সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

গৌরবান্বিত রাজা খ্রিস্টের প্রশংসা করুন!

গৌরবান্বিত রাজা খ্রিস্টের প্রশংসা করুন!

“[তুমি] স্বীয় প্রতাপে কৃতকার্য্য হও।”—গীত. ৪৫:৪.

১, ২. কেন গীতসংহিতার ৪৫ গীত আমাদের জন্য আগ্রহের বিষয়?

একজন গৌরবান্বিত রাজা সত্যের ও ধার্মিকতার পক্ষে বাহনে চড়েন এবং তাঁর শত্রুদের পরাজিত করার জন্য এগিয়ে যান। তাদের ওপর চূড়ান্ত বিজয় লাভ করার পর, তিনি এক অপূর্ব কনেকে বিবাহ করেন। আগামী প্রজন্মের সকলে সেই রাজাকে স্মরণ করে এবং প্রশংসা করে। এটাই হচ্ছে গীতসংহিতা ৪৫ গীতের মূলভাব।

কিন্তু, গীতসংহিতার ৪৫ গীত কেবল এক রোমাঞ্চকর গল্পই নয়। আমাদের জন্য সেখানে উল্লেখিত ঘটনাগুলোর অর্থ রয়েছে। এগুলো আমাদের বর্তমান ও সেইসঙ্গে ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই, আসুন আমরা গভীর মনোযোগ দিয়ে এই গীত সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখি।

“আমার হৃদয়ে শুভকথা উথলিয়া উঠিতেছে”

৩, ৪. (ক) “শুভকথা” কী এবং কীভাবে এটা আমাদের হৃদয়কে প্রভাবিত করে? (খ) কোন উপায়ে আমরা ‘রাজার বিষয়ে আপন রচনা বিবৃত করি’ এবং কীভাবে আমাদের জিহ্বা লেখনী স্বরূপ হয়ে ওঠে?

গীতসংহিতা ৪৫:১ পদ পড়ুন। কোনো এক “শুভকথা” গীতরচকের হৃদয়কে স্পর্শ করে এবং এর ফলে তিনি একজন রাজার বিষয়ে ‘উথলিয়া উঠেন।’ যে-ইব্রীয় শব্দকে ‘উথলিয়া উঠা’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির মূল অর্থ “বুদ্‌বুদ ওঠা” অথবা “টগবগ করে ফোটা।” এই বিষয়ের কারণে  গীতরচকের হৃদয় উদ্যমে ফুটে ওঠে এবং তার জিহ্বা “দ্রুত লেখকের লেখনীস্বরূপ” হয়ে ওঠে।

আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? মশীহ রাজ্যের সুসমাচার আমাদের জন্য এমন শুভকথা, যা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে। ১৯১৪ সালে রাজ্যের বার্তা বিশেষভাবে ‘শুভ’ হয়ে উঠেছিল। সেই সময় থেকে, এই বার্তা আর ভাবী রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় বরং এক প্রকৃত সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যা এখন স্বর্গে কার্যরত। এটা হল ‘রাজ্যের সুসমাচার,’ যা আমরা “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত . . . সমুদয় জগতে” প্রচার করি। (মথি ২৪:১৪) আমাদের হৃদয় কি রাজ্যের বার্তার কারণে ‘উথলিয়া উঠে’? আমরা কি উদ্যোগের সঙ্গে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করি? গীতরচকের মতো আমরাও “রাজার বিষয়ে,” আমাদের রাজা যিশু খ্রিস্টের বিষয়ে ‘আপন রচনা বিবৃত করি।’ আমরা তাঁকে মশীহ রাজ্যের স্বর্গীয় রাজা হিসেবে ঘোষণা করি, যিনি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এ ছাড়া, আমরা সকলকে তাঁর শাসনের বশীভূত হতে আমন্ত্রণ জানাই, যাদের মধ্যে শাসক এবং প্রজা সকলেই রয়েছে। (গীত. ২:১, ২, ৪-১২) আমাদের জিহ্বা এই অর্থে “দ্রুত লেখকের লেখনীস্বরূপ” হয়ে ওঠে যে, আমরা আমাদের প্রচার কাজে লিখিত বাক্য বাইবেল ব্যাপকভাবে ব্যবহার করি।

আমরা আনন্দের সঙ্গে আমাদের রাজা যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে সুসমাচার ঘোষণা করি

‘রাজার ওষ্ঠাধরে অনুগ্রহ সেচিত হয়’

৫. (ক) কোন কোন উপায়ে যিশু “পরম সুন্দর” ছিলেন? (খ) কীভাবে ‘রাজার ওষ্ঠাধরে অনুগ্রহ সেচিত হইয়াছিল’ এবং কীভাবে আমরা তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করার প্রচেষ্টা করতে পারি?

