সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘ঈশ্বরের শান্তি সমস্ত চিন্তার অতীত’

‘ঈশ্বরের শান্তি সমস্ত চিন্তার অতীত’

“সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় . . . রক্ষা করিবে।”—ফিলি. ৪:৭.

গান সংখ্যা: ৩৯, ৪৭

১, ২. ফিলিপীতে পৌল ও সীলের প্রতি কী ঘটেছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

দৃশ্যটা কল্পনা করুন। প্রায় মাঝরাত হয়ে এসেছে। দু-জন মিশনারি, পৌল ও সীল, ফিলিপী নগরের একটা কারাগারের একেবারে ভিতরের সবচেয়ে অন্ধকার একটা কক্ষে রয়েছেন। তারা চলাফেরা করতে পারছেন না কারণ হাড়িকাঠ দিয়ে তাদের পা আটকে রাখা হয়েছে আর তাদের পিঠে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে কারণ একটু আগেই তাদের প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। (প্রেরিত ১৬:২৩, ২৪) সেই দিনই কিছুসময় আগে, হঠাৎই একদল জনতা পৌল ও সীলকে টানতে টানতে বাজারে অধ্যক্ষদের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে খুব দ্রুত তাদের বিচার করা হয়। তাদের পোশাক খুলে ফেলা হয় এবং বেত দিয়ে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। (প্রেরিত ১৬:১৬-২২) কী এক অবিচার! পৌল একজন রোমীয় নাগরিক ছিলেন আর তাকে সঠিকভাবে বিচার করা উচিত ছিল। *

কারাগারে থাকার সময় পৌল হয়তো সেই দিন যা ঘটেছিল, সেই বিষয়ে এবং ফিলিপীতে বসবাসকারী লোকেদের বিষয়ে চিন্তা করছিলেন। পৌল যে-সমস্ত নগর পরিদর্শন করেছিলেন, সেগুলোর বিপরীতে এই নগরে একটাও সমাজগৃহ ছিল না। তাই যিহুদিদের, নগরদ্বারের বাইরে গিয়ে একটা নদীর ধারে উপাসনা করতে হতো। (প্রেরিত ১৬:১৩, ১৪) এর কারণ কি এই, সেই নগরে এমনকী দশ জন যিহুদি পুরুষও ছিল না, যেটা কিনা একটা নগরে সমাজগৃহ থাকার জন্য একটা চাহিদা ছিল? ফিলিপীর লোকেরা রোমীয় নাগরিক হওয়ায় খুবই গর্বিত ছিল। (প্রেরিত ১৬:২১) হতে পারে এই কারণেই তারা মনে করেনি যে, পৌল ও সীল যারা কিনা যিহুদি ছিলেন, তারা আবার রোমীয় নাগরিকও হতে পারেন। তারা কী চিন্তা করেছিল, আমরা তা নিশ্চিতভাবে জানি না কিন্তু আমরা এটা জানি, পৌল ও সীলকে অন্যায্যভাবে কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল।

৩. পৌলকে যখন কারাবদ্ধ করা হয়েছিল, তখন কেন তিনি হয়তো বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন আর সেই পরিস্থিতি সত্ত্বেও তার মনোভাব কেমন ছিল?

