সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি যিহোবাকে ঠিক নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের মতোই জানেন?

আপনি কি যিহোবাকে ঠিক নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের মতোই জানেন?

“দুরাচারেরা বিচার বুঝে না, কিন্তু সদাপ্রভুর অন্বেষীরা সকলই বুঝে।”—হিতো. ২৮:৫.

গান সংখ্যা: ৪৩, ৪৯

১-৩. (ক) এই শেষকালে কী আমাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে সাহায্য করবে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?

বর্তমানে, আমরা শেষ কালের শেষ সময়ে বাস করছি। আমরা আরও বেশি করে মন্দ লোকেদের দেখতে পাচ্ছি। তারা “তৃণের ন্যায় অঙ্কুরিত হয়।” (গীত. ৯২:৭) তাই, আমরা এটা দেখে অবাক হই না যে, অনেক লোক সেই বিষয়গুলোকে প্রত্যাখ্যান করে, যেগুলো ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সঠিক। পৌল খ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “হিংসাতে শিশুগণের ন্যায় হও,” কিন্তু “বুদ্ধিতে” বা বোঝার ক্ষেত্রে “পরিপক্ব হও।” (১ করি. ১৪:২০) কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

আমরা এর উত্তর এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদে খুঁজে পাই, যেটা বলে: “সদাপ্রভুর অন্বেষীরা সকলই বুঝে।” (হিতো. ২৮:৫) এর অর্থ হল, তারা যিহোবাকে খুশি করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয় বোঝে। এ ছাড়া, হিতোপদেশ ২:৭, ৯ পদ আমাদের শিক্ষা দেয় যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের বুদ্ধি বা প্রজ্ঞা দেন, যারা যা সঠিক, তা-ই করে। ফল স্বরূপ, তারা ‘ধার্ম্মিকতা ও বিচার বুঝিতে, ন্যায় ও সমস্ত উত্তম পথ বুঝিতে’ পারে।

নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের কাছে এই ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া প্রজ্ঞা ছিল। (যিহি. ১৪:১৪) আর বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেদের কাছেও এই প্রজ্ঞা রয়েছে। আপনার সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনার কাছে কি ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা রয়েছে? যিহোবাকে খুশি করার জন্য প্রয়োজনীয় ‘সকলই বুঝিবার’ উদ্দেশ্যে আপনাকে তাঁর সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতে হবে। তাই, এই প্রবন্ধে আমরা শিখতে চলেছি: (১) কীভাবে নোহ, দানিয়েল ও ইয়োব ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন, (২) কীভাবে ঈশ্বর সম্বন্ধে জানা তাদের সাহায্য করেছিল এবং (৩) কীভাবে আমরা তাদের মতো বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারি।

নোহ এক মন্দ জগতে ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করেছিলেন

৪. কীভাবে নোহ যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন এবং কীভাবে ঈশ্বর সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা তাকে সাহায্য করেছিল?

কীভাবে নোহ যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন? আদম ও হবা যখন থেকে সন্তানের জন্ম দিতে শুরু করেছিলেন, তখন থেকে লোকেরা এই তিনটে উপায়ে যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে পেরেছে: তাঁর সৃষ্টি, তাঁর অন্যান্য বিশ্বস্ত দাস এবং তাঁর বাধ্য থাকার ফলে আসা উপকারগুলো লাভ করার মাধ্যমে। (যিশা. ৪৮:১৮) সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে নোহ হয়তো এই বিষয়ে প্রমাণ লাভ করেছিলেন যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে এবং তিনি হয়তো সৃষ্টির মাধ্যমে ঈশ্বরের গুণাবলি সম্বন্ধেও শিখেছিলেন। ফল স্বরূপ, নোহ হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা হলেন শক্তিশালী এবং তিনিই একমাত্র সত্য ঈশ্বর। (রোমীয় ১:২০) এর ফলে, নোহ ঈশ্বরের উপর দৃঢ়বিশ্বাস গড়ে তুলেছিলেন।

৫. কীভাবে নোহ শিখেছিলেন যে, ঈশ্বর মানবজাতির কাছ থেকে কী চান?

