সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘সানন্দে সদাপ্রভুর সেবা করিবার’ জন্য “বিদেশীদের” সাহায্য করুন

‘সানন্দে সদাপ্রভুর সেবা করিবার’ জন্য “বিদেশীদের” সাহায্য করুন

“সদাপ্রভু বিদেশীদের রক্ষাকারী।”—গীত. ১৪৬:৯.

গান সংখ্যা: ২৫, ৫০

১, ২. (ক) আমাদের কোনো কোনো ভাই-বোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছে? (খ) কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

লিজি নামে একজন ভাই বলেন, ‘বুরুন্ডিতে যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমাদের পরিবার একটা সম্মেলনের মধ্যে ছিল। আমরা দেখছিলাম, লোকেরা দৌড়াচ্ছে আর গুলি করছে। জীবন বাঁচানোর জন্য আমার বাবা-মা এবং আমরা ১১ জন ভাই-বোন সামান্য কিছু জিনিস নিয়ে পালিয়ে যাই। আমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ ১,৬০০ কিলোমিটার (১,০০০ মাইল) পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে মালাউইর একটা শরণার্থী শিবিরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আর বাদবাকি সকলে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়।’

সারা পৃথিবীতে ৬৫০ লক্ষেরও বেশি শরণার্থী রয়েছে, যারা যুদ্ধ বা তাড়নার কারণে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এটা হল, এযাবৎ রেকর্ডকৃত শরণার্থীদের সর্বোচ্চ সংখ্যা। * এদের মধ্যে হাজার হাজার শরণার্থী হল যিহোবার সাক্ষি। অনেকে তাদের প্রিয়জনদের এবং বলতে গেলে প্রায় সর্বস্ব হারিয়েছে। তারা অন্য আর কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছে? আমাদের ভাই-বোনেরা যখন এই ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হয়, তখন কীভাবে আমরা তাদের যিহোবাকে সেবা করার ও সেইসঙ্গে তাদের আনন্দ বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারি? (গীত. ১০০:২) আর সেই শরণার্থীদের কাছে প্রচার করার সর্বোত্তম উপায় কী, যারা এখনও যিহোবাকে জানে না?

একজন শরণার্থীর জীবন

৩. কেন যিশু ও তাঁর অনেক শিষ্য শরণার্থী হিসেবে বাস করতে বাধ্য হয়েছিলেন?

যিহোবার একজন স্বর্গদূত যখন যোষেফকে এই ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, রাজা হেরোদ যিশুকে হত্যা করতে চান, তখন যিশু ও তাঁর বাবা-মা মিশরে শরণার্থী হিসেবে বাস করতে বাধ্য হয়েছিলেন। রাজা হেরোদ মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিলেন। (মথি ২:১৩, ১৪, ১৯-২১) এর অনেক বছর পর, যিশুর শিষ্যরা তাড়নার কারণে ‘যিহূদিয়ার ও শমরিয়ার জনপদে ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়িয়াছিল।’ (প্রেরিত ৮:১) যিশু জানতেন, তাঁর অনুসারীদের মধ্যে অনেকে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হবে। তিনি বলেছিলেন, “তাহারা যখন তোমাদিগকে এক নগরে তাড়না করিবে, তখন অন্য নগরে পলায়ন করিও।” (মথি ১০:২৩) যেকোনো কারণেই হোক, বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া কখনোই সহজ নয়।

৪, ৫. শরণার্থীদের কোন কোন বিপদের মুখোমুখি হতে হয়, যখন তাদের (ক) পালিয়ে যেতে হয়? (খ) কোনো শরণার্থী শিবিরে বাস করতে হয়?

শরণার্থীরা যখন তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে অথবা কোনো শরণার্থী শিবিরে বাস করতে বাধ্য হয়, তখন তাদের বিভিন্ন বিপদের মুখোমুখি হতে হয়। লিজির ছোটো ভাই গ্যাড বলেন, ‘সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে শত শত মৃতদেহের মধ্যে দিয়ে আমাদের হাঁটতে হয়েছিল। আমার বয়স তখন ১২ বছর। হাঁটতে হাঁটতে আমার পা এতটাই ফুলে গিয়েছিল যে, আমি আমার পরিবারকে বলেছিলাম, যেন তারা আমাকে রেখেই চলে যায়। কিন্তু, আমার বাবা যেহেতু কোনোভাবেই আমাকে বিদ্রোহী বাহিনীর হাতে ছেড়ে যেতে চাননি, তাই তিনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন। সেই সময়টাতে আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার এবং তাঁর উপর নির্ভর করার মাধ্যমে দিনের পর দিন টিকে থাকতে পেরেছিলাম, যদিও কখনো কখনো আমাদের কেবল রাস্তার দু-পাশের আম গাছগুলো থেকে আম খেয়ে ক্ষুধা মেটাতে হয়েছিল।’—ফিলি. ৪:১২, ১৩.

