সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“ইহাদের অপেক্ষা তুমি কি আমাকে অধিক প্রেম কর?”

“ইহাদের অপেক্ষা তুমি কি আমাকে অধিক প্রেম কর?”

“হে যোহনের পুত্র শিমোন, ইহাদের অপেক্ষা তুমি কি আমাকে অধিক প্রেম কর?”—যোহন ২১:১৫.

গান সংখ্যা: ৩২, ৪৫

১, ২. সারারাত ধরে মাছ ধরার চেষ্টা করার পর পিতর কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করেছিলেন?

যিশুর সাত জন শিষ্য সারারাত ধরে গালীল সমুদ্রে মাছ ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তারা একটা মাছও ধরতে পারেন না। এখন সকাল হয়ে গিয়েছে আর পুনরুত্থিত যিশু সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে তাঁর শিষ্যদের দেখছেন। এরপর তিনি তাদের বলেন: “নৌকার দক্ষিণ পার্শ্বে জাল ফেল, পাইবে। অতএব তাঁহারা জাল ফেলিলেন, এবং এত মাছ পড়িল যে, তাঁহারা আর তাহা টানিয়া তুলিতে পারিলেন না।”—যোহন ২১:১-৬.

যিশু আহারের জন্য তাঁর শিষ্যদের রুটি ও মাছ দেন। এরপর, তিনি শিমোন পিতরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন: “হে যোহনের পুত্র শিমোন, ইহাদের অপেক্ষা তুমি কি আমাকে অধিক প্রেম কর?” যিশু জানতেন, পিতর মাছ ধরতে ভালোবাসেন। হতে পারে যিশু পিতরকে জিজ্ঞেস করছিলেন যে, পিতর মাছ ধরার ব্যাবসার চেয়ে যিশুকে ও তাঁর শিক্ষাগুলোকে আরও বেশি ভালোবাসেন কি না। পিতর যিশুকে উত্তর দেন: “প্রভু; আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভাল বাসি।” (যোহন ২১:১৫) পিতর একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করেন: খ্রিস্টের প্রতি তার ভালোবাসা যেন অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়। সেই দিন থেকে পিতর প্রচার কাজে ব্যস্ত থাকার মাধ্যমে খ্রিস্টের প্রতি তার প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন। আর তিনি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছিলেন।

৩. খ্রিস্টানদের কোন বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে?

পিতরের প্রতি বলা যিশুর কথাগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন আমরা খ্রিস্টের প্রতি আমাদের প্রেমকে দুর্বল হয়ে যেতে না দিই। যিশু জানতেন, এই বিধিব্যবস্থায় জীবন অনেক চাপপূর্ণ হবে এবং আমরা বিভিন্ন উদ্‌বিগ্নতা ও সমস্যার মুখোমুখি হব। যিশু তাঁর বীজবাপকের দৃষ্টান্তে বলেছিলেন, কিছু লোক “রাজ্যের বাক্য” শুনবে এবং প্রথমে এর প্রতি উদ্যোগ দেখাবে। কিন্তু, পরে ‘সংসারের চিন্তা ও ধনের মায়া সেই বাক্য চাপিয়া রাখিবে’ এবং সেই লোকেরা তাদের উদ্যোগ হারিয়ে ফেলবে। (মথি ১৩:১৯-২২; মার্ক ৪:১৯) আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে রোজকার জীবনের উদ্‌বিগ্নতা, যিহোবার প্রতি আমাদের সেবার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, যিশু তাঁর শিষ্যদের এই সাবধানবাণী দিয়েছিলেন: “আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়।”—লূক ২১:৩৪.

৪. খ্রিস্টের প্রতি আমাদের প্রেম দৃঢ় কি না, তা জানার জন্য কী আমাদের সাহায্য করবে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

পিতরের মতো আমরাও প্রচার কাজকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখার মাধ্যমে দেখাতে পারি যে, আমরা খ্রিস্টকে ভালোবাসি। কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমরা ক্রমাগত এই প্রেম বজায় রাখব? আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘কোন বিষয়টা আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি? আমি কি যিহোবাকে সেবা করার মাধ্যমে আনন্দ লাভ করি, না কি অন্য কিছু করার মাধ্যমে?’ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য, আসুন আমরা তিনটে ক্ষেত্র পরীক্ষা করে দেখি, যেগুলো খ্রিস্টের প্রতি আমাদের প্রেমকে দুর্বল করে দিতে পারে। এগুলো হল, চাকরি, বিনোদন এবং বস্তুগত বিষয়।

চাকরিকে সঠিক স্থানে রাখুন

৫. পরিবারের মস্তকদের কোন দায়িত্ব রয়েছে?

