সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা ‘দিন দিন আমার ভার বহন করেন’

যিহোবা ‘দিন দিন আমার ভার বহন করেন’

যিহোবা ‘দিন দিন আমার ভার বহন করেন’

মারিথা দ্যু রান

গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, যেটাকে মাঝে মাঝে হয়তো অসহনীয় বলে মনে হয়েছে, আমার জীবনে আমি আমাদের প্রিয় স্বর্গীয় পিতার প্রেমময় সাহায্য অনুভব করতে পেরেছি। আর ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, আমি একজন অগ্রগামী হিসেবে যিহোবার সেবা করতে পারার বিশেষ আনন্দ উপভোগ করতে পারছি।

আমি ১৯৫৬ সালে স্পাইনা বিফিডা (মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতা) নিয়ে জন্মগ্রহণ করি। আমার মেরুদণ্ডের স্নায়ুতন্ত্র পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ার ফলে আমার যে-স্নায়ুর অস্বাভাবিকতা হয়েছে, সেটার জন্য আমার পক্ষে হাঁটা কঠিন হয়ে পড়ে এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যাও দেখা দেয়।

আমার জন্মের কিছু সময় আগে, যিহোবার সাক্ষিদের মিশনারি দম্পতি আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে অধ্যয়ন শুরু করে। আমি যখন ছোটো ছিলাম, তখন আমার নিজের শহর নামিবিয়ার উসাকোসে মাত্র কয়েক জন প্রকাশক ছিল। তাই, আমরা একটা পরিবার হিসেবে মণ্ডলীর সভার বিষয়বস্তু বিবেচনা করতাম। সাত বছর বয়সে, আমার মূত্রনালীর অপারেশন হয় আর এই অপারেশনের মাধ্যমে মূত্র বের হওয়ার এক কৃত্রিম রাস্তা তৈরি করা হয়। ১৪ বছর বয়সে আমার মৃগীরোগ ধরা পড়ে। যেহেতু সবচেয়ে কাছের হাইস্কুল আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে ছিল এবং বাবা-মায়ের কাছ থেকে আমার বিশেষ যত্নের প্রয়োজন ছিল, তাই আমি পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি।

তা সত্ত্বেও, আমি নিজেকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের অনেক খ্রিস্টীয় প্রকাশনা তখন আমার মাতৃভাষা আফ্রিকান্সে ছিল না। তাই, আমি আমাদের বিভিন্ন বই অধ্যয়ন করার জন্য ইংরেজি শেখা শুরু করি। আমি রাজ্যের একজন প্রকাশক হই এবং ১৯ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিই। পরবর্তী চার বছর ধরে আমাকে অনেক স্বাস্থ্যগত এবং আবেগগত সমস্যা ভোগ করতে হয়। এ ছাড়া, আমার নিজ শহরে একতাবদ্ধ সমাজের লোকভয়ের কারণে আমি উদ্যোগের সঙ্গে পরিচর্যায় অংশ নিতে ভয় পেতাম।

আমার বয়স যখন ২০-এর কোঠার প্রথম দিকে, তখন আমরা নামিবিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাতে যাই এবং সেখানে প্রথম বারের মতো একটা মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ পাই। সেটা কত চমৎকারই না ছিল! কিন্তু, আমার আবারও অপারেশন হয় আর এই বার মলদ্বারের অপারেশন।

কিছু দিন পর, আমি একজন সীমা অধ্যক্ষ ভাইকে অগ্রগামী সম্বন্ধে কথা বলতে শুনি। তার মন্তব্য আমার হৃদয় স্পর্শ করে। আমি জানতাম যে, আমার স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশি ভালো ছিল না কিন্তু আমি দেখেছি, কীভাবে যিহোবা অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে আমার ভার বহন করেছেন। তাই, আমি নিয়মিত অগ্রগামীর কাজ করার জন্য আবেদন করি। কিন্তু, আমার স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে প্রাচীনরা আমার আবেদনপত্র অনুমোদন করতে দ্বিধাবোধ করে।

তা সত্ত্বেও, আমি রাজ্যের প্রচার কাজে আমার যথাসাধ্য করার সিদ্ধান্ত নিই। আমার মা এবং অন্যদের সাহায্যে, আমি ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে অগ্রগামী কাজের জন্য নির্ধারিত ঘন্টা প্রদান করতে সমর্থ হই। এটা অগ্রগামী কাজ করার ব্যাপারে আমার দৃঢ়সংকল্পের প্রমাণ দিয়েছিল এবং দেখিয়েছিল যে, আমার স্বাস্থ্যগত সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্ভব। আমি আবারও আবেদন করি আর এই বার আমার আবেদনপত্র অনুমোদন করা হয়। ১৯৮৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর আমি একজন নিয়মিত অগ্রগামী হয়ে উঠি।

একজন অগ্রগামী হিসেবে আমি সবসময় যিহোবার সাহায্য লাভ করেছি। আমার নিজের পরিস্থিতির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে নতুন ব্যক্তিদের সত্য শেখানো আমাকে সুরক্ষা প্রদান করেছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করেছে। অনেক ব্যক্তিকে উৎসর্গীকরণ করতে এবং বাপ্তিস্ম নিতে সাহায্য করে আমি প্রচুর আনন্দ লাভ করেছি।

আমার স্বাস্থ্যের অবস্থা এখনও আগের মতোই। কিন্তু, যিহোবা ‘দিন দিন আমার ভার বহন করেন।’ (গীত. ৬৮:১৯) তিনি আমার জীবনকে সহনীয় করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছেন; তিনি আমার জন্য বেঁচে থাকাকে উপভোগ্য করে তুলেছেন!

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]