সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনারা পবিত্রীকৃত হয়েছেন

আপনারা পবিত্রীকৃত হয়েছেন

আপনারা পবিত্রীকৃত হয়েছেন

“তোমরা . . . আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ, পবিত্রীকৃত হইয়াছ।”—১ করি. ৬:১১.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

কেন আমাদের কুসংসর্গ এড়িয়ে চলতে হবে?

কীভাবে আমরা ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করতে পারি?

আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখার এবং আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়কে রক্ষা করার ক্ষেত্রে কী আমাদেরকে সাহায্য করবে?

১. কিছু বিশৃঙ্খল ঘটনা কী, যা নহিমিয় যিরূশালেমে ফিরে এসে দেখতে পেয়েছিলেন? (শিরোনামের পাশে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

 যিরূশালেমের অধিবাসীরা নানারকম কথাবার্তা বলছে। এক কুখ্যাত পরজাতীয় ব্যক্তি মন্দিরের একটা কুঠুরিতে বাস করছেন। লেবীয়রা তাদের কার্যভার পরিত্যাগ করে চলে যাচ্ছে। প্রাচীনরা উপাসনায় নেতৃত্ব দেওয়ার পরিবর্তে বিশ্রামবারে ক্রয়-বিক্রয় করছে। অনেক ইস্রায়েলীয় ন-যিহুদি ব্যক্তিদের বিয়ে করছে। এগুলো হচ্ছে কিছু বিশৃঙ্খল ঘটনা, যা নহিমিয় খ্রিস্টপূর্ব ৪৪৩ সালের কিছু সময় পর যিরূশালেমে ফিরে এসে দেখতে পেয়েছিলেন।—নহি. ১৩:৬.

২. কীভাবে ইস্রায়েল এক পবিত্রীকৃত জাতি হয়ে উঠেছিল?

ইস্রায়েল ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত এক জাতি ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৫১৩ সালে, ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার ইচ্ছা অনুসারে কাজ করার জন্য উৎসুক ছিল। তারা বলেছিল: “সদাপ্রভু যে যে কথা কহিলেন, আমরা সমস্তই পালন করিব।” (যাত্রা. ২৪:৩) তাই তারা ঈশ্বরের দ্বারা পবিত্রীকৃত হয়েছিল বা ঈশ্বর তাদেরকে তাঁর মনোনীত লোক হিসেবে আলাদা করেছিলেন। সেটা কী এক বিশেষ সুযোগই না ছিল! চল্লিশ বছর পর, মোশি তাদের এই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন: “তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর পবিত্র প্রজা; ভূতলে যত জাতি আছে, সে সকলের মধ্যে আপনার নিজস্ব প্রজা করিবার জন্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকেই মনোনীত করিয়াছেন।”—দ্বিতীয়. ৭:৬.

৩. নহিমিয় যখন দ্বিতীয় বার যিরূশালেমে এসে পৌঁছেছিলেন, তখন যিহুদিদের আধ্যাত্মিক অবস্থা কেমন ছিল?

কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, পবিত্র জাতি হওয়ার ব্যাপারে ইস্রায়েলের প্রথমে যে-উদ্যম ছিল, তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। যদিও সবসময়ই এমন ব্যক্তিরা ছিল, যারা ঈশ্বরের সেবা করেছে কিন্তু বেশিরভাগ যিহুদি প্রায়ই ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার চেয়ে বরং নিজেদের পবিত্র বা ধর্মপ্রাণ দেখানোর ব্যাপারে আরও চিন্তিত ছিল। নহিমিয় যখন দ্বিতীয় বারের মতো যিরূশালেমে আসেন, তখন ইতিমধ্যেই সেই সময় থেকে প্রায় এক-শো বছর পার হয়ে গিয়েছিল, যখন বাবিল থেকে ফিরে আসা বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশ ব্যক্তি সত্য উপাসনাকে পুনর্স্থাপন করেছিল। আবারও, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য সেই জাতির উদ্যোগ নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল।

৪. আমরা এমন কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করব, যেগুলো আমাদেরকে এক পবিত্রীকৃত প্রজা হিসেবে থাকতে সাহায্য করতে পারে?