লিজির পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকেই অনেক বছর ইউএন-এর শরণার্থী শিবিরগুলোতে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু, সেখানেও বিভিন্ন বিপদ ছিল। লিজি, যিনি এখন একজন সীমা অধ্যক্ষ, বলেন: “অধিকাংশ লোকেরই চাকরি ছিল না। তারা পরচর্চা করত, মদ খেত, চুরি করত এবং অনৈতিক কাজ করত।” খারাপ প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য সাক্ষিদের মণ্ডলীর কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল। (ইব্রীয় ৬:১১, ১২; ১০:২৪, ২৫) সত্যে দৃঢ় থাকার জন্য তারা বিজ্ঞতার সঙ্গে তাদের সময় ব্যবহার করেছিল আর অনেকে অগ্রগামীর কাজ শুরু করেছিল। তারা সবসময় এই বিষয়টা মনে রেখেছিল যে, একসময় তাদের আর শরণার্থী শিবিরে থাকতে হবে না, যেমনটা ইস্রায়েলীয়দেরও প্রান্তরে থাকতে হয়নি। আর এটা তাদের এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল।—২ করি. ৪:১৮.

শরণার্থীদের প্রতি প্রেম দেখান

৬, ৭. (ক) কীভাবে “ঈশ্বরের প্রেম” খ্রিস্টানদের সেই ভাই-বোনদের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে, যাদের প্রয়োজন রয়েছে? (খ) একটা উদাহরণ দিন।

“ঈশ্বরের প্রেম” আমাদের সকলকে ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখাতে অনুপ্রাণিত করে আর তা বিশেষভাবে তাদের কঠিন সময়গুলোতে। (পড়ুন, ১ যোহন ৩:১৭, ১৮.) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রথম শতাব্দীতে দুর্ভিক্ষের কারণে যিহূদিয়ার খ্রিস্টানদের যখন খাবারের প্রয়োজন হয়েছিল, তখন সহবিশ্বাসীরা তাদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করেছিল। (প্রেরিত ১১:২৮, ২৯) প্রেরিত পৌল ও পিতরও খ্রিস্টানদের পরস্পরের প্রতি আতিথেয়তা দেখানোর জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। (রোমীয় ১২:১৩; ১ পিতর ৪:৯) যেহেতু খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করা হয়েছে, যেন তারা অন্য জায়গা থেকে আসা ভাই-বোনদের প্রতি দয়া দেখায়, তাই নিশ্চিতভাবেই আমাদের সেই ভাই-বোনদের প্রতি দয়া দেখানো উচিত, যারা বিপদের মধ্যে রয়েছে অথবা বিশ্বাসের কারণে তাড়না ভোগ করছে! *পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:২৭.

সম্প্রতি, পূর্ব ইউক্রেনে হাজার হাজার যিহোবার সাক্ষি যুদ্ধ ও তাড়নার কারণে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। দুঃখের বিষয় হল, তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হত্যাও করা হয়েছে। কিন্তু, ইউক্রেনের অন্যান্য অংশের এবং রাশিয়ার ভাই-বোনেরা, পালিয়ে আসা অধিকাংশ ভাই-বোনকে তাদের বাড়িতে সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে। উভয় দেশেই ভাই-বোনেরা ‘জগতের না’ হওয়ার মাধ্যমে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে এবং উদ্যোগের সঙ্গে “সুসমাচারের বাক্য” প্রচার করে গিয়েছে।—যোহন ১৫:১৯; প্রেরিত ৮:৪.

শরণার্থীদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য তাদের সাহায্য করুন

৮, ৯. (ক) নতুন একটা দেশে শরণার্থীদের হয়তো কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়? (খ) কেন আমাদের ধৈর্য সহকারে তাদের সাহায্য করা প্রয়োজন?

