সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক?

আপনি কি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক?

“তোমরাও দীর্ঘসহিষ্ণু থাক।”—যাকোব ৫:৮.

গান সংখ্যা: ৩৫, 

১, ২. (ক) কেন আমরা হয়তো এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি: “কত কাল?” (খ) কেন অতীতের বিশ্বস্ত দাসদের উদাহরণ বর্তমানে আমাদের উৎসাহিত করতে পারে?

“কত কাল?” বিশ্বস্ত ভাববাদী হবক্‌কূক এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। (হবক্‌. ১:২) রাজা দায়ূদ গীতসংহিতার ১৩ গীত লেখার সময় চার বার এই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। (গীত. ১৩:১, ২) আর যিশু যখন এমন লোকেদের মাঝে ছিলেন, যাদের একটুও বিশ্বাস ছিল না, তখন তিনিও জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কত কাল?” (মথি ১৭:১৭) বর্তমানে, আমরাও হয়তো এই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি।

কেন আমরা এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি, “কত কাল?” হতে পারে, আমরা কোনো অন্যায়ের শিকার হয়েছি। অথবা আমরা হয়তো অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করছি কিংবা বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আবার হতে পারে, ‘বিষম সময়ে’ বাস করার কারণে আমরা চাপের মধ্যে রয়েছি। (২ তীম. ৩:১) অথবা এমনটাও হতে পারে, আমাদের আশেপাশের লোকেদের খারাপ মনোভাবের কারণে আমরা ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছি। কারণ যা-ই হোক না কেন, এটা জানা উৎসাহজনক যে, যিহোবার অতীতের যে-বিশ্বস্ত দাসেরা এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাদের তিনি ভর্ৎসনা করেননি।

৩. আমরা যখন কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থাকি, তখন কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?

আমরা যখন এমন কোনো পরিস্থিতির মধ্যে থাকি, যেটা সহ্য করা কঠিন, তখন কী আমাদের সাহায্য করতে পারে? যিশুর সৎভাই যাকোব ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা প্রভুর আগমন পর্য্যন্ত দীর্ঘসহিষ্ণু থাক” বা ধৈর্য ধরো। (যাকোব ৫:৭) তাই, আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। কিন্তু, ধৈর্য কী এবং কীভাবে আমরা এই অপূর্ব গুণ প্রদর্শন করতে পারি?

ধৈর্য কী?

৪, ৫. (ক) ধৈর্য কী আর কীভাবে আমরা ধৈর্য ধরতে পারি? (খ) কীভাবে যাকোব ধৈর্য ধরার বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

বাইবেল বলে, দীর্ঘসহিষ্ণুতা বা ধৈর্য গুণটা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার কাছ থেকে আসে। ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া অসিদ্ধ মানুষের পক্ষে অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে ধৈর্য বজায় রাখা কঠিন। ধৈর্য গুণটা ঈশ্বরের একটা দান আর আমরা যখন ধৈর্য ধরি, তখন আমরা যিহোবা ও সেইসঙ্গে অন্যদের প্রতি আমাদের প্রেমের প্রমাণ দিই। আমরা যখন সহিষ্ণুতা বা ধৈর্য দেখাই না, তখন আমাদের ও অন্যদের মধ্যে যে-ভালোবাসা রয়েছে, তা দুর্বল হয়ে পড়ে। (১ করি. ১৩:৪; গালা. ৫:২২) ধৈর্য ধরার অন্তর্ভুক্ত কী? এর অন্তর্ভুক্ত হল, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা। (কল. ১:১১; যাকোব ১:৩, ৪) এ ছাড়া, ধৈর্য আমাদের যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে সাহায্য করে, তা আমরা যে-সমস্যাই ভোগ করি না কেন। এটা আমাদের কষ্ট ভোগ করার সময় প্রতিশোধ নেওয়া এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। বাইবেল বলে যে, আমাদের অবশ্যই অপেক্ষা করার প্রয়োজনীয়তাকে স্বেচ্ছায় মেনে নিতে হবে। এটা হল একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যেটা আমরা যাকোব ৫:৭, ৮ পদ থেকে শিখি। (পড়ুন।)

