সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সাহস করুন​—⁠যিহোবা আপনার সহায়!

সাহস করুন​—⁠যিহোবা আপনার সহায়!

‘সাহসপূর্ব্বক বলুন, “প্রভু [ঈশ্বর] আমার সহায়।”’—ইব্রীয় ১৩:৬.

১, ২. বিদেশে গিয়ে কাজ করে এমন অনেকে বাড়ি ফিরে আসার পর কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

“আমি যখন বিদেশে কাজ করতাম, তখন অনেক ভালো চাকরি করতাম এবং অনেক টাকা বেতন পেতাম,” এডুয়ার্ডো স্মরণ করে বলেন। * “কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার পর আমি বুঝতে পারি যে, আমার আরও গুরুত্বপূর্ণ এক দায়িত্ব রয়েছে আর তা হল আমার পরিবারের কেবল দৈহিক চাহিদা নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আধ্যাত্মিক চাহিদার যত্ন নেওয়া। তাই, আমি বাড়ি ফিরে আসি।”—ইফি. ৬:৪.

এডুয়ার্ডো জানতেন যে, তার পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার মাধ্যমে তিনি যিহোবাকে খুশি করেছেন। কিন্তু, আগের প্রবন্ধে উল্লেখিত ম্যারিলিনের মতো এডুয়ার্ডোরও পারিবারিক সম্পর্ক ঠিক করার জন্য দীর্ঘ সময় লেগেছিল। এ ছাড়া, অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে তাকে তার স্ত্রী এবং সন্তানদেরও যত্ন নিতে হয়েছিল। কীভাবে তিনি ভরণ-পোষণ জুগিয়েছিলেন? মণ্ডলীর কাছ থেকে তিনি কোন সাহায্য আশা করতে পারতেন?

আধ্যাত্মিক এবং পারিবারিক জীবনের যে-ক্ষতি হয়, তা পূরণ করা

৩. কীভাবে একজন বাবা অথবা মায়ের অনুপস্থিতি সন্তানদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে?

“আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমি আমার সন্তানদের সেই সময়টাতে অবহেলা করেছি, যখন তাদের আমার নির্দেশনা এবং স্নেহের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল,” এডুয়ার্ডো স্বীকার করেন। “সেই সময়টাতে আমি তাদেরকে নিয়ে বাইবেলের গল্প পড়ার, তাদের সঙ্গে প্রার্থনা করার, তাদেরকে জড়িয়ে ধরার এবং তাদের সঙ্গে খেলা করার  সুযোগ হাতছাড়া করেছি।” (দ্বিতীয়. ৬:৭) তার বড়ো মেয়ে অ্যানা মনে করে বলেন: “বাবা আমাদের সঙ্গে ছিল না বলে আমি তার অভাব বোধ করতাম। সে যখন ফিরে এসেছিল, তখন আমরা কেবল তাকে চেহারায় এবং গলার স্বরে চিনতাম। সে যখন আমাকে জড়িয়ে ধরত, তখন আমি স্বচ্ছন্দ বোধ করতাম না।”

৪. কীভাবে একজন স্বামীর অনুপস্থিতি, পরিবারের মস্তক হিসেবে তার ভূমিকা পালন করার ব্যাপারে তার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে?

একজন বাবার অনুপস্থিতি, পরিবারের মস্তক হিসেবে তার ভূমিকা পালন করার ব্যাপারে তার ক্ষমতাকেও নষ্ট করে দেয়। এডুয়োর্ডোর স্ত্রী রুবি বলেন: “আমাকে একইসঙ্গে মা এবং বাবার ভূমিকা পালন করতে হতো আর সাধারণত আমিই পরিবারের বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত নিতাম। এডুয়ার্ডো যখন বাড়ি ফিরে আসে, তখন আমাকে খ্রিস্টীয় বশ্যতার প্রকৃত অর্থ কী, তা শিখতে হয়েছিল। এমনকী, এখনও মাঝে মাঝে নিজেকে মনে করিয়ে দিতে হয় যে, আমার স্বামী এখানেই রয়েছে।” (ইফি. ৫:২২, ২৩) এডুয়ার্ডো এর সঙ্গে যুক্ত করে বলেন: “কোনো কিছু করার অনুমতি পাওয়ার জন্য মেয়েরা সাধারণত তাদের মায়ের কাছে যেত। বাবা-মা হিসেবে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের সন্তানদের সামনে তুলে ধরতে হবে যে, সমস্ত সিদ্ধান্ত আমরা একত্রে নিয়ে থাকি আর সেইসঙ্গে আমাকে এক খ্রিস্টীয় উপায়ে নেতৃত্ব দেওয়া শিখতে হয়েছিল।”

৫. কীভাবে একজন বাবা তার অনুপস্থিতিতে যে-ক্ষতি হয়েছিল, সেটা পূরণ করতে শুরু করেছিলেন আর এর ফল কী হয়েছিল?

