সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেভাবে আত্মত্যাগমূলক মনোভাব বজায় রাখা যায়

যেভাবে আত্মত্যাগমূলক মনোভাব বজায় রাখা যায়

“কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক।”—মথি ১৬:২৪.

১. কীভাবে যিশু আত্মত্যাগমূলক মনোভাবের এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু আত্মত্যাগমূলক মনোভাবের এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। তিনি নিজের আকাঙ্ক্ষা এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে বরং ঈশ্বরের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। (যোহন ৫:৩০) যাতনাদণ্ডে মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকার মাধ্যমে তিনি আত্মত্যাগমূলক মনোভাবের সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ দিয়েছিলেন।—ফিলি. ২:৮.

২. কীভাবে আমরা আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখাতে পারি এবং কেন আমাদের তা দেখানো উচিত?

যিশুর অনুসারী হিসেবে আমাদেরও আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখাতে হবে। এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব রাখার অর্থ কী? সহজভাবে বললে এর মানে হল, অন্যদের সাহায্য করার জন্য নিজের বিষয়গুলোকে ত্যাগ করতে ইচ্ছুক হওয়া। এক অর্থে, এটা স্বার্থপর মনোভাবের বিপরীত। (মথি ১৬:২৪) এক নিঃস্বার্থ মনোভাব আমাদেরকে নিজেদের নয় বরং অন্যদের অনুভূতি এবং ব্যক্তিগত পছন্দগুলোকে প্রথমে রাখতে সাহায্য করে। (ফিলি. ২:৩, ৪) বাস্তবিকপক্ষে, যিশু শিখিয়েছিলেন যে, এক নিঃস্বার্থ মনোভাব আমাদের উপাসনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। কীভাবে? খ্রিস্টীয় প্রেম, যা আত্মত্যাগমূলক মনোভাবের পিছনে এক চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে, তা যিশুর প্রকৃত শিষ্যদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) বিশ্বব্যাপী আমাদের যে-ভ্রাতৃসমাজ রয়েছে, তারাও আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখিয়ে থাকে। সেই ভ্রাতৃসমাজের অংশ হওয়ায় আমরা যে-আশীর্বাদগুলো উপভোগ করছি, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করে দেখুন-না কেন!

৩. কী আমাদের আত্মত্যাগমূলক মনোভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে?

তবে, আমরা এমন এক শত্রুর মুখোমুখি হই, যা সূক্ষ্মভাবে আমাদের আত্মত্যাগমূলক  মনোভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে। সেই শত্রু হল আমাদের স্বার্থপর মনোভাব। আদম ও হবা কীভাবে স্বার্থপর মনোভাব দেখিয়েছিল, তা মনে করে দেখুন। ঈশ্বরের মতো হতে চেয়ে হবা স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা দেখিয়ে কাজ করেছিল। তার স্বামী তাকে খুশি করার জন্য স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিল। (আদি. ৩:৫, ৬) আদম ও হবাকে সত্য উপাসনা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরও, শয়তান ক্রমাগত লোকেদেরকে স্বার্থপর মনোভাব দেখানোর জন্য প্রলুব্ধ করে চলছে। এমনকী যিশুকে পরীক্ষা করার সময়ও সে একই পন্থা ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল। (মথি ৪:১-৯) আমাদের দিনে, শয়তান অধিকাংশ লোককে বিভিন্ন উপায়ে স্বার্থপর মনোভাব দেখানোর জন্য প্ররোচিত করে তাদেরকে ভ্রান্ত করায় সফল হয়েছে। এই বিষয়টার প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন কারণ আমাদের চারপাশে ছেয়ে থাকা স্বার্থপর মনোভাব আমাদের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।—ইফি. ২:২.

৪. (ক) আমরা কি স্বার্থপর প্রবণতাকে বর্তমানে দূর করতে পারি? ব্যাখ্যা করুন। (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

স্বার্থপর মনোভাবকে লোহার ওপর মরিচা পড়ার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। লোহার তৈরি কোনো বস্তু যখন বৃষ্টি এবং বাতাসের মধ্যে খোলা অবস্থায় থাকে, তখন তাতে মরিচা পড়তে শুরু করে। আর এই বিষয়টাকে উপেক্ষা করে চলা খুবই বিপদজনক কারণ এক পর্যায়ে এর আকার নষ্ট হয়ে যেতে অথবা তা ভেঙে যেতে পারে। একইভাবে, যদিও আমরা আমাদের অসিদ্ধতা এবং স্বার্থপর প্রবণতাকে বর্তমানে দূর করতে পারি না, তবুও এগুলোর সঙ্গে জড়িত বিপদ সম্বন্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে এবং এইরকম প্রবণতার বিরুদ্ধে আমাদের ক্রমাগত লড়াই করে চলতে হবে। (১ করি. ৯:২৬, ২৭) কীভাবে আমরা স্বার্থপর মনোভাবের লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে পারি? আর কীভাবে আমরা আরও বেশি করে আত্মত্যাগমূলক মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি?