কেন আমাদের যিহোবার পদক্ষেপ নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার জন্য ইচ্ছুক হতে হবে? শিষ্য যাকোব আমাদের পরিস্থিতিকে একজন কৃষকের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। যদিও একজন কৃষক শস্য রোপণ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন কিন্তু তিনি আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে অথবা শস্যবৃদ্ধির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তাকে “ভূমির বহুমূল্য ফলের” জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়। একইভাবে এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখার জন্য অপেক্ষা করার সময় আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। (মার্ক ১৩:৩২, ৩৩; প্রেরিত ১:৭) সেই কৃষকের মতো, আমাদেরও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।

৬. ভাববাদী মীখার উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

ভাববাদী মীখাকে কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়েছিল, ঠিক যেমনটা বর্তমানে আমাদেরও করতে হয়। তিনি রাজা আহসের শাসনের সময় জীবিত ছিলেন। আহস খুবই দুষ্ট রাজা ছিলেন। ফল স্বরূপ, দেশে দুর্নীতি ছেয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে উঠেছিল যে, বাইবেল বলে, লোকেরা “যাহা মন্দ, তাহা সযত্নে” বা দক্ষতার সঙ্গে “করিবার জন্য . . . ব্যতিব্যস্ত” হয়ে উঠেছিল। (পড়ুন, মীখা ৭:১-৩.) মীখা জানতেন, তিনি সেই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারবেন না। তাই, তিনি কী করবেন? তিনি আমাদের বলেন: “আমি সদাপ্রভুর প্রতি দৃষ্টি রাখিব, আমার ত্রাণেশ্বরের অপেক্ষা করিব; আমার ঈশ্বর আমার বাক্য শুনিবেন।” (মীখা ৭:৭) মীখার মতো আমাদেরও ‘অপেক্ষা করিবার’ মনোভাব বজায় রাখতে হবে।

৭. কেন আমাদের যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখার জন্য কেবল অপেক্ষা করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে?

আমাদের যদি মীখার মতো বিশ্বাস থাকে, তা হলে আমরা যিহোবার জন্য অপেক্ষা করার বিষয়ে ইচ্ছুক হব। আমাদের পরিস্থিতি কারাগারে বদ্ধ এমন কোনো ব্যক্তির মতো নয়, যিনি তার মৃত্যুদণ্ডের দিনের জন্য কারাকক্ষে অপেক্ষা করছেন। তাকে অপেক্ষা করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে আর তিনি সেই দিনের জন্য মোটেও আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন না। আমাদের পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন! আমরা যিহোবার জন্য অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক কারণ আমরা জানি, একেবারে সঠিক সময়ে তিনি আমাদের অনন্তজীবন প্রদান করার বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করবেন! তাই, আমরা “আনন্দের সহিত সম্পূর্ণ ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা” দেখাই। (কল. ১:১১, ১২) অপেক্ষা করার সময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা এই অভিযোগ করা এড়িয়ে চলি যে, যিহোবা পদক্ষেপ নিতে দেরি করছেন। আমরা যদি অভিযোগ করি, তা হলে তিনি খুশি হবেন না।—কল. ৩:১২.

কয়েক জন বিশ্বস্ত ব্যক্তির ধৈর্যের উদাহরণ

৮. অতীতের বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদের কাছ থেকে আমরা কী শিখি?

কী আমাদের ধৈর্য ধরার বিষয়ে আরও ইচ্ছুক হতে সাহায্য করবে? আমরা অতীতের সেই বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদের বিষয়ে চিন্তা করতে পারি, যারা যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখার জন্য ধৈর্য ধরে তাঁর অপেক্ষা করেছিলেন। (রোমীয় ১৫:৪) তাদের উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করার সময়, এটা মনে রাখা উত্তম যে, কত সময় ধরে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল, কেন তারা অপেক্ষা করার জন্য ইচ্ছুক ছিলেন এবং কীভাবে যিহোবা তাদের ধৈর্যের জন্য তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন।

অব্রাহামকে তার নাতি এষৌ ও যাকোবের জন্ম হওয়ার আগে পর্যন্ত অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছিল (৯, ১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯, ১০. অব্রাহাম ও সারা কত সময় ধরে যিহোবার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন?