ইস্রায়েলীয়দের মতো, বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিরাও সাধারণ অর্থে ঈশ্বরের দ্বারা পবিত্রীকৃত হয়েছে। অভিষিক্ত খ্রিস্টান এবং “বিস্তর লোক” উভয়েই পবিত্র অর্থাৎ তাদেরকে পবিত্র সেবার জন্য আলাদা করে রাখা হয়েছে। (প্রকা. ৭:৯, ১৪, ১৫; ১ করি. ৬:১১) আমাদের মধ্যে কেউই ঈশ্বরের সামনে নিজেদের পবিত্রীকৃত অবস্থান হারাতে চাইব না, যেমনটা ইস্রায়েলীয়রা অবশেষে হারিয়েছিল। কী আমাদেরকে তা প্রতিরোধ করার জন্য সাহায্য করতে পারে, যেন আমরা পবিত্র থাকতে পারি এবং যিহোবার সেবায় কার্যকরী হতে পারি? এই অধ্যয়ন প্রবন্ধে আমরা চারটে বিষয় বিবেচনা করব, যেগুলোর ওপর নহিমিয় ১৩ অধ্যায়ে জোর দেওয়া হয়েছে: (১) কুসংসর্গ এড়িয়ে চলুন; (২) ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করুন; (৩) আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখুন এবং (৪) আপনার খ্রিস্টীয় পরিচয়কে রক্ষা করুন। এখন আসুন আমরা এগুলোর প্রত্যেকটা পরীক্ষা করি।

কুসংসর্গ এড়িয়ে চলুন

৫, ৬. ইলিয়াশীব এবং টোবিয় কে আর কেন হয়তো ইলিয়াশীব টোবিয়ের সঙ্গে মেলামেশা করতেন?

নহিমিয় ১৩:৪-৯ পদ পড়ুন। আমাদের চারপাশে যেহেতু অশুচি প্রভাব রয়েছে, তাই আমাদের পক্ষে পবিত্র থাকা সহজ নয়। ইলিয়াশীব এবং টোবিয়ের কথা বিবেচনা করুন। ইলিয়াশীব ছিলেন মহাযাজক এবং টোবিয় ছিলেন একজন অম্মোনীয় ব্যক্তি ও সম্ভবত যিহূদিয়ায় বিদ্যমান পারস্য প্রশাসনের একজন নিম্নপদস্থ কর্মচারী। যিরূশালেমের প্রাচীর পুনর্নির্মাণ করার জন্য নহিমিয়ের প্রচেষ্টায় টোবিয় ও তার সঙ্গীরা বাধা দিয়েছিল। (নহি. ২:১০) অম্মোনীয়রা মন্দিরের এলাকায় প্রবেশ করতে পারত না। (দ্বিতীয়. ২৩:৩) তাহলে, টোবিয়ের মতো একজন ব্যক্তিকে কেন মহাযাজক মন্দিরের একটা কুঠুরিতে থাকার জায়গা দিয়েছিলেন?

টোবিয় ইলিয়াশীবের একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী হয়ে উঠেছিলেন। টোবিয় ও তার ছেলে যিহোহানন যিহুদি নারীদের বিয়ে করেছিল আর অনেক যিহুদি টোবিয়ের প্রশংসা করত। (নহি. ৬:১৭-১৯) ইলিয়াশীবের একজন নাতি শমরিয়ার দেশাধ্যক্ষ সন্‌বল্লটের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন আর এই সন্‌বল্লট টোবিয়ের একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিলেন। (নহি. ১৩:২৮) এই সম্পর্ক হয়তো ব্যাখ্যা করে যে, কেন মহাযাজক ইলিয়াশীব একজন অবিশ্বাসী ও বিরোধীর মাধ্যমে নিজেকে প্রভাবিত হতে দিয়েছিলেন। কিন্তু নহিমিয় টোবিয়ের সমস্ত গৃহসামগ্রী কুঠুরির বাইরে ফেলে দেওয়ার মাধ্যমে যিহোবার প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিলেন।

৭. কীভাবে প্রাচীনরা ও অন্যেরা যিহোবার সামনে নিজেদের পবিত্রীকৃত অবস্থানকে কলুষিত করা এড়িয়ে চলতে পারে?

ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত এক প্রজা হিসেবে, আমাদের সবসময় যিহোবার প্রতি সবচেয়ে প্রথমে আনুগত্য বজায় রাখতে হবে। আমরা যদি তাঁর ধার্মিক মানগুলোর প্রতি আসক্ত না থাকি, তাহলে আমরা তাঁর সামনে পবিত্রীকৃত থাকতে পারব না। আমরা পারিবারিক বন্ধনকে বাইবেলের নীতিগুলোর গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়ার সুযোগ দেব না। খ্রিস্টান প্রাচীনরা নিজস্ব মতামত অথবা অনুভূতি দ্বারা নয়, বরং যিহোবার চিন্তাভাবনা দ্বারা পরিচালিত হয়। (১ তীম. ৫:২১) প্রাচীনরা সতর্কতার সঙ্গে এমন যেকোনো কিছু করা এড়িয়ে চলে, যা ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের অবস্থানের ব্যাপারে আপোশ করার জন্য পরিচালিত করতে পারে।—১ তীম. ২:৮.

৮. সঙ্গীসাথির বিষয়টা আসলে যিহোবার সমস্ত উৎসর্গীকৃত দাসের কী মনে রাখা উচিত?

আমাদের মনে রাখা উচিত, “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করি. ১৫:৩৩) আমাদের কোনো কোনো আত্মীয় হয়তো আমাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব না-ও ফেলতে পারে। ইলিয়াশীব যিরূশালেমের প্রাচীর পুনর্নির্মাণের সময় নহিমিয়কে পূর্ণরূপে সমর্থন করার মাধ্যমে লোকেদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। (নহি. ৩:১) কিন্তু, পরবর্তী সময়ে টোবিয় এবং অন্যদের মন্দ প্রভাব স্পষ্টতই ইলিয়াশীবকে এমন বিষয়গুলো করার জন্য পরিচালিত করেছিল, যা যিহোবার সামনে তাকে কলুষিত করে ফেলেছিল। উত্তম সঙ্গীসাথি আমাদেরকে উপকারী খ্রিস্টীয় কার্যকলাপে রত হতে উৎসাহিত করে, যেমন, বাইবেল পাঠ, খ্রিস্টীয় সভায় যোগদান ও ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ। পরিবারের যে-সদস্যরা আমাদের সঠিক বিষয় করার জন্য প্রভাবিত করে, তাদেরকে আমরা বিশেষভাবে ভালোবাসি ও তাদের প্রতি উপলব্ধি প্রকাশ করি।

ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করুন

৯. মন্দিরের ব্যবস্থাগুলো কেন বিঘ্নিত হয়েছিল আর এর জন্য নহিমিয় কাদের দায়ী করেছিলেন?

নহিমিয় ১৩:১০-১৩ পদ পড়ুন। নহিমিয় যখন যিরূশালেমে ফিরে এসেছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে মন্দিরের জন্য দান দেওয়া মনে হয় প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। এই সমর্থন না থাকায়, লেবীয়রা তাদের কার্যভার পরিত্যাগ করেছিল এবং নিজেদের ভূমিতে কাজ করতে শুরু করেছিল। নহিমিয় সেই পরিস্থিতির জন্য অধ্যক্ষদের দায়ী করেছিলেন। স্পষ্টতই, তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছিল না। হয় তারা লোকেদের কাছ থেকে দশমাংশ সংগ্রহ করছিল না কিংবা সেগুলো মন্দিরে পাঠাচ্ছিল না, যা করার জন্য তাদের নিযুক্ত করা হয়েছিল। (নহি. ১২:৪৪) তাই, নহিমিয় দশমাংশ সংগ্রহ করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি মন্দিরের ভাণ্ডার এবং ভবিষ্যতে বিতরণ কাজ দেখাশোনা করার জন্য নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের নিযুক্ত করেছিলেন।

১০, ১১. সত্য উপাসনাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের লোকেদের কোন বিশেষ সুযোগ রয়েছে?

