সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস করে চলুন

যিহোবার প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস করে চলুন

“বিশ্বাস . . . অদৃশ্য বিষয়ের প্রমাণপ্রাপ্তি।” —ইব্রীয় ১১:১.

গান সংখ্যা: ৫৪, ৪৩

১. বিশ্বাস সম্বন্ধে আমাদের কেমন অনুভব করা উচিত?

বিশ্বাস হচ্ছে এমন কিছু, যা সকলের থাকে না। (২ থিষল. ৩:২) কিন্তু যারা যিহোবার উপাসনা করে, তাদের সকলকে তিনি বিশ্বাস প্রদান করেন। (রোমীয় ১২:৩; গালা. ৫:২২) যিহোবা আমাদের বিশ্বাস প্রদান করেছেন বলে আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ!

২, ৩. (ক) বিশ্বাস থাকলে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি? (খ) এখন আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রকে দান করেছেন, যাতে যারা যিশুকে বিশ্বাস করে, তারা সকলে তাদের পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারে। এই দানের ফলে লোকেদের জন্য যিহোবার বন্ধু হওয়া ও চিরকাল বেঁচে থাকা সম্ভবপর হয়েছে। (যোহন ৬:৪৪, ৬৫; রোমীয় ৬:২৩) যিহোবা আমাদের প্রতি কতই-না সদয় মনোভাব দেখিয়েছেন! যদিও আমরা পাপী ও মৃত্যুর যোগ্য, কিন্তু যিহোবা লক্ষ করেছিলেন, আমরা ভালো বিষয়গুলো করতে সমর্থ। (গীত. ১০৩:১০) তিনি আমাদের যিশু ও তাঁর বলিদান সম্বন্ধে সুসমাচার জানতে সাহায্য করেছেন। তাই যখন থেকে আমরা যিশুকে বিশ্বাস করতে ও তাঁকে অনুসরণ করতে শুরু করেছি, তখন থেকে আমরা অনন্তজীবনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পারছি!—পড়ুন, ১ যোহন ৪:৯, ১০.

কিন্তু, বিশ্বাস সম্বন্ধে আমরা আর কী জানতে পারি? ঈশ্বর আমাদের জন্য যা করেছেন এবং ভবিষ্যতে যা করবেন, শুধু সেটুকু জানাই কি বোঝায়, আমাদের বিশ্বাস রয়েছে? আসুন আমরা দেখি, আমাদের আর কী করতে হবে।

“‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর”

৪. আমাদের মধ্যে বিশ্বাস থাকলে তা আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে?

যিহোবা ও যিশুর প্রতি বিশ্বাস থাকলে, তাঁরা আমাদের জন্য যা করেছেন এবং ভবিষ্যতে যা করবেন, আমরা শুধু তা জেনেই সন্তুষ্ট থাকি না। তাঁরা আমাদের যেভাবে জীবনযাপন করতে শিক্ষা দিয়েছেন, আমাদের মধ্যে সেভাবে জীবনযাপন করার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষাও থাকে। আর আমরা অন্যদেরকে তাঁদের সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করার জন্য উৎসুক থাকি। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “তুমি যদি ‘মুখে’ যীশুকে প্রভু বলিয়া স্বীকার কর, এবং ‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর” বা করে চলো “যে, ঈশ্বর তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন, তবে পরিত্রাণ পাইবে। কারণ লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে” বা করে চলে, “ধার্ম্মিকতার জন্য, এবং মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য।”—রোমীয় ১০:৯, ১০; ২ করি. ৪:১৩.

