সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেভাবে আমরা পুরোনো ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করি এবং পুনরায় সেটা পরিধান করা এড়িয়ে চলি

যেভাবে আমরা পুরোনো ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করি এবং পুনরায় সেটা পরিধান করা এড়িয়ে চলি

‘পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ কর।’—কল. ৩:৯.

গান সংখ্যা: ৫২, ৫৪

১, ২. যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে লোকেরা কী লক্ষ করে?

অনেকে লক্ষ করে যে, যিহোবার সাক্ষিরা হল অদ্বিতীয়। উদাহরণ স্বরূপ, অ্যান্টান গিল নামে একজন লেখক নাতসি জার্মানির যিহোবার সাক্ষিদের গুণাবলির বিষয়ে প্রশংসা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “যিহোবার সাক্ষিরা নাতসিদের বিশেষ শত্রুতার শিকার হয়েছিল। . . . ১৯৩৯ সালের মধ্যে তাদের ৬,০০০ জনকে [কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে] আটক করা হয়েছিল।” তিনি আরও লিখেছিলেন, সাক্ষিরা এমনকী প্রচণ্ড কষ্ট ভোগ করা সত্ত্বেও বিশ্বাসযোগ্য, চাপের মুখেও শান্ত, তাদের ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ও একতাবদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল।

সম্প্রতি, দক্ষিণ আফ্রিকার লোকেরাও যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে অদ্বিতীয় কিছু লক্ষ করেছে। একসময়, দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত ভিন্ন বর্ণের লোকেদের একে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করার অনুমতি ছিল না। তাই, ভিন্ন বর্ণের সাক্ষিরাও একে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারত না। কিন্তু, ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর, রবিবার, দক্ষিণ আফ্রিকা ও এর কাছাকাছি দেশগুলো থেকে ভিন্ন জাতির ৭৮,০০০-রেরও বেশি সাক্ষি একটা বিশেষ কার্যক্রমের জন্য জোহান্সবার্গের সবচেয়ে বড়ো স্টেডিয়ামে মিলিত হয়েছিল। স্টেডিয়ামের একজন ম্যানেজার বলেছিলেন: “আমি এই স্টেডিয়ামে এতদিন যত জনতাকে দেখেছি, তাদের মধ্যে এই লোকেরা হলেন সবচেয়ে ভদ্র। তারা সবাই পরিপাটি পোশাক পরে আছেন। আর আপনারা স্টেডিয়ামটা খুব সুন্দরভাবে পরিষ্কার করেছেন। কিন্তু, সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, আপনাদের মধ্যে বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের লোকেরা একসঙ্গে রয়েছে।”

৩. কী আমাদের ভ্রাতৃসমাজকে অদ্বিতীয় করে তোলে?

এটা দেখায়, এমনকী ন-সাক্ষিরাও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে যে, আমাদের আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ হল অদ্বিতীয়। (১ পিতর ৫:৯) কেন আমরা অন্যান্য সংগঠনের চেয়ে এত ভিন্ন? কারণ আমরা বাইবেল ও ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে নিজেদের মধ্যে এমন যেকোনো বিষয় পরিবর্তন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, যেটা যিহোবাকে খুশি করে না। আমরা “পুরাতন মনুষ্যকে” বা ব্যক্তিত্বকে ‘বস্ত্রবৎ ত্যাগ করি’ এবং “নূতন মনুষ্যকে” বা ব্যক্তিত্বকে পরিধান করি।—কল. ৩:৯, ১০.

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব এবং কেন?