গীতসংহিতা ৪৫:২ পদ পড়ুন। শাস্ত্র আমাদেরকে যিশুর শারীরিক বর্ণনা সম্বন্ধে বেশি কিছু জানায় না। একজন সিদ্ধ মানুষ হিসেবে নিঃসন্দেহে তিনি “পরম সুন্দর” ছিলেন। কিন্তু, যিহোবার প্রতি তাঁর বিশ্বস্ততা এবং দৃঢ় নীতিনিষ্ঠাই তাঁকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরম সুন্দর করে তুলেছিল। এ ছাড়া, যিশু ‘অনুগ্রহের’ বাক্য ব্যবহার করেছিলেন অর্থাৎ সদয়ভাবে রাজ্যের বার্তা প্রচার করেছিলেন। (লূক ৪:২২; যোহন ৭:৪৬) আমরা কি আমাদের প্রচার কাজে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করার প্রচেষ্টা করি এবং এমন বাক্য ব্যবহার করার চেষ্টা করি, যা লোকেদের হৃদয় স্পর্শ করবে?—কল. ৪:৬.

৬. কীভাবে ঈশ্বর “চিরকালের জন্য” যিশুকে আশীর্বাদ করেছিলেন?

যেহেতু যিশু পুরোপুরিভাবে বিশ্বস্ত ছিলেন, তাই যিহোবা তাঁকে পৃথিবীতে তাঁর পরিচর্যার সময় আশীর্বাদ করেছিলেন এবং তাঁর বলিদানমূলক মৃত্যুর পর তাঁকে পুরস্কৃত করেছিলেন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “[যীশু] আকার প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন। এই কারণ ঈশ্বর তাঁহাকে অতিশয় উচ্চপদান্বিতও করিলেন, এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; যেন যীশুর নামে স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালনিবাসীদের ‘সমুদয় জানু পাতিত হয়, এবং সমুদয় জিহ্বা যেন স্বীকার করে’ যে, যীশু খ্রীষ্টই প্রভু, এইরূপে পিতা ঈশ্বর যেন মহিমান্বিত হন।” (ফিলি. ২:৮-১১) তাঁকে পুনরুত্থিত করার পর অমর জীবন দান করে যিহোবা “চিরকালের” জন্য যীশুকে আশীর্ব্বাদ করেছেন।—রোমীয় ৬:৯.

রাজাকে তাঁর “সখাগণ” অপেক্ষা অধিক মহান করা হয়

৭. কোন কোন উপায়ে যিহোবা যিশুকে তাঁর “সখাগণ” অপেক্ষা অধিক মহান হিসেবে অভিষিক্ত করেছিলেন?

গীতসংহিতা ৪৫:৬, * ৭ পদ পড়ুন। যেহেতু যিশু ধার্মিকতাকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন এবং তাঁর পিতাকে অসম্মান করে এমন যেকোনো বিষয়কে ঘৃণা করতেন, তাই যিহোবা তাঁকে মশীহ রাজ্যের রাজা  হিসেবে অভিষিক্ত করেন। যিশুকে “আনন্দতৈলে” অভিষিক্ত করা হয় আর এটা তাঁকে তাঁর “সখাগণ” অর্থাৎ দায়ূদের বংশধরের মধ্যে যিহূদার রাজাদের চেয়েও বেশি মহান করে তোলে। কীভাবে? একটা বিষয় হল, যিশু স্বয়ং যিহোবার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিলেন। এ ছাড়া, যিহোবা তাঁকে একইসঙ্গে রাজা এবং মহাযাজক হিসেবে অভিষিক্ত করেছিলেন। (গীত. ২:২; ইব্রীয় ৫:৫, ৬) আরেকটা বিষয় হল, যিশুকে পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত করা হয়েছিল আর তিনি পৃথিবীতে নয় বরং স্বর্গে শাসন করবেন।

৮. কীভাবে এটা বলা যেতে পারে যে, যিহোবা হলেন যিশুর শাসনের ভিত্তি এবং কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তিনি ধার্মিকতা সহকারে শাসন করবেন?

