সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আমাদিগকে বলুন দেখি, এই সকল ঘটনা কখন্‌ হইবে?”

“আমাদিগকে বলুন দেখি, এই সকল ঘটনা কখন্‌ হইবে?”

“আমাদিগকে বলুন দেখি, এই সকল ঘটনা কখন্‌ হইবে?”

“আপনার আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” —মথি ২৪:৩.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

মহাক্লেশ সম্বন্ধে যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীর দুটো পরিপূর্ণতার মধ্যে কোন মিল রয়েছে?

কীভাবে মেষ এবং ছাগের নীতিগল্প প্রচার কাজের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করতে পারে?

মথি ২৪ এবং ২৫ অধ্যায়ে যিশু যখন তাঁর আসার বিষয়ে বলেছিলেন, তখন তিনি কোন সময়কে নির্দেশ করেছিলেন?

১. প্রেরিতদের মতো আমরাও কী জানার জন্য উৎসুক?

 পৃথিবীতে যিশুর পরিচর্যা প্রায় শেষ হতে যাচ্ছিল আর তাঁর শিষ্যরা ভবিষ্যতে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, তা জানার জন্য উৎসুক ছিল। তাই, তাঁর মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিন আগে তাঁর চার জন প্রেরিত তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল: “এই সকল ঘটনা কখন্‌ হইবে? আর আপনার আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” (মথি ২৪:৩; মার্ক ১৩:৩) যিশু এক সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যদ্‌বাণীর মাধ্যমে এর উত্তর দিয়েছিলেন, যা মথি ২৪ এবং ২৫ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে, যিশু উল্লেখযোগ্য অনেক ঘটনার বিষয়ে বলেছিলেন। আমাদের জন্য তাঁর কথাগুলোর গভীর অর্থ রয়েছে কারণ আমরাও আমাদের জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে, তা জানার জন্য অত্যন্ত আগ্রহী।

২. (ক) বছরের পর বছর ধরে, কোন বিষয়ে আমরা আরও স্পষ্ট বোধগম্যতা লাভ করার চেষ্টা করেছি? (খ) আমরা কোন তিনটে প্রশ্ন বিবেচনা করব?

বছরের পর বছর ধরে, নেতৃত্ব নিচ্ছে এমন অভিষিক্ত ভাইয়েরা শেষকাল সম্বন্ধে যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে প্রার্থনাপূর্বক অধ্যয়ন করেছে। তারা যিশুর কথাগুলোর পরিপূর্ণতার সময় সম্বন্ধে আরও স্পষ্ট বোধগম্যতা লাভ করার চেষ্টা করেছে। আমাদের বোধগম্যতাকে কীভাবে স্পষ্ট করা হয়েছে, সেটার উদাহরণ দেখার জন্য আসুন আমরা তিনটে “কখন” প্রশ্ন বিবেচনা করি। কখন “মহাক্লেশ” শুরু হয়? কখন যিশু “মেষ” ও ‘ছাগদিগের’ বিচার করেন? কখন যিশু ‘আসেন’?—মথি ২৪:২১; ২৫:৩১-৩৩.

কখন মহাক্লেশ শুরু হয়?

৩. মহাক্লেশের সময় সম্বন্ধে অতীতে আমাদের কোন বোধগম্যতা ছিল?

বেশ অনেক বছর ধরে, আমরা মনে করেছিলাম যে, মহাক্লেশ ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এবং ১৯১৮ সালে যখন যুদ্ধ শেষ হয়, তখন যিহোবা ‘সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দিয়াছেন,’ যাতে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের অবশিষ্টাংশ সমস্ত জাতির কাছে সুসমাচার প্রচার করার সুযোগ পায়। (মথি ২৪:২১, ২২) সেই প্রচার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর, শয়তানের সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। তাই, মনে করা হতো, মহাক্লেশের তিনটে পর্যায় রয়েছে: মহাক্লেশের শুরু (১৯১৪-১৯১৮), কিছু সময়ের জন্য মহাক্লেশ থামিয়ে দেওয়া (১৯১৮ সাল থেকে শুরু করে এর পরের সময়) এবং আরমাগিদোনে এর শেষ।

৪. কোন অন্তর্দৃষ্টি, শেষকাল সম্বন্ধে যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীর বোধগম্যতাকে আরও স্পষ্ট করে?