১০ এখানে কি আমাদের জন্য কোনো শিক্ষা রয়েছে? হ্যাঁ রয়েছে, কারণ আমাদের বার বার মনে করিয়ে দেওয়া হয়, ধনের মাধ্যমে যিহোবাকে সম্মানিত করার বিশেষ সুযোগ আমাদের আছে। (হিতো. ৩:৯) আমরা যখন যিহোবার কাজকে সমর্থন করার জন্য দান করি, তখন আমরা তাঁকে শুধু সেই বিষয়টাই দিচ্ছি, যা ইতিমধ্যেই তাঁর অধিকারভুক্ত। (১ বংশা. ২৯:১৪-১৬) আমরা হয়তো এমন চিন্তা না-ও করতে পারি যে, আমাদের দেওয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে কিন্তু আমাদের যদি দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহলে আমরা সকলেই দান করায় অংশ নিতে পারি।—২ করি. ৮:১২.

১১ একটা বড়ো পরিবার, অনেক বছর ধরে এক বয়স্ক বিশেষ অগ্রগামী দম্পতিকে প্রতি সপ্তাহে এক বার তাদের সঙ্গে এক বেলার খাবার খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়ে আসছিল। যদিও সেই পরিবারের বাবা-মার আট জন সন্তান ছিল কিন্তু সেই মা প্রায়ই বলতেন: “দশ জনের জন্য সাজানো একটা টেবিলে আরও দুটো প্লেট সাজাতে কতটুকুই-বা কষ্ট হয়?” সপ্তাহে এক বেলার খাবার হয়তো বলতে গেলে তেমন কিছুই নয়, কিন্তু সেই অগ্রগামীরা তাদের প্রতি দেখানো আতিথেয়তাকে কতই না উপলব্ধি করেছিল! ফল স্বরূপ, তারাও তাদের নিমন্ত্রণকর্তার জন্য এক আশীর্বাদ বলে প্রমাণিত হয়েছিল। সেই দম্পতির উৎসাহজনক কথাবার্তা ও অভিজ্ঞতা সেই পরিবারের সন্তানদের আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। পরে তারা সবাই পূর্ণসময়ের পরিচর্যা গ্রহণ করেছিল।

১২. মণ্ডলীতে নিযুক্ত পুরুষরা কোন চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করছে?

১২ আরেকটা শিক্ষা হল: নহিমিয়ের মতো, বর্তমানে নিযুক্ত পুরুষরাও ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করায় নেতৃত্ব নিয়ে থাকে। তাদের উদাহরণ থেকে মণ্ডলীর অন্যেরা উপকৃত হয়। এই ক্ষেত্রে, প্রাচীনরা প্রেরিত পৌলকেও অনুকরণ করে থাকে। তিনি সত্য উপাসনাকে সমর্থন করেছিলেন এবং সাহায্যকারী নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, কীভাবে দান দেওয়া যেতে পারে, সেই বিষয়ে তিনি বেশ কিছু ব্যবহারিক পরামর্শ দিয়েছিলেন।—১ করি. ১৬:১-৩; ২ করি. ৯:৫-৭.

আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখুন

১৩. কীভাবে কিছু যিহুদি বিশ্রামবারের প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছিল?