৫. কেন বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রাখার জন্য আমাদের কী করতে হবে? একটা উদাহরণ দিন।

এটা স্পষ্ট যে, ঈশ্বরের নতুন জগতে অনন্তজীবন উপভোগ করার জন্য আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস থাকতে হবে এবং সেই বিশ্বাসকে আমাদের দৃঢ় রাখতে হবে। বিশ্বাস হচ্ছে একটা চারাগাছের মতো। একটা চারাগাছ যাতে সবল থাকে ও বৃদ্ধি পায়, সেইজন্য সেই গাছে সবসময় জল দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমরা যদি সেই চারাগাছে যথেষ্ট জল না দিই, তা হলে সেই গাছ শুকিয়ে মরে যাবে। একইভাবে, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমাদের বিশ্বাস “নিরাময়” বা সবল থাকে ও ‘বাড়িতে’ থাকে।—তীত ২:২; ২ থিষল. ১:৩; লূক ২২:৩২; ইব্রীয় ৩:১২.

বিশ্বাস কী, তা বাইবেল বর্ণনা করে

৬. ইব্রীয় ১১:১ পদে কোন দুটো উপায়ে বিশ্বাস সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে?

বিশ্বাস কী, সেই বিষয়ে বাইবেলের ইব্রীয় ১১:১ পদে বর্ণনা করা হয়েছে। (পড়ুন।) (১) বিশ্বাস হল “প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান।” আমরা যে--বিষয়গুলোর ‘প্রত্যাশা’ করি, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ঈশ্বরের বিভিন্ন প্রতিজ্ঞা। যেমন, দুষ্টতা যে শেষ হবে ও এক নতুন জগৎ আসবে, সেই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। (২) বিশ্বাস হল “অদৃশ্য বিষয়ের প্রমাণপ্রাপ্তি।” আমরা জানি, আমরা নিজেদের চোখে না দেখলেও স্বর্গে যিহোবা ঈশ্বর, যিশু খ্রিস্ট ও স্বর্গদূতেরা রয়েছেন এবং সেখানে রাজ্যের অস্তিত্ব রয়েছে। (ইব্রীয় ১১:৩) ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি এবং অদৃশ্য বিষয়গুলোর প্রতি যে আমাদের সত্যিই বিশ্বাস রয়েছে, তা আমরা কীভাবে দেখাতে পারি? আমরা যেভাবে জীবনযাপন করি এবং আমরা যা বলি ও যা করি, সেগুলোর মাধ্যমে আমরা তা দেখাতে পারি।

৭. বিশ্বাস থাকার অর্থ কী, তা বোঝার জন্য নোহের উদাহরণ কীভাবে আমাদের সাহায্য করে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

বিশ্বাস সম্বন্ধে নোহের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, নোহ “যাহা যাহা তখন দেখা যাইতেছিল না, এমন বিষয়ে আদেশ পাইয়া ভক্তিযুক্ত ভয়ে আবিষ্ট হইয়া আপন পরিবারের ত্রাণার্থে এক জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন।” (ইব্রীয় ১১:৭) যিহোবা যা বলেছিলেন, সেটার প্রতি বিশ্বাস থাকার কারণে নোহ সেই বিশাল জাহাজ নির্মাণ করেছিলেন। তার প্রতিবেশীরা হয়তো তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, কেন তিনি এই জাহাজ তৈরি করছেন। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, নোহ সেই সময় চুপ থাকেননি। বাইবেল বলে, নোহ “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” ছিলেন। (২ পিতর ২:৫) তিনি লোকেদের সতর্ক করেছিলেন, ঈশ্বর একটা জলপ্লাবনের মাধ্যমে দুষ্ট লোকেদের ধ্বংস করতে যাচ্ছেন। তিনি সম্ভবত ঠিক সেই কথাগুলোই পুনরাবৃত্তি করেছিলেন, যা যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “আমার গোচরে সকল প্রাণীর অন্তিমকাল উপস্থিত, কেননা তাহাদের দ্বারা পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ হইয়াছে” আর “আকাশের নীচে প্রাণবায়ুবিশিষ্ট যত জীবজন্তু আছে, সকলকে বিনষ্ট করণার্থে আমি পৃথিবীর উপরে জলপ্লাবন আনিব, পৃথিবীস্থ সকলে প্রাণত্যাগ করিবে।” তারপর নোহ নিশ্চয়ই লোকেদেরকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কী করতে হবে, তা বলেছিলেন। যিহোবা আদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি . . . জাহাজে প্রবেশ করিবে।”—আদি. ৬:১৩, ১৭, ১৮.