এডুয়ার্ডো তার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করার এবং তাদের আধ্যাত্মিক শক্তিকে গড়ে তোলার জন্য যথাসাধ্য করার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। “আমার লক্ষ্য ছিল, কথা এবং উদাহরণের মাধ্যমে আমার সন্তানদের মধ্যে সত্য গেঁথে দেওয়া অর্থাৎ আমি কেবল মুখেই বলতে চাইনি, আমি যিহোবাকে ভালোবাসি কিন্তু সেইসঙ্গে তা কাজেও দেখাতে চেয়েছি।” (১ যোহন ৩:১৮) যিহোবা কি এডুয়ার্ডোর প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেছিলেন? “একজন উত্তম বাবা হওয়ার এবং আবারও আমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে তার সমস্ত প্রচেষ্টা দেখা আমাদের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছিল,” অ্যানা উত্তর দেন। “মণ্ডলীতে আমরা যখন তাকে উন্নতি করতে দেখেছিলাম, তখন আমরা সত্যিই অনেক আনন্দিত হয়েছিলাম। জগৎ আমাদেরকে যিহোবার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু, বাবা-মাকে সত্যের ব্যাপারে স্থির থাকতে দেখে আমরাও একই বিষয় করার প্রচেষ্টা করেছিলাম। বাবা আমাদের কথা দিয়েছিল যে, সে আর কখনো আমাদের ছেড়ে দূরে যাবে না আর সে তার কথা রেখেছিল। সে যদি আমাদের ছেড়ে দূরে চলে যেত, তাহলে আমি হয়তো আজকে যিহোবার সংগঠনে থাকতাম না।”

দায়িত্ব গ্রহণ করা

৬. যুদ্ধের সময় কিছু বাবা-মা কোন শিক্ষা লাভ করেছে?

কিছু অভিজ্ঞতা দেখায় যে, বলকান যুদ্ধের সময়ে সেখানে যে-যিহোবার সাক্ষিরা বাস করত, তাদের সন্তানরা কঠিন পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও আনন্দিত ছিল। কেন? যে-বাবা-মায়েরা কাজের জন্য দূরে যেতে পারত না, তারা বাড়িতেই থাকত আর সন্তানদের সঙ্গে অধ্যয়ন করত, খেলাধুলা করত এবং কথাবার্তা বলত। এটা থেকে কোন শিক্ষা লাভ করা যায়? টাকাপয়সা অথবা উপহারের চেয়েও সন্তানরা চায় যেন তাদের বাবা-মা তাদের সঙ্গে থাকুক। সত্যিই, ঈশ্বরের বাক্য যেমন বলে, সন্তানরা যদি বাবা-মায়ের কাছ থেকে মনোযোগ এবং প্রশিক্ষণ লাভ করে, তাহলে তারা উপকৃত হবে।—হিতো. ২২:৬.

৭, ৮. (ক) বাড়ি ফিরে আসার পর কিছু বাবা-মা কোন ভুল করে থাকে? (খ) কীভাবে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের নেতিবাচক অনুভূতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারে?

দুঃখের বিষয় হল, বাড়ি ফিরে আসার পর সন্তানদের মধ্যে বিরক্তি এবং উদাসীন মনোভাব দেখে কেউ কেউ বলে থাকে, “আমি তোমাদের জন্য এত ত্যাগস্বীকার করার পরও কীভাবে তোমরা এত অকৃতজ্ঞ হতে পারলে?” কিন্তু, সন্তানদের নেতিবাচক মনোভাবের পিছনে বড়ো কারণ হতে পারে বাবা-মায়ের অনুপস্থিতি। এই ফাটল দূর করার জন্য একজন বাবা অথবা মা কী করতে পারেন?

যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন, যেন তিনি আপনাকে আপনার পরিবারের সদস্যদের প্রকৃত অনুভূতি বুঝতে সাহায্য করেন আর এরপর দেখান যে আপনি তাদের জন্য চিন্তা করেন। তারপর পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময়, এই সমস্যার জন্য আপনিও যে দায়ী তা স্বীকার করুন এবং মেনে নিন। এক্ষেত্রে, আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া সাহায্যকারী হতে পারে। আপনার সাথি এবং সন্তানরা যখন লক্ষ করে যে, আপনি বিষয়গুলোকে সমাধান করার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করছেন, তখন তারা বুঝতে পারবে, এই ব্যাপারে আপনি আন্তরিক। দৃঢ় মনোভাব এবং ধৈর্য দেখালে আপনি হয়তো ধীরে ধীরে আপনার পরিবারের প্রেম এবং সম্মান পুনরায় অর্জন করতে পারবেন।

 ‘আপনার সম্পর্কীয় লোকদের জন্য চিন্তা করা’

৯. কেন বলা যায় যে, ‘আপনার সম্পর্কীয় লোকদের জন্য চিন্তা’ করতে গিয়ে আমাদের সবসময় আরও বেশি বস্তুগত বিষয় লাভ করার প্রয়োজন নেই?

প্রেরিত পৌল এই নির্দেশনা দিয়েছেন যে, যখন বয়স্ক খ্রিস্টানরা ভরণ-পোষণ জোগাতে পারে না, তখন তাদের সন্তানদের এবং নাতি-নাতনিদের তাদের ‘পিতামাতার [“পিতামাতা ও পিতামহ, মাতামহের,” ইজি-টু-রিড ভারশন] প্রত্যুপকরা করা’ উচিত। কিন্তু, পৌল সমস্ত খ্রিস্টানকে আরও পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন তারা তাদের রোজকার প্রয়োজনগুলো অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান লাভ করেই সন্তুষ্ট থাকে। সবসময় আমরা যেন উচ্চমানের জীবনযাপন করার অথবা ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা না করি। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৫:৪, ৮; ৬:৬-১০.) ‘আপনার সম্পর্কীয় লোকদের জন্য চিন্তা’ করার জন্য একজন খ্রিস্টানের এই জগতের বস্তুগত সম্পদ লাভের চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই, যা শীঘ্র শেষ হয়ে যাবে। (১ যোহন ২:১৫-১৭) “ধনের মায়া” অথবা ‘জীবিকার চিন্তা’ যেন ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতে ‘যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিবার’ ক্ষেত্রে আমাদের পরিবারকে ঝুঁকির মুখে না ফেলে!—মার্ক ৪:১৯; লূক ২১:৩৪-৩৬; ১ তীম. ৬:১৯.

১০. ঋণ নেওয়া এড়িয়ে চলা কেন বিজ্ঞতার কাজ?

১০ যিহোবা জানেন, আমাদের টাকাপয়সার প্রয়োজন আছে। কিন্তু, ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞার মতো টাকাপয়সা আমাদের সুরক্ষা করতে এবং টিকিয়ে রাখতে পারে না। (উপ. ৭:১২; লূক ১২:১৫) অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি-বিশেষরা কাজ করার জন্য বিদেশে যাওয়ার খরচকে হালকাভাবে দেখে থাকে আর তারা যে বিদেশে গিয়ে টাকাপয়সা উপার্জন করতে পারবে, সেটার কোনো নিশ্চয়তাও থাকে না। সত্যি বলতে কী, এতে বিভিন্ন মারাত্মক বিপদ রয়েছে। অনেক ব্যক্তি এমনকী আরও বেশি ঋণের বোঝা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। মুক্ত হয়ে ঈশ্বরকে সেবা করার পরিবর্তে, তারা সেই ব্যক্তিদের সেবা করতে শুরু করে, যাদের কাছ থেকে তারা টাকা ধার করেছে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২২:৭.) বিজ্ঞতার কাজ হল, ঋণ নেওয়া এড়িয়ে চলা।

১১. কীভাবে বাজেট অনুযায়ী চলা পরিবারগুলোকে আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করে?

১১ এডুয়ার্ডো জানতেন যে, পরিবারের সঙ্গে থাকার ব্যাপারে তার সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করতে হলে টাকাপয়সার ব্যাপারে তাকে বাস্তববাদী হতে হবে। কোন কোন বস্তুগত বিষয় আসলেই তাদের প্রয়োজন, সেই বিষয়ে তিনি এবং তার স্ত্রী একটা বাজেট তৈরি করেন। স্বাভাবিকভাবেই, তাদের এই বাজেট তার পরিবার যে-বাজেট অনুযায়ী চলত, সেটার চেয়ে অনেক সীমিত ছিল। কিন্তু, তারা সকলেই সহযোগিতা করেছিল এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পিছনে অযথা টাকাপয়সা খরচ করেনি। * “উদাহরণ স্বরূপ,” এডুয়ার্ডো বলেন, “আমি আমার সন্তানদেরকে প্রাইভেট স্কুল থেকে সরিয়ে ভালো পাবলিক স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলাম।” তিনি এবং তার পরিবার প্রার্থনা করেছিলেন যেন তিনি এমন একটা কাজ খুঁজে পান, যেটার কারণে তাদের আধ্যাত্মিক তালিকা বাধাগ্রস্ত হবে না। কীভাবে যিহোবা তাদের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন?

