সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আদর্শ প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করুন—প্রথম ভাগ

আদর্শ প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করুন—প্রথম ভাগ

“তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।”—মথি ৬:৯.

১. আমরা যখন প্রচার করি, তখন মথি ৬:৯-১৩ পদে উল্লেখিত যিশুর প্রার্থনা কীভাবে ব্যবহার করতে পারি?

অনেকেই মথি ৬:৯-১৩ পদে উল্লেখিত প্রার্থনার কথাগুলোর সঙ্গে পরিচিত। আমরা যখন প্রচার করি, তখন আমরা এই প্রার্থনার কথাগুলো ব্যবহার করে লোকেদের এটা শিক্ষা দিই, ঈশ্বরের রাজ্য হল এক বাস্তব সরকার, যা পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবে। এ ছাড়া, ঈশ্বরের যে একটা নাম রয়েছে এবং সেটাকে যে পবিত্র বলে গণ্য করতে হবে, তা দেখানোর জন্য আমরা এই কথাগুলো ব্যবহার করি, “তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।”—মথি ৬:৯.

২. কীভাবে আমরা বলতে পারি, যিশু চাননি যেন প্রতি বার প্রার্থনা করার সময় আমরা একই কথা পুনরুক্তি করি?

যিশু কি চেয়েছিলেন যেন প্রতি বার প্রার্থনা করার সময় আমরা একই কথা পুনরুক্তি করি, যেমনটা অনেকে করে থাকে? না। যিশু বলেছিলেন: “প্রার্থনাকালে তোমরা অনর্থক পুনরুক্তি করিও না।” (মথি ৬:৭) আরেক বার, তিনি যখন তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনার বিষয়ে শিক্ষা দিচ্ছিলেন, তখন তিনি আবারও একই প্রার্থনা উল্লেখ করেছিলেন, তবে হুবহু একই শব্দ ব্যবহার করেননি। (লূক ১১:১-৪) তাই, কোন বিষয়গুলোর জন্য আমাদের প্রার্থনা করা প্রয়োজন, তা শিক্ষা দেওয়ার জন্য যিশু আমাদের এক আদর্শ প্রার্থনার নমুনা দেখিয়েছিলেন।

৩. আদর্শ প্রার্থনা নিয়ে অধ্যয়ন করার সময় আপনি নিজেকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারেন?

এই প্রবন্ধে এবং পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা আদর্শ প্রার্থনা নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করব। তা করার সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘কীভাবে এই প্রার্থনা আমার নিজের প্রার্থনার গুণগত মানকে বাড়ানোর জন্য সাহায্য করতে পারে?’ এ ছাড়া, আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ‘আমি কি আদর্শ প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করছি?’

“হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ”

৪. ‘আমাদের পিতঃ’ কথাগুলো আমাদের কী মনে করিয়ে দেয় আর কীভাবে যিহোবা আমাদের পিতা?

যিশু এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে প্রার্থনা শুরু করেছিলেন, ‘হে আমাদের পিতঃ।’ এই কথাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যিহোবা হলেন বিশ্বব্যাপী আমাদের সকল ভাই-বোনের পিতা। (১ পিতর ২:১৭) যাদেরকে যিহোবা স্বর্গে বাস করার জন্য বেছে নিয়েছেন, তাদের তিনি তাঁর পুত্র হিসেবে দত্তক নিয়েছেন আর তাই সত্যিকার অর্থেই তিনি তাদের পিতা। (রোমীয় ৮:১৫-১৭) আর যারা পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকবে, তারাও তাঁকে “পিতঃ” বলে ডাকতে পারে। কারণ যিহোবা তাদের জীবন দিয়েছেন এবং প্রেমের সঙ্গে তাদের প্রয়োজনগুলো জোগান। তারা সিদ্ধতায় পৌঁছানোর এবং চূড়ান্ত পরীক্ষায় যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার পর তাদেরকে ‘ঈশ্বরের সন্তান’ বলা হবে।—রোমীয় ৮:২১; প্রকা. ২০:৭, ৮.