পিতর মাছ ধরার কাজ যে কেবল উপভোগ করতেন, এমন নয়। এই কাজের মাধ্যমে তিনি তার পরিবারের ভরণ-পোষণও জোগাতেন। বর্তমানেও, যিহোবা পরিবারের মস্তকদের তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। (১ তীম. ৫:৮) এই দায়িত্ব পালন করার জন্য তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কিন্তু এই শেষকালে, চাকরির কারণে অনেক উদ্‌বিগ্নতার সৃষ্টি হতে পারে।

৬. কেন চাকরির কারণে লোকেরা চাপগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে?

প্রায়ই, চাকরির চেয়ে বরং চাকরি প্রয়োজন এমন লোকেদের সংখ্যা আরও বেশি হয়ে থাকে। এই কারণে চাকরি খোঁজার জন্য লোকেরা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। অনেকে ওভারটাইম করার বাধ্যবাধকতা অনুভব করে আর বেশিরভাগ সময়ই তা কম পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আরও কম কর্মী ব্যবহার করে বেশি বেশি পণ্য উৎপাদন করার চেষ্টা করছে। তাই, কর্মীরা হয়তো চাপগ্রস্থ, ক্লান্ত এবং এমনকী অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেকে এই ভেবে ভয় পায়, তারা যদি তাদের নিয়োগকর্তার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ না করে, তা হলে তারা চাকরি হারাবে।

৭, ৮. (ক) কার প্রতি আমরা সবচেয়ে বেশি অনুগত? (খ) থাইল্যান্ডের একজন ভাই তার কাজের বিষয়ে কোন মূল্যবান শিক্ষা লাভ করেছিলেন?

খ্রিস্টান হিসেবে আমরা অন্য যে-কারো চেয়ে—যার মধ্যে আমাদের নিয়োগকর্তাও রয়েছেন—যিহোবার প্রতি আরও বেশি অনুগত। (লূক ১০:২৭) আমাদের চাকরি হল, আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার এবং আমাদের পরিচর্যার কাজ চালিয়ে যাওয়ার এক উপায়। কিন্তু, আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে কর্মক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্বগুলো, আমাদের উপাসনার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা থাইল্যান্ডের একজন ভাইয়ের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি। তিনি বলেন: “কম্পিউটার মেরামত করার চাকরি আমি ভীষণ উপভোগ করতাম কিন্তু এরজন্য দীর্ঘসময় কাজ করতে হতো। আর এর ফলে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য বলতে গেলে আমার হাতে কোনো সময়ই থাকত না। অবশেষে আমি বুঝতে পারি, রাজ্যের বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখতে হলে আমাকে আমার চাকরির ধরন পরিবর্তন করতে হবে।” এই ভাই কী করেছিলেন?

তিনি বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে পরিকল্পনা করার এবং টাকাপয়সা জমানোর পর আমি রাস্তায় আইসক্রিম বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই। প্রথম প্রথম টাকাপয়সার সমস্যা দেখা দিয়েছিল এবং আমি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলাম। পুরোনো সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হলে তারা আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত এবং জিজ্ঞেস করত যে, কেন আমি এয়ার কন্ডিশন্ড রুমে বসে কম্পিউটারে কাজ করার চেয়ে আইসক্রিম বিক্রি করার কথা চিন্তা করেছি। আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি ও তাঁকে বলি, যেন তিনি আমাকে পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার শক্তি দেন এবং প্রচার, সভা ও ব্যক্তিগত অধ্যয়নের পিছনে আরও বেশি সময় ব্যয় করার ব্যাপারে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেন। শীঘ্রই, আমার পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। আমি আমার ক্রেতাদের পছন্দের স্বাদ বুঝে যাই এবং আইসক্রিম বানানোর কাজে আরও দক্ষ হয়ে উঠি। অল্পসময়ের মধ্যেই, প্রতিদিন আমার সমস্ত আইসক্রিম বিক্রি হয়ে যেতে শুরু করে। আসলে, কম্পিউটারের কাজ করে আমি আর্থিকভাবে যতটা না সচ্ছল ছিলাম, তার চেয়ে আরও বেশি সচ্ছল হতে শুরু করি। এটা আমাকে আগের চেয়ে আরও বেশি ধন্য বা সুখী করেছে, কারণ আগের চাকরিতে আমার যে-চাপ ও উদ্‌বিগ্নতা ছিল, সেগুলো এখন আর নেই। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এখন আমি যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে পেরেছি।’—পড়ুন, মথি ৫:৩, .

৯. কীভাবে আমরা সবসময় চাকরির প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারি?