অব্রাহাম ও সারার উদাহরণ বিবেচনা করুন। যেহেতু তারা “বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা” বা ধৈর্য দেখিয়েছিলেন, তাই তারা “প্রতিজ্ঞা-সমূহের” অধিকারী হয়েছিলেন। বাইবেল আমাদের বলে, অব্রাহাম “দীর্ঘসহিষ্ণুতা” দেখানোর বা ধৈর্য ধরার পর যিহোবা তার কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি তাকে আশীর্বাদ করবেন এবং এক বিরাট জাতির পিতা করে তুলবেন। (ইব্রীয় ৬:১২, ১৫) কেন অব্রাহামকে ধৈর্য ধরতে হয়েছিল? কারণ সেই প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৯৪৩ সালের নিশান মাসের ১৪ তারিখে অব্রাহাম, সারা ও সেইসঙ্গে তাদের পরিবারের সকলে ফরাৎ (ইউফ্রেটিস) নদী পার হয়েছিলেন এবং প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু, এরপর অব্রাহামকে তার পুত্র ইস্‌হাকের জন্ম হওয়ার আগে পর্যন্ত ২৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল এবং তার নাতি এষৌ ও যাকোবের জন্ম হওয়ার আগে পর্যন্ত আরও ৬০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।—ইব্রীয় ১১:৯.

১০ অব্রাহাম প্রতিজ্ঞাত দেশের কতটা অংশ তার অধিকার হিসেবে পেয়েছিলেন? বাইবেল বলে, যিহোবা “এই দেশের মধ্যে তাঁহাকে অধিকার দিলেন না, এক পাদ পরিমিত ভূমিও না; আর অঙ্গীকার করিলেন, তিনি তাঁহাকে ও তাঁহার পরে তাঁহার বংশকে অধিকারার্থে তাহা দিবেন, যদিও তখন তাঁহার সন্তান হয় নাই।” (প্রেরিত ৭:৫) অব্রাহাম ইউফ্রেটিস নদী পার হওয়ার ৪৩০ বছর পর অবশেষে তার বংশধরেরা সেই জাতি হয়ে উঠেছিল, যে-জাতি সেই প্রতিজ্ঞাত দেশে বাস করবে।—যাত্রা. ১২:৪০-৪২; গালা. ৩:১৭.

১১. কেন অব্রাহাম অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক ছিলেন এবং তার ধৈর্যের জন্য ভবিষ্যতে তিনি কোন আশীর্বাদগুলো দেখার সুযোগ পাবেন?

১১ অব্রাহাম অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক ছিলেন কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করবেন। যিহোবার উপর তার বিশ্বাস ছিল। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৮-১২.) যদিও মারা যাওয়ার আগে অব্রাহাম ঈশ্বরের সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হতে দেখেননি, তবুও তিনি আনন্দের সঙ্গে অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু কল্পনা করুন, অব্রাহামকে যখন পরমদেশ পৃথিবীতে পুনরুত্থিত করা হবে, তখন তিনি কতটা আনন্দিত হবেন! তিনি যখন বাইবেলের অনেক অংশে তার ও সেইসঙ্গে তার পরিবারের জীবনী সম্বন্ধে পড়বেন, তখন তিনি অবাক হয়ে যাবেন। * একটু কল্পনা করুন, তিনি যখন প্রতিজ্ঞাত মশীহের বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতার মধ্যে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্বন্ধে জানতে পারবেন, তখন তিনি কতই-না আনন্দিত হবেন! আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি এমনটা অনুভব করবেন যে, সেই আশীর্বাদগুলোর জন্য অপেক্ষা করা সত্যিই সার্থক হয়েছে।

১২, ১৩. কেন যোষেফের ধৈর্যের প্রয়োজন হয়েছিল আর তার কোন ইতিবাচক মনোভাব ছিল?

১২ অব্রাহামের প্রপৌত্র যোষেফও ধৈর্য ধরতে ইচ্ছুক ছিলেন। তিনি কয়েকটা গুরুতর অবিচারের শিকার হয়েছিলেন। প্রথমে, তার বয়স যখন প্রায় ১৭ বছর, তখন তার ভাইয়েরা তাকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল। এরপর, তার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল যে, তিনি তার প্রভুর স্ত্রীকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন আর তাই তাকে কারাবদ্ধ করা হয়েছিল। (আদি. ৩৯:১১-২০; গীত. ১০৫:১৭, ১৮) যদিও যোষেফ ঈশ্বরের একজন বিশ্বস্ত দাস ছিলেন, তবে দেখে মনে হয়েছিল যেন তিনি আশীর্বাদলাভের পরিবর্তে শাস্তি ভোগ করছিলেন। কিন্তু, ১৩ বছর পর সমস্ত কিছু পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। যোষেফকে কারাগার থেকে মুক্ত করা হয়েছিল এবং তিনি মিশরের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান শাসক হয়ে উঠেছিলেন।—আদি. ৪১:১৪, ৩৭-৪৩; প্রেরিত ৭:৯, ১০.

১৩ এই অবিচারগুলোর কারণে যোষেফ কি তিক্তবিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন? তিনি কি এমনটা মনে করেছিলেন যে, যিহোবা তাকে পরিত্যাগ করেছেন? না। যোষেফ ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করেছিলেন। কী তাকে সাহায্য করেছিল? যিহোবার প্রতি তার বিশ্বাস। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, পরিস্থিতি যিহোবার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি তার ভাইদের যা বলেছিলেন, সেটা থেকে আমরা এই বিষয়টা বুঝতে পারি। তিনি বলেছিলেন: “ভয় করিও না, আমি কি ঈশ্বরের প্রতিনিধি? তোমরা আমার বিরুদ্ধে অনিষ্ট কল্পনা করিয়াছিলে বটে, কিন্তু ঈশ্বর তাহা মঙ্গলের কল্পনা করিলেন; অদ্য যেরূপ দেখিতেছ, এইরূপে অনেক লোকের প্রাণ রক্ষা করাই তাঁহার অভিপ্রায় ছিল।” (আদি. ৫০:১৯, ২০) যোষেফ জানতেন যে, যিহোবার আশীর্বাদগুলোর জন্য অপেক্ষা করা সত্যিই সার্থক হবে।

১৪, ১৫. (ক) দায়ূদ যেভাবে ধৈর্য ধরেছিলেন, কেন তা উল্লেখযোগ্য? (খ) কী দায়ূদকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে সাহায্য করেছিল?

১৪ রাজা দায়ূদও অনেক অবিচার ভোগ করেছিলেন। যিহোবা সেইসময় দায়ূদকে ইস্রায়েলের রাজা হওয়ার জন্য অভিষিক্ত করেছিলেন, যখন তিনি একজন অল্পবয়সি ছিলেন। কিন্তু, দায়ূদকে এমনকী নিজের বংশের উপর রাজা হওয়ার জন্য ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। (২ শমূ. ২:৩, ৪) সেই সময়ের মধ্যে, দায়ূদকে রাজা শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে ও লুকিয়ে বেড়াতে হয়েছিল, যিনি দায়ূদকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। * ফল স্বরূপ, সেইসময় দায়ূদের এমনকী নিজের কোনো বাড়িও ছিল না। তাকে বিদেশে অথবা প্রান্তরের গুহায় থাকতে হয়েছিল। পরিশেষে, শৌল যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও, দায়ূদকে সমগ্র ইস্রায়েল জাতির উপর রাজা হওয়ার জন্য আরও সাত বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।—২ শমূ. ৫:৪, ৫.

১৫ কেন দায়ূদ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক ছিলেন? তিনি আমাদের এর উত্তর সেই একই গীতে দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি চার বার এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কত কাল?” তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমার দয়াতে [“অনুগত প্রেমে,” NW] বিশ্বাস করিয়াছি; আমার চিত্ত তোমার পরিত্রাণে উল্লাসিত হইবে। আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীত গাহিব, কেননা তিনি আমার মঙ্গল করিয়াছেন।” (গীত. ১৩:৫, ৬) দায়ূদ জানতেন, যিহোবা তাকে ভালোবাসেন এবং তিনি সবসময় দায়ূদের প্রতি অনুগত থাকবেন। তিনি অতীতের সেই সময়গুলো নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, যখন যিহোবা তাকে সাহায্য করেছিলেন আর সেইসঙ্গে তিনি ভবিষ্যতের সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলেন, যখন যিহোবা তার পরীক্ষাগুলো দূর করে দেবেন। দায়ূদ জানতেন যে, যিহোবার আশীর্বাদগুলোর জন্য অপেক্ষা করা সত্যিই সার্থক হবে।

যিহোবা আমাদের এমন কিছু করতে বলেননি, যেটা তিনি নিজে করতে ইচ্ছুক নন

১৬, ১৭. কীভাবে যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্ট উভয়েই অপেক্ষা করার জন্য ইচ্ছুক হওয়ার বিষয়ে চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

