সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার উদারতা এবং যুক্তিবাদিতাকে উপলব্ধি করুন

যিহোবার উদারতা এবং যুক্তিবাদিতাকে উপলব্ধি করুন

“সদাপ্রভু সকলের পক্ষে মঙ্গলময়, তাঁহার করুণা তাঁহার কৃত সমস্ত পদার্থের উপরে আছে।”—গীত. ১৪৫:৯.

১, ২. যিহোবার বন্ধুদের কোন সুযোগ রয়েছে?

 “আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩৫ বছর,” মনিকা নামে একজন খ্রিস্টান বোন বলেন। “আমি এবং আমার স্বামী পরস্পরকে অনেক ভালোভাবে জানি। কিন্তু, তার পরও এখনও আমরা পরস্পর সম্বন্ধে এমন অনেক কিছু জানতে পারছি, যেগুলো আগে কখনো জানতাম না!” কোনো সন্দেহ নেই যে, অসংখ্য বিয়ে এবং বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য।

আমরা যাদের ভালোবাসি, তাদের সম্বন্ধে আমরা আরও ভালোভাবে জানতে চাই। কিন্তু, সমস্ত বন্ধুত্বের মধ্যে যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। আমরা কখনোই তাঁর সম্বন্ধে সমস্তকিছু জানতে পারব না। (রোমীয় ১১:৩৩) অনন্তকাল ধরে যিহোবার গুণাবলির প্রতি আমাদের উপলব্ধি গভীর করার সুযোগ এবং আনন্দ উভয়ই থাকবে।—উপ. ৩:১১.

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

আগের প্রবন্ধ, যিহোবার বন্ধুত্বপরায়ণ এবং পক্ষপাতহীন মনোভাবের প্রতি আমাদের উপলব্ধি গভীর করতে সাহায্য করেছে। আসুন, এখন আমরা যিহোবার আরও দুটি চমৎকার গুণ—তাঁর উদারতা এবং তাঁর যুক্তিবাদিতা—বিবেচনা করি। তা করার মাধ্যমে আমরা আরও পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারব যে, “সদাপ্রভু সকলের পক্ষে মঙ্গলময়, তাঁহার করুণা তাঁহার কৃত সমস্ত পদার্থের উপরে আছে।”—গীত. ১৪৫:৯.

যিহোবা উদার

৪. প্রকৃত উদারতার প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?

উদার হওয়ার অর্থ কী? আমরা প্রেরিত ২০:৩৫ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলোর মধ্যে উত্তর খুঁজে পাই: “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য” বা সুখী “হইবার বিষয়।” এই সাধারণ বিবৃতির মাধ্যমে, যিশু প্রকৃত উদারতার প্রধান বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছিলেন। একজন উদার ব্যক্তি অন্যদের উপকারের জন্য স্বচ্ছন্দে নিজের সময়, শক্তি এবং সম্পদ দান করেন—আর তা তিনি আনন্দের সঙ্গে করেন। সত্যিই, উদারতার বিষয়টা উপহারের পরিধি দ্বারা নয় বরং দাতার মনোভাব দ্বারা পরিমাপ করা যায়। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৯:৭.) কেউই আমাদের “ধন্য” বা সুখী ‘ঈশ্বর’ যিহোবার চেয়ে বেশি উদার নয়।—১ তীম. ১:১১.

৫. কোন কোন উপায়ে যিহোবা উদারতা প্রদর্শন করেন?

কীভাবে যিহোবা উদারতা প্রদর্শন করেন? যিহোবা সমস্ত মানুষের, এমনকী তাঁকে উপাসনা করে না এমন ব্যক্তিদের প্রয়োজনগুলোও জুগিয়ে থাকেন। বস্তুতপক্ষে, “সদাপ্রভু সকলের পক্ষে মঙ্গলময়।” তিনি “ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।” (মথি ৫:৪৫) এই কারণে প্রেরিত পৌল, অবিশ্বাসী ব্যক্তিদের কাছে কথা বলার সময় বলতে পেরেছিলেন, যিহোবা “মঙ্গল করিতেছেন, আকাশ হইতে আপনাদিগকে বৃষ্টি এবং ফলোৎপাদক ঋতুগণ দিয়া ভক্ষ্যে ও আনন্দে আপনাদের হৃদয় পরিতৃপ্ত করিয়া আসিতেছেন।” (প্রেরিত ১৪:১৭) স্পষ্টতই, যিহোবা সমস্ত মানুষের প্রতি উদার।—লূক ৬:৩৫.