আমরা যখন কঠোর পরিশ্রম করি, তখন যিহোবা সেটা উপলব্ধি করেন। কঠোর পরিশ্রম করা সত্যিই পরিতৃপ্তিদায়ক। (হিতো. ১২:১৪) কিন্তু, আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যেন আমাদের চাকরি, যিহোবার প্রতি আমাদের সেবা থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে না ওঠে। আমাদের মৌলিক বস্তুগত প্রয়োজন সম্বন্ধে বলতে গিয়ে যিশু বলেছিলেন: “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।” (মথি ৬:৩৩) তবে, চাকরির প্রতি আমাদের এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে কি না, তা আমরা কীভাবে বুঝতে পারব? আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি আমার চাকরিকে অনেক আগ্রহজনক ও আনন্দদায়ক বলে মনে করি আর অন্যদিকে ঈশ্বরের প্রতি আমার সেবাকে অতি সাধারণ অথবা এমনকী একঘেয়ে হিসেবে দেখি?’ এই প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করা আমাদের স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করবে যে, আমরা আসলে কোন বিষয়টাকে প্রকৃতই ভালোবাসি।

১০. যিশু কোন মূল্যবান শিক্ষা প্রদান করেছিলেন?

১০ কোন বিষয়টা আমাদের জীবনে প্রথমে থাকা উচিত, সেই বিষয়ে যিশু আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। একবার তিনি মরিয়ম ও মার্থা নামে দু-জন বোনের বাড়িতে গিয়েছিলেন। যিশু সেখানে যাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে মার্থা তাঁর জন্য খাবার প্রস্তুত করতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু মরিয়ম যিশুর কাছে বসে মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শুনছিলেন। যেহেতু মরিয়ম মার্থাকে সাহায্য করছিলেন না, তাই মার্থা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু, যিশু মার্থাকে বলেছিলেন: “মরিয়ম সেই উত্তম অংশটী মনোনীত করিয়াছে, যাহা তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইবে না।” (লূক ১০:৩৮-৪২) এখানে যিশু এক মূল্যবান শিক্ষা প্রদান করেছিলেন। নিজেদের প্রয়োজনগুলোর দ্বারা বিক্ষিপ্ত হওয়ার বিষয়টা এড়িয়ে চলার এবং খ্রিস্টের প্রতি আমাদের প্রেমের প্রমাণ দেওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই “উত্তম অংশটী” মনোনীত করতে হবে। এর অর্থ হল, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অবশ্যই সবসময় আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে হবে।

বিনোদন ও আমোদপ্রমোদ সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি

১১. বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়ে বাইবেল কী বলে?

১১ আমাদের জীবন খুবই ব্যস্ত আর তাই মাঝে মাঝে আমাদের বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। বাইবেলে আমরা পড়ি: “ভোজন পান করা এবং নিজ পরিশ্রমের মধ্যে প্রাণকে সুখভোগ করান ব্যতীত আর মঙ্গল মানুষের হয় না।” (উপ. ২:২৪) যিশু জানতেন, তাঁর শিষ্যদের জন্য বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একবার শিষ্যরা অনেক সময় ধরে প্রচার কাজে ব্যস্ত থাকার পর, যিশু তাদের বলেছিলেন: “তোমরা বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে আসিয়া কিছু কাল বিশ্রাম কর।”—মার্ক ৬:৩১, ৩২.

১২. কেন আমাদের বিনোদন ও আমোদপ্রমোদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে? একটা উদাহরণ দিন।

১২ বিনোদন ও আমোদপ্রমোদ আমাদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে। কিন্তু, আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, যেন এই আমোদপ্রমোদ আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে না ওঠে। প্রথম শতাব্দীতে অনেকের এইরকম মনোভাব ছিল: “আইস, আমরা ভোজন পান করি, কেননা কল্য মরিব।” (১ করি. ১৫:৩২) বর্তমানেও এই একই মনোভাব খুবই সাধারণ। উদাহরণ স্বরূপ, পশ্চিম ইউরোপের একজন যুবক আমাদের সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করেন। তবে, আমোদপ্রমোদের প্রতি তার এতটাই ভালোবাসা ছিল যে, তিনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দেন। কিন্তু, পরে তিনি বুঝতে পারেন, আমোদপ্রমোদের প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া তার জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। তিনি আবারও বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন এবং একসময় একজন প্রকাশক হওয়ার জন্য যোগ্য হয়ে ওঠেন। বাপ্তিস্মের পর তিনি বলেছিলেন: “আমার একটাই দুঃখ, এই জগতের আমোদপ্রমোদের অনুধাবন করার চেয়ে বরং যিহোবার সেবা করা যে আরও সুখ নিয়ে আসে, সেটা আমি অনেক দেরিতে বুঝতে পেরেছি।”

