সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিজ্ঞ বাছাইগুলো করে আপনার উত্তরাধিকারকে সুরক্ষা করুন

বিজ্ঞ বাছাইগুলো করে আপনার উত্তরাধিকারকে সুরক্ষা করুন

বিজ্ঞ বাছাইগুলো করে আপনার উত্তরাধিকারকে সুরক্ষা করুন

“যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা কর; যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হও।”—রোমীয় ১২:৯.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে আপনি কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন?

এষৌর কাজ থেকে আমরা কোন সাবধানবাণীমূলক শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি?

কীভাবে আমরা আমাদের উত্তরাধিকারকে সুরক্ষা করতে পারি?

১, ২. (ক) কীভাবে আপনি ঈশ্বরকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? (খ) আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার সম্বন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?

 আমাদের মধ্যে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি, যিহোবাকে সেবা করার জন্য বিজ্ঞ বাছাই করেছে এবং তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যিশু খ্রিস্টের পদচিহ্নের অনুগমন করে। (মথি ১৬:২৪; ১ পিতর ২:২১) ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত এই জীবনকে আমরা হালকাভাবে নিই না। আমাদের এই বাছাই, মাত্র কয়েকটা শাস্ত্রপদ সম্বন্ধে ভাসা ভাসা জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে নয় বরং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঈশ্বরের বাক্যের অধ্যয়নের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, আমরা সেই উত্তরাধিকার সম্বন্ধে এমন অনেক বিষয় জানতে পেরেছি, যেগুলো আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এবং যেগুলো যিহোবা সেই ব্যক্তিদের জন্য রেখেছেন, যারা ‘তাঁহাকে, এবং তিনি যাঁহাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।’—যোহন ১৭:৩; রোমীয় ১২:২.

খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের অবস্থান বজায় রাখার জন্য আমাদের এমন বাছাইগুলো করতে হবে, যেগুলো আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে খুশি করে। তাই, এই প্রবন্ধে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে, যেমন: আমাদের উত্তরাধিকার কী? এটাকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত? কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমরা আমাদের উত্তরাধিকার লাভ করব? কী আমাদের বিজ্ঞ বাছাইগুলো করতে সাহায্য করবে?

আমাদের উত্তরাধিকার—এটা কী?

৩. (ক) অভিষিক্ত ব্যক্তিদের জন্য কোন উত্তরাধিকার অপেক্ষা করছে? (খ) ‘আরও মেষের’ জন্য কোন উত্তরাধিকার অপেক্ষা করছে?

তুলনামূলকভাবে অল্প কয়েক জন খ্রিস্টান ‘অক্ষয় ও বিমল ও অজর দায়াধিকার’ বা উত্তরাধিকার—স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করার অমূল্য সুযোগ—লাভ করার জন্য অপেক্ষা করে আছে। (১ পিতর ১:৩, ৪) সেই উত্তরাধিকার লাভ করার জন্য এই ব্যক্তি-বিশেষদের অবশ্যই “নূতন জন্ম” লাভ করতে হবে। (যোহন ৩:১-৩) যিশুর লক্ষ লক্ষ ‘আরও মেষের’ উত্তরাধিকার সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা অভিষিক্ত অনুসারীদের সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে? (যোহন ১০:১৬) আরও মেষ সেই উত্তরাধিকার লাভ করবে, যা আদম এবং হবা কখনোই লাভ করতে পারেনি—এমন এক পরমদেশ পৃথিবী, যেখানে আর কোনো দুঃখকষ্ট, মৃত্যু অথবা শোক থাকবে না। (প্রকা. ২১:১-৪) এই কারণে, যিশু তাঁর সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন দুষ্কর্মকারীর কাছে এই প্রতিজ্ঞা করতে পেরেছিলেন: “আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি . . . তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।”—লূক ২৩:৪৩.

৪. ইতিমধ্যেই আমরা কোন আশীর্বাদগুলো উপভোগ করছি?