বাইবেল বলে, “বিশ্বাস শ্রবণ হইতে . . . হয়” অর্থাৎ আমরা অন্যদের কাছ থেকে যা-কিছু শুনি, সেগুলো আমাদের বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে পারে। (রোমীয় ১০:১৭) নোহ সম্ভবত তার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে যিহোবা সম্বন্ধে শুনেছিলেন। তার বাবা লেমকের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ছিল এবং তিনি আদমের মৃত্যুর আগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) নোহের ঠাকুরদাদা ছিলেন মথূশেলহ এবং ঠাকুরদাদার ঠাকুরদাদা ছিলেন যেরদ, যিনি নোহের জন্মের ৩৬৬ বছর পর মারা গিয়েছিলেন। * (লূক ৩:৩৬, ৩৭) হতে পারে, সেই পুরুষেরা ও তাদের স্ত্রীরা নোহকে শিখিয়েছিলেন যে, যিহোবা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি চান যেন তারা সন্তানের জন্ম দেয়, পৃথিবী পরিপূর্ণ করে ও তাঁর সেবা করে। এ ছাড়া, নোহ হয়তো শিখেছিলেন যে, আদম ও হবা ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিলেন এবং তিনি তাদের সিদ্ধান্তের খারাপ পরিণতিগুলো দেখতে পেয়েছিলেন। (আদি. ১:২৮; ৩:১৬-১৯, ২৪) নোহ যা শিখেছিলেন, সেগুলো তিনি ভালোবেসেছিলেন এবং এটাই তাকে যিহোবার সেবা করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল।—আদি. ৬:৯.

৬, ৭. কীভাবে নোহের আশা তার বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করেছিল?

আমাদের আশা আমাদের বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে। কল্পনা করুন, নোহের বিশ্বাস সেইসময় কতই-না শক্তিশালী হয়েছিল, যখন তিনি জানতে পেরেছিলেন, তার নাম, যেটার অর্থ হল “বিশ্রাম” বা “সান্ত্বনা,” সেটার সঙ্গে একটা আশার ধারণা জড়িত রয়েছে। (আদি. ৫:২৮, ২৯) যিহোবা লেমককে তার ছেলে নোহের বিষয়ে এই কথাগুলো বলতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন: “সদাপ্রভু কর্ত্তৃক অভিশপ্ত ভূমি হইতে আমাদের যে শ্রম ও হস্তের ক্লেশ হয়, তদ্বিষয়ে এ আমাদিগকে সান্ত্বনা করিবে।” তাই, নোহের এই আশা ছিল যে, ঈশ্বর পরিস্থিতি ভালো করবেন। হেবল ও হনোকের মতোই নোহের এই বিশ্বাস ছিল যে, একটা ‘বংশ’ সাপের মাথায় আঘাত করবে।—আদি. ৩:১৫.

নোহ ঈশ্বরের সেই প্রতিজ্ঞার অর্থ পুরোপুরি বুঝতে পারেননি, যেটা আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু, তিনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই ভবিষ্যদ্‌বাণী ভবিষ্যতের জন্য আশা প্রদান করে। হনোকও একইরকম একটা বার্তা প্রচার করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, যিহোবা মন্দ লোকেদের ধ্বংস করবেন। (যিহূদা ১৪, ১৫) নিশ্চিতভাবেই, হনোকের বার্তা, যেটা আরমাগিদোনের সময় সম্পূর্ণরূপে পরিপূর্ণতা লাভ করবে, সেটা নোহের বিশ্বাস ও আশাকে শক্তিশালী করেছিল!

৮. কীভাবে ঈশ্বর সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা নোহকে সুরক্ষিত রেখেছিল?