১৬ যিহোবা আমাদের এমন কিছু করতে বলেননি, যেটা তিনি নিজে করতে ইচ্ছুক নন। তিনি অপেক্ষা করার জন্য ইচ্ছুক হওয়ার বিষয়ে সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ স্থাপন করেছেন। (পড়ুন, ২ পিতর ৩:৯.) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হাজার হাজার বছর আগে এদন বাগানে, শয়তান যিহোবাকে একজন অন্যায্য শাসক বলে অভিযুক্ত করেছিল। যিহোবা সেই সময়ের জন্য ধৈর্য সহকারে ‘অপেক্ষা করিতেছেন,’ যখন তাঁর নাম পূর্ণরূপে পবিত্রীকৃত হবে। এর ফলে, সেই ব্যক্তিরা অপূর্ব আশীর্বাদ লাভ করবে, যারা “তাঁহার অপেক্ষা করে।”—যিশা. ৩০:১৮.

১৭ যিশুও অপেক্ষা করার বিষয়ে ইচ্ছুক মনোভাব দেখিয়েছেন। পৃথিবীতে থাকাকালীন তিনি মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন। ৩৩ সালে, তিনি তাঁর বলিদানের মূল্য স্বর্গে যিহোবার কাছে উপস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু, রাজা হিসেবে শাসন শুরু করার জন্য তাঁকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। (প্রেরিত ২:৩৩-৩৫; ইব্রীয় ১০:১২, ১৩) এ ছাড়াও, সমস্ত শত্রু ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যিশুকে তাঁর হাজার বছরের শাসনের শেষ অবধি অপেক্ষা করতে হবে। (১ করি. ১৫:২৫) এটা হল অপেক্ষা করার জন্য এক দীর্ঘ সময়। তা সত্ত্বেও, আশীর্বাদগুলোর জন্য অপেক্ষা করা সত্যিই সার্থক হবে।

কী আমাদের সাহায্য করবে?

১৮, ১৯. কী আমাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার বিষয়ে ইচ্ছুক হতে সাহায্য করবে?

১৮ স্পষ্টতই, যিহোবা চান যেন আমরা ধৈর্য ধরি এবং অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক হই। কী আমাদের এটা করতে সাহায্য করবে? আমাদের ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করতে হবে। মনে রাখবেন, ধৈর্য গুণটা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার কাছ থেকে আসে। (ইফি. ৩:১৬; ৬:১৮; ১ থিষল. ৫:১৭-১৯) তাই, যিহোবার কাছে সাহায্যভিক্ষা করুন যেন তিনি আপনাকে ধৈর্য সহকারে সহ্য করতে সাহায্য করেন!

১৯ এ ছাড়া মনে রাখুন, কী অব্রাহাম, যোষেফ ও দায়ূদকে যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে সাহায্য করেছিল। যিহোবার প্রতি তাদের বিশ্বাস এবং তাঁর প্রতি তাদের আস্থা তাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে সাহায্য করেছিল। তারা কেবল নিজেদের নিয়ে অথবা তারা কী চায়, সেই বিষয় নিয়ে চিন্তা করেননি। আমরা যখন এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করব যে, তাদের পরিস্থিতি পরবর্তী সময় কত উত্তম হয়ে উঠেছিল, তখন আমরাও অপেক্ষা করার মনোভাব বজায় রাখার জন্য উৎসাহিত হব।

২০. আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?

২০ তাই, যদিও আমাদের হয়তো পরীক্ষার সঙ্গে লড়াই করতে হয়, তবুও আমরা ‘অপেক্ষা করিবার’ মনোভাব বজায় রাখার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। কখনো কখনো, আমরা হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারি, “হে সদাপ্রভু, কত কাল?” (হবক্‌. ১:২) কিন্তু, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমরা ভাববাদী যিরমিয়কে অনুকরণ করতে পারি এবং বলতে পারি: “সদাপ্রভুই আমার অধিকার; এই জন্য আমি তাঁহাতে প্রত্যাশা করিব।”—বিলাপ ৩:২১, ২৪.

^ অনু. 11 আদিপুস্তক বইয়ের প্রায় ১৫টা অধ্যায়ে অব্রাহামের জীবনী সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া, খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর লেখকরা অব্রাহামের বিষয়ে ৭০ বারেরও বেশি উল্লেখ করেছেন।

^ অনু. 14 শৌল দু-বছরেরও কিছু বেশি সময় শাসন করার পর যিহোবা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, শৌল তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আরও ৩৮ বছর ধরে শাসন করেছিলেন।—১ শমূ. ১৩:১; প্রেরিত ১৩:২১.