সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা​—⁠আমাদের জোগানদাতা ও সুরক্ষাকারী

যিহোবা​—⁠আমাদের জোগানদাতা ও সুরক্ষাকারী

“সে আমাতে আসক্ত, তজ্জন্য আমি তাহাকে বাঁচাইব; আমি তাহাকে উচ্চে স্থাপন করিব, কারণ সে আমার নাম জ্ঞাত হইয়াছে।”—গীত. ৯১:১৪.

১, ২. পারিবারিক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ও সেইসঙ্গে আমরা যেভাবে সত্য শিখেছি, সেই ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে কোন ভিন্নতা রয়েছে?

যিহোবাই হলেন পরিবারের উদ্যোক্তা। (ইফি. ৩:১৪, ১৫) কিন্তু, এমনকী একই পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও, আমাদের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং পরিস্থিতি রয়েছে। আপনি হয়তো ছোটোবেলা থেকে শুরু করে বড়ো হওয়া পর্যন্ত বাবা-মায়ের সঙ্গে থেকেছেন। অন্যেরা হয়তো অসুস্থতা, কোনো দুর্ঘটনা অথবা অন্য কোনো দুঃখজনক ঘটনার কারণে মৃত্যুতে তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে। আবার এমন ব্যক্তিরাও রয়েছে, যারা জানেও না যে, তাদের বাবা-মা কে।

যিহোবার উপাসকদের পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরাও ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে সত্য শিখেছি। আপনি হয়তো সত্যে বড়ো হয়েছেন আর আপনার বাবা-মা আপনার মধ্যে বাইবেলের নীতিগুলো গেঁথে দিয়েছে। (দ্বিতীয়. ৬:৬, ৭) কিংবা আপনি হয়তো সেই হাজার হাজার ব্যক্তিদের মধ্যে এক জন, যারা যিহোবার অন্যান্য দাসদের প্রচারের কারণে সত্য শিখতে পেরেছে।—রোমীয় ১০:১৩-১৫; ১ তীম. ২:৩, ৪.

৩. আমাদের সকলের কোন বিষয়ে মিল রয়েছে?

যদিও আমাদের মধ্যে সবেমাত্র উল্লেখিত ভিন্নতাগুলো রয়েছে কিন্তু কিছু বিষয়ে আমাদের সকলের মিল রয়েছে। আমরা আদমের অবাধ্যতার পরিণতি ভোগ করি এবং উত্তরাধিকারসূত্রে পাপ ও মৃত্যু পেয়েছি। (রোমীয় ৫:১২) তা সত্ত্বেও, সত্য উপাসক হিসেবে আমরা উপযুক্তভাবেই যিহোবাকে “আমাদের পিতা” বলে উল্লেখ করতে পারি। প্রাচীন কালে ঈশ্বরের মনোনীত লোকেদের বিষয়ে উল্লেখ করে  যিশাইয় ৬৪:৮ পদ বলে: “হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের পিতা।” এ ছাড়া, যিশু এই কথাগুলো দিয়ে তাঁর আদর্শ প্রার্থনা শুরু করেছিলেন: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।”—মথি ৬:৯.

৪, ৫. আমাদের পিতা যিহোবার প্রতি আমাদের উপলব্ধির গভীরতা নিয়ে পরীক্ষা করার সময় কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা উপকারজনক হবে?

যেহেতু আমরা বিশ্বাস সহকারে তাঁর নামে ডাকি, তাই আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের প্রয়োজনীয় যত্ন এবং সুরক্ষা জোগান। গীতরচকের কথা অনুসারে, যিহোবা বলেছিলেন: “সে [একজন সত্য উপাসক] আমাতে আসক্ত, তজ্জন্য আমি তাহাকে বাঁচাইব; আমি তাহাকে উচ্চে স্থাপন করিব, কারণ সে আমার নাম জ্ঞাত হইয়াছে।” (গীত. ৯১:১৪) হ্যাঁ, যিহোবা ঈশ্বর প্রেমের সঙ্গে আমাদের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং তাঁর লোক হিসেবে সুরক্ষা জোগান, যাতে আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে না যাই।

আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে বাড়ানোর জন্য আসুন আমরা তিনটে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করি: (১) আমাদের পিতা হলেন জোগানদাতা। (২) যিহোবা হলেন আমাদের সুরক্ষাকারী। (৩) আর ঈশ্বর হলেন আমাদের সর্বোত্তম বন্ধু। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করার সময়, ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ধ্যান করা এবং কীভাবে আমরা তাঁকে আমাদের পিতা হিসেবে সম্মান করতে পারি, তা উপলব্ধি করা উপকারজনক হবে। এ ছাড়া, যারা যিহোবার নিকটবর্তী হয়, তাদের জন্য তিনি যে-আশীর্বাদগুলো রেখেছেন, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করাও উপকারজনক।—যাকোব ৪:৮.

যিহোবা হলেন সর্বমহান জোগানদাতা

৬. একটা কোন উপায়ে যিহোবা ‘সমস্ত উত্তম দানের’ দাতা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন?

শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন, “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে, জ্যোতির্গণের সেই পিতা হইতে নামিয়া আইসে।” (যাকোব ১:১৭) জীবন হল যিহোবার কাছ থেকে এক অপূর্ব দান। (গীত. ৩৬:৯) ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য আমাদের জীবনকে ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা এখনই প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করি ও সেইসঙ্গে নতুন জগতেও অনন্ত জীবন লাভ করার প্রত্যাশা আমাদের রয়েছে। (হিতো. ১০:২২; ২ পিতর ৩:১৩) কিন্তু, যেহেতু আমরা আদমের অবাধ্যতার কারণে দুঃখজনক পরিণতিগুলো ভোগ করছি, তাই কীভাবে তা সম্ভব হতে পারে?

৭. কীভাবে যিহোবা আমাদের জন্য তাঁর সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছেন?

সত্যিই, যিহোবা অসংখ্য উপায়ে আমাদের সর্বমহান জোগানদাতা। উদাহরণ স্বরূপ, তাঁর অযাচিত দয়ার কারণে আমরা রক্ষা পাই। হ্যাঁ, আমরা সকলে পাপী এবং আমাদের প্রথম পার্থিব পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে অসিদ্ধতা পেয়েছি। (রোমীয় ৩:২৩) তবে, প্রেম দেখিয়ে যিহোবা আমাদের জন্য তাঁর সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন, “আমাদিগেতে ঈশ্বরের প্রেম ইহাতেই প্রকাশিত হইয়াছে যে, ঈশ্বর আপনার একজাত পুত্ত্রকে জগতে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমরা তাঁহা দ্বারা জীবন লাভ করিতে পারি। ইহাতেই প্রেম আছে; আমরা যে ঈশ্বরকে প্রেম করিয়াছিলাম, তাহা নয়; কিন্তু তিনিই আমাদিগকে প্রেম করিলেন, এবং আপন পুত্ত্রকে আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত হইবার জন্য প্রেরণ করিলেন।”—১ যোহন ৪:৯, ১০.

৮, ৯. কীভাবে যিহোবা অব্রাহাম ও ইস্‌হাকের সময় সর্বমহান জোগানদাতা হয়ে উঠেছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

যিশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ১,৯০০ বছর আগে, অব্রাহামের জীবনের একটা ঘটনা দেখায় যে, কীভাবে যিহোবা প্রেমের সঙ্গে সমস্ত বাধ্য মানুষকে অনন্তজীবন দান করবেন। ইব্রীয় ১১:১৭-১৯ পদ ব্যাখ্যা করে: “বিশ্বাসে অব্রাহাম পরীক্ষিত হইয়া ইস্‌হাককে উৎসর্গ করিয়াছিলেন; এমন কি, যিনি প্রতিজ্ঞা সকল সানন্দে গ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনি আপনার সেই একজাত পুত্ত্রকে উৎসর্গ করিতেছিলেন, যাঁহার বিষয়ে তাঁহাকে বলা হইয়াছিল, ‘ইস্‌হাকে তোমার বংশ আখ্যাত হইবে’; তিনি মনে স্থির করিয়াছিলেন, ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতেও উত্থাপন করিতে সমর্থ; আবার তিনি তথা হইতে দৃষ্টান্তরূপে তাঁহাকে ফিরিয়া পাইলেন।” এখানে যে-সাদৃশ্যটা রয়েছে, তা বোঝা কঠিন নয়। মানবজাতির জন্য যিহোবা তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টকে দান করেছেন।—পড়ুন, যোহন ৩:১৬, ৩৬.

