সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার অনন্ত প্রেম নিয়ে ধ্যান করুন

যিহোবার অনন্ত প্রেম নিয়ে ধ্যান করুন

‘আমি তোমার সমস্ত কর্ম্ম ধ্যান করিব।’—গীত. ৭৭:১২.

গান সংখ্যা: ১৮, ২৯

১, ২. (ক) যিহোবা যে তাঁর লোকেদের ভালোবাসেন, সেই বিষয়ে আপনি কেন নিশ্চিত? (খ) মানুষকে কোন চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে?

যিহোবা যে তাঁর লোকেদের ভালোবাসেন, সেই বিষয়ে আপনি কেন নিশ্চিত? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে এই উদাহরণগুলো বিবেচনা করুন: কয়েক বছর ধরে ভাই-বোনেরা সদয়ভাবে টেইলিন নামে একজন বোনকে উৎসাহিত করেছেন। তারা তাকে বলেছিলেন, যেন তিনি নিজের কাছ থেকে অতিরিক্ত আশা না করেন। তিনি বলেন: “যিহোবা যদি আমাকে ভালো না বাসতেন, তাহলে তিনি আমাকে এত সময় ধরে পরামর্শ দিতেন না।” ব্রিজেট তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে একাই দু-জন সন্তানকে মানুষ করছেন। তিনি বলেন: “শয়তানের বিধিব্যবস্থায় সন্তান মানুষ করা হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন এক কাজ, বিশেষভাবে একক বাবা-মায়ের জন্য তা আরও কঠিন। কিন্তু আমি নিশ্চিত, যিহোবা আমাকে ভালোবাসেন কারণ প্রচণ্ড কষ্টের সময়েও তিনি আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন আর তিনি কখনো আমাকে সহ্যের অতিরিক্ত কষ্টভোগ করতে দেননি।” (১ করি. ১০:১৩) স্যান্ড্রা এক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। একটা সম্মেলনের সময়, একজন বোন তার প্রতি ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। স্যান্ড্রার স্বামী বলেন, “যদিও আমরা তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না, কিন্তু আমাদের প্রতি তার আন্তরিকতা দেখে আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম। আমাদের ভাই-বোনেরা কথায়, কাজে বা অন্য কোনো উপায়ে যেভাবে প্রেম প্রকাশ করে, তা প্রমাণ দেয়, যিহোবা আমাদের কতটা ভালোবাসেন।”

যিহোবা মানুষকে অন্যদের ভালোবাসার এবং অন্যদের কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু, অসুস্থতা অথবা আর্থিক সমস্যার কারণে কিংবা আমাদের পরিচর্যায় ইতিবাচক ফলাফল না পেলে আমরা সহজে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারি। আমরা যদি এমনটা মনে করতে শুরু করি যিহোবা এখন আর আমাদের ভালোবাসেন না, তাহলে আমাদের এটা মনে রাখতে হবে, তিনি আমাদের মূল্যবান বলে গণ্য করেন এবং তিনি আমাদের ডান হাত ধরে আছেন ও আমাদের সাহায্য করছেন। আমরা যদি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তাহলে তিনি আমাদের কখনো ভুলে যাবেন না।—যিশা. ৪১:১৩; ৪৯:১৫.

৩. যিহোবা যে আমাদের প্রতি অনন্ত প্রেম দেখান, কোন বিষয়গুলো আমাদের এই বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পারে?

উপরে উল্লেখিত সাক্ষিরা এই বিষয়ে নিশ্চিত, কঠিন সময়ে ঈশ্বর তাদের সঙ্গে ছিলেন। আর আমরাও এই আস্থা রাখতে পারি, তিনি আমাদের পক্ষে আছেন। (গীত. ১১৮:৬, ৭) এই প্রবন্ধে, আমরা চারটে উপহার সম্বন্ধে আলোচনা করব, যেগুলো আমাদের প্রতি যিহোবার ভালোবাসার প্রমাণ দেয়। এগুলো হল, (১) তাঁর সৃষ্টি, (২) বাইবেল, (৩) প্রার্থনা ও (৪) মুক্তির মূল্য। যিহোবা যে-উত্তম বিষয়গুলো সম্পাদন করেছেন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করা আমাদেরকে তাঁর অনন্ত প্রেমের জন্য আরও বেশি কৃতজ্ঞ হওয়ার বিষয়ে সাহায্য করতে পারে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৭৭:১১, ১২.

যিহোবার সৃষ্টি নিয়ে ধ্যান করুন

৪. যিহোবার সৃষ্টি থেকে আমরা কী জানতে পারি?