হতে পারে পৌল এই বিষয়টা নিয়েও চিন্তা করছিলেন যে, কীভাবে তিনি ফিলিপীতে এসে পৌঁছেছিলেন। কয়েক মাস আগে পৌল ঈজিয়ান সমুদ্রের অপর প্রান্তে, এশিয়া মাইনরে ছিলেন। সেখানে থাকাকালীন, পবিত্র আত্মা বার বার তাকে সেখানকার নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় প্রচার করায় বাধা দিয়েছিল। এটা এমন ছিল যেন পবিত্র আত্মা তাকে অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করছিল। (প্রেরিত ১৬:৬, ৭) কিন্তু কোথায়? ত্রোয়াতে থাকার সময় পৌল একটা দর্শন লাভ করেছিলেন, যেখানে তাকে বলা হয়েছিল: ‘পার হইয়া মাকিদনিয়াতে আসুন।’ যিহোবার ইচ্ছা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল! তাই, পৌল সঙ্গেসঙ্গে মাকিদনিয়ায় গিয়েছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ১৬:৮-১০.) কিন্তু, এরপর কী হয়েছিল? মাকিদনিয়ায় পৌঁছানোর কিছুসময় পরই তাকে কারাবদ্ধ করা হয়েছিল! কেন যিহোবা পৌলের প্রতি এমনটা ঘটতে দিয়েছিলেন? তাকে কত সময় ধরে কারাগারে থাকতে হবে? এমনকী যদি পৌল এই সমস্ত বিষয় নিয়ে চিন্তা করেও থাকেন, তা সত্ত্বেও তিনি তার দৃঢ়বিশ্বাস ও আনন্দ বজায় রেখেছিলেন। পৌল ও সীল দু-জনেই ‘প্রার্থনা করিতে করিতে ঈশ্বরের উদ্দেশে স্তোত্র গান করিতে’ আরম্ভ করেছিলেন। (প্রেরিত ১৬:২৫) ঈশ্বরের শান্তি তাদের হৃদয় ও মনকে সান্ত্বনা প্রদান করেছিল।

৪, ৫. (ক) কীভাবে আমাদের পরিস্থিতি পৌলের মতো হতে পারে? (খ) কীভাবে পৌলের পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিতভাবে বদলে গিয়েছিল?

আপনি কি কখনো পৌলের মতো অনুভব করেছেন? হতে পারে, আপনার জীবনে এমন সময় এসেছে, যখন আপনি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন এবং এমনটা অনুভব করেছিলেন যে, আপনি পবিত্র আত্মার পরিচালনা অনুসরণ করছেন। কিন্তু, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আপনাকে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে অথবা আপনাকে জীবনে বড়ো বড়ো পরিবর্তন করতে হয়েছে। (উপ. ৯:১১) বর্তমানে, আপনি যখন সেই পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করেন, তখন আপনি হয়তো ভাবেন যে, কেন যিহোবা নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ঘটতে দিয়েছিলেন। কী আপনাকে ক্রমাগত ধৈর্য ধরতে এবং যিহোবার উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে সাহায্য করতে পারে? আমরা এর উত্তর, পৌল ও সীলের প্রতি পরে যা ঘটেছিল, সেখান থেকে খুঁজে পেতে পারি।

পৌল ও সীল যখন গান গাইছিলেন, তখন অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। প্রথমে, সেখানে প্রচণ্ড জোরে ভূমিকম্প হয়েছিল। কারাগারের দরজাগুলো সঙ্গেসঙ্গে খুলে গিয়েছিল। এরপর, সমস্ত বন্দির বাঁধন খুলে গিয়েছিল। তারপর, পৌল কারারক্ষককে আত্মহত্যা করা থেকে থামিয়েছিলেন এবং সেই কারারক্ষক ও তার পুরো পরিবার বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। পরদিন ভোর বেলা, নগরের শাসনকর্তারা পৌল ও সীলকে কারাগার থেকে মুক্ত করার জন্য কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছিলেন এবং তাদের শান্তিপূর্ণভাবে সেই নগর ত্যাগ করতে বলেছিলেন। শাসনকর্তারা যখন জানতে পেরেছিলেন, পৌল ও সীল আসলে রোমীয় নাগরিক, তখন তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা কত বড়ো ভুল করেছেন! তারা নিজেরা এসে পৌল ও সীলকে তাদের সঙ্গে করে বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, নগর ত্যাগ করার আগে পৌল ও সীল তাদের নতুন বাপ্তাইজিত বোন লুদিয়াকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন। আর তারা সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফিলিপী নগরের অন্যান্য ভাইদের শক্তিশালী করেছিলেন। (প্রেরিত ১৬:২৬-৪০) পরিস্থিতি কত দ্রুত বদলে গিয়েছিল!

এটা “সমস্ত চিন্তার অতীত”

৬. আমরা এখন একসঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা করব এবং পুনর্বিবেচনা করব?