কিন্তু, যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে আরও পরীক্ষা করার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, শেষকাল সম্বন্ধে যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীর একটা অংশের দুটো পরিপূর্ণতা রয়েছে। (মথি ২৪:৪-২২) প্রথম শতাব্দীতে যিহূদিয়াতে এর প্রথম পরিপূর্ণতা হয়েছিল এবং আমাদের দিনে এটা বিশ্বব্যাপী পরিপূর্ণ হবে। এই অন্তর্দৃষ্টি বেশ কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট করে। *

৫. (ক) ১৯১৪ সালে কোন কঠিন সময়কাল শুরু হয়েছিল? (খ) যাতনার সেই সময়কাল, প্রথম শতাব্দীর কোন সময়কালের সমরূপ?

আমরা স্পষ্টভাবে এও বুঝতে পেরেছি যে, মহাক্লেশের প্রথম পর্যায় ১৯১৪ সালে শুরু হয়নি। কেন? কারণ বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী প্রকাশ করে যে, মহাক্লেশ জাতিগুলোর মধ্যে যুদ্ধের মাধ্যমে নয় বরং মিথ্যা ধর্মের ওপর আক্রমণের মাধ্যমে শুরু হবে। তাই, ১৯১৪ সালে যে-ঘটনাগুলো শুরু হয়েছিল, সেগুলো মহাক্লেশের শুরু নয় বরং “যাতনার আরম্ভ মাত্র।” (মথি ২৪:৮) এই “যাতনা,” ৩৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৬ খ্রিস্টাব্দে যিরূশালেম এবং যিহূদিয়াতে যা ঘটেছিল, সেটার সমরূপ।

৬. কী মহাক্লেশের শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দেবে?

কী মহাক্লেশের শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দেবে? যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “যখন দেখিবে, ধ্বংসের যে ঘৃণার্হ বস্তু দানিয়েল ভাববাদী দ্বারা উক্ত হইয়াছে, তাহা পবিত্র স্থানে দাঁড়াইয়া আছে,—যে জন পাঠ করে, সে বুঝুক,—তখন যাহারা যিহূদিয়াতে থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক।” (মথি ২৪:১৫, ১৬) প্রথম পরিপূর্ণতা স্বরূপ, ‘পবিত্র স্থানে দাঁড়ানোর’ বিষয়টা ৬৬ খ্রিস্টাব্দে ঘটেছিল, যখন রোমীয় সেনাবাহিনী (“ঘৃণার্হ বস্তু”) যিরূশালেম এবং এর মন্দির (যিহুদিদের দৃষ্টিতে পবিত্র ছিল এমন এক স্থান) আক্রমণ করেছিল। ব্যাপক পরিপূর্ণতা স্বরূপ, ‘দাঁড়ানোর’ বিষয়টা সেই সময় ঘটবে, যখন রাষ্ট্রসংঘ (আধুনিক দিনের “ঘৃণার্হ বস্তু”) খ্রিস্টীয়জগৎ (যা নামধারী খ্রিস্টানদের দৃষ্টিতে পবিত্র) এবং মহতী বাবিলের বাকি অংশকে আক্রমণ করবে। প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬-১৮ পদে এই একই আক্রমণের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সেই ঘটনাটাই হবে মহাক্লেশের শুরু।

৭. (ক) প্রথম শতাব্দীতে কীভাবে ‘প্রাণীরা রক্ষা পাইয়াছিল?’ (খ) ভবিষ্যতে কী ঘটবে বলে আমরা আশা করতে পারি?