এমনকী এখনই আমরা আমাদের উত্তরাধিকারের কিছু দিক উপভোগ করতে পারছি। যেহেতু আমরা ‘খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তিতে’ বিশ্বাস করি, তাই আমাদের মনের শান্তি এবং ঈশ্বরের সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক রয়েছে। (রোমীয় ৩:২৩-২৫) ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত মূল্যবান প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে আমাদের এক স্পষ্ট বোধগম্যতা রয়েছে। এ ছাড়া, এক প্রেমময় আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজের অংশ হওয়া প্রচুর আনন্দের এক উৎস। আর যিহোবার সাক্ষিদের একজন হতে পারাও এক বিশেষ সুযোগ! এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমরা আমাদের উত্তরাধিকারকে মূল্যবান বলে গণ্য করি!

৫. ঈশ্বরের লোকেদেরকে শয়তান কী করার চেষ্টা করে আর কী আমাদেরকে তার চাতুরীর সামনে দাঁড়ানোর জন্য সাহায্য করতে পারে?

কিন্তু, আমাদের অপূর্ব উত্তরাধিকার দৃঢ়ভাবে ধরে রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই শয়তানের কলাকৌশল সম্বন্ধে সতর্ক থাকতে হবে। শয়তান সবসময়ই ঈশ্বরের লোকেদের সেই বাছাইগুলো করার জন্য প্ররোচিত করার চেষ্টা করে, যেগুলোর কারণে তারা তাদের উত্তরাধিকার হারিয়ে ফেলতে পারে। (গণনা. ২৫:১-৩, ৯) তার সময় যে শেষ, সেই বিষয়ে অবগত থাকায় শয়তান আমাদের ভ্রান্ত করার জন্য তার প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করেছে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১২:১২, ১৭.) আমরা যদি ‘দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইয়া’ থাকতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই ক্রমাগত আমাদের উত্তরাধিকারকে উচ্চমূল্য দিতে হবে। (ইফি. ৬:১১) এই ক্ষেত্রে, কুলপতি ইস্‌হাকের প্রথমজাত পুত্র এষৌর সাবধানবাণীমূলক উদাহরণ এমন শিক্ষা প্রদান করে, যেগুলোর প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।

এষৌর মতো হবেন না

৬, ৭. এষৌ কে ছিলেন এবং তার সামনে কোন উত্তরাধিকার ছিল?

প্রায় ৪,০০০ বছর আগে, এষৌ এবং তার যমজ ভাই যাকোব, ইস্‌হাক ও রিবিকার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিল। এই যমজ ভাইয়েরা যখন বড়ো হয়, তখন তারা ভিন্ন ভিন্ন স্বভাবের ব্যক্তি হয়ে ওঠে এবং তাদের কাজের বাছাইও ভিন্ন হয়। “এষৌ নিপুণ শিকারী ও প্রান্তরবিহারী হইলেন” আর অন্যদিকে “যাকোব শান্ত ছিলেন, তিনি তাম্বুতে বাস করিতেন।” (আদি. ২৫:২৭) যে-ইব্রীয় শব্দটিকে “শান্ত” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, বাইবেল অনুবাদক রবার্ট অল্টার বলেন, “সেটি নীতিনিষ্ঠাকে অথবা এমনকী নির্দোষ অবস্থাকে নির্দেশ করে।”

এষৌ এবং যাকোবের বয়স যখন ১৫ বছর, তখন তাদের ঠাকুরদাদা অব্রাহাম মারা যান কিন্তু অব্রাহামের কাছে করা যিহোবার প্রতিজ্ঞা শেষ হয়ে যায়নি। পরবর্তী সময়ে, যিহোবা পুনরায় ইস্‌হাকের কাছে একই প্রতিজ্ঞা করেন, এটা উল্লেখ করেন যে, পৃথিবীর সমস্ত জাতি অব্রাহামের বংশের মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ করবে। (পড়ুন, আদিপুস্তক ২৬:৩-৫.) সেই প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করেছিল যে, মশীহ—আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে বলা বিশ্বস্ত ‘বংশ’—অব্রাহামের বংশধরের মাধ্যমে আসবে। ইস্‌হাকের প্রথমজাত পুত্র হিসেবে এষৌর সেই প্রতিজ্ঞা লাভ করার বৈধ অধিকার ছিল। এষৌর সামনে কী এক অপূর্ব উত্তরাধিকারই না ছিল! তিনি কি সেটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন?