১৩. (ক) একটা উদাহরণ তুলে ধরুন, যেটা দেখায় যে, কেন অতিরিক্ত বিনোদন ও আমোদপ্রমোদ ভালো নয়। (খ) বিনোদন ও আমোদপ্রমোদের বিষয়ে কী আমাদের এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৩ আমাদের বিনোদন এমন হওয়া উচিত, যেন আমরা বিশ্রাম করতে ও শক্তি ফিরে পেতে পারি। তা হলে, বিনোদনের পিছনে আমাদের কতটা সময় ব্যয় করা উচিত? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আমরা এভাবে চিন্তা করতে পারি। অনেক লোক কেক ও মিষ্টি খেতে পছন্দ করে। কিন্তু আমরা জানি, আমরা যদি সবসময় এগুলো খাই, তা হলে এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে। আমরা যদি সুস্থ থাকতে চাই, তা হলে আমাদের এমন খাবার খেতে হবে, যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো। একইভাবে, আমরা যদি আমাদের অধিকাংশ সময় বিনোদন ও আমোদপ্রমোদের পিছনে ব্যয় করি, তা হলে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কী আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, বিনোদন সম্বন্ধে আমাদের এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি আছে কি না? একটা যে-বিষয় আমরা করতে পারি, তা হল একটা সপ্তাহ বাছাই করা আর সেই সপ্তাহে কত ঘণ্টা আমরা যিহোবার সেবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজগুলোর—যেমন আমাদের সভা, প্রচার কাজ ও বাইবেলে অধ্যয়নের—পিছনে ব্যয় করি, তা লিখে রাখা। এরপর আমরা সেই একই সপ্তাহে কত ঘণ্টা বিনোদনের—যেমন খেলাধুলা, টেলিভিশন অথবা ভিডিও গেমের—পিছনে ব্যয় করি, তা লিখে রাখতে পারি। এই দুটো সংখ্যা তুলনা করলে আমরা কী দেখতে পাই? আমাদের কি কোনো পরিবর্তন করা প্রয়োজন?—পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬.

১৪. কী আমাদের উত্তম বিনোদন ও আমোদপ্রমোদ বাছাই করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৪ যিহোবা আমাদের বিনোদন বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন আর পরিবারের মস্তকরাও তাদের পরিবারের জন্য বিনোদন বাছাই করতে পারেন। বাইবেলে দেওয়া যিহোবার নীতিগুলো থেকে আমরা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে জানতে পারি। এই নীতিগুলো আমাদের উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। * উত্তম আমোদপ্রমোদ হল, “ঈশ্বরের দান।” (উপ. ৩:১২, ১৩) এটা ঠিক যে, বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের আমোদপ্রমোদ পছন্দ করে। (গালা. ৬:৪, ৫) কিন্তু, আমরা যে-আমোদপ্রমোদই বাছাই করি না কেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যিশু বলেছিলেন: “যেখানে তোমার ধন, সেইখানে তোমার মনও থাকিবে।” এর অর্থ হল, আমরা যখন কোনো কিছুকে খুব বেশি ভালোবাসি, তখন সেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং আমরা ক্রমাগত সেটার প্রতি বেশি মনোযোগ দিই। (মথি ৬:২১) আমাদের রাজা যিশুর প্রতি আমাদের প্রেম আমাদেরকে এমন উপায়ে চিন্তা করতে, কথা বলতে ও কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে, যা দেখায় যে, ঈশ্বরের রাজ্য আমাদের কাছে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে শ্রেয় বা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।—ফিলি. ১:৯, ১০; পাদটীকা।

বস্তুবাদিতার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই

১৫, ১৬. (ক) কীভাবে বস্তুবাদিতা আমাদের জন্য এক ফাঁদ হয়ে উঠতে পারে? (খ) বস্তুগত বিষয় সম্বন্ধে যিশু কোন বিজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছিলেন?

