সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কীভাবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে আমাদের ‘উত্তর দেওয়া’ উচিত?

কীভাবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে আমাদের ‘উত্তর দেওয়া’ উচিত?

“তোমাদের বাক্য সর্ব্বদা অনুগ্রহ সহযুক্ত হউক, . . . কাহাকে কেমন উত্তর দিতে হয়, তাহা যেন তোমরা জানিতে পার।”—কল. ৪:৬.

১, ২. (ক) এমন একটা অভিজ্ঞতা বলুন, যা সঠিকভাবে বাছাই করা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মূল্য সম্বন্ধে তুলে ধরে। (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) কঠিন বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা শুরু হলে, কেন আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই?

বেশ কয়েক বছর আগে, একজন খ্রিস্টান বোন তার অবিশ্বাসী স্বামীর সঙ্গে বাইবেল নিয়ে আলোচনা করছিলেন। অতীতে, তার স্বামী খ্রিস্টীয়জগতের একটা গির্জার একজন নামধারী সদস্য ছিলেন। তাদের আলোচনার সময় তার স্বামী বলেছিলেন যে, তিনি ত্রিত্বে বিশ্বাস করেন। বোন যখন বুঝতে পেরেছিলেন, তার স্বামী হয়তো ত্রিত্বের শিক্ষাটা মূলত কী, তা জানেন না, তখন তিনি কৌশলতার সঙ্গে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তুমি কি এইরকমটা বিশ্বাস করো, ঈশ্বর হলেন ঈশ্বর, যিশু হলেন ঈশ্বর এবং পবিত্র আত্মাও ঈশ্বর; কিন্তু, ঈশ্বর তিন জন নন, বরং একজন?” অবাক হয়ে স্বামী বলেছিলেন, “না, আমি এইরকমটা বিশ্বাস করি না!” এরপর ঈশ্বরের প্রকৃত পরিচিতি নিয়ে এক প্রাণবন্ত আলোচনা শুরু হয়েছিল।

এই অভিজ্ঞতা, কৌশলতাপূর্ণ এবং সঠিকভাবে বাছাই করা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মূল্য সম্বন্ধে তুলে ধরে। এ ছাড়া, এটা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপরও জোর দেয়: কঠিন বিষয়বস্তু, যেমন ত্রিত্ব, নরকাগ্নি অথবা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হলে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা যদি যিহোবার ওপর এবং তাঁর জোগানো প্রশিক্ষণের ওপর নির্ভর করি, তাহলে বেশিরভাগ সময়ই আমরা এমন কার্যকরী উত্তর দিতে পারব, যা হয়তো আমাদের শ্রোতাদের হৃদয়ে গিয়ে  পৌঁছাবে। (কল. ৪:৬) এখন আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, এই ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় কার্যকারী পরিচারকরা কী করে থাকে। আমরা এখন বিবেচনা করব, (১) কীভাবে এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা যায়, যা ব্যক্তির মনের কথা বের করে নিয়ে আসবে, (২) কীভাবে শাস্ত্র যা বলে, তা নিয়ে যুক্তি করা যায় এবং (৩) কীভাবে আমাদের বিষয়বস্তুকে স্পষ্ট করার জন্য দৃষ্টান্ত ব্যবহার করা যায়।

এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন, যা আপনার শ্রোতার মনের কথা বের করে নিয়ে আসবে

৩, ৪. একজন ব্যক্তি কী বিশ্বাস করেন, তা বোঝার জন্য কেন প্রশ্ন ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ? একটা উদাহরণ দিন।

প্রশ্ন আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, একজন ব্যক্তি আসলে কী বিশ্বাস করেন। কেন তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ? হিতোপদেশ ১৮:১৩ পদ বলে, “শুনিবার পূর্ব্বে যে উত্তর করে, তাহা তাহার পক্ষে অজ্ঞানতা ও অপমান।” সত্যিই, একটা নির্দিষ্ট বিষয় সম্বন্ধে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা শুরু করার আগে, আমাদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে যে, আমাদের শ্রোতা আসলে কী বিশ্বাস করেন। তা না হলে, আমরা হয়তো এমন একটা ধারণা খণ্ডন করার জন্য অনেক সময় ব্যয় করব, যা তিনি বিশ্বাসই করেন না!—১ করি. ৯:২৬.

