সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার অর্থ কী?

একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার অর্থ কী?

“খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক।”—ফিলি. ২:৫.

গান সংখ্যা: ২৫, 

১, ২. (ক) অনেক ভাই-বোন আধ্যাত্মিকতা সম্বন্ধে কেমন বোধ করে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব?

কানাডার একজন বোন বলেন যে, একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়া তাকে আরও সুখী করে তুলেছে এবং জীবনের সমস্যাগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করেছে। ব্রাজিলের একজন ভাই, যিনি ২৩ বছর ধরে বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করেছেন, বলেন যে, আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়া তাকে ও তার স্ত্রীকে এক সুখী বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে সাহায্য করেছে। ফিলিপিনসের একজন ভাই বলেন যে, আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়া তাকে মনের শান্তি লাভ করতে এবং ভিন্ন পটভূমির ভাই-বোনদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সাহায্য করেছে।

এটা স্পষ্ট যে, আমরা যখন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হই, তখন আমরা অনেক উপায়ে উপকার লাভ করি। তাই, আমরা আরও বেশি আধ্যাত্মিকমনা হয়ে ওঠার এবং সেই উপকারগুলো উপভোগ করার জন্য কী করতে পারি? আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে, আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিদের অর্থাৎ যারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা নির্দেশিত হয় এবং যিহোবার মতো করে চিন্তা করে, তাদের সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে। এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করব: (১) একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার অর্থ কী? (২) আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করার জন্য কোন উদাহরণগুলো আমাদের সাহায্য করবে? (৩) “খ্রীষ্টের মন” অর্জন করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা কীভাবে আমাদের আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হয়ে উঠতে সাহায্য করবে?

একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার অর্থ কী?

৩. কীভাবে বাইবেল একজন প্রাণিক ব্যক্তি ও আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তির মধ্যে থাকা পার্থক্য সম্বন্ধে বর্ণনা করে?

প্রেরিত পৌল আমাদের ‘আত্মিক মনুষ্য [“আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি,” NW]’ এবং ‘প্রাণিক মনুষ্যের’ মধ্যে থাকা পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করেন। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ২:১৪-১৬.) একজন প্রাণিক ব্যক্তি “ঈশ্বরের আত্মার বিষয়গুলি গ্রহণ করে না, কেননা তাহার কাছে সে সকল মূর্খতা; আর সে সকল সে জানিতে পারে না।” এর বিপরীতে, একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি “সমস্ত বিষয়ের বিচার করে” এবং তার “খ্রীষ্টের মন” রয়েছে অর্থাৎ তিনি খ্রিস্টের মতো করে চিন্তা করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন। পৌল আমাদের আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। অন্য আর কোন কোন উপায়ে প্রাণিক ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিদের চেয়ে আলাদা?

৪, ৫. কীভাবে আমরা একজন প্রাণিক ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারি?

একজন প্রাণিক ব্যক্তি কীভাবে চিন্তা করেন? একজন প্রাণিক ব্যক্তি জগতের মনোভাবকে অনুকরণ করেন, যেটা মূলত স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষার উপর কেন্দ্রীভূত। পৌল এই মনোভাবকে ‘যে আত্মা এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে, সেই আত্মা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। (ইফি. ২:২) এই মনোভাব বেশিরভাগ লোককে তাদের আশেপাশের লোকেদের অনুকরণ করতে প্ররোচিত করে। তারা ঈশ্বরের মান সম্বন্ধে চিন্তা না করে কেবল সেটাই করে, যেটা তাদের দৃষ্টিতে সঠিক বলে মনে হয়। একজন প্রাণিক বা মাংসিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি মূলত মাংসিক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করেন এবং প্রায়ই মনে করেন যে, তার পদমর্যাদা, টাকাপয়সা অথবা ব্যক্তিগত অধিকারগুলো অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

