সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সতর্কবার্তায় মনোযোগ দেওয়া আপনার জীবন বাঁচাতে পারে!

সতর্কবার্তায় মনোযোগ দেওয়া আপনার জীবন বাঁচাতে পারে!

দুই হাজার চার সালের ২৬ ডিসেম্বর সিমিউলু নামে একটা দ্বীপ এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে, রিখ্টার স্কেলে যেটার মাত্রা ছিল ৯.১। সমুদ্রের ধারে যারা ছিল, তারা লক্ষ করে যে, সমুদ্রের জল অস্বাভাবিকভাবে নেমে যাচ্ছে। সঙ্গেসঙ্গে তারা পাহাড়ের দিকে দৌড়াতে শুরু করে আর চিৎকার করে বলতে থাকে, “স্মোং! স্মোং!” স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ হল, সুনামি। আধ ঘণ্টার মধ্যেই দৈত্যাকৃতির ঢেউ সমুদ্র উপকূলে আছড়ে পড়ে আর বেশিরভাগ ঘর ও গ্রামকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায়।

সিমিউলু দ্বীপ ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে যে-ভয়াবহ সুনামি হয়েছিল, সেটা প্রথমে এই দ্বীপেই আঘাত হেনেছিল। তা সত্ত্বেও, এই দ্বীপে ৭৮,০০০ জন অধিবাসীর মধ্যে মাত্র ৭ জন মারা গিয়েছিল। তুলনামূলকভাবে কেন এত কম লোক মারা গিয়েছিল? * সেই দ্বীপের একটা প্রচলিত প্রবাদ বলে: ‘যদি খুব জোরে ভূমিকম্প হয় আর সমুদ্রের জল নামতে থাকে, তা হলে পাহাড়ের দিকে দৌড়ে পালাও কারণ খুব শীঘ্রই সমুদ্রের জল উপকূল আছড়ে পড়বে।’ পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে সিমিউলুর লোকেরা সমুদ্রের জলস্তরের পরিবর্তন দেখে আসন্ন সুনামি সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিল। সতর্কবার্তায় মনোযোগ দেওয়া তাদের জীবন রক্ষা করেছিল।

বাইবেল এক আসন্ন বিপর্যয় সম্বন্ধে জানায়। এটি বলে, “এরূপ ‘মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না।’” (মথি ২৪:২১) তবে মানবজাতির বেপরোয়া কার্যকলাপের দ্বারা অথবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দ্বারা পৃথিবী গ্রহ ধ্বংস হবে না, কারণ ঈশ্বর চান যেন পৃথিবী নিত্যস্থায়ী হয়। (উপদেশক ১:৪) এর বিপরীতে, ঈশ্বর “পৃথিবীনাশকদিগকে নাশ করিবার” জন্য এই মহাক্লেশ নিয়ে আসবেন। আর এভাবে সমস্ত দুষ্টতা ও কষ্টের অবসান হবে। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮; হিতোপদেশ ২:২২) মানবজাতির জন্য তা কতই-না আশীর্বাদের এক বিষয় হবে!

আরেকটা বিষয় হল, সুনামি, ভূমিকম্প অথবা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যেরকম নিরীহ লোকেরা মারা যায়, আসন্ন ধ্বংসে তেমনটা হবে না। বাইবেল বলে, “ঈশ্বর প্রেম” এবং ঈশ্বর, যার নাম যিহোবা, তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, “ধার্ম্মিকেরা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” (১ যোহন ৪:৮; গীতসংহিতা ৩৭:২৯) এখন প্রশ্ন হল, আপনি কীভাবে মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পেতে এবং প্রতিজ্ঞাত আশীর্বাদগুলো লাভ করতে পারেন? রহস্যটা হল: সতর্কবার্তায় মনোযোগ দেওয়া!

জগৎ পরিস্থিতির পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্ক থাকুন

আমরা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারি না যে, ঠিক কবে মন্দতা এবং দুঃখকষ্ট শেষ হবে, কারণ যিশু বলেছিলেন: “সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না, স্বর্গে দূতগণও জানেন না, পুত্ত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন।” তবে, যিশু আমাদের ‘জাগিয়া থাকিবার’ জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। (মথি ২৪:৩৬; ২৫:১৩) কেন? ঈশ্বরের তরফ থেকে ধ্বংস আসার আগে পৃথিবীর পরিস্থিতি কেমন হবে, তা বাইবেল আমাদের জানায়। ঠিক যেমন সিমিউলুর লোকেরা সমুদ্রের জলের আকস্মিক পরিবর্তন দেখে আসন্ন সুনামির বিষয়ে সতর্ক হয়েছিল, একইভাবে জগৎ পরিস্থিতির আকস্মিক পরিবর্তন দেখে আমরা বুঝতে পারব যে, শেষ খুব কাছে। এই প্রবন্ধে দেওয়া বাক্সে বাইবেলে উল্লেখিত কয়েকটা লক্ষণীয় পরিবর্তন সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে।