এই ঘটনাগুলো থেকে আমরা কী শিখি? যিহোবা অপ্রত্যাশিত বিষয় ঘটাতে পারেন আর তাই আমরা যখন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন আমাদের উদ্‌বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। পরবর্তী সময় পৌল ফিলিপীর ভাইদের ভাবিত বা উদ্‌বিগ্ন হওয়া সম্বন্ধে ও ঈশ্বরের শান্তি সম্বন্ধে তার চিঠিতে যা লিখেছিলেন, সেখান থেকে আমরা জানতে পারি যে, এই শিক্ষা পৌলের উপর গভীর ছাপ ফেলেছিল। এই প্রবন্ধে আমরা ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ পদে বলা পৌলের কথাগুলো নিয়ে আলোচনা করব। (পড়ুন।) এরপর, আমরা বাইবেলের আরও কিছু ঘটনা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করব, যেখানে যিহোবা অপ্রত্যাশিত বিষয় ঘটিয়েছিলেন। পরিশেষে, আমরা এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব যে, কীভাবে “ঈশ্বরের শান্তি” আমাদের যিহোবার উপর পূর্ণ আস্থা সহকারে ধৈর্য ধরার জন্য সাহায্য করতে পারে।

৭. পৌল যখন ফিলিপীর ভাইদের উদ্দেশে চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি কোন শিক্ষা দিয়েছিলেন আর সেটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

ফিলিপীর ভাইয়েরা যখন তাদের উদ্দেশে লেখা পৌলের চিঠিটা পড়েছিল, তখন তারা কী নিয়ে চিন্তা করেছিল? তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সম্ভবত স্মরণ করেছিল যে, পৌল ও সীলের প্রতি কী ঘটেছিল এবং যিহোবা কীভাবে অপ্রত্যাশিত উপায়ে তাদের সাহায্য করেছিলেন। পৌল এই চিঠির মাধ্যমে তাদের কোন শিক্ষা দিচ্ছিলেন? শিক্ষাটা হল: দুশ্চিন্তা করবেন না। প্রার্থনা করুন, তা করলে আপনি “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি,” তা লাভ করবেন। এই অভিব্যক্তির অর্থ কী? কোনো কোনো বাইবেল অনুবাদ এটাকে এভাবে বলে, “আমাদের সমস্ত স্বপ্নের অতীত” অথবা “সমস্ত মানব পরিকল্পনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।” তাই, পৌল বলেছিলেন যে, আমরা যতটা কল্পনা করতে পারি, “ঈশ্বরের শান্তি” সেটার চেয়ে আরও অনেক চমৎকার। যদিও কখনো কখনো আমরা আমাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে পারি না কিন্তু প্রভু যিহোবা তা পারেন। আর তিনি অপ্রত্যাশিত বিষয় ঘটাতে পারেন।—পড়ুন, ২ পিতর ২:৯.

৮, ৯. (ক) এমনকী যদিও পৌল ফিলিপীতে অবিচার ভোগ করেছিলেন, কিন্তু সেই ঘটনাগুলোর কারণে কোন উত্তম বিষয়গুলো ঘটেছিল? (খ) কেন ফিলিপীর ভাইয়েরা পৌলের কথাগুলোর উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পেরেছিল?

পৌলের চিঠি নিশ্চয়ই সেইসময় ফিলিপীর ভাইদের শক্তিশালী করেছিল, যখন যিহোবা তাদের জন্য বিগত দশ বছরে যা-কিছু করেছিলেন, সেগুলো নিয়ে তারা চিন্তা করেছিল। যদিও যিহোবা পৌল ও সীলের প্রতি অবিচার ঘটতে দিয়েছিলেন কিন্তু পূর্বের সেই ঘটনাগুলো ‘সুসমাচারের পক্ষে কথা বলে তা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রমাণ’ করতে সাহায্য করেছিল। (ফিলি. ১:৭, ইজি-টু-রিড ভারশন) তাই, ফিলিপীর শাসনকর্তারা তাদের শহরের নবগঠিত খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে তাড়না করার দুঃসাহস দেখাননি। হতে পারে, পৌল নিজের রোমীয় নাগরিকত্বের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন বলে, পৌল ও সীল ফিলিপী ত্যাগ করার পরও শিষ্য লূক সেখানে থেকে যেতে পেরেছিলেন। এর ফলে, লূক ফিলিপীর নতুন খ্রিস্টানদের অতিরিক্ত সাহায্য প্রদান করতে পেরেছিলেন।

