সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জীবনকাহিনি

শুরুটা অভাবের মধ্যে হলেও পরে অনেক আশীর্বাদ লাভ করেছি

শুরুটা অভাবের মধ্যে হলেও পরে অনেক আশীর্বাদ লাভ করেছি

আমার জন্ম হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানার একটা ছোট্ট শহর লিবার্টির একটা এক রুমওয়ালা কাঠের বাড়িতে। আমার জন্মের সময়ে ইতিমধ্যেই আমার এক দাদা ও দুই দিদি ছিল। পরে, আমার আরও দু-জন ভাইয়ের ও একটি বোনের জন্ম হয়।

আমি যে-কাঠের বাড়িতে জন্মেছিলাম

আমার স্কুলের বছরগুলোতে আমাদের শহরে কোনো কিছুই খুব-একটা পরিবর্তিত হতো না। আমাদের শহরটা এমন ছিল যে, আমরা যাদের সঙ্গে স্কুলের প্রথম বছরে পড়াশোনা শুরু করতাম, তাদের সঙ্গেই স্কুলের শেষ বছর অবধি পড়তাম। সত্যি বলতে কী, আমরা শহরের বেশিরভাগ লোকের নাম জানতাম আর তারাও আমাদের নাম জানত।

আমি আমার বাবা-মায়ের সাত সন্তানের মধ্যে একজন আর আমি অল্প বয়সে চাষবাসের কাজ শিখেছিলাম

লিবার্টি শহরের চারপাশে ছোটো ছোটো খামার ছিল আর সেখানে মূলত ভুট্টা চাষ করা হতো। যখন আমার জন্ম হয়, তখন আমার বাবা একজন স্থানীয় কৃষকের অধীনে কাজ করতেন। কিশোর বয়সে আমি ট্র্যাক্টর চালাতে ও সেইসঙ্গে চাষবাসের অন্যান্য মৌলিক কাজ করতে শিখি।

আমি বাবাকে তার যুবক বয়সে দেখার সুযোগ পাইনি। আমার জন্মের সময়ে আমার বাবার বয়স ছিল ৫৬ বছর আর মায়ের বয়স ছিল ৩৫ বছর। তা সত্ত্বেও, আমার বাবা শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান ছিলেন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করতে খুব ভালোবাসতেন আর তিনি আমাকে ও আমার ভাই-বোনদেরও কাজকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন। তিনি কখনো খুব বেশি টাকাপয়সা উপার্জন করতে পারেননি কিন্তু তিনি আমাদের জন্য থাকার জায়গা, জামাকাপড় ও পর্যাপ্ত খাবার জুগিয়ে গিয়েছিলেন। আর তিনি সবসময় আমাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন। বাবা ৯৩ বছর বয়সে মারা যান আর মা ৮৬ বছর বয়সে মারা যান। তারা কেউই যিহোবার সেবা করেননি। তবে, আমার একজন ভাই ১৯৭২ সাল থেকে বিশ্বস্তভাবে প্রাচীন হিসেবে সেবা করে যাচ্ছে।

আমার ছেলেবেলা

আমার মা ধর্মের বিষয়ে খুবই উদ্যোগী ছিলেন। তিনি প্রতি রবিবার আমাদের ব্যাপ্টিস্ট গির্জায় নিয়ে যেতেন। ১২ বছর বয়সে আমি প্রথম বার ত্রিত্বের মতবাদ সম্বন্ধে শুনি। আমি কৌতূহলী হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করি: “কীভাবে যিশু একইসময়ে পুত্র ও পিতা উভয়ই হতে পারেন?” আমার এখনও মনে আছে, তিনি বলেছিলেন: “বাবা, এটা একটা রহস্য। আমাদের এটা বোঝার দরকার নেই।” সেটা সত্যিই আমার কাছে একটা রহস্য ছিল। তারপরও, প্রায় ১৪ বছর বয়সে আমি একটা ছোটো স্থানীয় নদীতে বাপ্তিস্ম নিই। আমাকে তিন বার জলে ডোবানো হয়েছিল, একবার পিতার জন্য, একবার পুত্রের জন্য আর একবার পবিত্র আত্মার জন্য!