কীভাবে ঈশ্বর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান নোহকে সাহায্য করেছিল? যেহেতু নোহ যিহোবা সম্বন্ধে শিখেছিলেন, তাই তিনি বিশ্বাস ও ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা গড়ে তুলেছিলেন। এটা তাকে সুরক্ষিত রেখেছিল, বিশেষ করে এমন কিছু করা থেকে, যেটা যিহোবাকে দুঃখিত করবে। কীভাবে? নোহ ঈশ্বরের বন্ধু হতে চেয়েছিলেন আর তাই, তিনি এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেননি, যাদের যিহোবার উপর বিশ্বাস ছিল না এবং যারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এই লোকেদের বিপরীতে, নোহ সেই মন্দদূতদের দ্বারা ভ্রান্ত হননি, যারা স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নেমে এসেছিল। লোকেরা সেই শক্তিশালী মন্দদূতদের দ্বারা অভিভূত হয়েছিল আর তারা হয়তো এমনকী তাদের উপাসনা করতে চেয়েছিল। (আদি. ৬:১-৪, ৯) এ ছাড়া নোহ জানতেন, যিহোবা চেয়েছিলেন যেন মানুষেরা সন্তানের জন্ম দেয় ও পৃথিবী পরিপূর্ণ করে। (আদি. ১:২৭, ২৮) তাই, সেই মন্দদূতেরা যখন নারীদের বিয়ে করেছিল এবং তাদের যখন সন্তান হয়েছিল, তখন নোহ বুঝতে পেরেছিলেন যে, সেটা ঠিক নয়। এই বিষয়টা সেইসময় আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যখন সেই সন্তানরা অন্যান্য সন্তানদের চেয়ে আকারে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। অবশেষে, যিহোবা নোহকে বলেছিলেন যে, তিনি সমস্ত মন্দ লোককে ধ্বংস করার জন্য একটা জলপ্লাবন আনবেন। যেহেতু যিহোবার সতর্কবাণীর প্রতি নোহের বিশ্বাস ছিল, তাই তিনি একটা জাহাজ নির্মাণ করেছিলেন এবং তিনি ও তার পরিবার রক্ষা পেয়েছিলেন।—ইব্রীয় ১১:৭.

৯, ১০. কীভাবে আমরা নোহের মতো বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারি?

কীভাবে আমরা নোহের মতো বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারি? এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা ঈশ্বরের বাক্য সতর্কতার সঙ্গে অধ্যয়ন করি, যা শিখি সেটাকে ভালোবাসি এবং সেটাকে ব্যবহার করে আমাদের জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন করি ও উত্তম সিদ্ধান্ত নিই। (১ পিতর ১:১৩-১৫) এমনটা করলে, বিশ্বাস ও ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা আমাদের শয়তানের কলাকৌশল থেকে এবং এই জগতের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখবে। (২ করি. ২:১১) জগতের অনেক লোক দৌরাত্ম্য ও অনৈতিকতাকে ভালোবাসে এবং নিজেদের মন্দ আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করে। (১ যোহন ২:১৫, ১৬) তারা এই বিষয়টাকে উপেক্ষা করে যে, আমরা এই মন্দ জগতের ধ্বংসের একেবারে নিকটে বাস করছি। আমাদের যদি দৃঢ়বিশ্বাস না থাকে, তা হলে আমরাও তাদের মতো চিন্তা করা শুরু করতে পারি। এই বিষয়টা ভুলে যাবেন না যে, যিশু যখন নোহের সময়ের সঙ্গে আমাদের সময়ের তুলনা করেছিলেন, তখন তিনি দৌরাত্ম্য অথবা অনৈতিকতার বিষয়ে উল্লেখ করেননি বরং ঈশ্বরের সেবা থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ার বিপদ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন।—পড়ুন, মথি ২৪:৩৬-৩৯.