যিহোবা তাঁর পুত্রকে ১৯১৪ সালে স্বর্গে তাঁর মশীহ রাজা হিসেবে স্থাপন করেন। ‘তাঁহার রাজদণ্ড সরলতার দণ্ড,’ তাই তিনি যে ধার্মিকতা এবং ন্যায্যতা সহকারে শাসন করবেন, সেই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চয়তা রয়েছে। তাঁর কর্তৃত্ব বৈধ, কারণ তিনি ঈশ্বরের দ্বারা অভিষিক্ত। অর্থাৎ যিহোবা হলেন তাঁর শাসনের ভিত্তি। এ ছাড়া, যিশুর সিংহাসন “অনন্তকালস্থায়ী।” এইরকম এক পরাক্রমী, ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত রাজার অধীনে যিহোবার সেবা করে কি আপনি গর্বিত নন?

রাজা ‘তাঁহার খড়্‌গ কটিদেশে বন্ধন করেন’

৯, ১০. (ক) কখন যিশু তাঁর খড়্‌গ কটিদেশে বন্ধন করেন এবং এর পর পরই কীভাবে তিনি তা ব্যবহার করেন? (খ) খ্রিস্ট আর কীভাবে তাঁর খড়্‌গ ব্যবহার করবেন?

গীতসংহিতা ৪৫:৩ পদ পড়ুন। যিহোবা তাঁর রাজাকে ‘তাঁহার খড়্‌গ কটিদেশে বন্ধন করিবার’ নির্দেশ দেন আর এভাবে যিশুকে ঈশ্বরের শাসন ক্ষমতার বিরোধিতা করে এমন সমস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার এবং তাদের ওপর বিচার নিয়ে আসার কর্তৃত্ব দেন। (গীত. ১১০:২) যেহেতু খ্রিস্ট হলেন একজন অজেয় যোদ্ধা ও রাজা, তাই তাঁকে “হে বীর” বলে অভিহিত করা হয়। তিনি ১৯১৪ সালে তাঁর খড়্‌গ কটিদেশে বন্ধন করেন এবং শয়তান ও তার মন্দদূতদের পরাজিত করে তাদেরকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীর সীমার মধ্যে নিক্ষেপ করেন।—প্রকা. ১২:৭-৯.

১০ সেটা ছিল রাজার বিজয় যাত্রার কেবল শুরু। তাঁকে এখনও ‘জয় করিতে’ বা জয় সম্পন্ন করতে হবে। (প্রকা. ৬:২) পৃথিবীতে শয়তানের সমস্ত বিষয়ের ওপর এখন যিহোবার বিচার আসা বাকি আছে আর শয়তান ও তার মন্দদূতদেরকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হবে। প্রথমে মহতী বাবিল অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যকে ধবংস করা হবে। যিহোবার উদ্দেশ্য হল, এই দুষ্ট “বেশ্যাকে” ধবংস করে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক শাসকদের ব্যবহার করা। (প্রকা. ১৭:১৬, ১৭) পরে যোদ্ধা ও রাজা হিসেবে যিশু শয়তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন, সেগুলোকে শেষ করে দেবেন। এরপর খ্রিস্ট, যাঁকে ‘অগাধলোকের দূতও’ বলা হয়, তিনি শয়তান ও তার মন্দদূতদের অগাধলোকে নিক্ষেপ করার মাধ্যমে তাঁর জয় সম্পন্ন করবেন। (প্রকা. ৯:১, ১১; ২০:১-৩) আসুন আমরা দেখি যে, কীভাবে গীতসংহিতার ৪৫ গীত এই রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলো সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছে।

রাজা ‘সত্যের পক্ষে’ বাহনে চড়েন

১১. কীভাবে খ্রিস্ট “সত্যের পক্ষে” বাহনে চড়েন?