বলিদানমূলক মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার লাভ করে ইস্‌হাক নিশ্চয়ই কত আনন্দিতই-না হয়েছিলেন! এর  পরিবর্তে, বলিদানের জন্য ঈশ্বর একটা মেষ জুগিয়েছিলেন বলে নিঃসন্দেহে তিনি কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন, যা কাছেই একটা ঝোপের মধ্যে আটকে ছিল। (আদি. ২২:১০-১৩) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, কেন সেই জায়গার নাম “যিহোবা-যিরি” রাখা হয়েছিল, যেটার অর্থ “সদাপ্রভু যোগাইবেন।”—আদি. ২২:১৪.

পুনরায় সম্মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা

১০, ১১. কারা ‘সম্মিলনের পরিচর্য্যা-পদে’ নেতৃত্ব নিয়েছে এবং কীভাবে তারা তা সম্পন্ন করেছে?

১০ কীভাবে যিহোবা সর্বমহান জোগানদাতা হয়ে ওঠেন, সেটা নিয়ে আমরা যখন ধ্যান করি, তখন আমরা যিশু খ্রিস্টের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্বন্ধে কৃতজ্ঞতা সহকারে স্বীকার করি, যেমনটা পৌলও করেছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন: “আমরা এরূপ বিচার করিয়াছি যে, এক জন সকলের জন্য মরিলেন, সুতরাং সকলেই মরিল; আর তিনি সকলের জন্য মরিলেন, যেন, যাহারা জীবিত আছে, তাহারা আর আপনাদের উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করে, যিনি তাহাদের জন্য মরিয়াছিলেন, ও উত্থাপিত হইলেন।”—২ করি. ৫:১৪, ১৫.

১১ ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের কারণে এবং তাঁকে সেবা করার অতুলনীয় সুযোগের জন্য কৃতজ্ঞ হয়ে, প্রাথমিক খ্রিস্টানরা আনন্দের সঙ্গে “সম্মিলনের পরিচর্য্যা-পদ” গ্রহণ করেছিল। তাদের প্রচার এবং শিষ্য তৈরির কাজ সৎ হৃদয়ের ব্যক্তিদের জন্য ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার, তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব করার এবং পরিশেষে স্বর্গে ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। বর্তমানে, যিহোবার অভিষিক্ত দাসেরা একই পরিচর্যা সম্পাদন করে থাকে। ঈশ্বর এবং খ্রিস্টের রাজদূত হিসেবে তারা যা সম্পন্ন করে, তা “নিরূপিত, [“সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন,” NW]” লোকেদের জন্য যিহোবার দ্বারা আকৃষ্ট হওয়ার এবং বিশ্বাসী হওয়ার সুযোগ করে দেয়।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৫:১৮-২০; যোহন ৬:৪৪; প্রেরিত ১৩:৪৮.

১২, ১৩. কীভাবে আমরা যিহোবার বিভিন্ন ব্যবস্থার প্রতি আমাদের উপলব্ধি প্রকাশ করতে পারি?

১২ সর্বমহান জোগানদাতা যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে, পার্থিব আশাসম্পন্ন সমস্ত খ্রিস্টান অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে রাজ্যের প্রচার কাজে অংশ নিয়ে থাকে। এই কাজে আমরা বাইবেল ব্যবহার করে থাকি আর এটি হল ঈশ্বরের আরেকটা চমৎকার ব্যবস্থা। (২ তীম. ৩:১৬, ১৭) আমাদের প্রচার কাজে দক্ষতার সঙ্গে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা অন্যদেরকে অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ করে দিই। এই কাজে সাহায্য লাভের জন্য আমরা প্রত্যেকে যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত আরেকটা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করি আর তা হল তাঁর পবিত্র আত্মা। (সখ. ৪:৬; লূক ১১:১৩) এর উল্লেখযোগ্য ফলাফল আমরা যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক (ইংরেজি) বইয়ের প্রতিটা সংস্করণে দেখতে পাই। আমাদের পিতা এবং জোগানদাতা যিহোবার প্রশংসা করার এই কাজে অংশ নিতে পারা কতই-না সম্মানের এক বিষয়!