পৌলের চিঠিটা পড়ার সময় ফিলিপীর সেই ভাইয়েরা জানত যে, পৌলের কথাগুলো কেবল তার ব্যক্তিগত মতামত নয়। পৌল চরম পরীক্ষা ভোগ করেছিলেন। এমনকী তিনি যখন সেই ভাইদের উদ্দেশে চিঠি লিখছিলেন, তখন তিনি রোমে নিজের বাড়িতে গৃহবন্দি হিসেবে ছিলেন। কিন্তু এরপরও, তিনি দেখিয়েছিলেন যে, “ঈশ্বরের শান্তি” তার উপর বিরাজ করছে।—ফিলি. ১:১২-১৪; ৪:৭, ১১, ২২.

“কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না”

১০, ১১. আমরা যখন কোনো সমস্যার কারণে দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি, তখন আমাদের কী করতে হবে এবং আমরা কী আশা করতে পারি?

১০ কী আমাদের “কোন বিষয়ে ভাবিত” বা উদ্‌বিগ্ন না হয়ে বরং “ঈশ্বরের শান্তি” বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে? ফিলিপীয়দের উদ্দেশে লেখা পৌলের কথাগুলো দেখায় যে, আমরা যখন কোনো সমস্যার কারণে দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি, তখন সেটা কাটিয়ে ওঠার সমাধান হল প্রার্থনা। তাই, আমরা যখন উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়ি, তখন আমাদের দুশ্চিন্তার বিষয়গুলো নিয়ে প্রার্থনা করতে হবে। (পড়ুন, ১ পিতর ৫:৬, ৭.) আপনি যখন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন, তখন এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত থাকুন যে, তিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন। সবসময় তাঁকে প্রতিটা আশীর্বাদের জন্য ধন্যবাদ জানান। আর কখনো ভুলে যাবেন না, যিহোবা “আমাদের সমস্ত যাচ্ঞার ও চিন্তার নিতান্ত অতিরিক্ত কর্ম্ম করিতে” পারেন।—ইফি. ৩:২০.

১১ পৌল ও সীলের মতো আমরাও, যিহোবা আমাদের সাহায্য করার জন্য যা করেন, তা দেখে অবাক হয়ে যেতে পারি। এটা হয়তো অসাধারণ কিছু না-ও হতে পারে, কিন্তু এটা সবসময় আমাদের প্রয়োজন অনুসারে হবে। (১ করি. ১০:১৩) এর অর্থ এই নয় যে, আমরা হাত-পা গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকব এবং আমাদের পরিস্থিতি শোধরানোর জন্য অথবা সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য প্রভু যিহোবার অপেক্ষা করে থাকব। আমাদের নিজেদের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হবে। (রোমীয় ১২:১১) আমাদের কাজ আমাদের আন্তরিকতার প্রমাণ দেবে এবং যিহোবার আশীর্বাদের পথ খুলে দেবে। আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই, আমরা যিহোবার কাছে যা চাই অথবা তাঁর কাছ থেকে যা আশা করি, সেটার চেয়ে তিনি আরও বেশি কিছু করতে পারেন। কখনো কখনো তিনি অপ্রত্যাশিত বিষয় ঘটানোর মাধ্যমে আমাদের অবাক করে দিতে পারেন। তাই আসুন, আমরা এমন কিছু উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করি, যেগুলো এই বিষয়ে আমাদের আস্থাকে আরও দৃঢ় করবে যে, আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত বিষয় ঘটানোর ক্ষমতা যিহোবার রয়েছে।