  যিশু এও ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দেওয়া যাইবে।” প্রথম পরিপূর্ণতা স্বরূপ, এটা ৬৬ খ্রিস্টাব্দে ঘটেছিল, যখন রোমীয় সেনাবাহিনী এর আক্রমণের সময় ‘কমাইয়া দিয়াছিল।’ সেই সময়, যিরূশালেম এবং যিহূদিয়ার অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা পালিয়ে গিয়েছিল, যা ‘প্রাণীদের [বা তাদের জীবন] রক্ষা পাইবার’ সুযোগ দিয়েছিল। (পড়ুন, মথি ২৪:২২; মালাখি ৩:১৭) তাই, আসন্ন মহাক্লেশের সময় কী ঘটবে বলে আমরা আশা করতে পারি? যিহোবা মিথ্যা ধর্মের ওপর রাষ্ট্রসংঘের আক্রমণের সময় “কমাইয়া” দেবেন, যাতে মিথ্যা ধর্মের সঙ্গে সঙ্গে সত্য ধর্মও ধ্বংস হয়ে না যায়। এটা ঈশ্বরের লোকেদের রক্ষা পাওয়ার বিষয়টা নিশ্চিত করবে।

৮. (ক) মহাক্লেশের প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার পর কোন ঘটনাগুলো ঘটবে? (খ) কোন পর্যায়ে ১,৪৪,০০০ জনের শেষ সদস্য তার স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করবেন বলে মনে হয়? (টীকা দেখুন।)

  মহাক্লেশের প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার পর কী ঘটবে? যিশুর কথাগুলো ইঙ্গিতে দেয় যে, এমন সময়কাল শুরু হবে, যা আরমাগিদোন শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত থাকবে। সেই মধ্যবর্তী সময়ে কোন ঘটনাগুলো ঘটবে? এর উত্তর যিহিষ্কেল ৩৮:১৪-১৬ এবং মথি ২৪:২৯-৩১ পদে লিপিবদ্ধ আছে। (পড়ুন।) * এর পরে, আমরা আরমাগিদোন অর্থাৎ মহাক্লেশের চূড়ান্ত পর্যায় দেখতে পারব, যা ৭০ খ্রিস্টাব্দে ঘটা যিরূশালেমের ধ্বংসের সমরূপ। (মালাখি ৪:১) আরমাগিদোনের চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই আসন্ন মহাক্লেশ এক অদ্বিতীয় ঘটনা অর্থাৎ “যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই” এমন এক ঘটনা হবে। (মথি ২৪:২১) আরমাগিদোন শেষ হওয়ার পর খ্রিস্টের হাজার বছরের শাসন শুরু হবে।

৯. যিহোবার লোকেদের ওপর মহাক্লেশ সম্বন্ধে যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীর কোন প্রভাব রয়েছে?

মহাক্লেশ সম্বন্ধে এই ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদের শক্তিশালী করে। কেন? কারণ এটা আমাদের এই আশ্বাস দেয় যে, আমরা যে-কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখিই হই না কেন, যিহোবার লোকেরা একটা দল হিসেবে মহাক্লেশের মধ্যে থেকে বের হয়ে আসবে। (প্রকা. ৭:৯, ১৪) সর্বোপরি, আমরা আনন্দ করি কারণ আরমাগিদোনে যিহোবা তাঁর সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদন করবেন এবং তাঁর পবিত্র নামকে পবিত্রীকৃত করবেন।—গীত. ৮৩:১৮; যিহি. ৩৮:২৩.

কখন যিশু মেষ ও ছাগের বিচার করেন?

১০. মেষ ও ছাগের বিচারের সময় সম্বন্ধে অতীতে আমাদের কোন বোধগম্যতা ছিল?

১০ যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীর আরেকটা অংশের—নীতিগল্পে উল্লেখিত মেষ ও ছাগের বিচারের—সময় সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। (মথি ২৫:৩১-৪৬) আগে, আমরা মনে করতাম যে, মেষ ও ছাগ হিসেবে লোকেদের বিচার ১৯১৪ সাল থেকে শুরু করে পুরো শেষকাল জুড়ে হবে। আমরা এই উপসংহারে এসেছিলাম যে, যারা রাজ্যের বার্তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং মহাক্লেশ শুরু হওয়ার আগে মারা গিয়েছে, তারা ছাগ হিসেবে অর্থাৎ পুনরুত্থানের কোনো আশা ছাড়াই মারা গিয়েছে।

১১. কেন মেষ অথবা ছাগ হিসেবে লোকেদের বিচার ১৯১৪ সালে শুরু হতে পারে না?