১৫ বর্তমানে অনেকে মনে করে, তাদের কাছে অবশ্যই হালফ্যাশনের পোশাক-আশাক এবং সর্বাধুনিক মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য জিনিস থাকতে হবে। তারা বস্তুবাদিতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে আর এটা হল এমন এক জীবনধারা, যেখানে বস্তুগত বিষয় ও টাকাপয়সাকে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। একজন খ্রিস্টান হিসেবে আপনার কাছে কী সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘মণ্ডলীর সভাগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পিছনে আমি যতটা না সময় ব্যয় করি, তার চেয়ে বেশি সময় কি আমি সর্বাধুনিক গাড়ি অথবা ফ্যাশনের কথা চিন্তা করায় ব্যয় করি? দৈনন্দিন কাজকর্মে আমি কি এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, এর ফলে প্রার্থনা ও বাইবেল পড়ার জন্য আমার হাতে বেশি সময় থাকে না?’ আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে বস্তুগত বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের ভালোবাসা, খ্রিস্টের প্রতি আমাদের ভালোবাসার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। যিশুর এই কথাগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত: “সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও।” (লূক ১২:১৫) কেন তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন?

১৬ যিশু বলেছিলেন, “কেহই দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না।” তিনি আরও বলেছিলেন: “তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।” আমরা যিহোবাকে আমাদের সর্বোত্তমটা দিতে এবং একইসঙ্গে বস্তুগত বিষয়গুলোর উপর বেশি মনোযোগ দিতে পারি না। যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন, আমরা হয় ‘এক জনকে দ্বেষ করিব, আর এক জনকে প্রেম করিব’ নতুবা ‘এক জনের প্রতি অনুরক্ত হইব, আর এক জনকে তুচ্ছ করিব।’ (মথি ৬:২৪) যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই আমাদের ক্রমাগত বস্তুবাদিতা-সহ ‘মাংসের অভিলাষের’ বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।—ইফি. ২:৩.

১৭. (ক) কেন কেউ কেউ বস্তুগত বিষয়গুলোর প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখাকে কঠিন বলে মনে করে? (খ) কী আমাদের বস্তুবাদিতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে?

১৭ অনেকে তাদের নিজেদের আকাঙ্ক্ষা ও আমোদপ্রমোদ নিয়ে এতটাই ব্যতিব্যস্ত যে, তারা বস্তুগত বিষয়গুলোর প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখাকে কঠিন বলে মনে করে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ২:১৪.) যেহেতু তারা ভালোভাবে চিন্তা করে না, তাই সদসৎ বিষয় অর্থাৎ কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, তা নির্ণয় করা হয়তো তাদের জন্য কঠিন হয়ে থাকে। (ইব্রীয় ৫:১১-১৪) ফলে, বস্তুগত বিষয়গুলোর ব্যাপারে তাদের আকাঙ্ক্ষা ধীরে ধীরে আরও প্রবল হতে থাকে। আর তারা যত পেতে থাকে, তাদের চাহিদা আরও বাড়তে থাকে। (উপ. ৫:১০) কিন্তু, এইরকম চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে লড়াই করার একটা উপায় আছে। নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য পড়া আমাদের শক্তিশালী করবে, যাতে আমরা বস্তুবাদিতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি। (১ পিতর ২:২) যিশু যিহোবার প্রজ্ঞা নিয়ে ধ্যান করেছিলেন আর এটা তাঁকে দিয়াবলের বিভিন্ন প্রলোভন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেছিল। (মথি ৪:৮-১০) বর্তমানেও, আমরা যদি বস্তুবাদিতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই, তা হলে আমাদের জীবনে যিহোবার প্রজ্ঞা কাজে লাগাতে হবে। এভাবে আমরা যিশুকে দেখাতে পারব যে, আমরা বস্তুগত বিষয়গুলোর চেয়ে তাঁকে বেশি ভালোবাসি।

আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী? (১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮. আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

১৮ যিশু যখন পিতরকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলেন, “ইহাদের অপেক্ষা তুমি কি আমাকে অধিক প্রেম কর?” তখন তিনি পিতরকে এই শিক্ষা দিচ্ছিলেন যে, যিহোবাকে সেবা করা তার জীবনের প্রধান বিষয় হতে হবে। এটা আগ্রহজনক, পিতরের নামের অর্থ হল “পাথরের খণ্ড।” পিতরের উত্তম গুণাবলিকে একটা পাথরের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। (প্রেরিত ৪:৫-২০) আজকে, আমরাও খ্রিস্টের প্রতি আমাদের প্রেমকে দৃঢ় রাখতে চাই। তাই, আমরা এই বিষয়ে লক্ষ রাখি, যেন চাকরি, বিনোদন ও বস্তুগত বিষয়গুলো আমাদের জীবনে সঠিক স্থানে থাকে। তা হলে, এটা এমন হবে যেন পিতরের মতো আমরাও বলছি: “প্রভু; আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভাল বাসি।”

^ অনু. 14 ২০১১ সালের ১৫ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৯-১২ পৃষ্ঠায় দেওয়া “আপনার বিনোদন কি উপকারজনক?” শিরোনামের প্রবন্ধের ৬-১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন।