সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেভাবে আমরা নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করি এবং সবসময় তা পরিধান করে থাকি

যেভাবে আমরা নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করি এবং সবসময় তা পরিধান করে থাকি

‘নূতন মনুষ্যকে পরিধান কর।’—কল. ৩:১০.

গান সংখ্যা: ৪৩, ২৭

১, ২. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, আমাদের পক্ষে নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করা সম্ভব? (খ) কলসীয় ৩:১০-১৪ পদে আমরা নতুন ব্যক্তিত্বের কোন কোন গুণ সম্বন্ধে জানতে পারি?

বাইবেলে আমরা ‘নূতন মনুষ্য’ অভিব্যক্তিটা দু-বার পাই। (ইফি. ৪:২৪; কল. ৩:১০) এটা এমন এক মনুষ্য বা ব্যক্তিত্বকে নির্দেশ করে, যা “ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট।” আমাদের পক্ষে কি এই নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করা সম্ভব? হ্যাঁ। যিহোবা মানুষকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন আর তাই আমাদের তাঁর অপূর্ব গুণাবলি অনুকরণ করার ক্ষমতা রয়েছে।—আদি. ১:২৬, ২৭; ইফি. ৫:১.

এটা ঠিক, যেহেতু আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে অসিদ্ধতা পেয়েছি, তাই আমাদের সকলের মনেই কখনো কখনো মন্দ আকাঙ্ক্ষা চলে আসে। এ ছাড়া, আমরা আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির দ্বারাও প্রভাবিত হই। কিন্তু, যিহোবার করুণার সাহায্যে আমরা, তিনি যেমনটা চান, সেইরকম ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারি। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর বিষয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে আরও দৃঢ় করার জন্য আসুন আমরা এমন কিছু গুণ নিয়ে আলোচনা করি, যেগুলো নতুন ব্যক্তিত্বের অংশ। (পড়ুন, কলসীয় ৩:১০-১৪.) তারপর আমরা দেখব, কীভাবে আমরা আমাদের পরিচর্যায় সেই গুণগুলো দেখাতে পারি।

“তোমরা সকলেই এক”

৩. নতুন ব্যক্তিত্বের একটা গুণ কী?

পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন, পক্ষপাতহীন মনোভাব হল নতুন ব্যক্তিত্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি বলেছিলেন: “গ্রীক কি যিহূদী, ছিন্নত্বক্‌ কি অচ্ছিন্নত্বক্‌, বর্ব্বর [“বিদেশী,” ইজি-টু-রিড ভারশন], স্কুথীয়, দাস, স্বাধীন বলিয়া কিছু হইতে পারে না।” * মণ্ডলীতে কোনো ব্যক্তিরই এইরকম মনে করা উচিত নয় যে, তার জাতি, দেশ অথবা সামাজিক পদমর্যাদার কারণে তিনি অন্যদের চেয়ে উত্তম। কেন? কারণ খ্রিস্টের অনুসারী হিসেবে আমরা “সকলেই এক।”—কল. ৩:১১; গালা. ৩:২৮.

৪. (ক) যিহোবার দাসদের অন্যদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে? (খ) কোন পরিস্থিতির কারণে খ্রিস্টানদের একতা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে?

আমরা যখন নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করি, তখন আমরা “মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW]” না করে সমস্ত মানুষকে সম্মান ও সমাদর করি, তা তাদের জাতি অথবা পটভূমি যা-ই হোক না কেন। (রোমীয় ২:১১) বিশ্বের কোনো কোনো অংশে তা করা বিশেষভাবে কঠিন হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বিভিন্ন জাতির লোকেদের বসবাস করার জন্য আলাদা আলাদা এলাকা নির্ধারণ করেছিল। সেই দেশের বেশিরভাগ লোক, যার অন্তর্ভুক্ত হল যিহোবার সাক্ষিরা, এখনও সেই এলাকাগুলোতে বাস করে। পরিচালকগোষ্ঠী আমাদের ভাই-বোনদের ‘প্রশস্ত হইবার’ বিষয়ে উৎসাহিত করতে চেয়েছিল। তাই, ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে তারা একটা বিশেষ ব্যবস্থা শুরু করার অনুমতি দিয়েছিল, যেটার সাহায্যে বিভিন্ন জাতির ভাই-বোনেরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানতে পারবে।—২ করি. ৬:১৩.