পুরোনো ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করার পর আমাদের পুনরায় সেটা পরিধান করা এড়িয়ে চলতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা প্রথমে শিখব, কীভাবে আমরা পুরোনো ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করতে পারি এবং কেন এমনটা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখব যে, একজন ব্যক্তির পক্ষে নিজের জীবনে বড়ো বড়ো পরিবর্তন করা সম্ভব, তা তিনি খারাপ কাজের সঙ্গে যত গভীরভাবেই জড়িত থাকুন না কেন। তারপর আমরা আলোচনা করব, যারা বহু বছর ধরে সত্যে রয়েছে, তারা পুরোনো ব্যক্তিত্ব পুনরায় পরিধান করা এড়িয়ে চলার জন্য কী করতে পারে। কেন আমাদের এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে হবে? কারণ দুঃখের বিষয় হল, কেউ কেউ যারা একসময় যিহোবাকে সেবা করত, তারা ক্রমাগত সতর্ক থাকতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা যিহোবাকে জানার আগে যেভাবে চিন্তা করত ও কাজ করত, পুনরায় তা করতে শুরু করেছে। আমাদের প্রত্যেককে এই সতর্কবাণী মনে রাখতে হবে: “যে মনে করে, আমি দাঁড়াইয়া আছি, সে সাবধান হউক, পাছে পড়িয়া যায়।”—১ করি. ১০:১২.

যেকোনো অনৈতিক যৌন আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করুন

৫. (ক) কেন পুরোনো ব্যক্তিত্ব দ্রুত ত্যাগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে একটা উদাহরণ দিন। (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) পুরোনো ব্যক্তিত্বের কোন অভ্যাসগুলোর বিষয়ে কলসীয় ৩:৫-৯ পদে উল্লেখ করা হয়েছে?

আপনি যদি বুঝতে পারেন, আপনার পোশাক নোংরা হয়ে গিয়েছে এবং সেটা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে, তা হলে আপনি কী করবেন? আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটা খুলে ফেলবেন। একইভাবে, আমরা যদি বুঝতে পারি যে, আমরা এমন কাজ করছি, যা যিহোবা ঘৃণা করেন, তা হলে দ্রুত নিজেদের পরিবর্তন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের মন্দ অভ্যাসের বিষয়ে পৌল বলেছিলেন: ‘তোমরা এ সকল ত্যাগ কর।’ আসুন, আমরা এগুলোর মধ্যে দুটো বিষয় নিয়ে বিবেচনা করি: “বেশ্যাগমন [“যৌন অনৈতিকতা,” NW]” ও অশুচিতা।—পড়ুন, কলসীয় ৩:৫-৯.

৬, ৭. (ক) কীভাবে পৌলের কথাগুলো দেখায় যে, পুরোনো ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টার প্রয়োজন? (খ) সাকুরা কেমন ধরনের জীবনযাপন করতেন এবং কী তাকে পরিবর্তিত হওয়ার শক্তি জুগিয়েছিল?

যৌন অনৈতিকতা। বাইবেলে ব্যবহৃত “যৌন অনৈতিকতা” শব্দটা আইনতভাবে বিবাহিত স্বামী ও স্ত্রী ছাড়া অন্য যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করাকে অন্তর্ভুক্ত করে। পৌল বলেছিলেন, যৌন অনৈতিকতার বিষয়ে খ্রিস্টানদের অবশ্যই তাদের ‘অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ করিতে’ হবে। এর অর্থ হল, মন্দ আকাঙ্ক্ষা দূর করার জন্য আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। এটা ঠিক, মন্দ আকাঙ্ক্ষা দূর করা কঠিন হতে পারে, তবে আমরা সফল হতে পারি!