স্বার্থপর মনোভাব পরীক্ষা করার জন্য বাইবেল ব্যবহার করুন

৫. (ক) কীভাবে বাইবেল একটা আয়নার মতো? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) আমাদের মধ্যে স্বার্থপর মনোভাব আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার সময় আমাদের অবশ্যই কী এড়িয়ে চলতে হবে?

বাহ্যিক চেহারা পরীক্ষা করে দেখার জন্য আমরা যেমন একটা আয়না ব্যবহার করে থাকি, তেমনই ভিতরের ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা করে দেখার এবং কোনো ত্রুটি পেলে তা সংশোধন করার জন্য আমরা বাইবেল ব্যবহার করতে পারি। (পড়ুন, যাকোব ১:২২-২৫.) কিন্তু, কেবল সেই সময়ই একটা আয়না আমাদের চেহারা পরীক্ষা করে দেখতে সাহায্য করবে, যদি আমরা তা সঠিকভাবে ব্যবহার করি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যদি আয়নার দিকে কেবল এক ঝলক তাকাই, তাহলে আমরা হয়তো কোনো ছোট্ট অথচ গুরুতর ত্রুটি দেখতে ব্যর্থ হব। অথবা আমরা যদি এক কোণা থেকে আয়না দেখি, তাহলে আমরা হয়তো নিজেকে নয় বরং অন্য কাউকে দেখতে পাব। একইভাবে স্বার্থপর মনোভাবের মতো ত্রুটি দেখার ক্ষেত্রে বাইবেল ব্যবহার করার জন্য আমাদের কেবল এটি ওপর ওপর পড়ার এবং অন্যের ভুলত্রুটি ধরার জন্য তা ব্যবহার করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করা উচিত।

৬. কীভাবে আমরা সিদ্ধ ব্যবস্থায় “নিবিষ্ট” থাকি?

উদাহরণ স্বরূপ, আমরা হয়তো নিয়মিতভাবে, এমনকী প্রতিদিন বাইবেল পড়তে পারি কিন্তু তার পরও আমাদের মধ্যে সামান্যতম স্বার্থপর মনোভাব গড়ে উঠতে থাকলে তা না-ও দেখতে পারি। কীভাবে তা সম্ভব? এটা বিবেচনা করুন: যাকোবের আয়নার উদাহরণের মধ্যে সমস্যা এই ছিল না যে, সেই ব্যক্তি সতর্কতার সঙ্গে দেখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। যাকোব লিখেছিলেন যে, তিনি ‘আপনাকে দেখিলেন।’ এখানে যাকোব এমন একটা গ্রিক শব্দ ব্যবহার করেছেন, যেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা অথবা মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করাকে নির্দেশ করে। তাই, এই ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির সমস্যা কী ছিল? যাকোব বলে চলেন: “সে . . . চলিয়া গেল, আর সে কিরূপ লোক, তাহা তখনই ভুলিয়া গেল।” হ্যাঁ, তিনি যা দেখেন, সেই অনুযায়ী কাজ না করেই আয়নার সামনে থেকে চলে যান। এর বিপরীতে, একজন সফল ব্যক্তি কেবল ‘হেঁট হইয়া সিদ্ধ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাতই করেন’ না বরং ‘তাহাতে নিবিষ্টও থাকেন।’ ঈশ্বরের বাক্যের সিদ্ধ ব্যবস্থাকে ত্যাগ করার পরিবর্তে, তিনি এর শিক্ষাগুলো কাজে লাগানোর মাধ্যমে নিবিষ্ট থাকেন। যিশুও একই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “তোমরা যদি আমার বাক্যে স্থির থাক, তাহা হইলে সত্যই তোমরা আমার শিষ্য।”—যোহন ৮:৩১.

৭. কীভাবে আমরা এমনকী সামান্যতম স্বার্থপর মনোভাব পরীক্ষা করে দেখার জন্য বাইবেল ব্যবহার করতে পারি?