ধরুন, কারো সঙ্গে আমরা নরকাগ্নি সম্বন্ধে আলোচনা করছি। সকলেই এমনটা বিশ্বাস করে না যে, নরক হল অগ্নিময় যাতনার এক আক্ষরিক স্থান। তাই আমরা বলতে পারি: “যেহেতু নরক সম্বন্ধে লোকেদের ভিন্ন ভিন্ন ধারণা রয়েছে, তাই আমি কি জানতে পারি, আপনি কী মনে করেন?” সেই ব্যক্তির উত্তর শোনার পর, আমরা তাকে এই বিষয়ে বাইবেল আসলে কী বলে, তা আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারব।

৫. কেন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা আমাদের বুঝতে সাহায্য করতে পারে যে, একজন ব্যক্তি যা বিশ্বাস করেন, তা তিনি কেন করেন?

এ ছাড়া, কৌশলতাপূর্ণ প্রশ্ন আমাদের এটা জানতেও সাহায্য করতে পারে যে, একজন ব্যক্তি যা বিশ্বাস করেন, তা তিনি কেন করেন। উদাহরণ স্বরূপ, পরিচর্যায় গিয়ে আমাদের যদি এমন কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, যিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না, তাহলে? আমরা হয়তো সহজেই ধরে নিতে পারি, সেই ব্যক্তি বিবর্তনবাদের মতো জাগতিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। (গীত. ১০:৪) কিন্তু, কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে অন্যদেরকে চরম দুঃখকষ্ট ভোগ করতে দেখার কিংবা নিজে তা ভোগ করার কারণে ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। তাদের জন্য হয়তো একজন প্রেমময় সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের সঙ্গে এই ধরনের দুঃখকষ্টের মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন বলে মনে হয়। তাই, একজন গৃহকর্তা যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেন, তাহলে আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি: “ঈশ্বর সম্বন্ধে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি সবসময় এইরকমই ছিল?” সেই ব্যক্তি যদি বলেন, না, তাহলে আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি, কোনো নির্দিষ্ট কারণে তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছেন কি না। তার উত্তর হয়তো আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, কোন উত্তম উপায়ে আমরা তাকে আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করতে পারি।—পড়ুন, হিতোপদেশ ২০:৫.

৬. একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পর আমাদের কী করা উচিত?

একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পর, সেই ব্যক্তির উত্তর শোনা এবং তার অনুভূতি বোঝা প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ, কেউ হয়তো বলতে পারে যে, একটা দুঃখজনক ঘটনার কারণে তিনি একজন প্রেমময় সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছেন। ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে প্রমাণ দেওয়ার আগে, সেই ব্যক্তির প্রতি আমাদের সহানুভূতি দেখানো উচিত এবং তাকে বলা উচিত, আমরা যে-দুঃখকষ্ট ভোগ করছি, সেটা নিয়ে চিন্তা করা ভুল নয়। (হবক্‌. ১:২, ৩) আমাদের ধৈর্য এবং প্রেম হয়তো তাকে আরও জানার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে। *

শাস্ত্র যা বলে, তা নিয়ে যুক্তি করুন

পরিচর্যায় আমাদের কার্যকারিতা কীসের ওপর নির্ভর করে? (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. পরিচর্যায় আমাদের বেশিরভাগ কার্যকারিতা কীসের ওপর নির্ভর করে?