৬, ৭. (ক) যিহোবা বিশেষভাবে কাদের প্রয়োজনগুলো জোগাতে পেরে আনন্দিত? (খ) ঈশ্বর কীভাবে তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান, তা উদাহরণের সাহায্য ব্যাখ্যা করুন।

যিহোবা বিশেষভাবে তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের প্রয়োজনগুলো জোগাতে পেরে আনন্দিত। রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “আমি যুবক ছিলাম, এখন বৃদ্ধ হইয়াছি, কিন্তু ধার্ম্মিককে পরিত্যক্ত দেখি নাই, তাহার বংশকে খাদ্য ভিক্ষা করিতে দেখি নাই।” (গীত. ৩৭:২৫) অনেক বিশ্বস্ত খ্রিস্টান যিহোবার যত্নের এইরকম প্রমাণ পেয়েছে। একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন।

কয়েক বছর আগে, ন্যান্সি নামে একজন পূর্ণসময়ের পরিচারক এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। “বাড়িভাড়া দেওয়ার জন্য আমার ৬৬ ডলারের প্রয়োজন ছিল আর এর শেষ সময় ছিল পরের দিন,” ন্যান্সি স্মরণ করে বলেন। “আমি জানতাম না যে, আমি কোথা থেকে টাকা জোগাড় করব। আমি সমস্যাটা নিয়ে প্রার্থনা করেছিলাম এবং এরপর ওয়েট্রেসের কাজে গিয়েছিলাম। সেই দিন সন্ধ্যায় আমি অনেক বকশিশ পাব বলে আশা করিনি কারণ সেটা সপ্তাহের এমন একটা সময় ছিল, যে-সময়টাতে সাধারণত বেশি লোক আসত না। আশ্চর্যের বিষয় হল, সেই দিন রাতে রেস্টুরেন্টে বেশ কয়েক জন কাস্টমার এসেছিল। কাজের পালা শেষ করে আমি আমার বকশিশ গুণে দেখি যে, সেখানে মোট ৬৬ ডলার রয়েছে।” ন্যান্সি এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছিলেন যে, যিহোবা উদারভাবে ঠিক তার প্রয়োজনীয় বিষয়টুকুই জুগিয়েছেন।—মথি ৬:৩৩.

৮. যিহোবার সবচেয়ে উদার দান কী?

যিহোবার সবচেয়ে উদার দান প্রত্যেকের জন্য প্রাপ্তিসাধ্য। সেটা কী? তাঁর পুত্রের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান। যিশু বলেছিলেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) এই প্রসঙ্গে, ‘জগৎ’ শব্দটি মানবজাতিকে নির্দেশ করে। হ্যাঁ, যিহোবার সবচেয়ে উদার দান এমন সকলের জন্য খোলা, যারা তা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। যারা যিশুতে বিশ্বাস করে, তারা জীবনের উপচয়—অনন্তজীবন—উপভোগ করবে! (যোহন ১০:১০) সত্যিই, যিহোবা যে উদার সেটার আর বড়ো কোন প্রমাণ হতে পারে?

যিহোবার উদারতাকে অনুকরণ করুন

৯. কীভাবে আমরা যিহোবার উদারতাকে অনুকরণ করতে পারি?

