সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তিনি . . . তোমার সমস্ত পরিকল্পনা সফল করুন”

“তিনি . . . তোমার সমস্ত পরিকল্পনা সফল করুন”

“সদাপ্রভুতে আমোদ কর, তিনি তোমার মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন।” —গীত. ৩৭:৪.

গান সংখ্যা: ১১, ৪৪

১. তরুণ-তরুণীদের তাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অবশ্যই কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং কী তাদের অতিরিক্ত উদ্‌বিগ্ন না হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখো।)

তরুণ-তরুণীরা, তোমরা সম্ভবত একমত হবে, কোনো যাত্রা শুরু করার আগে এই বিষয়টা নিয়ে পরিকল্পনা করা বিজ্ঞতার কাজ হবে যে, তোমরা কোথায় যাবে। জীবন হল একটা যাত্রার মতো এবং তরুণবয়সেই তোমাকে পরিকল্পনা করতে হবে যে, তুমি কোথায় যেতে চাও অর্থাৎ জীবনে কী করতে চাও। অবশ্য, এই ধরনের পরিকল্পনা করা হয়তো সহজ নয়। হেদার নামে একজন তরুণী বলেন: “এটা বেশ ভয়ংকর। তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তুমি তোমার বাকি জীবনটা নিয়ে কী করতে চাও।” তুমিও যদি এমনটা অনুভব করো, তা হলে যিহোবার এই কথাগুলো মনে রেখো: “ব্যাকুল হইও না, কারণ আমি তোমার ঈশ্বর; আমি তোমাকে পরাক্রম দিব; আমি তোমার সাহায্য করিব।”—যিশা. ৪১:১০.

২. কীভাবে তুমি জানো যে, যিহোবা চান যেন তুমি এক সুখী ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করো?

যিহোবা তোমাকে উৎসাহিত করেন, যেন তুমি বিজ্ঞতার সঙ্গে তোমার ভবিষ্যতের বিষয়ে পরিকল্পনা করো। (উপ. ১২:১; মথি ৬:২০) তিনি চান যেন তুমি সুখী হও। তুমি যখন তাঁর সৃষ্ট বিষয়গুলো দেখো, শোনো ও আস্বাদন করো, তখন এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া, যিহোবা অন্যান্য উপায়েও আমাদের যত্ন নেন। তিনি আমাদের পরামর্শ দেন এবং সর্বোত্তম উপায়ে জীবনযাপন করার বিষয়ে শিক্ষা দেন। তাই, লোকেরা যখন তাঁর বিজ্ঞ পরামর্শ উপেক্ষা করে, তখন তিনি খুশি হন না। যারা তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করে না, তাদের তিনি বলেন: “তোমরা . . . যাহাতে আমার প্রীতি নাই, তাহাই মনোনীত করিতে। . . . দেখ, আমার দাসেরা আনন্দ করিবে, কিন্তু তোমরা লজ্জিত হইবে; দেখ, আমার দাসেরা চিত্তের সুখে আনন্দরব করিবে।” (যিশা. ৬৫:১২-১৪) আমরা যখন জীবনে বিজ্ঞ বাছাইগুলো করি, তখন আমরা যিহোবার গৌরব নিয়ে আসি।—হিতো. ২৭:১১.

যে-পরিকল্পনাগুলো তোমাকে সুখী করবে

৩. তুমি কী করো বলে যিহোবা চান?

তুমি কোন পরিকল্পনাগুলো করো বলে যিহোবা চান? ধন্য বা সুখী হওয়ার জন্য তোমাকে যিহোবা সম্বন্ধে জানতে হবে এবং তাঁর সেবা করতে হবে। যিহোবা মানুষকে এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। (গীত. ১২৮:১; মথি ৫:৬) পশুরা কেবল খায়, পান করে এবং সন্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু, যিহোবা চান যেন তুমি এমনভাবে পরিকল্পনা করো, যাতে তোমার জীবন সুখী ও উদ্দেশ্যপূর্ণ হয়। তোমার সৃষ্টিকর্তা হলেন ‘প্রেমের ঈশ্বর’ ও ‘পরম ধন্য ঈশ্বর’ বা সুখী ঈশ্বর, যিনি মানুষকে “আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে” তৈরি করেছেন। (২ করি. ১৩:১১; ১ তীম. ১:১১; আদি. ১:২৭) তুমি যখন আমাদের প্রেমময় ঈশ্বরকে অনুকরণ করবে, তখন তুমি সুখী হবে। বাইবেল বলে: “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য” বা সুখী “হইবার বিষয়।” (প্রেরিত ২০:৩৫) তুমি কি ব্যক্তিগতভাবে এমনটা অনুভব করোনি? এটা হল জীবনের একটা মৌলিক সত্য। তাই, যিহোবা চান যেন তুমি অন্যদের প্রতি এবং তাঁর প্রতি তোমার প্রেমের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করো।—পড়ুন, মথি ২২:৩৬-৩৯.

৪, ৫. কী যিশুকে সুখী করেছিল?

তরুণ-তরুণীরা, যিশু খ্রিস্ট তোমাদের জন্য এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। অল্পবয়সে তিনি নিশ্চয়ই খেলাধুলা করতেন এবং আনন্দ করতেন। ঈশ্বরের বাক্য যেমন বলে, “হাস্য করিবার কাল” এবং “নৃত্য করিবার কাল” আছে। (উপ. ৩:৪) এ ছাড়া, যিশু শাস্ত্র অধ্যয়ন করার মাধ্যমে যিহোবার নিকটবর্তীও হয়েছিলেন। তাঁর বয়স যখন ১২ বছর ছিল, তখন ধর্মধামের গুরুরা ‘তাঁহার বুদ্ধি ও উত্তরের’ কারণে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন।—লূক ২:৪২, ৪৬, ৪৭.

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যিশু ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার মাধ্যমে সুখী হয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঈশ্বর চেয়েছিলেন যেন যিশু ‘দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করেন’ এবং ‘অন্ধদের কাছে চক্ষুর্দ্দান প্রচার করেন।’ (লূক ৪:১৮) গীতসংহিতা ৪০:৮ পদ যিশুর অনুভূতি সম্বন্ধে এভাবে বর্ণনা করে: “হে আমার ঈশ্বর, তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত।” যিশু লোকেদের তাঁর পিতার বিষয়ে শিক্ষা দিতে ভালোবাসতেন। (পড়ুন, লূক ১০:২১.) একবার, একজন মহিলার সঙ্গে সত্য উপাসনার বিষয়ে কথা বলার পর যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “আমার খাদ্য এই, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, যেন তাঁহার ইচ্ছা পালন করি ও তাঁহার কার্য্য সাধন করি।” (যোহন ৪:৩১-৩৪) যিশু সুখী ছিলেন কারণ তিনি ঈশ্বরের প্রতি এবং অন্যদের প্রতি প্রেম দেখিয়েছিলেন। তুমি যদি এমনটা করো, তা হলে তুমিও সুখী হতে পারবে।

৬. কেন ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তোমার পরিকল্পনার বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলা উত্তম?

অনেক খ্রিস্টান তরুণবয়সেই অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছে আর এটা তাদের সুখী করেছে। তুমি কি এইরকম কোনো ভাই বা বোনের সঙ্গে তোমার পরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলতে পারো? “পরামর্শের অভাবে পরিকল্পনা মিথ্যা হয়ে যায়, কিন্তু পরামর্শদাতা অনেক হলে পরিকল্পনা সফল হয়।” (হিতো. ১৫:২২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) সেই ভাই-বোনেরা সম্ভবত তোমাকে বলবে যে, অগ্রগামী সেবা এমন শিক্ষা প্রদান করে, যা তোমাকে সারা জীবন ধরে সাহায্য করবে। স্বর্গে থাকাকালীন যিশু তাঁর পিতার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছিলেন। এরপর, তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময়ও তিনি শিক্ষা লাভ করে গিয়েছিলেন। তিনি অন্যদের সুসমাচার জানানোর মাধ্যমে এবং কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্বস্ততা বজায় রাখার মাধ্যমে আনন্দ লাভ করেছিলেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৫০:৪; ইব্রীয় ৫:৮; ১২:২) এসো আমরা দেখি, কেন পূর্ণসময়ের সেবা তোমাকে সুখী করতে পারে।

যে-কারণে শিষ্য তৈরি করার কাজ হল সর্বোত্তম

৭. কেন অনেক তরুণ-তরুণী শিষ্য তৈরি করার কাজ উপভোগ করে?

যিশু আমাদের ‘শিষ্য করিতে’ এবং লোকেদের শিক্ষা দিতে বলেছিলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) তুমি যদি এই কাজকে তোমার কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করো, তা হলে তুমি এমন এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন লাভ করবে, যা ঈশ্বরের গৌরব নিয়ে আসে। যেকোনো কেরিয়ারের মতোই, দক্ষতা অর্জন করার জন্য তোমার সময়ের প্রয়োজন হবে। টিমোথি নামে একজন ভাই, যিনি কিশোরবয়সে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছিলেন, বলেন: “আমি পূর্ণসময় যিহোবার সেবা করতে ভালোবাসি কারণ এভাবে আমি তাঁর প্রতি আমার প্রেম প্রকাশ করতে পারি। প্রথম প্রথম আমি একটাও বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করতে পারিনি কিন্তু পরে আমি অন্য একটা এলাকায় সেবা করতে শুরু করি আর সেখানে আমি এক মাসের মধ্যেই বেশ কয়েকটা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করি। তাদের মধ্যে একজন কিংডম হলে আসতে শুরু করেন। পরে আমি দু-মাসব্যাপী পরিচালিত অবিবাহিত ভাইদের জন্য বাইবেল স্কুল-এ যোগ দিই আর তারপর আমি এক নতুন এলাকায় সেবা করার কার্যভার পাই, যেখানে আমি চারটে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছি। আমি লোকেদের শিক্ষা দিতে ভালোবাসি কারণ এই কাজ করার মাধ্যমে আমি দেখতে পাই, কীভাবে পবিত্র আত্মা তাদের পরিবর্তন করছে।” *১ থিষল. ২:১৯.

৮. কোনো কোনো তরুণ-তরুণী আরও বেশি লোকের কাছে প্রচার করার জন্য কী করেছে?

কোনো কোনো তরুণ-তরুণী অন্য একটা ভাষা শিখেছে। উদাহরণ স্বরূপ, উত্তর আমেরিকার জেকব লেখেন: “আমার বয়স যখন সাত বছর, তখন আমার ক্লাসে ভিয়েতনামের অনেক ছাত্র ছিল। আমি তাদের যিহোবা সম্বন্ধে জানাতে চাইতাম আর তাই কিছুসময় পর আমি তাদের ভাষা শেখার পরিকল্পনা করি। সেই ভাষার বেশিরভাগটাই আমি ইংরেজি ও ভিয়েতনামিস্‌ ভাষার প্রহরীদুর্গ পত্রিকা তুলনা করার মাধ্যমে শিখি। এ ছাড়া, আমি কাছাকাছি একটা ভিয়েতনামিস্‌ ভাষার মণ্ডলীর কয়েক জনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলি। ১৮ বছর বয়সে আমি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করি। পরে, আমি অবিবাহিত ভাইদের জন্য বাইবেল স্কুল-এ যোগ দিই। এটা আমাকে অগ্রগামী হিসেবে আমার বর্তমান কার্যভারে সাহায্য করেছে কারণ এখন আমি ভিয়েতনামিস্‌ ভাষার একটা গ্রুপে একমাত্র প্রাচীন হিসেবে সেবা করি। অনেক ভিয়েতনামিস্‌ ব্যক্তি এটা জেনে অবাক হয়ে যায় যে, আমি তাদের ভাষা শিখেছি। তারা আমাকে তাদের ঘরে আমন্ত্রণ জানায় আর প্রায়ই আমি তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করতে পারি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ উন্নতি করে বাপ্তিস্মও নিয়েছে।”—তুলনা করুন, প্রেরিত ২:৭, ৮.

৯. শিষ্য তৈরি করার কাজ আমাদের কী শেখায়?

শিষ্য তৈরি করার কাজ তোমাকে কাজ করার বিষয়ে উত্তম অভ্যাস গড়ে তুলতে, ভালোভাবে ভাববিনিময় করতে ও সেইসঙ্গে নিজের উপর আস্থা গড়ে তুলতে এবং কৌশলী হতে শেখায়। (হিতো. ২১:৫; ২ তীম. ২:২৪, ২৫ক) কিন্তু, এই কাজ বিশেষভাবে আনন্দদায়ক কারণ তুমি শাস্ত্র থেকে নিজের বিশ্বাস প্রমাণ করতে শেখো। এ ছাড়া, তুমি যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে শেখো।—১ করি. ৩:৯.

১০. তোমার এলাকায় উত্তম ফল লাভ করা কঠিন হলেও কীভাবে তুমি শিষ্য তৈরি করার কাজে আনন্দ খুঁজে পেতে পার?

১০ এমনকী তোমার এলাকায় যদি অল্পসংখ্যক ব্যক্তি বাইবেল অধ্যয়ন করতে ইচ্ছুক হয়, তারপরও তুমি শিষ্য তৈরি করার কাজে আনন্দ খুঁজে পেতে পার। শিষ্য তৈরি করার জন্য পুরো মণ্ডলী একসঙ্গে একটা দল হিসেবে কাজ করে। যদিও কেবল একজন ভাই অথবা বোন হয়তো এমন কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে পান, যিনি পরবর্তী সময়ে শিষ্য হন কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা সকলেই আনন্দিত হই কারণ আমরা সকলেই অনুসন্ধানের কাজে অংশ নিয়েছি। ব্র্যান্ডান নামে একজন ভাইয়ের উদাহরণ বিবেচনা করো, যিনি ন-বছর ধরে এমন একটা এলাকায় অগ্রগামী হিসেবে সেবা করেছিলেন, যেখানে অল্পসংখ্যক ব্যক্তি বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছিল। তিনি বলেন: “আমি সুসমাচার প্রচার করতে ভালোবাসি কারণ যিহোবা আমাদের এই কাজ করতে বলেন। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর পরই আমি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করি। আমি আমাদের মণ্ডলীর তরুণ ভাইদের উৎসাহিত করতে ভালোবাসি এবং যিহোবার সেবায় তাদের উন্নতি করতে দেখে আনন্দিত হই। অবিবাহিত ভাইদের জন্য বাইবেল স্কুল-এ যোগ দেওয়ার পর আমি একটা নতুন এলাকায় অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার কার্যভার লাভ করি। এটা ঠিক যে, আমি কখনোই এমন কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে পাইনি, যিনি উন্নতি করে বাপ্তিস্ম নিয়েছেন, তবে অন্যেরা এইরকম ব্যক্তিদের খুঁজে পেয়েছে। আমি খুবই আনন্দিত যে, আমি শিষ্য তৈরি করার কাজে পূর্ণরূপে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম।”—উপ. ১১:৬.

তোমার পরিকল্পনা তোমাকে যেখানে নিয়ে যেতে পারে

১১. অনেক তরুণ-তরুণী অন্য কোন উপায়ে যিহোবাকে সেবা করার মাধ্যমে আনন্দিত হয়েছে?

১১ যিহোবাকে সেবা করার জন্য তোমার সামনে বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, অনেক তরুণ-তরুণী নির্মাণকাজে সাহায্য করে। বর্তমানে, শত শত নতুন কিংডম হলের প্রয়োজন রয়েছে। এই স্থানগুলো যিহোবাকে গৌরব প্রদান করে আর তাই সেগুলোর নির্মাণকাজে সাহায্য করা তোমাকে আনন্দিত করতে পারে। এ ছাড়া, তুমি তোমার ভাই ও বোনদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমেও আনন্দিত হতে পার। আর তুমি অনেক কিছু শিখতে পার যেমন, কীভাবে নিরাপদ উপায়ে ভালোভাবে কোনো কাজ করতে হয় এবং কীভাবে অধ্যক্ষদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হয়।

যারা পূর্ণসময়ের সেবায় যোগ দেয়, তারা অনেক আশীর্বাদ লাভ করবে (১১-১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. কীভাবে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করা অন্যান্য সুযোগের দিকে পরিচালিত করতে পারে?

১২ কেভিন নামে একজন ভাই বলেন: “একেবারে ছোটোবয়স থেকেই আমি চেয়েছিলাম, বড়ো হয়ে আমি পূর্ণসময় যিহোবার সেবা করব। ১৯ বছর বয়সে আমি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করি। নিজের খরচ মেটানোর জন্য আমি একজন ভাইয়ের অধীনে পার্ট-টাইম কাজ করতে শুরু করি, যিনি নির্মাণের কাজ করতেন। আমি ছাদ, জানালা ও দরজা লাগানোর কাজ শিখি। পরবর্তী সময়, আমি দু-বছর একটা ত্রাণ দলের সঙ্গে কাজ করি, যারা ঘুর্ণিঝড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করত। আমরা ভাইদের জন্য কিংডম হল ও ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণের কাজ করতাম। পরে, আমি যখন জানতে পাই যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্মাণকাজের জন্য কর্মীদের প্রয়োজন রয়েছে, তখন আমি সেখানে সেবা করার জন্য আবেদন করি এবং আমাকে সেখানে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। আফ্রিকায় আমি কয়েক সপ্তাহ পর পরই একটা কিংডম হল প্রকল্প থেকে অন্য প্রকল্পে যাই। আমাদের নির্মাণ দলটা একটা পরিবারের মতো। আমরা একসঙ্গে থাকি, একসঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করি এবং একসঙ্গে কাজ করি। এ ছাড়া, প্রতি সপ্তাহে আমি স্থানীয় ভাইদের সঙ্গে প্রচার করাও উপভোগ করি। ছোটোবয়সে আমি যে-সমস্ত পরিকল্পনা করেছিলাম, সেগুলো আমাকে এমন অনেক উপায়ে আনন্দিত করেছে, যেগুলো আমি কখনো কল্পনাও করিনি।”

১৩. কেন অনেক তরুণ-তরুণী বেথেলে যিহোবার সেবা করে আনন্দিত?

১৩ কেউ কেউ যারা আগে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করত, তারা এখন বেথেলে সেবা করছে। বেথেলে সেবা করা জীবনকে সুখী করে কারণ সেখানে তুমি সমস্ত কিছুই যিহোবার জন্য করো। বেথেল পরিবার বাইবেল ও প্রকাশনাদি প্রস্তুত করতে সাহায্য করে, যাতে লোকেরা সত্য সম্বন্ধে শিখতে পারে। ডাস্টিন নামে একজন বেথেলকর্মী বলেন: “ন-বছর বয়সে আমি পূর্ণসময়ের সেবা করার লক্ষ্য স্থাপন করি এবং স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর অগ্রগামীর কাজ শুরু করি। দেড় বছর পর আমাকে বেথেলে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেখানে আমি মুদ্রণযন্ত্র চালাতে শিখি এবং পরে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর কাজ শিখি। বেথেলে আমি সরাসরি বিশ্বব্যাপী শিষ্য তৈরি করার কার্যকলাপের উন্নতি সম্বন্ধে জানতে পেরে আনন্দিত হই। আমি এখানে সেবা করাকে উপভোগ করি কারণ আমরা যা করি, তা লোকেদের যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে।”

ভবিষ্যতের জন্য তুমি কোন পরিকল্পনা করবে?

১৪. পূর্ণসময়ের পরিচর্যার উদ্দেশ্যে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য তুমি এখন কী করতে পার?

১৪ কীভাবে তুমি পূর্ণসময়ের পরিচর্যার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পার? যথাসম্ভব সর্বোত্তম উপায়ে যিহোবাকে সেবা করার জন্য তোমাকে খ্রিস্টীয় গুণাবলি গড়ে তুলতে হবে। নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করো, সেটি নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করো এবং মণ্ডলীর সভায় নিজের বিশ্বাস প্রকাশ করার চেষ্টা করো। স্কুলে পড়ার সময় তুমি অন্যদের কাছে সুসমাচার সম্বন্ধে কথা বলার ক্ষমতাকে উন্নত করতে পারো। লোকেদের মতামত জানার জন্য কৌশলতার সঙ্গে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার এবং মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনার মাধ্যমে তাদের প্রতি আগ্রহ দেখাতে শেখো। এ ছাড়া, তুমি কিংডম হল পরিষ্কার করার এবং মেরামত করার মতো মণ্ডলীর বিভিন্ন কাজে সাহায্য করার জন্য নিজে থেকে এগিয়ে যেতে পারো। যিহোবা সেই ব্যক্তিদের ব্যবহার করে খুশি হন, যারা নম্র এবং কাজ করতে ইচ্ছুক। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১০:৩; প্রেরিত ৬:১-৩) প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে একজন মিশনারি হিসেবে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কারণ ‘ভ্রাতৃগণ তাঁহার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়াছিল।’—প্রেরিত ১৬:১-৫.

১৫. অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে সাহায্য করবে, এমন একটা চাকরি খুঁজে পাওয়ার জন্য তুমি কী করতে পারো?

১৫ বেশিরভাগ পূর্ণসময়ের দাসেরই কাজ করার প্রয়োজন হয়। (প্রেরিত ১৮:২, ৩) হতে পারে তুমি অল্পসময়ের কোনো প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারো, যা তোমাকে তোমার এলাকায় কোনো পার্ট-টাইম কাজ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। তোমার পরিকল্পনার বিষয়ে সীমা অধ্যক্ষ এবং অন্যান্য অগ্রগামীর সঙ্গে কথা বলো আর তাদের কাছ থেকে পরামর্শ চাও। তারপর বাইবেল যেমন বলে, “তোমার কার্য্যের ভার সদাপ্রভুতে অর্পণ কর, তাহাতে তোমার সঙ্কল্প” বা পরিকল্পনা “সকল সিদ্ধ হইবে।”—হিতো. ১৬:৩; ২০:১৮.

১৬. কীভাবে পূর্ণসময়ের সেবা তোমাকে ভবিষ্যতের অন্যান্য দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রস্তুত করতে পারে?

১৬ তুমি এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পার, যিহোবা চান যেন তুমি এক সুখী ভবিষ্যতের আশাকে ‘ধরিয়া রাখো।’ (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:১৮, ১৯.) পূর্ণসময়ের সেবা অন্যান্য পূর্ণসময়ের দাসের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দেয় আর এভাবে সেটা তোমাকে পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অনেকে দেখেছে, তরুণবয়সে পূর্ণসময়ের সেবায় রত হওয়া পরবর্তী সময়ে তাদের বিয়েতে সাহায্য করেছে। প্রায়ই, বিয়ের আগে যারা অগ্রগামীর কাজ করে, বিয়ের পরও তারা দম্পতি হিসেবে সেই কাজ চালিয়ে যায়।—রোমীয় ১৬:৩, ৪.

১৭, ১৮. কীভাবে পরিকল্পনা করার সঙ্গে তোমার মন বা হৃদয় জড়িত?

১৭ গীতসংহিতা ২০:৪ পদ যিহোবা সম্বন্ধে বলে: “তিনি তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করুন, তোমার সমস্ত মন্ত্রণা সিদ্ধ [“পরিকল্পনা সফল,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] করুন।” ভবিষ্যতের বিষয়ে পরিকল্পনা করার সময় এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করো যে, জীবনে তুমি আসলে কী করতে চাও। এর পাশাপাশি এই বিষয়টা নিয়েও চিন্তা করো, যিহোবা আমাদের সময়ে কী করছেন এবং তাঁর সেবায় তুমি কী করতে পার। এরপর, এমন কিছু করার পরিকল্পনা করো, যা তাঁকে খুশি করে।

১৮ তুমি যখন যিহোবাকে পূর্ণরূপে সেবা করার এবং তাঁকে সম্মান করার জন্য তোমার জীবনকে ব্যবহার করবে, তখন তুমি খুবই সুখী হবে। তুমি ‘সদাপ্রভুতে আমোদ করিবে, তিনি তোমার মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন।’—গীত. ৩৭:৪.

^ অনু. 7 এই স্কুলের পরিবর্তে এখন রাজ্যের সুসমাচার প্রচারকদের জন্য স্কুল পরিচালিত হয়।