তাই, এমনকী সামান্যতম স্বার্থপর মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় সফল হতে চাইলে আমাদের অবশ্যই প্রথমে মনোযোগের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য পড়তে হবে। এটা হয়তো আপনাকে সেই ক্ষেত্রগুলো শনাক্ত করার জন্য সাহায্য করতে পারে, যেগুলোতে মনোযোগ দেওয়া  প্রয়োজন। কিন্তু, আপনাকে আরও বেশি কিছু করতে হবে। গবেষণা করার মাধ্যমে আরও গভীরে যান। একবার বাইবেলের একটা বিবরণ সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে ধারণা নেওয়ার পর, এই প্রশ্নগুলো করার মাধ্যমে নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে স্থাপন করুন: ‘এই পরিস্থিতিতে আমি কীভাবে কাজ করতাম? আমি কি আসলেই সঠিক উপায়ে কাজ করতাম?’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আপনি যা পড়েন, সেটা নিয়ে ধ্যান করার পর তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। (মথি ৭:২৪, ২৫) আসুন আমরা দেখি যে, আত্মত্যাগমূলক মনোভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য লাভ করার জন্য কীভাবে আমরা রাজা শৌল এবং প্রেরিত পিতরের বিবরণ ব্যবহার করতে পারি।

রাজা শৌলের সতর্কবাণীমূলক উদাহরণ থেকে শিখুন

৮. শৌল যখন প্রথম রাজা হয়েছিলেন, তখন তার কোন মনোভাব ছিল এবং কীভাবে তিনি তা প্রদর্শন করেছিলেন?

কীভাবে স্বার্থপর মনোভাব আমাদের আত্মত্যাগমূলক মনোভাবকে নষ্ট করে দিতে পারে, সেই সম্বন্ধে ইস্রায়েলের রাজা শৌল আমাদের জন্য এক সতর্কবাণী হিসেবে কাজ করেন। শৌল যখন প্রথম রাজা হয়েছিলেন, তখন তিনি বিনয়ী এবং নম্র ছিলেন। (১ শমূ. ৯:২১) তিনি সেই ইস্রায়েলীয়দের শাস্তি দেননি, যারা তার শাসনপদ নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেছিল, এমনকী যদিও সেই ঈশ্বরদত্ত পদের পক্ষে কথা বলার উপযুক্ত কারণ তার ছিল। (১ শমূ. ১০:২৭) অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে এক সফল যুদ্ধে ইস্রায়েলকে পরিচালনা দিয়ে রাজা শৌল ঈশ্বরের আত্মার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। এরপর, তিনি নম্রভাবে সেই জয়ের কৃতিত্ব যিহোবাকে দিয়েছিলেন।—১ শমূ. ১১:৬, ১১-১৩.

৯. কীভাবে শৌল স্বার্থপর চিন্তাভাবনা গড়ে তুলতে শুরু করেছিলেন?

পরবর্তী সময়ে শৌল ক্ষতিকর মরিচার মতো নিজের মধ্যে স্বার্থপর চিন্তাভাবনা এবং গর্বিত মনোভাব গড়ে উঠতে দিয়েছিলেন। তিনি যখন যুদ্ধে অমালেকীয়দের পরাজিত করেছিলেন, তখন যিহোবার বাধ্য হওয়ার চেয়ে বরং নিজের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে প্রথমে রেখেছিলেন। ঈশ্বরের আজ্ঞা অনুযায়ী লুটদ্রব্য বিনষ্ট করে দেওয়ার পরিবর্তে তিনি লোভের বশবর্তী হয়ে সেগুলো রেখে দিয়েছিলেন। আর শৌল উদ্ধত হয়ে নিজের জন্য স্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন। (১ শমূ. ১৫:৩, ৯, ১২) ভাববাদী শমূয়েল যখন বলেছিলেন যে, যিহোবা এতে অসন্তুষ্ট হয়েছেন, তখন শৌল ঈশ্বরের আজ্ঞার যে-অংশ অনুযায়ী কাজ করেছেন, সেটার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার এবং নিজের দোষ অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে সঠিক বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন। (১ শমূ. ১৫:১৬-২১) এ ছাড়া, গর্বের কারণে শৌল ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার চেয়ে বরং নিজের মান রক্ষা করার জন্য আরও বেশি চিন্তিত ছিলেন। (১ শমূ. ১৫:৩০) আত্মত্যাগমূলক মনোভাব বজায় রাখার ব্যাপারে সাহায্য লাভ করার জন্য কীভাবে আমরা শৌলের বিবরণকে আয়নার সঙ্গে তুলনা করতে পারি?