৫, ৬. (ক) ঈশ্বরের লোকেদের আরও একতাবদ্ধ হতে সাহায্য করার জন্য একটা দেশে কোন ব্যবস্থা করা হয়েছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) এর ফলাফল কী হয়েছিল?

ভাইয়েরা ব্যবস্থা করেছিল, যাতে কোনো কোনো সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে ভিন্ন ভাষা অথবা জাতির যেকোনো দুটো মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা একসঙ্গে সময় কাটাতে পারে। উভয় মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা একসঙ্গে প্রচার কাজে অংশ নিয়েছিল, সভাতে যোগদান করেছিল এবং একে অপরের বাড়িতে গিয়েছিল। শত শত মণ্ডলী এই ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করেছিল এবং শাখা অফিস অনেক উত্তম ফলাফল সম্বন্ধে জানতে পেরেছে। এই ব্যবস্থা দেখে এমনকী ন-সাক্ষি ব্যক্তিরাও অভিভূত হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, একজন ধর্মীয় যাজক বলেছিলেন: “আমি একজন সাক্ষি নই কিন্তু আমি বলতে চাই, আপনাদের প্রচার কাজ সত্যিই চমৎকার উপায়ে সুসংগঠিত এবং আপনাদের মধ্যে জাতিগত একতা রয়েছে।” এই ব্যবস্থা সম্বন্ধে ভাই-বোনেরা কেমন অনুভব করেছিল?

নোমা নামে হোসাভাষী একজন বোন তার ছোট্ট বাড়িতে ইংরেজিভাষী মণ্ডলীর ভাই-বোনদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে প্রথমে দ্বিধা বোধ করেছিলেন। কিন্তু, শ্বেতাঙ্গ সাক্ষিদের সঙ্গে প্রচার করার এবং তাদের বাড়িতে যাওয়ার পর তিনি অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তারা আমাদের মতোই সাধারণ লোক!” তাই, ইংরেজিভাষী মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা যখন হোসাভাষী মণ্ডলীর এলাকায় প্রচার করতে এসেছিল, তখন বোন নোমা তাদের মধ্যে কয়েক জনকে খাবারের জন্য তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি যখন দেখেছিলেন, তার অতিথিদের মধ্যে একজন শ্বেতাঙ্গ প্রাচীন একটা নীচু প্লাস্টিকের বাক্সের উপর আনন্দের সঙ্গে বসে আছেন, তখন তিনি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। ক্রমাগত চলতে থাকা এই ব্যবস্থার সৌজন্যে অনেক ভাই-বোন নতুন নতুন বন্ধু খুঁজে পেয়েছে এবং ভিন্ন পটভূমির ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে।

সমবেদনা ও দয়া পরিধান করুন

৭. কেন আমাদের সবসময় সমবেদনা দেখাতে হবে?

শয়তানের জগতের শেষ না আসা পর্যন্ত যিহোবার লোকেদের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। আমরা সকলেই বেকারত্ব, গুরুতর অসুস্থতা, তাড়না, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অপরাধের কারণে বিষয়-সম্পত্তির ক্ষতি অথবা অন্যান্য কষ্টকর পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হতে পারি। পরীক্ষার সময় একে অপরকে সাহায্য করার জন্য আমাদের প্রকৃত সমবেদনার প্রয়োজন। করুণা বা গভীর সমবেদনা আমাদের একে অন্যের সঙ্গে মধুর বা দয়াশীল উপায়ে আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করবে। (ইফি. ৪:৩২) এই গুণগুলো হল নতুন ব্যক্তিত্বের অংশ। এগুলো আমাদের ঈশ্বরকে অনুকরণ করতে এবং অন্যদের সান্ত্বনা প্রদান করতে সাহায্য করবে।—২ করি. ১:৩, ৪.