১৩ ঈশ্বর আমাদের জন্য এই সমস্তকিছু জুগিয়েছেন বলে, নিজেদেরকে আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘যিহোবা যে-ব্যবস্থাগুলো করেছেন, সেগুলোর কারণে তাঁর প্রতি আমার গভীর উপলব্ধি দেখানোর জন্য আমি কি পরিচর্যায় আমার যথাসাধ্য করছি? কোন কোন উপায়ে আমি উন্নতি করতে এবং সুসমাচারের আরও কার্যকরী প্রচারক হয়ে উঠতে পারি?’ রাজ্যের বিষয়গুলোকে আমাদের জীবনে প্রথমে রেখে আমরা ঈশ্বরের অপূর্ব ব্যবস্থাগুলোর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি। আমরা যদি তা করি, তাহলে যিহোবা লক্ষ রাখবেন যেন আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো লাভ করি। (মথি ৬:২৫-৩৩) ঈশ্বরের প্রেমের কারণে নিশ্চিতভাবেই তাঁকে খুশি করার এবং তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করার জন্য আমাদের সর্বোত্তমটা করতে চাই।—হিতো. ২৭:১১.

১৪. কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের উদ্ধার করেছেন?

১৪ গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “আমি দুঃখী ও দরিদ্র, প্রভুই আমার পক্ষে চিন্তা করেন; তুমি আমার সহায় ও আমার নিস্তারকর্ত্তা।” (গীত. ৪০:১৭) যিহোবা বার বার তাঁর লোকেদেরকে একটা দল হিসেবে নিস্তার বা উদ্ধার করেছেন আর তা বিশেষভাবে সেই সময়, যখন তাদের শত্রুরা তাদের ওপর প্রচণ্ড তাড়না নিয়ে এসেছিল এবং ক্রমাগত তাদেরকে হয়রানি করেছিল। এই সময়গুলোতে ঈশ্বর সাহায্য করেন বলে এবং ক্রমাগত আমাদের জন্য অনেক আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা জোগান বলে আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ!

 যিহোবা সুরক্ষা করেন

১৫. কীভাবে একজন প্রেমময় বাবা তার সন্তানকে সুরক্ষা করার চেষ্টা করেন, তা উদাহরণের সাহায্যে তুলে ধরুন।

১৫ একজন প্রেমময় পিতা তাঁর সন্তানদের জন্য কেবল ভরণ-পোষণই জোগান না কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের সুরক্ষাও করেন। তারা যদি বিপদে পড়ে, তাহলে তিনি সাধারণত তাদেরকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। একজন ভাই তার ছোটোবেলার একটা ঘটনার কথা স্মরণ করেন। তিনি এবং তার বাবা যখন প্রচার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন, তখন তারা একটা জলস্রোতের সামনে এসে পড়ে। সেই দিন সকালে প্রবল বৃষ্টির কারণে জলস্রোতের জল বেড়ে যায়। সেই জলস্রোত পার হওয়ার একমাত্র উপায় ছিল বড়ো বড়ো পাথরের ওপর পা ফেলে পার হওয়া। তার বাবার আগে আগে যাওয়ার সময়, একটা পাথর থেকে তার পা পিছলে যায় এবং তিনি জলে পড়ে গিয়ে দু-বার ডুবে যেতে থাকেন। সঙ্গেসঙ্গে তার বাবা তাকে শক্ত করে ধরে ফেলে তাকে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন বলে তিনি কতই-না কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন! আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদেরকে এই দুষ্ট জগতের প্রবল স্রোত এবং এই জগতের শাসক শয়তানের হাত থেকে উদ্ধার করেন। নিশ্চিতভাবেই, একমাত্র যিহোবা হলেন সর্বোত্তম সুরক্ষাকারী।—মথি ৬:১৩; ১ যোহন ৫:১৯.