১২, ১৩. পরিবারকে সমর্থন করার জন্য একজন বাবা কোন ব্যাবহারিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং জীবনকে সাদাসিধে করার ব্যাপারে তার দৃঢ়সংকল্পকে যিহোবা কীভাবে আশীর্বাদ করেছিলেন?

১২ “প্রথম দু-বছর আমাদেরকে অনেক কষ্ট করে চলতে হয়েছিল,” এডুয়ার্ডো বলেন। “আমার জমানো টাকাপয়সা শেষ হয়ে যাচ্ছিল, আমার সামান্য আয় দিয়ে সবসময় সব খরচ মেটানো যেত না এবং শারীরিকভাবেও আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু, আমরা একত্রে প্রতিটা সভাতে উপস্থিত হতে এবং পরিচর্যায় যেতে পারতাম।” এডুয়ার্ডো স্থির করেন যে, তিনি এমনকী সেই চাকরির প্রস্তাবগুলো নিয়ে চিন্তাও করবেন না, যেগুলোর জন্য তাকে পর পর কয়েক মাস অথবা কয়েক বছর পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। “এর পরিবর্তে,” তিনি বলেন, “আমি বিভিন্ন ধরনের কাজ শিখেছিলাম, যাতে কোনো একটা কাজ পাওয়া না গেলেও আমি অন্যটা করতে পারি।”

পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্য আপনি কি বিভিন্ন ধরনের কাজ শিখতে পারেন? (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩ যেহেতু এডুয়ার্ডোকে ধীরে ধীরে ঋণ শোধ করতে হয়েছিল, তাই তিনি আসলে যত টাকা ধার নিয়েছিলেন, তাকে সেটার চেয়ে বেশি সুদ দিতে হয়েছিল। কিন্তু, বাবা-মায়ের জন্য যিহোবা যেমনটা চান, সেই অনুযায়ী পরিবারগতভাবে সমস্ত কিছু একত্রে করার জন্য তিনি এটাকে সামান্য এক মূল্য বলে গণ্য করেছিলেন। “বিদেশে আমি যে-টাকাপয়সা আয় করতাম, এখন আমি সেটার ১০ ভাগের এক ভাগও আয় করি না,” এডুয়ার্ডো বলেন, “কিন্তু আমাদের না খেয়ে থাকতে হয় না। ‘সদাপ্রভুর হস্ত খাট নয়।’ এমনকী, আমরা অগ্রগামীর কাজ করার  সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। শীঘ্র অর্থনৈতিক চাপ কমে গিয়েছিল আর তাই বস্তুগত প্রয়োজনগুলো মেটানো আরও সহজ হয়ে উঠেছিল।”—যিশা. ৫৯:১.

পারিবারিক চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করা

১৪, ১৫. কীভাবে পরিবারগুলো বস্তুগত বিষয়কে আধ্যাত্মিক বিষয়ের আগে রাখার চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে এবং তারা যদি উত্তম উদাহরণ স্থাপন করে, তাহলে এর ফল কী হতে পারে?

১৪ অনেক জায়গায় লোকেরা তাদের আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবকে টাকাপয়সা ও উপহার দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বোধ করে। “এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ আর এগুলো দিতে আমাদেরও ভালো লাগে,” এডুয়ার্ডো ব্যাখ্যা করেন। তিনি আরও বলেন: “কিন্তু এই ব্যাপারেও একটা সীমা রয়েছে। আমি আমার বড়ো পরিবারের কাছে কৌশলতার সঙ্গে ব্যাখ্যা করি যে, আমার নিজ পরিবারের আধ্যাত্মিক চাহিদা এবং তালিকাকে ব্যাহত না করে আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই দেব।”

