সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বৈসাদৃশ্যগুলো যেন আপনাকে সাহায্য করে

বৈসাদৃশ্যগুলো যেন আপনাকে সাহায্য করে

বৈসাদৃশ্যগুলো যেন আপনাকে সাহায্য করে

আপনি কি এই বিষয়ে একমত নন যে, যিশুই ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে মহান শিক্ষক? আপনি হয়তো তাঁর শিক্ষা দেওয়ার বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে কিছু উপায় অনুকরণ করার চেষ্টা করেছেন, যেমন তাঁর প্রশ্নের এবং দৃষ্টান্তের ব্যবহার। কিন্তু, তিনি যে তাঁর শিক্ষায় প্রায়ই বৈসাদৃশ্য ব্যবহার করতেন, সেটা কি আপনি কখনো লক্ষ করেছেন?

অনেক লোক তাদের কথাবার্তায় বৈসাদৃশ্য ব্যবহার করে। আপনিও হয়তো প্রায়ই কোনো চিন্তা না করেই তা করে থাকেন। আপনি হয়তো এইরকম কিছু বলে থাকেন, “তারা বলেছিল যে, সব ফল পাকা; কিন্তু, এগুলো এখনও অনেক কাঁচা।” অথবা “একসময় সে অনেক লাজুক প্রকৃতির ছিল, কিন্তু এখন সে বেশ মিশুকে হয়েছে।”

এইরকম ক্ষেত্রগুলোতে, প্রথমে আপনি প্রকৃত বিষয়টা অথবা ধারণাটা তুলে ধরেন; এরপর আপনি এই ধরনের অভিব্যক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে বৈসাদৃশ্য তুলে ধরেন যেমন, কিন্তু, যাই হোক, বরং অথবা অন্যদিকে। কিংবা আপনি হয়তো এর সঙ্গে তথ্য যুক্ত করে বা ধারণাটাকে জোরালোভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে বৈসাদৃশ্য তুলে ধরেন। আপনি যখন সেভাবে কথা বলেন, তখন তা শুনতে স্বাভাবিক লাগে এবং অন্যেরা সহজেই আপনার কথা বুঝতে পারে।

এমনকী কিছু ভাষায় অথবা সংস্কৃতিতে যদি বৈসাদৃশ্য সাধারণ বিষয় না-ও হয়ে থাকে, তবুও আমাদের এর মূল্যকে স্বীকার করা উচিত। কেন? কারণ ঈশ্বরের বাক্যে আমরা এইরকম অনেক বৈসাদৃশ্য দেখতে পাই। যিশু প্রায়ই বৈসাদৃশ্য ব্যবহার করতেন। এগুলো স্মরণ করে দেখুন: “আর লোকে প্রদীপ জ্বালিয়া কাঠার নীচে রাখে না, কিন্তু দীপাধারের উপরেই রাখে।” “আমি [ব্যবস্থা] লোপ করিতে আসি নাই, কিন্তু পূর্ণ করিতে আসিয়াছি।” “তোমরা শুনিয়াছ, উক্ত হইয়াছিল, ‘তুমি ব্যভিচার করিও না’। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি . . . দৃষ্টিপাত করে।” “উক্ত হইয়াছিল, ‘চক্ষুর পরিশোধে চক্ষু ও দন্তের পরিশোধে দন্ত’। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা দুষ্টের প্রতিরোধ করিও না; বরং যে কেহ তোমার দক্ষিণ গালে চড় মারে, অন্য গাল তাহার দিকে ফিরাইয়া দেও।”—মথি ৫:১৫, ১৭, ২৭, ২৮, ৩৮, ৩৯.

বাইবেলের অন্যান্য বইয়ের মধ্যেও একইরকম বৈসাদৃশ্য রয়েছে। এগুলো আপনাকে একটা বিষয় বুঝতে অথবা আরও উত্তম উপায়ে কোনো কিছু করার ওপর জোর দিতে সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি একজন বাবা কিংবা মা হন, তাহলে এই বৈসাদৃশ্যটা বিবেচনা করুন: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [ঈশ্বরের] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফি. ৬:৪) প্রেরিত পৌল এখানে সাধারণভাবে বলেছেন যে, একজন বাবা (কিংবা মা) যদি একটা সন্তানকে ঈশ্বরের শাসনে মানুষ করে তোলেন, তাহলে তা বিজ্ঞতার কাজ এবং সঠিক কাজ হবে। কিন্তু, তার পরও এই বৈসাদৃশ্য ব্যবহারের কারণে বিষয়টা আরও স্পষ্টভাবে বোঝা গিয়েছে, ‘তাহাদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না বরং ঈশ্বরের চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।’