৮. আমরা যখন মণ্ডলীর সবার প্রতি সমবেদনা ও দয়া দেখাই, তখন কোন ভালো বিষয়গুলো ঘটতে পারে? একটা উদাহরণ দিন।

কীভাবে আমরা আমাদের মণ্ডলীর সেই ব্যক্তিদের প্রতি আরও বেশি দয়া দেখাতে পারি, যারা অন্য দেশ থেকে চলে এসেছে অথবা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রয়েছে? আমরা তাদের স্বাগত জানাতে চাই, তাদের বন্ধু হয়ে উঠতে চাই এবং তাদের যে মণ্ডলীতে প্রয়োজন রয়েছে, সেই বিষয়টা উপলব্ধি করানোর জন্য তাদের সাহায্য করতে চাই। (১ করি. ১২:২২, ২৫) ড্যানিকার্ল নামে একজন ব্যক্তির কথা চিন্তা করুন, যিনি ফিলিপিনস থেকে জাপানে চলে এসেছিলেন। যেহেতু তিনি একজন বিদেশি ছিলেন, তাই কর্মস্থলে তার সঙ্গে অন্যান্য কর্মীদের মতো ভালো আচরণ করা হতো না। এরপর, তিনি যিহোবার সাক্ষিদের একটা সভায় যোগ দেন। ড্যানিকার্ল বলেন: “সেখানে উপস্থিত প্রায় সকলেই জাপানি ছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা আমাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছিল। এটা এমন ছিল যেন তারা আমার অনেক দিনের পরিচিত লোক।” ভাইয়েরা তার প্রতি দয়া দেখিয়েছিল বলে তিনি ক্রমাগত যিহোবার নিকটবর্তী হতে পেরেছিলেন। একসময়, ড্যানিকার্ল বাপ্তিস্ম নেন এবং বর্তমানে তিনি একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন। তার সহপ্রাচীনরা এতে খুবই খুশি যে, তিনি ও তার স্ত্রী জেনিফার তাদের মণ্ডলীতে সেবা করছেন। সেই প্রাচীন ভাইয়েরা এই দম্পতি সম্বন্ধে বলেন: “তারা অগ্রগামী হিসেবে খুবই সাধারণ জীবনযাপন করেন এবং প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করার ক্ষেত্রে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন।”—লূক ১২:৩১.

৯, ১০. আমরা যখন পরিচর্যায় সমবেদনা দেখাই, তখন যে-উত্তম ফলাফল লাভ করা যায়, সেগুলোর কিছু উদাহরণ তুলে ধরুন।

আমরা যখন রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করি, তখন আমাদের কাছে “সকলের প্রতি . . . সৎকর্ম্ম” করার সুযোগ থাকে। (গালা. ৬:১০) অনেক ভাই-বোন অভিবাসীদের জন্য সমবেদনা বোধ করে এবং তাদের ভাষা শেখার চেষ্টা করে। (১ করি. ৯:২৩) তাদের প্রচেষ্টা উত্তম ফলাফল নিয়ে এসেছে। উদাহরণ স্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ার টিফানি নামে একজন অগ্রগামী বোন, ব্রিসবেন শহরে একটা সোয়াহিলিভাষী মণ্ডলীকে সাহায্য করার জন্য সোয়াহিলি ভাষা শিখেছেন। এমনকী যদিও সেই ভাষা শেখা তার জন্য কঠিন ছিল, তবে এর ফলে তার জীবন আরও বেশি উদ্দেশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বোন টিফানি বলেন: “আপনি যদি এক আগ্রহজনক উপায়ে পরিচর্যা উপভোগ করতে চান, তা হলে ভিন্নভাষী কোনো মণ্ডলীতে সেবা করুন। এটা এমন যেন আপনি নিজের শহর না ছেড়েই ভ্রমণ করছেন। আপনি আমাদের বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজের অংশ হওয়া অনুভব করতে এবং সেটার চমৎকার একতাকে নিজের চোখে দেখতে পারবেন।”