১০ নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার জীবনধারা কি দেখায় যে, আমি সত্যিই যিহোবাকে জানি? আমার বিশ্বাস কি আমাকে সেই কাজগুলো করতে অনুপ্রাণিত করে, যেগুলো যিহোবার দৃষ্টিতে সঠিক? আমার বিশ্বাস কি লোকেদের সেই বিষয়গুলো শেখাতে অনুপ্রাণিত করে, যেগুলো তারা করুক বলে ঈশ্বর চান?’ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনাকে জানতে সাহায্য করবে যে, আপনিও ঠিক নোহের মতো সত্য ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করছেন কি না।

দানিয়েল পৌত্তলিক নগর বাবিলে ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা দেখিয়েছিলেন

১১. (ক) ঈশ্বরের প্রতি অল্পবয়সি দানিয়েলের ভালোবাসা থেকে আমরা তার বাবা-মা সম্বন্ধে কী জানতে পারি? (খ) দানিয়েলের মধ্যে থাকা কোন গুণটা আপনি গড়ে তুলতে চান?

১১ কীভাবে দানিয়েল যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন? দানিয়েলের বাবা-মা নিশ্চয়ই তাকে যিহোবা ও তাঁর বাক্যকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন। আর দানিয়েল সারাজীবন ধরে সেই ভালোবাসা বজায় রেখেছিলেন। এমনকী বৃদ্ধ বয়সেও তিনি সতর্কতার সঙ্গে শাস্ত্র অধ্যয়ন করতেন। (দানি. ৯:১, ২) দানিয়েল যিহোবাকে খুব ভালোভাবে জানতেন। এ ছাড়া, তিনি সেই সমস্ত কাজ সম্বন্ধে জানতেন, যেগুলো যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের জন্য করেছিলেন। আমরা এই বিষয়টা, নম্রতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে করা দানিয়েলের প্রার্থনার মধ্যে দেখতে পাই, যা দানিয়েল ৯:৩-১৯ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই প্রার্থনাটা পড়ুন এবং এটা নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘এই প্রার্থনা আমাকে দানিয়েল সম্বন্ধে কী শেখায়?’

১২-১৪. (ক) কীভাবে দানিয়েল ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা দেখিয়েছিলেন? (খ) কীভাবে যিহোবা দানিয়েলকে তার সাহস ও আনুগত্যের জন্য আশীর্বাদ করেছিলেন?

১২ কীভাবে ঈশ্বর সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা দানিয়েলকে সাহায্য করেছিল? একজন বিশ্বস্ত যিহুদির পক্ষে পৌত্তলিক নগর বাবিলে যিহোবার সেবা করা সহজ ছিল না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবা সেই যিহুদিদের বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যে নগরে বন্দি করিয়া আনিয়াছি, তথাকার শান্তি চেষ্টা কর।” (যির. ২৯:৭) কিন্তু, তিনি তাদের এই আজ্ঞাও দিয়েছিলেন যেন তারা তাদের সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে একমাত্র তাঁর উপাসনা করে। (যাত্রা. ৩৪:১৪) কীভাবে দানিয়েল এই উভয় আজ্ঞার বাধ্য হতে পারতেন? ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা দানিয়েলকে এটা বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, প্রথমে তাকে যিহোবার প্রতি বাধ্যতা দেখাতে হবে এবং তারপর, মানবশাসকদের প্রতি বাধ্যতা দেখাতে হবে। এর শত শত বছর পর, যিশুও এই একই নীতি সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন।—লূক ২০:২৫.

