সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের “বর্ণনাতীত দানের” দ্বারা অনুপ্রাণিত হোন

ঈশ্বরের “বর্ণনাতীত দানের” দ্বারা অনুপ্রাণিত হোন

“ঈশ্বরের বর্ণনাতীত দানের নিমিত্ত তাঁহার ধন্যবাদ হউক।” —২ করি. ৯:১৫.

গান সংখ্যা: ৫৩, ১৮

১, ২. (ক) ঈশ্বরের “বর্ণনাতীত দানের” অন্তর্ভুক্ত কী? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো আলোচনা করব?

যিহোবা যখন তাঁর প্রিয় পুত্র যিশুকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, তখন তিনি আমাদের জন্য প্রেমের সর্বমহৎ উপহার দিয়েছিলেন! (যোহন ৩:১৬; ১ যোহন ৪:৯, ১০) প্রেরিত পৌল এই উপহারকে ‘বর্ণনাতীত দান’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। (২ করি. ৯:১৫) কেন পৌল এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন?

পৌল জানতেন, যিশুর বলিদান এই নিশ্চয়তা প্রদান করে, ঈশ্বরের অপূর্ব প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হবেই। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১:২০.) এর অর্থ হল, ঈশ্বরের “বর্ণনাতীত দানের” মধ্যে যিশুর বলিদান রয়েছে। এ ছাড়া, যিহোবা আমাদের প্রতি যে-মঙ্গল করেন ও অনুগত প্রেম দেখান, সেই সমস্ত কিছুও এই দানের অন্তর্ভুক্ত। এই দান এতই মহামূল্য যে, তা আমাদের বোধগম্যতা অনুযায়ী পুরোপুরি বর্ণনা করা অসম্ভব। এই বিশেষ দান সম্বন্ধে আমাদের কেমন অনুভব করা উচিত? আর ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ উদ্‌যাপনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়, কীভাবে এই দানের দ্বারা আমাদের অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত?

ঈশ্বরের বিশেষ দান

৩, ৪. (ক) কেউ যখন আপনাকে কোনো উপহার দেয়, তখন আপনার কেমন লাগে? (খ) কীভাবে একটা বিশেষ দান আপনার জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে?

কেউ যখন আমাদের কোনো উপহার দেয়, তখন আমরা খুশি হই। তবে কিছু দান এতই অর্থপূর্ণ বা বিশেষ যে, সেগুলো আমাদের জীবন পরিবর্তন করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে কল্পনা করুন, আপনি কোনো একটা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। আর সেই অপরাধের শাস্তি হল মৃত্যু। কিন্তু হঠাৎ করে, অপরিচিত কোনো ব্যক্তি আপনার পরিবর্তে সেই শাস্তি গ্রহণ করতে চান। তিনি আপনার জন্য মৃত্যুবরণ করতে ইচ্ছুক থাকেন! এইরকম বিশেষ এক দান পেয়ে আপনি কেমন অনুভব করবেন?

এইরকম প্রেমপূর্ণ ও বিশেষ দান আপনাকে আপনার জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন করতে অনুপ্রাণিত করবে। এ ছাড়া, আপনি সম্ভবত অন্যদের প্রতি আরও উদার ও প্রেমময় হতে এবং আপনার প্রতি নির্দয় আচরণ করে এমন যেকোনো ব্যক্তিকে ক্ষমা করার জন্য অনুপ্রাণিত হবেন। জীবনের বাকিটা সময় আপনি এটা প্রকাশ করতে চাইবেন, আপনার জন্য যে-ত্যাগস্বীকার করা হয়েছে, সেটার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ।

৫. কীভাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া মুক্তির মূল্যরূপ দান অন্য যেকোনো দানের চেয়ে আরও মহৎ?

ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া মুক্তির মূল্যরূপ দান উপরে উল্লেখিত উদাহরণের দানের চেয়ে আরও মহৎ। (১ পিতর ৩:১৮) এই বিষয়টা একটু চিন্তা করুন: আমরা সকলে আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাপ পেয়েছি আর পাপের শাস্তি হল মৃত্যু। (রোমীয় ৫:১২) যিহোবা প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যিশুকে “সকলের নিমিত্ত মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ” করতে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ২:৯) তবে যিশুর বলিদান আরও বেশি কিছু সম্পাদন করবে! এটা মৃত্যুকে চিরকালের জন্য ধ্বংস করবে। (যিশা. ২৫:৭, ৮; ১ করি. ১৫:২২, ২৬) যারা যিশুর প্রতি বিশ্বাস দেখায়, তারা হয় স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে রাজা হিসেবে, নতুবা পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা হিসেবে চিরকাল শান্তিতে ও সুখে বাস করবে। (রোমীয় ৬:২৩; প্রকা. ৫:৯, ১০) আর কোন আশীর্বাদগুলো যিহোবার দানের অন্তর্ভুক্ত?