কী খ্রিস্টানদের অভিবাসী ব্যক্তিদের সাহায্য করতে অনুপ্রাণিত করে? (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০ জাপানের একটা পরিবার একইরকম কিছু করেছে। সেই পরিবারের মেয়ে সাকিকো বলেন: “ক্ষেত্রের পরিচর্যায় আমাদের প্রায়ই ব্রাজিল থেকে আসা অভিবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো। আমরা যখন তাদের কাছে থাকা পোর্তুগিজ ভাষার বাইবেল থেকে প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪ পদ অথবা গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১, ২৯ পদের মতো বিভিন্ন শাস্ত্রপদ দেখাতাম, তখন তারা মনোযোগ দিয়ে তা দেখত আর কখনো কখনো এমনকী কেঁদে ফেলত।” এই পরিবার সেই অভিবাসীদের জন্য সমবেদনা বোধ করে এবং তাদের সত্য সম্বন্ধে শেখানোর জন্য সাহায্য করতে চায়। তাই, তারা পরিবারগতভাবে পোর্তুগিজ ভাষা শিখতে শুরু করে। পরবর্তী সময়, এই পরিবার একটা পোর্তুগিজভাষী মণ্ডলী গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বিগত বছরগুলোতে তারা বহু অভিবাসীকে যিহোবার দাস হতে সাহায্য করেছে। সাকিকো বলেন: “পোর্তুগিজ ভাষা শেখার জন্য আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করতে হয়েছে কিন্তু সেই প্রচেষ্টার তুলনায় আমরা অনেক বেশি আশীর্বাদ লাভ করেছি। আমরা যিহোবার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।”—পড়ুন, প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫. *

নম্রতা পরিধান করুন

১১, ১২. (ক) নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করার পিছনে কেন আমাদের সঠিক উদ্দেশ্য থাকা উচিত? (খ) কী আমাদের নম্র মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করবে?

১১ নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করার পিছনে আমাদের এই উদ্দেশ্য থাকা উচিত নয় যে, আমার অন্যদের কাছ থেকে প্রশংসা লাভ করব। এর পরিবর্তে আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, যিহোবাকে সমাদর করা। মনে রাখবেন, এমনকী একজন সিদ্ধ স্বর্গদূতও গর্বিত হয়ে উঠেছিল এবং পাপ করেছিল। (তুলনা করুন, যিহিষ্কেল ২৮:১৭.) আমরা যেহেতু অসিদ্ধ, তাই আমাদের পক্ষে গর্বিত মনোভাব এড়িয়ে চলা আরও বেশি কঠিন। তা সত্ত্বেও, আমরা নম্রতা পরিধান করতে পারি। কী আমাদের তা করতে সাহায্য করবে?

১২ একটা যে-বিষয় আমাদের নম্র হতে সাহায্য করবে, তা হল প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করা এবং আমরা যা পড়ি, তা নিয়ে ধ্যান করা। (দ্বিতীয়. ১৭:১৮-২০) আমাদের বিশেষভাবে যিশুর শিক্ষাগুলো নিয়ে এবং নম্রতার বিষয়ে তাঁর চমৎকার উদাহরণ নিয়ে ধ্যান করতে হবে। (মথি ২০:২৮) যিশু এতটাই নম্র ছিলেন যে, তিনি তাঁর প্রেরিতদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন। (যোহন ১৩:১২-১৭) আরেকটা যে-বিষয় আমরা করতে পারি, তা হল যিহোবার পবিত্র আত্মা চেয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা করা। তাঁর পবিত্র আত্মা আমাদেরকে, অন্যদের চেয়ে নিজেদের উত্তম মনে করার যেকোনো প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে।—গালা. ৬:৩, ৪; ফিলি. ২:৩.

১৩. নম্র হওয়ার ফলে কোন কোন পুরস্কার লাভ করা যায়?

১৩ হিতোপদেশ ২২:৪ পদ পড়ুন। যিহোবা চান যেন আমরা নম্র হই। নম্রতা অনেক পুরস্কার নিয়ে আসে। আমরা যখন নম্র হই, তখন মণ্ডলী আরও শান্তিপূর্ণ ও একতাবদ্ধ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া, যিহোবা আমাদের তাঁর অনুগ্রহ প্রদান করেন। প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “তোমরা সকলেই এক জন অন্যের সেবার্থে নম্রতায় কটিবন্ধন কর, কেননা ‘ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।’”—১ পিতর ৫:৫.

মৃদুতা ও ধৈর্য পরিধান করুন

১৪. মৃদুতা ও ধৈর্য প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম উদাহরণ কে?