১১ গীতসংহিতা ৪৫:৪ পদ পড়ুন। রাজা ও যোদ্ধা হিসেবে খ্রিস্ট এলাকা দখল এবং লোকেদের জয় করার জন্য যুদ্ধ করবেন না। তিনি এক মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ধার্মিকতা সহকারে যুদ্ধ করবেন। তিনি “সত্যের ও ধার্ম্মিকতাযুক্ত নম্রতার পক্ষে” বাহনে চড়েন। সবচেয়ে বড়ো যে-সত্যের পক্ষসমর্থন করতে হবে, তা হল যিহোবা হচ্ছেন নিখিলবিশ্বের শাসক। শয়তান যিহোবার শাসনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, যখন সে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। তখন থেকে সেই মৌলিক সত্য নিয়ে মন্দদূত এবং মানুষেরা তর্ক করছে। এখনই হচ্ছে সেই সময়, যখন যিহোবার অভিষিক্ত রাজা বাহনে চড়ে যিহোবার কর্তৃত্ব করার অধিকারের বিষয়টা চিরতরে প্রতিষ্ঠিত করবেন।

১২. কীভাবে রাজা “নম্রতার পক্ষে” বাহনে চড়েন?

১২ এ ছাড়া, রাজা “নম্রতার পক্ষে” বাহনে চড়েন। ঈশ্বরের একজাত পুত্র হিসেবে, তিনি নম্রতার ক্ষেত্রে এবং পিতার কর্তৃত্বের প্রতি অনুগতভাবে বশীভূত থাকার বিষয়ে এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন  করেছেন। (যিশা. ৫০:৪, ৫; যোহন ৫:১৯) রাজার সমস্ত অনুগত প্রজাকে অবশ্যই তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করতে এবং সমস্ত বিষয়ে নম্রভাবে যিহোবার কর্তৃত্বের বশীভূত হতে হবে। যারা তা করবে, একমাত্র তারাই ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে।—সখ. ১৪:১৬, ১৭.

১৩. কীভাবে খ্রিস্ট ‘ধার্ম্মিকতার পক্ষে’ বের হন?

১৩ এ ছাড়া, খ্রিস্ট ‘ধার্ম্মিকতার পক্ষে’ বের হন। রাজা যে-সত্যের পক্ষসমর্থন করেন, তা হল সেই ধার্মিকতা, যেটাকে ঈশ্বর “ধার্ম্মিকতা” বলে মনে করেন আর তা হল, কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল সেই বিষয়ে যিহোবার মান। (রোমীয় ৩:২১; দ্বিতীয়. ৩২:৪) রাজা যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে যিশাইয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “এক রাজা ধার্ম্মিকতায় রাজত্ব করিবেন।” (যিশা. ৩২:১) যিশুর শাসন প্রতিজ্ঞাত ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ এবং ‘নূতন পৃথিবী’ নিয়ে আসবে, যেখানে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” (২ পিতর ৩:১৩) সেই নতুন জগতের প্রত্যেক বাসিন্দাকে যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।—যিশা. ১১:১-৫.

রাজা “ভয়াবহ কার্য্য” সম্পন্ন করেন

১৪. কীভাবে খ্রিস্টের দক্ষিণ হস্ত “ভয়াবহ কার্য্য” সম্পন্ন করবে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৪ রাজা যখন বাহনে চড়েন, তখন তিনি তাঁর কটিদেশে একটা খড়্‌গ বন্ধন করেন। (গীত. ৪৫:৩) কিন্তু, এখন দক্ষিণ হস্ত দ্বারা সেই খড়্‌গ ব্যবহার করার সময় আসে। গীতরচক ভবিষ্যদ্‌বাণী করেন: “তোমার দক্ষিণ হস্ত তোমাকে ভয়াবহ কার্য্য শিখাইবে।” (গীত. ৪৫:৪) আরমাগিদোনের সময় যিশু খ্রিস্ট যখন যিহোবার বিচার নিয়ে আসার জন্য বাহনে চড়বেন, তখন তিনি তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে “ভয়াবহ কার্য্য” সম্পন্ন করবেন। শয়তানের বিধিব্যবস্থাকে ধবংস করে দেওয়ার জন্য যিশু কোন মাধ্যম ব্যবহার করবেন, তা আমরা জানি না। কিন্তু, এই পদক্ষেপ পৃথিবীর সেই লোকেদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করবে, যারা রাজার শাসনের প্রতি বশীভূত হওয়ার বিষয়ে ঈশ্বরের সাবধানবাণীর প্রতি কান দেয়নি। (পড়ুন, গীতসংহিতা ২:১১, ১২.) শেষকাল সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্‌বাণীতে যিশু বলেছিলেন যে, “ভয়ে, এবং ভূমণ্ডলে যাহা যাহা ঘটিবে তাহার আশঙ্কায়” লোকেদের “প্রাণ উড়িয়া যাইবে; কেননা আকাশ-মণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে।” তিনি আরও বলেছিলেন: “আর তৎকালে তাহারা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রম ও মহাপ্রতাপ সহকারে মেঘযোগে আসিতে দেখিবে।”—লূক ২১:২৬, ২৭.