  কীভাবে আমরা যিহোবার উদারতাকে অনুকরণ করতে পারি? যিহোবা “ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে” বা আমাদের আনন্দের জন্য “যোগাইয়া দেন”; তাই, অন্যদের সঙ্গে আমাদের “সহভাগীকরণে তৎপর” হওয়া উচিত আর এভাবে তাদের আনন্দে অবদান রাখা উচিত। (১ তীম. ৬:১৭-১৯) আমরা আমাদের প্রিয়জনদের উপহার প্রদান করার এবং যাদের প্রয়োজন, তাদের সাহায্য করার জন্য আনন্দের সঙ্গে আমাদের সম্পদ ব্যবহার করি। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:৭.) কী আমাদেরকে উদার হওয়ার বিষয়টা মনে রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? কিছু খ্রিস্টান এই ব্যবহারিক পদ্ধতি কাজে লাগায়: তারা যখন কোনো উপহার লাভ করে, তখন তারাও অন্য কাউকে উপহার প্রদান করার সুযোগ খোঁজে। খ্রিস্টান মণ্ডলীতে এমন অসংখ্য ভাই ও বোন রয়েছে, যারা উদারতার এক মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করে।

১০. উদার হওয়ার একটা উল্লেখযোগ্য উপায় কী?

১০ উদার হওয়ার কয়েকটা সর্বোত্তম উপায়ের মধ্যে একটা হল, কথায় ও কাজে উদারতা দেখানো। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? অন্যদের সাহায্য এবং উৎসাহ প্রদান করার জন্য আমাদের সময় এবং শক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে। (গালা. ৬:১০) এক্ষেত্রে, আমাদের অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য আমরা হয়তো নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘অন্যেরা কি উপলব্ধি করতে পারে যে, আমি নিজেকে বিলিয়ে দিতে এবং অন্যদের উদ্‌বিগ্নতার কথা শুনতে ইচ্ছুক? কেউ যদি কোনো কাজের ব্যাপারে আমাদের সাহায্য চায় অথবা কোনো কাজ করে দিতে বলে, তাহলে যখন সম্ভব হয়, তখন কি আমি হ্যাঁ বলি? পরিবারের কোনো সদস্য অথবা কোনো সহবিশ্বাসীর প্রতি শেষ কবে আমি আন্তরিক মন্তব্য করেছি?’ আমরা যখন ‘দেই,’ তখন নিশ্চিতভাবেই আমরা যিহোবা এবং আমাদের বন্ধুদের আরও নিকটবর্তী হই।—লূক ৬:৩৮; হিতো. ১৯:১৭.

১১. কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা যিহোবার প্রতি উদার হতে পারি?

 ১১ আমরা যিহোবার প্রতিও উদারতা দেখাতে পারি। “তুমি সদাপ্রভুর সম্মান কর আপনার ধনে,” শাস্ত্র উপদেশ দেয়। (হিতো. ৩:৯) এই ‘ধনের’ অন্তর্ভুক্ত আমাদের সময়, শক্তি এবং সম্পদ, যেগুলো আমরা তাঁর সেবায় স্বচ্ছন্দে ব্যয় করতে পারি। এমনকী অল্পবয়সি সন্তানরাও যিহোবার প্রতি উদার হওয়ার বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারে। “আমাদের পরিবার যখন কিংডম হলে দান দিয়ে থাকে, তখন আমরা আমাদের সন্তানদের দিয়ে দান বাক্সে টাকা দিই,” তাদের বাবা জেসন বলেন। “তারা এটা উপভোগ করে কারণ তারা যখন সেখানে টাকা দেয়, তখন তারা ‘যিহোবাকে কিছু দিচ্ছে।’” যে-সন্তানরা অল্পবয়সে যিহোবাকে দেওয়ার আনন্দ লাভ করে, তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও ক্রমাগত তাঁর প্রতি উদারতা দেখিয়ে থাকে।—হিতো. ২২:৬.

যিহোবা যুক্তিবাদী

১২. যুক্তিবাদী হওয়ার অর্থ কী?