১৪ বর্তমান জগতে একজন ব্যক্তি যদি মৃদুশীল ও ধৈর্যশীল হন, তা হলে সাধারণত অন্যেরা তাকে দুর্বল হিসেবে দেখে থাকে। কিন্তু, এইরকম চিন্তাভাবনা আসলে ঠিক নয়। এই চমৎকার গুণগুলোর উৎস হলেন প্রভু যিহোবা, যিনি নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি। তিনি হলেন মৃদুতা দীর্ঘসহিষ্ণুতা বা ধৈর্য প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম উদাহরণ। (২ পিতর ৩:৯) উদাহরণ স্বরূপ, যিহোবা যখন তাঁর স্বর্গদূতদের মাধ্যমে অব্রাহাম ও লোটকে উত্তর দিয়েছিলেন, তখন তিনি কতটা ধৈর্য দেখিয়েছিলেন, সেই বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা করুন। (আদি. ১৮:২২-৩৩; ১৯:১৮-২১) এ ছাড়া, এই বিষয়টা নিয়েও চিন্তা করুন যে, ১,৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবাধ্য ইস্রায়েল জাতির প্রতি যিহোবা কতটা ধৈর্য দেখিয়েছিলেন।—যিহি. ৩৩:১১.

১৫. মৃদুতা ও ধৈর্য দেখানোর বিষয়ে যিশু কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

১৫ যিশু “মৃদুশীল” ছিলেন। (মথি ১১:২৯) তিনি তাঁর শিষ্যদের দুর্বলতা সত্ত্বেও তাদের প্রতি প্রচুর ধৈর্য দেখিয়েছিলেন। যিশুর পার্থিব পরিচর্যার সময় প্রায়ই অন্যায্যভাবে তাঁর সমালোচনা করা হতো এবং তাঁকে দোষারোপ করা হতো। কিন্তু, তিনি একেবারে মৃত্যু পর্যন্ত মৃদুতা ও ধৈর্য দেখিয়ে গিয়েছিলেন। যিশু যখন যাতনাদণ্ডে নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছিলেন, তখন তিনি তাঁর পিতাকে অনুরোধ করেছিলেন, যেন তিনি সেই ব্যক্তিদের ক্ষমা করে দেন, যারা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন: “ইহারা কি করিতেছে, তাহা জানে না।” (লূক ২৩:৩৪) এমনকী যিশু যখন চাপ ও যন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন, তখনও তিনি মৃদুতা ও ধৈর্য দেখিয়ে গিয়েছিলেন।—পড়ুন, ১ পিতর ২:২১-২৩.

১৬. কীভাবে আমরা মৃদুতা ও ধৈর্য দেখাতে পারি?

১৬ আমরা একটা যে-উপায়ে মৃদুতা ও ধৈর্য দেখাতে পারি, সেই বিষয়ে উল্লেখ করে পৌল লিখেছিলেন: “পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু [ঈশ্বর] যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর।” (কল. ৩:১৩) অন্যদের ক্ষমা করার জন্য আমাদের মৃদুতা ও ধৈর্য দেখাতে হবে। এই বিষয়টা মণ্ডলীর একতা বৃদ্ধি করতে ও তা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

১৭. কেন মৃদুতা ও ধৈর্য দেখানো গুরুত্বপূর্ণ?

১৭ যিহোবা চান যেন আমরা অন্যদের প্রতি মৃদুতা ও ধৈর্য দেখাই। আমরা যদি তাঁর নতুন জগতে বাস করতে চাই, তা হলে এই গুণগুলো প্রদর্শন করা অপরিহার্য। (মথি ৫:৫; যাকোব ১:২১) আমরা যখন মৃদুতা ও ধৈর্য দেখাই, তখন আমরা যিহোবাকে সমাদর করি এবং অন্যদেরও তা করতে সাহায্য করি।—গালা. ৬:১; ২ তীম. ২:২৪-২৬ক.