একজন প্রাণিক ব্যক্তি প্রায়ই এমন কাজগুলো করেন, যেগুলোকে বাইবেলে “মাংসের কার্য্য সকল” বলা হয়েছে। (গালা. ৫:১৯-২১) পৌল করিন্থের খ্রিস্টানদের প্রতি লেখা তার প্রথম চিঠিতে এমন আরও কিছু বিষয়ের উল্লেখ করেন, যেগুলো প্রাণিক ব্যক্তিরা করে থাকে। তারা মতবিরোধের সময়ে কোনো এক পক্ষ নিয়ে থাকে, লোকেদের বিভক্ত করার চেষ্টা করে, অন্যদের বিদ্রোহ করতে উৎসাহিত করে, একে অন্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে, মস্তকপদের প্রতি কোনো সম্মান দেখায় না এবং খাওয়া-দাওয়া ও পান করাকে তাদের জীবনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। একজন প্রাণিক ব্যক্তি যখন খারাপ কিছু করার জন্য প্রলুব্ধ হন, তখন তিনি সেটার প্রতিরোধ করেন না। (হিতো. ৭:২১, ২২) যিহূদা বলেছিলেন যে, প্রাণিক ব্যক্তিরা এমনকী যিহোবার আত্মা হারিয়ে ফেলতে পারে।—যিহূদা ১৮, ১৯.

৬. কীভাবে আমরা একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারি?

একজন প্রাণিক ব্যক্তির বিপরীতে একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। তিনি নিজেকে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা নির্দেশিত হতে দেন এবং যিহোবাকে অনুকরণ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন। (ইফি. ৫:১) তিনি যিহোবার মতো করে চিন্তা করতে শেখার এবং বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে দেখার প্রচেষ্টা করেন। ঈশ্বর তার কাছে খুবই বাস্তব একজন ব্যক্তি। একজন প্রাণিক ব্যক্তির বিপরীতে একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি তার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে যিহোবার মানগুলোর সম্মান করেন। (গীত. ১১৯:৩৩; ১৪৩:১০) তিনি “মাংসের কার্য্য সকল” না করে বরং “আত্মার ফল” গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। (গালা. ৫:২২, ২৩) আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার অর্থ কী, তা আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য এই তুলনাটা নিয়ে চিন্তা করুন: যে-ব্যক্তি ব্যাবসা করার ক্ষেত্রে খুবই দক্ষ, তাকে বলা হয় ব্যাবসায়িকমনা ব্যক্তি এবং যে-ব্যক্তি ঈশ্বরের প্রতি তার উপাসনার বিষয়ে সত্যিই চিন্তা করেন, তাকে বলা হয় আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি।

৭. আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিদের সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

যিশু বলেছিলেন যে, আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিরা সুখী হয়। মথি ৫:৩ পদে আমরা পড়ি: “ধন্য” বা সুখী “যাহারা আত্মাতে দীনহীন [“আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন,” NW], কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই।” রোমীয় ৮:৬ পদ ব্যাখ্যা করে যে, আমাদের জীবন যিহোবার মতো করে চিন্তা করার উপর নির্ভর করে: “মাংসের ভাব মৃত্যু, কিন্তু আত্মার ভাব জীবন ও শান্তি।” তাই, আমরা যদি আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হই, তা হলে এখনই আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে ও নিজেদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে পারি এবং অনন্তজীবনের আশা লাভ করতে পারি।

৮. কেন একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়া ও ক্রমাগত আধ্যাত্মিকতা বজায় রাখা কঠিন হতে পারে?

তবে, আমরা একটা বিপদজনক জগতে বাস করি। যেহেতু আমরা এমন লোকেদের মাঝে বাস করি, যারা ঈশ্বরের মতো করে চিন্তা করে না, তাই আমাদের মনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য অনেক প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। আমরা যদি আমাদের মনকে যিহোবার চিন্তাভাবনা দিয়ে পূর্ণ না করি, তা হলে এই জগৎ আমাদের মনকে এটার মাংসিক মনোভাব ও চিন্তাভাবনা দিয়ে পূর্ণ করে ফেলবে। কীভাবে আমরা এমনটা হওয়া থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি? কীভাবে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করতে পারি?

উত্তম উদাহরণগুলো থেকে শিখুন

৯. (ক) কী আমাদের আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য শিক্ষা দিতে পারে? (খ) আমরা কোন ব্যক্তিদের উত্তম উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করব?