৫, ৬. বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সবচেয়ে উত্তম কোন উপহার দিতে পারেন আর এই উপহার সম্বন্ধে সন্তানদের দায়িত্ব কী? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

বাবা-মায়েরা যখন তাদের সন্তানদের প্রার্থনা করতে শিক্ষা দেন এবং যিহোবাকে একজন যত্নশীল পিতা হিসেবে দেখতে সাহায্য করেন, তখন তারা তাদের সন্তানদের এক চমৎকার উপহার দান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার একজন সীমা অধ্যক্ষ বলেন: “আমাদের মেয়েদের জন্মের পর থেকেই আমি তাদের সঙ্গে রাতের বেলা প্রার্থনা করতাম। আমি বাড়ি থেকে দূরে না থাকলে, তা কখনোই বাদ যেত না। মেয়েরা সবসময় বলে, রাতের সেই প্রার্থনার কথাগুলো হুবহু তাদের মনে নেই। তবে, সেই সময়কার পরিবেশ তাদের মনে আছে। আমাদের পিতা যিহোবার সঙ্গে ভাববিনিময় করার সময় এক পবিত্র পরিবেশ বজায় রাখা হতো এবং তারা প্রশান্তি ও সুরক্ষা অনুভব করত। তারা যখন প্রার্থনা করতে শিখেছিল, তখন আমি তাদের আমার সামনে জোরে জোরে প্রার্থনা করার জন্য উৎসাহিত করেছিলাম, যাতে যিহোবার কাছে তারা কীভাবে তাদের চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি প্রকাশ করে, তা আমি শুনতে পারি। এটা ছিল তাদের হৃদয়ের অবস্থা সম্বন্ধে ধারণা লাভ করার এক চমৎকার সুযোগ। এরপর, আমি আদর্শ প্রার্থনার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো যুক্ত করার জন্য তাদের কোমলভাবে প্রশিক্ষণ দিতাম, যাতে তাদের প্রার্থনা আরও অর্থপূর্ণ হতে পারে।”

এমনকী বড়ো হওয়ার পরও তারা যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তারা এখন বিবাহিত এবং তাদের স্বামীদের সঙ্গে পূর্ণসময়ের সেবা করছেন। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সবচেয়ে উত্তম যে-উপহার দিতে পারেন তা হল, তাদের এই শিক্ষা দেওয়া, যিহোবা হলেন একজন বাস্তব ব্যক্তি এবং তারা তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হতে পারে। তবে, যিহোবার সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব বজায় রাখা প্রত্যেক সন্তানের নিজ দায়িত্ব।—গীত. ৫:১১, ১২; ৯১:১৪.

“তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক”

৭. আমাদের কোন বিশেষ সুযোগ রয়েছে কিন্তু আমাদের কী করতে হবে?

ঈশ্বরের নাম জানার এবং ‘তাঁহার নামের জন্য এক দল প্রজা’ হওয়ার এক বিশেষ সুযোগ আমাদের রয়েছে। (প্রেরিত ১৫:১৪; যিশা. ৪৩:১০) আমরা যিহোবার কাছে এই বিনতি করি, “তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” এইরকম অনুরোধ করার মাধ্যমে আপনি হয়তো যিহোবার কাছে এই সাহায্য চাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হন, যেন আপনি এমন কিছু করা অথবা বলা এড়িয়ে চলতে পারেন, যা তাঁর নামের জন্য অসম্মান নিয়ে আসবে। আমাদের প্রথম শতাব্দীর সেই ব্যক্তিদের মতো হওয়া উচিত নয়, যারা অন্যদের যা শিক্ষা দিত, তা নিজেরাই পালন করত না। পৌল তাদের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “তোমাদের হইতে জাতিগণের মধ্যে ঈশ্বরের নাম নিন্দিত হইতেছে।”—রোমীয় ২:২১-২৪.