আমরা যখন যিহোবার সৃষ্টি দেখি, তখন আমরা জানতে পারি, তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসেন। (রোমীয় ১:২০) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবা এই পৃথিবীকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যেন আমরা শুধু বেঁচে থাকার চেয়েও বেশি কিছু করতে পারি। তিনি আমাদের সেইসমস্ত কিছু দিয়েছেন, যেগুলো জীবন উপভোগ করার জন্য আমাদের প্রয়োজন। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খেতে হয় কিন্তু যিহোবা আমাদের বিভিন্ন ধরনের খাবার দিয়েছেন, যেন খাবার খাওয়া আমাদের কাছে উপভোগ্য হয়ে ওঠে! (উপ. ৯:৭) ক্যাথরিন নামে একজন বোন সৃষ্টি দেখে, বিশেষভাবে কানাডায় বসন্ত কালে যা দেখা যায়, সেগুলো দেখে আনন্দিত হন। তিনি বলেন: “সব কিছু যেভাবে প্রাণ ফিরে পায়, তা দেখা সত্যিই বিস্ময়কর—আমি দেখতে পাই, মাটির ভিতর থেকে চারা ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে তাতে ফুল ফুটছে এবং পরিযায়ী পাখিগুলো পরিযান শেষ করে ফিরে আসছে। আর এর মধ্যে সেই ছোট্ট হামিংবার্ডও রয়েছে, যেটা আমার রান্না ঘরের জানালার বাইরে পাখির জন্য রেখে দেওয়া খাবারের পাত্র খুঁজে বের করে। যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন বলেই আমাদেরকে এত আনন্দ উপভোগ করতে দিয়েছেন।” আমাদের পিতা তাঁর সৃষ্টি ভালোবাসেন আর তিনি চান যেন আমরাও তা উপভোগ করি।—প্রেরিত ১৪:১৬, ১৭.

৫. মানুষকে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে কীভাবে যিহোবার প্রেম প্রকাশিত হয়?

যিহোবা আমাদেরকে অর্থপূর্ণ কাজ করার ও তা উপভোগ করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। (উপ. ২:২৪) তিনি মানুষকে পৃথিবী পরিপূর্ণ করার, পৃথিবীতে চাষাবাদ করার এবং এখানে বেঁচে থাকা মাছ, পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। (আদি. ১:২৬-২৮) এ ছাড়া, তিনি আমাদের চমৎকার গুণাবলি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যার ফলে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে পারি!—ইফি. ৫:১.

ঈশ্বরের বাক্য অমূল্য

৬. কেন ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আমাদের গভীর উপলব্ধি থাকা উচিত?

যিহোবা আমাদের বাইবেল দিয়েছেন কারণ তিনি আমাদের অনেক ভালোবাসেন। তাঁর সম্বন্ধে আমাদের যা জানতে হবে এবং মানুষের সম্বন্ধে তিনি কেমন অনুভব করেন, তা বাইবেল আমাদের জানায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করতেন, তা বাইবেল আমাদের জানায়। এই জাতি বার বার তাঁর অবাধ্য হয়েছিল। গীতসংহিতা ৭৮:৩৮ পদ বলে: “তিনি স্নেহময়, তাই অপরাধ ক্ষমা করিলেন, ধ্বংস করিলেন না, অনেকবার আপন ক্রোধ সম্বরণ করিলেন, আপনার সমস্ত কোপ উদ্দীপিত করিলেন না।” এই পদ নিয়ে ধ্যান করা, যিহোবা আপনাকে কতটা ভালোবাসেন ও আপনার জন্য কতটা চিন্তা করেন, তা বুঝতে সাহায্য করতে পারে। আমরা এই আস্থা রাখতে পারি, আমাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও যিহোবা আমাদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন।—পড়ুন, ১ পিতর ৫:৬, ৭.

৭. কেন বাইবেলকে আমাদের মূল্যবান বলে গণ্য করতে হবে?