আমরা এটা জাপানের সাকুরা নামে একজন বোনের উদাহরণ থেকে দেখতে পারি। * বড়ো হওয়ার সময়, সাকুরা প্রায়ই নিজেকে একাকী বলে মনে করতেন এবং দুঃখের মধ্যে থাকতেন। নিজের একাকিত্ব দূর করার প্রচেষ্টায়, তিনি ১৫ বছর বয়স থেকে যৌন সম্পর্ক করা শুরু করেন। সাকুরা বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেন এবং এর ফলে, তিনি তিন বার গর্ভপাত করান। তিনি বলেন: “প্রথম প্রথম, অনৈতিক সম্পর্কের সময় আমি কিছুটা নিরাপদ বোধ করতাম কারণ আমি মনে করতাম, অন্যদের কাছে আমার মূল্য রয়েছে এবং তারা আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু, আমি যত বেশি যৌন সম্পর্ক করতে থাকি, তত বেশি নিরাপত্তার অভাব বোধ করি।” ২৩ বছর বয়স পর্যন্ত সাকুরা এই জীবনধারা চালিয়ে যান। এরপর, তিনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন এবং তিনি যা শেখেন, সেটা সত্যিই তার ভালো লাগে। যিহোবা তাকে তার অনৈতিক জীবনযাপন বন্ধ করতে আর সেইসঙ্গে তার তীব্র অপরাধবোধ ও লজ্জার অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন। বর্তমানে, সাকুরা একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছেন এবং তিনি নিজেকে আর একাকী বলে মনে করেন না। তিনি বলেন: “আমি প্রতিদিন যিহোবার ভালোবাসা অনুভব করতে পেরে সত্যিই আনন্দিত!”

যেভাবে অশুচি অভ্যাস কাটিয়ে ওঠা যায়

৮. এমন কিছু অভ্যাস কী, যেগুলো আমাদের ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অশুচি করে তুলতে পারে?

অশুচিতা। বাইবেলে ব্যবহৃত “অশুচিতা” ও ‘অশুদ্ধতা’ শব্দগুলো যৌন অনৈতিকতার চেয়ে আরও বেশি কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটা ধূমপান করা অথবা অশ্লীল বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করার মতো বিভিন্ন কাজকে বোঝাতে পারে। (২ করি. ৭:১; ইফি. ৫:৩, ৪) এ ছাড়া, এটা সেইসমস্ত খারাপ কাজকেও বোঝাতে পারে, যেগুলো লোকেরা হয়তো গোপনে করে থাকে যেমন, যৌন উদ্দীপনামূলক বই পড়া অথবা পর্নোগ্রাফি দেখা। এই বিষয়গুলো হস্তমৈথুনের মতো এক অশুচি অভ্যাসের দিকে পরিচালিত করতে পারে।—কল. ৩:৫. *

৯. কোনো ব্যক্তি যদি “দেহলালসা” গড়ে তোলেন, তা হলে কী হতে পারে?

যারা নিয়মিতভাবে পর্নোগ্রাফি দেখে, তারা “মোহ [“দেহলালসা,” জুবিলী বাইবেল]” গড়ে তোলে এবং যৌন ক্রিয়াকলাপের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। গবেষকরা দেখেছে যে, পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি হল মদ অথবা মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তির মতো। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পর্নোগ্রাফি দেখা ক্ষতিকর পরিণতি ডেকে আনে। এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, তীব্র লজ্জার অনুভূতি, কর্মক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হওয়ায় ব্যর্থতা, অসুখী পরিবার, বিবাহবিচ্ছেদ ও এমনকী আত্মহত্যা। একজন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি কাটিয়ে ওঠার এক বছর পর বলেছিলেন, তিনি পরিশেষে আবারও নিজের প্রতি সম্মান গড়ে তুলতে পেরেছেন।

১০. কীভাবে রিবেরো পর্নোগ্রাফির প্রতি তার আসক্তি কাটিয়ে উঠেছিলেন?