আসুন, এখন আমরা বিবেচনা করি যে, কীভাবে শাস্ত্র থেকে যুক্তি করা যায়। অবশ্যই, পরিচর্যায় আমাদের প্রধান হাতিয়ার হল বাইবেল। এটি আমাদেরকে “পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” হতে সাহায্য করে। (২ তীম. ৩:১৬, ১৭) পরিচর্যায় আমাদের বেশিরভাগ কার্যকারিতা, আমরা কয়টি শাস্ত্রপদ পড়ি, সেটার ওপর নয়, বরং যেগুলো পড়ি, সেগুলো নিয়ে কীভাবে প্রসঙ্গ বা যুক্তি করি এবং ব্যাখ্যা করি, সেটার ওপর নির্ভর  করে। (পড়ুন, প্রেরিত ১৭:২, ৩.) বিষয়টা উদাহরণের সাহায্যে বোঝার জন্য পরবর্তী তিনটে দৃশ্যপট বিবেচনা করুন।

৮, ৯. (ক) সেই ব্যক্তির সঙ্গে যুক্তি করার একটা উপায় কী, যিনি বিশ্বাস করেন যে, যিশু হলেন ঈশ্বরের সমান? (খ) এই বিষয়ের ওপর অন্য আর কোন যুক্তিকে আপনার কাছে কার্যকরী বলে মনে হয়েছে?

দৃশ্যপট ১: পরিচর্যায় আমাদের এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, যিনি বিশ্বাস করেন, যিশু হলেন ঈশ্বরের সমান। এই ক্ষেত্রে যুক্তি করার জন্য আমরা কোন শাস্ত্রপদগুলো ব্যবহার করতে পারি? আমরা হয়তো সেই ব্যক্তিকে যোহন ৬:৩৮ পদ পড়ার জন্য বলতে পারি, যেখানে যিশু এই কথাগুলো বলেছেন: “আমার ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসি নাই, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহারই ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য।” সেই পদ বিবেচনা করার পর, আমরা ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করতে পারি: “যিশু যদি ঈশ্বর হয়ে থাকেন, তাহলে কে তাঁকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন? তিনি কি যিশুর চেয়ে মহান নন? কারণ, যিনি প্রেরণ করেন, তিনি যাকে পাঠান, তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।”

একই যুক্তি ব্যবহার করে, আমরা ফিলিপীয় ২:৯ পদ পড়তে পারি, যেখানে প্রেরিত পৌল, যিশু মারা যাওয়ার এবং পুনরুত্থিত হওয়ার পর ঈশ্বর কী করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে বর্ণনা করেছেন। এই পদ বলে: “ঈশ্বর তাঁহাকে [যিশুকে] অতিশয় উচ্চপদান্বিতও করিলেন, এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” ওই ব্যক্তিকে সেই শাস্ত্রপদের ওপর যুক্তি করতে সাহায্য করার জন্য আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি: “যিশু মারা যাওয়ার আগে যদি ঈশ্বরের সমান হয়ে থাকেন এবং পরবর্তী সময়ে ঈশ্বর তাঁকে এক উচ্চপদ দেন, তাহলে যিশু কি ঈশ্বরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবেন না? কিন্তু, কীভাবে কেউ ঈশ্বরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে?” সেই ব্যক্তি যদি ঈশ্বরের বাক্যকে সম্মান করেন এবং আন্তরিক হয়ে থাকেন, তাহলে এই ধরনের যুক্তি হয়তো তাকে বিষয়টা নিয়ে আরও পরীক্ষা করে দেখতে অনুপ্রাণিত করবে।—প্রেরিত ১৭:১১.

১০. (ক) নরকাগ্নিতে বিশ্বাস করেন এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে আমরা কীভাবে যুক্তি করতে পারি? (খ) নরকাগ্নি সম্বন্ধে আলোচনা করার সময় কোন যুক্তিকে আপনার কাছে কার্যকরী বলে মনে হয়েছে?