১১ উনিশ-শো নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা মথি ২৫:৩১ পদটি পুনরায় পরীক্ষা করে, যেখানে বলা আছে: “যখন মনুষ্যপুত্ত্র সমুদয় দূত সঙ্গে করিয়া আপন প্রতাপে আসিবেন, তখন তিনি নিজ প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন।” সেই পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ১৯১৪ সালে যিশু ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হয়েছেন কিন্তু তিনি ‘সমুদয় জাতির’ বিচারকর্তা হিসেবে “নিজ প্রতাপের সিংহাসনে” বসেননি। (মথি ২৫:৩২; তুলনা করুন, দানিয়েল ৭:১৩.) কিন্তু, মেষ ও ছাগের নীতিগল্প যিশুকে মূলত একজন বিচারকর্তা হিসেবে বর্ণনা করে। (পড়ুন, মথি ২৫:৩১-৩৪, ৪১, ৪৬.) যেহেতু ১৯১৪ সালে যিশু তখনও সমস্ত জাতির বিচারকর্তা হিসেবে সক্রিয় হননি, তাই লোকেদেরকে মেষ অথবা ছাগ হিসেবে বিচার করার বিষয়টা সেই সময় শুরু হয়নি। * তাহলে, কখন যিশু বিচার শুরু করবেন?

১২. (ক) কখন যিশু প্রথম বারের মতো সমস্ত জাতির বিচারকর্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন? (খ) মথি ২৪:৩০, ৩১ এবং মথি ২৫:৩১-৩৩, ৪৬ পদে কোন ঘটনাগুলোর কথা বর্ণনা করা হয়েছে?

 ১২ শেষকাল সম্বন্ধে যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণী প্রকাশ করে যে, মিথ্যা ধর্মের ধ্বংসের পরে তিনি প্রথম বারের মতো সমস্ত জাতির বিচারকর্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন। ৮ অনুচ্ছেদে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সময়ে ঘটবে এমন কিছু ঘটনা মথি ২৪:৩০, ৩১ পদে লিপিবদ্ধ করা আছে। আপনি যখন সেই পদগুলো পরীক্ষা করবেন, তখন আপনি লক্ষ করবেন যে, সেখানে যিশু এমন ঘটনাগুলো সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছেন, যেগুলো মেষ এবং ছাগের নীতিগল্পে তিনি যে-ঘটনাগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর সমরূপ। উদাহরণস্বরূপ, মনুষ্যপুত্র আপন প্রতাপে এবং সমস্ত দূত সঙ্গে নিয়ে আসবেন; সমস্ত গোষ্ঠী এবং জাতি একত্রিত হবে; যাদেরকে মেষ হিসেবে বিচার করা হবে, তারা ‘ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিবে’ কারণ তাদের জন্য ‘অনন্ত জীবন’ অপেক্ষা করছে। * যাদেরকে ছাগ হিসেবে বিচার করা হবে, তারা এই বিষয়টা বুঝতে পেরে “বিলাপ করিবে” যে, তাদের জন্য ‘অনন্ত দণ্ড’ অপেক্ষা করছে।—মথি ২৫:৩১-৩৩, ৪৬.

১৩. (ক) যিশু কখন লোকেদেরকে মেষ অথবা ছাগ হিসেবে বিচার করবেন? (খ) কীভাবে এই বোধগম্যতা পরিচর্যা সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে?

