সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সাত জন পালরক্ষক, আট জন নরপতি—বর্তমানে আমাদের জন্য এগুলো যে-অর্থ রাখে

সাত জন পালরক্ষক, আট জন নরপতি—বর্তমানে আমাদের জন্য এগুলো যে-অর্থ রাখে

“আমরা তাহার বিপক্ষে সাত জন পালরক্ষক ও আট জন নরপতিকে উত্থাপন করিব।”—মীখা ৫:৫.

১. কেন অরাম-ইস্রায়েলের যৌথ চক্রান্ত ব্যর্থ হবেই?

 ইস্রায়েলের রাজা এবং অরামের রাজা, ৭৬২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ এবং ৭৫৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝামাঝি কোনো সময়ে যিহূদা রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তাদের উদ্দেশ্য? যিরূশালেম দখল করা, রাজা আহসকে সিংহাসনচ্যুত করা এবং তার স্থানে এমন এক ব্যক্তিকে বসানো, যিনি হয়তো রাজা দায়ূদের বংশধর নন। (যিশা. ৭:৫, ৬) ইস্রায়েলের রাজার একটা বিষয় ভালোভাবে জানা উচিত ছিল। সেটা হল, যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন যে, দায়ূদের একজন বংশধর স্থায়ীভাবে তাঁর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হবেন আর ঈশ্বরের বাক্য কখনোই নিষ্ফল হয় না।—যিহো. ২৩:১৪; ২ শমূ. ৭:১৬.

২-৪. ব্যাখ্যা করুন যে, যিশাইয় ৭:১৪, ১৬ পদের কথাগুলো কীভাবে পূর্ণ হয়েছিল (ক) অষ্টম খ্রিস্টপূর্বাব্দে। (খ) প্রথম খ্রিস্টাব্দে।

শুরুতে, অরাম-ইস্রায়েলীয় মিত্রবাহিনী সফল হতে যাচ্ছিল বলে মনে হয়েছিল। মাত্র একটা যুদ্ধেই, আহস ১,২০,০০০ জন শক্তিশালী যোদ্ধা হারিয়েছিলেন! “রাজার পুত্ত্র” মাসেয়কে হত্যা করা হয়েছিল। (২ বংশা. ২৮:৬, ৭) কিন্তু, যিহোবা সব লক্ষ করছিলেন। দায়ূদের কাছে তিনি যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেটার কথা তাঁর স্মরণে ছিল; তাই তিনি ভাববাদী যিশাইয়কে সবচেয়ে উৎসাহজনক এক বার্তা বলার জন্য পাঠিয়েছিলেন।

যিশাইয় বলেছিলেন: “দেখ, এক কন্যা গর্ব্ভবতী হইয়া পুত্ত্র প্রসব করিবে, ও তাঁহার নাম ইম্মানূয়েল [আমাদের সহিত ঈশ্বর] রাখিবে। . . . যাহা মন্দ তাহা অগ্রাহ্য করিবার ও যাহা ভাল তাহা মনোনীত করিবার জ্ঞান বালকটীর না হইতে, যে দেশের দুই রাজাকে তুমি ঘৃণা করিতেছ [অরাম এবং ইস্রায়েল], সে দেশ পরিত্যক্ত হইবে।” (যিশা. ৭:১৪, ১৬) এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর প্রথম অংশ প্রায়ই মশীহের জন্মের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় আর তা উপযুক্ত। (মথি ১:২৩) কিন্তু, যেহেতু ‘দুই রাজা’ অর্থাৎ অরাম এবং ইস্রায়েলের রাজা, প্রথম খ্রিস্টাব্দে আর যিহূদার জন্য হুমকি স্বরূপ ছিল না, তাই ইম্মানূয়েল সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্‌বাণী নিশ্চয়ই যিশাইয়ের দিনে প্রাথমিকভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল।

যিশাইয় এই উল্লেখযোগ্য ঘোষণা করার পর পরই তার স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছিলেন এবং তার জন্য মহের-শালল-হাশ-বস নামে এক ছেলের জন্ম দিয়েছিলেন। একটা সম্ভাবনা হতে পারে যে, এই সন্তানই ছিল যিশাইয়ের দ্বারা উল্লেখিত “ইম্মানূয়েল।” * বাইবেলের দিনে, জন্মের সময় শিশুকে একটা নাম দেওয়া হতো আর তা সম্ভবত এক বিশেষ উপলক্ষ্য উদ্‌যাপন করার জন্য কিন্তু তার বাবা-মা এবং আত্মীয়স্বজন তাকে অন্য আরেকটা নামে ডাকত। (২ শমূ. ১২:২৪, ২৫) যিশুকে কখনো ইম্মানূয়েল নামে ডাকা হয়েছিল কি না, সেই বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।—পড়ুন, যিশাইয় ৭:১৪; ৮:৩, ৪.

৫. রাজা আহস কোন মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?

ইস্রায়েল এবং অরাম যখন যিহূদার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছিল, তখন আরেকটা জাতি, যুদ্ধপ্রিয় এক জাতি সেই অঞ্চলের ব্যাপারে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছিল। সেটা ছিল উদীয়মান বিশ্বশক্তি অশূর। যিশাইয় ৮:৩, ৪ পদ অনুযায়ী, দক্ষিণের যিহূদার রাজ্য আক্রমণ করার পূর্বে, অশূর “দম্মেশকের ধন” এবং “শমরিয়ার লুট” নিয়ে যাবে। যিশাইয়ের মাধ্যমে বলা ঈশ্বরের বাক্যে নির্ভর করার পরিবর্তে, আহস অশূরীয়দের সঙ্গে এক মূর্খতাপূর্ণ চুক্তি করেছিলেন আর এর ফলে পরিশেষে যিহূদার লোকেরা তাদের অত্যাচারের শিকার হয়েছিল। (২ রাজা. ১৬:৭-১০) যিহূদার একজন পালরক্ষক হিসেবে আহস কতই-না ব্যর্থ হয়েছিলেন! আমরা হয়তো নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমাকে যখন অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয়, তখন আমি কি ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করি, নাকি মানুষের ওপর নির্ভর করি?’—হিতো. ৩:৫, ৬.

একজন নতুন পালরক্ষক এক ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেন

৬. আহস এবং হিষ্কিয়ের রাজত্বের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরুন।

আহস ৭৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মারা যান এবং তার ছেলে হিষ্কিয়, বস্তুগত দিক দিয়ে নিঃস্ব এবং আধ্যাত্মিকভাবে অধঃপতিত যিহূদা রাজ্যের অধিকারী হন। যুবক রাজা হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তার অগ্রাধিকারের বিষয় কী হবে? যিহূদার দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থাকে সবল করা? না। হিষ্কিয় একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি, তার জাতিরূপ পালের এক যোগ্য পালরক্ষক ছিলেন। তার প্রথম কাজ ছিল, বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপিত করা এবং যিহোবার সঙ্গে সেই বিপথগামী জাতির নষ্ট সম্পর্ককে জোড়া লাগানো। তিনি যখন তার জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে পেরেছিলেন, তখন হিষ্কিয় দৃঢ়তার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আমাদের জন্য কতই-না চমৎকার এক উদাহরণ!—২ বংশা. ২৯:১-১৯.

৭. কেন লেবীয়দের জন্য নতুন রাজার সমর্থনের বিষয়ে আশ্বাস লাভ করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপন করার গুরুত্বপূর্ণ কাজে লেবীয়রা অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা পালন করবে। তাই, হিষ্কিয় তার সমর্থনের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করার জন্য তাদের সঙ্গে মিলিত হন। সেই সভাতে উপস্থিত বিশ্বস্ত লেবীয়দের কথা কল্পনা করে দেখুন, যাদের দু-চোখ দিয়ে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল, যখন তারা রাজাকে এই ঘোষণা করতে শুনেছিল: “তোমরা যেন সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া তাঁহার পরিচর্য্যা কর . . . এই নিমিত্ত তিনি তোমাদিগকেই মনোনীত করিয়াছেন।” (২ বংশা. ২৯:১১) হ্যাঁ, লেবীয়দের বিশুদ্ধ উপাসনাকে উচ্চীকৃত করার এক স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

৮. যিহূদার লোকেদের আধ্যাত্মিকতাকে শক্তিশালী করার জন্য হিষ্কিয় আর কোন কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?

হিষ্কিয় এক বিরাট নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করার জন্য যিহূদা এবং ইস্রায়েলের সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যে-উদ্‌যাপনের পর সাত দিন ধরে তাড়িশূন্য রুটির উৎসব পালন করা হয়েছিল। লোকেরা সেই উৎসব এতটাই উপভোগ করেছিল যে, সেটাকে আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছিল। বাইবেল জানায়: “যিরূশালেমে বড় আনন্দ হইল; কেননা ইস্রায়েল-রাজ দায়ূদের পুত্ত্র শলোমনের সময়াবধি যিরূশালেমে এই প্রকার হয় নাই।” (২ বংশা. ৩০:২৫, ২৬) সেই আধ্যাত্মিক ভোজ সমস্ত লোকের জন্য কতই-না অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল! ২ বংশাবলি ৩১:১ পদ থেকে আমরা জানতে পারি: “এই সমস্ত সাঙ্গ হইলে পর . . . সমস্ত ইস্রায়েল . . . স্তম্ভ সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিল, আশেরা-মূর্ত্তি সকল ছেদন করিল, এবং . . . উচ্চস্থলী ও যজ্ঞবেদি সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিল।” জোরালোভাবে যিহূদা যিহোবার প্রতি ফিরে আসতে শুরু করেছিল। সামনে যা ঘটতে যাচ্ছিল, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে এই আধ্যাত্মিক পরিষ্করণের কাজ অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

রাজা যিহোবার ওপর নির্ভর করেন

৯. (ক) কীভাবে ইস্রায়েলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল? (খ) সন্‌হেরীব যিহূদায় প্রাথমিক কোন সাফল্য অর্জন করেছিলেন?

যিশাইয়ের কথা অনুযায়ী, অশূরীয়রা উত্তরের ইস্রায়েল রাজ্য জয় করেছিল এবং এর অধিবাসীদের বন্দি করে নিয়ে গিয়েছিল আর এভাবে দায়ূদের সিংহাসন দখল করে অন্য একজনকে বসানোর ব্যাপারে ইস্রায়েলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, অশূরের পরিকল্পনা সম্বন্ধে কী বলা যায়? এরপর, অশূরীয়রা যিহূদার ওপর দৃষ্টি দেয়। “হিষ্কিয় রাজার চতুর্দ্দশ বৎসরে অশূর-রাজ সন্‌হেরীব যিহূদার প্রাচীরবেষ্টিত সমস্ত নগরের বিরুদ্ধে আসিয়া সে সকল হস্তগত করিতে লাগিলেন।” কথিত আছে যে, সন্‌হেরীব যিহূদার মোট ৪৬-টা নগর জয় করেছিলেন। সেই সময় আপনি যদি যিরূশালেমে বাস করতেন, তাহলে আপনার কেমন লাগত, তা কল্পনা করে দেখুন। অশূরীয় সৈন্যরা একটার পর একটা যিহূদা নগর ধ্বংস করতে করতে এগিয়ে আসছে!—২ রাজা. ১৮:১৩.

১০. মীখা ৫:৫, ৬ পদ হয়তো কেন হিষ্কিয়কে উৎসাহ প্রদান করেছিল?

১০ অবশ্যই, হিষ্কিয় আসন্ন বিপদ সম্বন্ধে অবগত ছিলেন কিন্তু তার ধর্মভ্রষ্ট পিতা আহসের মতো মরিয়া হয়ে পৌত্তলিক জাতিগুলোর কাছে সাহায্য চাওয়ার পরিবর্তে, হিষ্কিয় যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন। (২ বংশা. ২৮:২০, ২১) তিনি হয়তো এমনকী তার সমসাময়িক ব্যক্তি মীখা ভাববাদীর এই কথাগুলো সম্বন্ধেও অবগত ছিলেন, যিনি অশূর সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “আমরা তাহার [অশূরের] বিপক্ষে সাত জন পালরক্ষক ও আট জন নরপতিকে উত্থাপন করিব। তাহারা খড়্গ দ্বারা . . . সেই দেশ শাসন করিবে।” (মীখা ৫:৫, ৬) এই অনুপ্রাণিত কথাগুলো নিশ্চিতভাবেই হিষ্কিয়কে উৎসাহ প্রদান করেছিল কারণ এগুলো দেখায় যে, অশূরীয়দের বিরুদ্ধে সবচেয়ে অসাধারণ এক বাহিনীকে উত্থাপন করা হবে এবং সেই বিদ্বেষী আক্রমণকারীদের পরিশেষে পরাজিত করা হবে।

১১. সাত জন পালরক্ষক এবং আট জন নরপতি সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্‌বাণী কখন এর প্রধান পরিপূর্ণতা লাভ করবে?

১১ সাত জন পালরক্ষক এবং আট জন নরপতি (বা “অধ্যক্ষ”) সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্‌বাণী এর প্রধান অথবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপূর্ণতা, “ইস্রায়েলের মধ্যে কর্ত্তা” যিশুর জন্মের অনেক পরে লাভ করার কথা, যাঁর ‘উৎপত্তি প্রাক্কাল হইতে।’ (পড়ুন, মীখা ৫:১, ২.) এটা সেই সময়ে হবে, যখন যিহোবার দাসদের জীবন আধুনিক দিনের ‘অশূরের’ দ্বারা হুমকির মুখে থাকবে। বর্তমানে শাসনরত তাঁর পুত্রের মাধ্যমে যিহোবা সেই ভয়ংকর বাহিনীর মোকাবিলা করার জন্য কোন বাহিনীকে ব্যবহার করবেন? আমরা তা দেখব। কিন্তু, প্রথমে আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, অশূরের হুমকির মুখে হিষ্কিয় যে-পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

হিষ্কিয় ব্যবহারিক পদক্ষেপ নেন

১২. ঈশ্বরের লোকেদের রক্ষা করার জন্য হিষ্কিয় এবং তার সঙ্গের লোকেরা কোন পদক্ষেপগুলো নিয়েছিল?

১২ যিহোবা সবসময়ই আমাদের জন্য সেই বিষয়গুলো করতে ইচ্ছুক, যেগুলো আমরা নিজেরা করতে পারি না কিন্তু তিনি আশা করেন যে, যেগুলো করার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে, সেগুলো যেন আমরা করি। হিষ্কিয় “আপন অধ্যক্ষগণের ও বীর্য্যবান্‌ লোকদের” সঙ্গে পরামর্শ করেন এবং একত্রে “নগরের বহিঃস্থিত উনুই সকলের জল বদ্ধ করিবার” সিদ্ধান্ত নেন “আর [হিষ্কিয়] আপনাকে বলবান করিয়া সমস্ত ভগ্ন প্রাচীর গাঁথিয়া দুর্গসমান উচ্চ করিলেন; আবার তাহার বাহিরে আর এক প্রাচীর গাঁথিলেন . . . এবং প্রচুর অস্ত্র শস্ত্র ও ঢাল প্রস্তুত করিলেন।” (২ বংশা. ৩২:৩-৫) সেই সময় তাঁর লোকেদের সুরক্ষা এবং পালন করার জন্য যিহোবা বেশ কয়েক জন সাহসী পুরুষকে—হিষ্কিয়কে, তার অধ্যক্ষদের এবং আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী ভাববাদীদের—ব্যবহার করেছিলেন।

১৩. আসন্ন আক্রমণের জন্য লোকেদের প্রস্তুত করতে গিয়ে হিষ্কিয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।

১৩ এরপর হিষ্কিয় যা করেছিলেন, তা জল বন্ধ করার অথবা নগরের প্রাচীর শক্তিশালী করার চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান। একজন উত্তম পালরক্ষক হওয়ায়, হিষ্কিয় লোকেদের একত্রিত করেছিলেন এবং এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে উৎসাহিত করেছিলেন: “অশূররাজের সম্মুখে . . . ভীত কি নিরাশ হইও না; কারণ তাঁহার সহায় অপেক্ষা আমাদের সহায় মহান্‌। মাংসময় বাহু তাঁহার সহায়, কিন্তু আমাদের সাহায্য করিতে ও আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করিতে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের সহায়।” বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মতো কী এক অনুস্মারক—যিহোবা তাঁর লোকেদের হয়ে যুদ্ধ করবেন! এই কথাগুলো শোনার পর, যিহুদিরা “যিহূদা-রাজ হিষ্কিয়ের বাক্যে নির্ভর করিল।” লক্ষ করুন যে, ‘হিষ্কিয়ের বাক্যের’ কারণেই লোকেরা উৎসাহিত হয়েছিল। তিনি ও তার অধ্যক্ষরা এবং পরাক্রমী ব্যক্তিরা ও সেইসঙ্গে ভাববাদী মীখা এবং যিশাইয় কার্যকারী পালরক্ষক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল, ঠিক যেমনটা যিহোবা তাঁর ভাববাদীর মাধ্যমে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন।—২ বংশা. ৩২:৭, ৮; পড়ুন, মীখা ৫:৫, ৬.

১৪. রব্‌শাকি কোন ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং লোকেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

১৪ অশূরের রাজা যিরূশালেমের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত লাখীশে শিবির স্থাপন করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি তিন জন দূতের মাধ্যমে সেই নগরকে আত্মসমর্পণ করার আদেশ দিয়েছিলেন। তার মুখপাত্র, যার সরকারি উপাধি রব্‌শাকি, তিনি বিভিন্ন ধরনের কৌশলতা অবলম্বন করেছিলেন। ইব্রীয় ভাষায় তিনি লোকেদেরকে রাজার বিদ্রোহ করার এবং অশূরীয়দের বশীভূত হওয়ার জন্য উসকে দিয়েছিলেন, এই মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি তাদেরকে এমন এক দেশে নিয়ে যাবেন, যেখানে তারা এক আরামদায়ক জীবন উপভোগ করতে পারবে। (পড়ুন, ২ রাজাবলি ১৮:৩১, ৩২.) এরপর, রব্‌শাকি এই দাবি করেন যে, বিভিন্ন জাতির দেবতা যেমন তাদের উপাসকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনই যিহোবাও যিহুদিদেরকে অশূরের হাত থেকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হবেন। লোকেরা সেই অপপ্রচারের উত্তর না দিয়ে বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করেছিল আর এই পন্থাটা আমাদের দিনের যিহোবার দাসেরাও প্রায়ই অনুসরণ করে থাকে।—পড়ুন, ২ রাজাবলি ১৮:৩৫, ৩৬.

১৫. যিরূশালেমের লোকেদের কী করা প্রয়োজন ছিল আর কীভাবে যিহোবা নগরের পরিত্রাণ নিয়ে এসেছিলেন?

১৫ এটা ঠিক যে, হিষ্কিয় নিরাশ হয়েছিলেন কিন্তু সাহায্যের জন্য বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে, তিনি ভাববাদী যিশাইয়কে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। যিশাইয় হিষ্কিয়কে বলেছিলেন: “সে [সন্‌হেরীব] এ নগরে আসিবে না, এখানে বাণ ছাড়িবে না।” (২ রাজা. ১৯:৩২) যিরূশালেমের লোকেদের যা করা প্রয়োজন ছিল, তা হল কেবল স্থির থাকা। যিহোবা যিহূদার হয়ে যুদ্ধ করবেন। আর তিনি তা-ই করেছিলেন! “সেই রাত্রিতে সদাপ্রভুর দূত যাত্রা করিয়া অশূরীয়দের শিবিরে এক লক্ষ পঁচাশী সহস্র লোককে বধ করিলেন।” (২ রাজা. ১৯:৩৫) যিহূদা পরিত্রাণ লাভ করেছিল, তবে হিষ্কিয়ের দ্বারা নগরের জলের উনুই বন্ধ করার অথবা প্রাচীর নির্মাণ করার কারণে নয় বরং ঐশিক হস্তক্ষেপের কারণে।

বর্তমান দিনের জন্য শিক্ষা

১৬. বর্তমানে এরা কাদেরকে চিত্রিত করে (ক) যিরূশালেমের প্রজা (খ) “অশূর” (গ) সাত জন পালরক্ষক এবং আট জন নরপতি?

১৬ সাত জন পালরক্ষক এবং আট জন নরপতি সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদের দিনে বিরাট আকারে পরিপূর্ণ হয়েছে। প্রাচীন যিরূশালেমের প্রজাদেরকে অশূরীয়রা আক্রমণ করেছিল। ভবিষ্যতে, যিহোবার যে-লোকেদের আপাতদৃষ্টিতে অরক্ষিত বলে মনে হয়, তাদেরকে আধুনিক দিনের “অশূর” আক্রমণ করবে, যার উদ্দেশ্য হবে তাদেরকে নির্মূল করে দেওয়া। শাস্ত্র সেই আক্রমণ ও সেইসঙ্গে “মাগোগ দেশীয় গোগের” আক্রমণকে ‘উত্তর দেশের রাজার’ এবং ‘পৃথিবীর রাজগণের’ আক্রমণ বলে উল্লেখ করে। (যিহি. ৩৮:২, ১০-১৩; দানি. ১১:৪০, ৪৪, ৪৫; প্রকা. ১৭:১৪; ১৯:১৯) এগুলো কি আলাদা আলাদা আক্রমণকে চিত্রিত করে? না। বাইবেল একই আক্রমণকে ভিন্ন ভিন্ন নামে উল্লেখ করতে পারে। সেই নির্দয় শত্রুর—‘অশূরের’—বিরুদ্ধে যিহোবা কোন ‘গুপ্ত অস্ত্র’ ব্যবহার করবেন বলে মীখার ভবিষ্যদ্‌বাণীতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে? এক অবিশ্বাস্য অস্ত্র—‘সাত জন পালরক্ষক ও আট জন নরপতি’! (মীখা ৫:৫) আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য এই বাহিনীর পালরক্ষক এবং নরপতিরা (অথবা ‘অধ্যক্ষগণ’) হচ্ছে মণ্ডলীর প্রাচীনরা। (১ পিতর ৫:২) বর্তমানে, নিশ্চিতভাবেই যিহোবা তাঁর মূল্যবান মেষদের পালন করার, তাঁর লোকেদেরকে আধুনিক দিনের ‘অশূরের’ ভাবী আক্রমণের ব্যাপারে প্রস্তুত করার জন্য প্রচুর আধ্যাত্মিক পুরুষদের জুগিয়েছেন। * মীখার ভবিষ্যদ্‌বাণী বলে যে, তারা “খড়্গ দ্বারা অশূরের দেশ . . . শাসন” করবে। (মীখা ৫:৬) হ্যাঁ, ‘তাহাদের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্রের’ মধ্যে আপনি ‘আত্মার খড়্গ’ অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য দেখতে পাবেন।—২ করি. ১০:৪; ইফি. ৬:১৭.

১৭. আমরা যে-বিবরণ বিবেচনা করেছি, সেটা থেকে প্রাচীনরা কোন চারটে উপসংহারে পৌঁছাতে পারে?

১৭ যে-প্রাচীনরা এই প্রবন্ধ পড়ছে, তারা সবেমাত্র আমরা যে-বিবরণ বিবেচনা করেছি, সেখান থেকে কিছু কার্যকরী উপসংহারে পৌঁছাতে পারে: (১) ‘অশূরের’ আসন্ন আক্রমণের ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সবচেয়ে ব্যবহারিক যে-পদক্ষেপ আমরা নিতে পারি, তা হল ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করা এবং আমাদের ভাই-বোনদেরও একই বিষয় করার জন্য সাহায্য করা। (২) “অশূর” যখন আক্রমণ করে, তখন প্রাচীনদের এই বিষয়ে পুরোপুরিভাবে দৃঢ়প্রত্যয়ী থাকতে হবে যে, যিহোবা আমাদেরকে উদ্ধার করবেন। (৩) সেই সময়, যিহোবার সংগঠন থেকে আমরা যে-জীবনরক্ষাকারী নির্দেশনা লাভ করি, সেটাকে হয়তো মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবহারিক বলে মনে না-ও হতে পারে। আমরা হয়তো যে-সমস্ত নির্দেশনা লাভ করি, সেগুলোর প্রতি আমাদের সকলকে বাধ্য হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, তা সেগুলো সামরিক অথবা মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে উপযুক্ত বলে মনে হোক বা না হোক। (৪) এখন এমন যে-কারো জন্য তাদের চিন্তাভাবনাকে রদবদল করার সময়, যারা হয়তো জাগতিক শিক্ষা, বস্তুগত বিষয় অথবা মানব প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভর করছে। প্রাচীনদের এমন যে-কাউকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যিনি হয়তো এখন বিশ্বাসে স্থির নন।

১৮. এই বিবরণ সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করা কীভাবে আমাদেরকে ভবিষ্যতে সাহায্য করতে পারে?

১৮ এমন সময় আসবে, যখন ঈশ্বরের আধুনিক দিনের দাসদেরকে, হিষ্কিয়ের দিনে যিরূশালেমে ফাঁদে পড়ে যাওয়া যিহুদিদের মতো অরক্ষিত বলে মনে হবে। সেই সময় আমরা সকলে যেন হিষ্কিয়ের বাক্য থেকে শক্তি লাভ করি। আসুন আমরা মনে রাখি যে, আমাদের শত্রুদের সহায় হচ্ছে, “মাংসময় বাহু . . . কিন্তু আমাদের সাহায্য করিতে ও আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করিতে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের সহায়”!—২ বংশা. ৩২:৮.

^ যিশাইয় ৭:১৪ পদে যে-ইব্রীয় শব্দকে “কন্যা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি হয় একজন বিবাহিত নারীকে নতুবা একজন কুমারী নারীকে বোঝাতে পারে। তাই, এই একই শব্দ যিশাইয়ের স্ত্রী এবং যিহুদি কুমারী মরিয়ম, উভয়ের প্রতিই প্রয়োগ করা যেতে পারে।

^ সাত সংখ্যাটা প্রায়ই শাস্ত্রে পূর্ণতাকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আট সংখ্যাটা (সাত সংখ্যার অধিক) মাঝে মাঝে প্রচুর পরিমাণকে চিত্রিত করে।