৮, ৯. (ক) এষৌ তার উত্তরাধিকার সম্বন্ধে কোন বাছাই করেছিলেন? (খ) কয়েক বছর পর, এষৌ তার বাছাই সম্বন্ধে কী উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন এবং তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

একদিন, এষৌ যখন প্রান্তর থেকে ফিরে এসেছিলেন, তখন তিনি দেখেছিলেন যে, যাকোব ‘দাইল পাক করিয়াছেন।’ “আমি ক্লান্ত হইয়াছি,” এষৌ বলেছিলেন, “বিনয় করি [“দয়া করে শীঘ্র,” NW], ঐ রাঙ্গা, ঐ রাঙ্গা দ্বারা আমার উদর পূর্ণ কর।” উত্তরে এষৌকে যাকোব বলেছিলেন: “অদ্য তোমার জ্যেষ্ঠাধিকার আমার কাছে বিক্রয় কর।” এষৌ কোন বাছাই করেছিলেন? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, তিনি বলেছিলেন: “জ্যেষ্ঠাধিকারে আমার কি লাভ?” হ্যাঁ, এষৌ জ্যেষ্ঠাধিকারের পরিবর্তে এক বাটি ডাল বেছে নিয়েছিলেন! জ্যেষ্ঠাধিকারের এই বিনিময় বৈধ করার জন্য যাকোব দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন: “তুমি অদ্য আমার কাছে দিব্য কর।” কোনো দ্বিধা না করেই এষৌ তার জ্যেষ্ঠাধিকার ত্যাগ করেছিলেন। এরপর, “যাকোব এষৌকে রুটী ও মসূরের রান্ধা দাইল দিলেন; এবং তিনি ভোজন পান করিলেন, পরে উঠিয়া চলিয়া গেলেন। এইরূপে এষৌ আপন জ্যেষ্ঠাধিকার তুচ্ছ করিলেন।”—আদি. ২৫:২৯-৩৪.

কয়েক বছর পর, ইস্‌হাক যখন মনে করেছিলেন যে, তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে, তখন রিবিকা এই বিষয়টা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে যাকোব প্রকৃতই এষৌর সেই জ্যেষ্ঠাধিকার লাভ করেন, যা এষৌ স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেছিলেন। এষৌ যখন অনেক দেরিতে বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি এক মূর্খতাপূর্ণ বাছাই করেছেন, তখন তিনি ইস্‌হাককে অনুনয় করে বলেছিলেন: “হে পিতঃ, আমাকে, আমাকেও আশীর্ব্বাদ করুন। . . . আপনি কি আমার জন্য কিছুই আশীর্ব্বাদ রাখেন নাই?” ইস্‌হাক যখন বলেছিলেন যে, ইতিমধ্যেই তিনি যাকোবকে যে-আশীর্বাদ প্রদান করেছেন, তা তিনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, তখন “এষৌ উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন।”—আদি. ২৭:৩০-৩৮.

১০. এষৌ ও যাকোবকে যিহোবা কীভাবে দেখেছিলেন এবং কেন?

১০ এষৌর মনোভাবের কোন দিকগুলো শাস্ত্রে তুলে ধরা হয়েছে? তিনি দেখিয়েছিলেন যে, তার মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করা তার কাছে সেই ভাবী আশীর্বাদগুলো লাভ করার চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলো তার উত্তরাধিকারের মাধ্যমে লাভ করা যেত। এষৌ তার জ্যেষ্ঠাধিকারকে মূল্যবান বলে গণ্য করেননি এবং স্পষ্টতই তিনি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরকে ভালোবাসতেন না। অধিকন্তু, তার কাজ তার বংশধরদের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে, সেই বিষয়টাকেও এষৌ উপেক্ষা করেছিলেন। অন্যদিকে, যাকোব তার উত্তরাধিকারকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, স্ত্রী বাছাই করার ব্যাপারে যাকোব তার বাবা-মায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। (আদি. ২৭:৪৬–২৮:৩) যেহেতু যাকোব এই বাছাই করেছিলেন, যেটার সঙ্গে ধৈর্য এবং ত্যাগস্বীকার জড়িত ছিল, তাই তিনি মশীহের একজন পূর্বপুরুষ হতে পেরেছিলেন। এষৌ ও যাকোবকে ঈশ্বর কীভাবে দেখেছিলেন? ভাববাদী মালাখির মাধ্যমে যিহোবা বলেছিলেন: “আমি যাকোবকে প্রেম করিয়াছি; কিন্তু এষৌকে অপ্রেম করিয়াছি।”—মালাখি ১:২, ৩.

