সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

উত্তমভাবে প্রস্তুতকৃত এক প্রার্থনা থেকে শিক্ষা

উত্তমভাবে প্রস্তুতকৃত এক প্রার্থনা থেকে শিক্ষা

“তোমার প্রতাপান্বিত নামের ধন্যবাদ হউক।”—নহি. ৯:৫.

১. ঈশ্বরের লোকেদের কোন সমাবেশ সম্বন্ধে আমরা বিবেচনা করব আর এটা কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপন করে?

 “উঠ; তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর, যিনি অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল পর্য্যন্ত [ধন্য]।” এই অনুপ্রাণিত কথাগুলোর মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রাচীন লোকেরা একত্রে প্রার্থনা করার জন্য সমবেত হয়েছিল, যা বাইবেলের বিবরণের সবচেয়ে দীর্ঘ প্রার্থনার মধ্যে একটা। (নহি. ৯:৪, ৫) ৪৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সপ্তম যিহুদি মাসে অর্থাৎ তিসরি মাসের ২৪তম দিনে লোকেরা যিরূশালেমে একত্রিত হয়েছিল। এই বিশেষ দিনের আগে যে-ঘটনাগুলো ঘটেছিল, সেগুলো যখন আমরা বিবেচনা করব, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘কোন উত্তম অভ্যাসের কারণে এই উপলক্ষ্য সফল হয়েছিল? উত্তমভাবে প্রস্তুতকৃত এই প্রার্থনা থেকে আমি অন্য আর কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?’—গীত. ১৪১:২.

এক বিশেষ মাস

২. যিরূশালেমের প্রাচীর পুনর্নির্মাণ করার পর তাদের সমাবেশে ইস্রায়েলীয়রা আমাদের জন্য কোন চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছে?

ওপরে উল্লেখিত সমাবেশের এক মাস আগে, যিহুদিরা যিরূশালেমের প্রাচীর পুনর্নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছিল। (নহি. ৬:১৫) ঈশ্বরের লোকেরা মাত্র ৫২ দিনের মধ্যে কাজটা শেষ করেছিল এবং এরপর তারা তাদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিল। তাই, নতুন মাস অর্থাৎ তিসরি মাসের প্রথম দিনে তারা চকে একত্রিত হয়েছিল, যেন ইষ্রা ও অন্যান্য লেবীয় যখন ঈশ্বরের ব্যবস্থা জোরে জোরে পাঠ করে ও ব্যাখ্যা করে, তখন তা শুনতে পারে। পুরো পরিবার এবং “শুনিয়া বুঝিতে পারে” এমন সকলে “প্রাতঃকাল হইতে মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত” দাঁড়িয়ে শুনেছিল। আমাদের জন্য এটা কতই-না চমৎকার এক উদাহরণ, যারা আজকে আরামদায়ক কিংডম হলের সভাগুলোতে যোগ দিই! তা সত্ত্বেও, এইরকম সমাবেশের সময় আপনি কি মাঝে মাঝে লক্ষ করেন যে, আপনার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে আরও কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করেছে? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে আবারও সেই প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যারা কেবল মনোযোগ দিয়ে শোনেনি কিন্তু যা শুনেছিল, সেটার দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিল যে, একটা জাতি হিসেবে ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছিল বলে তারা কাঁদতে শুরু করেছিল।—নহি. ৮:১-৯.

৩. ইস্রায়েলীয়রা বাধ্যতার সঙ্গে কোন নির্দেশনা অনুসরণ করেছিল?

কিন্তু, এটা জনসমক্ষে পাপ স্বীকার করার কোনো সময় ছিল না। যেহেতু সেটা ছিল এক উৎসবের দিন, তাই এর অর্থ ছিল যিহোবার উপাসনায় আনন্দিত হওয়ার এক সময়। (গণনা. ২৯:১) তাই, নহিমিয় লোকেদের বলেছিলেন: “যাও, পুষ্ট দ্রব্য ভোজন কর, মিষ্ট রস পান কর, এবং যাহার জন্য কিছু প্রস্তুত নাই, তাহাকে অংশ পাঠাইয়া দেও; কারণ অদ্যকার দিন আমাদের প্রভুর উদ্দেশে পবিত্র, তোমরা বিষণ্ণ হইও না, কেননা সদাপ্রভুতে যে আনন্দ, তাহাই তোমাদের শক্তি।” প্রশংসার বিষয় হল, লোকেরা সেই অনুযায়ী কাজ করেছিল এবং সেটা ‘অতিশয় আনন্দের’ এক দিন হয়ে উঠেছিল।—নহি. ৮:১০-১২.