যিহোবার করা কিছু অপ্রত্যাশিত কাজের উদাহরণ

১২. (ক) রাজা সন্‌হেরীব যখন রাজা হিষ্কিয়কে হুমকি দিয়েছিলেন, তখন তিনি কী করেছিলেন? (খ) যিহোবা যেভাবে সেই সমস্যার সমাধান করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ বাইবেলে আমরা এমন অনেক উদাহরণ পাই, যেখানে যিহোবা অপ্রত্যাশিত বিষয় ঘটিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, হিষ্কিয় যখন যিহূদার রাজা ছিলেন, তখন অশূর-রাজ সন্‌হেরীব যিহূদা আক্রমণ করেছিলেন এবং যিরূশালেম ছাড়া সমস্ত নগর পরাজিত করেছিলেন। (২ রাজা. ১৮:১-৩, ১৩) এরপর, সন্‌হেরীব যিরূশালেম আক্রমণ করতে এসেছিলেন। রাজা হিষ্কিয় কী করেছিলেন? প্রথমে, তিনি যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন এবং যিহোবার ভাববাদী যিশাইয়ের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। (২ রাজা. ১৯:৫, ১৫-২০) তারপর, হিষ্কিয় সন্‌হেরীবের দ্বারা দাবিকৃত জরিমানা পরিশোধ করার মাধ্যমে যুক্তিবাদিতা দেখিয়েছিলেন। (২ রাজা. ১৮:১৪, ১৫) পরিশেষে, হিষ্কিয় তার নগরকে এক দীর্ঘ অবরোধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। (২ বংশা. ৩২:২-৪) এই পরিস্থিতি কীভাবে সমাপ্ত হয়েছিল? যিহোবা একজন স্বর্গদূতকে পাঠিয়ে এক রাতের মধ্যে সন্‌হেরীবের ১,৮৫,০০০ জন সৈন্যকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এমনকী হিষ্কিয় নিজেও এমনটা ঘটবে বলে আশা করেননি!—২ রাজা. ১৯:৩৫.

যোষেফের প্রতি যা ঘটেছিল, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?—আদি. ৪১:৪২ (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. (ক) যোষেফের প্রতি যা-কিছু ঘটেছিল, সেগুলো থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করি? (খ) সারার প্রতি কোন অপ্রত্যাশিত বিষয় ঘটেছিল?

১৩ যুবকবয়সি যোষেফের প্রতি কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন। মিশরের একটা কারাকূপে থাকার সময়, তিনি এমনকী চিন্তাও করতে পারেননি যে, তিনি মিশরের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি হয়ে উঠবেন অথবা যিহোবা তাকে ব্যবহার করে তার পরিবারকে খাদ্যাভাব থেকে রক্ষা করবেন। (আদি. ৪০:১৫; ৪১:৩৯-৪৩; ৫০:২০) কোনো সন্দেহ নেই যে, যোষেফ যা আশা করেছিলেন, যিহোবা সেটার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছিলেন। এ ছাড়া, যোষেফের পূর্বপুরুষী সারার বিষয়েও চিন্তা করুন। বৃদ্ধা সারা কি কখনো আশা করেছিলেন যে, যিহোবা তাকে কেবল তার দাসীর মাধ্যমে সন্তান লাভ করতে দেওয়ার পরিবর্তে, তাকে তার নিজের পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়ার সুযোগ দেবেন? ইস্‌হাকের জন্মের বিষয়টা সারা কখনো কল্পনাও করতে পারেননি।—আদি. ২১:১-৩, ৬, ৭.

১৪. যিহোবার উপর আমরা কোন আস্থা রাখতে পারি?

১৪ আমরা এমনটা আশা করি না যে, নতুন জগৎ আসার আগে যিহোবা আমাদের সমস্ত সমস্যা অলৌকিকভাবে দূর করে দেবেন। আর আমরা এমনটা দাবি করি না যে, যিহোবা আমাদের জীবনে অসাধারণ কিছু করবেন। কিন্তু, আমরা এটা জানি, যিহোবা অতীতে তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের চমৎকার উপায়ে সাহায্য করেছেন। আর তিনি পরিবর্তিত হননি। (পড়ুন, যিশাইয় ৪৩:১০-১৩.) এই বিষয়টা তাঁর প্রতি আমাদের আস্থাকে দৃঢ় করে। আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি আমাদের তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করবেন। (২ করি. ৪:৭-৯) হিষ্কিয়, যোষেফ ও সারার উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখি? আমরা যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখি, তা হলে তিনি আমাদের এমনকী সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও সাহায্য করবেন।

আমরা যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখি, তা হলে তিনি আমাদের এমনকী সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও সাহায্য করবেন

১৫. কী আমাদের সমস্যার সময়েও “ঈশ্বরের শান্তি” বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং কীভাবে এটা সম্ভবপর হয়েছে?