১৯৫২ সাল—১৭ বছর বয়সে, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে

উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আমার এক বন্ধু বক্সার ছিল আর সে আমাকেও বক্সিং খেলার জন্য রাজি করিয়েছিল। তাই, আমি প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করি আর গোল্ডেন গ্লাভ্স নামে একটা বক্সিং সংগঠনের সদস্য হই। আমি বক্সিং-এ খুব-একটা ভালো ছিলাম না আর তাই, আমি কয়েকটা লড়াইয়ের পর সেটা ছেড়ে দিই। পরবর্তী সময়ে, আমাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ডাকা হয় আর জার্মানিতে পাঠানো হয়। সেখানে থাকার সময়ে আমি যাদের অধীনে কাজ করতাম, তারা মনে করেছিল যে, আমি একজন ভালো সামরিক নেতা হতে পারব আর তাই, তারা আমাকে একটা সামরিক আ্যকাডেমিতে পাঠায়। তারা চেয়েছিল যেন আমি সামরিক সেবাকেই আমার কেরিয়ার করে তুলি। তবে, আমার সামরিক সেবায় থাকার কোনো ইচ্ছা ছিল না আর তাই, দু-বছরের নির্ধারিত সেবার পর আমি ১৯৫৬ সালে সেনাবাহিনীতে সেবা করা ত্যাগ করি। এর অল্পসময় পরই আমি একেবারে ভিন্ন এক সেনাবাহিনীতে যোগ দিই।

১৯৫৪-১৯৫৬ সাল—আমি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে দু-বছর কাজ করেছিলাম

এক নতুন জীবনের শুরু

সত্য শেখার আগে আমার এই বিষয়ে ভুল ধারণা ছিল যে, একজন সত্যিকারের পুরুষের কেমন আচরণ করা উচিত। আমি বিভিন্ন সিনেমা ও সেইসঙ্গে আশেপাশের লোকেদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলাম। আমি মনে করতাম, যে-পুরুষেরা বাইবেলের বিষয়ে কথা বলে, তারা ঠিক সত্যিকারের পুরুষ নয়। কিন্তু, আমি এমন কিছু বিষয় শিখতে শুরু করি, যেগুলো আমার জীবনকে পালটে দেয়। একদিন, শহরের মধ্যে দিয়ে আমার দামী লাল রঙের গাড়িটা চালিয়ে যাওয়ার সময়ে, দু-জন যুবতী আমার দিকে হাত নাড়িয়ে আমাকে ডাকেন। তারা আমার বড়ো জামাইবাবুর দুই বোন ছিলেন আর তারা দু-জনেই যিহোবার সাক্ষি ছিলেন। আমি আগে তাদের কাছ থেকে প্রহরীদুর্গ সজাগ হোন! পত্রিকা নিয়েছিলাম, তবে আমার মনে হয়েছিল যেন প্রহরীদুর্গ পত্রিকাটা বোঝা বেশ কঠিন। কিন্তু, সেদিন তারা আমাকে মণ্ডলীর বই অধ্যয়নে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান, যেটা ছিল তাদের বাড়িতে হওয়া বাইবেল অধ্যয়ন ও আলোচনার একটা ছোটো সভা। আমি তাদের বলি যে, আমি ভেবে দেখব। তারা হাসিমুখে আমাকে জিজ্ঞেস করেন: “ঠিক তো?” আমি বলি, “হ্যাঁ, ভেবে দেখব।”

যদিও আমার মনে হয়েছিল তাদের কথা দিয়ে আমি ভুল করেছি কিন্তু তারপরও, আমি সেই প্রতিজ্ঞা ভেঙে ফেলাকে ঠিক বলে মনে করিনি। তাই, সেই রাতে আমি সভায় যাই। সেখানে আসা বাচ্চাদের দেখে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। আমি এটা দেখে অবাক হয়ে যাই যে, তারা বাইবেল সম্বন্ধে কত কী জানে! যদিও আমি আমার ছেলেবেলায় মায়ের সঙ্গে প্রতি রবিবার গির্জায় যেতাম কিন্তু তারপরও, বাইবেল সম্বন্ধে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত ছিল। আমি সত্যিই আরও বেশি জ্ঞান নিতে চেয়েছিলাম আর তাই, আমি বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হই। আমি সবচেয়ে প্রথমে যে-বিষয়গুলো শিখি, সেগুলোর মধ্যে একটা হল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম: যিহোবা। অনেক বছর আগে, আমি যখন আমার মাকে যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তখন তিনি শুধু বলেছিলেন, “ওরা যিহোবা নামে কোনো বয়স্ক ব্যক্তির উপাসনা করে।” কিন্তু, এই প্রথম বার আমার মনে হয়েছিল যেন আমার চোখ ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে!