৪. ইস্রায়েলের পিতৃকুলপতিরা কী করেছিল এবং কোন বিষয়টা এই কুটীরোৎসবের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল?

ঠিক পরের দিন পিতৃকুলপতিরা, সেই জাতি আরও কতটা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন করতে পারে, তা দেখার জন্য একত্রিত হয়েছিল। শাস্ত্র অধ্যয়ন করার মাধ্যমে, তারা জানতে পারে যে, সপ্তম মাসে অর্থাৎ তিসরি মাসের ১৫ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে কুটিরোৎসব এবং এর শেষে উৎসব সভা পালন করার কথা, তাই তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল। যিহোশূয়ের সময় থেকে সেই দিন পর্যন্ত সেটা ছিল সবচেয়ে সফল কুটিরোৎসব এবং সেই দিন “অতি বড় আনন্দ” হয়েছিল। এই উৎসবের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, জনসমক্ষে “প্রথম দিন হইতে শেষ দিন পর্য্যন্ত প্রতিদিন” ঈশ্বরের ব্যবস্থা পাঠ করা।—নহি. ৮:১৩-১৮.

পাপ স্বীকার করার এক দিন

৫. লেবীয়রা ঈশ্বরের লোকেদের হয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার ঠিক আগে ঈশ্বরের লোকেরা কী করেছিল?

দুই দিন পর, ইস্রায়েলের জন্য পাপ স্বীকার করার উপযুক্ত সময় ছিল, কারণ তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেটা ভোজনের উৎসবের দিন ছিল না। এর পরিবর্তে, ঈশ্বরের লোকেরা উপবাস করেছিল এবং শোকের একটা চিহ্ন হিসেবে চট পরিধান করেছিল। পুনরায়, লোকেদের সামনে সকালে প্রায় তিন ঘন্টা ধরে ঈশ্বরের ব্যবস্থা পাঠ করা হয়েছিল। আর বিকেলে “তাহারা . . . আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে পাপ স্বীকার ও প্রণিপাত করিল।” এরপর লেবীয়রা লোকেদের হয়ে উত্তমভাবে প্রস্তুতকৃত প্রার্থনা করেছিল। —নহি. ৯:১-৪.

৬. কোন কারণে লেবীয়রা এক অর্থপূর্ণ প্রার্থনা করতে পেরেছিল এবং এটা আমাদের কোন শিক্ষা প্রদান করে?

নিঃসন্দেহে, বার বার ঈশ্বরের ব্যবস্থা পাঠ করাই লেবীয়দেরকে এইরকম অর্থপূর্ণ প্রার্থনা করতে সাহায্য করেছিল। প্রথম দশটি পদ পুরোপুরি যিহোবার কাজ ও গুণাবলির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। প্রার্থনার বাকি অংশে বার বার ঈশ্বরের “প্রচুর করুণা” সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে এবং এই স্পষ্ট স্বীকারোক্তি করা হয়েছে যে, ইস্রায়েলীয়রা এই ধরনের সদয় ব্যবহারের যোগ্য নয়। (নহি. ৯:১৯, ২৭, ২৮, ৩১) যিহোবার প্রতি আমাদের প্রার্থনাও বিশুদ্ধ এবং অর্থপূর্ণ হবে, যদি সেই লেবীয়দের মতো আমরা রোজ ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ধ্যান করি অর্থাৎ তাঁর কাছে দীর্ঘ প্রার্থনা করার আগে যিহোবাকে আমাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিই।—গীত. ১:১, ২.

৭. লেবীয়রা ঈশ্বরের কাছে কী যাচ্ঞা করেছিল আর এটা থেকে আমরা কী শিখি?