১১. (ক) কেন এষৌর উদাহরণ খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক? (খ) কেন পৌল এষৌর কাজকে ব্যভিচারের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন?

১১ এষৌ সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, তা কি বর্তমানে খ্রিস্টানদের জন্য প্রাসঙ্গিক? অবশ্যই। প্রেরিত পৌল সহবিশ্বাসীদের সতর্ক থাকার জন্য সাবধান করে দিয়েছিলেন “পাছে কেহ ব্যভিচারী বা ধর্ম্মবিরূপক হয় [“পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি না দেখায়,” NW], যেমন এষৌ, সে ত এক বারের খাদ্যের নিমিত্ত আপন জ্যেষ্ঠাধিকার বিক্রয় করিয়াছিল।” (ইব্রীয় ১২:১৬) এই সাবধানবাণী এখনও খ্রিস্টানদের জন্য প্রযোজ্য। আমাদেরকে অবশ্যই পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি বজায় রাখতে হবে আর এতে আমরা মাংসিক আকাঙ্ক্ষাগুলোর দ্বারা পরাজিত হব না এবং আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার হারিয়ে ফেলব না। কিন্তু, কেন পৌল এষৌর কাজকে ব্যভিচারের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন? কারণ এষৌর মতো মাংসিক প্রবণতার কারণে একজন ব্যক্তি হয়তো বিভিন্ন নোংরা অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য, হতে পারে ব্যভিচার করার জন্য পবিত্র বিষয়গুলো ত্যাগ করবেন।

এখনই আপনার হৃদয় প্রস্তুত করুন

১২. (ক) কীভাবে শয়তান আমাদের সামনে বিভিন্ন প্রলোভন রাখে? (খ) সেই শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো দিন, যেগুলো আমাদেরকে কঠিন বাছাইগুলো করার সময় সাহায্য করতে পারে।

১২ যিহোবার দাস হিসেবে নিশ্চিতভাবেই আমরা এমন প্রলুব্ধকর পরিস্থিতিগুলোর অন্বেষণ করি না, যেগুলো অনৈতিক যৌন আচরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে। এর পরিবর্তে, আমরা যিহোবা ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করি যে, কেউ যখন আমাদেরকে তাঁর অবাধ্য হওয়ার জন্য প্রলোভন দেখায়, তখন তিনি যেন আমাদেরকে নতিস্বীকার করার হাত থেকে রক্ষা করেন। (মথি ৬:১৩) কিন্তু, নৈতিক দিক দিয়ে কলুষিত এই জগতে আমরা যখন আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার প্রচেষ্টা করি, তখন শয়তান ক্রমাগত আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করে। (ইফি. ৬:১২) এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার দেব হিসেবে দিয়াবল জানে যে, আমাদের সামনে অসিদ্ধ মানুষের সাধারণ প্রলোভনগুলো রাখার মাধ্যমে কীভাবে আমাদের অসিদ্ধ আকাঙ্ক্ষাগুলোকে স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগানো যায়। (১ করি. ১০:৮, ১৩) উদাহরণস্বরূপ, কল্পনা করুন যে, আপনি এমন একটা পরিস্থিতিতে রয়েছেন, যেটা আপনাকে কোনো আকাঙ্ক্ষা অনৈতিক উপায়ে চরিতার্থ করার সুযোগ করে দিয়েছে। আপনি কোন বাছাই করবেন? আপনি কি এষৌর মতো হবেন এবং এইরকমটা বলবেন: “শীঘ্র এটা আমাকে দাও!” নাকি আপনি সেই প্রলোভন প্রতিরোধ করবেন এবং সেটা থেকে পালিয়ে যাবেন, যেমনটা যাকোবের ছেলে যোষেফ করেছিলেন, যাকে পোটীফরের স্ত্রী প্রলোভন দেখিয়েছিলেন?—পড়ুন, আদিপুস্তক ৩৯:১০-১২.