৬. (ক) যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া দানের মাধ্যমে আর কোন আশীর্বাদগুলোর জন্য আপনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন? (খ) ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া দান আমাদের যে-তিনটে বিষয় করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে, সেগুলো বলুন।

ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া দানের মাধ্যমে আরও যে-আশীর্বাদ লাভ করা যাবে তা হল, এই পৃথিবী এক পরমদেশে পরিণত হবে, অসুস্থ ব্যক্তিরা সুস্থ হবে এবং মৃত ব্যক্তিরা পুনরুত্থিত হবে। (যিশা. ৩৩:২৪; ৩৫:৫, ৬; যোহন ৫:২৮, ২৯) এই ‘বর্ণনাতীত দান’ দিয়েছেন বলে আমরা যিহোবা ও তাঁর প্রিয় পুত্রকে ভালোবাসি। এই দান আমাদের কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে? এটা আমাদেরকে (১) খ্রিস্ট যিশুকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুকরণ করতে, (২) আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসতে এবং (৩) হৃদয় থেকে অন্যদের ক্ষমা করতে অনুপ্রাণিত করবে।

“খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে”

৭, ৮. খ্রিস্টের প্রেম সম্বন্ধে আমাদের কেমন অনুভব করা উচিত এবং এটা আমাদের কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে?

প্রথমত, আমাদের জীবনকে এমনভাবে ব্যবহার করার জন্য আমাদের অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত, যেন তা যিশুর সম্মান নিয়ে আসে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে।” (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫.) পৌল জানতেন, আমরা যদি যিশুর মহান প্রেম স্বীকার করি, তা হলে সেই প্রেম আমাদের বশে রেখে চালাবে বা অনুপ্রাণিত করবে, যেন আমরা যিশুকে ভালোবাসি ও তাঁকে সম্মান করি। হ্যাঁ, যিহোবা আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, তা যখন আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারি, তখন তাঁর প্রেম আমাদের এমনভাবে জীবনযাপন করার জন্য অনুপ্রাণিত করে, যা দেখায় আমরা যিশুকে সম্মান করি। কীভাবে আমরা তা করি?

যিহোবার প্রতি প্রেম আমাদেরকে যিশুর পদচিহ্ন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করার মাধ্যমে তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। (১ পিতর ২:২১; ১ যোহন ২:৬) আমরা যখন ঈশ্বর ও খ্রিস্টের বাধ্য হই, তখন আমরা তাদের প্রতি আমাদের প্রেমের প্রমাণ দিই। যিশু বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি আমার আজ্ঞা সকল প্রাপ্ত হইয়া সে সকল পালন করে, সেই আমাকে প্রেম করে; আর যে আমাকে প্রেম করে, আমার পিতা তাহাকে প্রেম করিবেন; এবং আমিও তাহাকে প্রেম করিব, আর আপনাকে তাহার কাছে প্রকাশ করিব।”—যোহন ১৪:২১; ১ যোহন ৫:৩.

৯. আমাদের কোন চাপ রয়েছে?

এই স্মরণার্থ মরসুমে, আমাদের জীবনকে আমরা কীভাবে ব্যবহার করছি, সেই বিষয় নিয়ে ধ্যান করা উত্তম। তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘কোন ক্ষেত্রগুলোতে আমি ইতিমধ্যেই যিশুকে অনুকরণ করছি? আর কোন ক্ষেত্রগুলোতে আমি উন্নতি করতে পারি?’ নিজেদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই জগৎ চায়, যেন আমরা জগতের লোকেদের মতো জীবনযাপন করি। (রোমীয় ১২:২) আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমরা জগতের শিক্ষক, জনপ্রিয় তারকা ও বিখ্যাত খেলোয়াড়দের অনুকরণ করার চাপ অনুভব করতে পারি। (কল. ২:৮; ১ যোহন ২:১৫-১৭) কীভাবে আমরা সেই চাপ প্রতিরোধ করতে পারি?