আমি দ্রুত উন্নতি করি কারণ আমি জানতাম, আমি সত্য খুঁজে পেয়েছি। প্রথম বার সভায় যোগ দেওয়ার মাত্র ন’মাস পরই ১৯৫৭ সালের মার্চ মাসে আমি বাপ্তিস্ম নিই। আমার মনোভাব পুরোপুরি পালটে যায়। আমি খুবই খুশি কারণ আমি এই বিষয়ে বাইবেলের শিক্ষা সম্বন্ধে শিখতে পেরেছি যে, সত্যিকারের পুরুষ বলতে কী বোঝায়। যিশু একজন নিখুঁত পুরুষ ছিলেন। তাঁর অন্য যেকোনো পুরুষের চেয়ে আরও বেশি শক্তি ও ক্ষমতা ছিল। কিন্তু, তিনি কখনো কোনো লড়াইয়ে জড়িত হননি। এর পরিবর্তে, ‘তিনি দুঃখভোগ স্বীকার করিয়াছিলেন,’ ঠিক যেমনটা তাঁর বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল। (যিশা. ৫৩:২, ৭) আমি শিখেছি যে, যিশুর একজন প্রকৃত অনুসারীর ‘সকলের প্রতি কোমল হওয়া উচিত।’—২ তীম. ২:২৪, ২৫.

পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে আমি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করি। কিন্তু কিছুসময় পরই, আমাকে অল্পসময়ের জন্য সেই সেবা বন্ধ করতে হয়। কেন? কারণ আমি গ্লোরিয়াকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই! গ্লোরিয়া হল সেই দু-জন যুবতীর মধ্যে একজন, যারা আমাকে বই অধ্যয়নের সভায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি কখনো ওকে বিয়ে করার সিদ্ধান্তের জন্য আপশোস করিনি। গ্লোরিয়া তখনও আমার কাছে রত্নের মতো ছিল আর আজও, ও আমার কাছে এক রত্নের মতোই। ও আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান হিরের চেয়েও বেশি মূল্যবান আর আমি খুবই খুশি যে, আমি ওকে বিয়ে করেছি! ও নিজের জীবন সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলতে চায়:

“আমার ১৬ জন ভাই-বোন রয়েছে। আমার মা একজন বিশ্বস্ত সাক্ষি ছিলেন। আমার বয়স যখন ১৪ বছর, তখন মা মারা যান। এরপর, আমার বাবা বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। যেহেতু মা মারা গিয়েছিলেন, তাই বাবা আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে একটা ব্যবস্থা করেন। আমার দিদি সেইসময় উচ্চ বিদ্যালয়ের শেষ বছরে পড়ছিল। বাবা জিজ্ঞেস করেন যে, দিদি ও আমি এক দিন পর পর স্কুলে যেতে পারি কি না। এভাবে, প্রতিদিন আমাদের মধ্যে একজন বাড়িতে থেকে আমাদের ছোটো ভাই-বোনদের যত্ন নিতে পারতাম। এ ছাড়া, বাবা কাজ থেকে ফিরে আসার আগে আমরা পরিবারের জন্য রাতের খাবারও প্রস্তুত করে রাখতে পারতাম। আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক এই বিষয়ে আমাদের অনুমতি দেন আর আমার দিদির স্কুলের পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এভাবেই করে যাই। দুটো সাক্ষি পরিবার আমাদের সঙ্গে অধ্যয়ন করে আর আমার ভাই-বোনদের মধ্যে আমি ও আরও ১০ জন যিহোবার সাক্ষি হই। যদিও আমি প্রথম থেকেই খুব লাজুক ছিলাম, কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নিতে ভালো লাগত। আমার স্বামী বহু বছর ধরে আমাকে এই বিষয়ে সাহায্য করে এসেছে।”