১৩ নহিমিয় ১৩:১৫-২১ পদ পড়ুন। আমরা যদি নিজেদেরকে বস্তুগত বিষয়ে ব্যস্ত হতে দিই, তাহলে আমাদের আধ্যাত্মিকতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যাত্রাপুস্তক ৩১:১৩ পদ অনুসারে, সাপ্তাহিক বিশ্রামবার ইস্রায়েলীয়দের এই বিষয়টা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ছিল যে, তারা এক পবিত্রীকৃত প্রজা। বিশ্রামবারকে পারিবারিক উপাসনা, প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের ব্যবস্থা নিয়ে ধ্যান করার জন্য আলাদা করে রাখতে হতো। কিন্তু, নহিমিয়ের সমসাময়িক কিছু ব্যক্তির কাছে বিশ্রামবার কেবল অন্য আরেকটা সাধারণ দিনের মতোই হয়ে উঠেছিল, যে-দিনে ক্রয়-বিক্রয় করা হতো। উপাসনাকে পিছনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছিল। যা ঘটছে তা দেখতে পেয়ে, নহিমিয় বিশ্রামবার শুরু হওয়ার আগে পরজাতীয় বিক্রেতাদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ষষ্ঠ দিন সন্ধ্যায় নগরের কবাট বন্ধ করে দিতেন।

১৪, ১৫. (ক) আমরা যদি ব্যাবসা সংক্রান্ত বিষয়কে সীমিত না রাখি, তাহলে কী হতে পারে? (খ) কীভাবে আমরা ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে পারি?

১৪ নহিমিয়ের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? একটা শিক্ষা হল, আমাদের ব্যাবসা সংক্রান্ত বিষয়কে সীমিত রাখা উচিত। তা না হলে, আমরা হয়তো সহজেই বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়তে পারি অথবা এমনকী আমাদের ভালোবাসা বিভক্ত হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি আমরা আমাদের জাগতিক কাজকে উপভোগ করি। দুই কর্তার দাসত্ব করার বিষয়ে যিশুর সাবধানবাণী মনে রাখুন। (পড়ুন, মথি ৬:২৪.) নহিমিয়ের আর্থিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও, যিরূশালেমে থাকার সময় তিনি তার সময়কে কীভাবে ব্যবহার করেছিলেন? (নহি. ৫:১৪-১৮) সোরের লোকেদের অথবা অন্যদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করার পরিবর্তে, তিনি তার ভাইদের সাহায্য করার জন্য এবং যিহোবার নামকে পবিত্রীকৃত করে এমন কাজগুলো করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। একইভাবে বর্তমানেও, খ্রিস্টান প্রাচীনরা ও পরিচারক দাসেরা মণ্ডলীর উপকারের জন্য বিভিন্ন কাজের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে আর তাদের এই মনোভাবের জন্য সহবিশ্বাসীরা তাদের ভালোবাসে। ফল স্বরূপ, ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে প্রেম, শান্তি ও নিরাপত্তা রয়েছে।—যিহি. ৩৪:২৫, ২৮.

১৫ খ্রিস্টানদের যদিও সাপ্তাহিক বিশ্রামবার পালন করতে হয় না, তবে পৌল আমাদের বলেন যে, “ঈশ্বরের প্রজাদের নিমিত্ত বিশ্রামকালের ভোগ বাকী রহিয়াছে।” তিনি আরও বলেন: “যেরূপ ঈশ্বর আপন কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিয়াছিলেন, তেমনি যে ব্যক্তি তাঁহার বিশ্রামে প্রবেশ করিয়াছে, সেও আপনার কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিতে পাইল।” (ইব্রীয় ৪:৯, ১০) খ্রিস্টান হিসেবে, আমরা ঈশ্বরের অগ্রগতিশীল উদ্দেশ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাধ্যতার সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে তাঁর বিশ্রামে প্রবেশ করতে পারি। আপনি এবং আপনার প্রিয়জনরা কি পারিবারিক উপাসনা, সভাতে যোগদান ও ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করাকে জীবনে প্রথমে রাখছেন? আমাদের হয়তো কর্মকর্তা অথবা ব্যবসায়িক সহযোগীদের সামনে অনড় অবস্থান নিতে হবে, বিশেষভাবে তারা যদি আমাদের ঈশতান্ত্রিক অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে সম্মান না করে। এক অর্থে, আমাদের হয়তো পবিত্র বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার ও সেগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য ‘নগরের কবাট বদ্ধ করিয়া দিতে এবং সোরের লোকেদের তাড়াইয়া দিতে’ হবে। আমরা যেহেতু পবিত্রীকৃত হয়েছি, তাই আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘আমি যেভাবে জীবনযাপন করি, সেটা কি দেখায় যে, আমি যিহোবার সেবার জন্য নিজেকে আলাদা করে রেখেছি?’—মথি ৬:৩৩.