১৩. (ক) বর্তমানে, কীভাবে অনেকে যোষেফের মতো কাজ করে কিন্তু কীভাবে কেউ কেউ এষৌর মতো কাজ করে? (খ) যারা এষৌর মতো কাজ করে, তাদের উদাহরণ আমাদেরকে কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন সম্বন্ধে অবগত করে?

১৩ আমাদের অনেক ভাই ও বোন এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল, যেখানে তাদেরকে বাছাই করতে হয়েছিল যে, তারা এষৌর মতো, নাকি যোষেফের মতো কাজ করবে। তাদের অধিকাংশই বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করেছিল এবং যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করেছিল। (হিতো. ২৭:১১) কিন্তু, আমাদের কিছু সহবিশ্বাসী যখন প্রলোভনের মুখে পড়েছিল, তখন তারা এষৌর মতো কাজ করা বেছে নিয়েছিল, তাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিল। সত্যি বলতে কী, প্রতি বছর যৌন অনৈতিকতার কারণে বহু বিচার সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিতে হয় এবং অনেককে সমাজচ্যুত করতে হয়। এখনই—আমাদের নীতিনিষ্ঠা পরীক্ষিত হতে পারে এমন পরিস্থিতিতে পড়ার আগেই—আমাদের হৃদয় প্রস্তুত করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ! (গীত. ৭৮:৮) আমরা অন্ততপক্ষে দুটো পদক্ষেপ নিতে পারি, যেগুলো প্রলোভনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসেবে কাজ করতে এবং পরবর্তী সময়ে আমাদেরকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করবে।

গভীরভাবে চিন্তা করুন এবং জোরদার করুন

১৪. কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা আমাদেরকে ‘যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা করিতে’ এবং ‘যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হইতে’ সাহায্য করতে পারে?

১৪ প্রথম পদক্ষেপের অন্তর্ভুক্ত হল, আমাদের কাজের পরিণতি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা। আমাদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের প্রতি আমাদের উপলব্ধির গভীরতা অনেকাংশে সেই উত্তরাধিকারের দাতা যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেমের গভীরতার ওপর নির্ভর করে। বস্তুতপক্ষে, আমরা যদি কাউকে ভালোবাসি, তাহলে আমরা সেই ব্যক্তিকে অসন্তুষ্ট করতে চাইব না। এর পরিবর্তে, আমরা তার অনুমোদন লাভ করার চেষ্টা করব। তাই, আমরা যদি অশুচি মাংসিক আকাঙ্ক্ষার কাছে নতিস্বীকার করি, তাহলে এতে নিজেদের এবং অন্যদের পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য আমাদের কিছুটা সময় করে নেওয়া উচিত। নিজেদেরকে আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘কীভাবে আমার স্বার্থপর কাজ যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে? অন্যায় কাজ আমার পরিবারের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে? এটা আমার মণ্ডলীর ভাই ও বোনদের কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে? আমি কি অন্যদের বিঘ্ন জন্মাতে পারি?’ (ফিলি. ১:১০) এ ছাড়া, আমরা এও জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘কয়েক মুহূর্তের নোংরা অভিলাষের বিনিময়ে আমি কি এমন মনোদুঃখ ভোগ করতে চাই, যা আমার বাছাইয়ের কারণে হতে পারে? আমি কি আসলে এষৌর মতো পরিণতি চাই, আমার ভুল বুঝতে পেরে কি উচ্চৈঃস্বরে রোদন করি?’ (ইব্রীয় ১২:১৭) এই ধরনের প্রশ্নগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা আমাদেরকে ‘যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা করিতে’ এবং ‘যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হইতে’ সাহায্য করবে। (রোমীয় ১২:৯) বিশেষভাবে, যিহোবার প্রতি ভালোবাসা, আমাদেরকে আমাদের উত্তরাধিকারের প্রতি আসক্ত থাকতে সাহায্য করবে।—গীত. ৭৩:২৮.

১৫. যে-বিষয়গুলো আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কোন বিষয়গুলো আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করবে?