৮, ৯. যারা যিহোবার নামকে পবিত্রীকৃত করতে চায়, তাদের তিনি যেভাবে সাহায্য করেন, সেটার একটা উদাহরণ দিন।

ঈশ্বরের নামের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য আমরা যথাসাধ্য করি। নরওয়ের একজন বোন, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর একা হয়ে পড়েন। তার দু-বছরের এক ছেলে ছিল। তিনি বলেন: “সেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। আমি প্রতিদিন, প্রায় প্রতিটা মুহূর্তে শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করতাম, যাতে আমি আবেগগতভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি। কারণ আমি চাইনি, আমার কোনো মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত অথবা অবিশ্বস্ত কাজের কারণে শয়তান যিহোবাকে টিটকারি দেওয়ার সুযোগ পায়। আমি যিহোবার নামকে পবিত্রীকৃত করতে চেয়েছিলাম ও সেইসঙ্গে চেয়েছিলাম যেন আমার ছেলে পরমদেশে আবারও তার বাবাকে দেখতে পায়।”—হিতো. ২৭:১১.

যিহোবা কি সেই বোনের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন? হ্যাঁ। ভাই-বোনদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে মেলামেশা করার মাধ্যমে বোন অনেক উৎসাহ পেয়েছিলেন। পাঁচ বছর পর তিনি একজন প্রাচীন ভাইকে বিয়ে করেছিলেন। বোনের ছেলের বয়স এখন ২০ বছর আর তিনি একজন বাপ্তাইজিত ভাই। বোন বলেন: “তাকে মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে আমার স্বামী আমাকে সাহায্য করেছে বলে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।”

১০. কীভাবে ঈশ্বর পুরোপুরিভাবে তাঁর নামকে পবিত্রীকৃত করবেন?

১০ যারা ‘সদাপ্রভুকে [‘যিহোবাকে,’ NW]’ অসম্মান করে এবং তাঁকে তাদের শাসক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের সকলকে যখন যিহোবা দূর করে দেবেন, তখন তিনি পুরোপুরিভাবে তাঁর নামকে পবিত্রীকৃত করবেন। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৮:২২, ২৩.) সেই সময়ে লোকেরা সিদ্ধতায় পৌঁছাবে আর স্বর্গে ও পৃথিবীতে বসবাসরত প্রত্যেকে যিহোবার উপাসনা করবে এবং তাঁর পবিত্র নামের প্রতি সম্মান নিয়ে আসবে। অবশেষে, আমাদের প্রেমময় পিতা “সর্ব্বেসর্ব্বা” হবেন।—১ করি. ১৫:২৮.

“তোমার রাজ্য আইসুক”

১১, ১২. যিহোবা ১৮৭৬ সালে তাঁর লোকেদের কী বুঝতে সাহায্য করেছিলেন?

১১ যিশু স্বর্গে ফিরে যাওয়ার আগে, তাঁর শিষ্যরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “প্রভু, আপনি কি এই সময়ে ইস্রায়েলের হাতে রাজ্য ফিরাইয়া আনিবেন?” যিশু তাদের উত্তর দিয়েছিলেন, কখন ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করতে শুরু করবে, তা জানার সময় তখনও আসেনি। তিনি তাঁর শিষ্যদের গুরুত্বপূর্ণ প্রচার কাজের উপর মনোযোগ দিতে বলেছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ১:৬-৮.) তবে, একইসঙ্গে তিনি তাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্য আসার বিষয়ে প্রার্থনা করতে এবং সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে শিক্ষা দিয়েছিলেন। এই কারণে আমরা এখনও ঈশ্বরের রাজ্য আসার বিষয়ে প্রার্থনা করি।

১২ যিশুর জন্য যখন স্বর্গে শাসন করার সময় এগিয়ে এসেছিল, তখন যিহোবা তাঁর লোকেদের বুঝতে সাহায্য করেছিলেন, কোন বছর যিশু শাসন শুরু করবেন। ১৮৭৬ সালে, চার্লস টেজ রাসেল একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যেটার শিরোনাম হল, “পরজাতিদের সময়: কখন শেষ হবে?” তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা “সাত কাল” এবং যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা “জাতিগণের সময়,” একই সময়কে নির্দেশ করে। ওই প্রবন্ধের মধ্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, সেই সময় ১৯১৪ সালে শেষ হবে। *দানি. ৪:১৬; লূক ২১:২৪.