১০. এই স্মরণার্থ মরসুমে আমাদের নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত আর এগুলোর উত্তর হয়তো আমাদের কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১০ আমাদের পোশাক-আশাক, সিনেমা ও গান-বাজনা আর সেইসঙ্গে আমাদের কম্পিউটার, মোবাইল ফোন অথবা ট্যাবলেটে যা রয়েছে, স্মরণার্থের মরসুমে সেগুলো পরীক্ষা করার জন্য সময় করে নেওয়া উত্তম। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘যিশু যদি এখানে থাকতেন এবং আমি যা পরে আছি, সেটা লক্ষ করতেন, তা হলে আমি কি বিব্রত হতাম?’ (পড়ুন, ১ তীমথিয় ২:৯, ১০.) ‘আমার পোশাক-আশাক কি প্রকাশ করে, আমি খ্রিস্টের একজন অনুসারী? আমি যে-সিনেমাগুলো দেখতে পছন্দ করি, যিশু কি সেগুলো দেখতে পছন্দ করতেন? তিনি কি আমার পছন্দের গানগুলো শুনতেন? যিশু যদি আমার মোবাইল ফোন অথবা ট্যাবলেট ধার নিতেন, তা হলে এতে তিনি যা দেখতে পেতেন, সেটা কি আমাকে বিব্রত করত? আমি যেসব ভিডিও গেম খেলি, সেগুলো কেন আমার ভালো লাগে, তা যিশুর কাছে ব্যাখ্যা করা কি কঠিন হতো?’ যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম আমাদেরকে এমন যেকোনো কিছু ফেলে দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করবে, যেগুলো একজন খ্রিস্টানের জন্য অনুপযুক্ত, তা সেটা যত দামিই হোক না কেন। (প্রেরিত ১৯:১৯, ২০) আমরা যখন যিহোবার কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলাম, তখন আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, খ্রিস্টকে সম্মানিত করার জন্য আমরা আমাদের জীবনকে ব্যবহার করব। তাই, আমাদের এমন কোনো কিছুই রেখে দেওয়া উচিত নয়, যেটার কারণে আমাদের জন্য যিশুকে অনুকরণ করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।—মথি ৫:২৯, ৩০; ফিলি. ৪:৮.

১১. (ক) যিহোবা ও যিশুর প্রতি আমাদের প্রেম কীভাবে আমাদের প্রচার কাজে অনুপ্রাণিত করবে? (খ) মণ্ডলীর অন্যদের সাহায্য করার জন্য আমাদের প্রেম কীভাবে আমাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে?

১১ যিশুর প্রতি প্রেম আমাদেরকে উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করতে ও শিক্ষা দিতে অনুপ্রাণিত করে। (মথি ২৮:১৯, ২০; লূক ৪:৪৩) আপনি কি স্মরণার্থ মরসুমে নিজের রোজকার তালিকা এমনভাবে সংগঠিত করতে পারেন, যাতে আপনি সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে এবং প্রচার কাজে ৩০ অথবা ৫০ ঘণ্টা ব্যয় করতে পারেন? ৮৪ বছর বয়সি একজন বিপত্নীক ভাই মনে করেছিলেন, বয়স ও দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে তিনি অগ্রগামী কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু তার এলাকার অন্যান্য অগ্রগামী তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল। তারা তার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করেছিল এবং তিনি কাজ করতে পারবেন এমন এলাকা বাছাই করেছিল। ফল স্বরূপ, সেই ভাই ৩০ ঘণ্টা পূরণ করার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। আপনি কি আপনার মণ্ডলীর কাউকে মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার জন্য সাহায্য করতে পারেন? এটা ঠিক, সকলে অগ্রগামী কাজ করতে পারে না, তবে যিহোবার প্রতি আমাদের সেবাকে বাড়ানোর জন্য আমরা নিজেদের সময় ও শক্তি ব্যবহার করতে পারি। আমরা যদি তা করি, তা হলে পৌলের মতো আমরা দেখাতে পারব, আমরা যিশুর প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হই। ঈশ্বরের প্রেম আমাদের আর কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে?

আমরা পরস্পরকে প্রেম করতে বাধ্য

১২. ঈশ্বরের প্রেম আমাদের কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করে?