১০, ১১. (ক) এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব বজায় রাখা সম্বন্ধে শৌলের অভিজ্ঞতা আমাদের কী শেখায়? (খ) কীভাবে আমরা শৌলের মন্দ কাজ অনুসরণ করা এড়িয়ে চলতে পারি?

১০ প্রথমত, শৌলের অভিজ্ঞতা দেখায়, আমরা এই ভেবে আত্মতুষ্ট হতে পারি না যে, পূর্বে কোনো এক সময় যদি আমরা আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখিয়ে থাকি, তাহলে পরবর্তী সময়েও আমরা এমনি এমনিই তা দেখিয়ে চলতে পারব। (১ তীম. ৪:১০) মনে রাখবেন, শৌল কিছু সময়ের জন্য ভালো ছিলেন এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করেছিলেন কিন্তু তিনি স্বার্থপর প্রবণতা দূর করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, যা তার মধ্যে প্রকাশ পেতে শুরু করেছিল। পরিশেষে, শৌলের অবাধ্যতার কারণে যিহোবা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

১১ দ্বিতীয়ত, জীবনের যে-ক্ষেত্রগুলোতে আমরা ভালো করি, শুধু সেগুলোর ওপর মনোযোগ দেওয়ার এবং যেগুলোতে উন্নতি করা দরকার, সেগুলো উপেক্ষা করার বিষয়ে সাবধান হওয়া উচিত। এটা আমাদের চেহারায় লেগে থাকা একটা ময়লা না দেখে কেবল আয়নায় নিজেদের নতুন জামাকাপড় দেখার মতো হবে। যদিও শৌলের মতো আমরা হয়তো আত্মতুষ্ট মনোভাব দেখাব না কিন্তু তার পরও আমাদের এমন যে-কোনো প্রবণতা এড়িয়ে চলার জন্য অবশ্যই কাজ করা উচিত, যা কিনা একই মন্দ কাজ করার দিকে পরিচালিত করতে পারে। আমরা যদি পরামর্শ লাভ করি, তাহলে আসুন আমরা নিজেদের কাজগুলোকে সঠিক বলে প্রমাণ করতে না চাওয়ার, সমস্যাকে ছোটো করে না দেখার অথবা অন্যদের ওপর দোষ চাপিয়ে না দেওয়ার বিষয়ে প্রচেষ্টা করি। শৌলের মতো না হয়ে বরং পরামর্শ মেনে নেওয়া আরও উত্তম।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১৪১:৫.

১২. আমরা যদি কোনো গুরুতর পাপ করে ফেলি, তাহলে কীভাবে আত্মত্যাগমূলক মনোভাব আমাদের সাহায্য করতে পারে?

১২ কিন্তু, আমরা যদি কোনো গুরুতর পাপ করে ফেলি, তাহলে? শৌল তার সুনাম রক্ষা করতে চেয়েছিলেন  আর এই কারণে তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে পুনরায় উত্তম সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি। অন্যদিকে, এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব আমাদেরকে অস্বস্তিবোধ কাটিয়ে উঠতে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য গ্রহণ করতে সাহায্য করবে। (হিতো. ২৮:১৩; যাকোব ৫:১৪-১৬) উদাহরণ স্বরূপ, একজন ভাই ১২ বছর বয়স থেকে পর্নোগ্রাফি দেখা শুরু করেন এবং বহু বছর ধরে গোপনে তা দেখা চালিয়ে যান। তিনি বলেন: “এই বিষয়টা আমার স্ত্রী এবং প্রাচীনদের কাছে স্বীকার করা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল। কিন্তু, তা স্বীকার করার ফলে আমার মনে হয়েছে যেন আমার কাঁধ থেকে এক ভারি বোঝা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমাকে যখন একজন পরিচারক দাসের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তখন আমি তাদেরকে দুঃখ দিয়েছি ভেবে আমার কিছু বন্ধু হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু, আমি জানি যে, আমি যখন পর্নোগ্রাফি দেখতাম, তখনকার চেয়ে বরং বর্তমান সেবার জন্য যিহোবা আরও বেশি আনন্দিত আর তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

পিতর স্বার্থপর মনোভাব কাটিয়ে উঠেছিলেন

১৩, ১৪. কীভাবে পিতর স্বার্থপর প্রবণতা দেখিয়েছিলেন?