১৩ তাহলে, আমরা কোন উপসংহারে আসতে পারি? যিশু সেই সময়ে সমস্ত জাতির লোকেদেরকে মেষ অথবা ছাগ হিসেবে বিচার করবেন, যখন তিনি মহাক্লেশের সময়ে আসবেন। এরপর, আরমাগিদোনের সময় অর্থাৎ মহাক্লেশের চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাগতুল্য ব্যক্তিদের চিরকালের জন্য ‘দণ্ড’ প্রদান করা হবে। কীভাবে এই বোধগম্যতা আমাদের পরিচর্যা সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে? এটা আমাদের দেখতে সাহায্য করে যে, আমাদের প্রচার কাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মহাক্লেশ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত, লোকেদের এখনও তাদের চিন্তাভাবনাকে রদবদল করার এবং “জীবনে যাইবার” দুর্গম পথে চলতে শুরু করার সুযোগ রয়েছে। (মথি ৭:১৩, ১৪) এটা ঠিক যে, লোকেরা এখন এক মেষতুল্য অথবা এক ছাগতুল্য মনোভাব প্রদর্শন করতে পারে। তা সত্ত্বেও, আমাদের মনে রাখা উচিত যে, কারা মেষ এবং কারা ছাগ, সেটার চূড়ান্ত বিচার মহাক্লেশের সময় হবে। তাই, যত লোককে সম্ভব, রাজ্যের বার্তা শোনার এবং তাতে সাড়া দেওয়ার সুযোগ দিয়ে চলার উত্তম কারণ আমাদের রয়েছে।

কখন যিশু আসেন?

১৪, ১৫. কোন চারটে শাস্ত্রপদ ভবিষ্যতে বিচারকর্তা হিসেবে খ্রিস্টের আসার বিষয়ে উল্লেখ করে?

১৪ যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে আরও বেশি বিবেচনা করা কি প্রকাশ করে যে, অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ঘটনার সময় সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতায় রদবদল করা প্রয়োজন? সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীই এর উত্তর প্রদান করে। কীভাবে প্রদান করে, আসুন আমরা তা দেখি।

১৫ যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীর একটা অংশ মথি ২৪:২৯–২৫:৪৬ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে আর সেই অংশে যিশু মূলত এই শেষকালে এবং আসন্ন মহাক্লেশের সময়ে কী ঘটবে, সেই বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছেন। সেখানে, যিশু তাঁর ‘আসিবার’ বিষয়ে আট বার উল্লেখ করেছেন। মহাক্লেশ সম্বন্ধে তিনি বলেন: ‘তাহারা মনুষ্যপুত্ত্রকে মেঘরথে আসিতে দেখিবে।’ “তোমাদের প্রভু কোন্‌ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না।” “যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্র আসিবেন।” আর মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্তে যিশু বলেন: ‘মনুষ্যপুত্র আপন প্রতাপে আসিবেন।’ (মথি ২৪:৩০, ৪২, ৪৪; ২৫:৩১) এই চারটে ভবিষ্যদ্‌বাণীর প্রত্যেকটাই, ভবিষ্যতে বিচারকর্তা হিসেবে খ্রিস্টের আসার বিষয়ে উল্লেখ করে। যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীর কোথায় আমরা বাকি চারটে উল্লেখ খুঁজে পাই?

১৬. অন্যান্য কোন শাস্ত্রপদে যিশুর আসার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে?

১৬ বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস সম্বন্ধে যিশু বলেন: “ধন্য সেই দাস, যাহাকে তাহার প্রভু আসিয়া সেইরূপ করিতে দেখিবেন।” কুমারীর নীতিগল্পে যিশু বলেন: “তাহারা ক্রয় করিতে যাইতেছে, ইতিমধ্যে বর আসিলেন।” তালন্তের নীতিগল্পে যিশু বলেন: ‘দীর্ঘকালের পর সেই দাসদিগের প্রভু আসিলেন।’ সেই একই নীতিগল্পে প্রভু বলেন: “আমি আসিয়া আমার যাহা তাহা . . . পাইতাম।” (মথি ২৪:৪৬; ২৫:১০, ১৯, ২৭) যিশুর আসার এই চারটে ঘটনা কোন সময়কে নির্দেশ করে?

১৭. মথি ২৪:৪৬ পদে উল্লেখিত আসা সম্বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে আমরা কী বলেছিলাম?