সেই প্রার্থনার মধ্যে কেবল একটা বিনয়ী অনুরোধ ছিল। এটা ৩২ পদের শেষ অংশে পাওয়া যায়, যেখানে বলা আছে: “হে আমাদের ঈশ্বর, মহান্‌, বিক্রান্ত ও ভয়ঙ্কর ঈশ্বর, তুমি নিয়ম ও দয়া পালন করিয়া থাক; অশূর-রাজগণের সময়াবধি অদ্য পর্য্যন্ত আমাদের উপরে, আমাদের রাজাদের, অধ্যক্ষদের, যাজকদের ভাববাদীদের, পিতৃপুরুষদের ও তোমার সকল প্রজার উপরে যে সমস্ত ক্লেশ ঘটিতেছে, সে সকল তোমার দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র বোধ না হউক।” এভাবে, আমাদের প্রার্থনায় ব্যক্তিগত অনুরোধ করার আগে যিহোবার প্রশংসা করার এবং তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়ার বিষয়ে লেবীয়রা আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছে।

ঈশ্বরের প্রতাপান্বিত নামের প্রশংসা করা

৮, ৯. (ক) লেবীয়রা কোন নম্র উপায়ে তাদের প্রার্থনা শুরু করেছিল? (খ) লেবীয়রা স্পষ্টতই কোন দুটো স্বর্গীয় বাহিনীকে নির্দেশ করেছিল?

যদিও তাদের প্রার্থনা উত্তমভাবে প্রস্তুতকৃত ছিল, কিন্তু তারপরও লেবীয়রা নম্র মনোভাব দেখিয়েছিল এবং এইরকমটা অনুভব করেছিল যে, তাদের বাক্যের গুণগত মান পুরোপুরিভাবে সেই প্রশংসা প্রকাশ করতে পারবে না, যা যিহোবা প্রকৃতই পাওয়ার যোগ্য। তাই, এই প্রার্থনা ঈশ্বরের লোকেদের সম্বন্ধে এই বিনয়ী আবেদন দিয়ে শুরু হয়: “তোমার প্রতাপান্বিত নামের ধন্যবাদ হউক, যাহা যাবতীয় ধন্যবাদ ও প্রশংসার অতীত।”—নহি. ৯:৫.

“কেবলমাত্র তুমিই সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW],” প্রার্থনায় আরও বলা হয়, “তুমি স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ এবং তাহার সমস্ত বাহিনী, পৃথিবী ও তথাকার সমস্ত এবং সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত নির্ম্মাণ করিয়াছ, আর তুমি তাহাদের সকলের স্থিতি করিতেছ, এবং স্বর্গের বাহিনী তোমার কাছে প্রণিপাত করে।” (নহি. ৯:৬) হ্যাঁ, যিহোবা পুরো নিখিলবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, যা তারা সমন্বিত অসংখ্য ছায়াপথ দিয়ে তৈরি। বিভিন্ন ধরনের বিস্ময়কর জীবন—স্ব স্ব প্রজাতি অনুযায়ী বংশ বিস্তার করে এমন জীবন—টিকিয়ে রাখার অসাধারণ ক্ষমতা দিয়ে তিনি আমাদের অপূর্ব গ্রহের সমস্তকিছু সৃষ্টি করেছেন। এই সমস্তকিছু ঈশ্বরের সেই পবিত্র স্বর্গদূতেরা দেখেছিল আর তাদেরকেও “স্বর্গের সমস্ত বাহিনী” হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। (১ রাজা. ২২:১৯; ইয়োব ৩৮:৪, ৭) অধিকন্তু, স্বর্গদূতেরা সেই পাপী মানুষদের পরিচর্যা করার মাধ্যমে নম্রভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, “যাহারা পরিত্রাণের অধিকারী হইবে।” (ইব্রীয় ১:১৪) যেহেতু আমরা সুপ্রশিক্ষিত এক বাহিনীর মতো ঐক্যবদ্ধভাবে যিহোবার সেবা করি, তাই স্বর্গদূতেরা আমাদের জন্য কতই-না চমৎকার এক উদাহরণ স্থাপন করেছে!—১ করি. ১৪:৩৩, ৪০.

১০. অব্রাহামের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ থেকে আমরা কী শিখি?