বাইবেলকে আমাদের অনেক মূল্যবান বলে গণ্য করতে হবে। কেন? কারণ যিহোবা তাঁর বাক্যের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে ভাববিনিময় করেন। একজন বাবা অথবা মা ও সেইসঙ্গে তার সন্তান যখন খোলামেলা কথাবার্তা বলে, তখন তাদের মধ্যে ভালোবাসা এবং পরস্পরের প্রতি আস্থা আরও গভীর হয়। যিহোবা হলেন আমাদের প্রেমময় পিতা। আর যদিও আমরা তাঁকে কখনো দেখিনি অথবা তাঁর কণ্ঠস্বর শুনিনি, কিন্তু বিষয়টা এমন যেন বাইবেলের মাধ্যমে তিনি সরাসরি আমাদের সঙ্গে ভাববিনিময় করেন। আমাদের সবসময় তাঁর কথা শুনতে হবে! (যিশা. ৩০:২০, ২১) ঈশ্বরের বাক্য পড়ার মাধ্যমে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পারি এবং তাঁর উপর আস্থা রাখতে পারি। আর এই বাক্যের মাধ্যমে তিনি আমাদের নির্দেশনা দেন এবং সুরক্ষা করেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১৯:৭-১১; হিতোপদেশ ১:৩৩.

যদিও যেহূর মাধ্যমে যিহোশাফটকে পরামর্শ দিতে হয়েছিল, কিন্তু যিহোবা সেই রাজার মধ্যে “কোন কোন সাধু ভাব” দেখতে পেয়েছিলেন (৮, ৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৮, ৯. আমরা কোন বিষয়টা জানি বলে যিহোবা চান? বাইবেলের একটা উদাহরণ তুলে ধরুন।

যিহোবা চান যেন আমরা তাঁকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে জানি, যিনি আমাদের ভালোবাসেন এবং আমাদের অসিদ্ধতা ছাড়িয়ে আরও বেশি কিছু দেখেন। তিনি আমাদের মধ্যে ভালো বিষয় খোঁজেন। (২ বংশা. ১৬:৯) আসুন আমরা বিবেচনা করি, যিহোবা কীভাবে যিহূদার রাজা যিহোশাফটের মধ্যে ভালো বিষয় লক্ষ করেছিলেন। যিহোশাফট একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর তা হল, তিনি ইস্রায়েলের রাজা আহাবের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন এবং রামোৎ-গিলিয়দে অরামীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। ৪০০ জন মিথ্যা ভাববাদী দুষ্ট রাজা আহাবকে বলেছিল, তিনি সেই যুদ্ধে জয়ী হবেন। কিন্তু, যিহোবার সত্য ভাববাদী মীখায় যিহোশাফট ও আহাবকে বলেছিলেন, তারা যদি যুদ্ধ করেন, তাহলে তারা হেরে যাবেন। আর ঠিক সেটাই ঘটেছিল। আহাব সেই যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন আর যিহোশাফট কোনোভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন। যিহোবা যুদ্ধের পর যিহোশাফটকে তার ভুলের জন্য যেহূর মাধ্যমে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে যেহূ তাকে এই কথাও বলেছিলেন: “আপনার মধ্যে কোন কোন সাধু ভাব পাওয়া গিয়াছে।”—২ বংশা. ১৮:৪, ৫, ১৮-২২, ৩৩, ৩৪; ১৯:১-৩.

কয়েক বছর আগে, যিহোশাফট প্রধান লোকেদের, লেবীয়দের এবং যাজকদের বলেছিলেন, যেন তারা লোকেদের যিহোবার ব্যবস্থা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার জন্য যিহূদার সমস্ত নগরে ভ্রমণ করেন। তারা এই কাজে অনেক সফল হয়েছিলেন আর এর ফলে এমনকী অন্যান্য জাতির লোকেরাও যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পেরেছিল। (২ বংশা. ১৭:৩-১০) তাই, যিহোশাফট যদিও একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু তার আগের ভালো বিষয়গুলো যিহোবা ভুলে যাননি। এই উদাহরণ আমাদের জন্য অনেক সান্ত্বনাদায়ক কারণ মাঝে মাঝে আমরাও ভুল করে ফেলি। তবে, আমরা যদি যিহোবার সেবা করার জন্য যথাসাধ্য করি, তাহলে তিনি সবসময় আমাদের ভালোবাসবেন এবং আমরা যে-ভালো বিষয়গুলো করেছি, সেগুলো তিনি ভুলে যাবেন না।

প্রার্থনা করার বিশেষ সুযোগের প্রতি উপলব্ধি দেখান

১০, ১১. (ক) কেন প্রার্থনা যিহোবার কাছ থেকে এক বিশেষ উপহার? (খ) কীভাবে ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিতে পারেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১০ সন্তানরা যখন তাদের বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায়, তখন একজন প্রেমময় বাবা তা শোনার জন্য সময় করে নেন। তিনি তাদের অনুভূতি জানতে চান কারণ তিনি তাদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন। আমাদের প্রেমময় পিতা যিহোবা একই বিষয় করে থাকেন। আমরা যখন তাঁর কাছে প্রার্থনা করি, তখন তিনি তা শোনেন। আমাদের পিতার সঙ্গে কথা বলতে পারা, সত্যিই এক বিশেষ সুযোগ!