১২ দ্বিতীয়ত, ঈশ্বরের প্রেম আমাদেরকে ভাই-বোনদের ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করে। প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “প্রিয়তমেরা, ঈশ্বর যখন আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন, তখন আমরাও পরস্পর প্রেম করিতে বাধ্য।” (১ যোহন ৪:৭-১১) তাই আমরা যদি ঈশ্বরের প্রেম স্বীকার করি, তা হলে আমাদের ভাই-বোনদেরকে আমাদের ভালোবাসতে হবে। (১ যোহন ৩:১৬) কীভাবে আমরা তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি?

১৩. অন্যদের প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে যিশু কোন উদাহরণস্থাপন করেছিলেন?

১৩ আমরা কীভাবে অন্যদের ভালোবাসতে পারি, যিশুর উদাহরণ তা প্রকাশ করে। তিনি যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি লোকেদের, বিশেষভাবে দীনহীন লোকেদের সাহায্য করেছিলেন। তিনি অসুস্থ, খঞ্জ, অন্ধ, বধির ও বোবা লোকেদের সুস্থ করেছিলেন। (মথি ১১:৪, ৫) ধর্মীয় নেতাদের বিপরীতে, যিশু সেই লোকেদের শিক্ষা দিতে পছন্দ করতেন, যারা ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিল। (যোহন ৭:৪৯) তিনি এই দীনহীন লোকেদের ভালোবেসেছিলেন এবং তাদের সাহায্য করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন।—মথি ২০:২৮.

আপনি কি কোনো বয়স্ক ভাই অথবা বোনকে পরিচর্যায় সাহায্য করতে পারেন? (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. আপনার ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর জন্য আপনি কী করতে পারেন?

১৪ এ ছাড়া, আপনি কীভাবে মণ্ডলীর ভাই-বোনদের, বিশেষভাবে বয়স্ক ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারেন, এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করার জন্য স্মরণার্থ মরসুম হল এক উত্তম সময়। আপনি কি এই প্রিয় ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন? আপনি কি তাদের জন্য এক বেলার খাবার নিয়ে যেতে, ঘরের টুকিটাকি কাজে তাদের সাহায্য করতে, তাদের সভাতে নিয়ে যেতে অথবা পরিচর্যায় আপনার সঙ্গে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন? (পড়ুন, লূক ১৪:১২-১৪.) ঈশ্বরের প্রেম যেন আপনাকে আপনার ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর জন্য অনুপ্রাণিত করে!

আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি করুণা দেখান

১৫. আমাদের কোন বিষয়টা বুঝতে হবে?

১৫ তৃতীয়ত, যিহোবার প্রেম আমাদের ভাই-বোনদের ক্ষমা করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। আমরা সকলে আদমের কাছ থেকে পাপ ও মৃত্যু পেয়েছি আর তাই আমরা কেউই বলতে পারি না, “আমার মুক্তির মূল্যের প্রয়োজন নেই।” আসলে, ঈশ্বরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত দাসেরও মুক্তির মূল্যের দান প্রয়োজন। আমরা প্রত্যেকে এক বিরাট ঋণের দায় থেকে ক্ষমা পেয়েছি! কেন এই বিষয়টা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ? যিশুর একটা দৃষ্টান্ত থেকে আমরা এর উত্তর পাই।

১৬, ১৭. (ক) রাজা এবং দু-জন দাস সম্বন্ধে যিশু যে-দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (খ) যিশুর দৃষ্টান্ত নিয়ে ধ্যান করার পর আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন?

১৬ যিশু একজন রাজা সম্বন্ধে একটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন, যিনি তার একজন দাসের ১০,০০০ তালন্ত বা ৬,০০,০০,০০০ সিকি ঋণ ক্ষমা করেছিলেন। কিন্তু পরে সেই দাস একজন সহদাসের আরও ক্ষুদ্র পরিমাণ ঋণ অর্থাৎ মাত্র ১০০ সিকি ঋণ ক্ষমা করেনি। এই দাস যেহেতু রাজার কাছ থেকে করুণা লাভ করেছিল, তাই সহদাসের ঋণ ক্ষমা করার জন্য তার অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত ছিল। রাজা যখন শুনেছিলেন, সেই দাস সামান্য ঋণ ক্ষমা করেনি, তখন তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “দুষ্ট দাস! তুমি আমার কাছে বিনতি করাতে আমি তোমার ঐ সমস্ত ঋণ ক্ষমা করিয়াছিলাম; আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া করিয়াছিলাম, তেমনি তোমার সহদাসের প্রতি দয়া করা কি তোমারও উচিত ছিল না?” (মথি ১৮:২৩-৩৫) সেই রাজার মতো, যিহোবা আমাদের বিরাট ঋণের দায় ক্ষমা করেছেন। তা হলে, যিহোবার প্রেম ও করুণা আমাদের কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে?

