সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমরা যিহোবারই

আমরা যিহোবারই

“ধন্য সেই জাতি, যাহার ঈশ্বর সদাপ্রভু, সেই লোকসমাজ, যাহাকে তিনি নিজ অধিকারার্থে মনোনীত করিয়াছেন।”—গীত. ৩৩:১২.

গান সংখ্যা: ৩১, ৪৮

১. কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবা সমস্ত কিছুর মালিক? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

সমস্ত কিছু যিহোবারই! তিনি ‘স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ এবং পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থ যাবতীয় বস্তুর’ মালিক। (দ্বিতীয়. ১০:১৪; প্রকা. ৪:১১) যেহেতু যিহোবা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তাই আমরা সবাই তাঁরই। (গীত. ১০০:৩) তবে, পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সমস্ত লোকের মধ্যে থেকে ঈশ্বর কোনো কোনো ব্যক্তিকে এক বিশেষ উপায়ে তাঁর লোক হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন।

২. বাইবেল অনুযায়ী, কারা এক বিশেষ উপায়ে যিহোবার লোক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে?

উদাহরণ স্বরূপ, গীতসংহিতা ১৩৫ গীত প্রাচীন ইস্রায়েলে বসবাসকারী যিহোবার বিশ্বস্ত উপাসকদের তাঁর “নিজস্ব অধিকার” হিসেবে বর্ণনা করে। (গীত. ১৩৫:৪) এ ছাড়া, হোশেয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, কোনো কোনো ন-ইস্রায়েলীয় যিহোবার লোক হয়ে উঠবে। (হোশেয় ২:২৩) এই ভবিষ্যদ্‌বাণী সেই সময় পরিপূর্ণ হয়েছিল, যখন যিহোবা ন-ইস্রায়েলীয়দের স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করার জন্য বাছাই করতে শুরু করেছিলেন। (প্রেরিত ১০:৪৫; রোমীয় ৯:২৩-২৬) যাদের পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত করা হয়েছে, তাদের এক “পবিত্র জাতি” বলা হয়। তারা যিহোবার “নিজস্ব প্রজাবৃন্দ।” (১ পিতর ২:৯, ১০) কিন্তু, বর্তমানের সেই সমস্ত বিশ্বস্ত খ্রিস্টানের বিষয়ে কী বলা যায়, যাদের পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে? যিহোবা তাদেরও ‘আমার প্রজা’ ও ‘আমার মনোনীত লোক’ হিসেবে অভিহিত করেন।—যিশা. ৬৫:২২.

৩. (ক) বর্তমানে কাদের যিহোবার সঙ্গে এক বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

বর্তমানে “ক্ষুদ্র মেষপাল,” যাদের স্বর্গে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে এবং “আরও মেষ,” যাদের পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে, উভয়েই “এক পাল” হিসেবে একসঙ্গে যিহোবার উপাসনা করে। (লূক ১২:৩২; যোহন ১০:১৬) আমরা যিহোবাকে দেখাতে চাই, তাঁর সঙ্গে আমাদের যে এক বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে, সেটার জন্য আমরা কতটা কৃতজ্ঞ। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব যে, কীভাবে এই বিশেষ সম্মানের জন্য আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি।

আমরা যিহোবার কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করি

৪. যিহোবা যে আমাদের তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে দিয়েছেন, সেটার জন্য কীভাবে আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি এবং কীভাবে যিশু এইরকম কিছু করেছিলেন?

আমরা সেই সময় যিহোবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখাই, যখন আমরা তাঁর কাছে নিজেদের উৎসর্গ করি ও বাপ্তিস্ম নিই। এভাবে, সকলেই এটা দেখতে পারে যে, আমরা যিহোবারই এবং আমরা তাঁর বাধ্য হতে ইচ্ছুক। (ইব্রীয় ১২:৯) যিশু যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন তিনি ঠিক এইরকম কিছু করেছিলেন। যদিও তিনি ইতিমধ্যেই এমন এক জাতির লোক ছিলেন, যেটা যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত ছিল, তারপরও তিনি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। এটা এমন ছিল যেন তিনি বলছিলেন: “হে আমার ঈশ্বর, তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত।”—গীত. ৪০:৭, ৮.