কোনো কোনো শরণার্থী নিজেদের দেশেরই অন্য কোনো অংশে বাস করতে বাধ্য হয়। কিন্তু, অনেক শরণার্থীকে নতুন একটা দেশে গিয়ে বাস করতে হয়, যে-দেশের সঙ্গে তারা পরিচিত নয়। এটা ঠিক, সরকার হয়তো এইরকম শরণার্থীদের জন্য কিছুটা খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করে থাকে, কিন্তু তারপরও বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকেই যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সেই দেশের খাবার হয়তো তাদের নিজেদের দেশের খাবার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আবার গরমের দেশ থেকে আসা কোনো কোনো শরণার্থী হয়তো জানে না, ঠাণ্ডা আবহাওয়ার মধ্যে কেমন পোশাক-আশাক পরতে হয়। অন্যদের হয়তো আধুনিক জিনিসপত্র ব্যবহারের নিয়মকানুন শিখতে হয়।

শরণার্থীরা নতুন একটা দেশে কীভাবে মানিয়ে নিতে পারে, সেই ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য কোনো কোনো দেশে সরকারি কার্যক্রমের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু, বেশিরভাগ সময়ই আশা করা হয়, কয়েক মাস পর শরণার্থীরা নিজেরাই নিজেদের ভরণ-পোষণ জোগানোর ব্যবস্থা করে নেবে। এটা খুবই কঠিন। কল্পনা করুন, তাদের কাছ থেকে আশা করা হয়, তারা এই সমস্ত কিছু একসঙ্গে শিখবে: নতুন ভাষা, নতুন রীতিনীতি এবং সেইসঙ্গে বিল ও কর পরিশোধ করার, স্কুলে উপস্থিতির বিষয়ে আর এমনকী সন্তানদের শাসন করার বিষয়ে নতুন নতুন আইন! আপনি কি ধৈর্য সহকারে এবং সম্মানের সঙ্গে আমাদের সেই ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারেন, যারা এইরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছে?—ফিলি. ২:৩, ৪.

১০. শরণার্থীরা আসার পর কীভাবে আমরা তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য সাহায্য করতে পারি? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১০ কখনো কখনো কর্তৃপক্ষের কারণে আমাদের শরণার্থী ভাই-বোনদের পক্ষে স্থানীয় মণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কোনো কোনো সরকারি সংগঠন আমাদের ভাই-বোনদের সাহায্য করা বন্ধ করে দেবে বলে ভয় দেখায়। তারা হয়তো এইরকম কথা বলে থাকে, সভায় উপস্থিত হতে পারবে না বলে ভাই-বোনেরা যদি কোনো চাকরি গ্রহণ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তা হলে তারা তাদের সেই দেশে থাকতে দেবে না। ঘাবড়ে গিয়ে এবং নিরুপায় হয়ে কেউ কেউ এইরকম চাকরি গ্রহণ করার প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তাই, শরণার্থী ভাই-বোনেরা আসার পর যত শীঘ্র সম্ভব, তাদের সঙ্গে দেখা করা অত্যন্ত জরুরি। তাদের বুঝতে দিন যে, আমরা তাদের জন্য চিন্তা করি। এই ধরনের চিন্তা এবং ব্যাবহারিক সাহায্য তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।—হিতো. ১২:২৫; ১৮:২৪.

শরণার্থীদের ব্যাবহারিক উপায়ে সাহায্য করুন

১১. (ক) প্রথমে শরণার্থীদের কী প্রয়োজন? (খ) কীভাবে শরণার্থীরা তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে?

১১ প্রথমে, আমাদের হয়তো ভাই-বোনদের খাদ্য, বস্ত্র ও অন্যান্য মৌলিক বিষয় প্রদান করে সাহায্য করতে হবে। * এমনকী ছোটোখাটো উপহার, যেমন কোনো ভাইয়ের জন্য একটা টাইও অনেক অর্থ রাখতে পারে। অবশ্যই, শরণার্থীরা অতিরিক্ত দাবি করতে চাইবে না বরং অন্যেরা তাদের প্রতি যা করছে, সেটার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাইবে। এর ফলে, যে-সমস্ত ভাই-বোন দান করছে, তারা আনন্দ লাভ করতে পারবে। তবে, শরণার্থী ভাই-বোনদের একসময় নিজেদের প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিজেদেরই নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা তাদের আত্মসম্মানবোধ বজায় রাখতে এবং ভাই-বোনদের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক রাখতে সাহায্য করবে। (২ থিষল. ৩:৭-১০) তা সত্ত্বেও, শরণার্থীদের আমাদের ব্যাবহারিক সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে।