১৩ যিশুর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করার সময় প্রেরিত পিতর আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। (লূক ৫:৩-১১) কিন্তু, তার পরও তাকে স্বার্থপর প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, প্রেরিত যাকোব এবং যোহন যখন ঈশ্বরের রাজ্যে যিশুর দু-পাশে গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করার পরিকল্পনা করেছিল, তখন তিনি রুষ্ট হয়েছিলেন। পিতর হয়তো এমনটা ভেবেছিলেন যে, একটা পদ তার জন্য রাখা উচিত কারণ ইতিমধ্যেই যিশু বলে দিয়েছিলেন যে, পিতর এক বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন। (মথি ১৬:১৮, ১৯) যাই হোক, যাকোব এবং যোহনকে ও সেইসঙ্গে পিতর এবং বাকি প্রেরিতদের যিশু সাবধান করে দিয়েছিলেন, যেন তারা স্বার্থপরভাবে তাদের ভাইদের ‘উপরে প্রভুত্ব করিবার’ চেষ্টা না করে।—মার্ক ১০:৩৫-৪৫.

১৪ এমনকী যিশু পিতরের চিন্তাভাবনা সংশোধন করে দেওয়ার চেষ্টা করার পরও পিতর নিজের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখার ব্যাপারে ক্রমাগত লড়াই করেছিলেন। যিশু যখন প্রেরিতদের বলেছিলেন যে, কিছু সময়ের জন্য তারা তাঁকে ছেড়ে চলে যাবে, তখন পিতর এই দাবি করার মাধ্যমে অন্যদেরকে ছোটো করার পাশাপাশি নিজেকে বড়ো করে তুলে ধরেছিলেন যে, তিনি একাই বিশ্বস্ত থাকবেন। (মথি ২৬:৩১-৩৩) কিন্তু, তার এই আত্মবিশ্বাস ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছিল কারণ সেই রাতেই তিনি আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নিজেকে রক্ষা করার প্রচেষ্টায় পিতর তিন বার যিশুকে অস্বীকার করেছিলেন।—মথি ২৬:৬৯-৭৫.

১৫. সার্বিক দিক বিবেচনা করে কেন পিতরের উদাহরণ উৎসাহজনক?

১৫ এই সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ব্যর্থতা সত্ত্বেও,  পিতরের উদাহরণ উৎসাহজনক। ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা এবং ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে পিতর তার অনুপযুক্ত প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন এবং ইন্দ্রিয়দমন ও আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখিয়েছিলেন। (গালা. ৫:২২, ২৩) তিনি এমন পরীক্ষা সহ্য করেছিলেন, যেগুলোকে সেই পরীক্ষাগুলোর চেয়ে আরও চরম হিসেবে দেখা যেতে পারে, যেগুলোতে তিনি পূর্বে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সকলের সামনে প্রেরিত পৌলের কাছ থেকে তিরস্কার লাভ করার পর তিনি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, সেখান থেকে তার নম্রতা দেখা যেতে পারে। (গালা. ২:১১-১৪) আর তিরস্কার লাভ করার পর পিতর অসন্তোষ পুষে রাখেননি, এইরকম মনে করেননি যে, পৌলের অনুযোগের কারণে তার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পিতর ক্রমাগত পৌলের প্রতি প্রেম প্রকাশ করেছিলেন। (২ পিতর ৩:১৫) পিতরের উদাহরণ আমাদেরকে এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

সংশোধন লাভ করার পর পিতর কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? আমরাও কি একইভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাব?(১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. কীভাবে আমরা কঠিন পরিস্থিতিগুলোর মধ্যেও আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখাতে পারি?

১৬ কঠিন পরিস্থিতিতে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান, তা চিন্তা করে দেখুন। পিতর এবং অন্যান্য প্রেরিতকে যখন প্রচার কাজের জন্য জেলে ভরা হয়েছিল এবং মারধর করা হয়েছিল, তখন তারা আনন্দ করেছিল “কারণ তাঁহারা [যিশুর] নামের জন্য অপমানিত হইবার যোগ্যপাত্র গণিত হইয়াছিলেন।” (প্রেরিত ৫:৪১) আপনিও তাড়নাকে, আত্মত্যাগমূলক মনোভাব প্রদর্শন করার মাধ্যমে পিতরকে অনুকরণ করার এবং যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করার এক সুযোগ হিসেবে দেখতে পারেন। (পড়ুন, ১ পিতর ২:২০, ২১.) এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে এমনকী সেই সময়ও সাহায্য করতে পারে, যখন আপনি প্রাচীনদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় শাসন লাভ করেন। বিরক্ত না হয়ে বরং পিতরের উদাহরণ অনুসরণ করুন।—উপ. ৭:৯.