ঠিক যেমন একটি সন্তানের জন্য তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করা এবং তাদের উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করা প্রয়োজন, একইভাবে আমাদেরও সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করা এবং তাদের অনুকরণ করা প্রয়োজন, যাদের যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এটা আমাদের শেখাবে যে, কীভাবে আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হয়ে ওঠা যায়। অপরদিকে, মাংসিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে আমরা শিখি যে, কোন কাজগুলো আমাদের করা উচিত নয়। (১ করি. ৩:১-৪) বাইবেলে উত্তম ও মন্দ, উভয় ধরনেরই উদাহরণ রয়েছে। এখন আসুন আমরা কয়েক জন ব্যক্তির উত্তম উদাহরণ পরীক্ষা করি, যাদের কাছ থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করতে পারি: যাকোব, মরিয়ম ও যিশু।

যাকোবের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. কীভাবে যাকোব দেখিয়েছিলেন যে, তিনি একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি?

১০ আমাদের অনেকের মতোই যাকোবের জীবনও খুব-একটা সহজ ছিল না। তার নিজের দাদা এষৌ তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। তার শ্বশুর বার বার তাকে ঠকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যাকোব, অব্রাহামের প্রতি করা যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর নিজের বিশ্বাসকে দৃঢ় রেখেছিলেন। যাকোব জানতেন যে, তার পরিবার সেই চমৎকার প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতার অংশ হবে আর তাই, তিনি ভালোভাবে তাদের যত্ন নিয়েছিলেন। (আদি. ২৮:১০-১৫) যাকোব তার আশেপাশের লোকেদের মাংসিক মনোভাবের কারণে যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো ভুলে যাননি। উদাহরণ স্বরূপ, যাকোব সেইসময় সুরক্ষার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্যভিক্ষা করেছিলেন, যখন তিনি মনে করেছিলেন যে, তার ভাই তাকে আক্রমণ করতে পারে। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “তুমিই ত বলিয়াছ, আমি অবশ্য তোমার মঙ্গল করিব, এবং সমুদ্রতীরস্থ যে বালি . . . তাহার ন্যায় তোমার বংশ বৃদ্ধি করিব।” (আদি. ৩২:৬-১২) যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর উপর যাকোবের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল এবং তিনি তার জীবনধারার মাধ্যমে সেটার প্রমাণ দিয়েছিলেন।

মরিয়মের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১. কীভাবে আমরা জানি যে, মরিয়ম একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ছিলেন?

১১ এখন মরিয়মের কথা চিন্তা করুন। যিহোবা তাকে যিশুর মা হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন কারণ তিনি একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ছিলেন। বাইবেল থেকে পড়ুন যে, মরিয়ম যখন তার আত্মীয় সখরিয় ও ইলীশাবেতের বাড়িতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি কী বলেছিলেন। (পড়ুন, লূক ১:৪৬-৫৫.) আমরা দেখতে পাই যে, মরিয়ম ঈশ্বরের বাক্যকে ভালোবাসতেন এবং তিনি ইব্রীয় শাস্ত্র সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতেন। (আদি. ৩০:১৩; ১ শমূ. ২:১-১০; মালাখি ৩:১২) আর এমনকী মরিয়ম ও যোষেফের বিয়ে হওয়ার পরও, তারা যিশুর জন্ম না হওয়া পর্যন্ত যৌন সম্পর্ক করা থেকে বিরত ছিলেন। ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া কার্যভার তাদের কাছে নিজেদের আকাঙ্ক্ষার চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। (মথি ১:২৫) এ ছাড়া, যিশু বড়ো হওয়ার সময়ে যা-কিছু ঘটেছিল, মরিয়ম সেগুলো সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ করেছিলেন এবং যিশু যে-বিষয়গুলো শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেগুলো শুনেছিলেন। তিনি ‘সমস্ত কথা আপন হৃদয়ে রাখিয়াছিলেন।’ (লূক ২:৫১) এটা স্পষ্ট যে, তিনি মশীহের বিষয়ে করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। আমরা কি মরিয়মকে অনুকরণ করতে পারি এবং সবসময় সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করতে পারি, যেগুলো আমরা করি বলে ঈশ্বর চান?