পরবর্তী সময়ে, সেই একই অধ্যায়ে পৌল লিখেছিলেন: “রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু . . . স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।” (ইফি. ৬:১২) এই বৈসাদৃশ্য হয়তো আপনাকে এটা বুঝতে সাহায্য করে যে, আপনাকে এক কঠিন লড়াই করতে হচ্ছে। আর এই লড়াই মানুষের সঙ্গে নয়; বরং দুষ্টতার আত্মাগণের সঙ্গে।

বৈসাদৃশ্য থেকে উপকার লাভ করুন

বাইবেলের সেই একই বইয়ে অর্থাৎ ইফিষীয় বইয়ে আপনি এমন আরও অনেক পাঠ্যাংশ পাবেন, যেখানে পৌল বৈসাদৃশ্য ব্যবহার করেছেন। এগুলো নিয়ে চিন্তা করা আমাদেরকে পৌলের বিষয়বস্তু বুঝতে ও সেইসঙ্গে আমাদের কী করা উচিত, সেটা আরও স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য হয়তো সাহায্য করতে পারে।

এই প্রবন্ধের সঙ্গে দেওয়া তালিকা বিবেচনা করাকে আপনার কাছে হয়তো উপভোগ্য এবং অর্থপূর্ণ বলে মনে হতে পারে, যেখানে ইফিষীয় ৪ এবং অধ্যায় থেকে কিছু বৈসাদৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটা বৈসাদৃশ্য পড়ার সময় নিজের জীবন সম্বন্ধে চিন্তা করুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘সত্যিকারভাবে, আমার মনোভাব কী? এই পরিস্থিতি অথবা একইরকম পরিস্থিতিতে আমি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই? বৈসাদৃশ্যের কোন অংশের সঙ্গে আমার মিল রয়েছে বলে অন্যেরা মনে করে?’ কোনো বৈসাদৃশ্য যদি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে যে, নির্দিষ্ট একটা বিষয়ের ওপর আপনার কাজ করা উচিত, তাহলে আপনি যা শিখেছেন, তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। সেই বৈসাদৃশ্য যেন আপনাকে সাহায্য করে।

অথবা এই তালিকাটা আপনি আপনার পারিবারিক উপাসনায় ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে, আপনার পরিবারের সমস্ত সদস্য বৈসাদৃশ্যগুলো পড়তে পারে। এরপর আপনাদের মধ্যে একজন হয়তো বৈসাদৃশ্যের প্রথম অংশ উল্লেখ করতে পারে আর পরিবারের অন্যেরা দ্বিতীয় অংশে উল্লেখিত বিষয়বস্তু স্মরণ করার চেষ্টা করতে পারে। এর ফলে, আপনারা হয়তো কীভাবে আরও পূর্ণরূপে দ্বিতীয় অংশ কাজে লাগাতে পারেন, সেটা নিয়ে এক চমৎকার পারিবারিক আলোচনা করতে পারবেন। হ্যাঁ, এইরকম বৈসাদৃশ্যগুলো নিয়ে পরীক্ষা করা যুবক-বৃদ্ধ সকলকে পরিবারে অথবা অন্যান্য জায়গায় খ্রিস্টীয় আচরণ দেখাতে সাহায্য করতে পারে।

আপনি যখন বৈসাদৃশ্যগুলোর মূল্য আরও বেশি বুঝতে পারবেন, তখন আপনি সেগুলো বাইবেল থেকে আরও ভালোভাবে শনাক্ত করতে পারবেন এবং আপনি হয়তো দেখবেন যে, আপনার খ্রিস্টীয় পরিচর্যার ক্ষেত্রেও এগুলো বেশ কার্যকরী। উদাহরণস্বরূপ, একজন গৃহকর্তাকে আপনি হয়তো বলতে পারেন: “অনেক লোক বলে যে, প্রত্যেক মানুষের এক অমর আত্মা রয়েছে, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য এখানে কী বলে, তা লক্ষ করুন।” অথবা কোনো বাইবেল অধ্যয়নের সময় আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন: “এই এলাকার অধিকাংশ লোক বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর এবং যিশু একই ব্যক্তি; কিন্তু বাইবেলে এই সম্বন্ধে কী বলা হয়েছে? আর আপনি কী বিশ্বাস করেন?”