প্রেম পরিধান করুন

১৮. কীভাবে প্রেম ও পক্ষপাতহীন মনোভাব একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

১৮ আমরা যে-গুণগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলো সবই প্রেমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিষ্য যাকোবকে তার ভাইদের পরামর্শ দিতে হয়েছিল কারণ তারা গরিব ব্যক্তিদের তুলনায় ধনী ব্যক্তিদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছিল। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, এইরকম আচরণ করার মাধ্যমে তারা আসলে ‘আপন প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবার’ বিষয়ে ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘন করেছিল। এরপর, তিনি আরও বলেছিলেন: “যদি মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” ইজি-টু-রিড ভারশন] কর, তবে পাপাচরণ করিতেছ।” (যাকোব ২:৮, ৯) আমরা যদি লোকেদের ভালোবাসি, তা হলে আমরা কোনো ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাতি অথবা সামাজিক পদমর্যাদার কারণে তার প্রতি বিদ্বেষ প্রদর্শন করব না। আমার যে পক্ষপাতহীন, তা কেবল উপর উপর দেখানোই যথেষ্ট নয়। পক্ষপাতহীন মনোভাবকে আমাদের ব্যক্তিত্বের একটা প্রকৃত অংশ করে তুলতে হবে।

১৯. কেন প্রেম পরিধান করা গুরুত্বপূর্ণ?

১৯ এ ছাড়া, প্রেম “চিরসহিষ্ণু” বা ধৈর্যপূর্ণ ও “মধুর” বা সদয় এবং “গর্ব্ব করে না।” (১ করি. ১৩:৪, ৫) প্রতিবেশীদের কাছে ক্রমাগত সুসমাচার জানানোর জন্য আমাদের ধৈর্য, দয়া ও নম্রতা দেখাতে হবে। (মথি ২৮:১৯) এ ছাড়া, এই গুণগুলো দেখানোর ফলে আমাদের পক্ষে মণ্ডলীর সমস্ত ভাই-বোনের সঙ্গে মানিয়ে চলা সহজ হয়ে ওঠে। আমরা যখন সকলেই এই ধরনের প্রেম দেখাই, তখন আমাদের মণ্ডলীগুলো একতাবদ্ধ হয়ে ওঠে এবং যিহোবাকে সমাদর করে। অন্যেরা এই একতা লক্ষ করে এবং সত্যের দিকে আকৃষ্ট হয়। এটা উপযুক্ত যে, নতুন ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে বাইবেলের বর্ণনা এভাবে শেষ হয়: “এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।”—কল. ৩:১৪.

‘ক্রমশঃ নবীনীকৃত হোন’

২০. (ক) আমাদের নিজেদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত এবং কেন? (খ) আমরা কোন অপূর্ব ভবিষ্যতের জন্য আগ্রহ সহকারে অপেক্ষা করতে পারি?

২০ আমাদের সবারই নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘পুরোনো ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করার এবং পুনরায় সেটা পরিধান করা এড়িয়ে চলার জন্য আমাকে এখনও কোন পরিবর্তনগুলো করতে হবে?’ আমাদের অবশ্যই যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে হবে এবং তাঁর কাছে সাহায্যভিক্ষা করতে হবে। আমাদের মন্দ চিন্তাভাবনা অথবা কাজ পরিবর্তন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে, যাতে আমরা “ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইতে” পারি। (গালা. ৫:১৯-২১) এ ছাড়া, আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করতে হবে, ‘আমি কি যিহোবাকে খুশি করার জন্য ক্রমাগত নিজের চিন্তাভাবনায় রদবদল করি?’ (ইফি. ৪:২৩, ২৪) যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই আমাদের নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করার এবং সবসময় তা পরিধান করে থাকার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে যেতে হবে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সেই সময় জীবন কতই-না অপূর্ব হবে, যখন জীবিত সকলে নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করে থাকবে এবং নিখুঁতভাবে যিহোবার চমৎকার গুণাবলি অনুকরণ করবে!

^ অনু. 3 বাইবেলের সময় লোকেরা মনে করত, স্কুথীয়রা সভ্য জাতি নয় আর তাই তারা তাদের ঘৃণার চোখে দেখত।

^ অনু. 10 প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫ (ইজি-টু-রিড ভারশন): “তখন পিতর বলতে শুরু করলেন, ‘এখন আমি সত্যি সত্যিই বুঝতে পেরেছি যে ঈশ্বর কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন না; প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেউ ঈশ্বরের উপাসনা করে ও ন্যায় কাজ করে, ঈশ্বর এমন লোকদের গ্রহণ করেন।’”