১০ এরপর, লেবীয়রা অব্রামের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল, যিনি ৯৯ বছর বয়সেও তার বন্ধ্যা স্ত্রী সারীর কোনো সন্তানের পিতা হতে পারেননি। সেই সময়ই যিহোবা তার নাম পরিবর্তন করে অব্রাহাম রেখেছিলেন, যার অর্থ “বহুলোকের পিতা।” (আদি. ১৭:১-৬, ১৫, ১৬) এ ছাড়া, ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তার বংশ কনান দেশের অধিকারী হবে। মানুষ প্রায়ই তাদের প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে যায়; কিন্তু যিহোবা ভুলে যান না। এই বিষয়টা লেবীয়দের প্রার্থনায়ও বলা হয়েছে: ‘তুমিই সদাপ্রভু ঈশ্বর; তুমি অব্রামকে মনোনীত করিয়াছিলে, কল্‌দীয় দেশের ঊর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলে, ও তাঁহার নাম অব্রাহাম রাখিয়াছিলে; এবং আপনার সাক্ষাতে তাঁহার অন্তঃকরণ বিশ্বস্ত দেখিয়া কনানীয়ের দেশ তাঁহার বংশকে দিবার জন্য, তাঁহার সহিত নিয়ম করিয়াছিলে, আর তুমি আপনার বাক্য অটল রাখিয়াছ, কেননা তুমি ধর্ম্মময়।’ (নহি. ৯:৭, ৮) আমাদের কথা রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করার মাধ্যমে আমরাও যেন আমাদের ধর্মময় ঈশ্বরকে অনুকরণ করি।—মথি ৫:৩৭.

যিহোবার সম্পাদিত কাজগুলো সম্বন্ধে বর্ণনা করা

১১, ১২. যিহোবার নামের অর্থ ব্যাখ্যা করুন ও সেইসঙ্গে অব্রাহামের বংশধরদের সঙ্গে তাঁর আচরণে কীভাবে তা প্রদর্শিত হয়েছিল, তা বলুন।

১১ যিহোবা নামের অর্থ হল, “তিনি অস্তিত্বে আনেন” আর এটা দেখায় যে, অগ্রগতিশীল কাজের মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করেন। এই বিষয়টা সেই সময় অব্রাহামের বংশধরদের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণের মধ্যে চমৎকারভাবে প্রকাশ পেয়েছে, যখন তারা মিশরীয়দের দাস ছিল। পুরো জাতি মুক্ত হয়ে প্রতিজ্ঞাত দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার বিষয়টাকে সেই সময় অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু, ধারাবাহিক অগ্রগতিশীল কাজের মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করেছিলেন আর এভাবে নিজেকে অদ্বিতীয় এবং বিশিষ্ট, যিহোবা নামের যোগ্য হিসেবে প্রমাণিত করেছিলেন।

১২ নহিমিয়ের দ্বারা লিপিবদ্ধ প্রার্থনা যিহোবা সম্বন্ধে বলে: “তুমি মিসরে আমাদের পিতৃপুরুষদের দুঃখ দেখিয়াছিলে, ও সূফসাগরের তীরে তাহাদের ক্রন্দন শুনিয়াছিলে; এবং ফরৌণে, তাঁহার সমস্ত দাসগণে ও তাঁহার দেশের প্রজা সকলে নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইয়াছিলে; কেননা তুমি জানিতে যে, মিস্রীয়েরা তাহাদের বিরুদ্ধে গর্ব্ব করিত; ইহাতে তুমি আপনার নাম প্রতিষ্ঠিত করিলে, যেমন অদ্য রহিয়াছে। আর তুমি তাহাদের সম্মুখে সমুদ্রকে দ্বিভাগ করিলে, তাহাতে তাহারা সমুদ্রের মধ্যস্থলে শুষ্ক পথ দিয়া অগ্রসর হইল; কিন্তু প্রবল জলে যেমন প্রস্তর, তেমনি তুমি তাহাদের পশ্চাদ্ধাবনকারী লোকদিগকে অগাধ জলে নিক্ষেপ করিলে।” এরপর, প্রার্থনায় আরও বলা হয় যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য আরও কী করেছিলেন: “তুমি সেই দেশনিবাসী কনানীয়দিগকে তাহাদের সম্মুখে নত করিলে, . . . তাহাতে তাহারা প্রাচীরবেষ্টিত অনেক নগর ও উর্ব্বরা ভূমি লইল, এবং সমুদয় উত্তম দ্রব্যে পরিপূর্ণ গৃহ, খনিত কূপ, দ্রাক্ষাক্ষেত্র, জিতক্ষেত্র ও প্রচুর ফলবৃক্ষ অধিকার করিল, এবং ভোজন করিয়া তৃপ্ত ও পুষ্ট হইল, এবং তোমার কৃত মহা মঙ্গলে আপ্যায়িত হইল।”—নহি. ৯:৯-১১, ২৪, ২৫.

১৩. কীভাবে যিহোবা ইস্রায়েলের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিয়েছিলেন কিন্তু লোকেরা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল?