১২. (ক) কীভাবে যিশু তাঁর পিতাকে অনুকরণ করেছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা যিশুকে অনুকরণ করতে পারি? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১২ সর্বকালের সমস্ত মানুষের মধ্যে যিশুই হলেন একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হিসেবে সর্বোত্তম উদাহরণ। তাঁর পার্থিব জীবন ও পরিচর্যার সময় তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি তাঁর পিতাকে অনুকরণ করতে চান। যিশু যিহোবার মতো করে চিন্তা করেছিলেন, অনুভব করেছিলেন এবং কাজ করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেছিলেন এবং ঈশ্বরের মানের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। (যোহন ৮:২৯; ১৪:৯; ১৫:১০) উদাহরণ স্বরূপ, যিশাইয় যেভাবে যিহোবার সমবেদনা সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন এবং মার্ক যেভাবে যিশুর অনুভূতি সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, সেটার তুলনা করুন। (পড়ুন, যিশাইয় ৬৩:৯; মার্ক ৬:৩৪.) আমরা কি যাদের সাহায্যের প্রয়োজন, তাদের প্রতি সমবেদনা দেখানোর বিষয়ে সবসময় প্রস্তুত থাকার মাধ্যমে যিশুকে অনুকরণ করি? আমরা কি যিশুর মতোই সুসমাচার প্রচার করার ও সেই সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি? (লূক ৪:৪৩) আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিরা হল সমবেদনাময় এবং তারা অন্যদের সাহায্য করার চেষ্টা করে।

১৩, ১৪. (ক) বর্তমানের আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (খ) একটা উদাহরণ দিন।

১৩ বর্তমানে এমন অনেক আধ্যাত্মিকমনা ভাই-বোন রয়েছে, যারা খ্রিস্টকে অনুকরণ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে। আপনি হয়তো লক্ষ করেন যে, তারা পরিচর্যায় খুবই উদ্যোগী, অতিথিপরায়ণ ও সমবেদনাময়। এমনকী যদিও তারা সিদ্ধ নয় কিন্তু তা সত্ত্বেও, তারা উত্তম গুণাবলি গড়ে তোলার এবং যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে। রেচেল নামে ব্রাজিলের একজন বোন বলেন: “একসময়, আমি জাগতিক স্টাইলের পোশাক-আশাক পরতে খুব ভালোবাসতাম। তাই, আমার পোশাক-আশাক খুব-একটা মার্জিত ছিল না। কিন্তু, সত্য শেখার ফলে আমি একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু করতে অনুপ্রাণিত হই। সেই পরিবর্তনগুলো করা সহজ ছিল না কিন্তু সেগুলো করার ফলে আমি আরও সুখী হয়ে উঠি এবং জীবনে প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পাই।”

১৪ রেলিন নামে ফিলিপিনসের একজন বোনের আবার আরেক ধরনের সমস্যা ছিল। এমনকী যদিও তিনি সত্যে ছিলেন কিন্তু তিনি উচ্চ শিক্ষা ও একটা ভালো চাকরি পাওয়ার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। একসময়, তার আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো তার কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। তিনি বলেন, “আমি বুঝতে শুরু করেছিলাম যে, আমার জীবনে কিছু-একটার অভাব রয়েছে, এমন কিছুর যেটা আমার চাকরির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” রেলিন তার চিন্তাধারা পরিবর্তন করেছিলেন এবং যিহোবার সেবাকে তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিলেন। এখন তিনি মথি ৬:৩৩, ৩৪ পদে বলা যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর আস্থা রাখেন এবং বলেন, “আমি এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, যিহোবা আমার যত্ন নেবেন!” আপনি হয়তো আপনার মণ্ডলীতে এমন ভাই-বোনদের জানেন, যাদের এই একই মনোভাব রয়েছে। আমরা যখন দেখি, কীভাবে তারা খ্রিস্টকে অনুকরণ করছে, তখন আমরা তাদের বিশ্বস্ততার উদাহরণ অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত হই।—১ করি. ১০:৩৪; ২ থিষল. ৩:৭.

“খ্রীষ্টের মন” অর্জন করুন

১৫, ১৬. (ক) খ্রিস্টের মতো হওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (খ) কীভাবে আমরা ‘খ্রীষ্টের মনকে’ আমাদের প্রভাবিত করার সুযোগ দিতে পারি?