গ্লোরিয়া ও আমি ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ে করি। আমাদের একসঙ্গে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে খুব ভালো লাগত। সেই বছরের জুলাই মাসে আমরা বেথেলে সেবা করার জন্য আবেদন করি। আমাদের খুব ইচ্ছা ছিল বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ে কাজ করার। আমাদের আবেদনপত্র দেখার পর, সাইমান ক্রেকার নামে একজন প্রিয় ভাই আমাদের সঙ্গে কথা বলেন, যিনি সেইসময় বেথেলে সেবা করতেন। তিনি আমাদের বলেন যে, বেথেল সেইসময় বিবাহিত দম্পতিদের সেখানে এসে সেবা করার সুযোগ দিচ্ছে না। তারপরও, আমাদের মনে বেথেলে সেবা করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু সেই ইচ্ছা পরিপূর্ণ হতে অনেক বছর লেগেছিল।

আমরা বিশ্বপ্রধান কার্যালয়ে চিঠি লিখে অনুরোধ করি যেন আমাদের এমন এলাকায় সেবা করার জন্য পাঠানো হয়, যেখানে আরও বেশি প্রকাশকের প্রয়োজন রয়েছে। তারা আমাদের কেবল একটা জায়গাই বাছাই করার সুযোগ দেয়: আরকানসাসের পাইন ব্লাফ। সেইসময় পাইন ব্লাফে দুটো মণ্ডলী ছিল। একটাতে শ্বেতাঙ্গ প্রকাশকরা ছিল আর অন্যটাতে কৃষ্ণাঙ্গ প্রকাশকরা ছিল। আমাদের কৃষ্ণাঙ্গ প্রকাশকদের মণ্ডলীতে পাঠানো হয়, যেটাতে মাত্র ১৪ জন প্রকাশক ছিল।

পৃথকীকরণ ও বর্ণবিদ্বেষের কারণে ঘটা বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করা

আপনি হয়তো ভাবছেন, কেন যিহোবার সাক্ষিরা শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ প্রকাশকদের আলাদা করে রাখবে। কারণটা হল সেইসময় আমাদের কাছে অন্য কোনো উপায় ছিল না। বিভিন্ন বর্ণের লোকেদের একসঙ্গে মিলিত হওয়া অবৈধ ছিল আর এর পাশাপাশি, দৌরাত্ম্যের সমস্যাও ছিল। অনেক জায়গায় ভাইয়েরা ভয় পেত যে, দুই বর্ণের ব্যক্তিরা যদি উপাসনার জন্য কিংডম হলে মিলিত হয়, তা হলে লোকেরা সেই কিংডম হলে ভাঙচুর করবে। আর এইরকম বিষয়গুলো সত্যিই ঘটেছিল। কৃষ্ণাঙ্গ সাক্ষিরা যদি শ্বেতাঙ্গ লোকেদের কোনো এলাকায় ঘরে ঘরে প্রচার করত, তা হলে তাদের গ্রেপ্তার করা হতো ও এমনকী মারধর করা হতো। তাই, প্রচার কাজ যাতে সম্পন্ন করা যেতে পারে, সেইজন্য আমরা আইনের প্রতি বাধ্যতা দেখিয়েছিলাম এবং এই আশা রেখেছিলাম যে, একসময় পরিস্থিতি ভালো হবে।

পরিচর্যায় অংশ নেওয়া সবসময় সহজ ছিল না। কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের এলাকায় প্রচার করার সময়ে কখনো কখনো আমরা ভুল করে এমন বাড়ির দরজায় কড়া নেড়ে ফেলতাম, যেখানে শ্বেতাঙ্গ লোকেরা থাকে। তখন আমাদের তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে হতো: আমরা কি তাদের সামনে বাইবেলের বিষয়ে কোনো সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরব, না কি ক্ষমা চেয়ে পরের বাড়িতে চলে যাব? সেইসময় সেই এলাকার পরিস্থিতি এমনই ছিল।