১৩. উনিশ-শো চোদ্দো সালে কী ঘটেছিল আর সেই সালের পর থেকে, জগতের ঘটনাগুলো কী প্রমাণ দেয়?

১৩ উনিশ-শো চোদ্দো সালে, ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং শীঘ্র তা পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের কারণে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। আর যুদ্ধের শেষের দিকে ১৯১৮ সালে, এক মারাত্মক ফ্লুর কারণে, যুদ্ধে যত লোক নিহত হয়েছিল, সেটার চেয়েও বেশি লোক মারা গিয়েছিল। এই বিষয়গুলো যিশুর বলা ‘চিহ্নের’ অংশ ছিল। চিহ্ন প্রমাণ দিয়েছিল, ১৯১৪ সালে যিশু স্বর্গে রাজা হয়েছেন। (মথি ২৪:৩-৮; লূক ২১:১০, ১১) সেই বছর, তিনি ‘জয় করিতে করিতে ও জয় করিবার জন্য বাহির হইয়াছিলেন।’ (প্রকা. ৬:২) যিশু স্বর্গ থেকে শয়তান ও তার মন্দদূতদের পৃথিবীতে নিক্ষেপ করেছিলেন। এরপর, এই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল: “পৃথিবী ও সমুদ্রের সন্তাপ হইবে; কেননা দিয়াবল তোমাদের নিকটে নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।”—প্রকা. ১২:৭-১২.

১৪. (ক) কেন এখনও আমরা ঈশ্বরের রাজ্য আসার জন্য প্রার্থনা করি? (খ) এখন আমাদের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে?

১৪ প্রকাশিত বাক্য ১২ অধ্যায়ে উল্লেখিত সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, যিশু যখন ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হয়েছিলেন, তখন থেকে কেন পৃথিবীতে ভয়ংকর বিষয়গুলো ঘটতে শুরু করেছে। যদিও যিশু স্বর্গে শাসন করছেন, তবে পৃথিবীতে এখনও শয়তান শাসন করছে। কিন্তু, পৃথিবী থেকে সমস্ত দুষ্টতা দূর করার মাধ্যমে শীঘ্র যিশু ‘জয় করিবেন’ বা তাঁর জয় সম্পন্ন করবেন। সেই সময়ের আগে পর্যন্ত, আমাদের ক্রমাগত ঈশ্বরের রাজ্য আসার জন্য প্রার্থনা করতে হবে এবং সেই রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করার জন্য ব্যস্ত থাকতে হবে। আমাদের এই রাজ্যের প্রচার কাজের মাধ্যমে যিশুর এই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—মথি ২৪:১৪.

‘তোমার ইচ্ছা পৃথিবীতে সিদ্ধ হউক’

১৫, ১৬. ঈশ্বরের ইচ্ছা পৃথিবীতে পরিপূর্ণ হওয়ার বিষয়ে কেবল প্রার্থনা করাই কি যথেষ্ট? ব্যাখ্যা করুন।

১৫ প্রায় ৬,০০০ বছর আগে, পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পরিপূর্ণ হয়েছিল। এই কারণে ঈশ্বর বলেছিলেন, সকলই “অতি উত্তম।” (আদি. ১:৩১) এরপর শয়তান বিদ্রোহ করেছিল আর সেই সময় থেকে অধিকাংশ লোক ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেনি। কিন্তু, বর্তমানে প্রায় ৮০ লক্ষ লোক যিহোবার সেবা করছে। তারা প্রার্থনা করে, যেন পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পরিপূর্ণ হয় ও সেইসঙ্গে তারা নিজেরাও যেন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে। তারা ঈশ্বরকে খুশি করে এমন উপায়ে জীবনযাপন করে এবং উদ্যোগের সঙ্গে তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে অন্যদেরকে শিক্ষা দেয়।