কীভাবে আমরা আমাদের শরণার্থী ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারি? (১১-১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২, ১৩. (ক) কীভাবে আমরা শরণার্থীদের ব্যাবহারিক উপায়ে সাহায্য করতে পারি? (খ) একটা উদাহরণ দিন।

১২ শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য আমাদের কাছে যে অনেক টাকাপয়সা থাকতে হবে, এমন নয়। যে-বিষয়গুলো তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেগুলো হল আমাদের সময় ও ভালোবাসা। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি হয়তো তাদের দেখাতে পারেন, কীভাবে যাতায়াতের জন্য গণপরিবহণ ব্যবহার করতে হয় অথবা কীভাবে সস্তায় পুষ্টিকর খাবার কিনতে হয়। আপনি এও দেখাতে পারেন, কীভাবে সেলাই মেশিন অথবা বিভিন্ন কাজের জন্য নানারকম যন্ত্রপাতি কিনতে হয় বা কীভাবে বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করা যায়, যাতে তারা সেগুলো ব্যবহার করে নিয়মিতভাবে আয় করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আপনি ভাই-বোনদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের নতুন মণ্ডলীর অংশ হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারেন। যদি সম্ভব হয়, তা হলে তাদের সঙ্গে করে সভাতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিন। এ ছাড়া, আপনি তাদেরকে মণ্ডলীর জন্য নির্ধারিত এলাকার লোকেদের কাছে প্রচার করার সর্বোত্তম উপায় সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে ও সেইসঙ্গে পরিচর্যায় তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন।

১৩ একটা মণ্ডলীতে যখন চার জন অল্পবয়সি শরণার্থী এসেছিল, তখন বিভিন্ন প্রাচীন তাদের ব্যাবহারিক উপায়ে সাহায্য করেছিলেন। তারা তাদের শিখিয়েছিলেন, কীভাবে গাড়ি চালাতে হয়, কীভাবে কম্পিউটারে চিঠি টাইপ করতে হয় এবং কীভাবে চাকরির জন্য আবেদন করতে হয়। এ ছাড়া, তারা তাদের এও দেখিয়েছিলেন যে, কীভাবে এমন উপায়ে তালিকা তৈরি করা যায়, যাতে তারা যিহোবার সেবাকে প্রথমে রাখতে পারে। (গালা. ৬:১০) খুব শীঘ্রই সেই চার জন অল্পবয়সি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছিল। প্রাচীনদের সাহায্যে এবং যিহোবার সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করার ব্যাপারে নিজেদের প্রচেষ্টার ফলে তারা খ্রিস্টান হিসেবে উন্নতি করেছিল এবং শয়তানের জগতের অংশ হওয়া এড়াতে পেরেছিল।

১৪. (ক) শরণার্থীদের কোন প্রলোভনের সঙ্গে লড়াই করতে হবে? (খ) একটা উদাহরণ দিন।

১৪ অন্যান্য সমস্ত খ্রিস্টানের মতো শরণার্থীদেরও, যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের চেয়ে বরং বস্তুগত বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখার প্রলোভন ও চাপের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। * আগে উল্লেখিত লিজির এবং তার ভাই-বোনদের মনে আছে যে, পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের বাবা বিশ্বাস সম্বন্ধে তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করেছিলেন। তারা বলেন: “একটা একটা করে তিনি আমাদের সমস্ত অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দিয়েছিলেন। অবশেষে, তিনি খালি ব্যাগ তুলে ধরে হেসে বলেছিলেন: ‘দেখেছ? আমাদের এগুলোর কিছুরই প্রয়োজন নেই।’”—পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:৮.

শরণার্থীদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর যত্ন নিন

১৫, ১৬. (ক) কীভাবে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পারি? (খ) কীভাবে আমরা তাদের আবেগগতভাবে সাহায্য করতে পারি?