১৫, ১৬. কাদের নিয়ে সেই ‘সৈন্য’ গঠিত, যারা খ্রিস্টের পিছনে পিছনে আসে?

১৫ বিচার নিয়ে আসার জন্য “পরাক্রম ও মহাপ্রতাপ সহকারে” রাজার আসার বিষয়ে ঘোষণা করে প্রকাশিত বাক্য বই বলে: “আমি দেখিলাম, স্বর্গ খুলিয়া গেল, আর দেখ, শ্বেতবর্ণ একটী অশ্ব; যিনি তাহার উপরে বসিয়া আছেন, তিনি বিশ্বাস্য ও সত্যময় নামে আখ্যাত, এবং তিনি ধর্ম্মশীলতায় বিচার ও যুদ্ধ করেন। আর স্বর্গস্থ সৈন্যগণ তাঁহার অনুগমন করে, তাহারা শুক্লবর্ণ অশ্বে আরোহী, এবং শ্বেত শুচি মসীনা-বস্ত্র পরিহিত। আর তাঁহার মুখ হইতে এক তীক্ষ্ণ তরবারি নির্গত হয়, যেন তদ্দ্বারা তিনি জাতিগণকে আঘাত করেন; আর তিনি লৌহদণ্ড দ্বারা তাহাদিগকে শাসন করিবেন; এবং তিনি সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের প্রচণ্ড ক্রোধরূপ মদিরাকুণ্ড দলন করেন।”—প্রকা. ১৯:১১, ১৪, ১৫.

১৬ স্বর্গীয় ‘সৈন্য’ নিয়ে গঠিত খ্রিস্টের সহ-যোদ্ধারা কারা, যারা তাঁর পিছনে পিছনে যুদ্ধ করতে আসে? শয়তান ও তার মন্দদূতদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করার জন্য তিনি যখন প্রথম তাঁর খড়্‌গ বন্ধন করেন, তখন যিশুর সঙ্গে ‘তাঁহার দূতগণও’ ছিল। (প্রকা. ১২:৭-৯) তাই, এই উপসংহারে আসা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় যে, আরমাগিদোনের যুদ্ধের সময় খ্রিস্টের সৈন্যদের মধ্যে পবিত্র দূতেরাও থাকবে। তাঁর সৈন্যদের মধ্যে কি অন্যেরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে? যিশু তাঁর অভিষিক্ত ভাইদের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “যে জয় করে, ও শেষ পর্য্যন্ত আমার আদিষ্ট কার্য্য সকল পালন করে, তাহাকে আমি আপনি পিতা হইতে যেরূপ পাইয়াছি, তদ্রূপ ‘জাতিগণের উপরে কর্ত্তৃত্ব দিব; তাহাতে সে লৌহদণ্ড দ্বারা তাহাদিগকে এমনি শাসন করিবে যে, কুম্ভকারের মৃৎপাত্রের ন্যায় চুরমার হইয়া যাইবে’।” (প্রকা. ২:২৬, ২৭) তাই, খ্রিস্টের স্বর্গীয় সৈন্যদের মধ্যে তাঁর সেই অভিষিক্ত  ভাইয়েরাও থাকবে, যারা সেই সময়ের মধ্যে তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করবে। জাতিগণকে লৌহদণ্ড দিয়ে শাসন করার সময় তিনি যখন “ভয়াবহ কার্য্য” সম্পন্ন করবেন, তখন অভিষিক্ত সহ-শাসকরা তাঁর সঙ্গে থাকবে।

রাজা তাঁর জয় সম্পন্ন করেন

১৭. (ক) খ্রিস্ট যে শুক্লবর্ণ অশ্বের ওপর আরোহণ করেন, সেটা কোন বিষয়কে চিত্রিত করে? (খ) খড়্‌গ এবং ধনুক দ্বারা কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করা হয়েছে?