৮. বিশ্বাস সম্বন্ধে যাকোব কী বলেছিলেন?

যাকোবও বিশ্বাস সম্বন্ধে লিখেছিলেন। প্রেরিত পৌল ইব্রীয়দের উদ্দেশে চিঠি লেখার পর পরই সম্ভবত তিনি তা লিখেছিলেন। যাকোব লিখেছিলেন: “তোমার কর্ম্মবিহীন বিশ্বাস আমাকে দেখাও, আর আমি তোমাকে আমার কর্ম্ম হইতে বিশ্বাস দেখাইব।” (যাকোব ২:১৮) যাকোব ব্যাখ্যা করেছিলেন, বিশ্বাস থাকার জন্য আমাদের কেবল কোনো কিছু মেনে নেওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে। মন্দদূতেরাও ঈশ্বরের অস্তিত্ব মেনে নেয়, কিন্তু তারা যিহোবার প্রতি বিশ্বাস দেখায় না। এর পরিবর্তে, তারা দৃঢ়ভাবে তাঁর বিরোধিতা করে। (যাকোব ২:১৯, ২০) অন্যদিকে, যখন কোনো ব্যক্তির বিশ্বাস থাকে, তখন তিনি উত্তম কাজের মাধ্যমে ঈশ্বরকে খুশি করেন। অব্রাহাম ঠিক সেটাই করেছিলেন। যাকোব লিখেছিলেন: “আমাদের পিতা অব্রাহাম কর্ম্মহেতু, অর্থাৎ যজ্ঞবেদির উপরে আপন পুত্র ইস্‌হাককে উৎসর্গ করণ হেতু, কি ধার্ম্মিক গণিত হইলেন না? তুমি দেখিতেছ, বিশ্বাস তাঁহার ক্রিয়ার সহকারী ছিল, এবং কর্ম্মহেতু বিশ্বাস সিদ্ধ হইল।” কাজ ছাড়া বিশ্বাস যে নিষ্ফল সেই বিষয়ের উপর জোর দিয়ে যাকোব এরপর বলেছিলেন: “যেমন আত্মাবিহীন [“প্রাণ ছাড়া,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] দেহ মৃত, তেমনি কর্ম্মবিহীন বিশ্বাসও মৃত।”—যাকোব ২:২১-২৩, ২৬.

৯, ১০. পুত্রে বিশ্বাস করে চলার অর্থ কী?

এর ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর, যোহন তার সুসমাচার ও তিনটে চিঠি লিখেছিলেন। অন্যান্য বাইবেল লেখকদের মতো যোহনও বুঝতে পেরেছিলেন, বিশ্বাস বলতে কী বোঝায়। যোহন তার লেখায় অনেক বার এমন একটা গ্রিক ক্রিয়া পদ ব্যবহার করেছিলেন, যেটাকে মাঝে মাঝে ইংরেজিতে “বিশ্বাস করে চলা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।

১০ উদাহরণ স্বরূপ, যোহন বলেছিলেন: “যে কেহ পুত্রে বিশ্বাস করে” বা করে চলে “সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না, কিন্তু ঈশ্বরের ক্রোধ তাহার উপরে অবস্থিতি করে।” (যোহন ৩:৩৬) পুত্রে বিশ্বাস করে চলার জন্য আমাদের অবশ্যই যিশুর বাধ্য হতে হবে। আসলে, যোহনের লেখা পড়লে আমরা বুঝতে পারি, যিশু প্রায়ই এটা বলেছিলেন, অনন্তজীবন লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই তাঁর প্রতি ও তাঁর পিতার প্রতি বিশ্বাস করে চলতে হবে।—যোহন ৩:১৬; ৬:২৯, ৪০; ১১:২৫, ২৬; ১৪:১, ১২.

১১. সত্য জানতে পেরেছি বলে আমরা যে যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ, তা আমরা কীভাবে দেখাতে পারি?