১০ অনেক ব্যক্তিকে পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্ত থাকার জন্য সত্যিই এক কঠিন লড়াই করতে হয়। কিন্তু, এই লড়াইয়ে জয়ী হওয়া সম্ভব। ব্রাজিলের রিবেরো নামে একজন ভাইয়ের উদাহরণ বিবেচনা করুন। কিশোর বয়সে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান এবং একটা কারখানায় কাজ করতে শুরু করেন। সেই কারখানায় কাগজ পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার কাজ করা হতো। সেখানে তিনি পর্নোগ্রাফির বিভিন্ন পত্রিকা দেখতে পান। রিবেরো বলেন: “ধীরে ধীরে আমি পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, আমি যে-মহিলার সঙ্গে বাস করতাম, সে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেই আমি পর্নোগ্রাফির ভিডিও দেখতাম।” এরপর, একদিন কাজ করার সময় রিবেরো পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য একটা বইয়ের স্তুপে পারিবারিক সুখের রহস্য শিরোনামের একটা বই দেখতে পান। তিনি সেই বইটা নিয়ে পড়তে শুরু করেন। তিনি যা শেখেন, তা তাকে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু এরপরও, রিবেরোকে পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য দীর্ঘদিন লড়াই করতে হয়। কী তাকে তার এই আসক্তি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে? তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন: “প্রার্থনা, বাইবেল অধ্যয়ন এবং আমি যা শিখেছিলাম, তা নিয়ে ধ্যান করার ফলে ঈশ্বরের গুণাবলির প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, পর্নোগ্রাফির প্রতি আমার আকাঙ্ক্ষার চেয়ে যিহোবার প্রতি আমার ভালোবাসা আরও দৃঢ় হয়েছিল।” বাইবেল ও ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে রিবেরো নিজের জীবনধারা পরিবর্তন করেছিলেন এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। বর্তমানে, তিনি মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন।

১১. কোন বিষয়গুলো একজন ব্যক্তিকে পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে?

১১ লক্ষ করুন, পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্ত থাকার জন্য রিবেরোকে বাইবেল অধ্যয়ন করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হয়েছিল। তিনি বাইবেল থেকে যা পড়েছিলেন, তা নিয়ে তাকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হয়েছিল এবং সেটাকে তার হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছাতে দিতে হয়েছিল। তাকে প্রার্থনায় যিহোবার কাছে সাহায্যভিক্ষা করতে হয়েছিল। এই বিষয়গুলো রিবেরোকে যিহোবার প্রতি তার ভালোবাসাকে এতটা দৃঢ় করতে সাহায্য করেছিল যে, সেই ভালোবাসা পর্নোগ্রাফির প্রতি তার আকাঙ্ক্ষাকে দমন করেছিল। পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্ত থাকার জন্য আমাদেরও অবশ্যই যিহোবাকে গভীরভাবে ভালোবাসতে হবে এবং দুষ্টতাকে ঘৃণা করতে হবে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৯৭:১০.

রাগ করা, নিন্দা করা ও মিথ্যা কথা বলা ত্যাগ করুন

১২. কী স্টিফেনকে রাগ ও নিন্দা করা বা খারাপ কথা বলা ত্যাগ করতে সাহায্য করেছিল?

১২ কোনো কোনো ব্যক্তি খুব দ্রুত রেগে যায় এবং অন্যদের নিষ্ঠুর ও অপমানজনক কথা বলে। যখন এমনটা হয়, তখন তাদের পুরো পরিবার এরজন্য কষ্ট পায়। স্টিফেন নামে একজন বাবা, যিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন, প্রচণ্ড গালিগালাজ করতেন এবং ছোটোখাটো বিষয়ে রেগে যেতেন। তিনি বলেন: “আমার স্ত্রী ও আমি তিন বার পৃথক হয়ে গিয়েছিলাম এবং আমরা বিবাহবিচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিলাম।” এরপর, তারা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন এবং স্টিফেন বাইবেল থেকে যা শেখেন, তা প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, যিহোবাকে জানার আগে কোনো কিছু যখন তাকে অসন্তুষ্ট করত, তখন তিনি এতটাই রেগে যেতেন যে, তিনি নিজেকে একটা বোমার মতো মনে করতেন, যেটা যেকোনো সময় ফেটে যেতে পারে। কিন্তু, স্টিফেন যখন থেকে বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগাতে শুরু করেন, তখন থেকে পরিস্থিতি ভালো হতে থাকে। তিনি বলেন: “আমাদের পারিবারিক জীবনে প্রচুর উন্নতি হয়েছে। যিহোবার সাহায্যে এখন আমি প্রকৃত অর্থে শান্তি লাভ করছি এবং শান্তভাব বজায় রাখতে পারছি।” বর্তমানে স্টিফেন একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করেন এবং তার স্ত্রী বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছেন। স্টিফেনের মণ্ডলীর প্রাচীনরা বলেন: “স্টিফেন খুবই শান্ত ও কঠোর পরিশ্রমী একজন ভাই এবং তার এক নম্র মনোভাব রয়েছে।” তারা আরও বলেন, তারা কখনো স্টিফেনকে রেগে যেতে দেখেননি। স্টিফেন জানেন, তিনি নিজের ক্ষমতায় তার ব্যক্তিত্বে এই পরিবর্তন আনতে পারেননি। তিনি বলেন: “আমি যদি আমার ব্যক্তিত্বকে পুরোপুরি পরিবর্তন করার বিষয়ে যিহোবার সাহায্য গ্রহণ না করতাম, তা হলে আমি কখনো জীবনে এই চমৎকার আশীর্বাদগুলো লাভ করতে পারতাম না।”