১২ যিহোবার আরেকটা চমৎকার গুণ হল যুক্তিবাদিতা। যুক্তিবাদী হওয়ার অর্থ কী? যে-মূল শব্দটিকে নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলে সাধারণত “যুক্তিবাদী” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির আক্ষরিক অর্থ হল “মেনে নিতে ইচ্ছুক।” (তীত ৩:১, ২, পাদ.) একজন যুক্তিবাদী ব্যক্তি আইনের খুঁটিনাটি প্রতিটা বিষয়ে সবসময় খুঁতখুঁতে নন কিংবা অতিরিক্ত কঠোর, কড়া অথবা রূঢ়ও নন। এর বিপরীতে, তিনি অন্যদের পরিস্থিতির প্রতি বিবেচনা দেখিয়ে তাদের সঙ্গে মৃদুভাবে আচরণ করার প্রচেষ্টা করেন। তিনি অন্যদের কথা শুনতে এবং যখন উপযুক্ত, তখন অন্যদের ইচ্ছা মেনে নিতে ও নিজের চাহিদাগুলোকে সমন্বয় করে নিতে ইচ্ছুক।

১৩, ১৪. (ক) কীভাবে যিহোবা যুক্তিবাদিতা প্রদর্শন করেন? (খ) লোটের সঙ্গে ঈশ্বর যেভাবে আচরণ করেছেন, তা থেকে যুক্তিবাদিতা সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি?

১৩ কীভাবে যিহোবা যুক্তিবাদিতা প্রদর্শন করেন? তিনি সদয়ভাবে তার দাসদের অনুভূতি বিবেচনা করেন এবং তিনি প্রায়ই তাদের অনুরোধ রাখতে সমর্থ। উদাহরণস্বরূপ, ধার্মিক ব্যক্তি লোটের সঙ্গে যিহোবা কীভাবে আচরণ করেছিলেন, তা বিবেচনা করে দেখুন। যিহোবা যখন স্থির করেছিলেন যে, তিনি সদোম এবং ঘমোরা নগর ধ্বংস করবেন, তখন তিনি লোটকে পর্বতে পালিয়ে যাওয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু, কোনো কারণে লোট অন্য একটা জায়গায় পালানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন। একটু চিন্তা করুন—লোট আসলে যিহোবাকে তাঁর নির্দেশনা পরিবর্তন করার কথা বলেছিলেন।—পড়ুন, আদিপুস্তক ১৯:১৭-২০.

১৪ এই বিষয়টা দেখে একজন ব্যক্তি হয়তো সহজেই লোটকে দুর্বল অথবা অবাধ্য বলে মনে করতে পারেন। শত হলেও, যিহোবা নিশ্চিতভাবেই লোটকে যে-কোনো স্থানে বাঁচিয়ে রাখতে পারতেন, তাই লোটের ভয় পাওয়ার কোনো ভিত্তি ছিল না। তা সত্ত্বেও, এই বিষয়গুলো লোটের জন্য ভয়ের বিষয়ই ছিল—লোট সেইরকমটাই অনুভব করেছিলেন, যেমনটা তার মনে হয়েছিল আর যিহোবা তা মেনে নিয়েছিলেন। তিনি লোটকে এমন একটা নগরে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন, যেটা তিনি ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। (পড়ুন, আদিপুস্তক ১৯:২১, ২২.) স্পষ্টতই, যিহোবা কড়া বা কঠোর, কোনোটাই নন। তিনি মেনে নিতে ইচ্ছুক এবং যুক্তিবাদী।

১৫, ১৬. কীভাবে মোশির ব্যবস্থা যিহোবার যুক্তিবাদিতাকে তুলে ধরে? (শিরোনামের পাশে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৫ যিহোবার যুক্তিবাদিতার আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন, যা মোশির ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। একজন ইস্রায়েলীয় যদি এতটাই দরিদ্র হতেন যে, তার পক্ষে একটা মেষ কিংবা ছাগ বলি দেওয়া সম্ভব নয়, তাহলে এর পরিবর্তে তিনি দুটো ঘুঘু বা দুটো কবুতর বলি দিতে পারতেন। কিন্তু, একজন ইস্রায়েলীয় যদি এতটাই দরিদ্র হতেন যে, তার পক্ষে এমনকী দুটো কবুতর বলি দেওয়াও সম্ভব নয়, তাহলে? সেই ক্ষেত্রে, যিহোবা সেই দরিদ্র ইস্রায়েলীয়কে অল্প ময়দা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, এই বিবরণের গুরুত্বপূর্ণ দিকটা লক্ষ করুন: এটাকে যেকোনো ময়দা নয় বরং “উত্তম ময়দা” হতে হতো, যেটা সম্মানিত অতিথিদের জন্য ব্যবহার করা হতো। (আদি. ১৮:৬) কেন এটা তাৎপর্যপূর্ণ ছিল?—লেবীয়. ৫:৭, ১১, NW.