১৭, ১৮. (ক) আমাদের আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো সম্বন্ধে আমরা নিজেদেরকে কী জিজ্ঞেস করতে পারি? (খ) আমরা যদি কিছুটা হলেও আমাদের মধ্যে স্বার্থপরতা খুঁজে পাই, তাহলে আমরা কী করতে পারি?

১৭ আধ্যাত্মিক লক্ষ্য স্থাপন করার সময়ও আপনি পিতরের উদাহরণ থেকে উপকার লাভ করতে পারেন। এই লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর জন্য আপনি এমনভাবে কাজ করতে পারেন, যা আপনার আত্মত্যাগমূলক মনোভাবকে প্রকাশ করে। কিন্তু লক্ষ রাখবেন যেন এগুলো প্রাধান্য লাভ করার জন্য না হয়। তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘যিহোবার প্রতি আমার সেবাকে উন্নত করার অথবা তা বাড়াতে চাওয়ার পিছনে কি আমার আরও কৃতিত্ব বা ক্ষমতা লাভ করার উদ্দেশ্য রয়েছে, যেমনটা যাকোব এবং যোহন যখন যিশুর কাছে তাদের অনুরোধ নিয়ে এসেছিল, তখন তাদের ছিল বলে মনে হয়েছিল?’

১৮ আপনি যদি কিছুটা হলেও আপনার মধ্যে স্বার্থপরতা খুঁজে পান, তাহলে আপনার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি সংশোধন করার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চান; এরপর নিজের চেয়ে বরং তাঁর গৌরবের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করুন। (গীত. ৮৬:১১) আপনি হয়তো এমন লক্ষ্যগুলোও স্থাপন করতে পারেন, যেগুলো আপনাকে বেশি মনোযোগের পাত্র করে তুলবে না। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি হয়তো আত্মার ফলের এমন কিছু দিক আরও বেশি করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারেন, যেগুলো গড়ে তোলা বিশেষভাবে আপনার কাছে কঠিন বলে মনে হয়। কিংবা আপনি যদি সভাতে আপনার অংশটুকু তুলে ধরার জন্য ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন অথচ কিংডম হল পরিষ্কারের কাজে যদি আপনার তেমন একটা আগ্রহ না থাকে, তাহলে রোমীয় ১২:১৬ পদে প্রাপ্ত উপদেশ কাজে লাগানোর লক্ষ্য স্থাপন করতে পারেন।—পড়ুন।

১৯. ঈশ্বরের বাক্যের আয়নায় আমরা যা দেখি, সেটার দ্বারা নিরুৎসাহিত না হওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি?

১৯ আমরা যখন ঈশ্বরের বাক্যের আয়নায় নিজেদেরকে মনোযোগের সঙ্গে দেখি এবং ত্রুটি, এমনকী স্বার্থপরতার প্রমাণ খুঁজে পাই, তখন আমরা হয়তো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারি। আপনার ক্ষেত্রে যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে যাকোবের দৃষ্টান্তের সেই সফল ব্যক্তি সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। সেই ব্যক্তি কত দ্রুত তার সমস্যার সমাধান করতে পেরেছেন অথবা এমনকী তিনি সমস্ত দোষ সংশোধন করতে পেরেছেন কি না, সেটার ওপর যাকোব জোর দেননি; বরং যাকোব বলেন যে, সেই ব্যক্তি ‘সিদ্ধ ব্যবস্থায় নিবিষ্ট থাকেন।’ (যাকোব ১:২৫) তিনি আয়নাতে যা দেখেন, তা মনে রাখেন এবং উন্নতি করার জন্য কাজ করে চলেন। হ্যাঁ, নিজের সম্বন্ধে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আপনার অসিদ্ধতাগুলোর প্রতি এক ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন। (পড়ুন, উপদেশক ৭:২০.) সিদ্ধ ব্যবস্থায় হেঁট হয়ে দৃষ্টিপাত করে চলুন এবং আপনার আত্মত্যাগমূলক মনোভাব বজায় রাখার জন্য কাজ করুন। যিহোবা আপনাকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক, যেমনটা তিনি আপনার এমন অনেক ভাই-বোনকে করেছেন, যারা অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ঈশ্বরের অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদ পেতে পারে এবং পেয়েছে।