১৭ স্মরণার্থের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়, আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘কোনো ভাই কি আমাকে আঘাত দিয়েছেন? আমার পক্ষে কি তাকে ক্ষমা করা কঠিন?’ যদি তা-ই হয়, তা হলে এটা যিহোবা, যিনি একজন “ক্ষমাবান্‌” ব্যক্তি, তাঁকে অনুকরণ করার এক উত্তম সময়। (নহি. ৯:১৭; গীত. ৮৬:৫) আমরা যদি যিহোবার মহান করুণা উপলব্ধি করি, তা হলে আমরাও অন্যদের প্রতি করুণা দেখাব এবং হৃদয় থেকে তাদের ক্ষমা করব। আমরা যদি আমাদের ভাই-বোনদের ক্ষমা না করি, তা হলে আমরা এমনটা আশা করতে পারি না, যিহোবা আমাদের ভালোবাসবেন এবং ক্ষমা করবেন। (মথি ৬:১৪, ১৫) আমরা যখন অন্যদের ক্ষমা করি, তখন তারা যে আমাদের আঘাত দিয়েছে, সেই বিষয়টা পরিবর্তন হয়ে যায় না, তবে এটা আমাদের পরবর্তী সময়ে আনন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

১৮. ঈশ্বরের প্রেম কীভাবে একজন বোনকে অন্য একজন বোনের অসিদ্ধতা মেনে নিতে সাহায্য করেছিল?

১৮ আমাদের ভাই-বোনদের অসিদ্ধতা মেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:৩২; কলসীয় ৩:১৩, ১৪.) কিন্তু, লিলি নামে একজন বোন তা মেনে নিয়েছিলেন। [1] তিনি ক্যারল নামে একজন বিধবা বোনকে সাহায্য করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ক্যারলের যেখানে যাওয়ার প্রয়োজন হতো, লিলি তাকে সেখানে নিয়ে যেতেন, তাকে কেনাকাটা করতে সাহায্য করতেন এবং অন্যান্য কাজ করে দিতেন। লিলি এত কিছু করা সত্ত্বেও, ক্যারল সবসময়ই অভিযোগ করতেন আর তাই কখনো কখনো তাকে সাহায্য করা লিলির জন্য সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু, লিলি ক্যারলের উত্তম গুণাবলির উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন আর এর ফলে ক্যারল অনেক অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত, কয়েক বছর ধরে তাকে সাহায্য করেছিলেন। ক্যারলকে সাহায্য করা যদিও লিলির জন্য অনেক কঠিন ছিল, কিন্তু তিনি বলেন: “আমি বোন ক্যারলকে পুনরুত্থিত হতে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি। তিনি যখন সিদ্ধতায় পৌঁছাবেন, তখন তিনি কেমন ব্যক্তি হয়ে উঠবেন, আমি তা জানতে চাই।” স্পষ্টতই, ঈশ্বরের প্রেম আমাদেরকে ভাই-বোনদের আচরণ মেনে নিতে এবং সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে সাহায্য করবে, যখন মানুষের অসিদ্ধতা চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে।

১৯. ঈশ্বরের ‘বর্ণনাতীত দান’ আপনাকে কীভাবে অনুপ্রাণিত করবে?

১৯ যিহোবা সত্যিই আমাদের এক ‘বর্ণনাতীত দান’ দিয়েছেন। আমরা যেন এই বিষয়টা সবসময় উপলব্ধি করি! যিহোবা ও যিশু আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, স্মরণার্থ মরসুম হল তা নিয়ে ধ্যান করার এক চমৎকার সময়। তাঁদের প্রতি প্রেম যেন আমাদেরকে যিশুর পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুকারী হতে, আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে এবং আমাদের ভাই-বোনদের হৃদয় থেকে ক্ষমা করতে অনুপ্রাণিত করে।

^ [১] (১৮ অনুচ্ছেদ) এই প্রবন্ধে কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।