১৬, ১৭. ইস্রায়েলীয়রা যখন অমালেকীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল, তখন কীভাবে যিহোবা তাদেরকে সাহায্য ও সুরক্ষা করেছিলেন?

১৬ যিহোবা ১৫১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাঁর লোকেদের প্রেমের সঙ্গে সুরক্ষা করেছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি ইস্রায়েলীয়দেরকে দাসত্ব থেকে উদ্ধার করেছিলেন এবং লোহিত সাগর পার হওয়ার সময় তাদেরকে সুরক্ষা করেছিলেন। প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে সীনয় পর্বতে যাওয়ার সময় সেই জাতি রফীদীমে উপস্থিত হয়।

১৭ যেহেতু সেই সময় তখনও আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে বলা ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্‌বাণী পূর্ণ হওয়া বাকি ছিল, তাই আমরা কল্পনা করতে পারি যে, দুর্বল ইস্রায়েলীয়দের আক্রমণ করার একটা সুযোগ খোঁজার জন্য শয়তান কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছিল। অমালেকীয়দের মাধ্যমে সে এই আক্রমণ করেছিল, যারা ঈশ্বরের লোকেদের শত্রু ছিল। (গণনা. ২৪:২০) যিহোশূয়, মোশি, হারোণ এবং হূর, এই চার জন বিশ্বস্ত ব্যক্তির মাধ্যমে যিহোবা  কী করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। যিহোশূয় যখন অমালেকীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন, তখন কাছেই একটা পর্বতে মোশি, হারোণ ও হূর অবস্থান করছিল। মোশি যখন তার হাত ওপরে উঠাতেন তখন ইস্রায়েলীয়রা যুদ্ধে জয়ী হতো। তার হাত যখন ভারী হয়ে গিয়েছিল, তখন হারোণ এবং হূর তার হাত উঁচু করে ধরে রেখেছিল। তাই বলা যায়, যিহোবার সাহায্য এবং সুরক্ষার কারণেই ‘যিহোশূয় অমালেককে ও তাহার লোকদিগকে পরাজয় করিয়াছিলেন।’ (যাত্রা. ১৭:৮-১৩) মোশি সেখানে একটা বেদি নির্মাণ করে সেটার নাম দিয়েছিলেন “যিহোবা-নিঃষি,” যার অর্থ “সদাপ্রভু আমার পতাকা।”—পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ১৭:১৪, ১৫.

শয়তানের হাত থেকে সুরক্ষা করেন

১৮, ১৯. আমাদের দিনে তাঁর দাসদের জন্য ঈশ্বর কোন সুরক্ষা জুগিয়েছেন?

১৮ যিহোবা সেই ব্যক্তিদের সুরক্ষা করেন, যারা তাঁকে ভালোবাসে এবং তাঁর বাধ্য হয়। রফীদীমে ইস্রায়েলীয়রা যেমনটা করেছিল, তেমনই আমরাও শত্রুদের মুখোমুখি হলে সুরক্ষার জন্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করি। যিহোবা প্রায়ই আমাদেরকে একটা দল হিসেবে সুরক্ষা করেছেন এবং তিনি আমাদের দিয়াবলের হাত থেকেও রক্ষা করেন। এমন অনেক সময়ের কথা চিন্তা করে দেখুন, যখন ঈশ্বর আমাদের সেইসমস্ত ভাইকে সুরক্ষা করেছেন, যারা তাদের খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, ১৯৩০-এর দশকে এবং ১৯৪০-এর দশকের প্রথম দিকে জার্মানিতে এবং অন্যান্য দেশে নাতসি আমলে এমনটা ঘটেছিল। তাড়নার সময় ঈশ্বর কীভাবে সুরক্ষা করেন, সেই সম্বন্ধে জীবন কাহিনি এবং বর্ষপুস্তক বইয়ের বিবরণ পড়া ও তা নিয়ে ধ্যান করা, যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতাকে শক্তিশালী করবে, যিনি আমাদের আশ্রয়।—গীত. ৯১:২.