১৬ কল্পনা করুন যে, আপনি একজন ইস্রায়েলীয় এবং বেশ দরিদ্র। উৎসর্গ করার জন্য আপনি যখন অল্প ময়দা নিয়ে আবাসের সামনে আসেন, তখন আপনি লক্ষ করেন যে, ধনী ইস্রায়েলীয়রা পশু নিয়ে আসছে। আপনি হয়তো তুলনামূলকভাবে এই সামান্য ময়দা নিয়ে আসার কারণে অস্বস্তি বোধ করেন। এরপর, আপনার মনে পড়ে যে, যিহোবার দৃষ্টিতে আপনার বলিদান তাৎপর্যপূর্ণ। কেন? একটা কারণ হল, যিহোবা চান যেন সেই ময়দা উন্নত মানের হয়। বস্তুতপক্ষে, যিহোবা দরিদ্র ইস্রায়েলীয়দের বলছিলেন: ‘আমি বুঝতে পারি যে, তোমরা অন্যদের মতো এতটা দিতে পারো না কিন্তু আমি এও জানি যে, তোমরা যা দিচ্ছ, তা তোমাদের পক্ষে সর্বোত্তম।’ সত্যিই, যিহোবা তাঁর দাসদের সীমাবদ্ধতা এবং তাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করার মাধ্যমে যুক্তিবাদিতা প্রদর্শন করেন।—গীত. ১০৩:১৪.

১৭. যিহোবা কোন ধরনের সেবা গ্রহণ করেন বলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন?

 ১৭ এটা জেনে আমরা সান্ত্বনা লাভ করতে পারি যে, তাঁর যুক্তিবাদিতার কারণে যিহোবা আমাদের সর্বান্তঃকরণের সেবা গ্রহণ করেন। (কল. ৩:২৩) কন্সতেন্স নামে ইতালির একজন বয়স্ক বোন বলেছিলেন: “অন্যদের কাছে আমার সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে কথা বলতে আমি সবসময়ই অত্যন্ত ভালোবাসি। এই কারণে আমি ক্রমাগত প্রচার করি এবং বাইবেল অধ্যয়ন করাই। স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে আমি আরও বেশি করতে পারি না বলে মাঝে মাঝে আমার খারাপ লাগে। কিন্তু, আমি বুঝতে পারি যে, যিহোবা আমার সীমাবদ্ধতাগুলো জানেন এবং তিনি আমাকে ভালোবাসেন ও আমি যতটুকুই করতে পারি, সেটাকে তিনি মূল্যবান বলে গণ্য করেন।”

যিহোবার যুক্তিবাদিতাকে অনুকরণ করুন

১৮. একটা উপায় কী, যেটার মাধ্যমে বাবা-মায়েরা যিহোবার উদাহরণ অনুকরণ করতে পারে?