১৩. কেন রাগ করা বিপদজনক এবং বাইবেল আমাদের এই বিষয়ে কোন সাবধানবাণী দেয়?

১৩ বাইবেল আমাদের রাগ করা, অন্যদের সম্বন্ধে নির্দয় মন্তব্য করা এবং কলহ বা চিৎকার করা এড়িয়ে চলার বিষয়ে সাবধান করে। (ইফি. ৪:৩১) এই বিষয়গুলো প্রায়ই দৌরাত্ম্যপূর্ণ কাজের দিকে পরিচালিত করে। বর্তমান জগতে অনেকে মনে করে যে, রেগে গিয়ে দৌরাত্ম্যপূর্ণ আচরণ করা একটা সাধারণ বিষয়। কিন্তু, এইরকমভাবে আচরণ করা আসলে আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে অসম্মানিত করে। আমাদের অনেক ভাইকে তাদের আচরণ পরিবর্তন করতে ও সেইসঙ্গে নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করতে হয়েছে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:৮-১১.

১৪. একজন দৌরাত্ম্যপ্রিয় ব্যক্তির পক্ষে কি মৃদুশীল হওয়া সম্ভব?

১৪ হান্স্‌ নামে একজন ভাই, অস্ট্রিয়ার একটা মণ্ডলীতে প্রাচীন হিসেবে সেবা করেন। ভাই হান্সের মণ্ডলীর প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটর বলেন: “তিনি খুবই মৃদুশীল একজন ভাই।” কিন্তু, ভাই হান্স্‌ সবসময় মৃদুশীল ছিলেন না। কিশোর বয়সে তিনি অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খাওয়া শুরু করেন এবং দৌরাত্ম্যপ্রিয় হয়ে ওঠেন। একবার, মদ্যপ অবস্থায় থাকার সময় তিনি এতটাই রেগে যান যে, তিনি তার প্রেমিকাকে হত্যা করে ফেলেন। ফলে, হান্স্‌কে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় কিন্তু কারাগারে থাকা সত্ত্বেও তার ব্যক্তিত্ব পরিবর্তিত হয়নি। তারপর, তার মা একজন প্রাচীনকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন এবং হান্স্‌ বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। তিনি বলেন: “পুরোনো ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করা আমার জন্য সত্যিই অনেক কঠিন ছিল। বাইবেলের যে-পদগুলো আমাকে উৎসাহিত করেছিল, সেগুলো হল যিশাইয় ৫৫:৭ পদ, যেটা বলে: ‘দুষ্ট আপন পথ ত্যাগ করুক’ এবং ১ করিন্থীয় ৬:১১ পদ, যেটা পাপপূর্ণ পথ পরিত্যাগ করেছে, এইরকম ব্যক্তিদের সম্বন্ধে বলে: ‘আর তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে।’ অনেক বছর ধরে যিহোবা ধৈর্যের সঙ্গে তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমাকে নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করতে সাহায্য করেছেন।” হান্স্‌ কারাগারে থাকার সময়ই বাপ্তিস্ম নেন এবং সাড়ে ১৭ বছর ধরে কারাগারে থাকার পর তাকে মুক্ত করা হয়। তিনি বলেন: “যিহোবার অসীম করুণা ও ক্ষমার জন্য আমি তাঁর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।”

১৫. পুরোনো ব্যক্তিত্বের আরেকটা অংশ কী এবং বাইবেল সেটার বিষয়ে কী বলে?