১৩ একটু চিন্তা করুন, দানিয়েল সেইসময় কী করেছিলেন, যখন তিনি এই আইন সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন যে, ৩০ দিন পর্যন্ত কেউই রাজা ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি অথবা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারবে না। (পড়ুন, দানিয়েল ৬:৭-১০.) তিনি হয়তো অজুহাত দেখিয়ে বলতে পারতেন, ‘এই আজ্ঞা তো মাত্র ৩০ দিনের জন্য।’ এর পরিবর্তে, দানিয়েল একটা মানব আইনকে ঈশ্বরের উপাসনার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে দেননি। দানিয়েল চাইলে একটা গোপন জায়গায় গিয়েও যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি জানতেন, প্রতিদিন তিনি যখন প্রার্থনা করতেন, তখন লোকেরা তাকে দেখত। তাই, যদিও এটা খুবই বিপদজনক ছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও, দানিয়েল ক্রমাগত সেখানেই প্রার্থনা করেছিলেন, যেখানে লোকেরা তাকে দেখতে পারত কারণ তিনি লোকেদের এমনটা মনে করাতে চাননি যে, তিনি যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছেন।

১৪ যিহোবা দানিয়েলকে আশীর্বাদ করেছিলেন কারণ তিনি সাহস ও আনুগত্য দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যিহোবা একটা অলৌকিক কাজের মাধ্যমে দানিয়েলকে সিংহের মুখ থেকে রক্ষা করেছিলেন। এর ফল স্বরূপ, সমগ্র মাদীয়-পারসিক সাম্রাজ্যের লোকেরা যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পেরেছিল!—দানি. ৬:২৫-২৭.

১৫. কীভাবে আমরা দানিয়েলের মতো বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারি?

১৫ কীভাবে আমরা দানিয়েলের মতো বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারি? দৃঢ়বিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য কেবল ঈশ্বরের বাক্য পড়াই যথেষ্ট নয়। আমাদের সেটি বুঝতে হবে। (মথি ১৩:২৩) আমরা এটা বুঝতে চাই যে, বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে যিহোবার চিন্তাধারা ও অনুভূতি কেমন। তাই, আমরা যা পড়ি, সেটা নিয়ে আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। এ ছাড়া, বার বার প্রার্থনা করা ও বিশেষ করে সমস্যার সময় প্রার্থনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই বিষয়ে বিশ্বাস রাখতে পারি যে, আমরা যিহোবার কাছে যে-প্রজ্ঞা ও শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করি, তা তিনি আমাদের অকাতরে বা উদারভাবে দেবেন।—যাকোব ১:৫.

ইয়োব, ভালো ও মন্দ, উভয় সময়েই ঈশ্বরীয় নীতি কাজে লাগিয়েছিলেন

১৬, ১৭. কীভাবে ইয়োব যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন?

১৬ কীভাবে ইয়োব যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন? ইয়োব একজন ইস্রায়েলীয় ছিলেন না। কিন্তু, তিনি অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের দূরসম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন এবং যিহোবা তাদের নিজের বিষয়ে ও মানুষের কাছ থেকে তিনি কী চান, সেই বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। কোনো এক উপায়ে ইয়োবও এই মূল্যবান সত্যগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটা সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন। (ইয়োব ২৩:১২) তিনি যিহোবাকে বলেছিলেন: “[আমি] পূর্ব্বে তোমার বিষয় কর্ণে শুনিয়াছিলাম।” (ইয়োব ৪২:৫) আর যিহোবা নিজে বলেছিলেন, ইয়োব অন্যদের কাছে তাঁর বিষয়ে যথার্থ কথা বা সত্য কথা বলেছিলেন।—ইয়োব ৪২:৭, ৮.

আমাদের বিশ্বাস সেইসময় আরও শক্তিশালী হয়, যখন আমরা সৃষ্টিকে লক্ষ করি এবং যিহোবার গুণাবলি সম্বন্ধে আরও বেশি করে শিখি (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭ এ ছাড়া, ইয়োব সৃষ্টিকে লক্ষ করার মাধ্যমে যিহোবার গুণাবলি সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন। (ইয়োব ১২:৭-৯, ১৩) ইলীহূ ও যিহোবা, উভয়েই সৃষ্টিকে ব্যবহার করে ইয়োবকে এই বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের তুলনায় মানুষ কতটা ক্ষুদ্র। (ইয়োব ৩৭:১৪; ৩৮:১-৪) যিহোবার কথাগুলো ইয়োবকে প্রভাবিত করেছিল এবং তাকে নম্রভাবে ঈশ্বরকে এই কথাগুলো বলতে অনুপ্রাণিত করেছিল: “আমি জানি, তুমি সকলই করিতে পার; কোন সঙ্কল্প সাধন তোমার অসাধ্য নয়।” তিনি আরও বলেছিলেন: “আমি . . . ধূলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ করিতেছি।”—ইয়োব ৪২:২, ৬.