১০ দৃশ্যপট ২: একজন ধর্মপ্রাণ গৃহকর্তার পক্ষে এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, খারাপ লোকেরা চিরকাল নরকাগ্নিতে যাতনা ভোগ করবে না। দুষ্ট লোকেদেরকে তাদের মন্দ কাজের জন্য শাস্তি পেতে দেখার আকাঙ্ক্ষার কারণেই তিনি হয়তো নরকাগ্নিতে বিশ্বাস করেন। যিনি এইরকমটা মনে করেন, তার সঙ্গে কীভাবে আমরা যুক্তি করতে পারি? প্রথমত, আমরা তাকে এই আশ্বাস দিতে পারি যে, দুষ্ট লোকেদের শাস্তি দেওয়া হবে। (২ থিষল. ১:৯) এরপর, আমরা হয়তো তাকে আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭ পদ দেখাতে পারি, যেখানে বলা আছে, পাপের শাস্তি হল মৃত্যু। আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি, আদমের পাপের কারণেই মানবজাতি পাপী হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। (রোমীয় ৫:১২) কিন্তু, আমরা উল্লেখ করতে পারি, ঈশ্বর নরকাগ্নিতে শাস্তি লাভ করা সম্বন্ধে কিছুই বলেননি। এরপর, আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি, “আদম ও হবা যদি চিরকাল যাতনা ভোগ করার ঝুঁকির মুখে থাকত, তাহলে তাদেরকে সেই সম্বন্ধে সাবধান করে দেওয়া কি ন্যায্য হতো না?” তারপর আমরা আদিপুস্তক ৩:১৯ পদ পড়তে পারি, যেখানে তাদের  পাপ করার পর শাস্তি সম্বন্ধে ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু নরকাগ্নি সম্বন্ধে কিছুই বলা হয়নি। এর পরিবর্তে, আদমকে বলা হয়েছিল যে, সে ধুলোতে প্রতিগমন করবে। আমরা হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারি: “আদমকে যদি আসলেই এক অগ্নিময় নরকে যেতে হতো, তাহলে সে ধুলোতে ফিরে যাবে, এই কথা বলা কি ন্যায়সংগত ছিল?” সেই ব্যক্তি যদি খোলা মনের হয়ে থাকেন, তাহলে এই প্রশ্ন হয়তো তাকে বিষয়টা নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে পরিচালিত করবে।

১১. (ক) সেই ব্যক্তির সঙ্গে যুক্তি করার একটা উপায় কী, যিনি বিশ্বাস করেন যে, সমস্ত ভালো লোক স্বর্গে যায়? (খ) স্বর্গে যাওয়ার বিষয়ে কোন যুক্তিকে আপনার কাছে কার্যকরী বলে মনে হয়েছে?

১১ দৃশ্যপট ৩: পরিচর্যায় আমাদের এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়, যিনি বিশ্বাস করেন, সমস্ত ভালো লোক স্বর্গে যায়। এই ধরনের বিশ্বাস, গৃহকর্তা বাইবেলকে যেভাবে বোঝেন, সেটার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, ধরুন আমরা তার সঙ্গে প্রকাশিত বাক্য ২১:৪ পদ নিয়ে আলোচনা করছি। (পড়ুন।) সেই ব্যক্তি হয়তো মনে করতে পারেন, এই পদের মধ্যে যে-আশীর্বাদের কথা বলা হয়েছে, তা কেবল স্বর্গে জীবনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কীভাবে আমরা তার সঙ্গে যুক্তি করতে পারি? প্রমাণ করার জন্য আরও শাস্ত্রপদ ব্যবহার করার পরিবর্তে, আমরা ঠিক সেই শাস্ত্রপদেরই একটা বিষয়ের ওপর মনোযোগ আকর্ষণ করাতে পারি। এটা বলে, “মৃত্যু আর হইবে না।” আমরা তাকে বলতে পারি, কোনো কিছু আর হবে না বলা হলে, সেটা পূর্বে থাকতে হবে। আপনি কি এই বিষয়ে একমত? তিনি হয়তো বলবেন, হ্যাঁ। এরপর আমরা উল্লেখ করতে পারি, স্বর্গে মৃত্যু বলতে কিছু নেই; কেবল পৃথিবীতেই লোকেরা মারা যায়। তাই, যুক্তিযুক্তভাবেই প্রকাশিত বাক্য ২১:৪ পদ নিশ্চয়ই এই দেশে বা পৃথিবীতে ভাবী আশীর্বাদ সম্বন্ধে উল্লেখ করছে।—গীত. ৩৭:২৯.

বিষয়বস্তুকে স্পষ্ট করার জন্য দৃষ্টান্ত ব্যবহার করুন

১২. কেন যিশু দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতেন?