১৫ মিথ্যা কথা বলা হল পুরোনো ব্যক্তিত্বের আরেকটা অংশ। উদাহরণ স্বরূপ, অনেকে কর দেওয়া এড়ানোর জন্য অথবা তাদের ভুলের দায়ভার এড়ানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে থাকে। কিন্তু, যিহোবা হলেন “সত্যের ঈশ্বর।” (গীত. ৩১:৫) তাই, তিনি চান যেন তাঁর সমস্ত উপাসক ‘সত্য আলাপ করে’ এবং ‘মিথ্যা কথা না কহে।’ (ইফি. ৪:২৫; কল. ৩:৯) স্পষ্টতই, আমাদের সত্যি কথা বলতে হবে, এমনকী যদিও তা করা আমাদের জন্য অস্বস্তিকর অথবা কঠিন হয়।—হিতো. ৬:১৬-১৯.

যেভাবে তারা জয় লাভ করেছেন

১৬. কী আমাদের পুরোনো ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করতে সাহায্য করবে?

১৬ আমাদের নিজেদের ক্ষমতায় পুরোনো ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করা সম্ভব নয়। সাকুরা, রিবেরো, স্টিফেন ও হান্স্‌, এই চার জন ব্যক্তিকেই তাদের পুরোনো জীবনধারা পরিবর্তন করার জন্য কঠোর লড়াই করতে হয়েছিল। যে-বিষয়গুলো তাদের সাহায্য করেছিল, সেগুলো হল ঈশ্বরের বাক্য ও সেইসঙ্গে তাঁর পবিত্র আত্মার শক্তি। (লূক ১১:১৩; ইব্রীয় ৪:১২) সেই শক্তি থেকে উপকার লাভ করার জন্য আমাদের প্রতিদিন বাইবেল পড়তে হবে, সেটি নিয়ে ধ্যান করতে হবে এবং আমরা যা শিখি, তা প্রয়োগ করার জন্য সবসময় প্রজ্ঞা ও শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করতে হবে। (যিহো. ১:৮; গীত. ১১৯:৯৭; ১ থিষল. ৫:১৭) এ ছাড়া, আমরা যখন মণ্ডলীর সভার জন্য প্রস্তুতি নিই এবং সেখানে উপস্থিত থাকি, তখনও আমরা ঈশ্বরের বাক্য ও পবিত্র আত্মার কাছ থেকে উপকার লাভ করি। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আর যিহোবার সংগঠনের দ্বারা জোগানো অন্যান্য বিষয়গুলোও যেমন, আমাদের বিভিন্ন পত্রিকা, JW ব্রডকাস্টিং, JW লাইব্রেরি এবং jw.org ব্যবহার করা আমাদের জন্য উপকারজনক হবে।—লূক ১২:৪২.

কীভাবে আমরা পুরোনো ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করতে পারি? (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

১৭ আমরা এমন কিছু মন্দ অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করেছি, যেগুলো খ্রিস্টানদের অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে এবং পুনরায় গড়ে তোলা এড়িয়ে চলতে হবে। কিন্তু, ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার জন্য এতটুকু করাই কি যথেষ্ট? না। আমাদের নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করতে হবে এবং সেটাকে স্থায়ীভাবে আমাদের জীবনের একটা অংশ করে তুলতে হবে। কীভাবে তা করা যায়, তা নিয়ে আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করব।

^ অনু. 7 এই প্রবন্ধে কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ অনু. 8 “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” বইয়ের পরিশিষ্টে দেওয়া “হস্তমৈথুনের অভ্যাস কাটিয়ে উঠুন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন। এ ছাড়া, যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে, খণ্ড ১ (ইংরেজি) বইয়ের ২৫ অধ্যায় দেখুন।