অবশ্য, অগ্রগামী হিসেবে আমাদের জীবনযাপন করার জন্য অর্থ উপার্জনও করতে হতো। আমাদের বেশিরভাগ কাজের জায়গায় প্রতিদিন আমাদের খুব অল্প টাকা দেওয়া হতো। গ্লোরিয়া কয়েকটা বাড়িতে পরিষ্কারের ও অন্যান্য কাজ করত। একটা বাড়িতে আমাকে ওর সাহায্য করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যাতে ও সময়ের আগেই কাজ শেষ করতে পারে। সেই পরিবার আমাদের দুপুরের খাবার দিত। প্রতি সপ্তাহে, গ্লোরিয়া একটা পরিবারের জামাকাপড় ইস্তিরি করার কাজ করত। আমি বাগানে কাজ করতাম, জানালা পরিষ্কার করতাম আর বাড়ির যাবতীয় কাজ করতাম। এক শ্বেতাঙ্গ পরিবারের বাড়িতে আমরা জানালা পরিষ্কার করার কাজ করতাম। গ্লোরিয়া সেগুলো ভিতর থেকে পরিষ্কার করত আর আমি বাইরে থেকে। এটা করতে আমাদের সারা দিন লেগে যেত বলে তারা আমাদের দুপুরের খাবার দিত। গ্লোরিয়া বাড়ির ভিতর খাবার খেত, তবে ওকে সেই পরিবারের থেকে আলাদা বসতে হতো। আমাকে বাইরে গ্যারেজে খেতে হতো কিন্তু এতে আমার খারাপ লাগত না। সেই খাবার সত্যিই দারুণ ছিল। সেই পরিবারের লোকেরা আসলে ভালো ছিল কিন্তু তারা তাদের চারপাশের লোকেদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। আমার মনে আছে, একবার আমরা গাড়িতে পেট্রোল ভরানোর জন্য পেট্রোল পাম্পে যাওয়ার পর কী হয়েছিল। পেট্রোল ভরানোর পর আমি ওখানকার একজন শ্বেতাঙ্গ কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করি যে, গ্লোরিয়া সেখানকার টয়লেট ব্যবহার করতে পারে কি না। তিনি আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলেন, “ওটা বন্ধ আছে।”

দয়ালু কাজের কিছু স্মৃতি

অন্যদিকে, আমরা ভাইদের সঙ্গে দারুণ সময় কাটাতে পেরেছিলাম আর আমাদের পরিচর্যায় অংশ নিতে খুব ভালো লাগত! আমরা প্রথম যখন পাইন ব্লাফে আসি, তখন আমরা একজন ভাইয়ের বাড়িতে ছিলাম, যিনি সেইসময় মণ্ডলীর দাস হিসেবে সেবা করতেন। তার স্ত্রী তখনও সত্য গ্রহণ করেননি আর তাই, গ্লোরিয়া তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করে। একইসময়ে, আমি সেই ভাইয়ের মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে অধ্যয়ন শুরু করি। আনন্দের বিষয় হল, সেই ভাইয়ের স্ত্রী ও মেয়ে দু-জনেই যিহোবার সেবা করার সিদ্ধান্ত নেন ও বাপ্তিস্ম নেন।

শ্বেতাঙ্গ সাক্ষিদের মণ্ডলীতে আমাদের অনেক প্রিয় বন্ধু ছিল। তারা রাতের খাবারের জন্য তাদের বাড়িতে আমাদের নিমন্ত্রণ করত কিন্তু আমরা কেবল সন্ধ্যার পরই সেখানে যেতে পারতাম, যাতে কেউ আমাদের একসঙ্গে দেখে না ফেলে। সেইসময় কু ক্লুক্স ক্লান (কেকেকে) নামে একটা সংগঠন খুবই সক্রিয়ভাবে বর্ণবিদ্বেষমূলক মনোভাবকে তুলে ধরত ও দৌরাত্ম্যপূর্ণ কাজ করত। আমার মনে আছে, একবার হ্যালোইনের রাতে আমি দেখেছিলাম, একজন ব্যক্তি তার বাড়ির সামনে গর্বের সঙ্গে কেকেকে দলের সদস্যদের একটা পোশাক পরে বসে ছিলেন। তবে, নেতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলো ভাইদের দয়া দেখানো থেকে বিরত করেনি। একবার গ্রীষ্ম কালে, আমরা একটা সম্মেলনে যোগ দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। সেইসময়, একজন শ্বেতাঙ্গ ভাই আমাদের গাড়ি কিনতে রাজি হন, যাতে আমরা সেই সম্মেলনে যেতে পারি। এর এক মাস পর, একদিন আমরা যখন গরমের মধ্যে পায়ে হেঁটে প্রচার করে ও অনেক বাইবেল অধ্যয়ন করে খুবই ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসি, তখন আমরা দেখি, আমাদের জন্য একটা দারুণ উপহার অপেক্ষা করে আছে। আমাদের সেই গাড়িটা ঠিক আমাদের বাড়ির সামনেই রাখা ছিল! গাড়ির কাঁচের উপর একটা ছোট্ট চিঠিতে লেখা ছিল, “আমি আপনাদের গাড়িটা একটা উপহার হিসেবে ফিরিয়ে দিচ্ছি। আপনাদের ভাই।”