আপনার খ্রিস্টীয় পরিচয়কে রক্ষা করুন

১৬. নহিমিয়ের দিনে, এক পবিত্রীকৃত প্রজা হিসেবে ইস্রায়েল জাতির পরিচয় কীভাবে হুমকির মুখে পড়েছিল?

১৬ নহিমিয় ১৩:২৩-২৭ পদ পড়ুন। নহিমিয়ের দিনে, ইস্রায়েলীয় পুরুষরা পরজাতীয় নারীদের বিয়ে করছিল। নহিমিয় যখন প্রথম বার যিরূশালেমে এসেছিলেন, তখন তিনি নগরের প্রাচীন ব্যক্তিদের একটা লিখিত চুক্তিতে এই বিষয় উল্লেখ করে স্বাক্ষর করিয়েছিলেন যে, ইস্রায়েলীয় পুরুষরা পৌত্তলিকদের বিয়ে করবে না। (নহি. ৯:৩৮; ১০:৩০) কিন্তু, কয়েক বছর পর তিনি দেখতে পেয়েছিলেন, যিহূদী পুরুষরা শুধু যে পরজাতীয় স্ত্রী গ্রহণ করছে এমন নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে ঈশ্বরের পবিত্রীকৃত লোক হিসেবে তাদের পরিচয়ও হারাতে যাচ্ছে! সেই পরজাতীয় নারীদের সন্তানরা ইব্রীয় ভাষা বলতে অথবা লিখতে পারত না। তারা যখন বড়ো হবে, তখন তারা কি নিজেদের ইস্রায়েলীয় হিসেবে শনাক্ত করতে পারবে? নাকি তারা নিজেদের অস্‌দোদীয়, অম্মোনীয় অথবা মোয়াবীয় বলে মনে করবে? ইব্রীয় ভাষা না জানায়, তারা কি ঈশ্বরের ব্যবস্থা বুঝতে পারবে? কীভাবে তারা যিহোবাকে জানতে পারবে এবং তাদের মায়েরা যে-মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করত, সেগুলোর পরিবর্তে যিহোবার উপাসনা করা বেছে নেবে? দ্রুত ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল আর নহিমিয় সেই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।—নহি. ১৩:২৮.

১৭. কীভাবে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে যিহোবার সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখতে সাহায্য করতে পারে?

১৭ বর্তমানে, আমাদের সন্তানদেরকে খ্রিস্টীয় পরিচয় লাভ করতে সাহায্য করার জন্য আমাদের ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। বাবা-মায়েরা, নিজেদের জিজ্ঞেস করুন, ‘আমার সন্তানরা শাস্ত্রীয় সত্যের “বিশুদ্ধ ওষ্ঠ” বা ভাষা কতটা ভালোভাবে বলতে পারে? (সফ. ৩:৯) আমার সন্তানদের কথাবার্তা কি ঈশ্বরের আত্মার প্রভাবকে প্রতিফলিত করে, নাকি জগতের আত্মার প্রভাবকে প্রতিফলিত করে?’ আপনারা যদি উন্নতি করার মতো জায়গা খুঁজে পান, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি নিরুৎসাহিত হয়ে যাবেন না। একটা ভাষা শেখার জন্য সময় প্রয়োজন, বিশেষ করে যখন আমাদের চারপাশে বিক্ষেপ থাকে। আপনাদের সন্তানরা আপোশ করার জন্য প্রচণ্ড চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। তাই, যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে আপনাদের সন্তানদের সাহায্য করার জন্য, ধৈর্য ধরে আপনাদের পারিবারিক উপাসনার সময়কে ও অন্যান্য সুযোগকে কাজে লাগান। (দ্বিতীয়. ৬:৬-৯) শয়তানের জগৎ থেকে আলাদা থাকার উপকারগুলোর ওপর জোর দিন। (যোহন ১৭:১৫-১৭) আর তাদের হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্টা করুন।