১৫ কীভাবে আমরা খ্রিস্টকে অনুকরণ করতে পারি? প্রথম করিন্থীয় ২:১৬ পদ ব্যাখ্যা করে যে, আমাদের “খ্রীষ্টের মন” অর্জন করতে হবে। ফিলিপীয় ২:৫ পদ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, “খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক।” খ্রিস্টের মতো হওয়ার জন্য আমাদের তাঁর মতো করে চিন্তা করা, অনুভব করা এবং কাজ করা শিখতে হবে। যিশু অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়ে বেশি চিন্তা করতেন। তাই, যিশুর মতো হওয়া আমাদের আরও বেশি করে যিহোবার মতো করে তোলে। এই কারণেই, যিশুর মতো করে চিন্তা করতে শেখা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১৬ কীভাবে আমরা যিশুর মতো করে চিন্তা করা শিখতে পারি? তাঁর শিষ্যরা তাঁকে বিভিন্ন অলৌকিক কাজ করতে দেখেছিলেন এবং অনেক লোকের সামনে শিক্ষা দিতে শুনেছিলেন। তারা দেখেছিলেন যে, কীভাবে তিনি সমস্ত ধরনের লোককে সুস্থ করেছিলেন আর এও লক্ষ করেছিলেন, কীভাবে তিনি যিহোবার চিন্তাভাবনার দ্বারা নির্দেশিত হয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন: “তিনি . . . যাহা যাহা করিয়াছেন, আমরা সেই সকলের সাক্ষী।” (প্রেরিত ১০:৩৯) বর্তমানে, আমরা যিশুকে দেখতে পাই না। কিন্তু, আমাদের কাছে সুসমাচারের বিবরণগুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদের তাঁকে অনেক ভালোভাবে জানতে সাহায্য করে। আমরা যখন বাইবেলের মথি, মার্ক, লূকযোহন নামক বইগুলো পড়ি, তখন আমরা আরও বেশি করে শিখতে পারি যে, যিশু কীভাবে চিন্তা করেন। এটা আমাদের ‘তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন করিতে’ সাহায্য করে, যাতে আমরা খ্রিস্টের ‘সেই ভাব’ লাভ করতে পারি।—১ পিতর ২:২১; ৪:১.

১৭. খ্রিস্টের মতো করে চিন্তা করলে, আমরা কীভাবে উপকার লাভ করব?

১৭ আমরা যদি খ্রিস্টের মতো করে চিন্তা করি, তা হলে আমরা কীভাবে উপকার লাভ করব? ঠিক যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আমাদের শরীরকে শক্তিশালী করে, একইভাবে আমাদের মনকে খ্রিস্টের চিন্তাভাবনা দিয়ে পূর্ণ করা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করে। ধীরে ধীরে, আমরা বুঝতে পারি, কোনো একটা পরিস্থিতিতে তিনি কী করতেন। এরপর, আমরা এমন বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সক্ষম হই, যেগুলো ঈশ্বরকে খুশি করে এবং আমাদের এক শুদ্ধ বিবেক প্রদান করে। আপনি কি মনে করেন না যে, এগুলো হল ‘প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে পরিধান করিবার’ কিছু উত্তম কারণ?—রোমীয় ১৩:১৪.

১৮. একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার বিষয়ে আপনি কী শিখেছেন?

১৮ এই প্রবন্ধ আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছে যে, আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার অর্থ কী। আমরা এমন ব্যক্তিদের উত্তম উদাহরণ থেকে শিক্ষা লাভ করেছি, যারা পবিত্র আত্মার দ্বারা নির্দেশিত হয়েছিল। আমরা এও শিখেছি যে, “খ্রীষ্টের মন” অর্জন করা আমাদের যিহোবার মতো করে চিন্তা করতে এবং তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু, শেখার জন্য এখনও অনেক কিছু বাকি রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ: কীভাবে আমরা জানতে পারি যে, আমরা আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী কি না? আধ্যাত্মিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার জন্য আমরা কী করতে পারি? আর কীভাবে আধ্যাত্মিকতা আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে? এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করব।