১৫ শরণার্থীদের খাদ্য ও বস্ত্রের চেয়ে আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন। তাদের বাইবেল থেকে উৎসাহের এবং আবেগগত সাহায্যের প্রয়োজন। (মথি ৪:৪) শরণার্থীরা যে-ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষার সাহিত্যাদির ব্যবস্থা করার এবং তাদের ভাষায় কথা বলতে পারে এমন ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, প্রাচীনরা শরণার্থীদের সাহায্য করতে পারেন। যেহেতু অনেক শরণার্থী তাদের পরিচিত সমস্ত কিছু ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছে, তাই এই সাহায্য তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা তাদের পরিবার, পরিচিত পরিবেশ ও মণ্ডলীর ভাই-বোনদের অভাব বোধ করে। তাদের উপলব্ধি করতে হবে, যিহোবা তাদের ভালোবাসেন এবং তাদের প্রতি সহবিশ্বাসীদের সমবেদনা রয়েছে। শরণার্থীরা যদি তা উপলব্ধি করতে না পারে, তা হলে তারা হয়তো সাহায্যের জন্য নিজেদের দেশ থেকে আসা এমন লোকেদের কাছে যেতে পারে, যারা যিহোবার সেবা করে না। (১ করি. ১৫:৩৩) আমরা যখন তাদের এইরকম উপলব্ধি করতে সাহায্য করি যে, তারা মণ্ডলীর অংশ, তখন আমরা আসলে “বিদেশীদের” রক্ষা করার ব্যাপারে যিহোবার সহকারী হিসেবে কাজ করি।—গীত. ১৪৬:৯.

১৬ যিশু ও তার পরিবার ততদিন পর্যন্ত নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসতে পারেননি, যতদিন পর্যন্ত তাড়নাকারীরা শাসন করেছিল। একইরকম কারণগুলোর জন্য বর্তমানেও শরণার্থীরা হয়তো নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে না। আবার অন্যেরা হয়তো ফিরে যেতে চায় না। লিজি বলেন, অনেক বাবা-মা পরিবারের সদস্যদের নিজেদের দেশে ধর্ষিত ও খুন হতে দেখেছেন আর এই কারণে তারা ছেলে-মেয়ে নিয়ে সেখানে ফিরে যেতে চান না। ভাই-বোনদের সাহায্য করার জন্য আমাদের “পরদুঃখে দুঃখিত, ভ্রাতৃপ্রেমিক, স্নেহবান্‌ ও নম্রমনা” হতে হবে। (১ পিতর ৩:৮) তাড়নার কারণে কোনো কোনো শরণার্থী অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করা এড়িয়ে চলেন ও সেইসঙ্গে নিজেদের কষ্ট নিয়ে কথা বলতে হয়তো লজ্জা বোধ করেন আর তা বিশেষভাবে তাদের সন্তানদের সামনে। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি যদি এইরকম কষ্ট ভোগ করতাম, তা হলে আমি কেমন আচরণ আশা করতাম?’—মথি ৭:১২.

যখন আমরা ন-সাক্ষি শরণার্থীদের কাছে প্রচার করি

১৭. কীভাবে আমাদের প্রচার কাজ শরণার্থীদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে?

১৭ বর্তমানে, অনেক শরণার্থী এমন দেশগুলো থেকে আসে, যেখানে আমাদের প্রচার কাজের উপর সীমা আরোপ করা হয়েছে। উদ্যোগী সাক্ষিদের কারণে হাজার হাজার শরণার্থী প্রথম বারের মতো “রাজ্যের বাক্য” জানতে পারছে। (মথি ১৩:১৯, ২৩) “ভারাক্রান্ত” অনেক ব্যক্তি আমাদের সভাগুলোতে এসে সান্ত্বনা ও স্বস্তি লাভ করে এবং অবিলম্বে এই কথা বলতে অনুপ্রাণিত হয়: “ঈশ্বর বাস্তবিকই তোমাদের মধ্যবর্ত্তী।”—মথি ১১:২৮-৩০; ১ করি. ১৪:২৫.

১৮, ১৯. আমরা যখন শরণার্থীদের কাছে প্রচার করি, তখন কীভাবে আমরা বিজ্ঞ মনোভাব দেখাতে পারি?

১৮ আমরা যখন শরণার্থীদের কাছে প্রচার করি, তখন আমাদের বিজ্ঞ ও “সতর্ক” মনোভাব দেখাতে হবে। (মথি ১০:১৬; হিতো. ২২:৩) শরণার্থীরা যখন কথা বলে, তখন ধৈর্য ধরে তাদের কথা শুনুন, তবে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করবেন না। শাখা অফিস ও সেইসঙ্গে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যে-সমস্ত নির্দেশনা দেয়, সেগুলো আমাদের অনুসরণ করা উচিত, যাতে আমরা নিজেদের ও অন্যদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে না ফেলি। যেহেতু শরণার্থীরা বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতি থেকে আসে, তাই তাদের অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে আমাদের জানতে ও সেগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো কোনো দেশের লোকেরা মহিলাদের পোশাক-আশাকের ব্যাপারে বেশ রক্ষণশীল হয়ে থাকে। তাই, তাদের কাছে প্রচার করার সময় এমনভাবে পোশাক-আশাক পরা উচিত, যাতে তারা বিঘ্ন না পায়।