হ্যাঁ, বাইবেলে সাহায্যকারী অনেক বৈসাদৃশ্য রয়েছে, যেগুলো আমাদেরকে ঈশ্বরের পথে চলতে সাহায্য করে। আর অন্যদেরকে বাইবেলের সত্য জানতে সাহায্য করার জন্য আমরা বৈসাদৃশ্যগুলো ব্যবহার করতে পারি।

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

[৪, ৫ পৃষ্ঠার তালিকা]

ইফিষীয় ৪ এবং অধ্যায়ে উল্লেখিত কিছু বৈসাদৃশ্য

এই তালিকাটা আপনার পারিবারিক উপাসনায় ব্যবহার করার চেষ্টা করুন!

“যেন আমরা আর . . . মনুষ্যদের ঠকামিতে, ধূর্ত্ততায়, ভ্রান্তির চাতুরীক্রমে . . . ইতস্ততঃ পরিচালিত না হই।”—৪:১৪.

“কিন্তু প্রেমে সত্যনিষ্ঠ হইয়া সর্ব্ববিষয়ে তাঁহার উদ্দেশে বৃদ্ধি পাই, যিনি মস্তক, তিনি খ্রীষ্ট।”—৪:১৫, ১৬.

‘[জাতিগণ] হৃদয়ের কঠিনতা প্রযুক্ত চিত্তে অন্ধীভূত হইয়াছে।’—৪:১৮, ১৯.

“কিন্তু তোমরা খ্রীষ্টের বিষয়ে এরূপ শিক্ষা পাও নাই; তাঁহারই বাক্য ত শুনিয়াছ, এবং . . . তাঁহাতেই শিক্ষিত হইয়াছ।”—৪:২০, ২১.

“তোমরা পূর্ব্বকালীন আচরণ সম্বন্ধে সেই পুরাতন মনুষ্যকে ত্যাগ কর।” —৪:২২.

‘আর আপন আপন মনের ভাবে ক্রমশঃ নবীনীকৃত হও, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান কর।’—৪:২৩, ২৪.

“চোর আর চুরি না করুক।” —৪:২৮.

“বরং স্বহস্তে সদ্ব্যাপারে পরিশ্রম করুক।”—৪:২৮.

“তোমাদের মুখ হইতে কোন প্রকার কদালাপ বাহির না হউক।”—৪:২৯.

“কিন্তু প্রয়োজনমতে গাঁথিয়া তুলিবার জন্য সদালাপ বাহির হউক।”—৪:২৯.

“বেশ্যাগমনের ও সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতার বা লোভের নামও যেন তোমাদের মধ্যে না হয়।”—৫:৩.

“বরং যেন ধন্যবাদ দেওয়া হয়।” —৫:৪.

“তোমরা এক সময়ে অন্ধকার ছিলে।” —৫:৮.

“কিন্তু এখন প্রভুতে দীপ্তি হইয়াছ।” —৫:৮.

“অন্ধকারের ফলহীন কর্ম্ম সকলের সহভাগী হইও না।”—৫:১১.

“বরং সেগুলির দোষ দেখাইয়া দেও।” —৫:১১.

“তাই তোমরা কিরকম জীবনযাপন করছ, সেদিকে বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি রেখো। নির্বোধ লোকদের মত চলো না।”—৫:১৫, ইজি-টু-রিড ভারসন।

“কিন্তু জ্ঞানবানের মতো চল। সময় বড় খারাপ, এইজন্য ভাল কিছু করার সুযোগ পেলে তার সদ্বব্যবহার কোর।” —৫:১৫, ১৬, ইজি-টু-রিড ভারসন।

“নির্ব্বোধ হইও না।”—৫:১৭.

“কিন্তু প্রভুর [ঈশ্বরের] ইচ্ছা কি, তাহা বুঝ।”—৫:১৭.

“দ্রাক্ষারসে মত্ত হইও না, তাহাতে নষ্টামি আছে।”—৫:১৮.

“কিন্তু আত্মাতে পরিপূর্ণ হও।” —৫:১৮.

“যেন [খ্রিস্ট] আপনার কাছে মণ্ডলীকে প্রতাপান্বিত অবস্থায় উপস্থিত করেন, যেন তাহার কলঙ্ক বা সঙ্কোচ বা এই প্রকার আর কোন কিছু না থাকে।”—৫:২৭.

“বরং সে যেন পবিত্র ও অনিন্দনীয় হয়।”—৫:২৭.

“কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই।”—৫:২৯.

“বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে; যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর প্রতি করিতেছেন।”—৫:২৯.

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[চিত্র]

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি বৈসাদৃশ্যের দ্বিতীয় অংশ স্মরণ করতে পারেন?