আরেকটা দয়ালু কাজও আমার মনের উপর ছাপ ফেলেছিল। ১৯৬২ সালে, আমাকে নিউ ইয়র্কের সাউথ ল্যানসিংয়ে আয়োজিত রাজ্যের পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে এক মাস ধরে মণ্ডলী, সীমা ও জেলার অধ্যক্ষদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেইসময় আমার কোনো চাকরি ছিল না আর আমাদের হাতে খুবই সামান্য অর্থ ছিল। তবে, আমি চাকরির জন্য পাইন ব্লাফের একটা টেলিফোন কোম্পানিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। তারা যদি আমাকে চাকরি দিত, তা হলে আমি সেই কোম্পানির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ কর্মী হতাম। অবশেষে তারা আমাকে বলে যে, তারা আমাকে চাকরি দিতে চায়। এবার আমি কী করব? আমার কাছে নিউ ইয়র্কে যাওয়ার জন্য অর্থ ছিল না। আমি একপ্রকার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলি যে, আমি সেই চাকরিটা গ্রহণ করব আর পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ যাওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করব। আমি বেথেলের ভাইদের চিঠি লিখতে যাচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎ এমন কিছু ঘটে, যেটা আমি কোনো দিন ভুলব না।

একদিন সকালে আমাদের মণ্ডলীর একজন বোন, যার স্বামী সত্যে ছিলেন না, আমাদের দরজায় কড়া নাড়েন এবং আমাকে একটা খাম দেন। সেই খামটা টাকায় ভরতি ছিল। সেই বোন ও তার কয়েক জন অল্পবয়সি সন্তান কিছু সপ্তাহ ধরে অনেক সকালে উঠে তুলোর খেতে গিয়েছিলেন এবং আগাছা সরানোর কাজ করেছিলেন। তারা এই কাজ করেছিলেন, যাতে তারা আমার নিউ ইয়র্কে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করতে পারেন। সেই বোন আমাকে বলেন: “ওই বিদ্যালয়ে যান এবং যতটা পারেন, শিখুন আর ফিরে এসে আমাদের শেখান!” পরে, আমি সেই টেলিফোন কোম্পানিকে জিজ্ঞেস করি যে, আমি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পাঁচ সপ্তাহ পরে কাজ শুরু করতে পারি কি না। তারা কড়াভাবে বলে, “না!” কিন্তু, আমার এতে খারাপ লাগেনি। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম। আমি খুব খুশি যে, আমি সেই চাকরি গ্রহণ করিনি!

পাইন ব্লাফে আমরা যে-সময় কাটিয়েছি, সেই বিষয়ে গ্লোরিয়া কিছু বলতে চায়: “আমি প্রচারের এলাকাটা ভালোবেসে ফেলেছিলাম! আমার ১৫ থেকে ২০টা বাইবেল অধ্যয়ন ছিল। তাই, আমরা সকালে ঘরে ঘরে প্রচারে যেতাম এবং বাকি দিনটা বাইবেল অধ্যয়ন করাতাম আর তা কখনো কখনো রাত ১১টা পর্যন্ত। পরিচর্যাকে আমি খুব উপভোগ করতাম! সুযোগ পেলে আমি সেই এলাকাতেই থেকে যেতাম। সত্যি বলতে কী, আমি আমার কার্যভার পরিবর্তন করে সীমার কাজ শুরু করতে খুব-একটা ইচ্ছুক ছিলাম না, কিন্তু আমাদের জন্য যিহোবার অন্য পরিকল্পনা ছিল।” হ্যাঁ, আমাদের জন্য যিহোবার সত্যিই অন্য পরিকল্পনা ছিল।

ভ্রমণের কাজ করার সময়

পাইন ব্লাফে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার সময়ে আমরা বিশেষ অগ্রগামী সেবা শুরু করার জন্য আবেদন করি। আমরা সত্যিই ভেবেছিলাম যে, আমাদের বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করা হবে। কেন জানেন? কারণ আমরা জানতাম, আমাদের জেলা অধ্যক্ষ চাইতেন যেন আমরা টেক্সাসের একটা মণ্ডলীতে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে যাই এবং সেই মণ্ডলীকে সাহায্য করি। এই কাজের কথা ভেবে আমাদের বেশ ভালো লেগেছিল। তাই, আমরা উত্তরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি কিন্তু প্রতি দিনই দেখি, আমাদের মেলবক্সে কোনো চিঠি আসেনি। অবশেষে একদিন একটা চিঠি আসে। আমাদের ভ্রমণের কাজে নিযুক্ত করা হয়! এটা হল ১৯৬৫ সালের জানুয়ারি মাসের কথা। ভাই লিয়ন উইভার, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের শাখা কমিটি-র কোঅর্ডিনেটর হিসেবে সেবা করেন, একই সময়ে সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন।