১৮. সন্তানরা যেন নিজেদেরকে যিহোবার উদ্দেশে উৎসর্গ করে, সেইজন্য তাদেরকে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে কেন বাবা-মায়েরা সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে?

১৮ ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে প্রত্যেক সন্তান শেষপর্যন্ত নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে। তা সত্ত্বেও, বাবা-মায়েরা অনেক কিছু করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, উপযুক্ত উদাহরণ স্থাপন করা, সুস্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করা এবং সন্তানদের সঙ্গে তাদের সিদ্ধান্তের পরিণতি নিয়ে আলোচনা করা। বাবা-মায়েরা, সন্তানরা যেন নিজেদেরকে যিহোবার উদ্দেশে উৎসর্গ করে, সেইজন্য তাদেরকে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আপনাদের চেয়ে ভালো অবস্থানে আর কেউ নেই। খ্রিস্টীয় পরিচয় লাভ ও তা রক্ষা করার জন্য আপনাদের সাহায্য তাদের প্রয়োজন। অবশ্য, আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন আমরা নিজেদের রূপক “বস্ত্র”—খ্রিস্টের অনুসারী হিসেবে আমাদের শনাক্ত করে এমন গুণাবলি ও মান—হারিয়ে না ফেলি।—প্রকা. ৩:৪, ৫; ১৬:১৫.

‘ভালো কাজের জন্য’ মনে রাখা

১৯, ২০. যিহোবা যেন আমাদের ‘ভালো কাজের জন্য’ আমাদের মনে রাখেন, সেইজন্য আমরা কী করতে পারি?

১৯ নহিমিয়ের সমসাময়িক একজন ব্যক্তি ছিলেন ভাববাদী মালাখি, যিনি এই কথা প্রকাশ করেছিলেন, “যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, ও তাঁহার নাম ধ্যান করিত, তাহাদের জন্য . . . একখানি স্মরণার্থক পুস্তক লেখা হইল।” (মালাখি ৩:১৬, ১৭) ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের কখনোই ভুলে যাবেন না, যাদের তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় এবং তাঁর নামের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে।—ইব্রীয় ৬:১০.

২০ নহিমিয় প্রার্থনা করেছিলেন: “হে আমার ঈশ্বর, মঙ্গলার্থে আমাকে স্মরণ কর [“এইসব ভাল কাজ করার জন্য আমাকে তুমি মনে রেখো,” ইজি-টু-রিড ভারসন]।” (নহি. ১৩:৩১) নহিমিয়ের মতো, আমাদের নামও ঈশ্বরের স্মরণার্থক পুস্তকে থাকবে, যদি আমরা সবসময় কুসংসর্গ এড়িয়ে চলি, ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করি, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখি এবং আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচয়কে রক্ষা করি। আসুন আমরা ‘নিজেদের পরীক্ষা করিয়া দেখি, আমরা বিশ্বাসে আছি কি না।’ (২ করি. ১৩:৫) আমরা যদি যিহোবার সঙ্গে আমাদের পবিত্রীকৃত সম্পর্ক বজায় রাখি, তাহলে তিনি আমাদের ‘ভালো কাজের জন্য’ আমাদের মনে রাখবেন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে নহিমিয় যিহোবার প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিলেন? (৫, ৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনাদের সন্তানদের সাহায্য করুন (১৭, ১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)