১৭ অতীতে, আমাদের প্রকাশনায় আমরা বলেছিলাম যে, শেষের এই চারটে ভবিষ্যদ্‌বাণী ১৯১৮ সালে যিশুর আসার প্রতি প্রযোজ্য। একটা উদাহরণ হিসেবে, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” সম্বন্ধে যিশুর কথাগুলো বিবেচনা করুন। (পড়ুন, মথি ২৪:৪৫-৪৭.) আমরা এইরকমটা বুঝেছিলাম যে, ৪৬ পদে উল্লেখিত ‘আসিবার’ বিষয়টা সেই সময়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল, যখন যিশু ১৯১৮ সালে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিক অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য এসেছিলেন এবং ১৯১৯ সালে প্রভু সর্বস্বের ওপর দাসকে নিযুক্ত করেছিলেন। (মালাখি ৩:১) কিন্তু, যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে আরও বিবেচনা করা দেখায় যে, যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীর কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের সময় সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতা রদবদল করা প্রয়োজন। কেন?

১৮. যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে পুরোপুরি বিবেচনা করা আমাদেরকে যিশুর আসার বিষয়ে কোন উপসংহারে পৌঁছাতে পরিচালিত করে?

 ১৮ মথি ২৪:৪৬ পদের আগের পদগুলোতে ‘আসা’ ক্রমাগতভাবে সেই সময়কে নির্দেশ করে, যখন যিশু মহাক্লেশের সময় বিচার ঘোষণা ও কার্যকর করার জন্য আসবেন। (মথি ২৪:৩০, ৪২, ৪৪) এ ছাড়া, ১২ অনুচ্ছেদে আমরা যেমন বিবেচনা করেছি, মথি ২৫:৩১ পদে উল্লেখিত ‘আসিবার’ বিষয়টা বিচারের সেই একই ভাবী সময়কে নির্দেশ করে। তাই, এই উপসংহারে আসা যুক্তিযুক্ত যে, তাঁর সর্বস্বের ওপর বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে নিযুক্ত করার জন্য যিশুর আসার বিষয়টাও ভবিষ্যতে, মহাক্লেশের সময়ে তাঁর আসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যা মথি ২৪:৪৬, ৪৭ পদে উল্লেখ করা হয়েছে। সত্যিই, যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে পুরোপুরি বিবেচনা করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাঁর আসার বিষয়ে যে-আটটা উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর প্রতিটা মহাক্লেশের সময়ে বিচারের ভাবী সময়ের প্রতি প্রযোজ্য।

১৯. বোধগম্যতা সম্বন্ধে আমরা কোন রদবদলগুলো বিবেচনা করেছি আর পরবর্তী প্রবন্ধগুলোতে কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হবে?

১৯ সংক্ষেপে বললে, আমরা কী শিখতে পেরেছি? এই প্রবন্ধের শুরুতে, আমরা তিনটে “কখন” প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলাম। প্রথমে আমরা বিবেচনা করেছি যে, মহাক্লেশ ১৯১৪ সালে শুরু হয়নি, বরং সেই সময়ে শুরু হবে, যখন রাষ্ট্রসংঘ মহতী বাবিলের ওপর আক্রমণ নিয়ে আসবে। এরপর, আমরা পুনর্বিবেচনা করেছি যে, কেন মেষ এবং ছাগের বিষয়ে যিশুর বিচার ১৯১৪ সালে শুরু হয়নি, বরং মহাক্লেশের সময়ে হবে। একেবারে শেষে, আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি যে, কেন তাঁর সর্বস্বের ওপর বিশ্বস্ত দাসকে নিযুক্ত করার জন্য যিশুর আসার বিষয়টা ১৯১৯ সালে ঘটেনি, বরং তা মহাক্লেশের সময়ে ঘটবে। তাহলে, তিনটে “কখন” একই ভবিষ্যৎ সময়কালের প্রতি প্রযোজ্য আর সেটা হল মহাক্লেশের সময়। কীভাবে এই রদবদলকৃত দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বস্ত দাসের দৃষ্টান্ত সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতাকে আরও প্রভাবিত করে? এ ছাড়া, এটা কীভাবে যিশুর অন্যান্য নীতিগল্প বা দৃষ্টান্ত সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতাকে প্রভাবিত করে, যেগুলো এই শেষকালে পরিপূর্ণ হচ্ছে? পরবর্তী প্রবন্ধগুলোতে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে।