এটা ঠিক যে, বাক্সে দেওয়া কিছু কিছু ঘটনা আলাদা আলাদাভাবে আগেও ঘটেছে। কিন্তু যিশু বলেছিলেন, “ঐ সকল ঘটনা” দেখে আমরা বুঝতে পারব, শীঘ্রই ধ্বংস আসতে চলেছে। (মথি ২৪:৩৩) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এখানে উল্লেখিত সমস্ত ঘটনা ইতিহাসে কখন (১) পৃথিবীব্যাপী ঘটেছে, (২) একই সময়ে ঘটেছে এবং (৩) মন্দ থেকে মন্দতর হয়েছে?’ এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, আমরা শেষ কালে বাস করছি।

ঈশ্বরের প্রেমের এক প্রকাশ

যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, ‘সতর্কবার্তা জীবন রক্ষা করে।’ ২০০৪ সালের সুনামির পর পুনরায় এই ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এমন যন্ত্র লাগানো হয়েছিল, যা সতর্কবার্তা প্রদান করবে। একইভাবে, শেষ আসার আগে ঈশ্বর লোকেদের সতর্ক করার ব্যবস্থা করেছেন। বাইবেল ভবিষ্যদ্‌বাণী করে: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—মথি ২৪:১৪.

শুধুমাত্র গত বছরেই যিহোবার সাক্ষিরা দেশ ও দ্বীপ মিলিয়ে ২৪০টা জায়গায় ৭০০-রও বেশি ভাষায় সুসমাচার প্রচার করার জন্য ১৯০ কোটিরও বেশি ঘণ্টা ব্যয় করেছে। আমাদের সময়ের এই ইতিবাচক ঘটনা দৃঢ় প্রমাণ দেয় যে, শেষ খুবই কাছে। প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসার দ্বারা পরিচালিত হয়ে, যিহোবার সাক্ষিরা আসন্ন ঈশ্বরের বিচার দিন সম্বন্ধে অন্যদের সাবধান করার জন্য যথাসাধ্য করে থাকে। (মথি ২২:৩৯) আপনি যে এই তথ্য থেকে উপকার লাভ করতে পারেন, এই বিষয়টা আসলে প্রমাণ করে যে, যিহোবা ঈশ্বর আপনাকে ভালোবাসেন। মনে রাখবেন, “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা [ঈশ্বরের] নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” (২ পিতর ৩:৯) ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রতি সাড়া দিয়ে আপনি কি সতর্কবার্তার প্রতি মনোযোগ দেবেন?

নিরাপদ জায়গায় পালিয়ে যান!

আপনার হয়তো মনে আছে, সিমিউলুর সমুদ্র উপকূলীয় গ্রামের লোকেরা সমুদ্রের জল নামতে দেখে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে উঁচু জায়গায় পালিয়ে গিয়েছিল; সমুদ্রের জল ফিরে আসা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করেনি। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে তাদের জীবন রক্ষা পেয়েছিল। রূপকভাবে বললে, আসন্ন মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেরি হয়ে যাওয়ার আগে আপনাকেও উঁচু জায়গায় পালাতে হবে। কীভাবে আপনি তা করতে পারেন? ভাববাদী যিশাইয় এমন এক উৎসাহজনক আমন্ত্রণের বিষয়ে লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যা “শেষকালে” অর্থাৎ আমাদের সময়েও জানানো হচ্ছে। তিনি লিখেছিলেন: “চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে, . . . গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব।”—যিশাইয় ২:২, ৩.

পর্বতের উপরে উঠলে আপনি চারিদিক ভালোভাবে দেখতে এবং এক নিরাপদ স্থান খুঁজে পেতে পারবেন। একইভাবে, বাইবেল থেকে ঈশ্বরের পথ সম্বন্ধে জানার মাধ্যমে বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি তাদের জীবনে রদবদল করার দ্বারা উপকার লাভ করছে। (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) তা করার মাধ্যমে তারা ‘[ঈশ্বরের] মার্গে গমন করিতে’ এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও সুরক্ষামূলক যত্ন উপভোগ করতে শুরু করেছে।

আপনি কি এই আমন্ত্রণের প্রতি সাড়া দেবেন এবং এই বিষম সময়ে ঈশ্বরের প্রেমময় যত্ন থেকে উপকার লাভ করবেন? এই প্রবন্ধের সঙ্গে থাকা বাক্সে ‘শেষ কাল’ সম্বন্ধে কিছু তথ্য রয়েছে, আমরা আপনাকে সেই তথ্য বা প্রমাণগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। (২ তীমথিয় ৩:১) আপনার এলাকার যিহোবার সাক্ষিরা আপনাকে এখানে উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং সেগুলোর প্রয়োগ সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করতে পেরে খুশি হবে। অথবা আপনি আমাদের ওয়েবসাইট www.pr418.com থেকে ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে পারেন। ▪ (w16-E No.2)

^ অনু. 3 ২০০৪ সালের সুনামিতে ২,২০,০০০-রেরও বেশি লোক মারা যায়। এটা ছিল মানব ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী সুনামি।