১১ যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা ব্যবহার করে আমাদেরকে তাঁর ও তাঁর পুত্র সম্বন্ধে সত্য বুঝতে এবং তাঁদের প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। (পড়ুন, লূক ১০:২১.) যিহোবা আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেই সমস্ত কিছুর জন্য আমরা যে কৃতজ্ঞ, তা আমরা কীভাবে দেখাতে পারি? “বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা” যিশুর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে তাঁর সঙ্গে এক সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ দিয়েছেন বলে আমাদের সবসময় তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। (ইব্রীয় ১২:২) আর সবসময় যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার ও তাঁর বাক্য পড়ার মাধ্যমে আমাদের ক্রমাগত নিজেদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে হবে।—ইফি. ৬:১৮; ১ পিতর ২:২.

যখনই সুযোগ হয়, তখনই অন্যদের কাছে সুসমাচার জানানোর মাধ্যমে আপনার বিশ্বাস প্রকাশ করে চলুন (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. আমাদের যদি বিশ্বাস থাকে, তা হলে আমরা কী করব?

১২ আমাদের কাজের মাধ্যমে ক্রমাগত এটা দেখানো উচিত, যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা সবসময় লোকেদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করি ও তাদেরকে যিশুর শিষ্য হওয়ার জন্য সাহায্য করি। এ ছাড়া, “সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি” আমরা “সৎকর্ম্ম করি।” (গালা. ৬:১০) আর আমরা “পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ” করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি কারণ আমরা এমন কিছু করতে চাই না, যেটার কারণে যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হতে পারে।—কল. ৩:৫, ৮-১০.

ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হল আমাদের ভিত্তিমূলের একটা অংশ

১৩. “ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস” থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর বাইবেল এই বিষয়টাকে কীভাবে বর্ণনা করে এবং কেন?

১৩ বাইবেল বলে: “বিনা বিশ্বাসে প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়; কারণ যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) “ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস” হল প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে একটা, যা সত্য খ্রিস্টানদের থাকতে হবে। এটা আমাদের ‘ভিত্তিমূলের’ একটা অংশ। (ইব্রীয় ৬:১) কিন্তু, যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ও তা বজায় রাখার জন্য বিশ্বাস ছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণ আমাদের প্রয়োজন।—পড়ুন, ২ পিতর ১:৫-৭; যিহূদা ২০, ২১.

১৪, ১৫. কেন আমাদের শুধু বিশ্বাস নয় কিন্তু সেইসঙ্গে প্রেমও থাকা প্রয়োজন?

১৪ বাইবেলের লেখকরা অন্য যেকোনো গুণের চেয়ে বিশ্বাসের গুরুত্ব আরও বেশি বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু তার অর্থ কি এই যে, বিশ্বাসই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ?

১৫ পৌল বিশ্বাসকে প্রেমের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “যদি আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস থাকে যাহাতে আমি পর্ব্বত স্থানান্তর করিতে পারি, কিন্তু আমার প্রেম না থাকে, তবে আমি কিছুই নহি।” (১ করি. ১৩:২) যিশু বলেছিলেন, ঈশ্বরের প্রতি প্রেম হল ‘ব্যবস্থার মধ্যে মহৎ আজ্ঞা।’ (মথি ২২:৩৫-৪০) প্রেম আমাদের এমন অন্যান্য গুণ গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যেগুলো ঈশ্বরকে খুশি করে। যেমন, বাইবেল বলে, প্রেম “সকলই বিশ্বাস করে।” তাই, প্রেম আমাদেরকে বাইবেলের মধ্যে ঈশ্বর যা-কিছু বলেছেন, সেই সমস্ত কিছুর প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।—১ করি. ১৩:৪, ৭.

১৬, ১৭. বিশ্বাস ও প্রেম সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে আর এই গুণগুলোর মধ্যে কোনটা মহৎ এবং কেন?

