আপনার বিয়ে আপনার নিজের ও সেইসঙ্গে আপনার স্বর্গীয় পিতার জন্য আনন্দ নিয়ে আসবে। (হিতো. ২৭:১১) বাস্তবিকপক্ষে, আপনার অনুভূতি হয়তো ২৭ বছর ধরে বিবাহিত এমন একজন স্বামীর কথাগুলোর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়, যিনি লিখেছিলেন: “আমি আমার স্ত্রীকে ছাড়া জীবন কাটানোর কথা কল্পনাই করতে পারি না। প্রতিদিন আমাদের বিয়ে ক্রমাগতভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। এর কারণ হল, যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা এবং পরস্পরের সঙ্গে নিয়মিত ভাববিনিময় করা।”

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ছোটো ছোটো বিষয় একটা বিয়েতে বড়ো কিছু সম্পাদন করে

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার বিয়েতে উত্তম ভাববিনিময় বজায় রাখুন