আপনি কি আপনার সন্তানদের ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য শিক্ষা দিচ্ছেন? (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬ উদাহরণ স্বরূপ, আফ্রিকার ৮০ বছর বয়সি একজন মিশনারি বোনের কথা বিবেচনা করুন, যিনি ১৯৪৮ সালে বাপ্তিস্ম নিয়েছেন। তিনি বলেন: “আমি সবসময় প্রার্থনা করি, যাতে সমস্ত মেষতুল্য ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায় এবং শীঘ্রই তাদেরকে যিহোবা সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করা হয়। এ ছাড়া, কারো কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার ঠিক আগে, আমি সেই ব্যক্তির হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করি। আর আমি এও প্রার্থনা করি, ইতিমধ্যেই যে-মেষতুল্য ব্যক্তিদের পাওয়া গিয়েছে, তাদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে যিহোবা যেন আমাদের প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেন।” এই বয়স্ক বোন অনেক ব্যক্তিকে যিহোবা সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করেছেন। আপনি কি অন্যান্য বয়স্ক ব্যক্তির কথা মনে করতে পারেন, যারা উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার ইচ্ছা পালন করছেন?—পড়ুন, ফিলিপীয় ২:১৭.

১৭. ভবিষ্যতে মানুষ ও পৃথিবীর জন্য যিহোবা যা করবেন, সেই সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন?

১৭ যিহোবা পৃথিবী থেকে তাঁর শত্রুদের দূর করার আগে পর্যন্ত, আমরা তাঁর ইচ্ছা পৃথিবীতে পরিপূর্ণ হওয়ার বিষয়ে ক্রমাগত প্রার্থনা করব। তাঁর ইচ্ছা পরিপূর্ণ হওয়ার পর, পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করা হবে এবং কোটি কোটি লোক পুনরুত্থিত হবে। যিশু বলেছিলেন, “এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে, এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) একটু কল্পনা করুন, আমরা যখন আমাদের প্রিয়জনদের আবারও দেখব, তখন আমরা কতটা আনন্দিত হব! ঈশ্বর আমাদের “সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।” (প্রকা. ২১:৪) যে-ব্যক্তিরা পুনরুত্থিত হবে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকই হবে “অধার্ম্মিক” অর্থাৎ যারা কখনো যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে সত্য জানেনি। আমরা আনন্দের সঙ্গে তাদেরকে ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে শিক্ষা দেব, যাতে তারা “অনন্ত জীবন” পেতে পারে।—প্রেরিত ২৪:১৫; যোহন ১৭:৩.

১৮. কোন বিষয়গুলো মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন?

১৮ মানবজাতির জন্য যে-বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেগুলো হল ঈশ্বরের নাম যেন পবিত্রীকৃত হয়, তাঁর রাজ্য যেন আসে এবং তাঁর ইচ্ছা যেন পৃথিবীতে পূর্ণ হয় আর এভাবে নিখিলবিশ্বের সকলে একতাবদ্ধভাবে যিহোবার উপাসনা করবে। এগুলো হল আদর্শ প্রার্থনার প্রথম তিনটে অনুরোধ। হ্যাঁ, ঈশ্বর যখন এই তিনটে অনুরোধের উত্তর দেবেন, তখন তিনি মানবজাতির সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাবেন। পরের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, যিশু অন্য আর কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্য আমাদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন।

^ অনু. 12 এই ভবিষ্যদ্‌বাণী যে ১৯১৪ সালে পরিপূর্ণ হয়েছে, তা আমরা কীভাবে বুঝতে পারি, তা জানার জন্য বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ২১৫-২১৮ পৃষ্ঠা দেখুন।