৫, ৬. (ক) যিহোবা সেই সময় কী বলেছিলেন, যখন যিশু বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন? (খ) কোন উদাহরণটা আমাদের এটা বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারে যে, যিহোবা আমাদের উৎসর্গীকরণ সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন?

যিহোবা সেই সময় কেমন অনুভব করেছিলেন, যখন যিশু বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন? বাইবেল বলে: “পরে যীশু বাপ্তাইজিত হইয়া অমনি জল হইতে উঠিলেন; আর দেখ, তাঁহার নিমিত্ত স্বর্গ খুলিয়া গেল, এবং তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় নামিয়া আপনার উপরে আসিতে দেখিলেন। আর দেখ, স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।’” (মথি ৩:১৬, ১৭) যিশু প্রথম থেকে ঈশ্বরেরই ছিলেন। কিন্তু, যিহোবা এটা দেখে খুশি হয়েছিলেন যে, যিশু তাঁর জীবন একমাত্র যিহোবার সেবা করার জন্য ব্যবহার করতে ইচ্ছুক। যিহোবা সেই সময়ও খুশি হন, যখন আমরা নিজেদের জীবন তাঁর কাছে উৎসর্গ করি আর তাই, তিনি আমাদের আশীর্বাদ করবেন।—গীত. ১৪৯:৪.

কিন্তু, যিহোবা ইতিমধ্যেই সমস্ত কিছুর মালিক! আমরা তাঁকে কী দিতে পারি? কল্পনা করুন, একজন ব্যক্তির বাগানে সুন্দর সুন্দর ফুল রয়েছে। একদিন, তার ছোট্ট মেয়ে সেখান থেকে একটা ফুল তুলে তাকে দেয়। যদিও সেই ফুলটা ইতিমধ্যে তারই, তারপরও সেই প্রেমময় বাবা ওই উপহার পেয়ে খুবই আনন্দিত হন। এই উপহারটা দেখায় যে, তার মেয়ে তাকে ভালোবাসে। তার দৃষ্টিতে তার মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া সেই ফুলটা, তার বাগানের অন্যান্য সমস্ত ফুলের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান। একইভাবে, যিহোবা সেই সময় খুবই আনন্দিত হন, যখন আমরা ইচ্ছুক মনে তাঁর কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করি।—যাত্রা. ৩৪:১৪.

৭. কীভাবে মালাখি আমাদের বুঝতে সাহায্য করেন যে, যারা ইচ্ছুক মনে যিহোবার সেবা করে, তাদের বিষয়ে যিহোবা কেমন অনুভব করেন?

মালাখি ৩:১৬ পদ পড়ুন। কেন যিহোবার কাছে আপনার জীবন উৎসর্গ করা ও বাপ্তিস্ম নেওয়া এত গুরুত্বপূর্ণ? এটা ঠিক যে, যখন থেকে আপনি অস্তিত্বে আছেন, তখন থেকেই আপনি আপনার সৃষ্টিকর্তা যিহোবারই। কিন্তু একটু চিন্তা করুন, যিহোবা সেই সময় কতই-না খুশি হবেন, যখন আপনি তাঁকে আপনার শাসক হিসেবে গ্রহণ করবেন এবং তাঁর কাছে নিজেকে উৎসর্গ করবেন! (হিতো. ২৩:১৫) যিহোবা সেই ব্যক্তিদের জানেন, যারা ইচ্ছুক মনে তাঁর সেবা করে এবং তিনি তাদের নাম তাঁর ‘স্মরণার্থক পুস্তকে’ লিখে রাখেন।

৮, ৯. যিহোবা সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে কী আশা করেন, যাদের নাম তাঁর ‘স্মরণার্থক পুস্তকে’ লেখা আছে?

আমরা যদি চাই যে, আমাদের নাম যিহোবার ‘স্মরণার্থক পুস্তকে’ থাকুক, তা হলে আমাদের অবশ্যই কিছু করতে হবে। কী করতে হবে? মালাখি বলেছিলেন, আমাদের অবশ্যই যিহোবাকে ভয় করতে ও তাঁর নাম নিয়ে ধ্যান করতে হবে। আমরা যদি অন্য কোনো ব্যক্তি অথবা বস্তুর উপাসনা করি, তা হলে আমাদের নাম যিহোবার পুস্তক থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে!—যাত্রা. ৩২:৩৩; গীত. ৬৯:২৮.