১৯ আমরা এমন লোকেদের সাহায্য করতে চাই, যারা কষ্টভোগ করছে, এমনকী তারা যদি যিহোবার সেবা না-ও করে। আমরা যখন তাদের সাহায্য করি, তখন আমরা যিশুর দৃষ্টান্তে বলা শমরীয়ের উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করি। (লূক ১০:৩৩-৩৭) লোকেদের সাহায্য করার সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে, তাদের সুসমাচার সম্বন্ধে জানানো। অনেক শরণার্থীকে সাহায্য করেছেন এমন একজন প্রাচীন বলেন যে, প্রথমেই তাদের এটা জানিয়ে দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা যিহোবার সাক্ষি। তাদের বুঝতে দেওয়া উচিত, বস্তুগতভাবে সাহায্য করার পরিবর্তে প্রথমত আমরা তাদের বাইবেলের অপূর্ব আশা সম্বন্ধে বোঝার জন্য সাহায্য করতে এসেছি।

আনন্দদায়ক ফল

২০, ২১. (ক) শরণার্থীদের প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখানোর ফলে কোন কোন উত্তম ফল লাভ করা যায়? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী শিখতে পারব?

২০ আমরা যখন “বিদেশীদের” প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখাই, তখন তা উত্তম ফল নিয়ে আসে। একজন খ্রিস্টান বোন বর্ণনা করে বলেন, এরিট্রিয়াতে যখন তাড়না দেখা দেয়, তখন তার পরিবারকে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে হয়। তার সন্তানদের মধ্যে চার জনকে আট দিন ধরে মরুভূমির মধ্যে দিয়ে যাত্রা করতে হয়। অবশেষে, এক ক্লান্তিকর যাত্রার পর তারা সুদানে পৌঁছান। তিনি বলেন, “ভাই-বোনেরা তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মতো ব্যবহার করে এবং তাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও যাতায়াতের ব্যবস্থা করে। একই ঈশ্বরের উপাসনা করে বলে কারাই-বা অপরিচিত ব্যক্তিদের নিজেদের বাড়িতে সাদরে গ্রহণ করে? কেবল যিহোবার সাক্ষিরা!”—পড়ুন, যোহন ১৩:৩৫.

২১ এমন অনেক সন্তান সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা শরণার্থী হিসেবে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে আসে? পরের প্রবন্ধে আমরা শিখতে পারব, কীভাবে আমরা সকলে এই পরিবারগুলোকে সানন্দে যিহোবার সেবা করার জন্য সাহায্য করতে পারি।

^ অনু. 2 এই প্রবন্ধে “শরণার্থী” শব্দটা সেই লোকেদের নির্দেশ করে, যারা যুদ্ধ, তাড়না অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নিজেদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তাদের হয়তো নতুন একটা দেশে কিংবা নিজেদের দেশের অন্য একটা অংশে গিয়ে বাস করতে হয়। শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য এক আন্তর্জাতিক সংগঠন, ইউএনএইচসিআর-এর রিপোর্ট অনুসারে, সারা পৃথিবীতে প্রতি ১১৩ জনের মধ্যে ১ জন বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়।

^ অনু. 6 ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৮-১২ পৃষ্ঠায় দেওয়া “তোমরা অতিথিসেবা ভুলিয়া যাইও না” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

^ অনু. 11 একজন শরণার্থী আসার পর যত শীঘ্র সম্ভব, প্রাচীনদের যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য সংগঠিত (ইংরেজি) বইয়ের ৮ অধ্যায়ের ৩০ অনুচ্ছেদে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা উচিত। শরণার্থী ভাই বা বোনের মণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য প্রাচীনরা jw.org ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেদের শাখা অফিসে চিঠি লিখতে পারেন। আর এই সময়ের মধ্যে তারা সেই শরণার্থী ভাই বা বোনের আধ্যাত্মিক অবস্থা অর্থাৎ ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন, তা বোঝার জন্য বিচক্ষণতার সঙ্গে তাকে তার মণ্ডলী ও পরিচর্যা সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন।

^ অনু. 14 ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৭-২৬ পৃষ্ঠায় দেওয়া “কেউই দুই কর্তার সেবা করতে পারে না” এবং “সাহস করুন—যিহোবা আপনার সহায়!” শিরোনামের প্রবন্ধগুলো দেখুন।