১৮, ১৯. কীভাবে ইয়োব দেখিয়েছিলেন যে, তিনি সত্যিই যিহোবাকে জানতেন?

১৮ কীভাবে ঈশ্বর সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা ইয়োবকে সাহায্য করেছিল? ইয়োব ঈশ্বরীয় নীতিগুলো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি সত্যিই যিহোবাকে জানতেন এবং এটা তাকে সঠিক উপায়ে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, ইয়োব জানতেন, তিনি যদি অন্যদের প্রতি নির্দয় আচরণ করেন, তা হলে তিনি এমনটা বলতে পারবেন না যে, তিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন। (ইয়োব ৬:১৪) তিনি এমনটা মনে করেননি যে, তিনি অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিন্তু এর পরিবর্তে, তিনি তাদের সঙ্গে নিজের পরিবারের সদস্যদের মতো আচরণ করেছিলেন, তা তারা ধনী অথবা দরিদ্র, যা-ই হোক না কেন। ইয়োব বলেছিলেন: “যিনি জরায়ু-মধ্যে আমাকে রচনা করিয়াছেন, তিনিই কি উহাকেও রচনা করেন নাই?” (ইয়োব ৩১:১৩-২২) এমনকী ইয়োব যখন ধনী ও ক্ষমতাশালী ছিলেন, তখনও তিনি গর্বিত হয়ে পড়েননি এবং অন্যদের তার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেননি। এটা বর্তমানের ধনী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের আচরণের চেয়ে একেবারে আলাদা।

১৯ ইয়োব চাননি যে, কোনো কিছু, এমনকী বস্তুগত বিষয়ও, তার জীবনে যিহোবার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠুক। তিনি জানতেন, যদি এমনটা ঘটে, তা হলে তিনি “ঊর্দ্ধ্ববাসী ঈশ্বরকে” প্রত্যাখ্যান করে ফেলবেন। (পড়ুন, ইয়োব ৩১:২৪-২৮.) এ ছাড়া, ইয়োব বিয়েকে একজন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে করা এক পবিত্র প্রতিজ্ঞা হিসেবে দেখতেন। তিনি এমনকী নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি কোনো মহিলাকে অনৈতিক দৃষ্টিতে দেখবেন না। (ইয়োব ৩১:১) এটা খুবই চমৎকার এক বিষয় কারণ ইয়োব এমন এক সময়ে বাস করতেন, যখন যিহোবা পুরুষদের একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই, ইয়োব চাইলে আরেকজন মহিলাকে বিয়ে করতে পারতেন। কিন্তু, তিনি নিশ্চয়ই জানতেন, যিহোবা প্রথম যে-বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেটা একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে হয়েছিল আর ইয়োব সেভাবেই জীবনযাপন করা বেছে নিয়েছিলেন। * (আদি. ২:১৮, ২৪) সত্যি বলতে কী, এর প্রায় ১,৬০০ বছর পর যিশুও এই একই নীতি সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, যৌন সম্পর্ক এবং বিবাহ কেবল একজন স্বামী ও একজন স্ত্রীর মধ্যে হওয়া উচিত।—মথি ৫:২৮; ১৯:৪, ৫.

২০. কীভাবে যিহোবা ও তাঁর মানগুলো সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা আমাদের সঠিক বন্ধুবান্ধব ও আমোদপ্রমোদ বাছাই করতে সাহায্য করে?