১৩ ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করার জন্য আরও অনেক অগ্রগতিশীল কাজ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, ইস্রায়েল মিশর ত্যাগ করার পর, যিহোবা তাদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিয়েছিলেন। ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রার্থনায় লেবীয়রা স্মরণ করে বলেছিল, তিনি ‘সীনয় পর্ব্বতের উপরে নামিয়া আসিলেন, স্বর্গ হইতে তাহাদের সহিত কথা বলিলেন, আর যথার্থ শাসন, সত্য ব্যবস্থা, উত্তম বিধি ও আজ্ঞা তাহাদিগকে দিলেন।’ (নহি. ৯:১৩) যিহোবা তাঁর লোকেদের শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন, যাতে তারা প্রতিজ্ঞাত দেশের উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর পবিত্র নাম বহন করার যোগ্য হতে পারে কিন্তু তারা যে-উত্তম বিষয়গুলো শিখেছিল, সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিল।—পড়ুন, নহিমিয় ৯:১৬-১৮.

শাসনের প্রয়োজনীয়তা

১৪, ১৫. (ক) কীভাবে যিহোবা করুণার সঙ্গে তাঁর পাপী লোকেদের যত্ন নিয়েছিলেন? (খ) তাঁর মনোনীত জাতির সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ থেকে আমরা কী শিখি?

১৪ লেবীয়দের প্রার্থনা এমন দুটো পাপ সম্বন্ধে তুলে ধরে, যেগুলো ইস্রায়েলীয়রা সীনয় পর্বতে ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন করার প্রতিজ্ঞা করার পর পরই করেছিল। এই কারণে, উপযুক্তভাবেই তারা কেবল মৃত্যুর জন্য পরিত্যক্ত হওয়ার যোগ্য ছিল। কিন্তু, প্রার্থনা যিহোবার এই প্রশংসা করে: “তুমি আপন প্রচুর করুণা প্রযুক্ত প্রান্তরে তাহাদিগকে ত্যাগ করিলে না . . . চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত . . . তাহাদিগকে প্রতিপালন করিলে, তাহাদের অভাব হইল না। তাহাদের বস্ত্র জীর্ণ হইল না, ও তাহাদের পা ফুলিল না।” (নহি. ৯:১৯, ২১) বর্তমানেও, যিহোবা তাঁকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করার জন্য আমাদের প্রয়োজন এমন সমস্তকিছু জোগান। আমরা যেন কখনো সেই হাজার হাজার ইস্রায়েলীয়দের মতো না হই, যারা তাদের অবাধ্যতার কারণে এবং বিশ্বাসের অভাবের কারণে প্রান্তরে মারা গিয়েছিল। বাস্তবিকপক্ষে, এই বিষয়গুলো “আমাদেরই চেতনার জন্য লিখিত হইল; আমাদের, যাহাদের উপরে যুগকলাপের অন্ত আসিয়া পড়িয়াছে।”—১ করি. ১০:১-১১.

১৫ দুঃখের বিষয় হল, প্রতিজ্ঞাত দেশ অধিকার করার পর ইস্রায়েলীয়রা কনানীয় দেবতাদের কামোদ্দীপক ও নিষ্ঠুরতাপূর্ণ উপাসনা গ্রহণ করেছিল। তাই, যিহোবা তাঁর মনোনীত জাতিকে প্রতিবেশী জাতিগুলোর দ্বারা দুর্দশা ভোগ করতে দিয়েছিলেন। তারা যখন অনুতপ্ত হয়েছিল, তখন যিহোবা করুণার সঙ্গে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং তাদের শত্রুদের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করেছিলেন। এই বিষয়টা “অনেক বার” ঘটেছিল। (পড়ুন, নহিমিয় ৯:২৬-২৮, ৩১.) “তুমি,” লেবীয়রা অপরাধ স্বীকার করে বলে, “বহু বৎসর তাহাদের ব্যবহার সহ্য করিলে ও তোমার ভাববাদিগণের দ্বারা তোমার আত্মাকর্ত্তৃক তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে; কিন্তু তাহারা কর্ণপাত করিল না, তজ্জন্য তুমি তাহাদিগকে নানাদেশীয় জাতিগণের হস্তে সমর্পণ করিলে।”—নহি. ৯:৩০.

১৬, ১৭. (ক) বন্দিত্বের পর ইস্রায়েলীয়দের পরিস্থিতি কীভাবে তাদের পিতৃপুরুষেরা যখন প্রথম প্রতিজ্ঞাত দেশ অধিকার করেছিল, সেই সময়ের থেকে আলাদা ছিল? (খ) ইস্রায়েলীয়রা কী স্বীকার করেছিল এবং তারা কী করার প্রতিজ্ঞা করেছিল?