কঠিন সময়ে বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করার জন্য যিহোবা আমাদের সহবিশ্বাসীদের ব্যবহার করতে পারেন (১৮-২০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৯ যিহোবার সংগঠন এবং বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ্যমে আমরা আমাদের সুরক্ষার জন্য প্রেমময় অনুস্মারক লাভ করি। সাম্প্রতিক সময়ে তা কীভাবে উপকারজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে, তা বিবেচনা করুন। যেখানে এই জগৎ চরম অনৈতিকতা এবং পর্নোগ্রাফির মধ্যে ক্রমাগত ডুবে যাচ্ছে, সেখানে যিহোবা আমাদেরকে নৈতিক বিপদ সম্বন্ধে সাবধান করে দেওয়ার জন্য জরুরি অনুস্মারক এবং ব্যবহারিক সাহায্য জোগাচ্ছেন। উদাহরণ স্বরূপ, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের অপব্যবহারের মাধ্যমে কুসংসর্গ এড়িয়ে চলার জন্য আমরা প্রেমময় পরামর্শ লাভ করি। *১ করি. ১৫:৩৩.

২০. খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে আমরা কোন সুরক্ষা এবং নির্দেশনা লাভ করি?

২০ কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা আসলেই “সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা” পাচ্ছি? সতর্কতার সঙ্গে তাঁর আজ্ঞাগুলোতে মনোযোগ দিয়ে। (যিশা. ৫৪:১৩) আমাদের মণ্ডলীগুলোর নিরাপদ আশ্রয়স্থলে আমরা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং সুরক্ষা লাভ করি কারণ এখানেই প্রাচীন হিসেবে সেবা করছে এমন বিশ্বস্ত পুরুষরা আধ্যাত্মিক সাহায্য ও পরামর্শ জুগিয়ে থাকে। (গালা. ৬:১) ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা এই দানরূপ মানুষদের মাধ্যমেই আমরা যিহোবার বেশির ভাগ কোমল যত্ন লাভ করে থাকি। (ইফি. ৪:৭, ৮) আমাদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত? স্বেচ্ছায় বশীভূত হওয়া এবং বাধ্যতা ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে আসে।—ইব্রীয় ১৩:১৭.

২১. (ক) আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

২১ আসুন আমরা পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হওয়ার আর এভাবে আমাদের স্বর্গীয় পিতার নির্দেশনা মেনে নেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। এ ছাড়া, আমাদের তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টের জীবনধারা নিয়ে ধ্যান করতে হবে, যাঁর অতুলনীয় উদাহরণ আমরা অনুসরণ করার প্রচেষ্টা করি। এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর বাধ্যতার কারণে যিশু এক বিরাট পুরস্কার লাভ করেছেন। (ফিলি. ২:৫-১১) যদি আমরা আমাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে যিহোবার ওপর নির্ভর করি, তাহলে তাঁর মতো আমরাও আশীর্বাদ লাভ করব। (হিতো. ৩:৫, ৬) তাই, আমরা যেন সবসময় অতুলনীয় জোগানদাতা এবং সুরক্ষাকারী যিহোবার ওপর নির্ভর করি। তাঁকে সেবা করা কী এক আনন্দ এবং বিরাট সুযোগ! তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম আরও বৃদ্ধি পাবে, যদি আমরা আমাদের প্রতি আমাদের পিতার যত্নের তৃতীয় দিকটা নিয়ে গভীরভাবে বিবেচনা করি আর সেটা হল তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব। পরের প্রবন্ধ দেখাবে যে, কীভাবে যিহোবা আমাদের সর্বোত্তম বন্ধু।

^ অনু. 19 ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩-৫ পৃষ্ঠার “ইন্টারনেট—সারাবিশ্বের তথ্য আহরণের এই হাতিয়ারকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করা” এবং ২০১২ সালের ১৫ আগস্ট প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২০-২৯ পৃষ্ঠার “দিয়াবলের ফাঁদ সম্বন্ধে সতর্ক থাকুন!” ও “দাঁড়িয়ে থাকুন এবং শয়তানের ফাঁদগুলো এড়িয়ে চলুন!” শিরোনামের প্রবন্ধে এই ধরনের অনুস্মারকগুলোর উদাহরণ পাওয়া যেতে পারে।