তাই, আমাদের জন্য কেবল যিহোবার ইচ্ছা পালন করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করা ও তারপর বাপ্তিস্ম নেওয়াই যথেষ্ট নয়। এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো আমরা জীবনে কেবল এক বারই করি কিন্তু যিহোবার উপাসনা হল আমাদের জীবনের এক অংশ। আমরা যতদিনই বেঁচে থাকি না কেন, আমাদের প্রতিদিন অবশ্যই নিজেদের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে, আমরা যিহোবার প্রতি বাধ্যতা দেখাই।—১ পিতর ৪:১, ২.

আমরা জাগতিক অভিলাষগুলোকে প্রত্যাখ্যান করি

১০. যারা যিহোবার সেবা করে ও যারা তা করে না, তাদের মধ্যে অবশ্যই কোন স্পষ্ট পার্থক্য দেখা যাবে?

১০ আগের প্রবন্ধে আমরা শিখেছি যে, কয়িন, শলোমন ও ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার উপাসনা করার বিষয়ে দাবি করেছিল ঠিকই কিন্তু তারা তাঁর প্রতি অনুগত ছিল না। এই উদাহরণগুলো আমাদের শিখিয়েছিল, কেবল এতটুকু বলাই যথেষ্ট নয় যে, আমরা যিহোবার উপাসনা করি। আমাদের মন্দকে ঘৃণা করতে ও উত্তমকে ভালোবাসতে হবে। (রোমীয় ১২:৯) যিহোবা বলেন, “ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে,” এই দুই ধরনের লোকের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য দেখা যাবে।—মালাখি ৩:১৮.

১১. কেন সবার সামনে এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, আমরা একমাত্র যিহোবার উপাসনা করি?

১১ যিহোবা যে আমাদের তাঁর লোক হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন, সেটার জন্য আমরা তাঁর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ! সবার সামনে এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, আমরা যিহোবার পক্ষে রয়েছি। (মথি ৫:১৬; ১ তীম. ৪:১৫) নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘অন্যেরা কি এটা দেখতে পায় যে, আমি যিহোবার প্রতি সম্পূর্ণরূপে অনুগত? আমি কি অন্যদের এটা বলতে পেরে গর্ব বোধ করি যে, আমি একজন যিহোবার সাক্ষি?’ কল্পনা করুন, এমনটা হলে যিহোবা কতটা দুঃখিত হবেন, যদি আমরা অন্যদের এটা বলতে লজ্জা পাই যে, আমরা তাঁরই।—গীত. ১১৯:৪৬; পড়ুন, মার্ক ৮:৩৮.

আপনার জীবনধারা কি এটা স্পষ্ট করে তোলে যে, আপনি একজন যিহোবার সাক্ষি? (১২, ১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২, ১৩. কীভাবে কেউ কেউ অন্যদের পক্ষে এটা বোঝা কঠিন করে তুলেছে যে, তারা যিহোবার সাক্ষি কি না?

১২ এটা খুবই দুঃখজনক যে, এমনকী সাক্ষিদের মধ্যেও কোনো কোনো ব্যক্তি “জগতের আত্মাকে” অনুকরণ করে। এর ফলে, সেই ব্যক্তিদের এবং যারা যিহোবার উপাসনা করে না, তাদের মধ্যে খুব-একটা পার্থক্য দেখা যায় না। (১ করি. ২:১২) ‘জগতের আত্মা’ লোকেদের কেবল তাদের স্বার্থপর অভিলাষগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পরিচালিত করে। (ইফি. ২:৩) উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যে-সমস্ত পরামর্শ লাভ করি, সেগুলো সম্বন্ধে জানা সত্ত্বেও কোনো কোনো ব্যক্তি অমার্জিত পোশাক পরা বেছে নেয়। তারা আঁটসাঁট ও খোলামেলা পোশাক পরে থাকে আর তা এমনকী খ্রিস্টীয় সভাগুলোতেও। অথবা তারা চরম প্রকারের চুলের স্টাইল বেছে নেয়। (১ তীম. ২:৯, ১০) এর ফলে, অন্যদের পক্ষে এটা বোঝা হয়তো কঠিন হয়ে যায় যে, তারা যিহোবার সাক্ষি কি না।—যাকোব ৪:৪.