২০ কীভাবে আমরা ইয়োবের মতো বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারি? আবারও, আমাদের যিহোবাকে ভালোভাবে জানতে হবে এবং এই জ্ঞানকে আমাদের সমস্ত কাজে প্রভাব বিস্তার করতে দিতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বাইবেল বলে, “দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক” যিহোবার “প্রাণের ঘৃণাস্পদ” এবং আমাদের এমন লোকেদের সঙ্গে সময় কাটানো উচিত নয়, যারা সত্যকে গোপন করে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১:৫; ২৬:৪.) এখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘এই দুটো শাস্ত্রপদ আমাকে যিহোবার চিন্তাধারা সম্বন্ধে কী শেখায়? আমার জীবনে কোন বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বাছাই করার ক্ষেত্রে যিহোবার চিন্তাধারার দ্বারা আমার কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত? আমি ইন্টারনেটে যা দেখি, যে-ব্যক্তিদের বন্ধু হিসেবে বাছাই করি এবং আমোদপ্রমোদের জন্য যে-বিষয়গুলো বেছে নিই, সেগুলোর ক্ষেত্রে যিহোবার চিন্তাধারার দ্বারা আমার কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত?’ আপনার উত্তরগুলো আপনাকে এটা বুঝতে সাহায্য করবে যে, আপনি যিহোবাকে কতটা ভালোভাবে জানেন। আমরা এই মন্দ জগতের দ্বারা প্রভাবিত হতে চাই না। তাই, আমাদের নিজেদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল” প্রশিক্ষিত করতে হবে অর্থাৎ সঠিক ও ভুল এবং বিজ্ঞ ও মূর্খতাপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে পার্থক্য সম্বন্ধে শিখতে হবে।—ইব্রীয় ৫:১৪; ইফি. ৫:১৫.

২১. কী আমাদের যিহোবাকে খুশি করার জন্য প্রয়োজনীয় ‘সকলই বুঝিতে’ সাহায্য করবে?

২১ যেহেতু নোহ, দানিয়েল ও ইয়োব যিহোবাকে ভালোভাবে জানার জন্য তাদের সর্বোত্তমটা করেছিলেন, তাই যিহোবা তাদের তাঁকে খুশি করার জন্য প্রয়োজনীয় ‘সকলই বুঝিতে’ সাহায্য করেছিলেন। তাদের উদাহরণ প্রমাণ করে যে, বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে করা এক সফল জীবনের দিকে পরিচালিত করে। (গীত. ১:১-৩) তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি যিহোবাকে ঠিক নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের মতোই ভালোভাবে জানি?’ সত্যি বলতে কী, বর্তমানে আমরা যিহোবাকে সেই তিন জন বিশ্বস্ত ব্যক্তির চেয়ে আরও ভালোভাবে জানতে পারি কারণ তিনি আমাদের তাঁর সম্বন্ধে অনেক বেশি তথ্য দিয়েছেন। (হিতো. ৪:১৮) তাই, সতর্কতার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করুন। সেটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। আর পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করুন। এগুলো করলে এই মন্দ জগৎ আপনাকে প্রভাবিত করবে না। এর পরিবর্তে, আপনি ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা কাজে লাগাবেন এবং আপনার স্বর্গীয় পিতার আরও বেশি নিকটবর্তী হবেন।—হিতো. ২:৪-৭.

^ অনু. 5 নোহের ঠাকুরদাদার বাবা হনোকও “ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন।” কিন্তু, তিনি নোহের জন্মের ৬৯ বছর আগে মারা গিয়েছিলেন।—আদি. ৫:২৩, ২৪.

^ অনু. 19 নোহও কেবল একজন মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন, যদিও আদম ও হবা ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়ার পর থেকে পুরুষেরা একাধিক স্ত্রী রাখতে শুরু করেছিল।—আদি. ৪:১৯.