১২ প্রশ্ন ব্যবহার করা ছাড়াও, যিশু তাঁর প্রচার কাজের সময় দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতেন। (পড়ুন, মথি ১৩:৩৪, ৩৫.) যিশুর দৃষ্টান্ত তাঁর শ্রোতাদের মনোভাব প্রকাশ করতে সাহায্য করত। (মথি ১৩:১০-১৫) এ ছাড়া, দৃষ্টান্ত যিশুর শিক্ষাকে আগ্রহজনক ও স্মরণীয় করে তুলত। কীভাবে আমরা নিজেরা শিক্ষা দেওয়ার সময় দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতে পারি?

১৩. কীভাবে আমরা তুলে ধরতে পারি যে, ঈশ্বর যিশুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ?

১৩ বেশিরভাগ সময়ই সহজসরল দৃষ্টান্ত ব্যবহার করা উত্তম। উদাহরণ স্বরূপ, ঈশ্বর যে যিশুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তা ব্যাখ্যা করার সময় আমরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করার চেষ্টা করতে পারি। ঈশ্বর এবং যিশু উভয়ই তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক সম্বন্ধে বর্ণনা করার সময় এক পারিবারিক বন্ধন ব্যবহার করেছিলেন। ঈশ্বর যিশুকে তাঁর পুত্র হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন এবং যিশু ঈশ্বরকে তাঁর পিতা বলে অভিহিত করেছিলেন। (লূক ৩:২১, ২২; যোহন ১৪:২৮) এরপর, আমরা গৃহকর্তাকে জিজ্ঞেস করতে পারি: “আপনি যদি আমাকে সমান দু-জন ব্যক্তি সম্বন্ধে শেখাতে চান, তাহলে বিষয়টা বোঝানোর জন্য আপনি কোন ধরনের পারিবারিক সম্পর্ক ব্যবহার করবেন?” সেই ব্যক্তি হয়তো দু-জন আপন ভাই অথবা বোনের, এমনকী যমজ ভাই অথবা বোনের কথা বলতে পারেন। তিনি যদি তা বলেন, তাহলে আমরা বলতে পারি, এই তুলনাটাই মনে আসা স্বাভাবিক। এরপর আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি: “আপনার এবং আমার মনে যদি এত সহজেই এই দৃষ্টান্ত আসে, তাহলে মহান শিক্ষক যিশুর মনেও কি একই তুলনা আসা স্বাভাবিক নয়? এর পরিবর্তে, তিনি ঈশ্বরকে তাঁর পিতা বলে উল্লেখ করেছেন। এভাবে যিশু ঈশ্বরকে তাঁর চেয়ে বড়ো এবং তাঁর চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান হিসেবে তুলে ধরেছেন।”

১৪. কোন দৃষ্টান্ত দেখায় যে, নরকাগ্নিতে লোকেদের যাতনা দেওয়ার জন্য দিয়াবলকে অনুমতি দেওয়া ঈশ্বরের পক্ষে অযৌক্তিক হবে?

১৪ আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। কেউ কেউ মনে করে, নরকাগ্নি শয়তানের “অধীনে” রয়েছে। একটা দৃষ্টান্ত হয়তো কোনো বাবা অথবা মাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে, নরকাগ্নিতে লোকেদের যাতনা দেওয়ার জন্য দিয়াবলকে অনুমতি দেওয়া ঈশ্বরের পক্ষে কত অযৌক্তিক। আমরা এইরকম কিছু বলতে পারি: “কল্পনা করুন, আপনার সন্তান অত্যন্ত বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে এবং অনেক খারাপ কাজ করছে। আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন?” বাবা অথবা মা হয়তো উত্তর দেবেন, তিনি তার সন্তানকে সংশোধন করার চেষ্টা করবেন। তিনি হয়তো সন্তানকে খারাপ কাজ বন্ধ করতে সাহায্য করার জন্য বার বার চেষ্টা করবেন।  (হিতো. ২২:১৫) তখন আমরা হয়তো বাবা কিংবা মাকে জিজ্ঞেস করতে পারি, তার সন্তান যদি তাকে সাহায্য করার সমস্ত প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তিনি কী করবেন। অধিকাংশ বাবা-মা উত্তর দেবে, পরিশেষে সন্তানকে শাস্তি দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। এরপর আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি: “আপনি যদি জানতে পারেন, একজন মন্দ ব্যক্তি আপনার সন্তানকে বিদ্রোহী হয়ে ওঠার জন্য প্ররোচিত করেছে, তাহলে?” কোনো সন্দেহ নেই, এতে বাবা কিংবা মা সেই ব্যক্তির ওপর রেগে যাবেন। দৃষ্টান্তের মূল বিষয়টা বোঝানোর জন্য, আমরা হয়তো বাবা কিংবা মাকে জিজ্ঞেস করতে পারি, “একজন মন্দ ব্যক্তি আপনার সন্তানকে প্ররোচিত করেছে জানার পরও কি আপনি সেই ব্যক্তিকে আপনার সন্তানকে শাস্তি দেওয়ার অনুমতি দেবেন?” নিশ্চিতভাবেই, এর উত্তর হবে না। তাহলে, স্পষ্টতই ঈশ্বর ঠিক সেই লোকেদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য শয়তানকে ব্যবহার করবেন না, যাদেরকে স্বয়ং দিয়াবলই মন্দ বিষয়গুলো করার জন্য প্ররোচিত করেছে!