১৬ এমনকী বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসার পর ইস্রায়েলীয়রা আবারও অবাধ্য হয়েছিল। এর ফল কী হয়েছিল? লেবীয়রা প্রার্থনায় বলে চলেছিল: “দেখ, অদ্য আমরা দাস, ফলে তুমি আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়া তদুৎপন্ন ফলের ও উত্তম দ্রব্যের অধিকারী করিয়াছিলে, দেখ, আমরা এই দেশমধ্যে দাস হইয়া রহিয়াছি। আর তুমি আমাদের পাপ প্রযুক্ত আমাদের উপরে যে রাজগণকে নিযুক্ত করিয়াছ, দেশোৎপন্ন দ্রব্যবাহুল্য তাঁহাদেরই স্বত্ব; . . . আর আমরা মহা সঙ্কটের মধ্যে আছি।”—নহি. ৯:৩৬, ৩৭.

১৭ লেবীয়রা কি এটা বোঝাতে চেয়েছিল যে, ঈশ্বর এই দুর্দশা ভোগ করতে দিয়েছিলেন বলে তিনি অন্যায্য ছিলেন? একেবারেই না! তারা স্বীকার করেছিল, “আমাদের প্রতি এই সকল ঘটিলেও তুমি ধর্ম্মময়; কেননা তুমি সত্য ব্যবহার করিয়াছ, কিন্তু আমরা দুষ্কর্ম্ম করিয়াছি।” (নহি. ৯:৩৩) এরপর এই নিঃস্বার্থ প্রার্থনা এক গুরুগম্ভীর প্রতিজ্ঞা দিয়ে শেষ হয় যে, সেই জাতি এখন থেকে ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন করবে। (পড়ুন, নহিমিয় ৯:৩৮; ১০:২৯) এই কারণে একটা লিখিত চুক্তির মধ্যে ৮৪ জন যিহুদি নেতা স্বাক্ষর করে সেটা মুদ্রাঙ্কিত করেছিল।—নহি. ১০:১-২৭.

১৮, ১৯. (ক) ঈশ্বরের নতুন জগতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের কীসের প্রয়োজন? (খ) আমাদের কীসের জন্য প্রার্থনা বন্ধ করা উচিত নয় এবং কেন?

১৮ তাঁর ধার্মিক নতুন জগতে রক্ষা পাওয়ার জন্য যোগ্য হতে হলে, আমাদের যিহোবার কাছ থেকে শাসনের প্রয়োজন। “পিতা যাহাকে শাসন না করেন, এমন পুত্র কোথায়?” প্রেরিত পৌল জিজ্ঞেস করেছিলেন। (ইব্রীয় ১২:৭) বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করে যাওয়ার এবং তাঁর আত্মাকে আমাদের পরিশোধিত করার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, আমরা নিজেদের জীবনে ঈশ্বরের নির্দেশনা গ্রহণ করেছি। আর আমরা যদি কোনো গুরুতর পাপ করে ফেলি, তাহলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করবেন, যদি আমরা প্রকৃতই অনুতপ্ত হই এবং নম্রভাবে শাসন গ্রহণ করি।

১৯ শীঘ্র, যিহোবা স্বয়ং তাঁর নামকে ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে উদ্ধার করার সময় যেমন করেছিলেন, সেটার চেয়ে এমনকী আরও মহৎ করবেন। (যিহি. ৩৮:২৩) আর তাঁর প্রাচীন লোকেরা যেমন নিশ্চিতভাবেই প্রতিজ্ঞাত দেশ লাভ করেছিল, তেমনই যিহোবার বিশ্বস্ত উপাসক হিসেবে ধৈর্য ধরছে এমন সমস্ত খ্রিস্টান ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতে জীবন লাভ করবে। (২ পিতর ৩:১৩) আমাদের সামনে যেহেতু এইরকম অপূর্ব প্রত্যাশা রয়েছে, তাই আমরা যেন ঈশ্বরের প্রতাপান্বিত নামের পবিত্রীকরণের জন্য প্রার্থনা করা বন্ধ না করি। পরের প্রবন্ধে আরেকটা প্রার্থনা নিয়ে আলোচনা করা হবে আর আমরা যদি এখন এবং চিরকাল ঈশ্বরের আশীর্বাদ উপভোগ করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই এটার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হবে।