১৩ অন্যান্য ক্ষেত্রও রয়েছে, যেগুলোতে কোনো কোনো সাক্ষি স্পষ্টভাবে দেখায়নি যে, তারা জগতের থেকে আলাদা। উদাহরণ স্বরূপ, কেউ কেউ বিভিন্ন পার্টিতে এমনভাবে নেচেছে ও এমন আচরণ করেছে, যেগুলো খ্রিস্টানদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যেরা আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের এমন ছবি ও মন্তব্য পোস্ট করেছে, যেগুলো তাদের মাংসিক চিন্তাভাবনাকে প্রকাশ করে। হতে পারে, তারা কোনো গুরুতর পাপ করেনি আর তারা এখনও মণ্ডলীরই সদস্য, তবে তারা সেই ভাই-বোনদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে, যারা জগতের থেকে আলাদা হওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছে।—পড়ুন, ১ পিতর ২:১১, ১২.

সেই ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত হবেন না, যারা স্পষ্টতই যিহোবার পক্ষে নয়

১৪. যিহোবার সঙ্গে আমাদের বিশেষ বন্ধুত্বকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?

১৪ এই জগতে প্রস্তুতকৃত সমস্ত কিছুরই উদ্দেশ্য হল, আমরা যেন ‘মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্পের’ উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি। (১ যোহন ২:১৬) যেহেতু আমরা যিহোবারই, তাই আমরা জগতের লোকেদের চেয়ে আলাদা। আমরা ‘ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করি’ এবং “সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন করি।” (তীত ২:১২) আমাদের সমস্ত জীবনধারা—যার অন্তর্ভুক্ত হল আমরা যেভাবে কথা বলি, খাই, পান করি, পোশাক পরি ও কাজ করি—দেখে সবার সামনে এই বিষয়টা স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, আমরা যিহোবারই।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:৩১, ৩২.

আমরা ‘পরস্পর একাগ্রভাবে প্রেম করি’

১৫. কেন অন্যান্য খ্রিস্টানদের সঙ্গে আমাদের দয়া ও প্রেম দেখিয়ে আচরণ করা উচিত?

১৫ আমরা আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করি, সেটার মাধ্যমে দেখাই যে, আমরা যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে মূল্যবান হিসেবে দেখি। আমাদের মতো তারাও যিহোবারই। আমরা যদি এই সত্যটা মনে রাখি, তা হলে আমরা সবসময় তাদের সঙ্গে দয়া ও প্রেম দেখিয়ে আচরণ করব। (১ থিষল. ৫:১৫) এমনটা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? যিশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।”—যোহন ১৩:৩৫.

১৬. যিহোবার লোকেদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা সম্বন্ধে আমরা মোশির ব্যবস্থা থেকে কী শিখি?

১৬ মোশির ব্যবস্থার একটা উদাহরণ আমাদের এই বিষয়টা বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারে যে, মণ্ডলীতে অন্যদের সঙ্গে আমাদের কীভাবে আচরণ করা উচিত। যিহোবার মন্দিরে এমন অনেক দ্রব্য বা পাত্র ছিল, যেগুলো একমাত্র উপাসনার জন্যই ব্যবহার করা হতো। ব্যবস্থায় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যে, লেবীয়দের কীভাবে সেই পাত্রগুলোর যত্ন নেওয়া উচিত আর কেউ যদি সেই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ না করত, তা হলে তাকে মেরে ফেলা হতো। (গণনা. ১:৫০, ৫১) যিহোবা যদি এই বিষয়টা নিয়ে এত চিন্তা করতেন যে, লোকেরা তাঁর উপাসনায় ব্যবহৃত বস্তুগুলোর কীভাবে যত্ন নেবে, তা হলে তিনি এই বিষয়টা নিয়ে আরও কতই-না বেশি চিন্তা করেন যে, লোকেরা তাঁর উৎসর্গীকৃত ও অনুগত উপাসকদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করে! যিহোবা সম্বন্ধে বলা এই কথাগুলোর মাধ্যমে আমরা বুঝি যে, আমরা তাঁর কাছে কতটা মূল্যবান: “যে ব্যক্তি তোমাদিগকে স্পর্শ করে, সে তাঁহার চক্ষুর তারা স্পর্শ করে।”—সখ. ২:৮.

১৭. যিহোবা কোন বিষয়টা ‘কর্ণপাত করিয়া শুনিতেছেন’?

১৭ মালাখি বলেছিলেন যে, যিহোবার লোকেরা একে অন্যের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করে, সেই বিষয়ে তিনি ‘কর্ণপাত করিয়া শুনেন।’ (মালাখি ৩:১৬) প্রভু যিহোবা “জানেন, কে কে তাঁহার।” (২ তীম. ২:১৯) আমরা যা যা করি ও যা যা বলি, সেই সমস্তের বিষয়ে তিনি ভালোভাবে অবগত আছেন। (ইব্রীয় ৪:১৩) আমরা যখন আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করি, তখন যিহোবা তা লক্ষ করেন। তবে, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা সেইসময়েও আমাদের লক্ষ করেন, যখন আমরা আতিথেয়তা, উদারতা, ক্ষমাশীল মনোভাব ও সদয়ভাব দেখাই।—ইব্রীয় ১৩:১৬; ১ পিতর ৪:৮, ৯.

“সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে দূর করিবেন না”

১৮. যিহোবা যে আমাদের তাঁর লোক হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন, সেটার জন্য কীভাবে আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি?

১৮ আমরা যিহোবাকে দেখাতে চাই, আমরা যে তাঁর লোক হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, সেটার জন্য আমরা তাঁর প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ। আমরা জানি যে, তাঁর কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করাটা ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে বিজ্ঞ বাছাই। যদিও আমরা “এই কালের . . . কুটিল ও বিপথগামী লোকদের মধ্যে” বাস করি, তারপরও আমরা “অনিন্দনীয় ও অমায়িক” হতে এবং “জগতে জ্যোতির্গণের ন্যায়” প্রকাশ পেতে পারি। (ফিলি. ২:১৫) তাই, আমরা এমন যেকোনো কাজ করা এড়িয়ে চলার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ, যেটাকে যিহোবা ঘৃণা করেন। (যাকোব ৪:৭) আর আমরা আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসি ও সম্মান করি কারণ তারাও যিহোবারই।—রোমীয় ১২:১০.

১৯. কীভাবে যিহোবা সেই ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করেন, যারা তাঁরই?

১৯ বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে: “সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে দূর করিবেন না।” (গীত. ৯৪:১৪) এটা একটা নিশ্চিত প্রতিজ্ঞা। যা-ই ঘটুক না কেন, যিহোবা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। এমনকী আমরা যদি মারাও যাই, তারপরও তিনি আমাদের ভুলে যাবেন না। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) “যদি আমরা জীবিত থাকি, তবে প্রভুরই [ঈশ্বরেরই] উদ্দেশে জীবিত থাকি; এবং যদি মরি, তবে প্রভুরই [ঈশ্বরেরই] উদ্দেশে মরি। অতএব আমরা জীবিত থাকি বা মরি, আমরা প্রভুরই [ঈশ্বরেরই]।” (রোমীয় ১৪:৮) আমরা সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছি, যখন যিহোবা তাঁর সেই সমস্ত বন্ধুকে জীবনে ফিরিয়ে আনবেন, যারা মারা গিয়েছে। (মথি ২২:৩২) আর এমনকী এখনই, আমরা আমাদের পিতার কাছ থেকে অনেক চমৎকার উপহার লাভ করি। বাইবেল যেমনটা বলে, “ধন্য” বা সুখী “সেই জাতি, যাহার ঈশ্বর সদাপ্রভু, সেই লোকসমাজ, যাহাকে তিনি নিজ অধিকারার্থে মনোনীত করিয়াছেন।”—গীত. ৩৩:১২.