১৫ কীভাবে আমরা এমনকী সমস্যার সময়েও “ঈশ্বরের শান্তি” বজায় রাখতে পারি? আমাদের যিহোবার সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে দৃঢ় রাখতে হবে। এইরকম একটা সম্পর্ক একমাত্র খ্রিস্ট যিশুর মাধ্যমে জোগানো মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের কারণে সম্ভবপর হয়েছে। মুক্তির মূল্য হল যিহোবার বিভিন্ন চমৎকার কাজের মধ্যে একটা। মুক্তির মূল্যের কারণে তিনি আমাদের পাপ ক্ষমা করতে পারেন এবং আমরা এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখতে ও সেইসঙ্গে তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি।—যোহন ১৪:৬; যাকোব ৪:৮; ১ পিতর ৩:২১.

এটা আমাদের হৃদয় ও মনকে রক্ষা করবে

১৬. আমরা যখন “ঈশ্বরের শান্তি” লাভ করব, তখন কী হবে? একটা উদাহরণ দিন।

১৬ আমরা যখন “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি,” তা লাভ করব, তখন কী হবে? বাইবেল বলে যে, এটা আমাদের হৃদয় ও মনকে “রক্ষা” করবে। (ফিলি. ৪:৭) “রক্ষা” শব্দটার জন্য মূল ভাষায় যে-শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা হল একটা সামরিক অভিব্যক্তি, যেটা একটা নগরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নিযুক্ত একদল সৈন্যকে নির্দেশ করে। এইরকম একটা দল ফিলিপী নগরে বসবাসরত লোকেদের রক্ষা করত। এর ফলে, রাতের বেলায় নগরের লোকেরা এটা জেনে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারত যে, তাদের নগর সুরক্ষিত রয়েছে। একইভাবে, আমাদের উপর যখন “ঈশ্বরের শান্তি” বিরাজ করে, তখন আমরা দুশ্চিন্তা করি না এবং আমাদের হৃদয় ও মন শান্ত থাকে। আমরা জানি যে, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন এবং তিনি চান যেন আমরা এক সুখী ও পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন উপভোগ করি। (১ পিতর ৫:১০) আর এটা আমাদের সুরক্ষিত রাখে যেন আমরা উদ্‌বিগ্নতা অথবা হতাশার অনুভূতির দ্বারা কবলিত না হই।

১৭. কী আমাদের মহাক্লেশের সময় যিহোবার উপর আস্থা রাখতে সাহায্য করবে?

১৭ শীঘ্রই, সমগ্র মানবজাতির উপর মহাক্লেশ আসবে। (মথি ২৪:২১, ২২) আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না যে, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের প্রতি কী ঘটবে। তবে, আমাদের সেই সময়ের কথা চিন্তা করে অতিরিক্ত উদ্‌বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনকী যদিও যিহোবা যা করবেন, সেই বিষয়ে আমরা সমস্ত কিছু জানি না কিন্তু আমরা আমাদের ঈশ্বরকে ভালোভাবে জানি। আমরা জানি, অতীতে তিনি তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের জন্য কী করেছেন। আমরা দেখেছি যে, যা-ই ঘটুক না কেন, যিহোবা এই বিষয়টা নিশ্চিত করবেন যেন তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হয়। আর তিনি সেটা অপ্রত্যাশিত উপায়ে করতে পারেন! তাই, প্রতি বার যিহোবা যখন আমাদের জন্য কিছু করেন, তখন আমরা এক নতুন উপায়ে “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি,” তা অনুভব করতে পারি।

^ অনু. 1 এমনটা মনে করা হয় যে, সীলও একজন রোমীয় নাগরিক ছিলেন।—প্রেরিত ১৬:৩৭.