১১ আমরা যেকোনো সময়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি। তিনি হলেন আমাদের বন্ধু আর তিনি সবসময় আমাদের প্রার্থনা শোনার জন্য প্রস্তুত আছেন। আগে উল্লেখিত টেইলিন বলেন: “আপনি তাঁর কাছে যেকোনো কিছু এবং সব কিছু বলতে পারেন।” আমরা যখন যিহোবার কাছে আমাদের গভীরতম চিন্তার বিষয় জানাই, তখন তিনি হয়তো কোনো শাস্ত্রপদ, আমাদের প্রকাশনার কোনো প্রবন্ধ কিংবা কোনো ভাই অথবা বোনের কাছ থেকে উৎসাহ প্রদান করার মাধ্যমে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিতে পারেন। যিহোবা আমাদের আন্তরিক অনুরোধ শোনেন এবং তিনি এমনকী সেই সময়ও আমাদের পরিস্থিতি বোঝেন, যখন অন্য কেউ তা বোঝে না। তিনি যে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন, তা আমাদের প্রতি তাঁর অনন্ত প্রেমের প্রমাণ দেয়।

১২. কেন বাইবেলে প্রাপ্ত প্রার্থনাগুলো নিয়ে আমাদের অধ্যয়ন করা উচিত? একটা উদাহরণ দিন।

১২ আমরা বাইবেলে প্রাপ্ত প্রার্থনাগুলো থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি। কখনো কখনো পারিবারিক উপাসনার সময় এই প্রার্থনাগুলোর মধ্যে কয়েকটা নিয়ে অধ্যয়ন করা উপকারজনক হবে। অতীতে ঈশ্বরের দাসেরা যে-সমস্ত আন্তরিক প্রার্থনা করেছিল, আমরা যখন সেগুলো নিয়ে ধ্যান করব, তখন আমাদের প্রার্থনার গুণগত মান উন্নত হবে। উদাহরণ স্বরূপ, যোনা একটা বড়ো মাছের পেটের ভিতরে থাকার সময় নম্রতা সহকারে যে-প্রার্থনা করেছিলেন, তা অধ্যয়ন করুন। (যোনা ১:১৭–২:১০) মন্দির উৎসর্গীকরণের সময় শলোমন যিহোবার কাছে যে-আন্তরিক প্রার্থনা করেছিলেন, তা নিয়ে আবারও আলোচনা করুন। (১ রাজা. ৮:২২-৫৩) আর যিশুর আদর্শ প্রার্থনা নিয়ে ধ্যান করুন। (মথি ৬:৯-১৩) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নিয়মিতভাবে ‘আপনাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত করুন।’ এর ফলে, ‘সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা আপনাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।’ আর এর ফলে যিহোবার অনন্ত প্রেমের জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতা ক্রমাগত আরও বৃদ্ধি পাবে।—ফিলি. ৪:৬, ৭.

মুক্তির মূল্যের জন্য আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন

১৩. মুক্তির মূল্যের কারণে আমরা কোন সুযোগ পেয়েছি?

১৩ যিহোবা আমাদের মুক্তির মূল্য দান করেছেন, যাতে “আমরা . . . জীবন লাভ করিতে পারি।” (১ যোহন ৪:৯) ঈশ্বরের প্রেমের এই চমৎকার প্রকাশ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “খ্রীষ্ট উপযুক্ত সময়ে ভক্তিহীনদের নিমিত্ত মরিলেন। বস্তুতঃ ধার্ম্মিকের নিমিত্ত প্রায় কেহ প্রাণ দিবে না, সজ্জনের নিমিত্ত হয় ত কেহ সাহস করিয়া প্রাণ দিলেও দিতে পারে। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন।” (রোমীয় ৫:৬-৮) মুক্তির মূল্য হচ্ছে ঈশ্বরের প্রেমের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ আর এর ফলে মানুষ তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করার সুযোগ লাভ করেছে।

১৪, ১৫. মুক্তির মূল্য কী অর্থ রাখে, (ক) অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের জন্য? (খ) যাদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রয়েছে, তাদের জন্য?