১৫ দ্বিতীয় পদক্ষেপের অন্তর্ভুক্ত হল, আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করা। জগতে এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে আর সেগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য যিহোবা আমাদের জন্য অনেক ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর ব্যবস্থাগুলোর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, বাইবেল অধ্যয়ন, খ্রিস্টীয় সভাগুলো, ক্ষেত্রের পরিচর্যা এবং প্রার্থনা। (১ করি. ১৫:৫৮) প্রতি বার আমরা যখন হৃদয় উজাড় করে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি এবং সক্রিয়ভাবে খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় অংশ নিই, তখন আমরা রূপকভাবে প্রলোভনগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করি। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:১২, ১৯.) অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়টা আমাদের নিজেদের প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করে। (গালা. ৬:৭) এই বিষয়টা হিতোপদেশ বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে।

“তাহার অন্বেষণ কর”

১৬, ১৭. বিজ্ঞ বাছাইগুলো করার ক্ষমতা অর্জন করার ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা সফল হতে পারি?

১৬ হিতোপদেশ ২ অধ্যায় আমাদেরকে প্রজ্ঞা এবং চিন্তা করার ক্ষমতা অর্জন করার জন্য উৎসাহিত করে। এই দানগুলো আমাদেরকে সঠিক ও ভুলের মধ্যে, আত্মশাসন ও আত্মতুষ্টির মধ্যে বাছাই করতে সমর্থ করে। কিন্তু, আমরা সফল হব কি না, তা আমাদের প্রচেষ্টা করার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। এই মৌলিক সত্যের ওপর জোর দিয়ে বাইবেল বলে: “বৎস, তুমি যদি আমার কথা সকল গ্রহণ কর, যদি আমার আজ্ঞা সকল তোমার কাছে সঞ্চয় কর, যদি প্রজ্ঞার দিকে কর্ণপাত কর, যদি বুদ্ধিতে মনোনিবেশ কর; হাঁ, যদি সুবিবেচনাকে আহ্বান কর, যদি বুদ্ধির জন্য উচ্চৈঃস্বর কর; যদি রৌপ্যের ন্যায় তাহার অন্বেষণ কর, গুপ্ত ধনের ন্যায় তাহার অনুসন্ধান কর; তবে সদাপ্রভুর ভয় বুঝিতে পারিবে, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে। কেননা সদাপ্রভুই প্রজ্ঞা দান করেন, তাঁহারই মুখ হইতে জ্ঞান ও বুদ্ধি নির্গত হয়।”—হিতো. ২:১-৬.

১৭ তাই, স্পষ্টতই বিজ্ঞ বাছাইগুলো করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা লাভ করার ক্ষেত্রে আমাদের সফলতা, আমরা হিতোপদেশ বইয়ে উল্লেখিত শর্তগুলো পূরণ করি কি না, সেটার ওপর নির্ভর করে। আমরা যদি যিহোবার বাক্য অনুযায়ী আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলি, আমরা যদি ঈশ্বরের নির্দেশনার জন্য ক্রমাগত প্রার্থনা করি এবং আমরা যদি লুকোনো রত্নের ন্যায় ঈশ্বরের জ্ঞান অনুসন্ধান করি, তাহলে আমরা প্রলোভনগুলোর বিরুদ্ধে দৃঢ় থাকার ক্ষেত্রে সফল হতে পারব।

১৮. আপনি কী করে চলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ এবং কেন?

১৮ যিহোবা সেই ব্যক্তিদেরকে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা এবং প্রজ্ঞা দান করেন, যারা এই দানগুলো অন্বেষণ করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করে। আমরা যত বেশি সেগুলোর অনুসন্ধান করব এবং সেগুলো ব্যবহার করব, ততই আমরা এগুলোর দাতা যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারব। এর ফলে, যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক সেই সময় একটা সুরক্ষা হিসেবে কাজ করবে, যখন আমরা কোনো প্রলোভনের মুখোমুখি হব। যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া এবং তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় থাকা, আমাদেরকে অন্যায় কাজে রত হওয়া থেকে সুরক্ষা করবে। (গীত. ২৫:১৪; যাকোব ৪:৮) যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব উপভোগ করা এবং ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা কাজে লাগানো যেন আমাদের সকলকে সেই বাছাইগুলো করে চলতে অনুপ্রাণিত করে, যেগুলো যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করবে এবং আমাদের উত্তরাধিকারকে সুরক্ষা করবে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার প্রজ্ঞার অন্বেষণ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করি