১৮ কীভাবে আমরা যিহোবার যুক্তিবাদিতাকে অনুকরণ করতে পারি? লোটের সঙ্গে যিহোবা যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা আবারও চিন্তা করুন। যিহোবার হাতে কর্তৃত্ব ছিল; তা সত্ত্বেও, লোট যে-অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন, সেটা তিনি সদয়ভাবে শুনেছিলেন। আর ঈশ্বর লোটের অনুরোধ রেখেছিলেন। আপনি যদি একজন বাবা কিংবা মা হন, তাহলে আপনি কি যিহোবার উদাহরণ অনুকরণ করতে পারেন? আপনি কি আপনার সন্তানের অনুরোধ শুনতে পারেন এবং যেখানে উপযুক্ত সেখানে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন? এই বিষয়টার সঙ্গে মিল রেখে, ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছিল যে, কিছু বাবা-মা হয়তো ঘরের নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা করার সময় তাদের সন্তানদেরকে যুক্ত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সন্ধ্যা বেলায় কোন সময়ের মধ্যে ঘরে ফিরে আসতে হবে, সেই ব্যাপারে সময় নির্ধারণ করার জন্য বাবা-মায়েরা সিদ্ধান্ত নেন এবং নিশ্চিতভাবেই তাদের সন্তানরা কখন ঘরে ফিরে আসবে, সেই বিষয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করার অধিকার বাবা-মায়ের রয়েছে। তা সত্ত্বেও, খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা হয়তো নির্ধারিত সময় সম্বন্ধে তাদের সন্তানদের অভিব্যক্তি শুনতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে, বাবা-মায়েরা হয়তো নির্ধারিত সময়ের ব্যাপারে কিছু রদবদল করার বিষয়টা বেছে নিতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা বাইবেলের নীতিগুলোকে লঙ্ঘন করে। বাবা-মায়েরা হয়তো দেখতে পারবে যে, তারা যখন ঘরের নিয়মকানুন সম্বন্ধে সন্তানদের চিন্তাভাবনা বিবেচনা করে, তখন সন্তানরা আরও বেশি করে সেই নিয়মকানুন বুঝতে পারে এবং সেগুলো পালন করতে ইচ্ছুক হয়।

১৯. কীভাবে প্রাচীনরা যিহোবার যুক্তিবাদিতাকে অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করতে পারে?

১৯ মণ্ডলীর প্রাচীনরা তাদের সহবিশ্বাসীদের পরিস্থিতিগুলো বিবেচনা করার মাধ্যমে যিহোবার যুক্তিবাদিতাকে অনুকরণ করার প্রচেষ্টা করে। মনে করে দেখুন যে, যিহোবা এমনকী দরিদ্র ইস্রায়েলীদের প্রদত্ত বলিগুলোকেও মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন। একইভাবে, কিছু ভাই ও বোন হয়তো স্বাস্থ্যগত সমস্যা অথবা বার্ধক্যের কারণে পরিচর্যায় বেশি সময় কাজ করতে পারে না। এই প্রিয় ব্যক্তিরা যদি তাদের সীমাবদ্ধতার কারণে হতাশ বোধ করে, তাহলে? প্রাচীনরা তাদেরকে সদয়ভাবে আশ্বাস দিতে পারে যে, তাদের সর্বোত্তমটা প্রদান করার জন্য যিহোবা তাদেরকে ভালোবাসেন।—মার্ক ১২:৪১-৪৪.

২০. যুক্তিবাদী হওয়ার অর্থ কি ঈশ্বরকে সেবা প্রদান করা থেকে বিরত হওয়া? ব্যাখ্যা করুন।

২০ অবশ্য, আমরা কখনো কেবল নিজের প্রতি সদয় হওয়ার জন্য যুক্তিবাদিতার সঙ্গে ঈশ্বরকে সেবা প্রদান করা থেকে বিরত হওয়াকে মিলিয়ে ফেলব না। (মথি ১৬:২২) আমরা এটাকে হালকাভাবে নিতে এবং এরপর এই কথা বলার মাধ্যমে আমাদের মনোভাবকে সমর্থন করতে চাই না যে, আমরা যুক্তিবাদী। এর পরিবর্তে, রাজ্যের বিষয়গুলোকে সমর্থন করার জন্য আমাদের সকলের ‘প্রাণপণ করিতে’ হবে। (লূক ১৩:২৪) সত্যিই, আমরা দুটো নীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রচেষ্টা করি। একদিকে, আমরা আমাদের সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দিই, তা থেকে বিরত হই না। অন্যদিকে, আমরা মনে রাখি যে, যিহোবা কখনো আমাদের কাছ থেকে আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত চান না। আমরা যখন তাঁকে আমাদের সর্বোত্তমটা দান করি, তখন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তিনি এতে সন্তুষ্ট হন। আমরা কি এইরকম একজন উপলব্ধিপরায়ণ এবং যুক্তিবাদী প্রভুর সেবা করা উপভোগ করি না? পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা যিহোবার চমৎকার ব্যক্তিত্বের আরও দুটো দিক নিয়ে বিবেচনা করব।—গীত. ৭৩:২৮.