১৪ খ্রিস্টানদের মধ্যে একটা ক্ষুদ্র দল বিশেষ উপায়ে যিহোবার অনন্ত প্রেম অনুভব করে থাকে। (যোহন ১:১২, ১৩; ৩:৫-৭) ঈশ্বর এই ব্যক্তিদের পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত করেছেন আর তাই তারা এখন তাঁর সন্তান। (রোমীয় ৮:১৫, ১৬) যেহেতু তাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ব্যক্তি এখনও পৃথিবীতে আছেন, তাহলে কেন পৌল বলেছেন, তারা ‘খ্রীষ্ট যীশুর সহিত স্বর্গীয় স্থানে’ বসেছেন? (ইফি. ২:৬) কারণ যিহোবা তাদেরকে স্বর্গে অনন্তজীবন লাভের আশা প্রদান করেছেন।—ইফি. ১:১৩, ১৪; কল. ১:৫.

১৫ যারা অভিষিক্ত নয়, তারা যদি মুক্তির মূল্যের প্রতি তাদের বিশ্বাস প্রকাশ করে, তাহলে তারা ঈশ্বরের বন্ধু হতে পারে। তাদেরও ঈশ্বরের দত্তক সন্তান হওয়ার এবং এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মুক্তির মূল্য সকল মানুষের জন্য ঈশ্বরের প্রেম প্রকাশ করে। (যোহন ৩:১৬) আমরা যদি বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করি, তাহলে তিনি আমাদের নতুন জগতে সম্ভাব্য সর্বোত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন। এই বিষয়টা জানা কতই-না রোমাঞ্চকর! তাই আসুন আমরা কাজের মাধ্যমে দেখাই, মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থার প্রতি আমাদের উপলব্ধি রয়েছে, যে-ব্যবস্থা আমাদের জন্য ঈশ্বরের অনন্ত প্রেমের সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ।

যিহোবার জন্য আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করুন

১৬. আমরা যদি ঈশ্বরের প্রেম নিয়ে ধ্যান করি, তাহলে আমরা কী করব?

১৬ যিহোবা আমাদের জন্য যে-সমস্ত উপায়ে প্রেম প্রকাশ করেন, তা গণনা করা অসম্ভব। রাজা দায়ূদ এই গান গেয়েছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমার পক্ষে তোমার সঙ্কল্প সকল কেমন মূল্যবান। তাহার সমষ্টি কেমন অধিক! গণনা করিলে তাহা বালুকা অপেক্ষা বহুসংখ্যক হয়।” (গীত. ১৩৯:১৭, ১৮) যিহোবা যে-সমস্ত উপায়ে আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম দেখান আমরা যদি সেগুলো নিয়ে ধ্যান করি, তাহলে আমরা প্রতিদানে তাঁকে ভালোবাসতে এবং তাঁকে আমাদের সর্বোত্তমটা দিতে অনুপ্রাণিত হব।

১৭, ১৮. কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা দেখাতে পারি?

১৭ আমরা যে যিহোবাকে ভালোবাসি, তা প্রকাশ করার অনেক উপায় রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা উদ্যোগের সঙ্গে অন্যদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) এ ছাড়া, বিশ্বাসের পরীক্ষার মুখোমুখি হলে, আমরা ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে সেই পরীক্ষা সহ্য করার মাধ্যমে তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৮৪:১১; * যাকোব ১:২-৫.) এমনকী আমাদের পরীক্ষা অনেক কঠিন হলেও, আমরা এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের কষ্ট দেখেন এবং তিনি আমাদের সাহায্য করবেন কারণ আমরা তাঁর দৃষ্টিতে মূল্যবান।—গীত. ৫৬:৮.

১৮ যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা, তিনি যে-সমস্ত চমৎকার বিষয় সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করতে আমাদের অনুপ্রাণিত করে। বাইবেলের উত্তম ছাত্র হওয়ার মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে দেখাই যে, আমরা তাঁকে এবং তাঁর বাক্য ভালোবাসি। আমরা নিয়মিতভাবে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি কারণ আমরা তাঁকে ভালোবাসি এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় করতে চাই। আর আমরা যখন তাঁর অমূল্য উপহার মুক্তির মূল্য নিয়ে ধ্যান করি, তখন তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও গভীর হয়। (১ যোহন ২:১, ২) এগুলো হচ্ছে কিছু উপায়, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে দেখাই, আমাদের প্রতি তাঁর অনন্ত প্রেম আমরা উপলব্ধি করি।

^ অনু. 17 গীতসংহিতা ৮৪:১১ (NW): “কারণ যিহোবা ঈশ্বর সূর্য ও ঢাল; তিনি অনুগ্রহ ও গৌরব প্রদান করেন। যারা নীতিনিষ্ঠার পথে চলে, যিহোবা তাদের মঙ্গল করতে অস্বীকার করবেন না।”