১৫ বিদেশ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা ও সেইসঙ্গে পরিবার ছেড়ে বিদেশে গিয়ে কাজ করার সুযোগকে পরিহার করে এমন ব্যক্তিরা প্রায়ই সেই আত্মীয়দের রাগ, ঘৃণা এবং হতাশার শিকার হয়, যারা হয়তো তাদেরকে অন্নসংস্থানকারী বলে মনে করে। কেউ কেউ তাদেরকে নির্দয় বলে মনে করে। (হিতো. ১৯:৬, ৭) “তা সত্ত্বেও,” এডুয়ার্ডোর মেয়ে অ্যানা বলেন, “আমরা যখন বস্তুগত সুযোগসুবিধার জন্য আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো ত্যাগ করতে প্রত্যাখ্যান করি, তখন আমাদের কোনো কোনো আত্মীয় হয়তো বুঝতে পারে যে, আমাদের খ্রিস্টীয় জীবনযাপন আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, আমরা যদি তাদের দাবি অনুযায়ী কাজ করি, তাহলে কীভাবে তারা তা বুঝতে পারবে?”—তুলনা করুন, ১ পিতর ৩:১, ২.

ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস দেখিয়ে চলা

১৬. (ক) একজন ব্যক্তি হয়তো কোন ভুল যুক্তি দেখাতে পারেন? (যাকোব ১:২২) (খ) যিহোবা কোন ধরনের সিদ্ধান্তকে আশীর্বাদ করেন?

১৬ সাথি এবং সন্তানদের রেখে আরও সমৃদ্ধ একটা দেশে আসার পর একজন বোন প্রাচীনদের এই কথা বলেছিলেন: “এখানে আসার জন্য আমাদেরকে অনেক বড়ো ত্যাগস্বীকার করতে হয়েছে। আমার স্বামীকে এমনকী একজন প্রাচীনের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়েছে। তাই আমি নিশ্চিত যে, যিহোবা আমার এই বিদেশে আসাকে আশীর্বাদ করবেন।” যিহোবা সবসময় সেই সিদ্ধান্তগুলোকে আশীর্বাদ করেন, যেগুলো তাঁর ওপর বিশ্বাস করে নেওয়া হয়। কিন্তু কীভাবে তিনি এমন সিদ্ধান্তকে আশীর্বাদ করতে পারেন, যা তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় আর এর সঙ্গে যদি বিশেষভাবে অযথা বিভিন্ন সুযোগ হাতছাড়া করার বিষয়টা জড়িত থাকে?—পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৬; ১ যোহন ৫:১৩-১৫.

১৭. কেন আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যিহোবার নির্দেশনা লাভের চেষ্টা করা উচিত এবং কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

 ১৭ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং প্রতিশ্রুতি করার পরে নয় বরং আগে যিহোবার নির্দেশনা লাভের চেষ্টা করুন। পবিত্র আত্মা, প্রজ্ঞা এবং নির্দেশনার জন্য প্রার্থনা করুন। (২ তীম. ১:৭) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘কোন পরিস্থিতিগুলোতে আমি যিহোবার বাধ্য হতে চাই? এমনকী তাড়নার সময়ও কি বাধ্য হতে চাই?’ যদি তা-ই হয়, তাহলে আপনি কি সেই সময়ও তাঁর বাধ্য হতে চাইবেন, যখন এর অর্থ হবে আপনার জীবনযাপনের মানকে একটু নিম্ন করা? (লূক ১৪:৩৩) প্রাচীনদের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় পরামর্শ চান এবং যিহোবার পরামর্শ অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনাকে সাহায্য করার ব্যাপারে তাঁর প্রতিজ্ঞার ওপর বিশ্বাস এবং নির্ভরতা দেখান। প্রাচীনরা আপনার হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কিন্তু তারা আপনাকে এমন বিষয়গুলো বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, যেগুলো পরে দীর্ঘস্থায়ী আনন্দ নিয়ে আসবে।—২ করি. ১:২৪.

১৮. পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর দায়িত্ব কার কিন্তু কোন পরিস্থিতিগুলো হয়তো অন্যদেরও সাহায্য করার সুযোগ করে দেয়?