আমি সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করার বিষয়ে একটু ঘাবড়ে ছিলাম। এর দু-এক বছর আগে জেম্‌স এ. থম্পসন, জুনিয়ার নামে একজন জেলা অধ্যক্ষ আমার যোগ্যতা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। তিনি সদয়ভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কোন কোন ক্ষেত্রে আমি উন্নতি করতে পারি এবং তিনি এমন কিছু দক্ষতার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যেগুলো একজন উত্তম সীমা অধ্যক্ষের প্রয়োজন রয়েছে। সীমার কাজ শুরু করার পর পরই আমি বুঝতে পারি যে, সেই পরামর্শ আমার জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। আমাকে নিযুক্ত করার পর আমি প্রথম যে-জেলা অধ্যক্ষের সঙ্গে কাজ করি, তিনি হলেন ভাই থম্পসন। আমি এই বিশ্বস্ত ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখি।

আমি অভিজ্ঞ ভাইদের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্যকে মূল্যবান হিসেবে দেখি

সেইসময়, সীমা অধ্যক্ষরা খুব অল্প প্রশিক্ষণ লাভ করতেন। একজন সীমা অধ্যক্ষ একটা মণ্ডলী পরিদর্শন করার সময়ে আমি এক সপ্তাহ ধরে তাকে লক্ষ করি। এরপর, আমি যখন অন্য মণ্ডলী পরিদর্শন করি, তখন তিনি সেই সপ্তাহটা আমাকে লক্ষ করেন। তিনি আমাকে বিভিন্ন পরামর্শ ও নির্দেশনা দেন। কিন্তু, তারপর থেকে আমরা একাই কাজ করি। আমার মনে পড়ে আমি গ্লোরিয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “ভাইকে কি আমাদের ছেড়ে যেতেই হবে?” কিন্তু, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি। আপনার চারপাশে সবসময়ই আপনাকে সাহায্য করার জন্য ভালো ভাইয়েরা থাকবে, কিন্তু তারা তখনই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে, যদি আপনি তাদের সাহায্য করতে দেন। আমি এখনও এইরকম কিছু অভিজ্ঞ ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্যকে মূল্যবান হিসেবে দেখি যেমন, ভাই জে. আর. ব্রাউন, যিনি সেইসময় একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ ছিলেন এবং ভাই ফ্রেড রাস্ক, যিনি সেইসময় বেথেলে সেবা করতেন।

ওইসময় সব জায়গায় বর্ণবিদ্বেষমূলক মনোভাব ছড়িয়ে ছিল। একবার, আমরা যখন টেনেসিতে মণ্ডলী পরিদর্শন করছিলাম, তখন কেকেকে দলের সদস্যরা শহরে একটা মিছিল বের করে। আমার আরেক সময়ের কথা মনে আছে, যখন আমরা প্রচারের মাঝে একটু বিরতির জন্য একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকি। আমি যখন সেখানকার টয়লেটে যাই, তখন একজন রাগী ব্যক্তি আমার পিছন পিছন আসেন, যার শরীরে বর্ণবিদ্বেষের অনেক উলকি ছিল। কিন্তু, তখন আমাদের একজন শ্বেতাঙ্গ ভাই সেখানে আসেন, যিনি আমার ও সেই রাগী ব্যক্তির তুলনায় অনেক লম্বা-চওড়া ছিলেন। সেই ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “ভাই, সব ঠিক আছে তো?” সেই রাগী ব্যক্তি টয়লেট ব্যবহার না করেই তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এত বছর ধরে আমি দেখেছি যে, বর্ণবিদ্বেষের আসল কারণ কিন্তু একজন ব্যক্তির চামড়ার রঙ নয় বরং সেটার কারণ হল আমাদের সবার মধ্যে থাকা পাপ। আর আমি শিখেছি যে, একজন ভাইয়ের চমড়ার রঙ যা-ই হোক না কেন, একজন ভাই সবসময় একজন ভাইই হন আর তিনি প্রয়োজনে আপনার জন্য মৃত্যুবরণও করবেন।