১৭ গীতসংহিতা ৪৫:৫ পদ পড়ুন। রাজা একটা শুক্লবর্ণ অশ্বের ওপর আরোহণ করেন আর এটা এমন যুদ্ধকে চিত্রিত করে, যা যিহোবার চোখে শুচি ও ধার্মিক। (প্রকা. ৬:২; ১৯:১১) খড়্‌গ ছাড়াও তিনি একটা ধনুক গ্রহণ করেন। আমরা পড়ি: “আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, এক শুক্লবর্ণ অশ্ব, এবং তাহার উপরে যিনি বসিয়া আছেন, তিনি ধনুর্ধারী, ও তাঁহাকে এক মুকুট দত্ত হইল; এবং তিনি জয় করিতে করিতে ও জয় করিবার” বা জয় সম্পন্ন করার “জন্য বাহির হইলেন।” খড়্‌গ এবং ধনুক, উভয়ই সেই মাধ্যমগুলোকে চিত্রিত করে, যেগুলো খ্রিস্ট তাঁর শত্রুদের ওপর বিচার নিয়ে আসার সময় ব্যবহার করবেন।

পৃথিবী পরিষ্কার করার জন্য পাখিদের ডাকা হবে (১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮. কীভাবে খ্রিস্টের “বাণ সকল তীক্ষ্ণ” বলে প্রমাণিত হবে?

১৮ কাব্যিক ভাষায় গীতরচক ভবিষ্যদ্‌বাণী করেন যে, রাজার ‘বাণ সকল তীক্ষ্ণ, তাঁহার শত্রুগণের হৃদয় বিদ্ধ হয়’ এবং ‘জাতিরা তাঁহার নীচে পতিত হয়।’ পৃথিবীব্যাপী ব্যাপক হত্যাকাণ্ড হবে। যিরমিয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী বলে: “সদাপ্রভুর নিহত লোক সকল পৃথিবীর এক প্রান্ত হইতে পৃথিবীর অন্য প্রান্ত পর্য্যন্ত দেখা যাইবে।” (যির. ২৫:৩৩) একইরকম এক ভবিষ্যদ্‌বাণী বলে: “পরে আমি দেখিলাম, এক জন দূত সূর্য্যমধ্যে দাঁড়াইয়া আছেন; আর তিনি উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া, আকাশের মধ্যপথে যে সকল পক্ষী উড়িয়া যাইতেছে, সে সকলকে কহিলেন, আইস, ঈশ্বরের মহাভোজে একত্র হও, যেন রাজগণের মাংস, সহস্রপতিবর্গের মাংস, শক্তিমান্‌ লোকদের মাংস, অশ্বগণের ও তদারোহীদের মাংস, এবং স্বাধীন ও দাস, ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সকল মনুষ্যের মাংস ভক্ষণ কর।”—প্রকা. ১৯:১৭, ১৮.

১৯. কীভাবে খ্রিস্ট “কৃতকার্য্য” হবেন এবং তাঁর জয় সম্পন্ন করবেন?

১৯ পৃথিবীতে শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থা ধবংস করে দেওয়ার পর, খ্রিস্ট “স্বীয় প্রতাপে কৃতকার্য্য” হবেন। (গীত. ৪৫:৪) শয়তান ও তার মন্দদূতদেরকে অগাধলোকে নিক্ষেপ করার মাধ্যমে তিনি তাঁর জয় সম্পন্ন করবেন। আর হাজার বছরের রাজত্বের পুরো সময় তিনি তাদেরকে সেখানে আটকে রাখবেন। (প্রকা. ২০:২, ৩) দিয়াবল এবং তার দূতদেরকে একেবারে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ায় পৃথিবীর অধিবাসীরা শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে এবং তারা পুরোপুরিভাবে তাদের বিজয়ী ও গৌরবান্বিত রাজার বশীভূত হয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে। কিন্তু, পৃথিবীকে ধীরে ধীরে পরমদেশে রূপান্তরিত হতে দেখার আগে, রাজা এবং তাঁর স্বর্গীয় সহযোগীদের সঙ্গে আনন্দ করার আরেকটা কারণ তাদের থাকবে। সেই আনন্দময় ঘটনা পরের প্রবন্ধে পরীক্ষা করে দেখা হবে।

^ অনু. 7 গীতসংহিতা ৪৫:৬ (NW): “ঈশ্বরই তোমার চিরকালীন, এমনকী অনন্তকালস্থায়ী সিংহাসন; তোমার রাজদণ্ড ন্যায়নিষ্ঠ দণ্ড।”