টীকা: (সম্পর্কযুক্ত অনুচ্ছেদের সঙ্গে পাদটীকা হিসেবে পড়ার জন্য।)

[পাদটীকাগুলো]

^ অনুচ্ছেদ ৪: আরও তথ্যের জন্য ১৯৯৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৮-২১ পৃষ্ঠা এবং ১৯৯৯ সালের ১ মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৮-২০ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ অনুচ্ছেদ ৮: এই পদগুলোতে বর্ণিত ঘটনাগুলোর মধ্যে একটা হল ‘মনোনীতদিগকে একত্র করা।’ (মথি ২৪:৩১) তাই, মনে হয়, মহাক্লেশের প্রথম পর্যায় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে যে-অভিষিক্ত ব্যক্তিরা পৃথিবীতে থাকবে, তারা আরমাগিদোনের যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আগেই কোনো একটা সময়ে মৃত্যুবরণ করবে এবং তাদের স্বর্গে উত্থিত করা হবে। এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে ১৯৯০ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৩০ পৃষ্ঠায় দেওয়া “পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল” শিরোনামের প্রবন্ধে এই বিষয়ে যে-আলোচনা করা হয়েছিল, সেটাকে রদবদল করা হয়েছে।

^ অনুচ্ছেদ ১১: ১৯৯৫ সালের ১৫ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৮-২৮ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ অনুচ্ছেদ ১২: লূক ২১:২৮ পদে বর্ণিত একই বিবরণ দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

[৪, ৫ পৃষ্ঠার তালিকা]

মহাক্লেশ এবং এর পর

আধুনিক পরিপূর্ণতা

শেষকাল

প্রথম শতাব্দীর অনুরূপ ঘটনাবলি

রাষ্ট্রসংঘ (“ঘৃণার্হ বস্তু”) খ্রিস্টীয়জগৎ (‘পবিত্র স্থান’) এবং মিথ্যা ধর্মের বাকি অংশকে আক্রমণ করবে (প্রকা. ১৭:১৬-১৮)

মিথ্যা ধর্মের ধ্বংস

রোমীয় সেনাবাহিনী (“ঘৃণার্হ বস্তু”) যিরূশালেম এবং এর মন্দিরকে (‘পবিত্র স্থান’) আক্রমণ করে

“ঘৃণার্হ বস্তু . . . পবিত্র স্থানে দাঁড়াইয়া আছে” (মথি ২৪:১৫, ১৬)

(৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

যিহোবা মিথ্যা ধর্মের ওপর আক্রমণের সময় “কমাইয়া” দেবেন;

ঈশ্বরের লোকেরা রক্ষা পাবে

রোমীয় সেনাবাহিনী এর আক্রমণের সময় কমিয়ে দেয়; যিরূশালেম এবং যিহূদিয়ার খ্রিস্টানরা পালিয়ে যায়

“মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দেওয়া যাইবে” (মথি ২৪:২২)

( ৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

অজানা এক সময়কাল

যিশু সমস্ত জাতির লোকেদেরকে মেষ অথবা ছাগ হিসেবে বিচার করবেন (মথি ২৫:৩১-৪৬) ( ১২, ১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

মধ্যবর্তী সময়

“সেই সময়ের ক্লেশের পরেই . . . ” (মথি ২৪:২৯-৩১)

( ৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

যিশু বিশ্বস্ত দাসকে “আপন সর্ব্বস্বের” ওপর নিযুক্ত করবেন (মথি ২৪:৪৬, ৪৭)

( ১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

জাতিগুলোর ধ্বংস (প্রকা. ১৬:১৬)

আরমাগিদোন

যিরূশালেমের ধ্বংস

খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্ব শুরু

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

মহাক্লেশ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত, লোকেদের এখনও তাদের চিন্তাভাবনাকে রদবদল করার সুযোগ রয়েছে

(১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)