১৮ যিহোবা পরিবারের একজন মস্তককে পরিবারের রোজকার “ভার” বহন করার দায়িত্ব দিয়েছেন। চাপ এবং প্রলোভন সত্ত্বেও যে-ব্যক্তিরা তাদের সাথি এবং সন্তানদের রেখে দূরে না গিয়ে সেই দায়িত্ব পরিপূর্ণ করে, তাদেরকে আমাদের প্রশংসা করা এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করা উচিত। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি, যেমন দুর্দশা কিংবা জরুরি চিকিৎসা হয়তো আমাদেরকে পরস্পরের প্রতি প্রকৃত খ্রিস্টীয় প্রেম এবং সহানুভূতি দেখানোর সুযোগ করে দেয়। (গালা. ৬:২, ৫; ১ পিতর ৩:৮) আপনি কি জরুরি মুহূর্তে অর্থ দিতে অথবা কোনো সহ-খ্রিস্টানকে কাছাকাছি স্থানে চাকরি পাওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারেন? যদি তা-ই হয়, তাহলে তিনি হয়তো পরিবারকে রেখে গিয়ে অন্য জায়গায় কাজ করার চাপকে কমাতে পারবেন।—হিতো. ৩:২৭, ২৮; ১ যোহন ৩:১৭.

মনে রাখবেন, যিহোবা আপনার সহায়!

১৯, ২০. কেন খ্রিস্টানরা এই বিষয়টা জেনে খুশি হতে পারে যে, যিহোবা তাদেরকে সাহায্য করবেন?

১৯ শাস্ত্র আমাদের এই জোরালো পরামর্শ দেয়: “তোমাদের আচার ব্যবহার ধনাসক্তিবিহীন হউক; তোমাদের যাহা আছে, তাহাতে সন্তুষ্ট থাক; কারণ [ঈশ্বর] বলিয়াছেন, ‘আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।’ অতএব আমরা সাহসপূর্ব্বক বলিতে পারি, ‘ঈশ্বর আমার সহায়, আমি ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিবে?’” (ইব্রীয় ১৩:৫, ৬) কীভাবে এই পরামর্শ কাজে লাগানো যায়?

২০ “লোকেরা প্রায়ই মন্তব্য করে থাকে, যিহোবার সাক্ষিরা সুখী লোক,” উন্নয়নশীল একটা দেশের দীর্ঘসময়ের একজন প্রাচীন বলেন। “এ ছাড়া, তারা লক্ষ করে যে, এমনকী দরিদ্র সাক্ষিরাও সবসময় পরিপাটি বেশে থাকে এবং তাদেরকে অন্যদের চেয়ে ভালো দেখায়।” এই বিষয়টা যারা রাজ্যকে প্রথমে রাখে, তাদের কাছে যিশু যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (মথি ৬:২৮-৩০, ৩৩) হ্যাঁ, আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন এবং আপনার ও আপনার সন্তানদের কেবল মঙ্গলই চান। “সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।” (২ বংশা. ১৬:৯) তিনি আমাদের উপকারের জন্য বিভিন্ন আজ্ঞা দিয়েছেন আর এর মধ্যে পারিবারিক জীবন এবং বস্তুগত বিষয় সম্বন্ধীয় আজ্ঞাও রয়েছে। আমরা যখন সেগুলো পালন করি, তখন আমরা দেখাই যে, আমরা তাঁকে ভালোবাসি এবং তাঁর ওপর নির্ভর করি। “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।”—১ যোহন ৫:৩.

২১, ২২. কেন আপনি যিহোবার ওপর নির্ভরতা দেখানোর জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

২১ “আমি জানি, আমার স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছ থেকে আমি যে-সময়টুকু আলাদা ছিলাম, তা আর কখনো ফিরে পাব না,” এডুয়ার্ডো বলেন, “কিন্তু আমি কেবল এই অনুশোচনা নিয়েই থাকতে চাই না। আমার অনেক পুরোনো সহকর্মী ধনী বটে কিন্তু সুখী না। তাদের পরিবারে বিভিন্ন গুরুতর সমস্যা রয়েছে। কিন্তু, আমাদের পরিবার অনেক সুখী! আর এই বিষয়টা দেখেও আমার অনেক ভালো লাগে যে, এই দেশের ভাইয়েরা এমনকী দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে জীবনে প্রথমে রাখে। আমরা সকলে যিশুর প্রতিজ্ঞার সত্যতা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করছি।”—পড়ুন, মথি ৬:৩৩.

২২ সাহস করুন! যিহোবার বাধ্য হোন এবং তাঁর ওপর নির্ভর করুন। ঈশ্বর, আপনার বিবাহসাথি এবং আপনার সন্তানদের জন্য প্রেম যেন আপনাকে আপনার পরিবারের আধ্যাত্মিক দায়িত্ব পালন করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। এর ফলে আপনি দেখবেন যে, ‘ঈশ্বর আপনার সহায়।’

^ অনু. 1 নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ অনু. 11 ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “যে-ভাবে টাকাপয়সা ব্যবহার করা যায়” শিরোনামের ধারাবাহিক প্রবন্ধ দেখুন।