১৬ বিশ্বাস ও প্রেম দুটোই অনেক গুরুত্বপূর্ণ গুণ আর বাইবেল লেখকরা প্রায়ই এই গুণগুলো সম্বন্ধে একসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। পৌল তার ভাইদের ‘বিশ্বাস প্রেমরূপ বুকপাটা পরিতে’ উৎসাহিত করেছিলেন। (১ থিষল. ৫:৮) যিশু সম্বন্ধে পিতর লিখেছিলেন: ‘তোমরা তাঁহাকে না দেখিয়াও প্রেম করিতেছ; এখন দেখিতে পাইতেছ না, তথাপি তাঁহাতে বিশ্বাস করিতেছ।’ (১ পিতর ১:৮) যাকোব তাঁর অভিষিক্ত ভাইদের জিজ্ঞেস করেছিলেন: “সংসারে যাহারা দরিদ্র, ঈশ্বর কি তাহাদিগকে মনোনীত করেন নাই, যেন তাহারা বিশ্বাসে ধনবান্‌ হয়, এবং যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে, তাহাদের কাছে অঙ্গীকৃত রাজ্যের অধিকারী হয়?” (যাকোব ২:৫) যোহন লিখেছিলেন, ঈশ্বরের আজ্ঞা হল এই, “যেন আমরা তাঁহার পুত্র যীশু খ্রীষ্টের নামে বিশ্বাস করি, এবং পরস্পর প্রেম করি।”—১ যোহন ৩:২৩.

১৭ কিন্তু, পৌল এটাও লিখেছিলেন: “এখন বিশ্বাস, প্রত্যাশা, প্রেম এই তিনটী আছে, আর ইহাদের মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ঠ।” (১ করি. ১৩:১৩) ভবিষ্যতে, ঈশ্বরের নতুন জগতের প্রতিজ্ঞায় আমাদের আর বিশ্বাস দেখানোর প্রয়োজন হবে না কারণ তা বাস্তবে পরিপূর্ণ হবে। বাইবেলে যে-চমৎকার জীবন সম্বন্ধে বর্ণনা করা আছে, আমরা সেখানে তা উপভোগ করব। তবে, ঈশ্বর ও লোকেদের প্রতি প্রেম আমাদের সবসময় প্রয়োজন হবে। আসলে, তাদের প্রতি আমাদের প্রেম চিরকাল বৃদ্ধি পাবে।

যিহোবা আমাদের বিশ্বাসের উপর আশীর্বাদ বর্ষণ করেছেন

১৮, ১৯. বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেদের বিশ্বাস থাকার কারণে কোন ফল লাভ করা গিয়েছে আর এর জন্য কে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য?

১৮ বর্তমানে যিহোবার লোকেদের ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে ও তারা এই রাজ্যকে সমর্থন করে। আর তারা পরস্পরকে ভালোবাসে। এর পিছনে কারণ হল, তারা ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা নিজেদের জীবনকে নির্দেশিত হতে দেয়। (গালা. ৫:২২, ২৩) এর ফল কী হয়েছে? বিশ্বব্যাপী আশি লক্ষেরও বেশি ভাই-বোন তাদের মণ্ডলীগুলোতে শান্তি ও একতা বজায় রাখছে। স্পষ্টতই, বিশ্বাস ও প্রেম হচ্ছে অনুপ্রেরণাদায়ক গুণ।

১৯ একমাত্র ঈশ্বরের সাহায্যেই আমাদের এই একতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। এর জন্য তিনিই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। (যিশা. ৫৫:১৩) তিনি আমাদের জন্য ‘বিশ্বাস দ্বারা পরিত্রাণ’ সম্ভবপর করেছেন বলে আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ। (ইফি. ২:৮) যিহোবা দিন দিন আরও লোককে তাঁর প্রতি বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করবেন। অবশেষে, পুরো পৃথিবী এমন সিদ্ধ, ধার্মিক ও সুখী লোকেদের দ্বারা পরিপূর্ণ হবে, যারা চিরকাল যিহোবার প্রশংসা করবে!