এক ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

১৫, ১৬. (ক) কেন আমাদের এইরকম আশা করা উচিত নয় যে, যাদের কাছে আমরা প্রচার করি, তারা প্রত্যেকেই রাজ্যের বার্তা গ্রহণ করবে? (খ) কার্যকরীভাবে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের কি বিশেষ দক্ষতা থাকতে হবে? ব্যাখ্যা করুন। (এ ছাড়া, “এমন এক হাতিয়ার, যা আমাদেরকে উত্তর দিতে সাহায্য করে” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

১৫ আমরা জানি, যাদের কাছে আমরা প্রচার করি, তারা প্রত্যেকেই রাজ্যের বার্তা গ্রহণ করবে না। (মথি ১০:১১-১৪) এটা সেই সময়ও সত্য, যখন আমরা একেবারে সঠিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি, সর্বোত্তম যুক্তি ব্যবহার করি এবং চমৎকার দৃষ্টান্ত তুলে ধরি। এমনকী পৃথিবীর সর্বমহান শিক্ষক যিশুর শিক্ষার প্রতিও খুব কম লোকই সাড়া দিয়েছিল।—যোহন ৬:৬৬; ৭:৪৫-৪৮.

১৬ অন্যদিকে, আমরা যদি মনে করি, আমাদের বিশেষ দক্ষতা নেই, তবুও আমরা পরিচর্যায় কার্যকারী হতে পারি। (পড়ুন, প্রেরিত ৪:১৩.) ঈশ্বরের বাক্য আমাদের এটা বিশ্বাস করার জোরালো কারণ জোগায় যে, “যত লোক অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত [“সঠিক প্রবণতা সম্পন্ন,” NW],” তারা সকলে সুসমাচার গ্রহণ করবে। (প্রেরিত ১৩:৪৮) তাই, আসুন আমরা নিজেদের ও সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে এক ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলি, যাদেরকে আমরা রাজ্যের সুসমাচার জানানোর চেষ্টা করি। যিহোবার দ্বারা জোগানো প্রশিক্ষণ থেকে আমরা যেন পূর্ণ উপকার লাভ করি এবং এই আস্থা রাখি যে, তা আমাদেরকে এবং যারা আমাদের কথা শোনে, তাদেরকে উপকৃত করবে। (১ তীম. ৪:১৬) প্রত্যেক মানুষকে কীভাবে ‘উত্তর দেওয়া’ উচিত, তা বোঝার জন্য যিহোবা আমাদের সাহায্য করতে পারেন। পরবর্তী সময়ে আমরা যেমন দেখতে পাব, আমাদের পরিচর্যায় সফল হওয়ার একটা উপায় হল সেই নিয়ম অনুসরণ করা, যেটাকে প্রায়ই সুবর্ণ নিয়ম বলা হয়।

^ অনু. 6 ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার “একজন সৃষ্টিকর্তার ওপর কি বিশ্বাস গড়ে তোলা সম্ভব?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।