পরিশেষে অনেক আশীর্বাদ লাভ করি

আমরা সীমার কাজে ১২ বছর আর জেলার কাজে ২১ বছর ব্যয় করেছি। এত বছর ধরে সেবা করার সময়ে আমরা অনেক আশীর্বাদ ও পুরস্কার পেয়েছি এবং আমাদের প্রচুর উৎসাহজনক অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু, আমাদের জন্য আরও একটা পুরস্কার অপেক্ষা করে ছিল। ১৯৯৭ সালের আগস্ট মাসে আমাদের অনেক দিনের একটা স্বপ্ন পরিপূর্ণ হয়। আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের বেথেলে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রথম বার আবেদন করার ৩৮ বছর পর আমরা এই সুযোগ পাই। পরের মাস থেকে আমরা বেথেলে সেবা করতে শুরু করি। আমি ভেবেছিলাম যে, বেথেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইয়েরা আমাকে কেবল অল্প সময়ের জন্য সেখানে রাখতে চান কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয়নি।

গ্লোরিয়াকে যখন বিয়ে করেছিলাম, তখনও ও আমার কাছে রত্নের মতো ছিল আর আজও, ও একইরকম

আমার প্রথম কার্যভার ছিল পরিচর্যা বিভাগ-এ কাজ করা। আমি কত কিছু শিখতে পেরেছিলাম! এই বিভাগের ভাইদের কাছে সারা দেশের বিভিন্ন প্রাচীনগোষ্ঠী ও সীমা অধ্যক্ষের কাছ থেকে এমন প্রশ্নগুলো আসে, যেগুলো স্পর্শকাতর ও কঠিন। আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে, ভাইয়েরা আমাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময়ে অনেক ধৈর্য ধরেছে ও আমাকে সাহায্য করেছে। আমাকে যদি আবার কখনো সেই বিভাগে কাজ করতে দেওয়া হয়, তা হলে আমাকে এখনও সেই ভাইদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে হবে।

গ্লোরিয়া ও আমি বেথেলের জীবনকে খুব উপভোগ করি। আমরা সবসময়ই ভোর বেলায় উঠতে ভালোবাসতাম আর এই অভ্যাস বেথেলে খুবই সাহায্যকারী। এর দু-এক বছর পর, আমি যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠীর পরিচর্যা কমিটি-র একজন সহায়ক হিসেবে সেবা করতে শুরু করি। তারপর, ১৯৯৯ সালে আমাকে পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। আমি এই কার্যভারে অনেক কিছু শিখেছি। কিন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-বিষয়টা আমি শিখেছি, সেটা হল খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক কোনো মানুষ নয় বরং যিশু খ্রিস্ট।

১৯৯৯ সাল থেকে আমি পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য হিসেবে সেবা করার বিশেষ সুযোগ পেয়েছি

আমি যখন পিছনে ফিরে তাকাই, তখন মাঝে মাঝে আমি নিজেকে অনেকটা ভাববাদী আমোষের মতো মনে করি। যিহোবা সেই নম্র মেষপালককে লক্ষ করেছিলেন, যিনি এমন প্রজাতির ডুমুর ফল সংগ্রহ করার এক সামান্য কাজ করতেন, যেটা কেবল দরিদ্র লোকেরা খেত। কিন্তু, ঈশ্বর আমোষকে ভাববাদী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন এবং সেই কার্যভার পালন করার সময়ে তাকে প্রচুররূপে আশীর্বাদ করেছিলেন। (আমোষ ৭:১৪, ১৫) একইভাবে যিহোবা আমাকে, ইন্ডিয়ানার লিবার্টির একজন গরিব কৃষকের ছেলেকে লক্ষ করেছিলেন। আর যিহোবা আমাকে প্রচুররূপে আশীর্বাদ করেছেন, এত আশীর্বাদ করেছেন যে, সেগুলোর সব ক’টার বিষয়ে এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়! (হিতো. ১০:২২) আমার জীবন অভাবের মধ্যে শুরু হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আমি সত্যিই মনে করি যে, আমি যতটা আশা করেছিলাম, পরিশেষে সেটার চেয়ে আরও বেশি আশীর্বাদ লাভ করেছি!